ভালোবাসি প্রিয় পর্ব-১৪

0
959

#ভালোবাসি_প্রিয়
(রিপোস্ট)
#পর্ব_১৪
©জারিন তামান্না

_হ্যাঁ,উনি আমাকে মৃন্ময়ী বলেই ডাকেন।
সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির সাথে পলকের এমন সাবলিল কথাবার্তায় সিফাত আন্দাজ করে নিল যে ব্যক্তিটি পলকের পরিচিত। তারপরেও শিওর হওয়ার জন্য পাশ ফিরে পলককে জিজ্ঞেস করলো,
_মৃন্ময়ী উনি…? সিফাতকে পুরো কথাটা আর বলতে হলো না। পলক বুঝে নিল সিফাত আদতে কি জানতে চাইছে। তাই নিজে থেকেই বললো,
_ও তিয়ান। কলেজে আমরা ক্লাসমেট ছিলাম।আবার ফ্রেন্ডও বলতে পারেন। এইচ. এস. সির পরে স্কলারশিপ নিয়ে কানাডা চলে গিয়েছিল ও।আর আজ অনেকগুলো বছর পর এখানে দেখা হলো। বলেই ম্লান হাসলো পলক।
পলকের কথা শেষ হতেই সিফাত বললো,
_অহ,,তবে বেশ পুরোনো বন্ধু আপনারা।- কথাটা বলেই সে তার ভুবন ভুলানো হাসি হেসে তিয়ানের দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল।
_Hi. I’m…
_Shafwan Shifat. Polok’s fiance.I saw in fb -বলেই হাসিমুখে হ্যান্ডশেক করার জন্য বাড়ানো সিফাতের হাতটা টেনে তাকে হাগ করলো।হালকা পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললো,_Congratulations, man.
প্রথম পরিচয়েই তিয়ানের এমন সাবলিল আর বন্ধুসুলভ আচরণ বেশ অবাক করলো সিফাতকে। তবে একইসাথে সেটা ভালোও লাগলো খুব। মুখের হাসিটা চওড়া করে সেও বললো,
_Thanks man.
_You most welcome. তিয়ান বললো।বলেই সিফাতকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো দুজন।
পলক চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সিফাতের পাশে। বাইরে থেকে সে একদম নির্বিকার। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকই অস্থিরতা কাজ করছে তার। আর ঠিক সেই মূহুর্তে সিফাতের একটা কথা ক্ষণিকের জন্য তার অস্থিরতার গতিকে ঠান্ডা বরফের মতো স্থির করে দিল।

