ভালোবাসি_বলেই_তো পর্ব – ৩৫

0
796

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৫

প্রেনা আর পূর্ণতা ক্লাস শেষ করে করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে । ঠিক তখন ই প্রেনার কলটা বেজে উঠলো ।

প্রেনা ফোন ধরে দেখল আয়মান কল করছে । প্রেনা ফোন রিসিভ করতেই আয়মান বলল ,

– আমরা সবাই বট তলায় আছি । জলদি চলে এসো ।

– ঠিক আছে আসছি ।

প্রেনা কল কেটে পূর্ণতা কে বলল ,

– বট তলায় যেতে বলছে আয়মান ।

– কেন ?

– সবাই নাকি ঐখানে ।

– ওও ।

পূর্ণতা আর প্রেনা টুকটাক কথা বলতে বলতে বটতলার দিকে ক্যাম্পাসের মাঠ পেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ।

বটতলার সামনে গিয়ে পৌঁছতেই দেখা গেল সেখানে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান মিলে গল্প করছে ।

তাসিন ওদের দেখে প্রেনাকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– আমাদের ভাবি জি এসে গিয়েছে ।

প্রেনা হেসে আয়মানের সাথে বসে বলল ,

– আবরন ভাইয়া কোথায় ? ভাইয়াকে তো কালকে ধন্যবাদ টা ও দিতে পারলাম না !

পূর্ণতা প্রেনার কথা শুনে মনে মনে বলল ,

– তোর আবরন ভাই আছে শুধু কিভাবে অন্যকে বিয়ে করাবে আর সেই বিয়ে উপভোগ করবে সেই ধান্দায় ! এদিকে যে আমার বিয়ের কথা বার্তা চলছে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ ই নেই ।

ভাবনার মাঝেই প্রেনার প্রশ্নের জবাবে ফাহিম বলল ,

– আজকে এত দিন পর মেডিক্যাল এ এসেছে সে । নিজের পার্সোনাল রুম গুছিয়ে তারপর গেল প্রোফেসরদের সাথে দেখা করতে ‌।

তাসিন বলল ,

– একটু পর কল দিলে আমাদের কেও যেতে হবে । আজ বোধয় নতুন কিছু পেসেন্ট এসেছে যাদের চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের ধারনা নেই । সেখানেই নিয়ে যাওয়ার কথা ! তাদের কিভাবে ট্রিট করতে হয় সেটা শেখাবে ‌।

প্রেনা বলল ,
– ওও ।

আয়মান বলল ,

– পূর্ণতা , তোমার কি মন খারাপ ? কথা বলছো না যে ?

পূর্ণতা বলল ,

– না , এমনি ।

ফাহিম বলল ,

– তুমি তো আজ প্রথম ক্লাস করলে তাই না ? তো কেমন লাগলো ?

পূর্ণতা এক গাল হেসে বলল ,

– অনেক ভালো ।

তাসিন বলল ,

– অনেক তো ঘুরলে ফিরলে ! এখন পড়াশোনা শুরু করে দাও । নাহলে পড়ে শেষে কুলাতে পারবে না ।

-হু , প্রেনার দেওয়া লাষ্ট ক্লাসের নোটস গুলোর সমস্যার সমাধান করা হয়নি । আর আজ ও নতুন কিছু সলভ করলাম ।

প্রেনা বলল ,

– আবরন ভাইয়া তো যাবেই তোকে সন্ধ্যায় পড়াতে !

পূর্ণতা বলল ,

– কি জানি ! যাবে কি যাবে না কে জানে ?

আয়মান হেসে বলল ,

– তুমি খাতায় লিখে রাখো যে আবরন তোমাকে পড়াতে যাবে আজকে ।

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– গ্যারান্টি দিচ্ছেন ভাইয়া ?

আয়মান বলল ,

– ধরে নাও তাই ।

ফাহিম বলল ,

– নাম নিতে নিতেই আবরন হাজির ।

পূর্ণতা পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখল ,
আবরন এদিকেই হেঁটে হাসছে । ও সোজা হেঁটে আসছে ঠিকই কিন্তু ওর আশেপাশের মেয়েরা ওকে দেখে আর সোজা হেঁটে যেতে পারছে ।

বিষয়টা দেখে তাসিন বলল ,

– এত দিন পর ড্যাশিং বয় ক্যাম্পাস কাপিয়ে হেঁটে আসছে , তাই সব মেয়েরা শিহরিত !

