#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu
২৫.
সারাদিন গুমোট গরমের পর সন্ধ্যায় সস্তির বৃষ্টি নেমেছে।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।জানালায় জলের প্রপাত।আরাফ জানালার সামনে দাঁড়িয়ে একহাত ট্রাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে দূরে কোথাও তাকিয়ে আছে।দমকা হাওয়ায় বৃষ্টির ছাট চোখে মুখে এসে পরছে।কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জানালা থেকে সরে এল।বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে কপালের উপর একহাত রেখে নির্ভীকের কথা ভাবতে লাগলো।জারিফের কাছে নির্ভীকের ব্যাপারে সবকিছু শুনেছে।আরাফের আগেও মনে হয়েছে নির্ভীক অন্তকে তার থেকে বেশি ভালোবাসে এখনও তাই মনে হচ্ছে।অন্তও নির্ভীককে ভালোবাসে।আরাফ কি করবে বুঝতে পারছেনা।মনে মনে ভাবছে আমি তো অন্তকে কম ভালোবাসিনা।নির্ভীক আজ ওকে ভালোবাসছে কাল নাও বাসতে পারে।ওর মতো বদরাগী ছেলের সাথে অন্ত কিছুতেই ভাল থাকতে পারবেনা।আমার জানপাখি এত নরম মনের একটু জোরে কথা বললেই কেঁদে ফেলবে।নির্ভীক তো অল্পতেই রেগে যায়।তাও নির্ভীক ওকে ভাল রাখবে জানি।না না এসব আমি কি ভাবছি।অন্ত শুধু আমার।আমি কিছুতেই নির্ভীককে ওর সাথে মেনে নিব না।অন্ত আমার কাছে থাকবে,কেউ কোনদিন ওকে কষ্ট দিতে পারবেনা।আমি ভাল রাখবো ওকে।
আরাফ উঠে বসলো।কিঞ্চৎ ভ্রু কুচকে ফোন হাতে নিয়ে নির্ভীককে কল দিল।নির্ভীক কল রিসিভ করে বলল,
‘বল।’
আরাফ একটু ইতস্তত করে বলল,
‘আমি জানি তুই আমার কথা শুনবিনা তাও বলছি ভুলে যা ওকে।’
‘শোনো তোমার জন্য আজকে তিনদিন ধরে ওর সাথে ভাল করে কথা বলিনি।এমনিতেই মাথা খারাপ হয়ে আছে আর খারাপ করে দিওনা।’
আরাফ চোখমুখ শক্ত করে বলল ,
‘তুই যেটাকে ভালোবাসা বলছিস না?সেটা ভালোবাসা নয়।’
‘কি তাহলে?’
আরাফ হাঁটতে হাঁটতে জানালার সামনে এসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘লালসা।ওর শারীরিক সৌন্দর্যে তুই মুগ্ধ।’
‘আমি ওর সবকিছুতেই মুগ্ধ।ভালোবাসি বলেই মুগ্ধ।পৃথিবীতে কত মেয়েছে আছে কিন্তু কখনও অন্য কোনো মেয়ের প্রতি মুগ্ধ হতে পারিনি কারন অন্য কাউকে ভালোবাসিনি।অন্য কাউকে ভালোবাসিনি তাই অন্য কারও প্রতি মুগ্ধ হতে পারিনি।লালসা,লোভ,মুগ্ধতা,মোহ,
মায়া সবটা নিয়েই আমি শুধু অন্তকে ভালোবাসি।’
আরাফ রাগী কন্ঠে বলল,
‘ভালোবাসিস তাহলে না দেখে না ছুয়ে থাকতে পারিসনা কেন?যদি ভালোবাসায় হয় তাহলে তুই ওর শরীরকে ভালোবাসিস ওকে নয়।’
বলেই আরাফ কল কেটে ফোনটা বেডে ছুড়ে ফেলে দিল।মনে মনে বলল কোনদিন তুই ওকে ভালোবাসিসনি,এসব মিথ্যে বলছিস তুই।অন্তকে আমি ছাড়া আর কেউ ভালোবাসে না।কাউকে ভালোবাসতে দিবনা আমার জানপাখিকে।একহাতে কপালের চুলগুলো মাথার উপর চেপে ধরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে হন হন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
—
গেস্টরুমের মেঝেতে গোল হয়ে বসে কার্ড খেলছে অন্তর কাজিনরা।অন্ত কার্ডের কিছু বুঝেনা তাই বিছানায় বসে থেকে খেলা দেখছে আর খালাতো ভাই রিসাবের মাথার চুল টেনে দিচ্ছে।রিসাব মেঝেতে বসে ফোনে চ্যাট করছে।আরাফ গেস্টরুমের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে অন্তকে ডাকলো।অন্ত কিছু বলার আগেই ইচ্ছেমতি বিছানার উপর থেকে বলল,
‘অন্ত এখন কোথাও যাবে না।’
অন্তও আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কি বলবা?’
