ভালোবাসি তাই পর্ব-২৫

0
2025

#ভালোবাসি তাই
part:25
Writer:Afifa Jannat Maysha

🍁

অপেক্ষার প্রহর শেষে আজ চলে এলো সেই দিন। যেটা আমার কাছে পুরোপুরি অনাকাঙ্ক্ষিত। “বিয়ে” নামক ভাড়ী একটা কাজের মাধ্যমে নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিতে চলেছি আমি। আজকের পর হয়তো সায়ন ভাইয়াকে ভালোবেসে যাওয়াটাও অন্যায় হিসেবে ধরা হবে। দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন দুজন মানুষের সাথে সারাজীবনের মতো একটা সম্পর্কে জরিয়ে যাবো। সায়ন ভাইয়ার কথা জানি না। তবে আমার ক্ষেত্রে সেই সম্পর্কে ভালোবাসার ছিঁটেফোঁটাও হয়তো থাকবে না৷ থাকবে দায়িত্ব কর্তব্যের এক অদ্ভুত বোঝা। আমি চাইলেও যেগুলো এড়িয়ে যেতে পারবো না।

সারা বাড়িতে খুব বেশি কোলাহল নেই আজ। থাকবে কি করে? বাড়ির সবাই যে চলে গেছে কমিউনিটি সেন্টারে। বাড়িতে শুধু আমি, আপু, সারা আর আমার কাজিনরা রয়েছি। একটুপরই পার্লার থেকে বউটিশিয়ান আসবে। দুবোনকে সাজানো শেষে নিয়ে যাওয়া হবে কমিউনিটি সেন্টারে। সন্ধ্যা নামবে বলে। অন্ধকারের রাজত্ব শুরু হবে একটুপর। সারা শহরটাই যেনো নিস্তব্ধপুরিতে পরিণত হয়েছে আজ। কেমন শুণ্য শুণ্য অনুভুতি। চারপাশের নিরবতাটা যেনো ভালোবাসায় আমার হেরে যাওয়াটাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে বারবার।

নাজিবা আপু পার্লারে ফোন করে জেনেছে ওদের আসতে একটু দেরি হবে। তাই এখন চুপ করে বসে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই। হঠাৎ ইচ্ছা হলো ছাদে যাবো। আমার মন খারাপের সময়গুলোর সবথেকে বড় সাক্ষী হলো এই ছাদ। আজকেও যে আমার মন খারাপ। বড্ড মন খারাপ। তবে আজকেও কি ছাদে গেলে মন ভালো হয়ে যাবে নাকি সেটা জানি না আমি। তবুও আমি যাবো। হতেও তো পারে এটাই আমার শেষবারের মতো ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। রাহুল ভাইয়াদের বাড়িতেও যে এভাবে ছাদে যেতে পারবো তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাদের সেটা পছন্দ নাও হতে পারে।

আজকে নিজের মনের চাওয়াটার প্রাধান্য দিতে ইচ্ছে করছে ভীষণ। তাই কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ হেঁটে চলে এলাম ছাদে। যদিও ছাদটা আমার খুব প্রিয়। তবে আজ কেনো জানি অন্যরকম টান অনুভব করছি পুরো বাড়িটার প্রতি। ছাদ থেকে বাড়ির পেছনের বাগানটা পুরোপুরি স্পষ্ট দেখা যায়। ছাদের রেলিং ধরে তাকালাম বাগানটায়। আমার নিজের হাতে লাগানো কত গাছ আছে সেখানে। ভাইয়া আর আপু গাছ নিয়ে খুব একটা আগ্রহী ছিলো না। আমিই খুব পছন্দ করতাম গাছ লাগাতে। স্কুল লাইফে টিফিনের টাকা জমিয়ে রাখতাম শুধুমাত্র গাছ কেনার জন্য। সেইবার বাগানে ডেইজি ফুল লাগানোর জন্য কি পাগলামোটাই না করেছিলাম আমি। সকলে মিলে আমায় বুঝাতে ব্যার্থ হয়েছিলো যে ডেইজি ফুল এতোটাও সহজলভ্য নয়। শেষে আমার জেদের কাছে হার মেনে নিয়ে বাবা তার এক প্রবাসী বন্ধুকে দিয়ে আনিয়ে ছিলেন আমার সেই পছন্দের ডেইজি। আজ এই ফুল গাছটার প্রতিও এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। ছাদের কার্নিশ বেয়ে বেড়ে উঠা আগাছাগুলোও ভালো লাগছে খুব। যে জিনিসগুলোর দিকে ফিরেও তাকাতাম না সেসব জিনিগুলোও ভয়ানক মিস করছি আমি।

