ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২পর্ব:৩৩

0
1378

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

২৭.

বিকেলে এক পশলা বৃষ্টির পর ঝকঝকে সুন্দর রোদ উঠেছে।ঘন নীল আকাশ।মধুর বাতাস আর পাশে ভালোবাসার মানুষ।নির্ভীকের মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী এক দিকে আর নির্ভীক একা অন্তকে নিয়ে অন্যদিকে বাস করছে।কনে পক্ষের সবাই রাযীনকে হলুদ পরাতে নির্ভীকদের বাসায় এসেছে।সবাই যখন হলুদের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত নির্ভীক তখন অন্তকে চুরি করে স্টেজের পেছনে নিয়ে এসেছে।অন্তকে নিয়ে আসার সময় অন্তর শাড়ি নির্ভীকের পায়ের নিচে পরে খুলে গিয়েছে।নির্ভীকের সেদিকে কোন হেল দোল নেই।নিজের গালে লেপ্টে থাকা হলুদ অন্তর গালে লাগিয়ে দিল।কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্তর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

‘আর একটু কাছে টেনে নিলে কি খুব ভুল হবে পিচ্চি?’

অন্ত নির্ভীকের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললো।এমনিতেই তো এত কাছে আছি আর কত কাছের কথা বলছেন উনি!এদিকে শাড়ি খুলে যাওয়ায় অন্তর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।ইচ্ছে করছে নির্ভীকের সিল্কি চুলগুলো টেনে ছিড়তে।ভাল করে বললে কি আসতাম না?এভাবে টেনে নিয়ে আসার কি দরকার ছিল?ভেবেই অন্ত মুখ ফোলালো।নির্ভীক একাহাত অন্তর গালে রেখে ঠোঁটে বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল,

‘কি হল বল?আর একটু কাছে আসবা?’

অন্ত ডান হাতে গাল থেকে নির্ভীকের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,

‘না!!দূরে দাঁড়ান।ছাড়ুন।আমার শাড়ি।’

নির্ভীক অন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ছাড়বো না।’

‘উফ ছাড়ুন।শাড়ি খুলে গিয়েছে।’

অন্ত নির্ভীককে একহাতে ঠেলে দিল।নির্ভীক অন্তকে ছেড়ে দিয়ে দেখে সে শাড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছে।অন্তর অর্ধেক শাড়ি খুলে গিয়েছে।নির্ভীকের সামনে লজ্জায় অন্তর মাথা কাটা যাচ্ছে।একহাতে নিচ থেকে খুলে যাওয়া অংশ তুলে মাথা নিচু করে বলল,

‘এভাবে বাসায় যাব কি করে।’

নির্ভীক ভ্রু কুচকে বলল,

‘হোয়াট রাবিশ!!খুলে গেল কেন!!কিভাবে পরে এসব?তাড়াতাড়ি পরে নাউ।হঠাৎ কেউ চলে আসতে পারে।’

অন্ত উল্টোদিকে ঘুরে বলল,
‘আমি এভাবে পরতে পারিনা।’

অন্ত সারার কাছ থেকে আটপৌরে করে শাড়ি পরে নিয়েছিল।এভাবে সে শাড়ি পরতে জানেনা তাই এখন পরতে পারছেনা।নির্ভীক বুঝতে পারছে অন্তর এখন তার সামনে অস্বস্তি হচ্ছে তাই বলল,

‘আচ্ছা তুমি একমিনিট ওয়েট কর আমি কাউকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।নির্ভীক দ্রুত এসে ইচ্ছেমতিকে পাঠিয়ে দিল।ইচ্ছেমতিও পারেনা,কোনরকম গুজে দিয়ে বলল,

‘কিরে কি হচ্ছিল হুম?শাড়িকি এমনি খুলে গিয়েছিল নাকি নির্ভীক ভাইয়া…!

অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,
‘ছিঃ!!অশ্লীল!!’

ইচ্ছেমতি অট্টহাসলো।অন্ত লজ্জা মুখ করে স্টেজের পেছন থেকে বাকি কাজিনদের কাছে চলে আসলো।নির্ভীক একটু দূরে এক ডজন ফ্রেন্ডদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল অন্তকে আসতে দেখেই মুচকি হাসলো।প্রান্তর কাঁধে হাত রেখে বার বার তার হলুূদ পরীর দিকে তাকাচ্ছে।অন্ত বুঝতে পারছে নির্ভীক কোথাও দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে কিন্তু এখন সে নির্ভীকের দিকে তাকাতে চায়না।তাকালেই যদি আবার কোন চিপায় নিয়ে গিয়ে শাড়ি টাড়ি খুলে দেয়!!