আরাফ রিসাবের দিকে রাগী মুখ করে তাকিয়ে আছে।কত বড় সাহস অন্তকে দিয়ে মাথার চুল টেনে নিচ্ছে।ওর আঙুল ব্যথা করবে জন্য আমি যেটা করিনা সেটা তুই করছিস?দেখে নেব তোকে।আরাফ রাগী কন্ঠে অন্তকে বলল,
‘কি হল এসো?কথা শুনোনা কেন তুমি?’
সবাই আরাফের দিকে তাকালো।অন্তর খালাতো বোন রুহি মুচকি হেসে বলল,
‘আরাফ ভাইয়া সবাইকে তুই করে বলে আর অন্তকে তুমি।কেন?’
ইচ্ছেমতি আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ওটাতো ভাইয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে।ভাইয়া ছোট বাচ্চাদের তুই বলেনা।অন্তও তো ছোট বাচ্চা তাই অন্তকেও তুই বলেনা,তাইনা ভাইয়া?’
আরাফ মুচকি হেসে বলল,
‘হুম।’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘যখন রেগে যায় তখন কে তুই তুই করে?থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিতে চায় কে?আর হাত-পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখতে চায় কে?’
সবাই একসাথে বলল,
‘কে।’
অন্ত থম থমে মুখ করে বলল,
‘আরাফ ভাইয়া।শুধু তাই নয় পড়া না করলে আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়।কোন দয়া মায়া নেই।’
আরাফ মুচকি হেসে দরজায় হেলান দিয়ে বলল,
‘কি করে থাকবে তুমি যে কুড়িয়ে পাওয়া।মামা একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তখন তোমাকে রাস্তায় পরে থাকতে দেখে কোলে নিয়ে বাসায় এসেছিল।’
আফ্রা খুশি হয়ে বলল,
‘ঠিক তাই।আমার স্পষ্ট মনে আছে সব।’
এই নিয়ে কিছুক্ষণ হৈ হৈ হল।অন্ত কোন প্রতিবাদ করলোনা জন্য অন্য কথা শুরু হল।সবার সাথে কথা বলে আর অন্তকে খুশি দেখে আরাফের মন ফ্রেশ হয়ে গিয়েছে।জারিফের ডাক পেয়েই আরাফ চলে গেল। রুহি আরাফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আরাফ ভাইয়ার বিয়ে নাহলে আমি ভাইয়াকে পটিয়ে পাটিয়ে বিয়ে করে নিতাম।’
সবাই উচ্চকিত হাসলো।রিসাব একবার রুহির দিকে তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আফ্রার পর তোর বিয়ে কনফার্ম।আজই আব্বুকে বলে তোকে বিদায় করার ব্যবস্থা করে ফেলব।তারপর তুই বাসা থেকে আউট অন্তমণি ইন।’
অন্ত রিসাবের চুল জোরে টেনে দিয়ে বলল,
‘নেভার।’
রুহি আনন্দিত হয়ে বলল,
‘সত্যি?প্লিজ প্লিজ তাড়াতাড়ি আব্বুর সাথে কথা বল।আফ্রার দেখাদেখি আমারও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।’
রুহির সাথে সাথে মিরাও বলল,
‘হ্যাঁ আমারও।’
ইচ্ছেমতি উদাস হয়ে বলল,
‘আমারও অনেক ইচ্ছে করছে।’
লিরাও লাজুক হেসে বলল,
‘আমারও।’
মিতুও ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,
‘আর আমারও।’
ভাইয়েরা সবাই অবাক হয়ে বোনদের দিকে তাকিয়ে আছে।নির্লজ্জের মতো বড় ভাইদের সামনে এরা কি শুরু করলো।এদের মধ্যে সবার বড় নাছিম হাসি মুখ করে বলল,
