#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৬
আফতাব উজ্জামান না খেয়ে বসে আছে । তার একটাই বায়না ,
– পূর্ণতা ফ্রেশ হয়ে আসুক , তারপর একসাথে খাবো । এতক্ষন অপেক্ষা করতে পেরেছি আর এইটুকু সময় পারবো না !
মিলি রহমান বললেন ,
– থাকো তুমি মেয়ের জন্য বসে । আমি গেলাম । আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না । মেয়ে এলে দুজনে মিলে খেয়ে নিও ।
– তা নিয়ে চিন্তা করো না । আমরা বাপ-মেয়ে মিলে মিশে খেয়ে নেব ।
এরই মধ্যে পূর্ণতা হাজির হলো ।
– বাবা , তুমি এখনো খাও নি ?
– না রে মা , তোর জন্যই তো অপেক্ষা করছিলাম । আজ কতদিন পর একসাথে খাবো বলে ভেবে রেখেছি ।
– ঠিক আছে , আর কথা বলো না । হাত ধুয়ে বসো ।
আফতাব উজ্জামান চেয়ার ছেড়ে উঠে বেসিনে হাত ধুতে ধুতে বলল ,
– জিব্রান বলল তোর নাকি ২ টা ১০-১৫ তে ক্লাস শেষ । তাহলে তোর এতো দেড়ি হলো কেন ?
পূর্ণতা প্লেটে খাবার সার্ভ করতে করতে বলল ,
– ভাইয়া কি করে জানে আমার ক্লাস কয়টায় শেষ ?
আফতাব উজ্জামান হাত ধুয়ে আবার আগের জায়গায় এসে বসতে বসতে বলল ,
– তা আমি কি করে জানবো ! তুই বল তোর কেন দেড়ি হলো ?
– আসলে আবরন ভাইয়া আমাকে বলেছিল একা না যেতে । উনি ই আমাকে ক্লাস শেষ হলে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে যাবে । কিন্তু !
– কিন্তু কি !
– উনি আজকে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন , তাই আর আসতে পারে নি । আর ব্যস্ততার কারনে ফোনটাও অফ ছিল । তাই আমি বিষয়টা জানতে ও পারছিলাম না আর একা বাসায় চলে আসতেও পারছিলাম না ।
এরই মধ্যে সায়ন এসে একগাল হেসে টেবিলের দিকে এগিয়ে চেয়ারে আফতাব উজ্জামান এর পাশে বসে বলল ,
– আমি না গেলে বোধয় পূর্ণতা আজ সেখানেই বসে থাকতো ।
আফতাব উজ্জামান হাসলেন সায়নের কথা শুনে ।
মিলি রহমান বললেন ,
– সায়ন , আজকে সব তোর পছন্দের রান্না হয়েছে । জলদি খেতে শুরু কর ।
– তুমি একদম চিন্তা করো না মামনি , আমি সব ই খেয়ে নেব ।
পূর্ণতা মনে মনে বলল ,
– ধুর ! বেশি তেল মেরে কথা বলা শুনলেই আমার একদম রাগ লাগে । যত্তসব আজাইরা ঢং ।
ভাবনা বাদ দিয়ে পূর্ণতা খেতে বসে পড়ল ।
সায়ন খেতে খেতে বলল ,
– জানো খালু ! তুমি না বললে আমি আসতাম ই না ।
– তাই নাকি রে ! কত বছর পর এলি বাংলাদেশ ?
– ১৬-১৭ বছর মিনিমাম ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমি পৃথিবীতে এসছি কত বছর ?
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– ২০ বছর ।
পূর্ণতা সায়নকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
-হ্যা , ঠিক এই কারনেই আমি আপনাকে চিনি না ।
সায়ন বলল ,
– বয়সের সাথে আমাকে না চেনার কি সম্পর্ক ?
– আপনি যদি ১৬-১৭ বছর আগে দেশের বাহিরে গিয়ে থাকেন তখন আমার বয়স বেশি হলে ৩-৪ বছর হবে । এত ছোট বয়সে যদি আমি আপনাকে দেখেও থাকি তাহলে তো আমার মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক ।
– তুমি চাইলে আমার সাথে ফোনে এটলিস্ট যোগাযোগ করতে পারতে !
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– এহ , খেয়ে দেয়ে আমার আর কাজ নেই । নিজে তো জীবনে সেধে আমার সাথে যোগাযোগ করতে আসেন নি । আজ হঠাৎ করে দেশে এসে এখন ভাব নিচ্ছেন । হুহ !