‘রাযীনের হলুূদ সন্ধ্যা’ সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে।এখন বরপক্ষ-কনেপক্ষ সবাই অন্তদের বাসায় ভীর জমিয়েছে।আর রাযীন বেচারি সিনিয়র ডক্টরের অনুরোধে ইমার্জেন্সি পেশেন্টের জন্য আবার হসপিটালে গিয়েছে।ডক্টরদের শান্তি নেই।আমরণ প্যারা।

সন্ধ্যার পর অন্তদের বাসার ছাদে ছোট বড় কালারিং লাইট জ্বলছে।লোকজনের হৈ-চৈ আর সাউন্ড বক্সের গান বাজার জন্য কে কি বলছে ভাল করে কিছুই শোনা যাচ্ছেনা।অন্ত আরাফের পাশে চেয়ারে বসে ফোনে গেইমস খেলছে।আর আরাফ রাগী চোখে নিপার দিকে তাকিয়ে আছে।নিপা একটু দূরে অচেনা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।অপরিচিতদের সাথে তার এত কিসের কথা থাকবে!থাকলেও এত হাসতে হবে কেন?আরাফের কোথাও একটু জ্বলছে।মনের কোনো এক কোনে নিপার জন্য জমে থাকা স্নেহ নাড়া দিয়ে উঠছে।এক সময় তো সে এই মেয়েকে খুব স্নেহ করতো।বাবা নেই, ভাই থেকেও নেই এসব ভেবে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে পড়াশুনার খোঁজ নিত।কোন সাবজেক্ট কিভাবে পড়তে হবে এসব ব্যাপারে টিপস দিত।নিপা তো লজ্জায় কথায় বলতো না।আরাফই এটা ওটা বলে কল কেঁটে দিত।আরাফ তখনকার নিপা আর এখনকার নিপার মধ্যে অনেক তফাৎ দেখতে পাচ্ছে।যেই নিপা লজ্জায় আরাফের সামনে মাথা তুলে তাকাতে পারতোনা এখন সেই নিপা অপরিচিত ছেলেদের সাথে কথা বলছে কিভাবে?ডিভোর্স হয়ে গেছে বলে?অন্য কাউকে পটিয়ে পাটিয়ে বিয়ে করবে বলে?আরাফ রাগী মুখ করে এসবই ভাবছিল হঠাৎই বলল না না এসব আমি কি ভাবছি, নিপা ওতোটাও খারাপ মেয়ে নয়।আর বিয়ে তো ওকে করতেই হবে না করলে কার কাছে থাকবে মেয়েটা!আরাফ নিজের মনকে বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু মন কিছু বুঝতে চাইছেনা।হঠাৎই আরাফ চেঁচিয়ে বলল,

‘নিপা!!’

হৈ-চৈ এর শব্দে নিপা শুনতে পায়নি।আরাফ আবার ডাকতেই নিপা চমকে আরাফের দিকে তাকালো।আরাফ চোখের ইশারায় নিপাকে নিজের কাছে ডাকলো।নিপা দ্রুত আরাফের সামনে এসে দাঁড়ালো।আরাফ রাগী কন্ঠে বলল,

‘ওখানে কি করছিস?যা আম্মুর কাছে গিয়ে বসে থাক।’

নিপা মুচকি হেসে নীল পান্জাবী পরা একটা সুন্দর ছেলের দিকে ইশারা করে বলল,

‘আসলে ওই ভাইয়াটা আমার বান্ধবীর ভাই হন।উনি রাযীন ভাইয়ার ফ্রেন্ড জানতামি না।অনেকদিন পর দেখা হল তাই…।

আরাফ ভ্রু কুচকে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,

‘যেতে বলেছি তোকে।’

নিপা ঠোঁট উল্টে আরাফের মায়ের কাছে চলে গেল।অন্ত ফোন রেখে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘উফ্ ভাইয়া তুমি সব সময় নিপা আপুর সাথে রেগে কথা বলছো।পচাঁ লাগছে তোমার কথা শুনতে।’