‘সাইলেন্ট,সাইলেন্ট।সবার বিয়ে হবে।এত তাড়াহুড়ো করিস না।সবুরে মেওয়া ফলে।যেমন করে তোদের আইডল সারার বিয়ে হয়েছে ঠিক সেভাবে সবার বিয়ে হবে দোয়া দিলাম।গুরুজনের দোয়া বিফলে যায়না হু।’
সারার বিয়ে হয়েছে পারিবারিক ভাবে।প্রেম তো দূরের কথা বিয়ের আগে কেউ কাউকে দেখেনি পর্যন্ত।বাবা-মার পছন্দে বিয়ে করে আজ তারা অনেক সুখী।নাছিমের কথা শুনে আরব হাত তুলে মোনাজাত করে বলল,
‘আল্লাহ্ তুমি আমার বাকি বোনদের জন্য আরও কয়েকটা লিটন ভাইয়াকে আমাদের মেসেন্জার গ্রুপ শত তারার মেলা ঠিকানায় পাঠিয়ে দাও,আমিন।’
সবাই একসাথে আমিন বলে উঠলো।আফ্রা ফোন থেকে মাথা তুলে অন্তর দিকে তাকিয়ে ঝারি দিয়ে বলল,
‘এই মুচি ফোন কোথায় তোর?নির্ভীক ভাইয়া কখন থেকে ফোন দিচ্ছে।’
অন্ত রিসাবের চুল ছেড়ে দিয়ে একমুহূর্তও দেরি না করে যেতে যেতে বলল,
‘তুমি আমাকে মুচি বললা দাঁড়াও এখনই ভাইয়াকে বলে দিব।’
অন্ত ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো।ভাইয়ের কাছে আফ্রার নামে নালিশ দেওয়া কিসের কি দৌঁড়ে উপরে নিজের ঘরে ঢুকে দেখলো বিছানার উপর ফোন বাজছে।হাঁপাতে হাঁপাতে কল রিসিভ করে কানে ধরে মুচকি হেসে বলল,
‘নির্ভীক ভাইয়া?’
‘খুন করে ফেলবো তোমাকে।’
নির্ভীকের রাগী কন্ঠ শুনে অন্ত ভরকে গেল।শুকনো ঢোক গিলে বলল,
‘কেন?’
‘হাত ধুয়ে এসো আগে,গো ফাস্ট।’
অন্ত ভ্রু কুচকে বাম হাতের দিকে তাকালো।হাতে তো কোন ময়লা নেই তাহলে কেন হাত ধুবে।তার ভাবনার মধ্যেই নির্ভীক ধমক দিয়ে বলল,
‘কি হল যাও।দুই হাত হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভাল করে ধুবা।’
অন্ত ঠোঁট উল্টে ফোন কানে ধরেই ওয়াশরুমে আসলো।কাঁধের সাহায্যে ফোন কানে ধরে রেখে হাত ধুতে ধুতে বলল,
‘হাত কেন ধুবো?’
‘জার্মস আছে তাই।’
অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,
‘এটা কোন কথা হল?আচ্ছা আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না কেন?আর এসব কি শুধু হাত ধোয়ার কথা বলছেন?অন্যকিছু বলতে পারেন না?’
‘হুম পারি।আই লাভ ইউ পিচ্চি।’
নির্ভীকের কথা শুনে অন্তর কান থেকে ফোন পরে গেল।দ্রুত হাত ধুয়ে ফোন তুলে দেখে অফ হয়ে গেছে।তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ফোন অন করতে চাইছে কিন্তু আর অন হচ্ছেনা।এমনিতেই নির্ভীক ঠিক করে কথা বলছেনা আজকে একটু বলছে আর এই ফোন ড্রামা শুরু করেছে।অন্তর ইচ্ছে করছে একটা আছাড় দিয়ে ফোনটা ভেঙ্গে ফেলতে।প্রায় পাঁচমিনিট পর ফোন অন করতে পেরে অন্ত নির্ভীককে কল দিল।হাত-পা মৃদু কাঁপছে,স্থির হয়ে কোথাও একদন্ড দাঁড়াতে বা বসতে পারছেনা।নির্ভীক কল ধরতেই অন্ত একদমে বলল,
‘সরি ফোন পরে গিয়ে অফ হয়েছিল তাই কল কেঁটে গিয়েছিল।’
‘এসব শুনতে চাইনা।’
অন্তর মুখ মলিন হয়ে গেল।সোফার হ্যান্ডেলের উপর বসে মন খারাপ করে বলল,
‘তাহলে কি শুনতে চান?’