পূর্ণতা জলদি জলদি খেয়ে উঠে গেল ।
আফতাব উজ্জামান পূর্ণতা কে উঠতে দেখে বললেন ,
– কিরে ! এত জলদি উঠছিস যে ? আর খাবি না ?
– উহু । পেট ভরে গিয়েছে । আর মাথাটাও ব্যথা করছে । এখন একটা ঘুম দিব । সন্ধ্যায় নাহলে পড়াশোনা করতে পারবো না ।
– ঠিক আছে । যা তাহলে ।
– ওকে ।
পূর্ণতা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে রুমের পর্দা গুলো সব টান করে বিছানায় শুয়ে পড়ল । বিছানায় শুতেই ঘুমে তলিয়ে গেল পূর্ণতা ।
…………………………………………………
আবরন বাসায় এসে একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে গিয়ে ডায়নিং টেবিলে বসে আধিরা আনজুম কে উদ্দেশ্য করে ডাকতে শুরু করলো ,
– আম্মু , আম্মু !! ওও আম্মু !!
আধিরা আনজুম নিজের রুমে বসে বই পড়ছিলেন । ছেলের ডাক শুনে বই টা বিছানায় উল্টে রেখে এক প্রকার ছুটে গিয়ে বললেন ,
– এতক্ষনে এসেছিস ? আমি কতক্ষন যাবত খাবার টেবিলে সাজিয়ে বসে ছিলাম । তোর তো কোনো খবর ই নেই , তাই আবার একটু রুমে গিয়ে বই পড়তে শুরু করলাম ।
– ওও , আচ্ছা । অল্প করে বাড়ো । ক্ষুধা নেই ।
– কেন ? কি খেয়ে এসেছিস ?
– তোমার হবু বৌ মা এর বকা !
আধিরা আনজুম খাবার প্লেটে বাড়তে বাড়তে হেসে বললেন ,
– তা , বকা কেন দিয়েছে শুনি !
– ওকে বলেছিলাম আমার জন্য ওয়েট করতে ওর ক্লাস শেষ হলে , আমি ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো ।
– তারপর !
– ও তো প্রায় ২ ঘন্টার উপরে আমার জন্য ওয়েট করেছে ।
– তুই কোথায় ছিলি মেয়েটাকে একা ফেলে রেখে ?
– আজকে আমাদের বাহিরের কিছু হসপিটাল এ যাওয়ার কথা ছিল না ! সেখানেই ছিলাম । কিন্তু এতো লেইট হবে নিজেও বুঝতে পারি নি । আর ফোন দিয়ে ওকে এই টুকু বলার সুযোগ টা পর্যন্ত পাই নি যে ” আমার লেইট হবে । তুমি বাসায় চলে যাও । ”
– আহারে ! মেয়েটা তোর জন্য কতক্ষন বসে অপেক্ষা করেছে । রাগ অভিমান করাটা স্বাভাবিক ।
– হু ।
– তা শুধু শুধু তো আর বকে নি !
– হুম । এখন মাথা ব্যথা করছে । খাওয়া শেষে আমার সাথে আমার রুমে চলো । মাথা টা টিপে দিবে ।
– তা তো আমাকেই দিতে হবে । তোর মাথা টা তে এত চিন্তা যে কি আর বলবো ! মাথা ব্যথা , মাথা ব্যথা আর মাথা ব্যথা ।
আবরন হেসে খেতে লাগল ।
খাওয়া শেষে আবরন আধিরা আনজুম কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে । আধিরা আনজুম ছেলের চুলগুলোকে টেনে দিচ্ছেন ।
আবরন বলল ,
– আম্মু জানো , পূর্ণতা ও খুব ভালো ভাবে চুল টেনে দিতে জানে ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– তাই নাকি রে ? তা অলরেডি এতো কিছু উপভোগ করে ফেলেছিস ?
– হুম , অনেক কিছু ।
– বিয়ে কবে করছিস ?
আধিরা আনজুমের কথা শুনে আবরন হেসে শোয়া থেকে উঠে বসলো । তারপর বলল ,
– বিয়ে করে নিতে বলছো ?
আধিরা আনজুম ছেলের প্রশ্ন শুনে শুধু হাসলেন । আবরন ও হেসে আবার মায়ের কোলে শুয়ে পড়ল ।
………………………………………………..
পূর্ণতা ঘুম থেকে উঠল মিলি রহমানের দরজা নকের শব্দ শুনে ।
– পূর্ণতা , এই পূর্ণতা !! পূর্ণ !! মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে মা ! উঠ !