আরাফ অন্তর হাত থেকে ফোন নিয়ে বলল,

‘হয়েছে খেলা?এবার যাও ওদের সাথে মজা কর গিয়ে।দেখ ওরা আফ্রাকে হলুদ মাখাচ্ছে,তুমিও যাও।’

অন্ত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

‘যেতেই তো চাইছি,তুমিই তো যেতে দিচ্ছো না।’

অন্ত যেতে লাগলেই আরাফ অন্তর হাত ধরে বলল,
‘শোন নির্ভীকের সাথে কথা বলবা না।বদমাইশ ছেলে একটা!!একদম কথা বলবানা ওর সাথে।ডাকলে যাবানা কোথাও।’

অন্ত হা করে আরাফের পেছনে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে আছে।নির্ভীক পান্জাবীর হাতা গোটাতে গোটাতে অন্তকে বুঝালো এখন সে আরাফকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিবে।অন্ত একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,

‘কেন কথা বলবোনা?নির্ভীক ভাইয়া তো খুবই ভাল।উনার মতো ভাল এই পৃথিবীতে কেউ নেই, তাইনা নির্ভীক ভাইয়া?’

নির্ভীক পান্জাবীর কলার ঠিক করতে করতে আরাফের সামনে এসে বলল,

‘একদমই নয়।আমি অবশ্যই একটা বদমাইশ ছেলে, তাইনা আরাফ ভাইয়া?’

আরাফ চোখমুখ শক্ত করে বলল,
‘হুম।’

নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘থ্যাংক ইউ।

আরাফ অন্তর হাত ধরে চলে গেল।অন্ত পেছন ফিরে নির্ভীকের দিকে তাকাতেই নির্ভীক ঠোঁট চোখা করে চুমু দিল।অন্ত মুখ বাঁকা করলো।নির্ভীক চোখ দিয়ে অন্তকে শাসিয়ে মুচকি হাসলো।অন্ত যেতেই প্রান্ত নির্ভীকের হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে বলল,

‘এই নে তোর হানিমুনের টিকিট।’

নির্ভীক প্রান্তর পেটে ঘুশি দিয়ে বলল,

‘ওই ছাগলটাকে সরা আগে।দেখেছিস কিভাবে আমার বউ এর হাত ধরে ঘুরছে?শুধু তাই নয় আমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করছে।আমি নাকি বদমাইশ।তুই বল আমি বদমাইশ?’

প্রান্ত পেটে হাত দিয়ে বলল,

‘একদম না।’

নির্ভীক বাঁকা হেসে চুলের স্টাইল করতে লাগলো।প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,

‘তুই বদমাইশের চেয়েও বেশি বদমাইশ।আই মিন মোস্ট বদমাইশ।ইউ আর দ্যা সুপারলেটিভ ফর্ম অফ বদমাইশ।’

নির্ভীক রাগী চোখে প্রান্তর দিকে তাকালো।প্রান্ত মুখ কাচুমাচু করে এদিক ওদিক তাকিয়ে ইচ্ছেমতিকে দেখতে পেয়েই দৌঁড়।ইচ্ছেমতি একটু সাইডে দাঁড়িয়ে ফোন কানে ধরে ডক্টর মনিমকে রাগী কন্ঠে বলছে,

‘আর একবার যদি আমাকে ফোন দিয়েছিস বাবাকে বলে বিয়ে ক্যান্সেল করে দিব বলে দিলাম।’

ডক্টর মনিমও রেগে বলল,

‘এই একদম তুই তাকারি করবে না আর যাকে খুশি বল,বিয়ে আমি তোমাকেই করবো।’

ইচ্ছেমতি দ্বিগুণ রেখে বলল,

‘আসিস বিয়ে করতে তোর চোখ গেলে দিব।’

প্রান্ত বুঝতেই পারছে ইচ্ছেমতি এখন তার হবু বরের সাথে কথা বলছে।উত্তপ্ত মুহূর্তটাকে আর একটু উত্তপ্ত করতে প্রান্ত খপ করে ইচ্ছেমতির হাত থেকে ফোন নিল।স্ক্রিনে লিখা আছে ‘প্রান্ত ভাইয়ার সতীন’।এমন নাম দিয়ে নাম্বার সেভ করা দেখে প্রান্ত একটু ভরকে গেল পরমুহূর্তে মুচকি হেসে ফোন কানে ধরলো।ডক্টর মনিম রাগী কন্ঠে বলছে,

