ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২পর্ব:৪৩

0
1609

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৩৭.

ইচ্ছেমতির বাবা-মা মেয়ের চিন্তায় সকাল সকাল রাজশাহীতে চলে এসেছেন।ইচ্ছেমতির ঘরে পিনপতন নীরবতা।ইচ্ছেমতি থমথমে মুখ করে বিছানার মাঝখানে পা গুটিয়ে বসে আছে।বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বার বার বুঝাচ্ছে সে যেন প্রান্তকে বিয়ে না করে কিন্তু ইচ্ছেমতি একটা কথাও বলছেনা।আরাফ আর জারিফ সোফায় বসে আছে।ইচ্ছেমতির মা মেয়েকে বকাবকি করে রাগী মুখ করে বিছানার এক ধারে বসে আছেন।অনেক বুঝানোর পরও ইচ্ছেমতি হ্যাঁ না কিছু বলল না।আরাফ বিরক্ত হয়ে বাবাকে বলল,

‘উফ্ বাবা কি বলছো এসব?আমি মনিমকে বলে দিয়েছি অন্য মেয়ে দেখতে।তোমরাও প্রান্তকে দেখার প্রিপারেশন নাও।আমি সন্ধ্যাই ওদের আসতে বলেছি।’

ইচ্ছেমতির বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘আমার এত বছরের বন্ধুত্ব!’

জারিফ পায়ের উপর পা তুলে বলল,

‘কেমন বন্ধুত্ব তোমাদের?এত সামান্য কারনে নষ্ট হয়ে যাবে এটা কোন বন্ধুত্ব হল নাকি?মনিমের সাথে শুধু বিয়ের কথা হয়েছিল কিন্তু বিয়ে তো হয়নি।নানান কারনে বিয়ে নাও হতে পারে তাই বলে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে?’

ইচ্ছেমতির বাবা মন খারাপ করে বলল,

‘আজিজ কষ্ট পেয়েছে অনেক।’

ইচ্ছেমতির মা ফুসে উঠে বললেন,

‘আর তোমার মেয়ের কষ্ট চোখে পরছেনা?বলি সবাই যখন প্রান্ত প্রান্ত করছে তাহলে মেনে নাও না বিয়েটা।’

ইচ্ছেমতি মুচকি হেসে মায়ের দিকে তাকালো।তারমানে মা রাজী হয়ে গিয়েছে।ইচ্ছেমতির বাবাও কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বিয়েতে মত দিলেন।সবার সামনে থাকতে ইচ্ছেমতির এবার বেশ লজ্জা লাগছে তাই দৌঁড়ে অন্য ঘরে চলে গেল।

বিকেলে আরাফ নিজের ঘরে বসে জারিফের অফিসের কিছু ফাইল দেখছিল তখন নিপা ঘরে ঢুকে বলল,

‘নির্ভীক ভাইয়া এসেছেন। আপনার সাথে দরকারি কথা আছে।আপনাকে নিচে যেতে বললেন।’

আরাফ ভ্রু কুচকে ফাইল রেখে ড্রইং রুমে আসলো।নির্ভীক সোফায় বসে অন্তর সাথে ফোনে কথা বলছিল আরাফ আসতেই ফোন রেখে উঠে দাঁড়ালো।আরাফ নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘কি ব্যাপার?তুই?’

নির্ভীক ছবি গুলো আরাফের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সোফায় বসে বলল,

‘এ ব্যাপারে কি বলবা বল?অন্ত দেখেছে এগুলো।বিশ্বাস করেনি।’

আরাফ ছবিগুলো দেখে অবাক হল।টোয়া তো তাকে ছবিগুলো ফেরত দিবে দিবে বলে দিচ্ছিল না।অর্ধেক ছবি দিয়ে বাকিগুলো আর দিল না।এত করে বারণ করা শর্তেও টোয়া এগুলো অন্তকে দেখালো!আরাফ রেগে গেল।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল টোয়ার কথা নির্ভীককে সব জানিয়ে দিবে।আরাফ ছবি গুলো নিয়ে নির্ভীকের পাশে বসে বলল,

‘ এগুলো টোয়া অন্তকে দেখিয়েছে।ছবি গুলো আমি এডিট করে নিয়েছিলাম।পরে টোয়াকে দিয়েছিলাম অন্তকে দেখানোর জন্য।ট্রাস্ট মি তারপর নিষেধ ও করেছি কিন্তু শোনেনি।’

নির্ভীক মৃদু হেসে বলল,

‘কেন?’