পূর্ণতা জেগে মায়ের শব্দের সাড়া দিয়ে বলল ,
– আমি উঠেছি আম্মু ।
– আচ্ছা , ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আয় ।
– ওকে ।
পূর্ণতা বিছানা ছেড়ে উঠে রুমটা একটু গুছিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকল ।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে মুখটা টাওয়াল দিয়ে মুছে তা বারান্দায় মেলতে মেলতে হঠাৎ গাড়ির হর্নের শব্দ পেয়ে নিচে তাকালো ।
অন্ধকারের মধ্যেও গাড়িটা চিনতে পূর্ণতার একটুও কষ্ট হলো না । ও সাফ সাফ দেখতে পাচ্ছে এটা আবরনের গাড়ি ।
মুচকি হেসে পূর্ণতা বারান্দা লাগিয়ে রুমে চলে গেল । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ফেসটা একবার ভালো করে দেখে নিয়ে ওরনাটা ভালো করে শরীরে পেচিয়ে নিয়ে খুশি মনে দরজা খুলে বের হতেই যাচ্ছিল অমনি কারো সাথে স্বজোরে ধাক্কা খেল ।
– আউউউউ !! ( পূর্ণতা ব্যথা পেয়ে পড়ে গিয়ে শব্দ করে উঠল )
হাতের কনুই তে অনেকটা লেগেছে , কারন পড়ে যাওয়ার সময় দরজার কাঠামোর সাথে কনুই তে বারি লেগেছে । ব্যথায় পূর্ণতার চোখ ছলছল করে উঠল।
সায়ন পূর্ণতার রুমেই আসছিল আর পূর্ণতা তখনই দরজা টা খোলাতে এক সাথে বারি খেয়ে গেল । সায়নের অবস্থানের পরিবর্তন না হলেও পূর্ণতা পড়ে গিয়ে ভালোই ব্যথা পেয়েছে ।
পূর্ণতা কে ব্যথা পেতে দেখে সায়ন ওকে ধরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আর তখনই কলিং বেল বেজে উঠল ।
মিলি রহমান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা দরজা খুলে দিতেই আবরন মিলি রহমান কে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল ।
ভেতরে ঢুকতেই আবরন ড্রয়িং রুম ক্রস করে ডায়নিং রুমে পা রাখতেই সেখান থেকে সরাসরি পূর্ণতার রুমের সামনে পূর্ণতা আর অন্য একটা ছেলেকে একসাথে দেখে আবরন কিছুটা চমকে উঠল । কিছুটা দ্রুত পায়ে পূর্ণতার সামনে এগিয়ে যেতেই দেখল ছেলেটা পূর্ণতা কে টেনে তুলছে । আর পূর্ণতা হয়তো কাদছে ।
পূর্ণতা কে কাদতে দেখে আবরন ছেলেটাকে ক্রস করে পূর্ণতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করল ,
– হোয়াট হ্যাপেনড পূর্ণ ? কি হয়েছে ?
পূর্ণতা আবরনের গলা শুনে ওর দিকে ছলছল চোখে তাকাতেই আবরন আরো ব্যস্ত হয়ে পড়ল ।
– কি হয়েছে পূর্ণ ?
পূর্ণতা বলল ,
– তেমন কিছু না । ব্যথা পেয়েছি ।
সায়ন বলল ,
– একচুয়ালি , আই এম সরি পূর্ণতা ! আমি বুঝতে পারি নি যে তুমি তখন রুম থেকে বের হবে ।
আবরন সায়নের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার পূর্ণতার দিকে তাকালো । তারপর বলল ,
– হাত নীল হয়ে গিয়েছে আর তুমি বলছো তেমন কিছু না ?
ঘরের ভেতর শোরগোল শুনে মিলি রহমান আর আফতাব উজ্জামান সেখানে দৌড়ে এলেন ।
– কি হয়েছে ?
পূর্ণতা বলল ,
– কিছু না আম্মু !
আবরন বলল ,
– আন্টি আমার কথা শূনুন । ফ্রিজ থেকে জলদি আইস প্যাক টা আনুন ।
মিলি রহমান জলদি জলদি ফ্রিজ থেকে আইস প্যাক টা বের করে এনে আবরনের হাতে দিল ।
আবরন আইস প্যাক দিয়ে পূর্ণতার আঘাত প্রাপ্ত স্থানে আলতো করে চাপ দিয়ে ধরে ওকে বলল ,
– চলো , রুমে চলো ।
পূর্ণতা এক দু পা করে পেছনে গিয়ে আবার নিজের রুমে ঢুকে পড়ল ।
আবরন ওর হাতে আইস প্যাক চাপ দিয়ে ধরেই ওর সাথে ওর রুমে ঢুকে ওকে খাটে বসতে বলে নিজে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসল ।
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– কিভাবে ব্যথা পেলি মা ?