তিয়ান আর সিফাতের পরিচয়ের পর নিজেদের নিয়েই টুকটাক কথা বলছিল তারা। এরমাঝেই কথায় কথায় সিফাত বললো,
_মৃন্ময়ীর ফ্রেন্ড যেহেতু আপনি তাহলে এখনই বিয়ের অগ্রীম দাওয়াত রইলো।প্রতিটা ফাংশনেই কিন্তু থাকা চাই আপনার। কার্ড হাতে পেলে কার্ড পাঠিয়েও ইনভাইট করবো, তবে বন্ধু হিসেবে আগেই বলে দিচ্ছি।আপনি অবশ্যই আসবেন আমার আর মৃন্ময়ীর বিয়েতে। বলেই, পলকের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো সে।সেই মূহুর্তে সিফাতের সাথে হঠাৎ চোখাচোখি হয়ে যাওয়ায় ফ্যাকাশে মুখে ম্লান হাসলো পলক। পলকের ফ্যাকাশে মুখটা সিফাতের নজর এড়ালো না। কিন্তু, এটাকে সে খুব গভীরভাবেও নিল না। ক্লান্তিভাব বলে ধরে নিল। কিন্তু তিয়ান ঠিকই বুঝতে পারলো পলকের এই ফ্যাকাশে মুখের কারণটা ঠিক কি! ফলে, যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে চলে যাওয়ার কথা ভাবলো সে। তাই, সিফাতের সাথে আলাপচারিতা সংক্ষিপ্ত করার জন্য বললো,
_জ্বী,অবশ্যই। যার বিয়ে সে দাওয়াত দিলে নিশ্চয়ই আসবো।
_ধরে নিন যার বিয়ে সেই দাওয়াত দিচ্ছে আপনাকে। মৃন্ময়ী আর আমাকে এখন আলাদা ভাবার কিছু নেই।কি তাই তো মৃন্ময়ী?
সিফাতের এহেন প্রশ্নে চমকে উঠলো পলক। সহসা কি বলবে ভেবে পেল না। শুধু সিফাতের মুখ পানে চেয়ে মৃদু হাসলো খানিক। মুখে কিছুই বললো না। পলকের এই হাসিকেই সিফাত তার প্রশ্নের হ্যাঁ বোধক জবাব ধরে নিল।সেও হাসলো খানিক। তারপরেই আবার তিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
_নিন, হয়েই তো গেল তাহলে এবার। আপনি অবশ্যই অবশ্যই আসছেন আমাদের বিয়েতে। বিয়েটা আমার ফার্ম হাউজে হবে। আর আমি চাইবো বিয়ের ওই ক’টা দিন আপনি আমাদের সাথেই আমাদের ফার্ম হাউজে থাকবেন।
সিফাতের কথা পলকের অস্থিরতা, অস্বস্তিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে শুধু। একটা অনিচ্ছাকৃত চাপা রাগও হচ্ছে তার সিফাতের এহেন কাজের প্রতি। মনে মনে বলছে,,
_ কেন উনি বারেবারে বিয়েতে আসতে বলছেন তিয়ানকে! তাও আবার প্রতিটা ফাংশনে থাকার জন্য তারই ফার্ম হাউজে ইনভাইট করছেন।বড়লোক মানুষের কি আর খেয়ে দেয়া কাজ নেই যে যাকে ইচ্ছা তাকেই এভাবে দাওয়াত করে নিতে হবে? আবার, পরমূহুর্তেই ভাবলো..আচ্ছা!সিফাত যদি জানতো যে তিয়ান তার কেমন অতীত তবে কি সত্যিই এভাবে হেসে হেসে কথা বলতো তার সাথে? এভাবেই যেচে পড়ে দাওয়াত করতো তাদের বিয়েতে? -এটা ভাবতেই একরাশ চাপা কষ্ট নাড়া দিয়ে উঠলো পলকের ভেতরটায়। ভাবনার ঘোর কাটলো তিয়ানের কথায়।
_ইনভাইট যখন করছেন তখন অবশ্যই চেষ্টা করবো সেটা রাখার। আফটারঅল, পুরোনো বন্ধুর বিয়ে! বলেই আড়চোখে একবার দেখলো পলককে। তিয়ানের এমন কথা আর চাহনী অস্বস্তিতে ফেলে দিল পলককে।চকিতেই চোখ নামিয়ে নিল সে।
_আচ্ছা,বেশ। তবে তাই কথা রইলো। আপনি আসছেন আমাদের বিয়েতে।
_yeah..sure.বলেই ম্লান হাসলো তিয়ান। তারপরেই আবার বললো,
_Anyway, I ‘ve to leave now. অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে। See u again.
_ok, fine. সিফাত বললো।
_ok..then. stay well. bye.
_bye.বলেই আরও একবার হালকা করে হাগ করলো সিফাত তিয়ানকে। ছেলেটাকে বেশ ভালো লেগেছে তার। সিফাতের থেকে বিদায় নিয়ে যেই না গাড়ির দিকে এগোতে যাবে ওমনি সিফাতের ডাকে থেমে গেল তিয়ান। পেছন ফিরে চাইতেই সিফাত বললো,
_তোমার এড্রেসটা?
মুচকি হেসে ওয়ালেট থেকে একটা পার্সোনাল কার্ড বের করে এগিয়ে দিল সিফাতের দিকে। সিফাতও ততোক্ষণে নিজের একটা কার্ড বের করে তিয়ান কে দিল।
_& here is mine.
তিয়ান কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখলো একবার। সিফাতের বিজনেস কার্ড। অফিসের এড্রেস দেওয়া। তখনই তিয়ানের খেয়াল হলো,প্রোফাইলে দেখেছিল সিফাত পাইলট। তাহলে এটা?ভাবনাটা কড়া নাড়তে চকিতেই প্রশ্ন করলো সে,
_You are a pilot, right?
_yeah.
_then এটা?
_এটাও আমার। ফ্যামিলি বিজনেস আছে আমাদের কিছু। নিজের ইচ্ছের কারণে পাইলট হয়েছি। বাট পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় বিজনেসটাও দেখতে হচ্ছে।
_অহ..আচ্ছা। বেশ ভালো। আচ্ছা,আসছি তবে আজ। ভালো থাকবেন।
_yeah…u too.
তারপরেই আবার পলকের দিকে তাকিয়ে তিয়ান বললো,
_Congregations again, Polok. bye.
তিয়ানের কথায় পলক কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। বরং আগের মতই নির্বিকারভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। পলকের এমন ভাব দেখে তিয়ান আর কথা বাড়ালো না। পেছন ফিরে নিজের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।

