ভালোবাসি তাই পর্ব-২৪

0
2060

#ভালোবাসি তাই
part :24
Writer:Afifa Jannat Maysha

🍁

নিজের ঘরে নাকে সরষে তেল দেওয়া ছাড়াই গভীর ঘুমে নিমগ্ন ছিলাম আমি। কিন্তু আমার আরামের ঘুমটা হারাম করে দিতেই বোধহয় সেই কখন থেকে চিৎকার চেচামেচি ভেসে আসছে ড্রয়িংরুম থেকে। সারা বাড়ি গমগম করছে। এতো এতো লোকজন একসাথে হওয়ায় সাধারণভাবে কথা বললেও মনে হচ্ছে গলা ছেড়ে চিৎকার করে চলেছে তারা। আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। আর কাল বিয়ে। এই সপ্তাহটা বোধহয় বুলেট ট্রেনের গতিতে ছুটে চলেছে। দিনগুলোও যেনো ছোট হয়ে গেছে। এই সকাল তো এই রাত।

বেলাও হয়ে গেছে অনেক তারউপর এমন চিৎকার চেচামেচি। অসহ্য হয়ে উঠে পরলাম বিছানা থেকে। এভাবে আর শুয়ে থাকা সম্ভব নয়। এমনিতেও আজকে অনেক দেরী করে উঠেছি ঘুম থেকে। তাই চোখমুখ হালকা ফোলা ফোলা হয়ে গেছে। যেটা আমি নিজেই বুঝতে পারছি।

ফ্রেশ আমিও হয়ে চলে এলাম ড্রয়িংরুমে। বাড়ির সবাই উপস্থিত এখানে৷ তার মানে আজ আমিই সবার পরে উঠেছি ঘুম থেকে। অন্য সবাই এ বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও গ্রাম থেকে আসা বয়স্ক চাচী – দাদিরা কেমন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। যেনো ভুল করে মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে চলে এসেছি আমি। তবে উনাদের এমন চাহনির কারণটা অজানা নয় আমার। তাই বেশি মাথা ঘাটাঘাটি না করে সোফায় নাজিবা আপুর পাশে গিয়ে বসে পড়লাম আমি। নাজিবা আপু আমার দিকে একটু চেপে এসে ফিসফিস করে বললো

– আজ তোর গায়ে হলুদ আর তুই এতো রিল্যাক্সভাবে চলাফেরা করছিস কিভাবে?

– গায়ে হলুদ বলে রিল্যাক্স হয়ে চলা যাবে না এটা কোন দেশের আইন আপু?

– এটা আমার মনের দেশের আইন। সব মেয়েরাই নাকি তাদের বিয়ে নিয়ে এক অন্যরকম অস্থিরতায় ভোগে। আর তোর মধ্যে তো তার ছিটেফোঁটাও দেখতে পারছি না।

– তাহলে আমি সেসব মেয়েদের কাতারে পড়ি না। এটা তো স্বাভাবিক একটা বিষয়। এতোদিন যেভাবে চলতাম সেভাবেই চলবো। কিছুটা পরিবর্তন আসবে শুধু।

– তোরা দুই বোনই বিয়ে নিয়ে কেমন উদাসীন। মালিশা আপুও তোর মতো আজব বিহেভ করছে। কি হয়েছে তোদের বলতো?

– কিছু হয়নি তো। তোমাদের কাছেই এমন মনে হচ্ছে। আমরা ঠিকই আছি।

– হুম বুঝতে পেরেছি। তোদের পেট থেকে কথা বেরুবে না। তাই এসব বাদ এখন তারাতাড়ি সব কিছু গুছিয়ে নিতে হবে।

সবার মাঝেই ব্যাস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকলে মিলে নানা কাজ করে চলেছে আজ। গায়ে হলুদ আর বিয়ে কোনোটাই বাড়িতে হবে না। তার জন্য কমিউনিটি সেন্টার ঠিক করা হয়েছে। তিন পরিবারের সবাই একসাথে আনন্দ করার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বড়রা।