পূর্ণতা কিছু বলার আগেই সায়ন সব খুলে বলল ।
আফতাব উজ্জামান সব শুনে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এখানে না তোমার দোষ আছে না সায়নের । এটা জাষ্ট একটা এক্সিডেন্ট !
আবরন পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– ব্যথা কমেছে কিছুটা ?
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে “হু” জানালো ।
আবরন বলল ,
– তুমি আইস প্যাক টা ধরো । আমি মেডিসিন দিচ্ছি , খেয়ে নাও ।
পূর্ণতা বলল ,
– মেডিসিনের ব্যাগ টা আমার ওয়ারড্রবের উপর আছে ।
– আচ্ছা , আমি দেখছি । তুমি ধরো এটা ।
পূর্ণতা আইস প্যাক টা আবরনের হাতের উপর দিয়ে আলতো ভাবে ধরতেই আবরন ও আলতো ভাবে আইস প্যাক টা ছেড়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো মেডিসিনের উদ্দেশ্যে ।
পূর্ণতা মিলি রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– ভাইয়া কখন আসবে আম্মু ?
এরই মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল ।
আফতাব উজ্জামান হেসে বলল ,
– ভাইয়ের নাম নিতে না নিতেই ভাই হাজির । আমি যাচ্ছি গেইট খুলতে ।
মিলি রহমান বললেন ,
– থাক তোরা । আমি গেলাম । কিছু লাগলে জানাস ।
– ঠিক আছে ।
মিলি রহমান আর আফতাব উজ্জামান দুজনই একসাথে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
ওনারা বেরিয়ে যেতেই সায়ন পূর্ণতার পাশে বসে বলল ,
– সরি ।
পূর্ণতা এক দফা হেসে বলল ,
– ইটস ওকে ।
আবরন মেডিসিন নিয়ে পূর্ণতার হাতে দিয়ে সায়ন কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– পূর্ণতার দরজা দিয়ে লেগে আপনি কোথায় যাচ্ছিলেন ? আরেকটু দূর দিয়ে গেলে কিন্তু পূর্ণতা ব্যথা পেত না ।
সায়ন শুকনো হাসি দিয়ে বলল ,
– আমি আসলে পূর্ণতার রুমেই আসছিলাম ।
ওদের দুজনের কথা বার্তা শুনে পূর্ণতার কেমন যেন লাগছে । কারন দুজনেই হাসি মাখা চেহারার পেছনে কিছুটা ঝাঝালো মাখা কথা যে বলছে , তা পূর্ণতা ফিল করতে পারছে ।
আবরন আর কিছু না বলে ডায়নিং রুমে গেল পূর্ণতার জন্য পানি আনতে । সেখানে যেতেই জিব্রানের সাথে দেখা ।
– কিরে ! কখন এসেছিস !
– এই তো ভাইয়া ১০ মিনিট হবে ।
– ও ।
– কি হয়েছে রে ?
– পরে বলছি । তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও ।
– ঠিক আছে । পূর্ণতা কে পড়ানো শেষ হলে আমার রুমে আসিস ।
– ভালো কথা বলেছো তো ! আমি তোমাদের চট্টগ্রাম থেকে শপিং করা প্যাকেট গুলো নিয়ে এসেছি । কিন্তু সব গাড়িতে আছে । মনে করো তো ভাইয়া ।
– ঠিক আছে । পরে কথা হচ্ছে ।
জিব্রান নিজের রুমে চলে গেল । আবরন পানি নিয়ে পূর্ণতার রুমে গিয়ে ওর হাত থেকে আইস প্যাক টা নিয়ে ওকে পানির গ্লাস টা দিয়ে বলল ,
– মেডিসিনটা খেয়ে নাও ।
পূর্ণতা আবরনের কথা মতো মেডিসিনটা খেয়ে নিল ।
সায়ন উঠে দাঁড়িয়ে আবরনকে বলল ,
– আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না !
আবরন হেসে বলল ,
– আমি পূর্ণতার টিউটর ।
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে আড় চোখে ওর দিকে তাকালো ।
সায়ন বলল ,
– ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড ! আমি কি একটা কথা বলতে পারি !
– হোয়াই নট ! বলুন ।
– আপনি কি একটু টিউটরের চেয়ে ওর প্রতি বেশি কেয়ার নিচ্ছেন না ?