এমন অনুভূতির কারণটা জানি না । শুধু জানি কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার। ছাদের আরেক পাশটায় চোখ যেতেই দেখতে পেলাম কাউকে। এটা তো ভাইয়া। কিন্তু ও এখানে কি করছে? ভাইয়ার তো এখন কমিউনিটি সেন্টারে থাকার কথা। প্রশ্নগুলো মাথায় আসতেই দৌড়ে গেলাম ভাইয়ার কাছে। উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে সে।

– তুই এখানে কেনো ভাইয়া? তোর তো বিয়ের কাজে হেল্প করার জন্য সেন্টারে থাকার কথা।

আমার কথায় চমকে উঠলো ভাইয়া। অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ যখন সামনে চলে আসে তখন এভাবে চমকে যাই আমরা। নিজেকে স্বাভাবিক করে আমার দিকে ঘুরলো সে। ভাইয়াকে দেখে চমকে গেলাম আমি। চোখদুটো অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে। চোখের চারপাশটাও কেমন ফোলা।

– কি হলো কথা বলছিস না কেনো?

– ভালো লাগেনি তাই যাইনি।

– এটা আবার কেমন কথা?

– জানি না। তুই নিচে যা। তৈরী হবি কখন?

– সেটা তোর ভাবতে হবে না।

ভাইয়াকে একা থাকতে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিচে আসার জন্য পা বারালাম আমি। তখনই পেছন থেকে বলে উঠলো ভাইয়া

– তোরা দুই বোনই খুব খারাপ মাইশা। একসাথে মিলে চলে যাচ্ছিস এ বাড়ি থেকে। একবারো ভাবলিনা আমার কথা?

-…………………

– মালিশা, তুই দুজনই আমার কি সেটা জানিস তোরা? ভাবতেই পারছিনা এখন থেকে বাসায় ফিরে তোদের দেখতে পারবো না। বাসায় এসেই তোর সাথে ঝগড়া করা হবে না। তোর সাথে মারামারি করার জন্য মালিশার বকুনিগুলো আর খাওয়া হবে না।

– এভাবে বলছিস কেনো ভাইয়া?আপুতো খুব কাছেই থাকবে। ওর সাথে তো প্রায়ই দেখা করতে পারবি।

– আর তুই?

– আপুর মতো এতটা কাছে না থাকলেও খুব একটা দুরেও তো থাকবো না ।

– এই কাছাকাছি তো আগের মতো না। চাইলেও আগের মতো থাকতে পারবো না আমরা। আজ থেকে তোরা অন্য বাড়ির সম্পত্তি হয়ে যাবি। আর এবাড়ির অতিথি।

ভাইয়ার কথাগুলোয় কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে মনে হয়। চোখ থেকে টপটপ করে গরিয়ে চলেছে নোনা জল। কিন্তু ভাইয়া কাঁদছে না। ওহ, ছেলেদের তো কাঁদতে নেই। তাই হয়তো কাঁদছে না। আচমকাই ভাইয়াকে বলে উঠলাম

– এখন তো তবুও দেখতে পারবি, কথা বলতে পারবি। কিন্তু আমি যদি আর বেঁচেই না থাকি তখন?

– এখানে এসব কথা বলার মানে কি? বেঁচে থাকবি না মানে?

– আরে আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো? বুঝলাম না মারা যাওয়ার কথা শুনেই সবাই রেগে যাই। আরে আমি তো আর অমর নই। একদিন না একদিন তো মারা যেতেই হবে। সেটাই বলছি।

চুয়াল শক্ত হয়ে এসেছে ভাইয়ার। বুঝতে পারছি ভয়ানক রেগে গেছে সে। কোনোকিছু না বলেই ছাদ থেকে চলে গেলো ভাইয়া। আমি মুচকি মুচকি হাঁসতে লাগলাম। ইশ! আজকে সত্যি সত্যিই একবার মরতে ইচ্ছে করছে। মরে যাওয়ার পর যদি দেখতে পারতাম কে কেমন রিয়েক্ট করে তাহলে সত্যিই মরে যেতাম। কাধে কারো স্পর্শ পাওয়ায় পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলাম সারাকে। সে বাসের কন্ট্রাক্টরের মতো তাড়া দিয়ে বলতে লাগলো

– অসময়ে ছাদে এসে বসে আছিস কেনো? তারাতাড়ি নিচে চল। সাজানোর জন্য মহিলা এসে গেছে। সময়ও বেশি নেই। আঙ্কেল আন্টি তারাতাড়ি সেন্টারে পৌঁছুতে বলেছে।

আমি ভাবলেশহীন ভাবেই উত্তর দিলাম।

– যাচ্ছি যাচ্ছি। এতো তাড়ার কি আছে?

