#ভালোবাসি তাই
part:30
Writer:Afifa Jannat Maysha
🍁
রাহুল ভাইয়াকে নিয়ে যাওয়া হলো। সবাই চলে যাওয়ার পর সায়ন ভাইয়া সোফায় চুপ করে বসে রইলেন। সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মাঝ থেকে হঠাৎই শুনতে পেলাম কোনো পুরুষের কন্ঠ।পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলাম সেই যুবক পুলিশ অফিসারকে । যাকে আজই নতুন দেখেছি আমি। উনি আপুর কাছে গিয়ে হালকা কন্ঠে বললেন
– কেমন আছো মালিশা?
উনার কথায় আপু কেমন করে তাকালো যেনো। মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে উঠবে সে। তবে এই কান্নায় কষ্টের চেয়ে ক্রোধটাই বোধহয় বেশি। আপু তাচ্ছিল্য স্বরে বলে উঠলো
– ভালো আছি। খুব ভালো আছি। আমার তো ভালো থাকারই কথা। অবশ্যই ভালো আছি । পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি।
– আমি সত্যিটা জানতে চাইছি।
– তো আপনার কি মনে হচ্ছে আমি মিথ্যে বলছি? মিস্টার আবিরের সামনে মিথ্যে বলছি?
আপুর কথার প্রতিউত্তরে কিছুই বললেন না উনি। শুধু একটা শ্বাস নিয়ে বললেন
– আমার উপর রেগে আছো এখনো? রাগ করাটাই স্বাভাবিক। আমি আমার কথা রাখতে পারিনি। পরিবার আর তোমার মাঝে পরিবারকেই প্রায়োরিটি দিয়েছি আমি। আমি তোমায় ঠকাতে চাইনি। কিন্তু কি করবো বলো? মায়ের কথা তো। তাই ফেলতে পারিনি। মায়ের ইচ্ছেতেই মামার মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। কিছুই যে করার ছিলো না আমার। কিন্তু তোমার জায়গাটা কোনোদিন কাউকেই দিতে পারিনি আমি।
আমরা সবাই অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছি। ওদের কথার পুরোটা মানে না বুঝলেও সামান্য আঁচ করতে পেরেছি সবাই। আপু এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। কান্নাজরিত কন্ঠেই বললো
– আমি তোমার পরিস্থিতিটা বুঝতে পারি আবির। আমি এতটাও স্বার্থপর নই যে কোনো মায়ের থেকে তার ছেলেকে কেড়ে নিতে চাইবো। তোমার এই সিদ্ধান্তে তোমার প্রতি সম্মান আরও বেড়ে গেছে আমার। আমিও তো ভালো থাকতে চাই। কিন্তু কি করবো বলো? আমার ভালো থাকার কারণটা যে তুমিই। তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভালো থাকবো কি করে বলোতো? প্রতিমুহূর্তে নিজের সাথে যুদ্ধ করি আমি। ভাবি তোমায় নিয়ে আর ভাববো না। কিন্তু বেহায়া মন শুধু তোমায় নিয়েই ভেবে চলে। জানো তো, ভারসিটির প্রোগ্রামের দিন আমি সবথেকে খুশি হয়েছিলাম। কারণ সেদিন তুমার চাকরির প্রথম দিন ছিলো। আর সেদিন তুমি বলেছিলে আমায় তোমার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। আমি যেনো ভারসিটির সামনে অপেক্ষা করি। তুমি সেখানে আসবে। আমি খুশি হয়ে নীল শাড়িতে সাজিয়ে ছিলাম নিজেকে। কিন্তু ভাবতে পারিনি সেদিনই আমার জীবনের সবথেকে বড় ধাক্কা খেতে হবে আমায়। তুমি ভারসিটির সামনে এসেছিলে ঠিকই কিন্তু একা না। সাথে ছিলো তোমার সদ্য বিয়ে করা বউ। কাজী অফিস থেকে সোজা আমার কাছেই এসেছিলে তোমরা। বিশ্বাস করো সেদিনের পরে আর কোনোদিনই নীল শাড়ি পড়িনি আমি। কারণ আমায় এই শাড়িতে দেখতে যে তুমি বড্ড পছন্দ করতে। নীল শাড়ি দেখলেই তোমার কথা মনে পড়তো আমার।
আর কিছু না বলে অঝোরে কাঁদতে লাগলো আপু। এখানে উপস্থিত সবার চোখেই পানি। আমি ভাবতেও পারছিনা নিজের মধ্যে এতোটা কষ্ট জমিয়ে রেখেছিলো আপু। কখনো বুঝতেও পারিনি আমরা। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে আপু মুচকি হেঁসে বললো
– যাই হোক বললে না যে তোমার বউ কেমন আছে?