আবরন কিছু বলার আগেই পূর্ণতা সায়ন কে বলল ,
– আপনি এখন যান । পরে আসবেন । আমাকে পড়তে হবে ।
সায়ন পূর্ণতার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে আবার এক পলক আবরনের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে চলে গেল ।
সায়ন বেরিয়ে যেতেই পূর্ণতা দরজা টা লাগিয়ে আবরনের দিকে ঘুরে তাকিয়ে দেখল আবরন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
পূর্ণতা হাতের গ্লাস টা সাইড টেবিলে রেখে আবরনের হাত থেকে আইস প্যাক টা টান দিতেই আবরন ইচ্ছে করে আইস প্যাক টা শক্ত করে ধরে রাখল ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– কি হলো ! ছাড়ুন !
– কাকে ? তোমাকে ?
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখল আবরন আবেগীয় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
পূর্ণতার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে ।
– পড়াবেন না নাকি !
আবরন আইস প্যাক টা আবারো পূর্ণতার হাতে চাপ দিয়ে ধরে ওর আরেকটু কাছে এসে স্বাভাবিক ভাবে বলল ,
– পড়াবো তো অবশ্যই ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আচ্ছা , আপনি আর কয়জন মেয়েকে বাসায় গিয়ে পড়ান ?
আবরন ভাব নিয়ে বলল ,
– তোমার কি মনে হয় , আমার মতো ড্যাশিং এন্ড হ্যান্ডসাম একটা ছেলে ! সে কি না মেয়েদের বাসায় গিয়ে টিউশনি করাবে ?
পূর্ণতা ও ভাব নিয়ে বলল ,
– করাতে ও পারেন ! শুধু তা ই না , হয়তো ফ্লার্ট ও করেন !
আবরন আইস প্যাক টা টেবিলে রেখে পূর্ণতার দিকে পাঞ্জাবীর হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে আসতে শুরু করলো ।
পূর্ণতা ভয়ে ঢোক গিলে মনে মনে ভাবছে ,
– একটু কি বেশি ই বলে ফেললাম মনে হচ্ছে !!
আবরন পূর্ণতার কাছে আসতেই পূর্ণতা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল ।
আবরন পূর্ণতা কে বলল ,
– কোথায় গেল এখন মুখের বলি ?
– সরি , সরি ।
– কি যেন করি আমি আবার একটু বলো তো !
– কিছুই করেন না । আপনি অনেক ভালো । আপনার মতো ছেলে হয়ই না । আপনি সুদর্শন এবং ড্যাশিং একটা ছেলে । আপনি কারো পেছনে ঘোরেন না কিন্তু সবাই আপনার পেছনে ঘোরে !
পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে এক নাগারে আবরনের সকল পজিটিভ দিক ওর সামনে তুলে ধরছে । আর এদিকে আবরন ওর রিয়েকশন দেখে হেসে হেসে ওর কথা শুনে যাচ্ছে ।
পূর্ণতা বলতে বলতে হয়রান হয়ে বলল ,
– আমি আর বলতে পারছি না ।
আবরন পূর্ণতার কানের কাছে গিয়ে বলল ,
– আর বলতেও হবে না ।
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল আবরন ওর একদম কাছে আর সেটা ও নিজ চোখে দেখছে । আবরন পূর্ণতার নাকের কাছে নাক এনে ঘষা দিয়ে বলল ,
– নাকি নাকি !
পূর্ণতাও হেসে আবরনের নাকে ঘষা দিয়ে বলল ,
– নাকু নাকু ।
আবরন হেসে বলল ,
– তুমিও জানো !
পূর্ণতা হেসে আবরনের গালের সাথে গাল ঘষা দিয়ে বলল ,
– গালু গালু তুল তুল !
আবরন বলল ,
– হয়েছে হয়েছে । তোমার তুল তুলে গাল আমার দাড়ির সাথে ঘষা খেয়ে যাবে একদম ।
পূর্ণতা চোখ মুখ কুচকে হাত দিয়ে নিজের গাল ডলে বলল ,
– এই জন্যই তো বলি গালটা জ্বলে যাচ্ছে কেন ?
আবরন হু হা করে হেসে উঠল ।
পূর্ণতা আবরনকে ধাক্কা দিয়ে বলল ,
– সড়ুন তো । চলেন , পড়াবেন আমাকে ।
আবরন হেসে বলল ,
– ইশশ , ফড়িং টা এসে যেন পাথরটা কে ধাক্কা মেরে দিল ।
পূর্ণতা রাগে জ্বলতে জ্বলতে টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল ।
আবরন ও হাসতে হাসতে অপর চেয়ারটাতে গিয়ে বসল ।
পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে নোটস বের করতে শুরু করলো ।
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ সামনে মনে হয় ঝড় আসতে চলেছে । তেমনি আভাস পাচ্ছি কিছুটা ! আপনারা পাচ্ছেন ? 😁
গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ । ♥️