ভালোবাসি_বলেই_তো পর্ব – ৩৪

0
805

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৪

প্রেনা আর আয়মানের বিয়েটা জলদি জলদি হলেও কিছু শর্তাবলী আলোচনা হয়েছিল বিয়ের পূর্বে ।

আয়মানের বাবা আরিফুল হক বলেছেন ,

– আমরা ছেলে এবং মেয়ের পড়াশোনার কোনো ক্ষতি করতে চাই না । আমরা চাই ওরা দুজন‌ই নিজ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হোক । আমার ছেলে প্রতিষ্ঠিত হলেই আমরা মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবো । আর মেয়ের পড়াশোনার দায় দায়িত্ব আমাদের । সে বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না । আপাতত দুজনকে পবিত্র করতেই কিন্তু আমাদের এই ডিসিশন নিতে হয়েছে । আর বিয়ে টা তো খেলা না যে আজ বিয়ে করেছে কাল আবার ছেড়ে দিবে । বিষয়টা কিন্তু মোটেও এমন না । তাই আমরা ওদের আলাদা না করে বিষয়টা সারাজীবনের কথা ভেবে এগিয়ে নিয়ে গেলেই ভালো হয় ।

প্রেনার মা সব কথায় সহমত হয়ে বিয়েতে মত দেওয়াতেই ওদের বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেল । এছাড়া হয়তো আর কোনো উপায় ছিল না ।

বিয়েটা সংক্ষিপ্ত ভাবে হলেও আবরন সবাইকে নিয়ে ছোট খাটো কিছু প্ল‍্যান করেছে । বন্ধুর বিয়ে বলে কথা !

আবরন , পূর্ণতা , ফাহিম , তাসিন , নাদিরা সব জড়ো হয়ে প্রেনার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আয়মান এলেই তো আর ওকে সুরসুর করে বৌ এর কাছে চলে যেতে দেয়া যায়না ।

গেষ্ট রুমে বড়রা সবাই এক সাথে খোশগল্প করছে । আর এদিকে ওরা সবাই মিলে আয়মান আর প্রেনার সাথে মজা নিচ্ছে ।

প্রেনা আর আয়মানের জন্য প্রেনার রুমটাতেই বাসর ঘর সাজানো হয়েছে ।

আর প্রেনাদের বাসার ছাদেও কিছু মোমবাতি আর ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিচে বিশাল বড় বিছানা করা হয়েছে ।

ছাদেই সবাই মিলে আড্ডা দেবে বলে একটু সাজানো হয়েছে ।

আবরন মেডিক্যাল এর এক ছাত্রের বড় ভাইয়ের সাথে এত রাতে যোগাযোগ করে কিছু ফুল আর মোমের ব্যবস্থা করেছে সাজানোর জন্য । নাহলে এই রাতে এই সামান্য ” বিয়ে বিয়ে ” ফিলিংস আনা সম্ভব ছিল না ।

প্রেনাকে প্রথমে সাজ গোজ করিয়ে রুমে বসিয়ে ওরা বাহিরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিয়ে আয়মানের কাছ থেকে কিছু টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে সোজা ছাদে চলে এসেছে আড্ডা দেবে বলে ।

কিন্তু আড্ডা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রেনা আর আয়মান ও ছাদে এসে হাজির হলো ।

ওরা ছাদে আসতেই সবাই চোখ বড় করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আয়মান আর প্রেনা একে অপরের দিকে তাকিয়ে তারপর বলল ,

– কি হয়েছে ? সবাই এভাবে দেখছো কেন ?

ফাহিম বলল ,

– তোরা বাসর ছেড়ে এখানে কি করোস ?

তাসিন বলল ,

– বাসর তো আগেই শেষ তাই এখন আসছে আমাদের সাথে জয়েন হতে তাই না ?

আয়মান তাসিনের পিঠে চাপড় মেরে ওর পাশে বসে বলল ,

– কেন ? হিংসে হচ্ছে তোর ? আমার মতো বিয়ে করতে চাস ?

সবাই হাসল ।

তাসিন বলল ,

– আল্লাহ ই জানে আমার আর নীরার কি বিয়ে হবে নাকি ?

