ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:৯

0
1752

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৭.

সবেমাত্র ভোর হয়েছে।ঘুম ভাঙলে তাকিয়ে দেখি আমি নিজের ঘরেই আছি,ইচ্ছে আমার পাশে ঘুমোচ্ছে।রাতের কথা মনে হতেই চিন্তা আর ভয় আমাকে ঘিরে ধরলো।পায়ে একটু চাপা ব্যপা অনুভূত হওয়ায় কম্বল থেকে পা বের করে দেখি পায়ে ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ লাগানো আছে।নির্ভীক ভাইয়া কখন ফিরে এসেছিলেন,পরে কি হয়েছিল আমি কিছুই জানিনা।শুয়ে থেকেই আমি বিভিন্ন ধরনের চিন্তা করতে লাগলাম।এক সময় সব চিন্তা ভয় সাইডে রেখে ধীরে ধীরে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।দেয়ালের শৌখিন ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে দেখি ছয়টা দশ বাজে।এতক্ষণে খালা-অ্যান্টি উঠে পরেছে।ওদের সাথে রাতের ঘটনা নিয়ে কথা বলার জন্য নিচে যাওয়ার চিন্তা করলাম।অ্যাশ কালারের একটা পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম।সিঁড়ির কাছে যেতেই দেখি নির্ভীক ভাইয়া কফির মগ হাতে নিয়ে উপরে উঠে আসছেন।আমাকে দেখেই উনি দ্রুত উপরে উঠে এসে বললেন,

–এখানে আসলা কি করে?পা ব্যথা করছে না?নিচে কেন যাচ্ছো?ক্ষুধা পেয়েছে?রুমে চলো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–পা ব্যথা করছেনা।ক্ষুধা পায়নি এমনি নিচে যাচ্ছি।আপনি রাতে কখন ফিরেছেন?

উনি ফ্লোরে হাঁটু গেরে বসলেন।কফির মগ ফ্লোরে রেখে আমার পায়ে হাত দিয়ে বললেন,
–এখনও ফুলে আছে?ব্যথা করছেনা?সত্যি বলছো?

আমি পা সরিয়ে বললাম,
–সকাল সকাল মিথ্যে কেন বলবো।ব্যথা করলে এই পর্যন্ত আসতে পারতাম?

উনি মগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার হাতে মগ ধরিয়ে দিয়ে আমাকে এখানে ওয়েট করতে বলে নিচে চলে গেলেন।একটু পরই আরেকটা মগ হাতে ফিরে আসলেন তারপর আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে ছাদে আসলেন।ছাদের উপর বসার মতো শুধু একটা দোলনা আছে সেটাও শিশির পরে ভিজে গিয়েছে।নির্ভীক ভাইয়া আমাকে নিয়ে ছাদের পূর্ব পাশে রেলিং এর কাছে এসে দাঁড়ালেন।আজকে অনেক কুয়াশা পরেছে।ঘন কুয়াশার কারনে আশে পাশের কোন ঘর-বাড়ি দেখা যাচ্ছে না।চারপাশটা কেমন স্নিগ্ধ আর ভেজা।নির্ভীক ভাইয়ার দিকে ভাল করে তাকিয়েই আমি ভ্রু কুচকে ফেললাম কারন উনি একটা পাতলা কালো টিশার্ট পরে আছেন,শীতের পোষাক পরেননি।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

–আপনার শীত করছে না?শীতের পোষাক পরেননি কেন?

উনি একবার নিজের দিকে তাকালেন তারপর কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন,
–শীত করছেনা।

আমি রেলিং এ হেলান দিয়ে বললাম,
–এত শীতেও আপনার শীত করছে না?(অবাক হয়ে)
–উহুম।(অন্যমনস্ক হয়ে সামনে তাকিয়ে)