সবাই হেসে উঠল ।

পূর্ণতা সামনে ঘুরে তাকাল । কিছুক্ষণের মধ্যেই আবরন এসে হাজির হলো ।

– কিরে ! যাবি না তোরা ?

তাসিন বলল ,

– যাবো তো । তুই না বললি কল দিবি ? তাই তোর কলের অপেক্ষায় ই তো ছিলাম ।

আবরন বলল ,

– ও । ঠিক আছে চল এখন ।

আয়মান প্রেনাকে বলল ,

– ওকে , আল্লাহ হাফেজ ।

প্রেনা বলল ,

– আল্লাহ হাফেজ ।

পূর্ণতা কোনো কথা বলল না । সবাই এগিয়ে যেতেই আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– আজকে ক্লাস করে কেমন ফিল হচ্ছে ?

পূর্ণতা জবাব দিল ,

– ভালো ।

আবরন এক গাল হেসে বলল ,

– সন্ধ্যায় পড়াতে যাবো তোমাকে ।

পূর্ণতা মাথা নাড়ল ।

আবরন বলল ,

– আর একটা ক্লাস আছে না তোমার ?

– হু ।

– কয়টায় ?

– ১ টা ২০ এ ।

– শেষ কখন ?

– আমি তো জানি না ।

প্রেনা বলল ,

– ভাইয়া , ৫৫ মিনিটের ক্লাস । ধরে নিন ,২ টা ৫ এ ই শেষ ।

আবরন বলল ,

– ঠিক আছে । আমার সাথে যেও বাসায়।

এই বলে আবরন চলে গেল ।

…………………………………………………

২ টা ৩০ মিনিট ,

পূর্ণতা মেইন গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আবরনের অপেক্ষায় । আবরন তখন বলেছে ওর সাথে বাসায় যেতে । কিন্তু ওর আসার কোনো নাম গন্ধ পাচ্ছে না পূর্ণতা ।

প্রেনা অলরেডি অনেকক্ষন অপেক্ষা করে চলে গিয়েছে বাসায় । কারন , ইশিতা আলম কয়েকবার কল করেছে বাসায় যাওয়ার জন্য ।

প্রেনা পূর্ণতা কে বুঝিয়ে বলেছে যে , ভাইয়া না আসা পর্যন্ত কোথাও যাস না । আর একা একা বের হোস না ক্যাম্পাস থেকে ।

পূর্ণতা প্রেনার কথা মতো এখনো ক্যাম্পাসের গেইটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ।

অনেক বার কলে ট্রাই করেও আবরনকে পাচ্ছে না । আবরনকে কলে না পেয়ে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান কে ও ট্রাই করেছে , কিন্তু সবার ফোনই অফ বলছে ।

রেগে মেগে পূর্ণতা মেইন গেইট থেকে একটু দূরে ভেতরের বেঞ্চিটাতে গিয়ে মুখ ভার করে বসে র‌ইল ।

প্রায় ১৫ মিনিট বেঞ্চে বসে থেকে রাগে এখন জ্বলছে ওর শরীর । মনে মনে আবরনকে ১০০ টা গালি দিল । আর মনে মনে বলল ,

– আপনি না এলে আমি আজ যাবোই না ‌। আমি এখানেই বসে থাকবো । আপনি যেমন আমিও তেমন । হুহ ।

প্রায় ৩ টা ১০ বেজে গিয়েছে । পূর্ণতা এখনো সেখানে বসে আছে । আবরন এখনো আসে নি । এখন পূর্ণতার কান্না পাচ্ছে ।

মন খারাপ করে প্রেনা কে কল দিল । এখন প্রেনার কল টাও বিজি দেখাচ্ছে ।

জিব্রানকে কল দিবে কি দিবে না ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা জিপ স্টাইলের ব্ল‍্যাক কার এসে থামল মেইন গেইটের সামনে ।

পূর্ণতা গাড়ির হর্ন শুনে গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখল । পূর্ণতা ভেবেছিল আবরন হয়তো এসেছে কিন্তু না , এটা তো অন্য একটা গাড়ি । গাড়ির ভেতরে কি তা ও দেখা যাচ্ছে না ।

পূর্ণতা কিছুক্ষণ গাড়ির দিকে তাকিয়ে র‌ইল । প্রায় ৪-৫ মিনিট পর গাড়ির ডোর খুলে ধীর গতিতে কাউকে নামতে দেখা গেল ।

পূর্ণতা দেখল , গাড়ি থেকে একটা মধ্যম বয়সী ছেলে বাহিরে বেরিয়ে এলো । গায়ের রং ধবধবে সাদা । ছেলেটার হাইট অনেক তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে , মিনিমাম ৫ ফুট ৯-১০ ইঞ্চি তো হবেই ।