ফাহিম বলল ,

– আর আমার রুহি ?? ওর তো অলরেডি নাকি ফ্যামিলি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে ! কবে যেন পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে হয় !

নাদিরা বলল ,

– ইশশশ , তোমরা এখনো বাচ্চা । নিজেদের বিয়ের কথা না ভেবে বড় ভাইয়ের বিয়ের কথা ভাবো !

পূর্ণতা দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– সে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না ভাবী ! আমাদের এই বুদ্ধিমান মশাই তোমার আর ভাইয়ার বিয়েটাও পাকা করে ফেলবে !

আবরন বলল ,

– এহহ ! পাইছে আমাকে ঘটক ! আমার কপালে কি ঘটক লিখা যে আমি ঘটকালি করবো খালি ??

ফাহিম বলল ,

-ভাই , তুই ই পারবি সবার বিয়ে টা পাকা করে দিতে !

তাসিন বলল ,

– হ‍্যা , ভাই , তুই ই পারবি ।

আবরন বলল ,

– ওই , থাম তোরা ! নিজেদের বিয়ে নিয়ে পড়ে আছিস ! একবার ভেবেছিস যে আমার মতো হ্যান্ডসাম ড্যাশিং ছেলে এখনো বিয়ে করতে পারছে না কেন ??

সবাই প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিয়ে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– কেন ?

আবরন জবাব দেওয়ার আগেই পূর্ণতা বলে উঠল ,

– কারন , আপনি দেখতে হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং হলেও , আপনি কিন্তু একটা শিম্পাঞ্জি । আই মিন ড্যাশিং হ্যান্ডসাম লুকের শিম্পাঞ্জি !!

পূর্ণতার কথা শুনে সবাই হু হা করে হেসে উঠল ।

প্রেনা হাসতে হাসতে বলল ,

– আবরন ভাইয়া ! এত বড় অপবাদ এখনো ঘাড়ে নিয়ে ঘুরছেন ? এর জবাব দেবেন না ?

আবরন দাঁতে দাঁত চেপে পূর্ণতা কে বলল ,

– আমাকে যদি শিম্পাঞ্জির মতো দেখতে লাগে তাহলে তুমি কি ??

পূর্ণতা বলল ,

– কি আমি বলুন ?

আবরনের আগে জিব্রান বলে উঠল ,

– তুই হলি আস্ত একটা গাঁধী !

জিব্রানের কথা শুনে আবরন হু হা করে হেসে উঠল ।

পূর্ণতা জিব্রানের কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,

– তুমি আমাকে গাঁধী বললে ? ভুলে যেও না ভাইয়া , যে বাবা এসেছে । আম্মু তো তোমাকে বকা দেয় নি , বাবা ঠিক‌ই দিবে ।

পূর্ণতার কথা শুনে জিব্রান ঢোক গিলে বলল ,

– ওলে ওলে ! ছোট বোনটা আমাল !! নাক কলে না ! তোকে চকেট কিনে দেব ।

পূর্ণতা ভাব নিয়ে আবরনের দিকে তাকালো ।

নাদিরা বলল ,

– তারমানে আমাদের জিব্রান সোনা তার বাবা কে একটু হলেও ভয় পায় !

পূর্ণতা বলল ,

– ভীতুর ডিম যে !

সবাই হেসে উঠল ।

তাসিন বলল ,

– থাক , লড়াই ঝগড়া পরে হবে । চলো কিছু মজাদার জিনিস খেলি ।

জিব্রান বলল ,

– চল , pass the pillow খেলি ।

আবরন বলল ,

– ভালো আইডিয়া ,আমরা টোটাল কয়জন আছি ?

আয়মান বলল ,

– ৮ জন ।

পূর্ণতা বলল ,

– তা ঠিক আছে । কিন্তু গান টা অফ অন করবে কে ?