উনি চুপচাপ আছেন।আমি একবার উনার দিকে তাকাচ্ছি একবার অন্যদিকে তাকাচ্ছি।উনি ভ্রু কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাচ্ছি কিন্তু কুয়াশা ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।উনি ছাড়া এখানে দেখার মতো কিছু নেই ও।আমি কফি খাচ্ছি আর বাঁকা চোখে উনার দিকে তাকাচ্ছি।উনার চুল গুলো একটু অগোছালো হয়ে আছে,দুয়েক গোছা চুল কপালে পরে আছে।উনার সামনের দিকের চুলগুলো অনেক লম্বা টেনে ধরলে নাকে এসে ঠেকবে।পেছনের আর কানের পাশের চুলগুলো ছোট করে ছাটা।লম্বা তরতরে নাকটা আমার কাছে এত অদ্ভুত লাগে কেন?আই থিংক উনার নাকটাই উনার সৌন্দর্যের অহংকার।না শুধু নাক নয়,চোখও,ঠোঁটও।ধূর সব,সবই উনার অহংকার। আর গালের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো বড় হয়না কেন?উনি কি ওগুলো প্রতিদিন স্কেল দিয়ে মেপে মেপে কেটে ফেলেন যাতে একটুও ছোট বড় না হয়?কি জানি বাবা,ছেলেদের কাজ কারবারি কিছু বুঝিনা!
আমি এবার উনার হাতের দিকে তাকালাম।উনি বাম হাত রেলিং এর উপর রেখেছেন।ধব ধবে সাদা হাতে একটা লোমও চোখে পরছে না শুধু কয়েকটা নীলাভ রগ একটু ফুলে উঠে আছে।উনার হাতে লোম নেই কেন!আমার হাতে তো ছোট ছোট লাল লাল লোম আছে।উনি কি পার্লারে যেয়ে লোম তুলে নিয়ে আসেন!!কব্জির কাছে একটা পুরোনো কাটা দাগ দেখতে পাচ্ছি।দাগের পাশে একটা কুচকুচে কালো তিলও আছে।তিল আর দাগটার জন্য হাতটা ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে!!আমি অন্যদিকে তাকালাম।একটু পর আবার উনার হাতের দিকে তাকাতে বাধ্য হলাম কিন্তু হঠাৎ উনি হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন।আমি বিরক্ত হয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি খালি কফির মগটা রেলিং এর উপর রেখে ডান হাতও পকেটে ঢুকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

—আজকে ভার্সিটিতে যাবা?এই পা নিয়ে যেতে পারবা?
—হ্যা।
–আজকে যাওয়ার দরকার নেই।কালকে আমি নিয়ে যাবো।ক্যাম্পাসে কেউ কিছু বললে সব আমাকে জানাবা ওকে?ছোট থেকে ছোট কথাও আমার কাছে লুকোবেনা।আমি কয়েকজনকে দেখিয়ে দিব ওদের থেকে দূরে থাকবা।ফ্রেন্ড যারা আছে তারাই থাকবে নতুন কোনো ফ্রেন্ড করার দরকার নেই আর একা একা কোথাও যাবেনা।ফাঁকা ক্লাসরুম,ফাঁকা ওয়াশরুম,লাইব্রেরী কোথাও নয়।মনে থাকবে?

আমি ভীত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–ওই লোকটা ফোনে…!

উনি আমাকে পুরোটা বলতে না দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন,

—ভয় পেও না।নতুন ভার্সিটিতে উঠলে সিনিয়ররা এসব করে।ওরা আগে তোমার ফোন নাম্বার নিয়েছে তারপর তোমাকে ভয় দেখিয়েছে।

–হুম হতে পারে কাল তো একটা সিনিয়র ভাইয়া আমার ফোন নাম্বার নিয়েছিলেন।ওই অ্যাসাইনমেন্টের খাতাগুলো দিয়ে বলেছিলেন প্রবলেম হলে উনাকে জানাতে।(ভ্রু কুচকে)

নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—কাল ওই ছেলেটাকে দেখিয়ে দিবা,আমি কথা বলবো।

—আমাদের ডিপার্টমেন্টের নয়,সাইকোলজির।সানভি নাম।আপনি চেনেন?মুখে মনে হয় ক্ষতের দাগ আছে,খেয়াল করিনি ভাল করে।জানেন ওই ছেলেটা বলছিল উনি আমার দিকে তাকিয়েছেন দেখে আমি নাকি উনাকে বাজে ছেলে ভেবেছি।উনি সাইকোলজির স্টুডেন্ট তাই উনি নাকি মনের ভাব বুঝতে পারেন।

শেষের কথা গুলো আমি হাসতে হাসতে বললাম।নির্ভীক ভাইয়া ও হাসতে হাসতে বললেন,
–ওও সানভি??
–হুম আপনি চিনেন?(হাসি থামিয়ে)
–খুব ভাল করে।(চোখমুখ শক্ত করে)

উনি রেগে গিয়েছেন।আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
–আপনি রাগ করছেন কেন?
–কই নাতো।ঠান্ডা লাগছে চলো নিচে যাই।(মগ হাতে নিয়ে)
উনি আমার এক হাত ধরে হাঁটা দিলেন।আমার মগে এখনও অনেক কফি তাই আমি কফি খেতে খেতে নিচে আসলাম।

