ভালোবাসি_বলেই_তো পর্ব – ৩৭

0
761

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৭

আবরন পূর্ণতার পড়া কমপ্লিট করে দিয়ে জিব্রানের রুমে চলে গেল । জিব্রান আর সায়ন একসাথে বসে কথা বলছিল । আবরন জিব্রানের রুমে ঢুকে ওর পাশে বসতেই সায়ন সেখান থেকে উঠে চলে আসলো ।

আবরন রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই পূর্ণতা ব‌ই খাতা সব গুছিয়ে আরো কিছু পড়া কমপ্লিট করছিল ।

পূর্ণতা টেবিলে বসে পড়ছিল হঠাৎ ওর রুমের দরজায় টোকা পড়তেই পূর্ণতা নড়েচড়ে বসে বলল ,

– কে ?

বাহির থেকে আবরনের গলা শোনা গেল ।

– আমি ।

– ওও , আচ্ছা । আসুন ।

আবরন রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই পূর্ণতা দেখল ওর হাতে অনেক শপিং ব্যাগ । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে আবরনকে জিজ্ঞেস করল ,

– কি এগুলো ?

আবরন বলল ,

– তোমার পাগলামী করে করা শপিং এর ব্যাগ ।

পূর্ণতা হাসলো ।

ওকে হাসতে দেখে আবরন বলল ,

– এর মধ্যে কিন্তু আমার‌ও ভাগ আছে ।

– আমি জানি ।

– আমার ভাগ আমাকে কখন দেবে ?

– প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় একটু একটু করে দিয়ে যাবো ।

– মনে থাকবে তোমার ?

– থাকবে ।

আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– মনে না থাকলে কিন্তু তোমার বাসায় প্রতিদিন পড়াতে এসে আমার ভাগেরটা আমি ঠিক‌ই বুঝে নিব আর সাথে তখন পানিশমেন্ট হিসেবে আরো কিছু বোনাস দিতে হবে ।

পূর্ণতা হেসে উত্তর দেবে তার আগেই সায়ন হঠাৎ পূর্ণতার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– পূর্ণতা ! তুমি কি ব্যস্ত ?

পূর্ণতা ইচ্ছে করেই বলল ,

– পড়ছি ! দেখতেই তো পাচ্ছেন ।

সায়ন এক গাল হেসে বলল ,

– আমি তো দেখছি তুমি খোশগল্প করছো !

সায়নের কথা শুনে আবরন বলল ,

– পূর্ণতা ! আমার কাজ আছে । সবার বাসায় সবার জিনিস গুলো দিয়ে আসতে হবে । আমি যাচ্ছি ।

পূর্ণতা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– না , একটু পরে যান । আপনি বসুন এখানে ।

এই বলে সায়নকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– আমি ফ্রি আছি ! কি বলবেন বলুন ।

সায়ন বলল ,

– আমি না , বলবে তো খালু !

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– খালু বলবে মানে ?

– তোমার বাবা তোমায় ডেকেছে ।

– ওহ , ঠিক আছে । আপনি যান । আমি যাচ্ছি বাবার কাছে ।

– না , খালু তোমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে ওনার রুমে পৌঁছে দিতে বলেছে ।

পূর্ণতা বির বির করে বলল ,

– যত্তসব ঢং ! আমি জীবনেও বিশ্বাস করি না যে বাবা বলেছে এই কথা ! হুহ ।

আবরন বলল ,

– আঙ্কেল ডেকেছে তো । তুমি যাও । আমাকেও যেতে হবে ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– না , আপনি যাবেন না । আমার আরেকটু প্রবলেম আছে সেটা দেখিয়ে দিয়ে তারপর যাবেন । আপনি বসুন , আমি বাবার সাথে কথা বলে আসছি ।

আবরন উপায় না পেয়ে পূর্ণতার খাটে বসে র‌ইল ।

পূর্ণতা রুম থেকে বেরিয়ে সায়নের সাথে নিজের বাবা মায়ের রুমের দিকে গেল ।

রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা বলল ,

– বাবা , ডেকেছো ?

আফতাব উজ্জামান মিলি রহমানের সাথে কথা বলছিল । পূর্ণতার শব্দ শুনে ওকে বলল,

– হ্যা , ডেকেছি । ভেতরে আয় ।

পূর্ণতা ভেতরে যেতেই আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– বস এখানে । তোর সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য তোকে সায়নকে দিয়ে ডেকে আনলাম ।

সায়ন বলল ,

– খালু , তোমরা কথা বলো । আমি জিব্রান ভাইয়ার রুমে গেলাম ।

– ঠিক আছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলতে ডেকেছো বাবা ?

