ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২পর্ব:৩৯

0
1188

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৩৩.

অনেকক্ষণ থেকেই হাঁটছে ইচ্ছেমতি।গরম এখন অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে।আশেপাশে রাস্তার দু-ধারে বাসাবাড়ি গুলোর সামনে হাতে গোনা কয়েকটা লোক দেখা যাচ্ছে।দুপুরের এই সময়টাতে রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা কম থাকে।আরও কিছুদূর যাবার পর প্রান্তদের বাসা চোখে পরলো।গোলাপি রং করা দোতলা বাসা,তিন তলার কাজ চলছে।নিচতলার দেয়ালে একটা কালো সাইনবোর্ডে সাদা কালি দিয়ে লিখা আছে ‘টু লেট’।।ইচ্ছেমতি টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো।ছাতা গুটিয়ে ব্যাগ থেকে ছবির খাম বের করে হাতে নিল।নিঃশব্দে দরজার সামনে দাঁড়ালো।আশেপাশে কেউ আছে কিনা দেখে নিয়ে দরজার নিচ দিয়ে ছবির খাম ভেতরে ঠেলে দিল।দুবার কলিংবেলে চাপ দিয়ে ইচ্ছেমতি এক প্রকার দৌঁড়ে সেখান থেকে চলে আসলো।কয়েকবাসা পার হয়ে এসে আবার ছাতা গুটিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বলল,

‘প্রান্ত হিরো?এবার কি হবে?আপনার আম্মাজান খুব আদর করবে তাইনা?’

ইচ্ছেমতি হাসলো।গলি পার হয়ে মেইনরোডে এসে রিক্সায় উঠে বাসায় চলে গেল।তানোর থেকে ফিরার পথে প্রান্ত যখন ইচ্ছেমতির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছিল তখন ইচ্ছেমতি কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছিল।এখন সেই ছবি গুলো ইডিট করে প্রান্তর মাকে দেখানোর জন্য ইচ্ছেমতি ছবি গুলো প্রান্তদের বাসায় দিল যাতে প্রান্ত মায়ের হাতে মাইর খায়।

কলিং বেল বাজার শব্দে প্রান্তদের বাসার কাজের মেয়েটা এসে দরজা খুলে দিল।বাইরে কাউকে না দেখে খানিকটা বিরক্ত হল কিন্তু পায়ের কাছে সাদা খাম পরে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকালো।হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করেই খুশি হয়ে চেঁচিয়ে উপরে আসতে আসতে বলল,

‘খালাম্মা?ও খালাম্মা।এই দ্যাখেন চিঠি আইসা গেছে।ভাইয়ের চাকরি হইয়া গেছে।ও খালাম্মা।’

প্রান্তর মা যুহরের নামাজ শেষ করে তসবি তেলাওয়াত করছিলেন।চিঠির কথা শুনেই উনি খুশি হয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করতে করতে জায়নামাজ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।হাসি মুখ করে ঘর থেকে বের হয়ে কাজের মেয়ের হাত থেকে খামটা নিলেন।প্রান্ত একটা সফটওয়্যার কম্পানিতে ভাইভা দিয়ে এসেছে।চাকরিটা হয়ে গিয়েছে কিন্তু কাজে যোগ দেওয়ার চিঠি আসবে তারপর যেদিন থেকে বলবে সেদিন থেকে কাজে যেতে হবে।প্রান্তর মা ভেবেছেন এটাই সেই চিঠি।উনি হাসি খুশি মুখে খামটা খুললেন।এতগুলো ছবি দেখে কিছুটা অবাক হলেন আর সবথেকে বেশি অবাক হলেন নিজের ছেলেকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে।প্রান্তর মা রেগে গেলেন।ঘরে ঢুকে ওয়্যারড্রপের উপর থেকে ফোন নিয়ে প্রান্তকে কল দিলেন।প্রান্ত সবসময়ের মতো কল কেটে ব্যাক করলো।প্রান্ত মা কল রিসিভ করে রেগে বললেন,

‘কোথায় তুই?তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।’

‘ক্যাম্পাসে আছি।কেন?কি দরকার?’