‘আমি ভেবেছিলাম সামনের বছর বিয়ে করব কিন্তু না এই মাসেই বিয়ে করব,খুব আর্লি।’

প্রান্ত রেগে বলল,

‘কে হে তুই?অন্যের বউকে বিয়ে করতে চাস লজ্জা করে না?কয়দিন পর আমার বউ এর বেবি হবে আর তুই এসেছিস আমার সংসার ভাঙতে?পরকীয়া করবি?থাপ্পড় দিয়ে সব লুচ্চামি ছাড়িয়ে দিব তোর।ফোন রাখ শালা।’

প্রান্ত নিজেই ফোন কেঁটে দিল।ইচ্ছেমতির দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘টিট ফর ট্যাট।এখন সামলাও তোমার ডক্টর বাবুকে।’

ইচ্ছেমতি হা করে প্রান্তর দিকে তাকিয়ে আছে।প্রান্ত ফোন দিয়েই সেখান থেকে কেঁটে পরলো।ইচ্ছেমতি কাঁদো মুখ করে বলল,

‘এখন কি হবে?’

প্রায় মধ্য রাত।শাড়ি গহনা খুলে একটা সাদা ঢোলা টিশার্ট আর গোলাপি রঙের পাটোয়ারী পায়জামা পরে অন্ত ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিল।ইচ্ছেমতি আয়নার সামনে বসে চুল বাঁধতে বাঁধতে বলল,

‘মেডিসিনটা খেয়ে ঘুমা।চুলটাও তো খুলে রেখেছিস।’

অন্ত চোখবন্ধ করে বলল,

‘আজ নয় কাল।’

এমন সময় নির্ভীক অন্তর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘উহুম আজই।’

নির্ভীকের কন্ঠ পেয়ে অন্ত হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠলো।কিছু বলার আগেই নির্ভীক অন্তর মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে দিল।অন্ত চোখ বড় বড় করে হাত দিয়ে মুখ খোলার চেষ্টা করতেই নির্ভীক অন্তর হাত ধরে বলল,

‘মুখ খুললেই কিস,মাথায় রেখ।এই ইচ্ছেমতি আসছি আমরা। তুমি ঘুমিয়ে পর ওকে?’

ইচ্ছেমতি মুচকি হেসে বলল,

‘ওকে ভাইয়া, অল দ্যা বেস্ট।’

নির্ভীক মুচকি হেসে অন্তকে কোলে নিয়ে হাঁটা দিল।অন্ত হাত-পা ছোরাছুরি করছে।নির্ভীক অন্তর গালে চুমু দিয়ে বলল,

‘এই তো আদর করে দিয়েছি বাবু,এখন ভাল বাচ্চার মতো চুপ করে থাকো নাহলে কিন্ত ননস্টপ আদর দিতে শুরু করবো।’

অন্তর লাফালাফি থামালো।হাত ছেরাছুরি করলে হাতের কাঁটা জায়গায় ব্যথা পাচ্ছে জন্য হাত নড়াতে পারছেনা।ডান হাত দিয়ে নির্ভীকের কাঁধে ইশারা করে বলছে নিচে নামিয়ে দিতে।নির্ভীক ফিসফিস করে বলল,

‘চুপ করে থাকো নাহলে সবাই দেখে ফেলবে।তুমি কি ভয় পাচ্ছ?কিসের ভয় পাগলি?আমি আছি তো।’

অন্তর মুখ খোলা থাকলে অন্ত বলতো আপনি আছেন জন্যই তো ভয় করছে।আপনার ফ্রেন্ড সিয়াম ভাইয়া পার্টিতে বলছিলেন আপনাকে নাকি বিয়ে পাগলা জ্বীনে ধরেছে।এখন আপনি জ্বীন নাকি মানুষ?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?যাব না আমি….এ্যা এ্যা।

আফসোস!! অন্ত নির্ভীককে কিছুই বলতে পারছেনা।অন্ত মনে মনে জ্বীন তারাবার জন্য কুল কালেমা পড়তে লাগলো।সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় জারিফকে উপরে আসতে দেখে অন্তর চোখ চকচক করে উঠলো কিন্তু একি!!অন্তর চোখে চোখ পরতেই জারিফ পকেট থেকে ফোন বের করলো।উল্টো দিকে ঘুরে হুদায় ফোনে কথা বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে কিচেনের দিকে চলে গেল।অন্ত নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।তার ভাই তাকে এমন একটা জ্বীনের সাথে দেখে কোনো রিয়েক্ট করলোনা কেন?এটা কি করে সম্ভব?ভাইয়া কি করে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেল?নিশ্চয় জ্বীনটা অনেক শক্তিশালী।ভাইয়াকে বস করে নিয়েছে।ভেবেই ভয়ে অন্তর শরীর শিউরে উঠলো।ভীত চোখে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

নির্ভীক অন্তকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দিল।সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে বলল,

‘মুখের টেপটা আর কিছুক্ষণ লাগানো থাক?প্লিজ!!’