তিয়ানের গাড়িটা ওখান থেকে যেতেই সিফাত পলকের দিকে ঘুরে তাকালো।মুখখানা কেমন শুকিয়ে আছে পলকের। তাই প্রশ্ন করলো,
_খুব বেশি টায়ার্ড লাগছে কি, মৃন্ময়ী?
তিয়ায়েন যাওয়ার পথেই তাকিয়ে ছিল পলক। সিফাতের কথায় ধ্যান ভাংলো তার। তড়িঘড়ি করে জবাব দিল,
_না..না। ঠিক আছি আমি।
_আচ্ছা। তাহলে চলুন ভেতরে যাওয়া যাক। ওরা সবাই অপেক্ষা করছে। লাঞ্চ সেরে শপিং শেষ করতে হবে তো।
_জ্বী,চলুন।
পলকের সম্মতি পেয়ে তারা দুজনেই একসাথে শপিং মলের ভিতরে প্রবেশ করলো।

_________________________________

রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে ঢুকতেই ইয়ানা ছুটে এসে সেদিনের মতই জাপটে ধরো পলককে। তারপর,তার মিষ্টি মুখখানি উঁচু করে পলকের দিকে তাকিয়ে বললো,
_আসসালামু আলাইকুম,মামণি। কেমন আছো তুমি? জানো আমি তোমাকে অনেকগুলা মিস করেছি। বলেই পলকের পেটে মাথা ঠেকিয়ে কোমড় জাপটে দাঁড়িয়ে রইলো সে।
এদিকে এই ছোট্ট বাচ্চাটার মুখে সালাম আর এমন মায়াভরা শুনে পলক অভিভূত। এই তো মাত্র কয়েকদিনের পরিচিত সে মেয়েটির। তারপরেও মেয়েটা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে তার মায়ায়। কি মিষ্টি করে বললছে,”আমি তোমাকে এত্তগুলা মিস করেছি”! এখন আবার মুখ গোমরা করে আহ্লাদী হচ্ছে। ইয়ানার কান্ড দেখে হেসে দিল পলক। তারপর ওর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল। ফ্লোরে হাঁটু গেঁড়ে বসে দু হাতের আঁজলায় ইয়ানার আদুরে ছোট্ট মুখখানি নিয়ে কপালে চুমু খেলো একটা। তারপর বললো,
_ওয়ালাইকুম আসসালাম, সোনা আম্মু। আমি আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
_আমিও ভালো আছি। গোমড়া মুখে বললো পলক।
_আচ্ছাহ! তাহলে আমার সোনা আম্মুর মুখটা এমন গোমড়া কেন? করুন মুখে বললো পলক।
_তুমি তো আমাকে একটুও মিস করো না। ভালোই বাসো না আমাকে।
_অহ…তাহলে আর কি! আমি যে ইনু সোনার প্রিয় চকলেট গুলো আনলাম, শুধুমাত্র আমার সোনা আম্মুটা এটা পছন্দ করে বলে।তাহলে এগুলো এখন আমি কাকে দেই?! ইনু আম্মু কে তো আমি ভালোই বাসি না। তাহলে এই ভালোবাসাগুলো এখন কাকে দিবো আমি?-ইয়ানার প্রিয় চকলেটগুলো হাতে নিয়ে বললো পলক। পলকের এহেন কথায় ইয়ানা একবার আড়চোখে দেখলো তাকে।তারপর চকলেটগুলো দেখেই খুশিতে ঝাপিয়ে পড়ে জাপটে ধরলো পলকে। বললো,
