ভালোবাসি_বলেই_তো পর্ব – ৩৮

0
870
  • #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
    লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
    পর্ব – ৩৮

    ভার্সিটির মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে পা রাখতেই আবরন আর জলের সাথে দেখা হলো পূর্ণতার । জলকে এখানে দেখে পূর্ণতার উপর যেন আরো একবার আকাশ ভেঙে পড়ল । সব কিছু যেন ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । কোনো কিছুই ও বুঝতে পারছে না ।

    জল পূর্ণতা কে দেখে দৌড়ে ওর কাছে এসে ওকে বলল ,

    – পূর্ণতা ! কেমন আছো ?

    পূর্ণতা কি বলবে বুঝতে পারছে না ।

    তাই জলের থেকে কিছুটা দূরে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আবরনের দিকে পূর্ণতা তাকাতেই আবরন চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল ,

    – কথা বলো !

    পূর্ণতা জলের দিকে তাকিয়ে বলল ,

    – আলহামদুলিল্লাহ । তুমি কেমন আছো ?

    – এতক্ষন খারাপ ছিলাম , এখন ভালো আছি ।

    পূর্ণতা বলল ,

    – কেন ?

    জল পূর্ণতার হাত ধরে বলল ,

    – আমি জানি তুমি আমার উপর এখনো রেগে আছো , আমি তোমার যে ক্ষতি করেছি তার পরে আমাকে ক্ষমা করা সম্ভব না । কিন্তু নিজেকে এখন পৃথিবীর তুচ্ছ ব্যক্তি মনে হয় নিজের কাছেই ।আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না , অবশ্য আমি যা করেছি তা ক্ষমার যোগ্য ও না । তবুও তোমার সাথে দেখা করে নিজের মনের কথা গুলো তোমাকে জানিয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়াটা অনেক জরুরি মনে হচ্ছিল । তাই তো আবরনের সাথেই আজ মেডিক্যাল এ আসলাম , নাহলে তো আমাকে মেডিক্যাল এ কেউ ঢুকতেই দিত না আর তাহলে এই ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে সবাইকে সাক্ষী রেখে তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়া ও হতো না ।

    পূর্ণতা জলের হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে বলল ,

    – তুমি যা করেছো তা ঠিক নয় কিন্তু ভালোবাসার দিক থেকে ধরতে গেলে হয়তো বা ঠিক । তুমি আবরন ভাইয়াকে ভালোবাসো , তাই হয়তো তোমার মনে আমার প্রতি রাগ ক্রোধ জমেছে । সেই রাগ ক্রোধ থেকেই তুমি এমনটা করেছো । এটা ব্যাপার না । কিন্তু তোমার নিজের রাগ এবং ক্রোধের প্রতি কন্ট্রোল আনাটা জরুরি ।

    আর বাকি র‌ইল ক্ষমা করা কথা !!
    ক্ষমা তো আমি সেদিন‌ই সবাইকে করে দিয়েছি যেদিন সবাই আমাকে আবারো নতুন করে এই ভার্সিটিতে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে এনেছে ।

    জল কান্না করে পূর্ণতা কে বলল ,

    – আমি কি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি ?

    পূর্ণতা মুখে মলিন হাসি দিয়ে নিজেই আগে জলকে জড়িয়ে ধরল । জল‌ও পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে আরো কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,

    – আমি অনেক খারাপ , অনেক খারাপ আমি । আমি তোমার সাথে অনেক বড় অন‍্যায় করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো আমি নিজ থেকে এসব করি নি । আমাকে খারাপ বানানোর পেছনে আমার মা দায়ী । উনার জন্যই আমি এতটা নিচে নেমেছি । উনি কখনো আমার ভালো চায় নি । চেয়েছে শুধু মামার টাকাতে ভাগ বসাতে । তাই তো আবরনের পেছনে আমাকে লাগিয়ে মামার ছেলের ব‌উ হিসেবে সেখানে পাঠাতে চেয়েছে । কিন্তু আবরনের প্রতি আমার ভালোবাসা টা সত্যি ছিল যেটা আবরন কখনো বুঝে নি , আর হয়তো বুঝবেও না । কারন , আবরন তো তোমাকে ভালোবাসে ।