সন্ধ্যা হতে এখনও অনেক দেরি কিন্তু আজকে সূর্যের আলোই তেমন তেজ ছিল না দেখে বিকেলটা সন্ধ্যার মতো ম্লান হয়ে আছে।ড্রইং রুমের মাঝখানে কোমড়ে হাত দিতে দাঁড়িয়ে থেকে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আছি।ইচ্ছে জানালা গুলো লক করে পর্দা টেনে দিচ্ছে।ধীরে ধীরে ড্রইং রুম থেকে দিনের আলো ফুরিয়ে যাচ্ছে।আমার মনে হচ্ছে এখনই আবার সূর্যদয় হোক,কেঁটে যাক সব অন্ধকার।এই অন্ধকার একদম ভাল লাগছেনা।তখনই বৈদ্যুতিক বাল্ব গুলো জ্বলে উঠলো।আমি হাসি মুখ করে পেছনে তাকিয়ে দেখি খালা আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে।আমি খালার কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বললাম,

–অহ খালা তুৃমি আমার মন ভাল করে দিয়েছ!

খালা কিচেনে যেতে যেতে লক লকা হাসি দিয়ে বলল,
—সেকি মা,তোমার মন ভালা নাই?

আমি কিচেনে যেতে যেতে বললাম,
–ছিল না এখন আছে।

খালা কিচেনের আলো জ্বালিয়ে বলল,
–কি খাইবা বলো।

আমি নিচের ঠোঁট মুখের মধ্যে নিয়ে তাকের উপর রঙিন কাচের জারের দিকে তাকালাম।খালাকে বললাম,
–আচার খাব।ওগুলো কিসের আচার?

খালা জার গুলো নামাতে নামাতে বলল,
–কিসের আচার খাইবা বলো?আম আছে,জলপাই আছে,বাঘা তেঁতুল আছে,রসুন আছে,বড়ই টা নাই।তুমি কোনটা খাইবা?

আমি হাতের মুঠো ভর্তি তেঁতুলের আচার নিয়ে খেতে লাগলাম।তখনই গিটারের টুংটাং আওয়াজ কানে আসলো।আমি তেঁতুল মুখে দিয়ে চোখ কুচকে বললাম,
–গিটার কে বাজাচ্ছে?রিংকুদের পাশের বাসায় কেউ গিটার বাজায় নাকি?

খালা জার গুলো তাকে রাখতে রাখতে বলল,

–চাঁদ বাবা মাঝে মধ্যি বাজায়।কত ভাল গান করে,শোন নাই তুমি?

–কই নাতো?(ভ্রু কুচকে)

খালার সাথে কথা বলে আমি নির্ভীক ভাইয়ার গান শোনার জন্য উনার রুমে গেলাম।দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে উনাকে ডাকতেই উনি আমাকে ভেতরে যেতে বললেন।রুমের ভেতরে যেয়ে দেখি উনি বেলকুনিতে ফ্লোরে কার্পেটের উপর বসে আছেন।উনার কোলের উপর কালো রঙের গিটার।আমি অবাক হয়ে বললাম,
—আপনি গিটার বাজাতে পারেন?এটা আপনার গিটার?

উনি মুচকি হেসে কার্পেট থেকে একটু সরে গিয়ে আমাকে জায়গা করে দিয়ে বললেন,

–বসো এখানে।

আমি দ্রত উনার পাশে বসলাম।উনি ভ্রু কুচকে আমার ডান হাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–এটা কি খাচ্ছ?
–তেঁতুল,খাবেন?এনে দিব?
–না,আমি এসব খেতে পারিনা।(অন্যদিকে তাকিয়ে)
—ওকে তাহলে গান শোনান একটা।প্লিজ প্লিজ প্লিজ!

নির্ভীক ভাইয়া হালকা হেসে বললেন,
–ওকে ওকে গাইছি।এত বার প্লিজ বলো না।তুমি আমাকে অর্ডার করবা রিকুয়েস্ট নয় ওকে?