আরাফ অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলল,

‘তোদের আলাদা করতে।’

নির্ভীক কিঞ্চিৎ রেগে বলল,

‘আমাদের আলাদা করতে তুমি টোয়াকে সাথে নিয়েছো?’

আরাফ মলিন মুখ করে বলল,

‘টোয়াই বিয়ের দিন আমাকে বলছিল ও তোদের আলাদা করতে চায়।তাই আমরা দুজন মিলে কিছু পরিকল্পনা করি।সেদিন কমিউনিটি সেন্টার থেকে অন্তকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু প্রান্তও তোদের গাড়িতে গিয়েছিল জন্য ড্রাইভার কিছু করতে পারেনি।পরে রাতে টোয়া তোর পানিতে ঘুমের মেডিসিন মিশিয়ে দিয়েছিল।তারপর আমি ওকে আর কখনও মেডিসিন দিতে নিষেধ করি আর অন্তকে দেখাতে এই ছবি গুলো দিই।’

রাগে নির্ভীকের চোখমুখ শক্ত হয়ে গিয়েছে।শুধু মাত্র আরাফ জন্য কিছু বলছেনা।আরাফের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে খুন করে ফেলতো।নির্ভীক রাগ কমানোর চেষ্টা করে বলল,

‘তাহলে তোমরাই অন্তকে ঘুমের মেডিসিন দিতা?তুমি জানো?ওকে হসপিটালে নিতে হয়েছিল।জানতে তো ওসব ওর জন্য সেইফ নয় তাও কেন?হুয়াই?কিভাবে আলাদা করতে চেয়েছিলে আমাদের? অন্তকে খুন করে?’

তীব্র অপরাধবোধে আরাফের মাথা একেবারে নিচু হয়ে গিয়েছে।নির্ভীকের দিকে তাকানোর কোন মুখ তার নেই।টোয়াকে সে যতদূর চিনেছে টোয়া অন্তর ক্ষতি করতে পারে জন্য আরাফ টোয়ার কথা নির্ভীককে জানিয়ে দিল আর নিজের ভুলের জন্য ক্ষমাও চাইলো।নির্ভীক আরাফের সাথে কথায় বলল না।রেগে হন হন করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।টোয়াকে হাতের কাছে পেলে কি করবে সে নিজেও যানেনা।

নির্ভীক চলে যেতেই নিপা আরাফের কাছে এগিয়ে এল।আরাফ মেঝের দিকে তাকিয়ে সোফায় বসে আছে।বাসার সবাই ইচ্ছেমতির বিয়ের জন্য শপিংয়ে গিয়েছে।তাই এই কথাগুলো আর কেউ জানতে পারলোনা।নিপা আরাফের সামনে দাঁড়িয়ে মলিন মুখ করে বলল,

‘আপনি সত্যি এসব করেছেন?’

আরাফ কপাল ডলতে লাগলো।তার ভয় হচ্ছে অন্তকে হারানোর ভয়।অন্ত যদি এসব জানতে পারে তাহলে তো সে আরাফকে ঘৃণা করবে।যতটা দূরে আছে তার থেকে আরও দূরে সরিয়ে দিবে।এত ছেলেমানুষি কাজ আমি কি করে করতে পারলাম!ভেবেই আরাফ সোফার হ্যান্ডেলে হাত দিয়ে বারি দিল।নিপা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেল।

শেষ বিকেলে অন্ত, আফ্রা আর শেফালী ছাদে হাঁটা হাঁটি করছে।ব্যালকনি থেকে নির্ভীক অন্তকে ডাকছে।অন্ত ছাদের রেলিংয়ে হাত রেখে নিচের দিকে ঝুকে বলল,

