ভালোবাসি তাই পর্ব-১৫

0
1962

#ভালোবাসি তাই
#part:15
Writer: Afifa Jannat Maysha

🍁

রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে এসেছি সবাই। সারাদিনের ঘুরাঘুরিতে ক্ষিধেও পেয়েছে প্রচুর। কিন্তু হাজার ক্ষিধে থাকা সত্বেও ভালো করে খেতে পারছি না আমি। কিভাবে খাবো? কেউ যদি সারাক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে কি খাওয়া যায়? একদমই না। তাই আমিও খেতে পারছি না।

আমাদের পাশের টেবিলেই বসে আছেন রাহুল ভাইয়া। রেস্টুরেন্টে আসার পর থেকেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন উনি। বুঝতে পারছি না আমার মুখে কি এমন আছে যার জন্য উনি এভাবে তাকিয়ে আছেন। এদিকে উনাকে কিছু বলতেও পারছিনা আমি। কালকের ঘটনার পর উনার সাথে কথা বলাটা আমার পক্ষে অনেক কঠিন। আর উনি এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন সেই কখন থেকে।

আমি মুখ কাচুমাচু করে বসে আছি। খাবার সামনেই পরে আছে। আজকে যে আর খাওয়া হবে মা সেটা এতক্ষনে বুঝা হয়ে গেছে আমার। রাহুল ভাইয়াও হয়তো খাচ্ছেন না। তাইতো ফাহাদ ভাইয়া উনার পেটে কুনি মেরে বললো

– কি মামা? পাশে তাকিয়ে থাকলেই কি পেট ভরবে? খাবারটাতো তোর সামনে আছে পাশে না।

ফাহাদ ভাইয়ার প্রশ্নের উত্তরে রাহুল ভাইয়া মুচকি হেঁসে বললেন

– পেট ভরার আগে মন ভরাটা বেশি জরুরী রে দোস্ত। আমি এখন সেটাই করছি।

সাদাব ভাইয়া ফোড়ন কেটে বললেন

– কিন্তু তোমার মন ভরানোর চক্করে যে আরেকজনের খাওয়া হচ্ছে না মামা। শুধু নিজের দিকটা দেখলেই হবে?

সাদাব ভাইয়ার কথায় তারাতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিলেন রাহুল ভাইয়া । উনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো খুব বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন উনি। উনি মাথা চুলকে চুলকে বললেন

– ভালো কথা বলেছিস দোস্ত। আসলে খেয়ালই ছিলো না আমার।

রাহুল ভাইয়ার উত্তরে সাদাব ভাইয়া আর ফাহাদ ভাইয়া শয়তানি হাঁসি দিলেও সায়ন ভাইয়া চোখমুখ শক্ত করে বললেন

– আজকাল অন্য কোনোদিকেই তোর খেয়াল থাকছে না রে রাহুল। যেদিকে খেয়াল রাখার প্রয়োজন নেই সেদিকেই শুধু খেয়াল রাখছিস।

সায়ন ভাইয়া যে এই কথাটা আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন সেটা বুঝে গেছি আমি। কারণ কথাটা বলার সময় উনি আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সেটা উনার দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পেরেছি।উনার এই কথার মানে বোধহয় রাহুল ভাইয়া বুঝতে পারেন নি। তাই উনি জিজ্ঞেস করলেন

– কি বলছিস তুই সায়ন। তোর কথার অর্থ বুঝলাম না।

– না বুঝার কি আছে।

– তুই কিছুদিন ধরেই কেমন আলাদা বিহেভ করছিস আমার সাথে।

সায়ন ভাইয়া এবার একটু জোরেই বললেন

– সবার কাছেই কেনো মনে হচ্ছে আমি আলাদা বিহেভ করছি? আমি কি এমন করেছি সবার সাথে?

সায়ন ভাইয়ার এমন রিয়েক্ট করায় সবাই অবাক হয়ে গেছে। সায়ন ভাইয়া নিজেও হয়তো অবাক হয়ে গেছেন। কারণ রাহুল ভাইয়ার সাথে উনি আগে কখনো এভাবে কথা বলেননি। উনি কতক্ষণ চুপ করে বসে থেকে বলে উঠলেন

– সরি দোস্ত, তুই তো জানিসই যে রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আর এখন আমি অন্য একটা বিষয়ে রেগে ছিলাম। তাই সেই রাগটা তোর উপর ঝেরে ফেলেছি আমি।

রাহুল ভাইয়া হেঁসে হেঁসে বললেন

– শাল, তুই সরি বলছিস কেনো? আমি জানি তুই কেমন। এটাও বুঝেছি যে তুই রেগে আছিস। নাহলে আমার সাথে কখনো এভাবে কথা বলতি না। আমি কিছু মনে করি নি।

পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক করে সবাই খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। এখন আমিও খেতে পারছি। রাহুল ভাইয়া আর তাকাচ্ছেন না আমার দিকে। কিন্তু সায়ন ভাইয়া একটু পরপরই তাকাচ্ছেন। কিন্তু এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না আমার । আমি তো মন প্রাণ দিয়ে শুধু খেয়েই যাচ্ছি আর খেয়েই যাচ্ছি।

ডিনার করে চলে এসেছি হোটেলে। পরে আর কোনো ঝামেলাই হয়নি সায়ন ভাইয়া আর রাহুল ভাইয়ার মাঝে। কিন্তু হোটেলে ফেরার সময় একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি আমি। সায়ন ভাইয়া আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে কেমন রেগে গেছিলেন। যেনো আমি উনার জুতো চুরি করে এনে পরে ফেলেছি। উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমিও তাকিয়েছিলাম আমার পায়ের দিকে। কিন্তু রেগে যাওয়ার মতো কিছুই দেখতে পাই নি। আমার পায়ে তো আমার জুতোই ছিলো। তাহলে উনি কেনো রেগে গেছিলেন সেই কারণটা অজানাই থেকে গেছে।