প্রান্তর মা দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
‘আসলেই দেখতে পাবি বেয়াদব ছেলে।’

প্রান্ত ফোন কেটে দিয়েছে।প্রান্তর মা ফোন রেখে আবার ছবি দেখায় মন দিলেন।

দুপুরের খা খা রোদে বাসার সামনে কাঠগোলাপ গাছের নিচে বসে থেকে হাসপাখিদের খাওয়াচ্ছে অন্ত।সকালে নির্ভীক ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় সাতটা হাসপাখি কিনে একটা ছেলের হাতে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।তখন থেকে অন্ত এদের নিয়ে পরে আছে।সবগুলোর একপায়ে দড়ি লাগিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে যাতে কোথাও চলে না যায়।অন্ত একটা পটে করে কিছু চাল এনে খুব যত্ন করে তাদের খাওয়াচ্ছে।শেফালি অন্তর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

‘আফা চলো ভেতরে যাই।গরম খুব।’

অন্ত হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের উপর লেপ্টে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল,

‘তুমি একটু পানি নিয়ে আসো,পানি খাবে ওরা।’

শেফালি কিছুটা বিরক্ত হয়ে হাঁটা দিল।মনে মনে বলল হাসেদের সাথে এত আদিখ্যেতার কি আছে বুঝিনা বাপু।শহরের মানুষ গুলান সব এক।গেরামে আমরা যেগুলানরে বিরক্ত মনে করি এরা সেগুলান নিয়া নাচানাচি করে।সাঁতার জানেনা তাও পুকুরে নাইমা পানি টানি খাইয়া মরবার লাগে।সবগুলান পাগলছাগল!

শেফালি যেতেই অন্তর ফোন বেজে উঠলো।কোলের মধ্যে থেকে ফোন নিয়ে দেখলো আরাফ ফোন দিয়েছে।অন্ত একরাশ অভিমান নিয়ে ফোন কানে ধরে চুপ করে থাকলো।কয়দিন ধরে আরাফ অন্তর সাথে কথা বলেনি জন্য মন খারাপ করেছে।ওপাশ থেকে আরাফ মলিন কন্ঠে বলল,

‘জানপাখি!কেমন আছো?’

অন্ত থমথমে মুখ করে বলল,

‘কেন কথা বলছো?এতদিন ফোন না দিয়ে এখন এসেছে ফোন দিতে।কথায় বলব না তোমার সাথে।’

‘সরি ভুল হয়ে গেছে।আসছোনা কেন এই বাসায়?’

অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,

‘যেতেই তো চাইছি কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া যেতে দিচ্ছেনা।ফ্রাইডে যেতে দিবে বলেছে।’

‘অহ ওকে।আচ্ছা চল বিকেলে কোথাও ঘুরে আসি।শপিং এ যাবা?ইচ্ছের শপিং শেষ তো!’

অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,

‘কিসের শপিং?’

‘কাল ওর বার্থডে।ভুলে গিয়েছো?ওর জন্য গিফট কিনতে হবে তো।’

সব রাগ অভিমান ভুলে অন্ত কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলল,
‘হ্যা কালই তো ওর বার্থ ডে।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।’

‘তাহলে বিকেলে যাবা শপিংয়ে?’

অন্ত কিছু না ভেবেই বলল,

‘হুম।’

‘ওকে রেডি হয়ে থেকো।’

আরাফ কল কেটে দিল।অন্ত আবার হাসদের খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে গেল।অনেকক্ষণ থেকে অন্ত বাহিরে তাই কমলা এসে অন্তকে ভেতরে নিয়ে গেল।

