ভালোবাসি তাই পর্ব-৯

0
1784

#ভালোবাসি তাই
part:9
Writer: Afifa Jannat Maysha

🍁

আজ প্রায় এক সপ্তাহ পর বাসায় ফিরলাম আমি আর আপু। সায়ন ভাইয়া এখন অনেকটাই সুস্থ। একয়দিনে উনি একবারও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন নি। করবেই বা কিভাবে? আমার সাথে তো উনার সেভাবে কথায় হয়নি। অবশ্য আমিও বেশি কোনো কথা বলার চেষ্টা করি নি। আপু আর খালামনি সবসময় সায়ন ভাইয়ার আশেপাশে থাকতো। উনার কখন কি প্রয়োজন তার খেয়াল রাখতো। আমি শুধু দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম। কখনো ভেতরে যাওয়া হতো না।

একয়দিনে খালামনির বাসায় সাদাব ভাইয়া, ফাহাদ ভাইয়া আর রাহুল ভাইয়ার আনাগোনা লেগেই ছিলো। সাদাব ভাইয়া আর ফাহাদ ভাইয়া কখনো কখনো আসতে না পারলেও রাহুল ভাইয়া নিয়মিত আসতেন। রাহুল ভাইয়া অনেক মজার একজন মানুষ। কখনো উনার কাজে হাঁসতে হাঁসতে গড়াগড়ি খেয়েছি আবার কখনো উনার অদ্ভুত ব্যবহারে অবাক হয়েছি। রাহুল ভাইয়াকে যতটুকু চিনতে পেরেছি উনি খুব ভালো মনের একজন মানুষ।

বাসায় আসতে আসতে প্রায় সন্ধা হয়ে গেছে। আমি আমার ঘরে এসেই সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই দেখি আপু বসে আছে আমার বিছানার উপরে। আমি মুখ মুছতে মুছতে বললাম

– ফ্রেশ হওয়া শেষ তোমার?

– হুম।

– কিছু বলবে আপু?

– হ্যাঁ।

– কি বলবে, বলো?

আপু বিছানা থেকে উঠে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আমার হাত ধরে বললো

– তুই আমার উপর রাগ করে আছিস। তাই না?

– আমি তোমার উপর রাগ করতে যাবো কেনো? তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

– তুই সত্যিই আমার উপর রাগ করিস নি?

– তোমার উপর রেগে থাকার কোনো কারণ আছে নাকি?

– আছে তো।

– কি কারণ?

– ঐ যে সেদিন আমি তোকে সায়ন ভাইয়ার ঘরে যেতে দিই নি। সায়ন ভাইয়ার এক্সিডেন্টের জন্য তোকে কথা শুনিয়েছি।

– আরে, তুমি এখনো এটা নিয়ে পরে আছো? আমি তো এটা কবেই ভুলে গেছি। সেদিন মাথা ঠিক ছিলো না তোমার। তাই কি বলতে কি বলেছো তুমি নিজেই বুঝতে পারো নি। আর সায়ন ভাইয়ার ঘরে তো ভালোর জন্যই যেতে দাও নি। আমাকে দেখলে হয়তো উনি রেগে যেতেন যেটা উনার শরীরের জন্য ভালো হতো না। তাই তো তুমি আমায় উনার ঘরে যেতে দাও নি। এখানে রাগ করার কি আছে?

– আমি জানতাম তুই ঠিকই বুঝতে পারবি।

– দেখতে হবে না বোনটা কার? সে যাই হোক, আর কিছু বলবে?

– হ্যাঁ, আরেকটা কথা বলার ছিলো।

– তো বলে ফেলো।

– না মানে কিভাবে যে বলবো?

– ওহ মাই গড, তুমি কি আমার সাথে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছো আপু?

আপু কোনো কথা না বলে উল্টো দিকে ঘুরে গেলো। আপু যে কিছু একটা নিয়ে লজ্জা পাচ্ছে সেটা বেশ বুঝা হয়ে গেছে আমার। আমিও কিছু না বলে আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কারণ আমি যদি এখন আপুকে কথাটা বলার জন্য ফোর্স করি ও সেটা জীবনেও বলতে পারবে না। তার থেকে বরং লজ্জা কাটিয়ে নিজে থেকেই বলুক।

আপু অনেক্ষন যাবৎ আঙুল মুচরামুচরি করে কথাটা বলার জন্য সাহস অর্জন করলো। আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না যে কি এমন কথা যার জন্য এতোকিছু। আপু চট করেই বলে ফেললো

– আমি সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি।

– মানে?