‘এখন কিছু শুনতে চাইনা বাহিরে আসো।’
অন্ত জানালার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘বৃষ্টি হচ্ছে তো।’
‘হোক।কাম ফাস্ট,আ’ম ওয়েটিং।’
বলেই নির্ভীক কল কেঁটে দিল।অন্ত ফোন রেখে আয়নার সামনে দাঁড়ালো।নির্ভীকের সামনে যাবে একটু না সাজলে হয়?সে স্পষ্ট শুনেছে নির্ভীক তাকে ভালোবাসে বলেছে।স্পেশাল লোকদের কাছে স্পেশাল ভাবেই যেতে হয়।অন্ত চুলগুলো হেয়ার পিন দিয়ে বাঁধলো।ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক আর কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ পরলো।কালো রঙের ওড়না খুলে আলমিরা থেকে সাদা একটা ওড়না বের করে পরে নিল।সাদা পাটোয়ারী পায়জামা হলুদ কামিজ জামা আর সাদা ওড়নাতে অন্তকে পরীদের মতো সুন্দর লাগছে।সাজগোজ শেষ করে অন্ত দৌঁড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।সিঁড়িতে এসেই আরাফের সাথে দেখা।আরাফ তো হা করে অন্তর দিকে তাকিয়ে আছে।অন্ত আরাফের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘এই এলিয়েন সরো সামনে থেকে।’
আরাফ ভ্রু কুচকে বলল,
‘কোথায় যাচ্ছো?’
অন্ত আরাফের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘বাহিরে,নির্ভীক ভাইয়া এসেছে।’
আরাফ পেছন থেকে অন্তর হাত ধরে আটকিয়ে দিল।আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখে একহাতে অন্তর মুখ চেপে ধরে অন্য হাতে অন্তর পেট জড়িয়ে ধরে অন্তকে মেঝে থেকে উচু করে নিজের ঘরে নিয়ে আসলো।দরজা বন্ধ করে অন্তর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘কোথাও যাবা না তুমি।তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো আর কাউকে নয়।নির্ভীকের থেকে দূরে থাকবা।’
অন্ত পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে বলল,
‘প্লিজ ভাইয়া এসব বল না।যেতে দাও আমাকে।’
আরাফ একদম অন্তর সাথে লেগে দাঁড়ালো।দুই হাত অন্তর গালে রেখে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
‘কেন এমন করছো?ভালোবাসি তো।মানছো না কেন?মরে যাবো আমি।প্লিজ লাভ মি।’
অন্ত গাল থেকে আরাফের হাত সরিয়ে দিল।আরাফ একহাতে অন্তর কোমড় জড়িয়ে ধরে অসহায় মুখ করে অন্তর গলার মধ্যে মুখ গুজে বলল,
‘আই লাভ ইউ জানপাখি।আই ক্যান্ট লিভ উইথআউট ইউ।আই নিড ইউর……’
আরাফের কথার মাঝেই অন্ত কান্না করতে করতে আরাফের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।আরাফ অন্তকে কাঁদতে দেখেই উত্তেজিত হয়ে গেল।অন্ত অশ্রু ভরা চোখ নিয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,
‘ছিঃ!ঘৃণা হচ্ছে তোমাকে!অসহ্য!’
আরাফ অসহায় মুখ করে অন্তর গালে হাত দিতেই অন্ত হাত সরিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
‘ছাড়ো আমাকে।আই হেট ইউ।’
অন্ত আরাফকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দরজা খুলে দৌঁড়ে নিজের ঘরে আসলো।দরজা লাগিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে মেজেতে বসে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।আরাফের এমন ব্যবহার মেনে নিতে পারছেনা।ঘৃণায় আরাফ যেখানে যেখানে স্পর্শ করেছে সেখানে হাত দিয়ে ডলতে লাগলো।একসময় সহ্য করতে না পেরে টেবিলের উপর থেকে ফল কাটা ছুড়ি নিয়ে হাত কেঁটে ফেললো।ব্যথায় হাত চেপে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
—