ছেলেটার পরোনে নেভি ব্লু স্যুট , চোখে নেভি ব্লু সানগ্লাস । চুলগুলো সাইজ ভাবে ডিজাইন করে কাটিং করা ।

পূর্ণতা ছেলেটাকে কিছুক্ষন উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে তারপর চোখ ঘুরিয়ে নিল ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৩ টা ১৮ বাজে । এবার সত্যিই ওর চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল । মনে মনে ভাবল ,

– আবরন , আপনি তো আমার বিষয়ে আগে কখনো এতোটা কেয়ারলেস ছিলেন না ! কিভাবে এতো টা বদলে যাচ্ছেন ? কিভাবে ?

ভাবনার মাঝেই একটা ছেলের কন্ঠ ভেসে আসতে লাগল । পূর্ণতা চোখ মুছে সামনের দিকে তাকাতেই দেখল সেই ছেলেটা ওর থেকে ২ হাত দূরে দাড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে ।
ছেলেটা কথা বলতে বলতে হয়তো সানগ্লাসের ভেতর দিয়ে পূর্ণতার দিকেই বার বার তাকাচ্ছে ।
পূর্ণতা বিষয়টা কিছুটা উপলব্ধি করতে পেরে ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে হাঁটা ধরতেই পেছন থেকে ডাক পড়ল ।

– এক্সকিউজমি !

পূর্ণতা হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেল । ওর বুঝতে বাকি নেই পেছন থেকে সেই অচেনা ছেলেটাই ওকে ডাক দিয়েছে ।

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে , ও কি করবে ? ছেলেটার ডাকে সাড়া দেবে নাকি সোজা মেইন ক্যাম্পাসে চলে যাবে ?

ছেলেটা আবারো ডাকলো ,

– হ্যালো ! আপনাকেই বলছি ! শুনুন !

পূর্ণতা বাধ্য হয়েই পেছনে ঘুরে তাকিয়ে বলল ,

– আমাকে ডাকছেন ?

ছেলেটা ধীর পায়ে এক দুই কদম পূর্ণতার দিকে এগিয়ে এসে বলল ,

– জি , আপনাকে ডাকছি । আপনি কি পূর্ণতা জামান ?

পূর্ণতা কিছুটা অবাক হলো নিজের নাম একটা অচেনা ছেলের মুখে শুনে । পূর্ণতা ভ্রু কূচকে বলল ,

– জি ! আমি পূর্ণতা জামান ।

ছেলেটা হেসে বলল ,

– আমি তো তোমাকে চিনেছি , তুমি কি চিনেছো ?

পূর্ণতার কেমন যেন আন ইজি ফিল হচ্ছে কারন একটা অচেনা ছেলের মুখে প্রথমত নিজের নাম শুনেছে এবং প্রথমবার ছেলেটা আপনি করে বললেও দ্বিতীয় বারে এসে আবার তুমি করে বলছে ! পূর্ণতা ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে বলল ,

– কে আপনি ? ঠিক চিনতে পারছি না ! আপনি কি এই ভার্সিটিতে পড়েন ?

ছেলেটা হেসে বলল ,

– আমার পরিচয় টা পরে দিচ্ছি । তার আগে তুমি বলো , তোমার ক্লাস আমার জানামতে আরো এক দেড় ঘন্টা আগে শেষ হয়েছে । তো তুমি বাসায় না গিয়ে এখানে কি করছো একা একা ?

পূর্ণতা মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল ,

– সরি , একচুয়ালি একজন অচেনা ব্যক্তি হঠাৎ এতো ফ্রি লি আমার সাথে কথা বলছে এবং কেন বলছে তা আমি জানি না , কিন্তু এটা জানি আমি আপনার পরিচয় না জানার আগ পর্যন্ত আপনাকে কোনো জবাব দিতে বাধ্য ন‌ই । সরি ।

এই বলে পূর্ণতা হেঁটে চলেই যাচ্ছিল কিন্তু ছেলেটা আবার বলল ,

– আরে আরে , রাগ করেছো নাকি ! আচ্ছা , আমার পরিচয় দিচ্ছি ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকালো ।

– আমি সায়ন , তোমার ছোট খালামনির বড় ছেলে !

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে এক গাল হেসে বলল ,

– আর ইউ কিডিং মি ?

– নো , আ’ম রিয়েলি সায়ন । বিলিভ মি ।

– প্রমাণ কি ?