বিকেল পাঁচটা।অন্ত আড়মোড়া ভেঙ্গে শোয়া থেকে উঠে বসলো।দুপুরের খাবার খেয়ে একটা লম্বা ঘুম দিয়েছিল। আরাফের ফোন পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল।আরাফ ফোন করে তৈরী হতে বলল।অন্ত জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।আকাশে রোদ নেই।ঘোলাটে পাতলা মেঘে সূর্য টা ঢেকে আছে হয়ত।বাইরে বাতাস বইছে।ফ্যানের বাতাস গরম লাগছে তাই বিছানা ছেড়ে উঠে সুইচ অফ করে দিল।জানালার পর্দা সরিয়ে কাচটা পুরো খুলে দিল।সাথে সাথে শীতল বাতাস এসে আছড়ে পরলো অন্তর চোখে মুৃখে।মুহূর্তেই মন চঞ্চল হয়ে উঠলো।জানালার পাশেই টবে সবুজ পাতাবাহার গাছ তার পাশেই নকশা করা কাঠের টুলের উপর নির্ভীকের কালো গিটার দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখা আছে।অন্ত তাড়াহুড়ো করে নিজের চুল থেকে ব্যান্ড খুলে নিল।উৎফুল্ল হয়ে গিটারটা হাতে তুলে নিল।কাঠের টুল ঠেলে জানালার পাশে এনে বসলো।কোলের উপর গিটার নিয়ে গিটার ছুয়ে দেখতে লাগলো।বিচিত্র অনুভূতি নিয়ে গিটারের তারে হাত ছোঁয়াতেই ডানহাতের মধ্যমা আঙুলটা ঘ্যাচ করে কেটে গেল।অন্ত ভয় পেয়ে গেল।ব্যথায় নয়,নির্ভীক দেখলে কি হবে সেটা ভেবে।গিটার রেখে ওড়নার কোনা দিয়ে রক্ত মুছলো।বিছানা থেকে ফোন তুলে নির্ভীককে কল দিল।দুপুর থেকেই আরাফের সাথে শপিংয়ে যাবে কিনা শোনার জন্য ফোন দিব দিব করছিল,এতক্ষণে দিল।কল রিসিভ করেই নির্ভীক বলল,

‘কি হয়েছে বউ?’

অন্ত একহাতে টুলের উপর গিটারটা আগের মতো করে রেখে দিয়ে বলল,

‘কোথায় আপনি?’

‘এখানে।’

অন্ত কান থেকে ফোন সরিয়ে পেছনে তাকালো।নির্ভীক দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।অন্ত তাকাতেই দুই হাত বাড়িয়ে দিল অর্থাৎ অন্তকে এখন দৌঁড়ে তার বাহুর মধ্যে যেতে হবে।অন্ত দৌঁড়ে গেল না।কচ্ছপের গতিতে হেঁটে নির্ভীকের সামনে যেতেই নির্ভীক অন্তকে জড়িয়ে ধরলো।কপালে তিন চারটে চুমু দিয়ে বলল,

‘কুমড়ো পটাশের মতো ফুলে আছো কেন?ঘুমিয়ে ছিলা?’

অন্ত মুচকি হেসে বলল,

‘আমাকে কুমড়োর মতো দেখাচ্ছে?’

নির্ভীক ফু দিয়ে অন্তর চোখের উপর আসা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল,

‘হ্যাঁ,ফোলা চোখ আর ঠোঁট।মাচ কিউট!’

অন্ত নির্ভীকের কাছ থেকে ছাড়া পাবার জন্য নড়ে চড়ে উঠলো।নির্ভীক অন্তর গালে চুমু দিয়ে বলল,

‘বাহিরে আরাফ ভাইয়া ওয়েট করছে আর তুমি এখনো রেডি হওনি?’

অন্ত মুচকি হেসে বলল,
‘যাব ভাইয়ার সাথে?’

নির্ভীক অন্তকে ছেড়ে দিয়ে হাত ঘড়ি খু্লতে খুলতে বলল,
‘অবশ্যই যাবা।রেডি হও তাড়াতাড়ি।রেড কালারের মধ্যে কোন ড্রেস পর।’

অন্ত আলমারি খুলে লাল গাউন নিল।ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে এসে আয়নার সামনে বসে চুল বাঁধতে লাগলো।নির্ভীক মুচকি হেসে টিশার্ট আর ট্রাউজার কাঁধে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসে অন্তর পাশে হাঁটু গেড়ে বসলো।অন্ত চুল বাঁধা শেষে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে নিল।নির্ভীক ড্রয়্যার থেকে সরু দুটো সোনার চুড়ি বের করে অন্তর হাতে পরিয়ে দিল।এতক্ষণে অন্তকে বউ বউ লাগছে।নির্ভীক আরফের জন্য অন্তর হাতে চুড়ি পরিয়ে দিল যাতে চুড়ি দেখে আরাফের বুঝতে কোনো সমস্যা না হয় যে অন্ত এখন বিবাহিত।অন্তর ডান হাতের আঙুল কাটা দেখেই নির্ভীক রেগে অন্তর দিকে তাকালো।অন্ত মুখ কাচুমাচু করে বলল,