মেজো চাচী আমায় আর আপুকে তাড়া দিয়ে বললেন

– তারাতাড়ি করে খাওয়া দাওয়া সেরে নাও তোমরা। একটুপরেই আরো মেহমান এসে পড়বে। তখন তোমাদের খাওয়া দাওয়ার দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ হবে না।

চাচীর কথামতো খাওয়ার পর্ব শেষ করলাম আমি আর আপু। কেনো জানি না আজকে একটুও কষ্ট হচ্ছে না আমার। সারাজীবনের জন্য সায়ন ভাইয়ার থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি এটা ভাবতেও দম বন্ধ হয়ে আসতো আগে। কিন্তু আজ এমন কিছুই হচ্ছে না। ভাবছি স্টার জলসার সিরিয়ালে যেমন বিয়ে হওয়ার একটু আগেই লোডশেডিং হয় আর তখনই কনে পাল্টে যায়। আমার লাইফেও যদি এমন কিছু হতো! এসময় এমন চিন্তা মাথায় আসায় আমার নিজেরই হাঁসি পাচ্ছে। কোথায় আমি কষ্টে জর্জরিত হয়ে যাবো সেখানে মাথায় ঘুরছে এসব আজগুবি চিন্তা। তবে এই আজগুবি চিন্তাভাবনার চক্করেই কষ্টটা কাবু করতে পারছে না আমায়। সত্যি সত্যিই যদি এমন হতো! এসব কি শুধু সিরিয়ালেই সম্ভব? বাস্তবজীবনে কি হতে পারে না এমন?

হঠাৎ করেই হুশ এলো আমার। কিসব ভাবছি আমি। এমন হলে চারজনের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া স্বার্থপরের মতো এসব ভাবছিই বা কি করে ? রাহুল ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়েও সায়ন ভাইয়াকে নিয়ে ভেবে চলেছি ক্রমাগত। এটা তো রাহুল ভাইয়ার সাথে চিট করার মতো। আর আপু? আপুও তো সায়ন ভাইয়াকে মেনে নিয়েছে। হয়তো অনেক স্বপ্নও সাজিয়ে ফেলা হয়ে গেছে তার। এমন কিছু হলে তো আপুও কষ্ট পাবে।

আজকাল ভাবনাগুলোও বুঝেশুনে ভাবতে হয় আমার। কি একটা পরিস্থিতিতে পড়েছি আমি।

– কিরে? তুই কি নিউটনের মতো বিজ্ঞানী হওয়ার পরিকল্পনা করছিস নাকি মাইশা?

আচমকা সারার গলা পেয়ে চোখ তুলে তাকালাম আমি। সে কোমড়ে কাত দিয়ে ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।

– বিজ্ঞানী হওয়ার কথা আসছে কোথা থেকে?

– যেভাবে গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবাভাবি করছিস। তাই মনে হলো। তবে একটা কথা বলি বিজ্ঞানী হওয়ার চিন্তাভাবনা থাকলে সেটা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দে।

– কেনো?

– তাহলে স্টুডেন্টদের অভিশাপ পেতে পেতে শেষ হয়ে যাবি। এই যে নিউটনের কথাই ভাব। আমি তো ব্যাটাকে কথায় কথায় অভিশাপ দিই। সামান্য একটা আপেল মাথায় পড়ার জন্য কতকিছু আবিষ্কার করেছেন উনি। মাঝে মাঝে আমার ঐ লোকের উপর রাগ হয় যে আপেল গাছটা লাগিয়েছিলো।

– বকবক বন্ধ কর নইলে রিয়াদ ভাইয়ার কাছে যা।

– এখানে ঐ মিস্টার “ভাইয়ার” কথা এলো কিভাবে?