– ওয়েট । দিচ্ছি প্রমাণ ।

পূর্ণতা দেখলো ছেলেটা ওর পকেট থেকে ফোনটা বের করছে । ফোনটা বের করে কিছু একটা করে ওর দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,

– নাও , কথা বলো ।

পূর্ণতা বলল ,

– কার সাথে ?

– কার সাথে আবার ? মামনির সাথে !

– কে মামনি ?

– তোমার আম্মু , মিলি রহমান ।

পূর্ণতা ছেলেটার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে অবাক হয়ে বলল,

– হ্যালো !

ওপাশ থেকে মিলি রহমানের গলা ভেসে আসতেই পূর্ণতা ৪৪০ ভোল্টের শক খেয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো ।

– হ্যা , পূর্ণ ! শায়ন আজ‌ই বাংলাদেশ এসেছে । সিলেট না গিয়ে সরাসরি ঢাকা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যেই র‌ওনা হয়ে এসেছে । তুই ওর সাথেই বাসায় চলে আয় । ঠিক আছে , রাখছি । আল্লাহ হাফেজ ।

মিলি রহমান কল কেটে দিতেই পূর্ণতা পলকহীন চোখে হাবার মতো ছেলেটার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিল ।

সায়ন পূর্ণতার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে হেসে বলল ,

– কি , বিশ্বাস হলো ?

পূর্ণতা কি উত্তর দিবে বুঝলো না ।

সায়ন বলল ,

– ওকে , বাসায় যাবে না ?

পূর্ণতা বলল ,

– যাবো ।

– আমিও তোমাদের বাসায় যাচ্ছি । চলো আমার সাথে ।

– কিন্তু ?

– কিন্তু কি ? আরো কেউ যাবে ?

পূর্ণতার এই মূহুর্তে মাথা ঘুরছে । তাই সায়ন কে জবাব দিল ,

– না , চলুন । বাসায় যাই ।

– ওকে ।

সায়নের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা ভাবছে ,

– আবরন থাকলে তো উনার পাশের সিটে বসতাম । এখন কোথায় বসবো ?

ভাবনার মাঝেই সায়ন এসে গাড়ির ডোর খুলে দিয়ে বলল ,

– উঠো ।

পূর্ণতা দেখল সায়ন ড্রাইভিং সিটের অপর পাশের ডোর টাই খুলে দিয়েছে । ১৯/২০ না ভেবে পূর্ণতা গাড়িতে উঠে বসলো । সায়ন ডোর লাগিয়ে দিয়ে ঘুরে এসে পূর্ণতার পাশে ড্রাইভিং সিটে বসে সিট বেল্ট বাঁধতে শুরু করলো ।

সায়ন কে সিট বেল্ট বাঁধতে দেখে পূর্ণতা ও জলদি জলদি নিজের সিট বেল্ট টা বেঁধে নিল ।

সায়ন গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলল ,

– অনেক বড় হয়ে গিয়েছো ! ভেবেছি , তোমাকে এসে বোধয় ছোট ই দেখবো ।

পূর্ণতা বলল ,

– বড় হ‌ওয়াটা কি স্বাভাবিক না ? আর আপনি আমাকে কি করে চিনলেন ?

– নিজের একমাত্র মামনির একমাত্র মেয়েকে চিনবো না ? কি করে ভাবতে পারো ?

– আমি কিন্তু আপনাকে চিনি না ।

– সমস্যা কি ? চিনে নিবে !

– আপনি আমাকে কোথায় দেখেছেন ?

– ছবিতে !

– ও ।

– তোমাকে দেখে বাংলাদেশ না এসে পারলাম না !

– মানে ?

– মানে , হচ্ছে আমার একমাত্র মামনির মেয়ে যে মামনির চেয়েও দ্বিগুণ রূপবতী তা তো জানতাম না , তাই সামনাসামনি দেখতে চলে এলাম ।

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– অস্ট্রেলিয়া তে তো আমার চেয়ে হাজার গুণ রূপবতী মেয়ে আছে । তাহলে সমস্যা কোথায় ?

– সমস্যা হচ্ছে , তারা তো পর । আর তুমি তো আপন ।

– আপনি খুব মজা করেন ।

– উহু , আমি সিরিয়াস ।

– আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না ।

– আস্তে আস্তে বিশ্বাস করতেও শিখে নাও ।

– কেন ?