– তুই যে দিনদিন আজব এক প্রাণীতে রূপান্তরিত হচ্ছিস সেটা কি তুই জানিস? একটুপর তোর বিয়ে আর এখনও তুই গা-ছেড়ে দিয়ে বসে আছিস।

– ঠিকই বলেছিস। আজব এক প্রাণী। যে একজনকে ভালোবাসতে বাসতে এতটাই নিঃশ্বেস হয়ে গেছে যে অন্য কারো জন্য ভালোবাসা নামক অনুভূতিটাই কাজ করে না। তার বেঁচে থাকার কারণ হিসেবে রয়েছে দায়িত্ব দায়িত্ব আর দায়িত্ব।

সারার ফোঁপানোর শব্দ কানে আসছে ঠিকই কিন্তু ওর দিকে তাকাচ্ছি না আমি। সে তার চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো

– একটা কথা বলবি আমায়?

– কি কথা? বল।

– আমি কি ভুল করছি? বন্ধু হিসেবে তো আমার উচিৎ ছিলো তোর অনুভূতিগুলোর সাথে থাকা। তোকে তোর ভালোবাসার প্রতি সাপোর্ট করা। যেটা আগে করতাম। বিশ্বাস কর। আগে আমিও চাইতাম তোর ভালোবাসা জিতে যাক। পেয়ে যা তুই সায়ন ভাইয়াকে। কিন্তু সায়ন ভাইয়া কন্টিনিউয়াসলি যেভাবে তোর ফিলিংসগুলোর অপমান করছিলো সেটা মেনে নিতে পারি নি আমি। তারপর যখন খেয়াল করলাম রাহুল ভাইয়ার তোর প্রতি একটা সফট কর্ণার আছে। তখন…………

– তুই শুধু শুধু নিজেকে ভুল ভাবছিস। তুই যেটা করেছিস একটা প্রকৃত বন্ধু হিসেবে সেটাই তোর করনীয় ছিলো। তুইও যদি আমার একতরফা ভালোবাসাটাকে সাপোর্ট করতি তাহলে হয়তো আমি কোনোদিনও নিজেকে সায়ন ভাইয়ার থেকে দুরে সরিয়ে আনতে পারতাম না। সেটা আমার জন্য শান্তির হলেও আমার পরিবার? আমার পরিবারের জন্য ঠিক হতো না। রাহুল ভাইয়ার সাথে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাপোর্ট করেছিস বলেই পরিবারের সবাই খুশি। আমি খুশি না থাকলেও খারাপ থাকবো বলে মনে হয় না। তুই আমায় আবেগ নিয়ে পড়ে থাকতে না না বলে বাস্তবতাটা বুঝিয়ে গেছিস ক্রমাগত। তাই বলছি তুই একদম ঠিক করছিস।

আমার কথা শেষ হতেই আমায় জরিয়ে ধরলো সারা। কাধের উপর গরম অনুভূত হওয়ায় বুঝলাম কাঁদছে সে। যে কান্নার শব্দ নেই। তবে রয়েছে বেস্টফ্রেন্ডের কষ্ট মেনে নিতে না পারার আহাজারি।

– আজকে আমার চিৎকার করে সবাইকে বলতে ইচ্ছে করছে শেখো, এই মেয়ের থেকে শেখো তোমরা। কাউকে নিঃস্বার্থভাবে কিকরে ভালোবাসা যায় সেটা শেখা উচিত তোর থেকে। আবার পরিবারকে কতটা ভালোবাসলে সেই ভালোবাসাটাও বিসর্জন দেওয়া যায় সেটাও তোকে দেখে শেখা উচিত।

– আরে ধুর কান্নাকাটি থামা তো। এভাবে কাঁদছিস যেনো মরে গেছি আমি। তারাতাড়ি চোখ মোছ। নিচে যেতে হবে না? কতটা লেইট হয়ে গেছে।

– হুম আর কাঁদবো না। কি পাগল আমি। যেখানে তোর কাঁদার কথা সেখানে তুই কাঁদছিস না। আর আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে চলেছি।