– আরে আমি বলেছিলাম না যে সায়ন ভাইয়ার ফাইনাল এক্সাম পর্যন্ত দেখবো উনার রাগ সামলাতে পারবো কিনা?

– হ্যাঁ, বলেছিলে।

– আমার মনে হয় উনার ফাইনাল এক্সাম পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে হবে না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আমি সায়ন ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি।

আপুর কথা শুনে অনেক কষ্ট হচ্ছে । আমি তো আগে থেকেই এটা মেনে নিয়েছিলাম তবু্ও কেনো এতো খারাপ লাগছে আমার? আমি ছোট করে উত্তর দিলাম

– ওহ। তাহলে তুমি এটা আমায় বলছো কেনো? মা
-বাবাকে বলো। তারাই তো তোমার মতামত জানতে চাইছিলো।

– ধুর, তুই কি পাগল? আমি নিজে গিয়ে মা-বাবাকে কি করে বলবো?

– তাহলে কে বলবে?

– কে আবার, তুই।

– আমি বলবো?

– হ্যাঁ , তুই মা-বাবাকে গিয়ে বলবি যে আমি এই বিয়েতে রাজি। প্লিজ প্লিজ না করিস না। দেখ আমি তোর কাছেই কথাটা বলতে কতটা সময় নিয়েছি। তাহলে মা-বাবাকে কি করে বলবো? প্লিজ তুই একটু বলে দে।

– আচ্ছা ঠিক আছে বলবো।এবার খুশি?

– অনেক খুশি। এই জন্যই তো তোকে আমি এতো ভালোবাসি।

আপু চলে যাওয়ার পর বিছানায় এসে বসলাম আমি। ফোনটা হাতে নিয়ে গেলারীতে ঢুকলাম। সায়ন ভাইয়ার ছবিগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছি। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে আমার। তারমানে সায়ন ভাইয়াকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম আমি। উনি সত্যি সত্যিই আপুকে বিয়ে করে ফেলবেন। কিন্তু আমি কি করবো? যাকে ভালোবাসি তার সাথেই নিজের বোনকে কি করে সহ্য করবো?

🍁

রাতে খাবার টেবিলে বসে আছি আমি, আপু, ভাইয়া আর মা-বাবা। সবাই চুপচাপ খাবার খাচ্ছি। এটা আমার বাবার কড়া নিষেধ। খাওয়ার সময় নো কথা-বার্তা। আর আমরাও বাধ্য সন্তানের মতো বাবার এই নিষেধ মেনে চলি। আপু সেই কখন থেকে আমাকে ইশারা করে চলেছে যেনো কথাটা বলি।

খাওয়া- দাওয়া শেষে বাবা – মাকে বললাম আমি কিছু বলতে চাই। আমার কথা শুনার জন্যই তারা তখন থেকে বসে আছে। কিন্তু আমিও কথাটা বলতে পারছি না। তবে সেটা আপুর মতো লজ্জায় নয় কষ্টে। অনেক্ষন ধরে নিজেকে সামলে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম

– তোমরা সায়ন ভাইয়া আর আপুর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিলে না বাবা?

– হ্যাঁ বলছিলাম। কিন্তু মালিশা তো ওর কোনো সিদ্ধান্ত জানায় নি আমাদের।

– বাবা, আপু এই বিয়েতে রাজি।

– তুমি কি করে জানো মাইশা?

– আপু নিজেই বলেছে।

আপুর দিকে তাকালো বাবা। আপু চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা কোনো ভণিতা না করেই বললো

– মাইশা যা বলছে তা কি ঠিক মালিশা?