আবির ভাইয়াও পাল্টা হেঁসে বললেন
– হুম ভালো। সেও খুব ভালো আছে। সারাজীবনের মতো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে সে।
আবির ভাইয়ার কথায় আরেক দফা অবাক হলাম আমরা। আপু বললো
– মানে?
– বিয়ের দুইমাস পরেই মারা গেছে মিমি।
আপু কাঁপাকাঁপা গলায় বললো
– অসুস্থ ছিলো?
– আজকাল আমাদের একটাই সমস্যা। কেউ মারা গেলেই মনে করি হয়তো সে কোনোভাবে অসুস্থ ছিলো। কিন্তু মিমির কোনো অসুখ ছিলো না। স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। জানোতো? খুব ভালো মেয়ে ছিলো মিমি। আমি তার সাথে স্বাভাবিক নই এটা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো সে। সবসময় আমার সাথে মানিয়ে চলতে চেষ্টা করতো। কিন্তু ভালোভাবে সংসার করার আগেই পৃথিবী থেকে চলে গেলো।
আমরা এখনো চুপ করেই আছি। আর আপু কান্না করছে। হঠাৎই মা বলে উঠলো
– আমার দুই মেয়ের মনেই এতোটা চাপা কষ্ট ছিলো। আর আমি মা হয়ে জানতেই পারলাম না। এটা কি আমার ব্যার্থতা? নাকি আমার মেয়েরা বেশী ধৈর্যশীল।
ভাইয়া মাকে জাপটে ধরে বললো
– তুমি ব্যার্থ নও মা। তুমি সফল। তোমার দুই মেয়েই এতো ধৈর্য রাখতে পারে যে তাদের মনের কথা তাদের মনও জানতে পারে না। তোমার থেকেই তো এই শিক্ষা পেয়েছে বলো? তাই তুমি সফল।
আবির ভাইয়াও তার চোখ মুছে নিয়ে বললো
– মালিশা যে ধৈর্যশীল তা আমি আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু আজ জানতে পারলাম মাইশাও খুব বেশী ধৈর্যশীল। আসলে দুই বোনই তো। আচ্ছা যাই হোক, আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আর মাইশা সবসময় এমন স্ট্রংই থাকবে। আমি রাহুলের সর্বোচ্চ শাস্তির চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আজ আসি।
আমিও মাথা নাড়িয়ে আবির ভাইয়ার সাথে সম্মতি জানালাম। উনি সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই আপু বলে উঠলো
– আজও কি আমায় একা করে দিয়ে চলে যাবে? গ্রহণ করা যায়না আমায়? আমি তো তোমার কাছেই ফিরতে চাই।
আবির ভাইয়া অবাক চোখে তাকালেন আপুর দিকে। কতক্ষণ তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন
– তুমি এখনো আমার কাছে ফিরতে চাও?
– হ্যাঁ।
– কেনো?