আফতাব উজ্জামান নড়ে চড়ে বসে মিলি রহমানের দিকে তাকিয়ে তারপর পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বললেন ,

– মা , তুই তো জানিস ই বাবা মা কখনো তার সন্তানের খারাপ চায় না । তারা যা ডিসিশন নেয় তা সব কিছু ভেবে চিন্তেই ।

পূর্ণতা বলল ,
– হু ।

মুখে “হু” বললেও মনে মনে ভাবলো ,

– বাবা হঠাৎ এত কঠিন কঠিন কথা বলছে কেন ?

আফতাব উজ্জামান মিলি রহমানের দিকে আবারো তাকালেন । মিলি রহমান বললেন ,

– আহ , চুপ করে গেলে কেন ? বলো , সব ওকে খুলে ।

আফতাব উজ্জামান মিলি রহমানের কথা শুনে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আবারো বলতে শুরু করলেন ,

– মা , তুই তো অনেক বড় হয়েছিস এখন ! সব ই বুঝিস ! তুই তো জানিস ই যে আমি জিব্রান কে ব্যবসার হাল ধরতে এবার নিজের সাথে করে ফ্রান্স নিয়ে যাবো । তখন তো তুই আর তোর মা একা হয়ে যাবি ।

পূর্ণতার বুঝতে বাকি নেই আফতাব উজ্জামান কি বলতে চাইছেন । তাই আফতাব উজ্জামান কথা বলে শেষ করার আগেই পূর্ণতা বলল ,

– আমাকে আর মাকে সাপোর্ট করার জন্য কেউ নেই এখানে তাই আমাকে বিয়ে করতে হবে যেন আমার হাজবেন্ড আর হাজবেন্ডের ফ্যামিলি আমাদের জন্য সাপোর্ট হিসেবে থাকে ।

এটাই তো তুমি বলতে চাইছো না বাবা ?

আফতাব উজ্জামান পূর্ণতার মুখে অগ্ৰীম কথা গুলো শুনে কিছুটা চমকে উঠলেন ।

মিলি রহমান বললেন ,

– তোর পড়াশোনার কোনো ক্ষতি কিন্তু আমরা চাই না পূর্ণ ! এই ভরসা টুকু আমাদের উপর করতে পারিস । তোকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে দেবে বিয়ের পরেও এমন কারো সাথেই কিন্তু আমরা তোর বিয়ে দেব । এ বিষয়ে তুই একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস ।

পূর্ণতা বলল ,

– তোমাদের মুখে মুখে আমি কখনো তর্ক করি নি আর কখনো করবো না তা তোমরা ভালো করেই জানো । তোমরা যা চাইবে তা ই হবে । কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে ।

আফতাব উজ্জামান ভ্রু কুচকালেন । মিলি রহমান বললেন ,

– কি শর্ত ?

– শর্তের কথা পরে বলবো । আগে তোমরা আমার একটা প্রশ্নের জবাব দাও , আমি যদি আমার নিজের বিয়ের আগে তোমাদের কাছে লাষ্ট কিছু একটা আবদার করি তোমরা কি তা আমাকে দিবে ?

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– তুই একবার চেয়েই দেখ না ! যা চাইবি তা ই দিতে রাজি আছি ।

– ওকে , তাহলে আমার শর্তটা তোমাদের এখন বলি ।

আফতাব উজ্জামান এবং মিলি রহমান দুজন‌ই আগ্ৰহ নিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকালেন পূর্ণতা কি শর্ত বলবে তা শোনার জন্যে ।

পূর্ণতা বলল ,

– বাবা , ভাইয়াকে ফ্রান্স এ তুমি সাথে করে নিয়ে যাওয়ার আগে ভাইয়াকে বিয়ে করাতে হবে এবং তা ভাইয়ার পছন্দের পাত্রীর সাথে । আর ভাইয়ার বিয়েটা আমার বিয়ের সাথে এক‌ই দিনে হবে । তুমি কি রাজি ?

আফতাব উজ্জামান পূর্ণতা কে বললেন ,

– কে রে পাত্রী টা ? কার সাথে আমার ছেলেটার এত ভাব হয়েছে ?

– তোমরা ভালো করেই চিনো । কিন্তু আগে বলো তোমরা রাজি কিনা ! যদি রাজি থাকো তাহলে আমি ও বিয়ের জন্য প্রস্তুত ।

মিলি রহমান বললেন ,

– মেয়েটা কে আগে বলবি তো !

– উহু । আগে আমার কথার জবাব দাও ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– ওকে , কথা দিলাম । জিব্রানকে বিয়ে করিয়েই তারপর ওকে আমি আমার সাথে করে নিয়ে যাবো ।

পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,

– সত্যি বলছো ?