আপু মাথা নিচু করেই উত্তর দিলো

– হুম।

– আলহামদুলিল্লাহ, এটা তো ভালো কথা। আপাকে এক্ষুনি জানানো দরকার।

আপুর এই উত্তরে যেনো আনন্দের সাগর মিশে ছিলো। তাইতো সবাই কত খুশি হয়েছে। যেখানে পরিবারের সবাই খুশি সেখানে আমারও নিশ্চই খুশি হওয়া উচিত। কিন্তু আমি চাইলেও যে খুশি হতে পারছি না। সবাই যখন আনন্দ করতে ব্যাস্ত আমি তখন হুহু করে কেঁদে দিলাম। আমার কান্নায় সবাই অবাক হয়ে গেছে। হয়তো এখানে কাঁদার কি কারণ সেটাই বুঝতে পারছে না তারা। ভাইয়া তারাতাড়ি আমার কাছে এসে বললো

– কি হয়েছে মাইশা? তুই কাঁদছিস কেনো?

কান্নার ফলে কথা বলতে পারছি না আমি। কান্নাগুলো গলায় দলা পেকে যাচ্ছে আমার। ধরা গলায় কোনোমতে বললাম

– কিছু হয়নি।

– কিছু হয়নি মানে? কোনো কারণ কি তুই কাঁদছিস নাকি।

আমি ভাইয়াকে জাপটে ধরলাম। কান্নার গতি আরো বেড়ে আমার। বাবা-মা আর আপুও কান্নার কারণ জানতে চাইছে। কিন্তু আমি কি করে আসল কারণটা বলবো?

– কিছু হয়নি আমার। আসলে আপুর বিয়ে হয়ে গেলে তো আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে তাই কান্না পাচ্ছে।

আমার কথায় মা বললো

– ধুর পাগলী মেয়ে। মালিশা কি একেবারে চলে যাবে নাকি। আপার বাসা তো বেশি দুরে নয়। ওর যখন ইচ্ছা এখানে আসবে আর তোর যখন ইচ্ছা ওখানে চলে যাবি। বুঝলি?

আমি মাথা নাড়লাম শুধু। ভাইয়া বললো

– এই ছোট একটা কারণে কাঁদছিস? আর আমি ভাবলাম কি না কি?

আমি এখনো ভাইয়াকে জরিয়ে ধরেই বসে আছি। ভাবছি আপুর জন্য কাঁদছি ভেবে সবাই কত সহজে কান্না না করার সমাধান দিয়ে দিলো। আমার কাঁদার আসল কারণ জানতে পারলে কি এভাবেই সমাধান করে দিতো সবাই? কে জানে?

🍁

ভারসিটির লাইব্রেরিতে বসে আছি আমি। সারা আজকে কোনো এক বিশেষ কারণে ভারসিটি আসে নি। তাই আমার মনটা লবণ ছাড়া তরকারির মতো হয়ে আছে। ভাবলাম কোনো বই পড়ে মনের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করি। সেই কখন থেকে বইগুলো দেখে চলেছি কিন্তু কোনটা পড়বো বুঝে উঠতে পারছি না।

অবশেষে একটা বই হাতে নিলাম পড়বো বলে। বইটা নিয়ে টেবিলে বসার জন্য জায়গা থেকে সরে আসতেই একটা কাঁচ ভাঙার শব্দ এলো কানে। পিছনে ঘুরে দেখি একটা কাঁচের বোতল ভেঙে পড়ে আছে নিচে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে দেয়ালের সাথে লেগে ভেঙে গেছে বোতলটা। আমি যেই জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম ঠিক সেই জায়গায় পড়ে আছে। তারমানে আমি আরেকটু পরে সেখান থেকে আসলেই আমার মাথায় লাগতো বোতলটা। কিন্তু এই লাইব্রেরিতে কাঁচের বোতল এলো কোথা থেকে? আর সেটা দেয়ালেই বা ছুড়ে মারলো কে?

কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। সবটা কেমন রহস্যময়। সেদিন রাস্তায় ধাক্কা খাওয়া আর আজকে এই কাঁচের বোতল।সবকিছুই কি কাকতালীয়? কিন্তু আমার সাথেই কেনো ঘটছে এমন?

চলবে…….

[ কালকে সবাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম রাহুলকে হিরো বানিয়ে দিলে কেমন হবে? অর্ধেক পাঠক বলেছেন ভালো হবে বাকি অর্ধেক বলেছেন ভালো হবে না। আসলে আমি এটা এমনিতেই জিজ্ঞেস করেছিলাম। গল্পতো আমি নিজের মতো করেই লিখবো।গল্প পড়তে থাকুন আসল হিরো কে জানতে পারবেন। আর চোখের ব্যথার কারণে বেশি বড় করতে পারলাম না। তার জন্য সরি। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here