‘গিটারে হাত দিয়েছিলাম।’

নির্ভীক কিছু বলল না।কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ে ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে অন্তর হাতে দিল আর ফোন নিয়ে উঠে ব্যালকনিতে গেল।অন্তর ফোনেও বিকাশ করে টাকা পাঠিয়ে দিল।অন্ত নির্ভীকের পেছনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

‘এত টাকা দিয়ে কি হবে?’

নির্ভীক থমথমে মুখ করে বলল,
‘যা লাগবে খরচ করবা।আরাফ ভাইয়া ওয়েট করছে যাও।’

নির্ভীককে এমন থমথমে মুখ করতে দেখে অন্ত ঘরে যেতে যেতে রেগে বলল,
‘যাব না,আপনি শুধু আমার উপর রাগ করেন।আমি কি ইচ্ছে করে হাত কেটেছি?আপনার গিটারটা একটুও ভাল নয়,হাত দিলাম আর কেটে গেল।’

নির্ভীক চেঁচিয়ে বলল,

‘না গেলে থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত খুলে নিব কেয়ারলেস কোথাকার!!’

অন্ত ভ্রু কুচকে সট সট করে হেঁটে নির্ভীকের সামনে এসে গাল এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘নিন মারুন।’

নির্ভীক রেগে অন্তর ঠোঁটে চুমু দিল।নির্ভীকের দূর্ভাগ্য অন্ত আজ ওয়াটার প্রুফ লিপস্টিক লাগায়নি তাই লিপস্টিক ঠোঁটে লেপ্টে গেল।নির্ভীক রেগে হাত দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল,

‘হোয়াট দ্যা……কি লাগিয়েছো এসব!!ইয়াক!!!ডামেজ হয়ে গিয়েছে মনে হয়!মুছে ফেলো!’

অন্ত এতক্ষণ হতভম্ব হয়ে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে ছিল।এখন বুঝতে পারছে তার আগে ভাবা উচিত ছিল যে নির্ভীক এমন কিছু করবে।অন্ত একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়ালো।টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছে আবার নতুন করে লিপস্টিক লাগিয়ে ব্যাগ নিয়ে হাঁটা দিল।নির্ভীক অন্তর পেছনে যেতে যেতে বলল,

‘রাগ করেছো?সরি।আর ওখানে কিসি দিব না,প্রমিস।কথা বলছোনা কেন!এই বউ?সরি বলছি তো।’

অন্ত মুখ ফুলিয়ে নিচে চলে আসলো।দরজার কাছে এসে নির্ভীক অন্তর হাত ধরে বলল,
‘ম্যাক্সিমাম ওয়ান আওয়ার টাইম দিলাম এর মধ্যে ফিরে আসবা,আ’ম ওয়েটিং।’

অন্ত থমথমে মুখ করে হাত ছাড়িয়ে নিল।দৌঁড়ে বাহিরে যেয়ে হাসতে হাসতে বলল,

‘আজকে ভাইয়ার সাথে আমাদের বাসায় যাব।’

নির্ভীক অন্তর দিকে চোখ গরম করে তাকালো।অন্ত নির্ভীককে মুখ ভেংচি দিয়ে হাসগুলোর দিকে তাকালো।সব হাস মাটিতে বসে ছিল অন্ত তাদের তাড়া দিয়ে তুলে দিল।খিলখিল করে হাসতে হাসতে পকেট গেইট খুলে বেড়িয়ে গেল।নির্ভীক দরজায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে অন্তর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