– পরে কাজে লাগবে ।

…………………………………………………

কথা বলতে বলতে অবশেষে সায়ন আর পূর্ণতা আজিমপুর পৌঁছে গেল ।

পূর্ণতা দের বাসার গেইটে গাড়িটা রেখে দুজন‌ই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো ।

গাড়ি থেকে নামতেই পূর্ণতার ফোনে কল এলো । ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করতেই দেখল আবরন কল করছে ।

পূর্ণতা কলটা রিসিভ করে বলল ,

– বলুন ।

– কোথায় তুমি ?

– বাসায় ।

– চলে গিয়েছো ?

– হু ।

– একা ?

– তা জেনে আপনি কি করবেন ? আমি ভালো ভাবেই চলে এসেছি বাসায় । আপনার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না । আল্লাহ হাফেজ ।

পূর্ণতা রাগ করে কলটা কেটে দিল ।

সায়ন বলল ,

– বয়ফ্রেন্ড তোমার ?

– না ।

– তাহলে ?

– ভার্সিটির ভিপি ।

– ও ।

– হুম । উপরে চলুন ।

– ওকে , চলো ।

…………………………………………………

কলিং বেল বাজাতেই মিলি রহমান জলদি জলদি দরজা খুলে দিল । দরজা খুলতেই বাহিরে সায়ন আর পূর্ণতা কে দেখে খুশি হয়ে গেল ।

শায়ন মিলি রহমান কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– আসসালামুয়ালাইকুম মামনি ।

– ওয়ালাইকুমুসসালাম । কেমন আছিস বাপ ?

– আলহামদুলিল্লাহ । ভেতরে ঢুকতে দেবে না ।

– তা আবার না দেব । আয় আয় ।

পূর্ণতা মনে মনে বলল ,

– উহ , আদিক্ষেতা ! জীবনে দেখলাম না একটা খোঁজ নিয়েছে , আমার আর ভাইয়ার ! এখন এসেছে ঢং দেখাতে !
কথায় কথায় ১০৪ টা মিথ্যা বলে । আর বিদেশি বলেই ফ্লার্টিং করতে করতে এলো প্রথম দিন‌ই । যত্তসব ।

পূর্ণতা সায়নের পাশ কেটে ভেতরে ঢুকে সোজা নিজের রুমে চলে গেল ।

ফ্রেশ হবে বলে দরজা লক করে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল । ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখল ফোনে টুং টাং করে কয়েকটা ম্যাসেজ আসছে । পূর্ণতা নিজের টাওয়াল টা বারান্দায় মেলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল আবরনের ম্যাসেজ । পূর্ণতা নটিফিকেশন এ ক্লিক করে দেখল আবরন লিখেছে ,

– I’m sorry . আজকে অনেক গুলো হসপিটালে যেতে হয়েছে । আর ফোন বন্ধ রাখা বাধ্যতামূলক ছিল । সামনে পরীক্ষা ধেয়ে আসছে । ভালো পয়েন্ট না পেলে তো এম.বি.বি.এস এর জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এ আমার নাম আসবে না । তুমি কি চাও না আমি ডাক্তার হ‌ই ?

– আমি তোমাকে কল দেওয়ার চেষ্টা করেছি , কিন্তু বিলিভ মি , সুযোগ ই পাচ্ছিলাম না ।

– আমি জানি , তুমি অভিমান করেছো । কিন্তু প্লিজ , এখানে আমার কোনো দোষ নেই । আমি সন্ধ্যায় বাসায় আসছি । তোমাকে সব বুঝিয়ে বলবো ।
এখন প্রচুর মাথা ব্যথা করছে । গাড়িতে আছি । বাসায় যাচ্ছি । আল্লাহ হাফেজ ।

পূর্ণতা ম্যাসেজ গুলো পড়ে নিজের অজান্তেই হেসে উঠল । ওর মনটা এখন ফ্রেশ লাগছে । ফোনটা চার্জে লাগিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে গেল পূর্ণতা ।

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ ভেবেছিলাম আজকে একটু জলদি গল্প দিব , তাই নোটস এ গিয়ে বিকেল থেকে একটু একটু করে লিখছিলাম । কিন্তু ভুলবশত নিজের হাতের‌ই চাপ লেগে নোটস থেকে আমার গল্প টা কাট হয়ে যায় । 😭

এত খারাপ লাগছিল যে বলে বোঝাতে পারবো না । ভেবেছিলাম আজ আর গল্প‌ই দিব না । পরে ভাবলাম … না , আমার গল্পের জন্য তো আপনারা অনেক অপেক্ষা করে থাকেন । তাই আবারো লিখে ফেললাম ।

গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here