ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:৪

0
2110

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৩.(বোনাস)

ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাইয়া আপুদের কাছ থেকে র্যাগ খেয়ে একগাদা অ্যাসাইনমেন্ট হাতে নিয়ে থমথমে মুখ করে প্যারিস রোড দিয়ে হেঁটে কাজলা গেইটে যাচ্ছি।আমার সাথে ইচ্ছে আর রিপন আছে,বাকিরা অন্য গেইট দিয়ে গিয়েছে।ব্যাগের মধ্যে ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে তাই খাতা গুলো ইচ্ছের হাতে দিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে করতে বললাম,
—ভাইয়া…বাসায় যাবো..এ্যা এ্যা এ্যা।
ইচ্ছে বিরক্ত হয়ে ওর হাতের খাতা গুলো আমার হাতে দিয়ে আমার কাছে থেকে ফোন নিয়ে বলল,
—ভাইয়া তুমি ওকে নিয়ে যাও তো,সারাদিন কান্না করছে।

ইচ্ছে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন আমাকে দিল।আমি হেঁচকি তুলতে তুলতে বললাম,
—আসবে তুমি?
—হুম সামনের উইক যাবো।(বিরক্ত হয়ে)
—না আজকেই আসো।(হেঁচকি তুলতে তুলতে)
—শোন আমি একটু পরে ফোন করছি,কান্না থামা,রাখছি।

বলেই ভাইয়া ফোন কেটে দিল।আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে জোড়ে জোড়ে কান্না করে দিলাম।ইচ্ছে আমার হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
—এই দাঁড়ালি কেন?বাসায় যাবিনা?
—না।(হেঁচকি তুলতে তুলতে)

রিপন আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
—-আজিব ক্যারেক্টার তুই।বাপের জন্মে কাউকে দেখলাম না বাসায় যাওয়ার জন্য কেউ এরকম করে কাঁদছে।

আমি কিছু বললাম না।শুধু হেঁচকি উঠছে আর চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পরছে।ইচ্ছে রাগ করে বলল,
—-থাক তুই এখানে।এই রিপু চল তো।ও একা একা থাকুক এখানে।

বলেই ইচ্ছে গট গট করে হেঁটে চলে যেতে লাগলো।রিপন আমাকে ওদের সাথে যেতে বলে চলে গেল।আমি একই ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁদতে লাগলাম।রিপন আর ইচ্ছে কিছুটা দূরে যেতেই একটা কালো বাইক এসে আমার পাশে থামলো।ভাল করে তাকিয়ে দেখি রাগী ছেলে নির্ভীক।উনি চট করে বাইক থেকে নেমে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
—অন্ত?এখানে কি করছো?কাঁদছো কেন!!(উদ্বিগ্ন হয়ে)

আমি উনাকে পাশ কাটিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের খাতা গুলো বুকে চেপে ধরে ইচ্ছে আর রিপনের কাছে দৌঁড়।নির্ভীক ও আমার পেছন পেছন আসতে আসতে বলছেন,
—অন্ত?এই কি হয়েছে তোমার?

আমি ইচ্ছের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই উনিও আমার পাশে এসে চিন্তিত হয়ে বললেন,
–কি হয়েছে বলবে তো!!কাঁদছো কেন?কে কি বলেছে বলো?

রিপন উনার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–ভাইয়া ওকে র্যাগ দিয়েছে।
নির্ভীক রেগে বললেন,
–কে র্যাগ দিয়েছে?চলো এখনই দেখিয়ে দিবা আমাকে।

ইচ্ছে আমার একবাহু ধরে বললেন,
—র্যাগ নয় ও বাসায় যাওয়ার জন্য কাঁদছে।এই ভার্সিটিতে পড়বেনা।ঢাকায় যেয়ে প্রাইভেটে ভর্তি হবে আর মায়ের আঁচল ধরে বসে থাকবে,মাথা মোটা কোথাকার।

নির্ভীক অবাক হয়ে বললেন,
—হুয়াই?কেন থাকবানা এখানে?

আমি আবার ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম।হাত থেকে খাতা আর ফোন আপনা আপনি পরে গেল।ইচ্ছে নিচে থেকে খাতা গুলো তুলতে তুলতে বলল,
–আরে চুপ কর মেরি বেহেনজি।আজকেই ভাইয়া এসে নিয়ে যাবে তোকে।

নির্ভীক রিপনকে আমার পাশে থেকে সরিয়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–এখানে কার কাছে থাকো তুৃমি?
–বাবার ফ্রেন্ডের বাসায়।(চোখ মুছতে মুছতে)
–বাসায় কারা থাকে?(ভ্রু কুচকে)
–অ্যাঙ্কেল,অ্যান্টি,খালা,চাচা আর আমরা।(নাক টেনে)
—আমরা মানে?অ্যাঙ্কেল-অ্যান্টির ছেলে মেয়ে নেই?