আবরন বলল ,

– আরে ইউটিউব আছে না ! অন্যদের খেলার ভিডিও নিশ্চয়ই পেয়ে যাবো । ওদের খেলায় গান অফ হলে আমাদের খেলাও তখন অফ ধরা হবে ।

প্রেনা বলল ,

– খেলার নিয়মটা সবার ই জানা , তবুও কেউ একবার বলে দাও ।

আবরন বলল ,

– খেলার জন্য প্রথমে বাটা বাটি করে একজনকে নির্বাচন করা হবে এবং তার হাতে কুশন জাতীয় বালিশ দেওয়া হবে । সবাই গোল হয়ে কাছাকাছি বসবো । তারপর গান অন করা হবে এবং গান অনের সাথে সাথেই ডানদিকে একের পর এক পিলো পাস করতে থাকবে । এভাবে পাস করতে করতে হঠাৎ গান অফ হয়ে যাবে এবং পিলো পাস করা ও বন্ধ করতে হবে । লাষ্ট যার হাতে পিলো থাকা অবস্থায় গান অফ হয়েছে সে আউট ।
এভাবে একজন একজন করে আউট হতে থাকবে । লাষ্ট যে অবশিষ্ট থাকবে সে ই উইনার ।

সবাই বলল ,

– ওকে কপি দ্যাট ।

তো প্রথমে হাত বাটা বাটি করে করে তাসিনকে নির্বাচন করা হলো ।

সবাই গোল হয়ে বসে পড়লো ।

আবরন , পূর্ণতা , জিব্রান , নাদিরা , আয়মান , প্রেনা , ফাহিম এবং তাসিন । এভাবে সিরিয়ালি গোল হয়ে বসে তাসিনের হাতে পিলো দেয়া হলো ।

আবরন ইউটিউব খুঁজে পিলো পাসিং খেলার জন্য গান বের করে ফোনটা মাঝে রেখে জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– ভাইয়া , গান শুরু হলেই তো তাসিন আগে পিলো আমাকেই পাস করবে তাই আমি গান অন করে পিলো পাস করতে করতেই শেষ হয়ে যাবো । তুমি তো তুলনামূলক দূরে আছো , তোমার কাছে পিলো পৌঁছাতে কয়েক সেকেন্ড সময় বেশি লাগবে , তাই তুমি একটু গান টা প্লে করে দিও ।

জিব্রান বলল ,

– ওকে ফাইন ।

সবাই রেডি হয়ে বসে ১ , ২ , ৩ গুনতেই জিব্রান গান প্লে করে দিল । ফোনে গান প্লে করতেই মিউজিক শুনেই তাসিন জলদি জলদি আবরনকে পিলো পাস করে দিল । আবরন পিলো পাস করে দিল পূর্ণতার কাছে । পূর্ণতা দিল জিব্রানের কাছে ।

এখন মিউজিক শেষ হয়ে গান বাজছে ,

স্বপ্ন যেন আজ ইচ্ছেমতি
আর ইচ্ছেরা লাজুক লাজুক
নীরবে সুপ্ত কামনা গুলো
লজ্জাতে হলো লাল টুকটুক
সপ্ন যেন আজ ইচ্ছেমতি
আর ইচ্ছেরা লাজুক লাজুক
নীরবে সুপ্ত কামনা গুলো
লজ্জাতে হলো লাল টুকটুক
আকাশে(আকাশে) ঐ মেঘের পরে
খেলে গোপন লুকোচুরি

এইটুক হতেই গান অফ হয়ে গেল ।
পিলো সবার হাতে দুইবার ঘুরে তৃতীয় বারে এসে ফাহিমের কাছে যেতেই গান থেমে গেল ।

“ফাহিম আউট ” বলে সবাই চিল্লিয়ে উঠল ।

ফাহিম বেচারা মন খারাপ করে উঠে পড়লো । তারপর ওর গ্যাপটা ফিলাপ করে সবাই আবার গোল হয়ে বসতেই ফাহিম দাঁড়িয়ে গান প্লে করে দিল ।