আমি তেঁতুল মুখে নিয়ে মাথা নাড়ালাম যার অর্থ ওকে।উনি দেয়ালে হেলান দিলেন।আলতো হাতে গিটারের তারগুলো ছুতে লাগলেন।কিছু সময় নিয়ে গিটারে সুর তুললেন তারপর আমার দিকে তাকিয়ে গাইতে লাগলেন,

“ম্যা জিত না তুম হে দে..খু
মন এ না ভরে
ম্যা জিতনা তুমহে ছোচু
মন এ না ভরে।(আমার দিকে তাকিয়ে)

ইন আখো মে আচ্ছা লাগতাহে
মেরা পেয়ার,তেরা পেয়ার
কাহি তুঝমে ধারাকতা এ
মেরা পেয়ার,তেরা পেয়ার।(চোখ বন্ধ করে)

 

উনার গানের গলা শুনে আমি শিহরিত।হাতের লোম গুলো কাঁটা দিয়ে উঠেছে।এত শ্রুতিমধুর কন্ঠ!উনার কথা বলার কন্ঠ শুনলেই আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় আর উনার গানের কন্ঠ একদম হার্টটাচিং,হৃদয়স্পর্শী।আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি গান থামিয়ে চোখ খুললেন।আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালেন যার অর্থ মনে হয় “কি,কেমন গাইলাম?”

প্রতিউত্তরে আমি শুধু মুচকি হাসলাম,কিছু বললাম না।কি বলবো কিছুই মাথায় আসছে না।অকস্মাৎ উনি আমার ডান হাত টেনে হাতে থাকা অবশিষ্ট তেঁতুল মুখে নিলেন।মুখের একশো এক অবস্থা করে মৃগী রোগীদের মতো একটু শরীর কাঁপিয়ে বললেন,

–ইয়াক!!কি টক!কিভাবে খাচ্ছ এটা!!

আমি খিল খিল করে হেসে উঠলাম।উনিও মৃদু হাসলেন।শীতের পড়ন্ত বিকেলও যে এত সুন্দর হতে পারে সেটা উনি পাশে না থাকলে অনুভব করতে পারতাম না।সন্ধ্যার একটু পরই নির্ভীক ভাইয়া বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আমি উনাকে বলে উনার গিটার নিয়ে রুমে চলে এসেছি আর তখন থেকে গিটার বাজানোর ট্রাই করছি কিন্তু পারছিনা,শুনতে শ্রুতিকটু লাগছে।ইচ্ছে কানে ইয়ারফোন গুজে আমাকে ইগনোর করছে।আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে পুরো গিটার ছুয়ে দেখছিলাম।হঠাৎ চোখে পরলো গিটারের বডিতে ইংলিশে লিখা আছে প্রান্ত তার নিচেই লিখা আছে নির্ভীক।নামগুলো আলপিন দিয়ে ঘষে লিখা হয়েছে।নাম গুলোতে বার বার হাত বুলিয়ে আমি অনুমতি ছাড়াই ড্রয়ার থেকে একটা আলপিন নিয়ে ঘষে নির্ভীকের নিচে অন্ত লিখে ফেললাম।শুধু তাই নয় নাম তিনটিকে ভালোবাসার শেপ দিয়ে লক করে দিলাম।এছাড়াও তিনটে কার্টুন আঁকালাম,একটা প্রান্ত ভাইয়া একটা নির্ভীক ভাইয়া আর একটা আমি।ড্রেসিং টেবিলের কাচ থেকে একটা প্রজাপতির স্টিকার তুলে নিয়ে আমাদের নামের পাশে লাগিয়ে দিলাম।পুরো সন্ধ্যা এমনকি ঘুমানোর আগে পর্যন্ত গিটার নিয়েই ব্যস্ত থাকলাম।ইচ্ছে রেগে গিয়ে আমার থেকে গিটার কেড়ে নিয়ে নির্ভীক ভাইয়ার রুমে দিয়ে চলে আসলো।আমি মুখ ফুলিয়ে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পরলাম।

.
সূর্যদয়ের সাথে সাথেই চারপাশে ঝলমল করছে আলো।কুয়াশার চাঁদোয়া ছিঁড়েখুঁড়ে নেমে আসছে সেই আলোর দীপ্তি।ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দু।ক্যাম্পাসের পিচ ঢালা ছাই রঙা রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে পা উচু করে কৃষ্ণচূরা ফুল নেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু নাগাল পাচ্ছিনা।পাশেই রিপন আর সাফি দাঁড়িয়ে কথা বলছে,ইচ্ছে আর আইরিন ওদের কাছে গিয়ে ফুল নেওয়ার জন্য ঘ্যান ঘ্যান করছে কারন ওরা একটু হাত উচু করলেই ফুলের নাগাল পাবে।আমরা ফুল তো দূরের কথা পাতার নাগালও পাচ্ছিনা।আমাদের ঘ্যানঘেনিতে অতিষ্ঠ হয়ে রিপন ফুল নিতে নিতে বলল,