🍁

বিছানায় বসে বসে সারার বকবকানি শুনে চলেছি। আজকের দিনটা কেমন লেগেছে তারই বর্ননা দিচ্ছে সে। সারার ভাষ্যমতে তার একটা ইচ্ছা অপুর্ণই রয়ে গেছে। তার কল্পনা ছিলো সে যখন খালি পায়ে বালির উপর দিয়ে হাটবেঁ তখন তার পা কোনোকিছুতে লেগে কেটে যাবে। আর সে সিনেমার নায়িকাদের মতো ভাব নিয়ে নিচে বসে পরবে। ঠিক সেই সময়ই এন্ট্রি নেবে তার হিরো। একদম সিনেমাটিক কাহিনি। কিন্তু তার কল্পনা কল্পনাই থেকে গেলো। পা কেটে যাওয়া তো পরের কথা খালি পায়েই হাটতে পারেনি সে। তাই এখন সেটা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করছে সারা।

বেস্টুর দুঃখে আমারো দুঃখ পাওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। তাই আমিও মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব এনে তার কথা শুনে চলেছি।

হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই মুখভঙ্গির পরিবর্তন করলাম আমি। ফোনটা হাতে নিতেই আপুর নামটা ভেসে উঠলো চোখে। সবাইকে একটু আস্তে কথা বলতে বলে ফোন রিসিভ করলাম আমি। ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম আপুর গলা

– কি করছিস, মাইশা?

– এইতো বসে আছি সবার সাথে।

– ওহ। কেমন কাটলো আজকের দিন?

– হুম, ভালো।

– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

– তো পারমিশন চাইছো কেনো? যা ইচ্ছা জিজ্ঞেস করো।

– সায়ন ভাইয়ার সাথে কি তোর কোনো ঝামেলা হয়েছে? মানে তুই কি উনার সাথে কোনো বেয়াদবি করেছিস?

– উনার সাথে আমি বেয়াদবি করেছি? কে বললো এসব?

– কেউ বলেনি। আমার মনে হয়েছে।

– হঠাৎ এরকম মনে হওয়ার কারণ?

– আসলে আজকে দুপুরে তোকে ফোন করেছিলাম কিন্তু তোর ফোন বন্ধ ছিলো।

– হ্যাঁ, চার্জ ছিলো না। কিন্তু এটার সাথে সায়ন ভাইয়ার কি সম্পর্ক?

– তোর ফোন বন্ধ থাকায় সায়ন ভাইয়াকে ফোন করেছিলাম তোর খোজ নিতে।

– তো?

– উনাকে তোর কথা জিজ্ঞেস করতেই উনি রেগে গেলেন আর বললেন উনার কাছে তোর কোনো খবর নেই। তোর খেয়াল রাখার জন্য নাকি অন্য কেউ আছে। আমি যেনো তার কাছে ফোন করি।

আপুর কথা শুনে না চাইতেও অবাক হয়ে গেলাম আমি। এখানেও অন্য কেউ। বুঝতে পারছি না সায়ন ভাইয়া কথায় কথায় ” অন্য কেউ “, “অন্য কেউ ” করেন কেনো। উনার এই কথা বলার কারণটা কি সেটা উনিই জানেন।

– আমি কিছুই জানি না আপু। উনি বোধহয় অন্য কোনো কারণে রেগে ছিলেন। তাই হয়তো….

– হুম বুঝতে পেরেছি। কিছুদিন আগেও উনি উনার রাগ কন্ট্রোল করে ফেলেছিলেন কিন্তু এখন আবার আগের মতো হয়ে গেছেন।

– ডোন্ট ওয়ারি, সব ঠিক হয়ে যাবে।

– হুম।

– আচ্ছা এখন রাখি।

– ঠিক আছে।

আপুর ফোন কেটে দিয়ে আবার সবার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম আমি। উদ্দেশ্য সায়ন ভাইয়ার এসব কথার মানে খুজার চেষ্টা করবো না। কিন্তু চাইলেই কি সব পারা যায়? অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাথায় বারবার একটা কথাই ঘুরছে এই “অন্য কেউটা ” কে?

🍁

রাত একটা কি দেড়টা বাজে। ঘুমিয়ে আছি সবাই। সারা ঘরময় অন্ধকার। ঘুমের মাঝেই মনে হচ্ছে কেউ তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কে তাকিয়ে আছে তা জানতে ইচ্ছে করছে আবার চোখ মেলতেও ইচ্ছে করছে না। তবু্ও পিটপিট করে তাকাতে চেষ্টা করলাম আমি। কিন্তু তার আগেই কেউ মুখ চেপে ধরলো আমার। অন্ধকারে তাকে দেখতেও পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে যেনো। কাউকে ডাকতেও পারছি না।

বেড সাইড টেবিলের উপর রাখা গ্লাসটা হাত দিয়ে ফেলে দিলাম আমি। সাথে সাথে লোকটা আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে দ্রুত চলে গেলো। কাঁচ ভাঙার আওয়াজে জেগে গেছে সবাই। কি হয়েছে সেটাই জানতে চাইছে। কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছি না। কথাগুলো গলায় এসে আটকে যাচ্ছে বারবার। ভয়ে সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে আমার। কারো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে থম মেরে বসে আছি আমি। আমি নিজেই তো হাজারো প্রশ্নে জর্জরিত। কে করছে এমন? কেনোই বা করছে এসব? আর আমার সাথেই কেনো ঘটছে এসব?

চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here