নির্ভীক অন্তদের গেইটের সামনে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে ফোনে একটার পর একটা ছবি দেখছে।সবগুলোই অন্তর ছবি।অনেকক্ষণ হল অন্ত আসছেনা জন্য গেইটের দিকে তাকালো।কয়েকমিনিট আগে গাড়িতে বসে অন্ত ঘরের মধ্যে কি কি করছিল সব ল্যাপটপে দেখেছে।অন্তকে ঘর থেকে বের হতে দেখেই গাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে বের হয়ে গেইটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।নির্ভীক ঠিক করেছে অন্তকে আজকে বিয়ের প্রপোজাল দিবে।অন্তকে কোথায় নিয়ে যাবে কি করবে না করবে সব ঠিক করে অন্তকে নিতে এসেছে।অন্তর আসতে দেরি হচ্ছে দেখে ভাবছে কাজিনদের সাথে কথা বলছে হয়তো।সময় কাঁটানোর জন্য অন্তর ছবি দেখে কয়েকমিনিট পার করে দিল।এখনও আসছেনা দেখে নির্ভীক এবার হালকা রেগে গেল।অন্ত ভেতরে কি করছে দেখার জন্য গাড়িতে এসে ল্যাপটপ অন করলো।ভিডিও ফ্রুটেজ বের করতে করতে বিরবির করে বলল,
‘আর তিনটে দিন।তারপর একটা ছাগলকেও তোমার আশেপাশে ঘেষতে দিবনা।’
অন্ত নিজের ঘরেই আছে দেখে নির্ভীক ভ্রু কুচকালো। মেঝেতে বসে কি করছে নির্ভীক বুঝতে পারছেনা।ক্যামেরা অন্তর পেছন দিকে থাকায় নির্ভীক শুধু অন্তর পেছনটা দেখতে পাচ্ছে।চিন্তিত হয়ে অন্তর ফোনে কল দিতেই দেখলো অন্ত উঠছে।পুরোপুরি না দাঁড়াতেই সেন্সলেস হয়ে মেঝেতে পরে গেল।অন্তর সাদা ওড়না রক্তে লাল হয়ে আছে দেখেই নির্ভীকের মাথা ঘুরে গেল।ল্যাপটপ ফেলে দৌঁড়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো কলিং বেল বাজাতে লাগলো।এদিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে নির্ভীকের সাদা শার্টে পানির দাগ লাগছে।কাজের মেয়ে দরজা খুলতেই নির্ভীক দৌঁড়ে ভেতরে গেল।চেঁচিয়ে জারিফকে ডাকতে ডাকতে উপরে অন্তর ঘরের দরজায় এসে ধাক্কাতে লাগলো।নির্ভীকের চেঁচামেচি শুনে আরাফসহ সবাই চলে এসেছে।নির্ভীক লাথি দিয়ে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে।কি হয়েছে কেউ বুঝতে পারছেনা কিন্তু আরাফ কিছুটা আচ করতে পেরেই নির্ভীকের সাথে দরজা ভাঙতে লেগে গেল।
অন্তর কিছু হয়েছে বুঝতে পেরে সবাই মিলে দরজা ভেঙে ফেললো।ভেতরে ঢুকে নির্ভীক অন্তর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে অন্তকে মেঝে থেকে টেনে তুলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।পাগলের মতো অন্তর গাল ঝাকিয়ে অন্তকে ডাকছে।কেউ একজন অন্তর মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই অন্ত চোখ পিটপিট করতে লাগলো।রক্তে ভয় থাকার জন্য চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।ভয় পেয়ে শরীর অবশ হয়ে আসছে।অন্তর হাত থেকে এখনও তাজা রক্ত পরছে।জারিফ অন্তর হাত হৃদপিন্ড লেভেল থেকে অনেকটা উঁচুতে তুলে ধরলো।ওড়না দিয়ে চেপে ধরতেই অন্ত ব্যথা পেয়ে কাঁদতে লাগলো।নির্ভীক দেরি না করে অন্তকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘আম্মুকে কল কর।আম্মু হসপিটালেই আছে।ভাইয়া বাসায় আছে এখনই ফাস্ট এডই বক্স নিয়ে বাইরে আসতে বল।’
জারিফের আগে আফ্রাই রাযীনকে সব জানিয়ে দিয়েছে।জারিফ নির্ভীকের মাকে ফোন করে সব বলতে বলতে নির্ভীকের সাথে বেড়িয়ে গেল।মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ঘর ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।আরাফ বিছানার সাথে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসলো।আতংকে তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।মেঝেতে লেগে থাকা অন্তর রক্তের দিকে তাকিয়ে দমবন্ধ হয়ে আসছে।খুব ভাল করে বুঝতে পারছে অন্ত এসব কেন করেছে।অন্ত এমন কিছু করতে পারে আরাফের ধারণার বাইরে ছিল।নিজের উপর রাগ হচ্ছে।জারিফের জন্য ভয়ও হচ্ছে।আগের বার অন্তর এক্সিডেন্ট আরাফের জন্যই হয়েছিল এবারও তাই হল।জারিফ যদি এসব জানতে পারে।এবার তাদের বন্ধুত্ব টিকবে তো?
চলবে……………..