‘এই তো এখানে আমি।’

নির্ভীক উপরের দিকে উকি দেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
‘রুমে আসো।’

আফ্রা আর শেফালীকে ছাদে রেখে অন্ত নিজের ঘরে চলে আসলো।নির্ভীক সোফায় বসে ঘাড়ের উপর টাওয়াল নিয়ে ভেজা চুল মুছছে।বাসায় এসেই সে রাগ কমানোর জন্য বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছে।অন্ত নির্ভীকের সামনে এসে দাঁড়ালো।নির্ভীক অন্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘সারাদিন কোথায় থাকো বল তো?এত খুঁজি তাও পাইনা।’

অন্তও মুচকি হেসে বলল,

‘আপনি কোথায় থাকেন বলুন তো?এত খুঁজি তাও পাইনা।’

নির্ভীক ঘাড় থেকে টাওয়াল নামিয়ে সোফায় রেখে অন্তর এক হাত ধরে কোলের উপর নিয়ে শক্ত করে অন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘জব টব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে সারাদিন তোমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে ইচ্ছে করে।শোনো আমরা একটা মেয়ে বাবু নিব।তারপর আমাদের মেয়ে প্রান্তর ছেলের সাথে প্রেম করবে আর প্রান্তর সব টাকা আমাদের বাসায় নিয়ে আসবে।তখন তো আমার আর চাকরি বাকরি করার দরকার হবেনা। তখন সারাদিন শুধু তোমাকে ভালোবাসবো।’

অন্ত নাক ছিটকে বলল,

‘ছিঃ কি বাজে প্ল্যান!’

নির্ভীক অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘কেন বাজে কেন?এটাই বেস্ট।আমাকে আর ভার্সিটি যেতে হবেনা।সারাদিন তোমার সাথে প্রেম করব।আমার মেয়ে…’

অন্ত নির্ভীককে থামিয়ে দিয়ে বলল,

‘আমি ছেলে বাবু নিব।’

নির্ভীক হু হা হেসে দিয়ে বলল,

‘সিরিয়াসলি!তুৃমি বাবু নিবা?সামান্য একটা কিসি দিতে দাওনা আর বাবু নিবা?’

নির্ভীকের কথার মানে বুঝতে পেরে অন্ত লজ্জায় লজ্জাবতী লতার মতো নুইয়ে পরেছে।সে তো এত কিছু ভেবে বলেনি।ছেলে বাচ্চা পছন্দ তাই বলেছে।অন্ত মুখ লুকানোর জায়গা পাচ্ছেনা।নির্ভীকও অন্তকে শক্ত করে ধরে আছে, কোথাও যেতে দিচ্ছেনা।নির্ভীক এভাবে হাসছে দেখে বেচারি অন্ত কেঁদেই দিল।

সন্ধ্যায় প্রান্ত আর ইচ্ছেমতির বিয়ে পাকা হওয়ার পর নির্ভীকের বাবার কাছে থানা থেকে জরুরী ফোন আসলো।উনি ফোন নিয়ে একটু সাইডে গেলেন।কল রিসিভ করে কানে ধরে বললেন,

‘বলুন ইন্সপেক্টর সাহেব?’

‘স্যার পাশের থানা থেকে ফোন এসেছে।পুলিশ আপনার ভার্সিটির দুটো স্টুডেন্ট গ্রেফতার করেছে।তারা মারাত্মকভাবে ড্রাগ এডিক্টেড।সাথে ড্রাগসও আছে।ড্রাগস নিয়ে ড্রাইভ করার সময় মেয়েটা একটা পথচারীর উপর বাইক তুলে দেই।ঘটনাস্থলে সেই পথচারীর মৃত্যু হয়।মেয়েটার নাম টোয়া।আপনার পরিচয় দিয়েছে।’

নির্ভীকের বাবা উত্তেজিত হয়ে বললেন,

‘কি বলছেন আপনি? টোয়া আমার ছোট ভাইয়ের মেয়ে।ও তো ড্রাগসের সাথে জড়িত নয়।’

‘আপনারা থানায় যোগাযোগ করুন।’

চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here