নিচ থেকে নাঈমা আপুর ডাক পেয়ে আর একমিনিটও দাঁড়ালাম না ছাদে। মুখে হাঁসি এনেই তারাতাড়ি চলে এলাম ঘরে। যেখানে আমার আর আপুর সাজের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

🍁

প্রায় দুইঘন্টার মতো সময় নিয়ে মানুষ থেকে পুতুলে পরিণত করা হলো আমায়। নিজেকে নিজেই চিনতে পারছি না আমি। সাজগোছ কোনোকালেই পছন্দ নয় আমার। সম্ভব হলে আজকেও সাজতাম না। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে যদি বউকেই সাজতে দেখা না যায় তাহলে হয়তো খবরের কাগজের হেডলাইন হিসেবে বেরিয়ে পরবে এই খবর।

আপুকেও সাজানো হয়ে গেছে। দুজনেই এক রকম শাড়ি পরেছি। তবে জুয়েলারিগুলো আলাদা আলাদা। আপুরগুলো খালামনির দেওয়া আর আমার গুলো রাহুল ভাইয়াদের দেওয়া। তাই ম্যাচ করেনি। আমাদের সাজানোর সময় বাকি আপুরাও সেজে নিয়েছে। এখন শুধু বাবার ফোনের অপেক্ষা। বাবা ফোন করলেই বেরিয়ে পরবো আমরা। আর ফেরা হবে না এবাড়িতে। ওখান থেকেই চলে যাবো এক নতুন ঠিকানায়।

সবার মাঝে ভালো না লাগায় সারার সাথে নিজের ঘরে এলাম একটু। এই ঘরটা ছেড়ে আজ থেকে থাকতে হবে আরেক ঘরে। ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস নিজের হাতে গুছিয়েছি আমি। সবকিছুর প্রতিই মায়া পরে গেছে। যে মায়া কাটাতে খুব কষ্ট করতে হবে আমায়।

হঠাৎ ফোনের মেসেজ টোনে ভাবনার সুতো ছিড়লো আমার। তাকিয়ে দেখি রাহুল ভাইয়ার মেসেজ। এসময় উনার মেসেজে ভীষণ অবাক হলাম আমি। কৌতুহল মেটাতে মেসেজটা অপেন করলাম। মেসেজে লিখা

” তোমাদের বাড়ির পেছনের বাগানটায় এসো প্লিজ। আমিও ওখানেই আছি এখন। অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। জলদি এসো। খুব বড় সারপ্রইজিং আছে তোমার জন্য। আসবে কিন্তু

ইতি
তোমার আশায় বসে থাকা আমি ”

মেসেজ পড়ে কৌতুহল কমার বদলে আরো বেড়ে গেলো। কি এমন সারপ্রাইজ দেবেন উনি? যার জন্য এখন বাগানে যেতে হবে আমায়। একটুপরই তো বিয়ে। বুঝতে পারছি না যাবো কি যাবো না।

– কার মেসেজ?

সারার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা ফোনটাই ধরিয়ে দিলাম তার হাতে। মেসেজ পড়ে সেও যে অবাক হয়েছে সেটা তার মুখভঙ্গিই বলে দিচ্ছে।

– কি করবো এখন?

– সেটাই তো। কি করবি?

– বুঝতে পারছি না। কি এমন সারপ্রাইজ বলতো?

– আরে আজব আমি কিভাবে জানবো? কি সারপ্রাইজ সেটা জানতে চাস?

– হুম।

– আরে গাধা তাহলে বসে আছিস কেনো? চলে যা বাগানে।

– এখন এইভাবে?

– তো?

– আরে একটু পর বিয়ে এখন যাওয়া ঠিক হবে কি? তাছাড়া যে ভাড়ী সাজ। এসব নিয়ে হাঁটতে পারবো কিনা সন্দেহ।

– তাহলে আর কি। বসে থাক।

-বসে থাকতেও তো পারছি না। কিউরিসিটি বেড়েই চলেছে। আচ্ছা আমি কি যাবো?