–কালকে একটা সিনিয়র ভাই বলছিলেন মেয়ে মানুষ মানেই প্যারা আর বান্ধবী গুলা তো একেকটা প্যারা তৈরির কারখানা।এই ফুল গুলা নিয়ে কি করবি টাকি তোরা হু?এমনিতেই একেকটা ফুলের মতন সুন্দরী তারউপর ফুল কানে গুজে ঘুরলে কি হবে জানিস?তোদের তো কিছু হবেনা,হবে আমাদের মতো নিষ্পাপ ছেলেদের।সিনিয়র সিটিজেনরা আমাদের মতো ভোলাভালা ছেলেপুলেদের ডেকে বলবে “তোর সাথে যেই সুন্দরী মেয়ে দেখলাম ওটাকি তোর বোন?আমি জানি ওটা তোর বোন।তোর বোনের সাথে প্রেম করমু দুদিনের মধ্যে লাইন লাগাইয়া দে না হলে তুই শেষ।”

ইচ্ছে হাসতে হাসতে বলল,
“সুন্দরী বান্ধবীদের সাথে ঘুরবি আর এইটুকু প্যারা সহ্য করবিনা?

রিপন ধমক দিয়ে বলল,
“তুই চুপ কর বালডা।কালকে তো ভার্সিটিতে আসিসনি।সাইকোলজির ওই ভাইডা আমাক এমন ধোলায় দিছে,আমি ধূলিসাৎ হয়ে গেছি।দশটা খাতা কিনে দিতে হয়েছে।তুই আর অন্ত ভালই ভালই আমার সব টাকা দিয়ে দিবি।

তারপর রিপন আমার আমার সামনে দাঁড়িয়ে রেগে বলল,

—আর তুই,কাল থেকে মুখে কালি মেখে পেত্নি সেজে আসবি।তোর জন্য ক্যাম্পাসে টিকা মুশকিল। ভার্সিটিতে পড়তে তো আসিসনা খালি বড় ভাইদের মাথা খাইতে আসিস।আজ থেকে আমার সাথে তোর কোন ফ্রেন্ডশিপ নাই,আমার থেকে দুইশো হাত দূরে থাকবি।যদি আর কোন ভাই আমার কাছে আসে তোকে পদ্মার পানিতে খুসে ধরে খুন করমু।রাগ হলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা,ভাষাও ঠিক থাকেনা।যেই ভাষা জানিনা সেই ভাষাও মুখে চলে আসে।যা দূর হ এখান থেকে।

প্রথমে সবাই ভেবেছিল রিপন মজা করছে কিন্তু এখন ওর চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ দেখা যাচ্ছে।এমন হাবভাব করছে যেন আমি আর কিছুক্ষণ ওর সামনে থাকলে আমাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে দিবে।রিপনের সাথেই আমি আর ইচ্ছে প্রথম ফ্রেন্ডশিপ করি।অ্যাডমিশনের দিন আমরা একই রুমে এক্সাম দিয়েছিলাম।সেই থেকে ওর সাথে আমাদের পরিচয় আর আজ ও আমাকে এতগুলো কথা শুনালো।ওর কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে।আমি উল্টোদিকে ঘুরে হাঁটা দিলাম।জোড়ে জোড়ে হেঁটে গেইটের কাছে এসে দাঁড়ালাম।ইচ্ছে দৌঁড়ে দৌঁড়ে এসে আমার সাথ ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
—আরে দাঁড়া,কোথায় যাচ্ছিস ক্লাস করবিনা?রিপনের কথায় কিছু মনে করেছিস নাকি?ওতো মজা করেছে।চল ক্লাসে যাই।

আমি একটা রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠে বসলাম।উপায় না পেয়ে ইচ্ছেও আমার সাথে রিক্সায় উঠে বাসায় আসলো।বাসায় আসতেই নির্ভীক ভাইয়া আমাকে ফোন দিলেন।আমি উনাকে বললাম আমরা বাসায় চলে এসেছি।উনি আমার কথা সহজ ভাবে নিলেন না।বার বার জিজ্ঞেস করছেন এত তাড়াতাড়ি কেন বাসায় আসলাম,কি প্রবলেম।আমি থম থমে মুখ করে মাথাব্যথার কথা বলে ফোন কেঁটে শুয়ে পরলাম।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here