_Thank u maamoni. I love u so much.-বলেই পলকের গালে চুমু খেলো সে। পলকও টুক করে ইয়ানার গালে একটু চুমু খেয়ে নিল। আর এদের এই আদর আহ্লাদ দেখে রেস্টুরেন্টের সবাই বেশ মুগ্ধ। সব থেকে বেশি খুশি রুকু। তার বড্ড চিন্তা ছিল ভাইয়ের বউকে নিয়ে।সিফাতের সাথে ইয়ানার সম্পর্ক কতটা গভীর সেটা তাদের পরিবার, আত্মীয়দের সব্বাই বেশ ভালো করেই জানে। সেখানে সিফাতের বউ যদি ইয়ানাকে সিফাতের মত ভালোবাসতে না পারে! মেনে না নেয় নিজের মেয়ের মত! কিন্তু পলককে দেখে ওর সত্যিই বড্ড স্বস্তি লাগে। সিফাত নিজের জন্য সঠিক মানুষকেই বেছে নিয়েছে। মেয়েটার মনটা সত্যিই মাটির মত। এসব ভাবতে ভাবতেই সে এগিয়ে গেল পলকের দিকে। কাছে যেতেই ইয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
_আম্মা, তোমার মামণিকে ছাড়ো এখন। সে তো মাত্রই এসেছে স্কুল থেকে। টায়ার্ড এখন। আগে লাঞ্চ করে নিক তারপর তুমি তোমার মামণির কাছে যেও, কেমন?
_আচ্ছা আম্মু।ইয়ানা বললো। তারপরই পলকে উদ্দেশ্য করে রুকু বললো,
_আসসালামু আলাইকুম পলক। কেমন আছো তুমি?
রুকুর সালাম দেওয়া দেখে বেশ লজ্জা পেল পলক। সালামটা তারই আগে দেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু, ইয়ানার সাথে কথা বলতে বলতে সেই সুযোগটাই হলো না তার। তবুও,মুচকি হেসে জবাব দিল।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম আপু। আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
_আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি আমিও। এসো।
বলেই হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে গেল তাদের বুক করা টেবিলে। সেখানে রিহান আর মিসেস. রেহনুমাও ছিল। তাদের দেখেও পলক সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো। তারপর রেহনুমা বললো,
_সিফাত!বাবা, তুই আর পলক লাঞ্চ করে নে। আমারা খেয়ে নিয়েছি। তোরা খেয়ে দেয়ে আয়, ততোক্ষণ আমরা নিজেদের কিছু টুকিটাকি শপিং আছে..সেগুলো করে নেই। তোদের হলে কল দিস।
_আচ্ছা,ঠিক আছে। – সিফাত বললো।
তারপরেই, সিফাত আর পলককে রেখে বাকিরা বেরিয়ে গেল শপিং এর জন্য। তারা যেতেই সিফাত বললো,
_আপনি ঠিক আছেন তো মৃন্ময়ী?
_জ্বী..?হ্যাঁ..ঠিক আছি আমি।ক্যা..ক্যা.. কেন?
_না..মানে,বেশ টায়ার্ড লাগছে আপনাকে। মুখটা শুকিয়ে আছে।
_অহ..! না,I’m fine.
_ ok..But I think আপনি চোখে মুখে পানি দিলে,I mean খানিকটা ফ্রেস হয়ে নিলে ভালো লাগতো আপনার।
_হু। বলেই চুপ হয়ে গেল পলক।
সিফাতের ঠিক ভালো লাগছেনা পলকের হাবভাব।মনে হচ্ছে সে কিছু নিয়ে চিন্তিত। তারপরেও,নিজেকে স্বাভাবিক রেখে পলকে ওয়াসরুমের দিকটা দেখিয়ে দিল।আর পলকও আর বেশি কিছু না বলে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
________________________________