অন্ত মানতে নারাজ।ডান হাতে টেপ খুলার চেষ্টা করতেই নির্ভীক অন্তর হাত সরিয়ে নিজে খুলতে লাগলো।ধীরে ধীরে টেপ খুলে দিতেই অন্ত চেঁচিয়ে বলল,

‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?যাব না আমি।’

নির্ভীক গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল,

‘কেন যাবা না?’

অন্ত উত্তেজিত হয়ে বলল,

‘গাড়ি থামান,থামান বলছি।কোথাও যাবোনা আমি।’

নির্ভীক গাড়ি থামালোনা।তীক্ষ্ণ চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি নিয়ে পদ্মার পাড়ে চলে আসলো।নির্ভীক গাড়ি থেকে নামার আগে লুকিং গ্লাসে নিজের চুল ঠিক করে নিল।সাদা শার্টের হাতাটা ঠিক করে ভাঁজ করে নিল।গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে সিটের উপর পা দিয়ে জুতোর ফিতেটা ঠিক করে বেঁধে নিল।তারপর অন্তর পাশে গিয়ে মুচকি হেসে অন্তর হাত ধরে বলল,

‘বেড়িয়ে এসো।’

অন্ত এতক্ষণ ভীত চোখে নির্ভীককে দেখছিল এবার ভয়ে ভয়ে নির্ভীকের হাত ধরে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো।নির্ভীক অন্তকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

‘এত কিসের ভয় পাচ্ছো বল তো?আমি থাকতে এত কিসের ভয় তোমার?’

অন্ত শুকনো মুখ করে বলল,
‘আপনাকেই তো ভয় করছে।সত্যি সত্যি আপনার সাথে জ্বীন আছে?’

নির্ভীক শব্দ করে হেসে বলল,
‘হোয়াট!!জ্বীন???’

‘হুম সিয়াম ভাইয়া বলছিলেন আপনাকে বিয়ে পাগলা জ্বীনে ধরেছে।আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন ওই জ্বীনকে?’

নির্ভীক বিরক্ত কন্ঠে বলল,
‘এই সিয়ামটাও না সব সময় আবোল তাবোল কথা বলে।জ্বীনে কেন ধরবে?ভয় দেখানোর জন্য বলেছে তোমাকে।’

অন্ত অন্ধকারে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল,
‘সুন্দর ছেলেদের নাকি জ্বীনে ধরে।আপনাকেও ধরেছে।’
নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘জ্বীন নয় পরী ধরেছে আমাকে,মায়াপরী।আর তোমাকে ওই বিয়ে পাগলা জ্বীনে ধরেছে।সুন্দর মেয়েদের বিয়ে পাগলা জ্বীনে ধরে।’

অন্ত ভীত কন্ঠে বলল,’না!!’

বালির উপর একটা ছোট সাপের বাচ্চা দেখেই নির্ভীক হাঁটা থামিয়ে বলল,

‘এই কোলে আসো,সাপ আছে এখানে।ফোনটা হাতে নাউ।’

হঠাৎই নির্ভীক অন্তর পায়ের দিকে খেয়াল করল।অন্ত খালি পায়ে আছে।নির্ভীক নিজের উপর রেগে গেল।এতক্ষণ অন্ত খালি পায়ে হাঁটছিল সে খেয়ালি করেনি।নির্ভীক অন্তর হাতে ফোন দিয়ে অন্তকে কোলে নিল।অন্ত বিরক্ত হয়ে বলল,

‘হাঁটতেই ভাল লাগছে।কত সুন্দর বালি!আমরা কোথায় যাচ্ছি?আমাকে তো জ্বীনে ধরেনি আর আপনার পরী কোথায়?পরীরা তো মেয়ে হয় কিন্তু আপনি তো মেয়ে হয়ে যাননি।’