ফাহিম আউট হ‌ওয়াতে ফাহিমের পরে তাসিনের কাছ থেকেই আবার খেলা শুরু হবে ।

ফাহিম রেডি ১ , ২, ৩ বলে আবারো গান প্লে করে দিল ।

এ যেন এসেছ ভবে
নিল এ প্রাণটা কাড়ি
ধুমতানা ধুমতানা ধুম তানানানা বাজে
নাচেরে মন নাচে (পেখোম তুলে মন নাচে)
ধুমতানা ধুমতানা ধুম তানানানা বাজে
নাচেরে মন নাচে (নাচে নাচে নাচে)
ছলকে উঠে জল করে টলমল
প্রেম ঝিমঝিম আষাঢ় শ্রাবণে
তেমনিই মন উথালপাথাল জানিনা কি কারনে

এই টুক হতেই আবার গান অফ হয়ে গেল । এবার নাদিরা আউট হয়ে গেল ।

কাদো কাদো ফেস করে নাদিরা উঠে গিয়ে ফাহিমের কাছে দাঁড়ালো এবং বলল ,

– এখন সবাই সাবধান । গান আরো দ্রুত অফ করা হবে ।

সবাই আবার নাদিরার গ্যাপ ফিল আপ করে গোল হয়ে বসল ।

আবারো গান প্লে করা হলো !

ছলকে উঠে নদীরজল করে টলমল
প্রেম ঝিমঝিম আষাঢ় শ্রাবণে
তেমনিই মন উথালপাথাল জানিনা কি কারনে

আকাশে(আকাশে) ঐ মেঘের পরে
খেলে গোপন লুকোচুরি !

এবার পূর্ণতা আউট হয়ে গেল ।

পূর্ণতা আউট হতেই আবরন বলল ,

– তুমি এত ঢিলা কেন ?

পূর্ণতা বলল ,

– এহ নিজে ফ্ল‍্যাশের মতো ফাষ্ট তা স্বীকার করে না ! আমি নাকি স্লো ! হুহ ।

পূর্ণতা গিয়ে নাদিরা আর ফাহিমের সাথে দাঁড়ালো ।

এভাবে একে একে প‍র পর আয়মান , তাসিন এবং প্রেনা আউট হয়ে অবশেষে আবরন আর জিব্রান বাকি ।

নাদিরা বলল ,

– এবার খেলা জমবে ।

জিব্রান বলল ,

– গানটা কি দ্রুত অফ হবে নাকি সময় নিয়ে অফ হবে ?

পূর্ণতা বলল ,

– আগে কেন বলব ! হঠাৎ অফ হবে । তোমরা খেলায় কনসেন্ট্র‌ইট করো তাহলেই হবে ।

আবরন বলল ,

– ভাইয়া আর আমার মাঝে খেলা ! হায়রে !!

জিব্রান বলল ,

– ভয় পাচ্ছিস ?

আবরন বলল ,

– আমি কি তোমার মতো ভীতুর ডিম নাকি ?

সবাই আবরনের কথা শুনে হু হা করে হেসে উঠল ।

জিব্রান বলল ,

– বেটা তুই ও কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছিস !

আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– ওকে , লেটস স্টার্ট !

জিব্রান বলল ,

– খেলা শুরুর আগে আমার একটা শর্ত আছে ?

সবাই ভ্রু কুচকে তাকালো জিব্রানের কথা শুনে ।

নাদিরা বলল ,

– খেলার শেষ পর্যায়ে এসে তুমি এখন কি শর্ত রাখতে চাইছো ?

জিব্রান বলল ,

– তোমরা সবাই তো লুজার ! আমার আর আবরনের মাঝে যে জিতবে তাকে তো অবশ্যই পুরষ্কার দিতে হবে ।

ফাহিম বলল ,

– সমস্যা নাই , সান্ত্বনা পুরষ্কার হিসেবে তোমাকে “বদনা” দেওয়া হবে জিব্রান ভাইয়া ।

ফাহিমের কথা শুনে সবাই এক দফা না হেসে পারলো না ।

আবরন হাসি কোনো মতে থামিয়ে বলল ,

– তোকে দেওয়া হবে সান্ত্বনা পুরষ্কার ‘ ‘ ‘বদনা ‘ । কারন খেলায় তুই এক নাম্বার লুজার ।

জিব্রান বলল ,

– তোর বদনার গুল্লি মারি ! আমার কথা শোন আগে ।

ফাহিম কাদো কাদো ফেস করে বলল ,

– দিবা তো দিবা একটা ‘বদনা’ , তাও যদি গুল্লি মাইরা ফুডা ক‌ইরা দাও , সেটা দিয়ে আমি কেমনে কাজ সাড়মু ভাই ??