– বিয়ের কথার মাঝখানে নিউটনের কথা এলো যেভাবে।

আমার কথায় দমে গেলো সারা। কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো কতক্ষণ। তারপরই বড় একটা শ্বাস নিলো সে। বলতে লাগলো

– আজ আবার একবার বলছি তুই অনেক স্ট্রং। এতোদিন ধরে নিজের ভেতরের আর্তনাতটা কাউকেই বুঝতে দিসনি। কি নিখুঁত অভিনয় করে যাচ্ছিস। সত্যিই কিছু বলার নেই আমার। শুধু বলবো এতোদিন ধরে যখন মনের কথা না শুনে মস্তিষ্কের কথা শুনেছিস আজকেও সেটাই করবি। । শেষমুহুর্তে এসে মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে মনটা যেনো জিতে না যায়। মনে রাখবি তোর মনের জিত মানে তোর হার।

সারার উপদেশগুলো কেমন কাঠিন্যতায় ভরপুর। প্রত্যেকটা কথাই খুব ভাড়ী। কিন্তু আমায় যে ওর কথাগুলো মানতেই হবে। তাই এতক্ষণ মনমরা হয়ে বসে থাকলেও এখন নিজেকে ঠিক করলাম আমি। মুখে নিয়ে এলাম এক টুকরো হাঁসি। আমার এমন কাজে সারাও খুশি হলো যেনো৷

-মাইশা তারাতাড়ি তোর ঘরে আয় তো। কিছু জিনিস খুজে পাচ্ছি না৷

আপুর ডাক পেয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। সারাকে সাথে আসতে বলে হাঁটতে লাগলাম আমার ঘরের দিকে।

🍁

কমিউনিটি সেন্টারের একটা আলাদা রুমে বসে আছি আমরা। বাইরে সব অতিথিরা আছেন । পুরো হলুদে সাজিয়ে তোলা হয়েছে আমায়। শাড়ি থেকে শুরু করে গয়না সবকিছুই হলুদ। আপুর অবস্থাও সেইম। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হতে আরো দেরি। তাই এখন মেহেদী পরানোর ঝামেলাটা চুকিয়ে ফেলতে চাইছে বাকিরা।

পার্লার থেকে আসা মহিলারাই মেহেদী পরাবেন বলে ঠিক করা হয়েছে। সিদ্ধান্তমতো দুজন মহিলা বসেও পরেছে আমাদের সামনে। বাইরে সব ভাইয়ারা মিলে লাউড মিউজিক বাজিয়ে রেখেছে। কাছে বসে থেকেও একজন আরেকজনের কথা শুনতে কষ্ট হচ্ছে।

মেহেদী পরতে গেলেও বিশাল ধৈর্যের প্রয়োজন। চুপচাপ বসে থাকো, নো নড়াচড়া। অথচ মেহেদী পরতে গেলেই হাতে চুলকানি শুরু হয়ে যায় আমার। যার জন্য নড়েচড়ে উঠতেই হয় বারবার। এখনও তার ব্যাতিক্রম কিছু নয়। একটু পরপরই হাত চুলকে চলেছি আমি। যার ফলে বিউটিশিয়ানের সমস্যা হচ্ছে প্রচুর। তবুও তিনি কিছু বলছেন না আমায়। এমুহূর্তে উনাকেই বিশ্বের সবচেয়ে ধৈর্যশীল মহিলা বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। উনার জায়গায় আমি থাকলে কি করতাম কে জানে? হঠাৎ করেই মহিলাটি বলে উঠলেন

– ম্যাম, আপনার বরের নাম বলুন।

– কেনো?

– হাতে লিখার জন্য।

– ওহ। থাক হাতে কারো নাম লিখতে হবে না।

– ম্যাম, এখন তো সবাই লিখে। এটা একটা সিম্পল বিষয়।

– না থাক। আমি লিখবো না।

– ওকেহ, এজ ইউর উইশ।

কোনো নাম ছাড়াই মেহেদী পরানো শেষ করা হলো। হাত উপরে ধরে চুপচাপ বসে আছি আমি। আমার পাশে বসেই কিছু একটা বলার জন্য উশখুশ করছে সারা। তার অস্থিরতা বুঝতে পেরে আমিই বললাম

– কি বলবি বল।

– হ্যাঁ বলবো। কিন্তু তুই মাইন্ড করবি না তো?

– না।

– তুই হাতে নাম লিখতে মানা করলি কেনো তার কারণ তো জানি। কিন্তু মালিশা আপু কেনো লিখায় নি?