ইচ্ছে খাতা আর ফোন নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
–হ্যা আছে।দুই ছেলে কেউ বাসায় থাকেনা।আমরা মানে আমি আর অন্ত।

আমার ফোন বাজছে।ইচ্ছে রিসিভ করে আমার কাছে দিয়ে বলল ভাইয়ার ফোন।আমি ফোন কানে ধরেই বললাম,
—আসছো তুমি নাহলে কিন্তু আমি একা একা চলে যাবো।
—একা আসতে হবেনা।অ্যাঙ্কেলের সাথে কথা বলে নিয়েছি ব্যবস্থা করে দিবে সন্ধ্যায় বাসে উঠে চলে আসবি।তোর সাথের টাতো আসবেনা।ওকে দেখে শিখ কিভাবে মানিয়ে নিতে হয়।

–সত্যি?কখন বাস?কে যাবে আমার সাথে?ইচ্ছে যাবেনা কেন?(খুশি হয়ে)
–শোন শুধু দুদিন এর বেশি একদিনও থাকতে পারবিনা।একদম জেদ করবিনা।(রাগী কন্ঠে)

–না দুদিন নয় আমি আর এখানে আসবোনা প্লিজ প্লিজ।টিসি নিয়ে দাও এখান থেকে।(মন খারাপ করে)
–আচ্ছা আয় আগে তারপর ডিসিশন নেওয়া যাবে।
–আচ্ছা আচ্ছা।(খুশি হয়ে)

কল কেটে আমি ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে বললাম,
–সন্ধ্যায় চলে যাবো ইয়ে।

নির্ভীক রাগী কন্ঠে বললেন,
–হোয়াট দ্যা….চলে যাবে মানে কি??

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
—ঢাকায় যাবো।আপনাদের এই পঁচা ভার্সিটিতে থাকবোই না।এই ইচ্ছে বাসায় চল,সব গুছিয়ে নিতে হবে।

আমি হাঁটা দিতেই নির্ভীক আমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে বললেন,
–ওয়েট ওয়েট।এখানে আসবানা কেন?ঢাকায় কোথায় বাসা তোমাদের?প্লিজ যেওনা।

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
–নির্ভীক ভাইয়া,কি করছেন?যেতে দিন।

উনি তাও বললেন,
–কোথাও যাবা না বলো,প্রমিস মি।
–কেন?আমি গেলে আপনার কি?আজব তো!(ভ্রু কুচকে)

উনি পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন দিয়ে বললেন,
–হ্যালো পলাশ ভাই?কোথায় তুমি?ওকে ওয়েট..

ফোন না কেটেই আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললেন,
–আচ্ছা যাও আমিও দেখি কি করে যাও তুমি।

বলেই উনি উল্টো দিকে ঘুরে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইকের কাছে চলে গেলেন।আমি ভীত কন্ঠে ইচ্ছে আর রিপনকে বললাম,
–ওই রাগী ছেলেটা আমাকে থ্রেট দিল!!!!

রিপন হাসতে হাসতে বলল,
—হোয়াট আ অ্যাটিচিউড!!

ইচ্ছে মুচকি হেসে বলল,
–আচ্ছা যাও আমিও দেখি কি করে যাও তুমি।

আমি চিন্তিত হয়ে নির্ভীকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।দেখতে দেখতেই উনি বাইক নিয়ে হাওয়া হয়ে গেলেন।

সন্ধ্যায় ঢাকায় যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছি।অ্যাঙ্কেল চাঁদ ভাইয়ার সাথে আমাকে ঢাকায় পাঠাবেন কিন্তু চাঁদ ভাইয়া এখনও বাসায় আসছেন না।অ্যাঙ্কেল প্রায় এক ঘন্টা আগে উনাকে ফোন দিয়ে জরুরী দরকার বলে বাসায় আসতে বলেছেন।উনি আসতে চেয়েও আসছেন না। আমি মন খারাপ করে সোফায় শুয়ে থেকে মেইন দরজার দিকে তাকিয়ে আছি।ইচ্ছে উপরে রুমে আছে।খালা আর অ্যান্টি কিচেনে রান্না করছে।অ্যাঙ্কেল কিছুক্ষণ এখানে বসে থেকে রুমে চলে গেলেন।আমি শুয়ে থেকে দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ নির্ভীক এসে দরজার পাশে সাজিয়ে রাখা বড় ফুলদানিতে একটা লাথি দিলেন আর ফুলদানিটা কিছুটা দূরে যেয়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।উনাকে দেখে বুঝতে পারছিনা এখানে শুয়েই থাকবো নাকি রুমে যেয়ে লুকিয়ে পরবো।উনি কোনো দিকে না তাকিয়ে গট গট করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছেন।হঠাৎ খেয়াল করলাম দরজার কাছে সেই সাদা কুকুরটা একপা উচু করে দেয়ালে অপকর্ম করছে।

আমি লাফ দিয়ে উঠে বসে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
–অ্যান্টি!!খখখালা!!ককককুকুর!!!

কুকুরটা আমার কথা শুনেই আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।আমি সোফা থেকে নেমে দৌঁড়ে উপরে যেতে লাগলাম।কুকুরটাও কু কু করতে করতে আমার পেছন পেছন আসতে লাগলো।উপরে এসেই দেখি নির্ভীক একটা রুমের দরজা খুলছে।আমাকে দেখেই উনি দুই হাত দিয়ে চোখ কচলে নিলেন।কুকুরটা আমার পেছনে আসছে দেখে আমি বাধ্য হয়ে উনার কাছে দৌঁড়ে যাচ্ছি।আমার পা কিছুতেই যেতে চাইছেনা কিন্তু আমার মস্তিষ্ক বলছে উনার কাছে যা নাহলে কুকুরটা তোকে খেয়ে ফেলবে।আমি দৌঁড়ে উনার কাছে যেতেই উনি আমাকে দুইহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমাকে নিয়ে তিন-চার পাক বন বন করে ঘুরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আমার দুই গালে হাত দিয়ে বললেন,
–সত্যি এটা তুমি?বলো সত্যি?আমি কি স্বপ্ন দেখছি?অহ মাই গড।

একদমে কথা গুলো বলে উনি আমার কপালে গভীর একটা কিসও করলেন।আমি হতবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।কুকুরটা এসে আমার পায়ে গা ঘেষে কু কু আওয়াজ করতেই আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল।উনার এমন আজব আচরনে আর কুকুরের ভয়ে আমার মনে হল আমি পটল তুলে ফেলেছি।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here