আয়মান ওর পিঠে জোরে জোরে বারি মেরে বলল ,

– এই তুই থামবি ?? বদনা , বদনা করে কান পঁচায়া ফেললি । জিব্রান ভাইয়ার কথা শুনতে দে !

জিব্রান বলল ,

– যাই বলিস তোরা , বদনার টপিকস টা সেই ছিল ।

সবাই হাসি থামিয়েও থামাতে পারছে না ।

অবশেষে হাসি থামিয়ে জিব্রান সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– এবার আসল কথায় আসি । কথা টা হচ্ছে , যদি আমি জিতে যাই তাহলে আবরন কে আমার আর নাদিরার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে বাবার সাথে কথা পাকা করে দিতে হবে । আর যদি আবরন জিতে যায় তাহলে ……….

জিব্রান কথা শেষ করার আগেই আবরন বলল ,

– তাহলে আমার বিয়ের ব্যবস্থা তোমাকে করে দিতে হবে ।

জিব্রান বলল ,

– এক্সেক্টলি রাইট !

সবাই বলল ,

– তাহলে এই কথা ই র‌ইল । এখন খেলা স্টার্ট করা যাক !

নাদিরা ১ , ২ ,৩ বলে গান প্লে করে দিতেই দুজন পুরো দমে দুজনের দিকে বালিশ পাস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ।

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– হঠাৎ সবাই বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগলো কেন ? যাই হোক , একজন জিতবে , আরেকজন তো হারবেই । কিন্তু যে কোনো একজনের আবারো বিয়ে ফাইনাল হতে যাচ্ছে ।

ফোনে স্বজোরে গান বাজছে ,

তুমি তো আমার-ই, জানো না হো-ও-ওও
এ হৃদয় তোমার-ই
ও-হো-ওও

তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝি না কোনো কিছু যে আর
পৃথিবী জেনে যাক, তুমি শুধু আমার
তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝি না কোনো কিছু যে আর
পৃথিবী জেনে যাক, তুমি …….

গান অফ হয়ে যেতেই দেখা গেল বালিশ আবরনের হাতে এসে থেমেছে ।

নাদিরা বাদে সবাই একসাথে চিল্লিয়ে উঠলো ,

– ইয়েএএএএএএ , এবারে জিব্রান ভাইয়া আর নাদিরা ভাবীর বিয়ে ফাইনাল হতে যাচ্ছে !!

জিব্রান বলল ,

– এটা আবরনের জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ । কারন বাবা আমাকে এখন ফ্রান্সে নিয়ে যাবে বলে এসেছে । মনে হয় না বাবা আবরনের হাজার জোড়াজুড়িতে ও রাজি হবে ।

কিন্তু মনে হয় , পূর্ণতার বিয়ের কথা পাকা হতে যাচ্ছে ।

পূর্ণতার হাসি বদ্ধ মুখটা জিব্রানের কথা শুনে ফ্যাকাশে হয়ে গেল ।

নাদিরা বলল ,

– ওর বিয়ে কেন পাকা করবে এত দ্রুত ?

জিব্রান বলল ,

– ওর বিয়ে পাকা না করলে আমি চলে গেলে আম্মু আর ওকে কে দেখে রাখবে ?

ফাহিম আস্তে করে আবরনকে বলল ,

– তুই কি পারবি পূর্ণতা কে বিয়ে করতে ?

আবরন বলল ,

– জানি না । এখন এ বিষয়ে কিছু বলিস না । আগে ভাইয়ার কথা শোন ।

– ওকে ।

নাদিরা বলল ,

– কিন্তু ওকে এত জলদি বিয়ে দিলে ওর পড়াশোনার অনেকটা ক্ষতি হয়ে যাবে !