– হ্যা , আমি কখনো আমার কথার খেলাপ করেছি ।

পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,

– ইয়েএএএএএ !

মিলি রহমান বললেন ,

– এখন মেয়েটা কে তা তো বল ?

– নাদিরা আপু ।

– নাদিরা ! ওও ঐ যে জিব্রানের কলিগ ?

– হু ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– ঠিক আছে , এ বাড়ির এক মাত্র ব‌উকে যখন তোরা দুই ভাই বোন মিলে আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছিস তাহলে আমরা আর না বলবো না । তুমি কি বলো মিলি ?

আফতাব উজ্জামান এর কথা শুনে মিলি রহমান হেসে বললেন ,

– হু । আমার ও কোনো আপত্তি নেই ।

পূর্ণতা খুশি হয়ে মনে মনে ভাবলো ,

– যাক , আবরনের কাজটা আমি ই নাহয় করে দিলাম । কিন্তু আমার বিয়েটা কি উনার সাথেই হবে ? মনে তো তাই হচ্ছে , কারন বাবা আর আম্মু দুজন‌ই উনাকে খুব পছন্দ করেন । আর বিশেষ করে আম্মু তো আগে একবার আমাকে বলেছে ও যে আবরনকে ছেলে হিসেবে আমার কেমন লাগে ? একটা ছেলে হিসেবে ও কি পারফেক্ট কিনা ! আমার মতে উনার মতো ছেলে আজ কাল ‌হয় ই না ।

নাহ জলদি শেষ করতে হবে । উনাকে না আমার রুমে বসিয়ে রেখে এসেছি ।

ভাবনা বাদ দিয়ে পূর্ণতা বলল ,

– ঠিক আছে । এখন বলো আমার বিষয়ে কি যেন বলছিলে বাবা !

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– তোর বিয়ের কথা !

– হু , বলো এখন ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– আগে তোর মনের কথা শুনি ! তোর কি কোনো ছেলে পছন্দ করা আছে ?

বাবার প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা মনে মনে বলল ,

– পছন্দ তো আছে একজন কিন্তু আমি জানি না সে আমার ভাগ্যে আছে কি নেই ! তাই বলবো না তোমাদের । যদি ভাগ্যে থেকে থাকেন তাহলে তো তোমাদের মুখ থেকেই উনার নামটা শুনবো ।

পূর্ণতা ভাবনা ছেড়ে বলল ,

– না , আমার কোনো পছন্দ নেই । তোমরা যার সাথে পছন্দ করে আমাকে বিয়ে দেবে আমি তাকেই বিয়ে করবো । কারন আমি জানি , তোমরা কখনো ই আমার খারাপ চাও নি আর কখনো চাইবে ও না ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– তাহলে আমরা যাকে পছন্দ করে রেখেছি তোর জন্য তার সাথেই তুই বিয়েতে মত দিবি ?

– হু বাবা ।

মিলি রহমান বললেন ,

– শোন মা ! তোর খালামনি ফোন দিয়ে বলেছে যে সে চায় তোকে তাদের বাড়ির বড় ব‌উ হিসেবে নিয়ে যেতে ।

মিলি রহমানের কথা শুনে পূর্ণতার মাথায় যেন আকাশ টা ভেঙে পড়ল , আর ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি টাও বোধয় সরে গেল ।

পূর্ণতা বলল ,

– খা..খালামনি বলতে ! কো..কোন খালামনি , আম্মু ?

মিলি রহমান বললেন ,

– তোর কি ১৪ টা খালা । আরে বোকা , তোর ছোট খালামনি ।

– ছোট খালামনি ব..বড় ছেলে ! মানে সা..সায়ন ভ..ভাইয়া ?

মিলি রহমান বললেন ,

– হ্যা রে । আমাদের সায়ন । দেখতে শুনতে কিন্তু ছেলেটা মাশাআল্লাহ ! আর ব্যবহার ও সুন্দর । অস্ট্রেলিয়া তে পড়াশোনা করেছে । সব দিক থেকে ই কিন্তু ছেলেটাকে আমার আর তোর বাবার খুব পছন্দ হয়েছে ।

পূর্ণতা মুখে একটা শুকনো হাসি ফুটিয়ে বলল ,

– বাবা , তোমার ও পছন্দ হয়েছে ?

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– আমার পছন্দ হয়েছে বলেই তো ছেলেটাকে সেই অস্ট্রেলিয়া থেকে তোর কথা বলে এখানে ডেকে এনেছি !