– আপুও লিখায় নি?

– না।

– হয়তো ভালো লাগেনি তাই।

– এটাই আসল কারণ?

– তুই এমন গোয়েন্দা গোয়েন্দা ভাব কবে ছাড়বি? সব কিছু নিয়েই বাড়তি চিন্তা।

– আচ্ছা আচ্ছা আর বাড়তি চিন্তা করবো না।

পাক্কা বিশ মিনিট পর হাত পরিষ্কার করলাম আমি। এতোক্ষণ হাত উঁচু করে ধরে থাকায় কেমন ঝিম ধরে গেছে হাতে। এখন প্রায় সব সাজই কমপ্লিট। গায়ে হলুদের সময়ও হয়ে গেছে। তাই আমায় আর আপুকে নিয়ে আসা হলো স্টেজে। সামনাসামনি দুটো স্টেজ। একটা আমার আর আপুর জন্য। আরেকটা সায়ন ভাইয়া আর রাহুল ভাইয়ার জন্য।

স্টেজে এসে বসার পর থেকেই নিচের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। সামনে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই আমার। আমার পাশ থেকেই সারা বলে উঠলো

– এভাবে নিচে না তাকিয়ে সামনে তাকিয়ে রাহুল ভাইয়াকে দেখ একবার। কি জোশ লাগছে উনাকে। সামনে তাঁকা প্লিজ। একবার তাঁকা শুধু।

সারার জোরাজোরিতে সামনে তাকাতেই হলো আমার। তবে এবারেও ভুল মানুষের দিকে চোখ গেলো। রাহুল ভাইয়াকে না দেখে সায়ন ভাইয়ার দিকেই তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। হলুদ পাঞ্জাবিতেও যে উনাকে এতো সুন্দর লাগে আগে জানতাম না। আমার ভুলটা ভেঙে দিতে সারা আবারও বলে উঠলো

– রাহুল ভাইয়াকে সেই লাগছেনা দোস্ত? ইশ ভাবতেই অবাক লাগছে আমি উনার শালীকা হচ্ছি। কেমন প্রাউড ফীল হচ্ছে রে জানু। কিরে কিছু তো বল। তোর কেমন লাগছে?

– হুম ভালো

– শুধু ভালো?

– না। খুব ভালো। আমার দেখা সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। যার সারা মুখটাই মায়ায় বাধানো। যার চোখের দিকে তাকালেই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ঐ মায়ার সাগরে। যার চাহনীতে বুকে কম্পন সৃষ্টি হয়, শীড়ায় শীড়ায় বয়ে যায় একরাশ শুভ্রতা। যাকে দেখলে শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। হাজারবার তাকে উপেক্ষা করার পণ করলেও বারবার তার কাছেই ছুটে যাই আমি। যার কাছ থেকে বেহায়া, ছেচড়া, আত্মসম্মানহীন উপাধি পাওয়ার পরেও নির্লজ্জ মন শুধু তাকেই চায়। যাকে দেখলেই মনে শুধু একটা কথাই আসে ” ভালোবাসি তাই ” “ভালোবাসি তাই ” ” ভালোবাসি তাই “।

আনমনা হয়ে এতকিছু বলার পরেই তাকালাম সারার দিকে। সেও কেমন উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। উদাসীন ভাবেই বললো

– আমি রাহুল ভাইয়ার ব্যাপারে বলতে বলেছি সায়ন ভাইয়ার ব্যাপারে নয়।

– আরে না মানে হয়েছে কি।

– থাক আর কিছু বলতে হবে না। তবে আমার সাথে যে কথা গুলো বলে ফেললি অন্য কেউ যেনো সেসব শুনতে না পায়।