নির্ভীক রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
‘উফ্ কি তখন থেকে জ্বীন পরী নিয়ে কথা বলছো।অন্যকিছু বল।আমাকে ভালোবাসো কিনা সেসব বল।’

অন্ত লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু মুখ লুকানোর জায়গা পাচ্ছে না।এদিক ওদিক তাকাতেই একটু দূরে অনেক আলো দেখতে পেল।বালির উপর একটা সাদা চাদর বিছানো আছে তাতে ফুল চকলেটসহ অনেক কিছু রাখা আছে।অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকালো।নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,

‘এই তো চলে এসেছি।’

নির্ভীক অন্তকে চাদরের উপর নামিয়ে দিল।নিজে চাদরের উপর সটান হয়ে শুয়ে বলল,

‘বস এখানে।’

অন্ত এদিক ওদিক দেখতে দেখতে নির্ভীকের পাশে বসলো।নির্ভীক হাতের কাছে একটা সুইচ টিপে দিতেই চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল।অন্ত ভয় পেয়ে অন্ধকারে নির্ভীকের হাত ধরে বলল,

‘নির্ভীক ভাইয়া ভয় করছে আমার।’

‘এখানে এসো’

নির্ভীক অন্তকে নিজের হাতের উপর শুয়ে দিল।অন্ত চোখ খিচে বন্ধ করে নির্ভীকের পেটের কাছে শার্ট খামছে ধরে বলল,

‘এত অন্ধকার কেন?’

নির্ভীক অন্তর হাতের উপর হাত রেখে বলল,

‘কোথায় অন্ধকার?তাকিয়ে দেখ আকাশে কত তারা।চোখ খোল,তাকাও।’

অন্ত ধীরে ধীরে চোখ খুললো।আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশ ভরা নক্ষত্রবীথী।অন্ত উঠে বসলো।নির্ভীকও অন্তর পাশে বসে মুগ্ধ হয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে আছে।মৃদু বাতাসে অন্তর খোলা চুল নির্ভীকের মুখে এসে পরছে।নির্ভীক মুচকি হেসে অন্তকে চকলেট খেতে দিল।দুজনে কথা বলতে বলতে অন্ধকারটা তাদের চোখে সয়ে গেল।নির্ভীক পকেট থেকে মেডিসিন বের করে অন্তকে দিল।অন্ত নাকমুখ কুচকে মেডিসন খেল।নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,

‘আই লাভ ইউ পিচ্চি।’

লজ্জা পেয়ে অন্ত মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো।নির্ভীক অন্তর ডান হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,

‘কোনো রোমাঞ্চকর ঘটনার মধ্যে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মেনি।ছোটবেলায় তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল।খুব স্নেহ করতাম তোমাকে।সেই স্নেহ মমতার সম্পর্ক বড় হয়ে ভালোবাসার রুপ নিল।বলে বুঝাতে পারবোনা কতটা ভালোবাসি।এতগুলো বছর ধরে তোমাকে ভালোবাসি,ভবিষ্যতেও তোমাকে ভালোবাসতে চাই।সারাজীবন এমনকি মৃত্যুর পরেও তোমাকে চাই।’

অন্ত বাকরুদ্ধ হয়ে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে আছে।নির্ভীককে নিয়ে টুকরো টুকরো স্বপ্ন অন্তর মনে ভেসে বেড়াচ্ছে।অন্য সব ইচ্ছে ডানা উড়িয়ে দিয়ে সারাজীবন নির্ভীকের সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে।নির্ভীক অন্তর হাতে চুমু খেল।মুচকি হেসে আবার সব আলো জ্বালিয়ে দিল।পাশ থেকে লালরঙের বিয়ের কার্ড নিল।কার্ডের উপর একটা লাল গোলাপ আর ডাইমন্ড রিং বক্স নিয়ে অন্তর দিকে তাকালো।মুচকি হেসে বলল,

‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।একদম শুদ্ধ পবিত্র শাস্ত্রীয় অথবা ততোধিক শুদ্ধ আইনসঙ্গতভাবে তোমাকে নিজের গরীয়সী মহীয়সী স্ত্রী হিসেবে সারাজীবন নিজের পাশে পেতে চাই।তুমি কি আমাকে বিয়ে করবা?উইল ইউ ম্যারি মি?’

 

চলবে…………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here