– আমি কি জানি।

– আচ্ছা আমি যাবো। কিন্তু কেউ যেনো না জানে। নাহলে কি না কি ভাববে।

– আচ্ছা কেউ জানবে না। তুই যা। কিন্তু তারাতাড়ি ফিরবি।

– হুম। তুই নিচ পর্যন্ত আয় না আমার সাথে। প্লিজ

– ওকে চল।

আমি আর সারা পা টিপে টিপে নামতে লাগলাম সিড়ি বেয়ে। কেউ জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। অতিরিক্ত গয়নার ভাড়ে হাঁটতেও পারছিনা ঠিকমতো। অনেক কষ্টে ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই সারা বলে উঠলো

– বাকিটুকু তোর একার পথ। আমি যাবো না। কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার সখ নেই।

আমারও কেমন ভয় করছে। বুকে ফু দিয়ে আবারও হাঁটা ধরলাম আমি। বাগানে লাইট থাকায় অন্ধকাজনিত সমস্যায় পরতে হয়নি আমায়। বাগানের ঠিক মাঝখানে এসে দাঁড়াতেই পেছন থেকে ভেসে এলো রাহুল ভাইয়ার গলা।

-এসে গেছো তুমি।

তারাতাড়ি করে পেছনে ঘুরলাম আমি। কিন্তু রাহুল ভাইয়াকে দেখে অবাকের চরমসীমায় পৌঁছে গেলাম যেনো।

বিয়ের সাজের বদলে কি অদ্ভুতভাবে সেজে আছেন রাহুল ভাইয়া। মুখে মাস্ক, কালো রেইনকোট পড়ে হাতদুটো পেছনে রেখে দিয়েছেন । বাইরে তো বৃষ্টি নেই। তাহলে রেইনকোট পড়ার কারণটাই বুঝে উঠতে পারছি না আমি। উনার কন্ঠ না চিনলে বুঝতেই পারতাম না এটা রাহুল ভাইয়া। বিস্ময় কাটিয়ে প্রশ্ন করলাম

– আপনি এভাবে কেনো?

– কারণ এখন আমি যেটা করবো তার জন্য এমন ভাবেই থাকতে হবে আমায়।

– মানে? কি করবেন আপনি?

– দেখতে চাও?

– হুম

– ওকে।

পেছন থেকে হাতটা সামনে নিয়ে এলেন রাহুল ভাইয়া। উনার হাতে কিসের একটা বোতল যেনো। আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন

– এটা দিয়ে কি করবো দেখতে চাও? দাঁড়াও দেখাচ্ছি।

উনি বোতলের মুখটা খুলে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন আমার দিকে। আমার একদম কাছে এসে মুখে হাত রেখে বললেন

– ইউ নো? তুমি অনেক সুন্দর। তোমার চেহারায় এক অন্যরকম লাবণ্যতা আছে।

– কিসব বলছেন আপনি? পাগল হয়ে গেছেন? আর আপনি আমার মুখে হাত দিয়েছেন কেনো?

আমার কথায় হাঁসলেন রাহুল ভাইয়া। উনার আজব ব্যাবহার মেনে নিতে পারছি না আমি। উনি হেঁসে হেঁসে বললেন

– আজকের পর আর কেউ তোমার এই মুখে হাত দেবে না।

– মানে?

আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর এলো না রাহুল ভাইয়ার তরফ থেকে। উনি অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইলেন কতক্ষন। হঠাৎ করেই বোতলের ভেতর থাকা তরল কিছু ছুড়ে মারলেন আমার মুখে। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসছে সব। মুখে অনুভূত হচ্ছে অসহ্য যন্ত্রনা। সারা মুখটা জ্বলে যাচ্ছে মনে হয়। সহ্য করতে না পেরে মুখে ধরে এক গগনবিদারী চিৎকার দিলাম আমি। দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে পড়ে গেলাম বাগানের সবুজ ঘাসের উপর। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরায় হাতটাও জ্বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মরে যাচ্ছি আমি। সহ্য করতে পারছি না এই যন্ত্রনা। আমি চিৎকার করেই চলেছি। কিন্তু কেউ এলহনো আসে নি আমার কাছে। ঝাপসা চোখে রাহুল ভাইয়াকে দৌড়ে যেতে দেখলাম শুধু।

গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করছি আমি। পাশে নেই কোনো আপনজন। চোখের সামনে ভেসে উঠছে সায়ন ভাইয়ার মুখ। আমি কি মরে যাচ্ছি? শেষবারের মতো কি সায়ন ভাইয়াকে দেখা হবে না আর। মৃত্যুর মাধ্যমেই কি আমার অসমাপ্ত ভালোবাসার ইতি ঘটবে আজ? চোখ বন্ধ হওয়ার আগে সারাসহ বাকিদের আমার দিকে ছুটে আসতে দেখলাম।

চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here