– সব ভেবে রেখেছি । প্রেনা আর আয়মানের যেমন বিয়ে হয়েছে কিন্তু প্রেনাকে এখন আয়মানদের বাড়িতে নেওয়া হবে না পড়াশোনা শেষ না করে ঠিক এক‌ই ভাবে আমরা পূর্ণতার বিয়ে দিব ঠিক‌ই কিন্তু শশুড় বাড়ি এত জলদি পাঠাচ্ছি না ।

– তাহলে কিভাবে কি করতে চাইছো ?

– পূর্ণতা পড়াশোনা শেষ করবে তারপর ওকে তুলে দেয়া হবে । কিন্তু আমি চলে গেলেও যেন সাপোর্ট হিসেবে ওর শ্বশুড় বাড়ির মানুষজন পাশে থাকে তাই আরকি !

নাদিরা বলল ,

– বিয়ের জন্য কি আঙ্কেল পাত্র রেডি করে রেখেছে ??

– তা জানি না । হয়তো রেখেছে । নাহলে হুট করে কি করে বিয়ে পাকা করবে !

আবরন খুশি হয়ে বলল ,

– তারমানে তোমার বিয়েটাও যদি পূর্ণতার বিয়ের সাথে পাকা করতে পারি তাহলে তো একদিনে দু দুটো বিয়ে খেতে পারবো !

সবাই হাসলো । শুধু পূর্ণতা বাদে ।

পূর্ণতা আবরনকে খুশি হতে দেখে মনে মনে ভাবছে ,

– তারমানে কি আমার বিয়ে অন্য কারো সাথে বাবা ঠিক করে রেখেছে ? আর এটা শুনে উনার মনে একটুও খারাপ ফিল হচ্ছে না ? এটা কিভাবে সম্ভব ?

আয়মান বলল ,

– ওকে , কাল এসব বিষয়ে কথা হবে । ৫ টা বাজতে আর মাত্র পনেরো মিনিট বাকি । এখন ঘুম না দিলে কাল আর ভার্সিটিতে যাওয়ার মতো আমাদের কারো অবস্থা থাকবে না !!

জিব্রান বলল ,

– হ্যা , আমাকে আর নাদিরাকে সকাল সকাল অফিসে যেতে হবে ।

তাসিন বলল ,

– কিভাবে ঘুমাবো এখন ?

আবরন বলল ,

– নিচে ঢালা বিছানা করা আছে । কিন্তু আয়মানের বাসর ঘর ক্যান্সেল । প্রেনার রুমে এখন প্রেনা , পূর্ণতা আর নাদিরা ভাবী ঘুমাবে । আর আমরা সব ঢালা বিছানায় ।

আয়মান কাদে কাদো ফেস করে প্রেনার দিকে তাকালো ।

ফাহিম বলল ,

– হ‌ইছে , আর ঢং করিস না । চল । নিচে চল ।

এই বলে আয়মানেকে গলা পেচিয়ে ধরে নিচে নিয়ে গেল ।

সবাই হেসে একে একে নিচে নেমে গেল । বাকি র‌ইল শুধু আবরন আর পূর্ণতা ।

পূর্ণতার মুড অফ । বিষয়টা আবরন বুঝেও না বোঝার ভান করে বলল ,

– এখানেই ঘুমানোর ইচ্ছা আছে নাকি ?

পূর্ণতা বলল ,

– না । চলুন ।

– পায়ে হেঁটে যাবে নাকি কোলে তুলতে হবে ?

পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,

– হয়েছে , ঢং করতে হবে না । আমি একাই যেতে পারবো ।

– ওকে , এজ ইউর উইশ ।

পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে নিচে চলে গেল ।

আবরন‌ও এক গাল হেসে নিচে চলে গেল ।

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ আজকে অনেকটা লেইট হয়ে গেল । দুপুরে খেয়ে একটু ঘুম দিয়েছিলাম , উঠে দেখি ৭ টা বাজে । জলদি উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে লিখতে লিখতে একটু দেড়ি হয়ে গেল । আশা করি , আজকের পর্ব টা পড়ে সবাই একটু হলেও মজা পেয়েছেন যদিও পর্বটা একটু ছোট হয়ে গিয়েছে ।

গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here