পূর্ণতা বলল ,

– তুমি যে আমাকে কিছু না জানিয়েই সায়ন ভাইয়াকে ডেকে আনলে , আমি যদি এ বিয়েতে মত না দিতাম তাহলে কি করতে তুমি ?

আফতাব উজ্জামান হেসে পূর্ণতার মাথায় হাত রেখে বলল ,

– তোর উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে তুই কখনো আমাদের কথা অমান্য করবি না । দেখলি তো তাই হলো !

পূর্ণতা শুকনো হাসি দিয়ে আফতাব উজ্জামান এর বুকে মাথা রেখে বলল ,

– বাবা , তোমার বিশ্বাস আমি কখনো ভাঙবো না , তুমি দেখে নিও । কখনো ভাঙবো না । তুমি আমাকে খুব ভরসা করো তাই না বাবা ?

আফতাব উজ্জামান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন ,

– শুধু আমি না রে মা , তোর মা ও তোকে খুব ভরসা করে ।

পূর্ণতা বলল ,

– হু ।

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– তোমাদের ভরসার কাছে আমার এই মনটা আজ ভেঙে গেল । হয়তো ভাগ্য আমার এই কুলে গিয়েই ঠেকেছে ।
যত যা ই বলি , বুকটাতে কেমন যেন একটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে ! একটা আজানা কষ্ট বুকটাকে যেন চিড়ে ফেড়ে দিচ্ছে ।

ভাবনা গুলো ভাঙা মনেই বন্দি ক‍রে নিয়ে মুখে একটা মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে তুলে পূর্ণতা আফতাব উজ্জামান কে বলল ,

– ঠিক আছে , বাবা । তুমি আমার সাথে সাথে ভাইয়ার বিয়ের প্রস্তুতি ও নিয়ে ফেলো । আমি এখন যাচ্ছি । আমার কিছু পড়া কমপ্লিট করতে হবে ।

– ঠিক আছে মা । যা , মন দিয়ে পড়াশোনা কর । এসব নিয়ে আর তোকে মাথা ঘামাতে হবে না । যা হবে সব ঠিক ঠাক হবে । তুই যা ।

পূর্ণতা হাসি মাখা মুখ নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে নিজের রুমের দিকে এগোতে লাগল ।

নিজের রুমের সামনে গিয়ে দেখল ভেতরে আবরন নেই । আবরনকে না দেখতে পেয়ে যেন ওর মনটা ছটফট ছটফট করছে একবার আবরনকে দেখার জন্য , একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য ।

পূর্ণতা জিব্রানের রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখল সেখানে শুধু জিব্রান আর সায়ন বসে আছে । আশে পাশে আবরনের কোনো চিহ্ন নেই ।

পূর্ণতা কে দেখে জিব্রান বলল ,

– কিরে পুচকি ? পড়া শেষ ?

পূর্ণতার কান দিয়ে যেন জিব্রানের কথা ঢোকে নি । পূর্ণতা জবাব না দিয়ে উল্টো জিব্রান কে জিজ্ঞেস করল ,

– ভাইয়া , আবরন ভাইয়াকে কে দেখেছো ?

– আবরন তো আরো ১০-১৫ মিনিট আগে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল । কেন ? কোনো দরকার ?

জিব্রানের কথা শুনে পূর্ণতা কিছুটা রাগি রাগি গলায় বলল ,

– উনাকে তো আমি বললাম একটু অপেক্ষা করতে , আমার কিছু পড়া বাকি আছে । উনি আমাকে না বলে হুট করে কেন চলে গেলেন ?

সায়ন বলল ,

– ওকে তো শুনলাম কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে ! মনে হলো জরুরি কোনো বিষয়ে কথা বলছিল ।

পূর্ণতা বলল ,

– কি বিষয়ে ! আপনি শুনেছেন কি ?

– না , সব শুনি নি তবে শুনেছি যে জল নামের কারো বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল ।

‘জল’ নামটা শুনতেই জিব্রান আর পূর্ণতা যেন ভরকে গেল । জিব্রান সায়নকে বলল ,

– তুই শিওর আবরন জল এর বিষয়ে কিছু বলছিল ?

সায়ন বলল ,

– আমি তো পূর্ণতা কে মামনির রুমে দিয়ে তোমার রুমের দিকেই আসছিলাম । আসার পথে ছেলেটাকে কথা বলতে শুনে বাহিরে দাঁড়িয়ে পড়ি । তখন যা শুনেছি তা ই তো বললাম ।

পূর্ণতার সব কেমন যেন অগাছালো লাগছে । পূর্ণতা কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল কিন্তু জিব্রান বলল ,

– পূর্ণতা ! তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল !

পূর্ণতা বলল ,

– ভাইয়া , পরে বলো । আমার মাথাটা খুব ধরেছে , আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না ।

জিব্রান বলল ,

– বেশি খারাপ লাগছে ?

সায়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে বলল ,

– আমি ধরে দিয়ে আসবো ? নাকি একা যেতে পারবে ?

পূর্ণতা মলিন মুখে জোড়পূর্বক হাসির রেখা টেনে বলল ,

– ধন্যবাদ । আমি নিজেই যেতে পারবো ।

পূর্ণতা কিছুটা দ্রুত পায়েই নিজের রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা টা অফ করে দিল ।

দরজা অফ করতেই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না । বুক ফেটে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছিল ওর , তাই করলো । পাগলের মতো কাদতে কাদতে আবরনের রেখে যাওয়া সেই শপিং ব্যাগ গুলো ছুড়ে ছুড়ে ফ্লোরে ফেলতে লাগল । সব ফেলতে ফেলতেই হঠাৎ স্বজোরে কিছু ভেঙে যাওয়ার শব্দ এলো । ভাঙার শব্দ পেয়ে পূর্ণতা ছোড়া ছুড়ি থামিয়ে কাদতে কাদতে নিচে বসে সেই প্যাকেটটা টেনে কাছে এনে দেখল এটাতে সেই ঝিনুকটা যেটার সাথে মিশে আছে আবরনের সাথে ওর কিছু বিশেষ মূহুর্ত্তের স্মৃতি ।

পূর্ণতা প্যাকেট থেকে ঝিনুকটা হাতে নিয়ে দেখল সেটা আছাড় খাওয়াতে জায়গায় জায়গায় ফাটল ধরেছে ।

পূর্ণতা তা দেখে ঝিনুকটাকে বুকে জড়িয়ে আরো জোরে জোরে কেদে উঠলো ।

…………………………………………………

সকাল ১১ টা ,

পূর্ণতা রেডি হয়ে বের হচ্ছিল ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তখন জিব্রান পূর্ণতা কে বলল ,

– চল , আমি যাবো আজ তোকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসতে !

পূর্ণতা বলল ,

– ঠিক আছে ।

জিব্রান বাইক চালাচ্ছে আর পূর্ণতা পেছনে চুপচাপ বসে আছে ।

জিব্রান হঠাৎ বাইকটা রোডের একপাশে সাইড করে বলল ,

– নাম বাইক থেকে ।

পূর্ণতা কোনো প্রশ্ন না করে নেমে দাঁড়ালো ।

জিব্রান বাইকের চাবি দিয়ে বাইকের ইঞ্জিনটা অফ করে বলল ,

– কাল থেকে তোর মুড ঠিক নেই দেখছি ! কি হয়েছে বল তো ?

পূর্ণতা বলল ,

– কিছুই হয় নি ।

– শোন , খেতে বসে বাবা বলছিল আমার জন্য নাকি মেয়ে দেখতে যাবে । বল তো এখন কি করি !

– চিন্তার কিছুই নেই । বাবা নাদিরা ভাবীকেই তোমার ব‌উ করে আনবে ।

– সেটা কিভাবে ?

– যেভাবে হবার কথা সেভাবেই । এখন কথা না বলে আমাকে মেডিক্যাল এ দিয়ে এসো তো !

– ঠিক আছে । কিন্তু তোর কি হয়েছে ?

– কিছু না বললাম তো !

– ঠিক আছে । চল তাহলে ।

জিব্রান পূর্ণতা কে মেডিক্যাল এর গেইটে নামিয়ে দিয়ে বলল ,

– সাবধানে থাকিস । আমি অফিসে যাচ্ছি । আল্লাহ হাফেজ ।

– আল্লাহ হাফেজ ।

ভার্সিটির মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে পা রাখতেই আবরন আর জলের সাথে দেখা হলো পূর্ণতার । জলকে এখানে দেখে পূর্ণতার উপর যেন আরো একবার আকাশ ভেঙে পড়ল । সব কিছু যেন ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । কোনো কিছুই ও বুঝতে পারছে না ।

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ কাল বলেছিলাম যে আজ থেকে গল্প ৭-৮ টার মধ্যে দিতে চেষ্টা করবো । কিন্তু আমার চেষ্টার উপরে এসে আম্মু ছাই ঢেলে দিল 😒 । বিকেল দিকে জোর করে এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে গিয়ে বাসায় এনেছে ৭ টায় 😐 । থাক , বাকিটা আর বললাম না ।

বাই দ্য ওয়ে , গল্পটা আর বেশি বাকি নেই । so , ধৈর্য্য ধরে সবাইকে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো । গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here