– হুম। পাবে না।

শুরু হয়ে গেলো হলুদ সন্ধ্যা। একে একে সবাই হলুদ লাগিয়ে যাচ্ছে আমাদের। সবার হলুদ লাগানো শেষে আমাদের চারজনকে পাঠানো হলো ফ্রেশ হতে। পাশাপাশি দুটো রুম। যেটা আমাদের দুই বোনের জন্য সেটায় চলে গেলাম আমি আর আপু। আপুর নাকি বেশি আনইজি লাগছে তাই সে-ই প্রথমে গেলো ফ্রেশ হতে। একা একা এই ঘরে বসে থাকার চেয়ে ঘরের সামনের জায়গায় গিয়ে একটু দাঁড়িয়ে থাকাটা শ্রেয় মনে হলো আমার কাছে। তাই চলে এলাম সেখানে। এদিকটায় কোনো মানুষ নেই। তাই জায়গাটা নিরব। একটু সামনে এগিয়ে যেতেই কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম উনি সায়ন ভাইয়া। সায়ন ভাইয়ার সামনে পড়া মানে দুর্বল হয়ে যাওয়া। তাই আবার উল্টোদিকে হাঁটতে লাগলাম আমি। কিন্তু তার আগেই পেছন থেকে সায়ন ভাইয়া বলে উঠলেন

– অনেক অনেক শুভকামনা তোর নতুন জীবনের জন্য।

উনার কথা শুনে গলা ধরে আসছে আমার। কান্নাটাকে কতক্ষণ আটকে রাখতে পারবো জানি না আমি। তবুও ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে উনার দিকে ঘুরলাম আমি।

– কিরে চুপ কেনো? আমাকেও উইশ কর।

– ভাভালো থাকব..বেন।

– শুধু এটুকুই?

-………..

– আচ্ছা এতেই চলবে আমার। তো, সবাই তোকে হলুদ লাগালো আমায় লাগাতে দিবি না?

সায়ন ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হচ্ছি শুধু। কিছু বলার পরিস্থিতিতে নেই আমি। উনি তো জানেন আমার মনের কথা। জেনে শুনে আমার ক্ষতগুলো বাড়িয়েই যাচ্ছেন। আমার অনুভূতিগুলোর দাম উনার কাছে না-ই থাকতে পারে তাই বলে কি কষ্টগুলোরও দাম নেই?

– তুই না করলেও আমি তোকে হলুদ লাগাবো। তাই তোর কিছু বলার দরকার নেই। এভাবেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক।

ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে এলেন সায়ন ভাইয়া। উনার হাতেই খানিকটা হলুদ ছিলো। উনি আলতো করে হলুদ ছুঁয়িয়ে দিলেন আমার গালে। উনার স্পর্শ পেয়েই অবাধ্য চোখের জল গরিয়ে পড়লো গাল বেয়ে। উনি সেটা দেখেও মুচকি হাঁসলেন। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছে দিলেন চোখের পাশটা। আবারও উনার মায়ায় জড়িয়ে পরলাম আমি। নিজের অজান্তেই করে ফেললাম এক অন্যায় আবদার।

– আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে দেবেন আমায়? প্লিজ। শুধু একবার। এটাই প্রথম আর এটাই শেষ। ধরে নিন এটাই আমার শেষ ইচ্ছে।

– মানে?

– মানে কিছুনা। কেনো জানি না মনটা কু গাইছে খুব। মনে হচ্ছে খুব তারাতাড়ি মরে যাবো আমি।

– পাগল হয়ে গেছিস? কিসব উল্টাপাল্টা বকছিস? খবরদার যদি মাথায় কোনো আজগুবি চিন্তা ঘুরে।

– আরে আপনি ভুল ভাবছেন। আমি কখনো এমন কিছু করবো না। তবুও খুব ভয় করছে। কেনো সেটা জানি না। প্লিজ একবার অনুমতি দিন।

কিছু বলছেন না সায়ন ভাইয়া। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছেন শুধু। উনার নিরবতাটাকেই সম্মতি হিসেবে ধরে নিলাম। একবুক দ্বিধা নিয়েই জড়িয়ে ধরলাম সায়ন ভাইয়াকে। এই প্রথম উনার এতোটা কাছাকাছি আমি। হয়তো ভুল সময়ে। তবুও শেষ স্মৃতি হিসেবে একটা ভুলকেই আকড়ে ধরতে চাইছে আমার মন।

চলবে………

[ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here