ওয়াসরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে পলক। কান্না করার ফলে চোখ খানিকটা লাল হয়ে আছে। নিজেকে যখনই আয়নায় দেখছে শপিংমলের বাইরে ঘটা ঘটনাটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। দমবন্ধ লাগছে তার। বারেবার শুধু এটাই মনে হচ্ছে যে,কেন এতগুলো বছর পর তার অতীত তার সামনে এলো? ভুলেই তো গেছিল প্রায়। কিন্তু, আবার! আবার সেই মুখ, সেই মানুষটার মুখোমুখি হতে হলো তাকে।অথচ সামনেই তার বিয়ে! বিয়ের কথাটা মনে হতেই একবার সিফাতের কথা মনে হলো তার। সিফাতকে কি বলে দেবে সবটা? বলা তো উচিৎ তার। যার সাথে সারাজীবন থাকবে তাকে তো সব বলে কয়ে নেওয়া উচিৎ। আর যাই হোক,এই বিষয়টাকে তো জানানো উচিৎ। নয় তো ঠকানো হবে সিফাতকে। আর এটা সে কি করে করবে! মনে মনে এসব ভাবছে পলক..ঠিক তখনই মস্তিকের ভেতর থেকে কে যেন বললো,

_এত ভাবার কি আছে পলক! তোমার এই অতীত তুমি আর তিয়ান ছাড়া কেউ তো জানে না।আর তিয়ান নিজেই তো তোমায় অস্বীকার করেছিল। একলা ছেড়ে দিয়েছিল। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তোমার থেকে যখন তোমার তাকেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। কই তখন তো একবারও সে তোমাকে ধরে রাখতে চায়নি। নিজের ভালোর কথা ভেবে একলা করে দিয়েছিল।এরপর তো যোগাযোগও রাখেনি কোন।মনে রাখেনি তোমাদের অনুভূতিগুলোও।আজও তো দেখলে কতটা স্বাভাবিক সে।তুমি তার বিশেষ কেউ ছিলেই না কখনো।তাছাড়া, ৩ বছর আগেই এই অতীত তুমি নিজের মাঝেই দাফন করে নিয়েছিলে। এতদিনে সেটা সময়ের আস্তরণে চাপা পড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে তোমার ভিতর। কোন অস্তিত্ব নেই এখন আর এটার।তাহলে কেন পুরোনো কবর খুদে নিজের ভবিষৎকে নষ্ট করতে চাইছো?! কোন দরকার নেই এর। চুপ করে থাকো।

কিন্তু পরক্ষণেই মন বললো,

_তুমিই তো বলো পলক,সত্যি লুকিয়ে যাওয়া মিথ্যা বলার থেকেও ভয়ংকর! তাহলে,আজ স্বার্থপর..লোভী হচ্ছো কী কারণে? কেন লুকাবে তোমার এ সত্য ঐ মানুষটার কাছ থেকে? এটা জানা তো তার অধিকার।