– ভালোবাসি তাই।
এবার আবির ভাইয়ার চোখেও পানি দেখতে পেলাম আমি। উনি বললেন
– আমার ভালো থাকার কারণটাও যে তুমি মালিশা। কিন্তু তুমি আমার কাছে ফিরতে পারো না। আমার থেকেও ভালো কাউকে তুমি পাবে ইনশাআল্লাহ। আর পিছু ডেকো না। তোমার ডাক অগ্রাহ্য করাটা আমার পক্ষে খুব কষ্টকর। প্লিজ। আসি।
খুব দ্রুত প্রস্থান করলেন আবির ভাইয়া। আপুও চলে গেলো নিজের ঘরে। একে একে সবাই চলে গেলো ড্রয়িংরুম থেকে। আমিও চলে আসতে চাইলে পেছন থেকে হাত টেনে ধরলেন সায়ন ভাইয়া। উনি বললেন
– মাইশা………
– আপনি কি বলবেন সেটা জানি আমি। আমার উত্তর “না “। দয়াকরে আর একই কথা বলবেন না আপনি।
হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে এলাম নিজের ঘরে। আজ আপুকে আমার থেকেও বেশী অসহায় মনে হচ্ছে। পেয়েও পাওয়া হলো না প্রিয় মানুষটাকে।
🍁
আজ প্রায় একমাস হয়ে গেছে রাহুল ভাইয়ার শাস্তি ঠিক হয়েছে। চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে উনার। শেষ যেদিন উনার সাথে দেখা হয়েছিলো সেদিন উনার মাঝে দেখতে পেরেছিলাম অনুতপ্ততা। কিন্তু এই অনুতপ্ততা তো আর আমায় ঠিক করে দিতে পারবে না। তাই উনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম আমি।
আজকাল সায়ন ভাইয়ার অত্যাচার বেড়ে গেছে প্রচুর। সারাক্ষণ আমার পেছনে পড়েই থাকে। একটাই কথা বিয়ে করবো কবে ? আমার উত্তর বরাবরই “না”। কতবার খালামনিকেও বলেছি উনার বিয়ে দিয়ে দিতে। কিন্তু তারও এক কথা। “আমার ছেলে যা চায় তা-ই হবে। তুইই আমার বউমা হবি।” তাই উনার সব রকম অত্যাচার সহ্য করতে হয় আমায়।
বিকাল চারটা কি পাঁচটা। আমার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম । কিন্তু ঘুমের মাঝে হঠাৎই মনে হলো হাওয়ায় ভাসছি আমি। তাই চট করে চোখ খুলে দেখি আমি সায়ন ভাইয়ার কোলে। আমি যেই চিৎকার দিতে যাবো উনি মুখ চেপে ধরলেন আমার। রাগী গলায় বললেন
– একদম চিৎকার করবি না বলে দিলাম। আমি চোর না ডাকাত? আমি আমার বউকে কোলে নিয়েছি সো নো চিল্লাফাল্লা। আর চাইলেও করতে পারিস আমার খুব একটা সমস্যা হবে না। সবাই জানে আমিই তোর ঘরে আছি।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাই সায়ন ভাইয়ার হাতে বসিয়ে দিলাম এক কামড়। সাথে সাথে আমার মুখ থেকে হাত ছুটে গেলো উনার।
– তুই তো দেখি আস্ত একটা পেত্নী মিষ্টি।
সায়ন ভাইয়ার মুখে “মিষ্টি ” ডাক শুনে উনার দিকে তাকালাম আমি। উনি স্বাভাবিকভাবেই দাড়িয়ে আছেন।
– আপনি আমায় মিষ্টি বলে ডাকলেন?
– হুম ডাকলাম। কেনো কি হয়েছে?
– না কিছু হয়নি। আজ প্রায় চার বছর পর আমায় এই নামে ডাকলেন আপনি। এর আগে তো এই নামেই ডাকতেন।
– এখন থেকে এই নামেই ডাকবো বলে ঠিক করেছি।
– আচ্ছা আমায় কোল থেকে নামান। আমি কোনো বাচ্চা না যে কোলে নিয়ে ঘুরতে হবে। আর এসিডে আমার মুখটাই শুধু নষ্ট হয়েছে পা নয়। তাই হাঁটাচলা করতে কোনো সমস্যা হবে না।
– জানি তুই হাঁটতে পারবি। কিন্তু আমি তোকে ছাড়ছি না। আজ একটা স্পেশাল জায়গায় যাবো আমরা।
– বাড়ির সবাই?
– না । শুধু তুই আর আমি।
– আর কেউ যাবে না কেনো?
সায়ন ভাইয়া চোখ টিপে বললেন
– সবাই আমাদের একটু প্রাইভেসি দিতে চায় হয়তো।
এবার লজ্জায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে হবে আমার। সায়ন ভাইয়া জেনে শুনে এমন করছেন। লজ্জা কাটাতে বলে উঠলাম
– স্পেশাল জায়গায় কি কোলে করে যেতে হবে ভাইয়া?
– তোর প্রশ্নের উত্তর পরে দেবো আগে বল এভাবে ভাইয়া বলে ডাকার কারণ কি? যেভাবে ভাইয়া ডাকিস তাতে আমি নিজেই কনফিউজড হয়ে যাই যে আমি তোর কাজিন না নিজের ভাই?