সারাদিন হৈচৈ আর আড্ডাবাজি করে শেষ বিকেলে ঘরে ফিরলো প্রান্ত।দরজার পাশে জুতোর র্যাকে জুতো খুলে রাখতেই নির্ভীকের কুকুর দৌঁড়ে তার কাছে আসলো।প্রান্ত কুকুরটির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘তুই যদি নির্ভীকের কুত্তা না হয়ে আমার কুত্তা হতিস,জানে মেরে দিতাম তোকে।সামনে থেকে সর বা*।’

কুকুরটা এখন বেশ বড় হয়েছে।তাই তাকে কিছু বললে প্রতিবাদ করে।ঘেউ ঘেউ করে বাসা মাথায় তোলে।এখনও তাই করছে।প্রান্ত বিরক্ত হয়ে র্যাকের উপরের তাক থেকে ডগ ফুড দিয়ে তাকে ঠান্ডা করলো।ড্রইং রুমের সোফায় বসে মাকে ডাকতেই প্রান্তর মা তিরিক্ষি হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।প্রান্তর মুখে ছবি গুলো ছুড়ে মেরে কর্কশ কন্ঠে বললেন,

‘এসব কি প্রান্ত??সারাদিন শুধু মেয়েদের সাথে ঘুরাঘুরি করেছিস??’

প্রান্ত ভ্রু কুচকে ছবি গুলো হাতে নিয়ে ভাল করে দেখলো।মুচকি হেসে বলল,

‘এসব ইডিট করা যায়।’

প্রান্তর মা রেগে বললেন,

‘থাম তুই।ইডিট করা যায়,বোকা ভেবেছিস আমাকে?কে এসব ইডিট করবে?এর আগেও একটা মেয়ে বলেছিল তুই বিয়ে করেছিস।ভালই ভালই বল মেয়েটা কে?’

প্রান্ত উঠে দাঁড়ালো।মায়ের পাশে গিয়ে বলল,
‘উফ্ আম্মু,তুমি এত হাইপার হচ্ছো কেন বল তো?এসব নির্ভীক করেছে আমাকে বকা খাইয়ে নেওয়ার জন্য।’

প্রান্তর মা ছটফট করতে করতে কোথাও থেকে একটা ঝাড়ু জোগাড় করলেন।প্রান্তর দিকে ঝাড়ু উঁচু করে ধরে বললেন,

‘চুপ কর বেয়াদব ছেলে।নির্ভীকের তোর পেছনে লাগার সময় আছে?ছেলেটা কত পড়াশুনা করে ভাল সিজিপিএ তুলেছে সেজন্যই তো ভার্সিটি ওকে ছাড়লোনা আর তুই পড়াশুনা বাদ দিয়ে শুধু মেয়েদের সাথে ঘুরেছিস।একদম বাপের মতো হয়েছিস।বাবা ছেলে মিলে আমার জীবনটা শেষ করে দিলি।’

প্রান্তর বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,

‘এই একদম আমার মতো বলবে না।তোমার ছেলে তোমার মতো কল্লা পঁচা হয়েছে।এখনও যদি আমাকে চাকরির পরীক্ষায় বসানো হয় আমি একশোতে নব্বই পাব,তুমি আর তোমার ছেলে পাসও করতে পারবেনা।’

প্রান্তর মা প্রান্তর একবাহুতে হাত রেখে প্রান্তর বাবার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,
‘আমি কল্লা পঁচা??তুমি কল্লা পঁচা সেজন্যই তো তোমার ছেলেও কল্লা পঁচা হয়েছে।নির্ভীককে দেখো,কত ফাস্ট!চাকরি পেল, বিয়ে করল, কয়দিন পর বাচ্চাকেও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবে আর তোমার ছেলে কিচ্ছু করতে পারবেনা,কিচ্ছু না।সারাদিন মেয়েদের সাথে ঘুরে। পড়াশুনায় মন নেই তাহলে চাকরি বাকরি হবে কি করে?চাকরি কি ছেলের হাতের মোয়া?’

ঝগড়া বাড়তে থাকলো।প্রান্ত বিরক্ত হয়ে নিজের ঘরে চলে আসলো।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বলল,

‘ খুব ভাল দিয়েছো সখিনা বিবি নাউ মাই টার্ন।’

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here