মন আর মস্তিষ্কের দোলাচলে যখন পলক ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছিল,ঠিক তখনই জোর আওয়াজে তার ব্যাগে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। বাস্তবে ফিরে এলো সে। তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলো। দেখলো সিফাত কল করেছে।সিফাতের নামটা দেখতেই একরাশ অপরাধবোধ এসে ঘিরে ধরলো তাকে।তবুও নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে নিয়ে রিসিভ করলো কলটা। আর রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উৎকণ্ঠায় ভরা সিফাতের গলা পাওয়া গেল।।
_হ্যালো,,মৃন্ময়ী? কোথায় আপনি? লাস্ট ১৫ যাবৎ ওয়েট করছি আমি আপনার। এবার তো টেনশন হচ্ছে রীতিমত।
_স্যরি।আসলে আমি ফ্রেস হচ্ছিলাম। তাই একটু দেরি হয়ে গেল। আসছি এখনই আমি।
_ওকে,ফাইন।কাম ফাস্ট।
_হুম। বলেই ফোন রেখে দিল পলক। তারপর চোখ মুখে বেশি করে পানির ছিটা দিল সে। এরপর আয়নায় দেখলো নিজেকে।কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে এখন।মুখটা মুছে ফিরে গেল টেবিলে।

পলকে দেখেই বেশ বিচলিত হয়ে গেল সিফাত। চোখমুখ কেমন লাল হয়ে আছে। কেঁদেছে কি মেয়েটা? কিন্তু কেন? এই প্রশ্নটা মাথায় আসতেই চকিতেই সে পলকেও জিজ্ঞেস করলো,
_আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে মৃন্ময়ী?
_ক..অ….কই না তো! বলেই ম্লান হাসলো সে।
_তবে কেঁদেছেন কেন?
সিফাতের এমন সরাসরি প্রশ্নে ঘাবড়ে গেল পলক। সিফাত কি করে জানলো সে যে কেঁদেছে?!এখন কি বলবে সে? কিন্তু কিছু তো বলতে হবে। নইলে আরও সন্দেহ হবে তার। তাই খানিকটা ইতস্তত করে বললো,

_না। .আ..আসলে এমন কিছু না। ওই..একটু মাথা ব্যাথা করছিল। আর মাথা ব্যাথা করলে আমার চোখ লালচে হয়ে আসে একটু।এটা কোন ব্যাপার না! -বলেই ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য মৃদু হাসলো পলক। কিন্তু এতে সিফাতের মনের খটকা দূর হলো না। তিয়ানের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই পলকের চোখ মুখে এহেন মেদু ভাব সে খেয়াল করেছে। প্রথমে এটাকে ক্লান্তিভাব মনে করলেও এখন অন্যকিছু মনে হচ্ছে তার। তবে এই মূহুর্তে পলকে আর বেশি ঘাঁটতে চাইলো না সে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বললো,
_আচ্ছা। আর, স্যরি। আমারই আসলে উচিৎ হয়নি স্কুলের পরে হুট করেই এভাবে আপনাকে এখানে নিয়ে আসাটা। আপা জোর করলো, আর হাতে সময়ও কম, তাই জন্য..

_আরেএএ..না,না। কি বলছেন আপনি এসব। এমন কিছুই না। একদম ঠিক আছি আমি। আপনি ওরিড হবেন না প্লিজ।
-ওকে, ফাইন। এখন তাহলে লাঞ্চ করে নিন।তারপর আপনাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসবো। বাসায় গিয়ে রেস্ট নিলেই দেখবেন ঠিক লাগবে।

_না,,সেটার দরকার নেই। যে কাজের জন্য এসেছি সেটা শেষ করেই বাড়ি ফিরবো। সমস্যা নেই।

আজ পলককে বেশ অন্যরকম লাগছে সিফাতের কাছে। কেমন যেন অস্থির লাগছে তার মেয়েটাকে। কিছু নিয়ে কি টেন্সড মেয়েটা? নাকি সে যা বলছে তাই সত্যি বলে মেনে নেবে সে! মনে মনে এসব ভাবলেও মুখে কিছু বললো না সে। বরং লাঞ্চের পরে গরম কফি অর্ডার করলো পলকের জন্য। এতে যদি মেয়েটা একটু রিলিফ ফিল করে। তবে পলকেরএমন অবস্থা দেখে ভেতরে ভেতরে সত্যিই বেশ উদ্বিগ্ন হলো সে।কিন্তু বাইরে সেটা প্রকাশ করলো না সিফাত। চুপচাপ লাঞ্চ শেষ করে তারা বেরিয়ে গেল শপিং এর জন্য।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here