– আপনি তো আমার নিজের ভাই-ই হন। আমার মায়ের, মায়ের, বড় মেয়ের পেটের ছেলে। সেহিসেবে আপনি আমার পার্শ্ববর্তী মায়ের নিজের ভাই।
– তারমানে তুই ভাইয়া ডাকা বন্ধ করবি না তাই তো?
– অভিয়েসলি ভাইয়া। ভাইয়া ইস ভাইয়া।
– নো বেবী, তোমার সায়ন ভাইয়া ইজ নট অনলি ভাইয়া। হী ইজ ইউর সাইয়া। আন্ডারস্ট্যান্ড? আর আমায় ভাইয়া ডাকবি তো? ডাকতে থাক। নো প্রবলেম বেবী। তাহলে তুমি তোমার নিজের বাচ্চার ফুপি হয়ে যাবে আর আমি মামা হয়ে যাবো। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। নিজের বাচ্চার মামা হওয়ার সৌভাগ্য সবার থাকে না। তাই আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।
আমি কিছু বলতে যাবো কিন্তু সায়ন ভাইয়া সেই সুযোগ না দিয়ে আমার মুখে হাত দিয়ে বললেন
– উফ মিষ্টি, ইউ আর সো কিউরিয়াস। এতো কিউরিসিটি ভালো না জান। এখন আর কোনো কথা হবে না। লেটস গো টু আওয়ার স্পেশাল প্লেস।
আমায় কোলে নিয়েই একমতন দৌড়ে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলেন সায়ন ভাইয়া। ড্রয়িংরুমে বাবা বাদে সবাই উপস্থিত ছিলেন। লজ্জায় সায়ন ভাইয়ার বুকের সাথে লেপ্টে ছিলাম শুধু। চোখ তুলে তাকানোর সাহস হয়নি।
বাসার সামনেই সায়ন ভাইয়ার গাড়ি দাঁড় করানো ছিলো। উনি দরজা খুলে আমায় বসিয়ে দিলেন সামনে। তারপর নিজেই বসলেন ড্রাইভিং সিটে। গাড়ি স্টার্ট দিয়েই মিউজিক বাজিয়ে দিলেন সায়ন ভাইয়া।
আমি বললাম
– মিউজিক বন্ধ করুন প্লিজ।
– কেনো?
– এমনি। ভালো লাগে না আমার।
– হুর, তুই দেখি আস্ত আনরোমান্টিকের ডিব্বা। আরে মিউজিক না থাকলে প্রেমটা ঠিক জমে না।
– আজব! কিসের প্রেম? আমরা কি প্রেম করতে যাচ্ছি ভাইয়া?
– না তার থেকেও বেশী কিছু।
– মানে কি?
– উফ, তোর এই মানে মানের চক্করে আমার রোমান্টিক মোডটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একদম চুপ করে থাক নয়তো তোকে চুপ করানোর পথটা আমার জানা আছে। কি, দেখতে চাস সেটা?
আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে বললাম
– এই যে আমি চুপ ভাইয়া। এইমুহুর্তের জন্য আমি কথা বলা ভুলে গেছি।
– গুড ওয়াইফ।
সারা রাস্তা আর কোনো কথা বলিনি আমি। তবে আজ বুঝতে পেরেছি কথা বলাটা আমার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কথা বলতে না পেরে পেটের ভেতর টর্নেডো শুরু হয়ে গেছে মনে হয়। হঠাৎ ব্রেক কষায় সামনের দিকে ঝুকে পড়লাম আমি। সায়ন ভাইয়া তারাতাড়ি ধরে নিলেন আমায়।
– সরি সরি।
– ইটস ওকে ভাইয়া।
– ধুর কোথায় ভাবলাম তুইও ভয় পেয়ে আমায় জাপ্টে ধরবি তানা কি করলি? ভাইয়া বলে মুডটাই নষ্ট করে দিলি। আজব মেয়ে। এবার নাম তারাতাড়ি নয়তো আবারও কোলে নিয়ে হাঁটা ধরবো।
– এই না না। এক্ষুনি নামছি।
যতটা তারাতাড়ি গাড়ি থেকে নামলাম ঠিক ততটাই বড় ঝটকা খেলাম সামনের জায়গাটা দেখে। আমি প্রশ্ননিদ্ধ চোখে সায়ন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
– আমরা এখানে কেনো ভাইয়া?
– তোর “ভাইয়া” রোগ সারিয়ে তুলতেই এখানে এসেছি জান।
চলবে……….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]