    জলের মুখে এই কথাটা শুনে পূর্ণতা জলকে ছেড়ে দাঁড়ালো ।

    পূর্ণতা জলের দিকে তাকিয়ে ভাবছে ,

    – আজ কিনা শেষ মূহুর্তে এসে আমাকে অন্য আরেকজনের মুখে শুনতে হচ্ছে যে উনি আমাকে ভালোবাসেন ! কেন ? কেন অন্যের মুখে ?? উনি নিজে কেন কখনো বলল না আমাকে এই কথাটা । তাহলে হয়তো আজ আমাকে অন্য একজনের সাথে বিয়ের জন্য মত দিতে হতো না ! ভালো তো আমি ও উনাকে বাসি কিন্তু কখনো বলি নি । আর হয়তো বা বলাও হবে না । আজ খুব কষ্ট হচ্ছে , খুব , খুব , খুব কষ্ট হচ্ছে । মন চাইছে উনাকে একটাবারের জন্যে জড়িয়ে ধরে বলি যে আমি আপনাকে চাই , শুধু আপনাকেই চাই । কেউ পারবে না আমাকে আপনার মতো করে বুঝতে এবং বোঝাতে । কেউ পারবে না আমাকে আপনার মতো করে হাসি খুশি রাখতে । কেউ পারবে না আমাকে আপনার মতো করে রেসপেক্ট করতে । কেউ পারবে না !!

    ভাবতে ভাবতেই পূর্ণতার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝড়তে লাগল ।

    আবরন পূর্ণতা কে কাদতে দেখে এগিয়ে এসে বলল ,

    – তুমি কাদছো কেন ? কি হয়েছে ?

    জল পূর্ণতা কে ধরে বলল ,

    – আমাকে সামনে দেখে কি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে ? তাহলে আমি চলে যাচ্ছি । তবুও তুমি কষ্ট পেয়ো না । প্লিজ ।

    পূর্ণতা চোখের পানি মুছে জবাব দিল ,

    – উহু । আমি তো কাদছি খুশিতে । এটা সুখের কান্না ।

    আবরন পূর্ণতার কাছে এসে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল ,

    – হয়েছে । কান্নাকাটি অফ করো ।

    পূর্ণতা মাথা নাড়িয়ে “হু” বলে আবার বলল ,

    – আপনার একটা কাজ আমি করে দিয়েছি !

    আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,

    – কি কাজ ?

    – ভাইয়া আর নাদিরা ভাবীর বিয়ের ব্যাপারে আমি বাবা আর আম্মুর সাথে কথা বলেছি !

    আবরন চোখ কপালে তুলে বলল ,

    – কিভাবে ?? আঙ্কেল আন্টি কি বলেছেন ?

    – বাবা আর আম্মু রাজি হয়েছে ।

    – সত্যি ?? কিভাবে সম্ভব ?? কি করে বলেছো !

    পূর্ণতা মুখে মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল ,

    – আমি বাবাকে শর্ত দিয়ে রাজি করিয়েছি । বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে । তখন বলেছি যে আমার বিয়ের সাথে যদি ভাইয়ার বিয়েও নাদিরা ভাবীর সাথে হয় , তাহলেই আমি বিয়ে করবো । আর তা নাহলে আমি বিয়ে করবো না ।

    আবরন হেসে বলল ,

    – বাহ , কি করেছো কি তুমি !! আমার তো মন চাইছে খুশিতে এখন তোমাকে নিয়ে গিয়ে তোমার পছন্দের সব খাবার খাওয়াই ।

    পূর্ণতা হেসে মনে মনে বলল ,

    – কিন্তু আমার বিয়েটা যে বাবা সায়ন ভাইয়ার সাথে ঠিক করেছে সেটা কি আপনি জানেন ! সেটা জানলে হয়তো আপনি খুশি হবেন না ।

    আবরন বলল ,

    – ঠিক আছে । তুমি ক্লাসে যাও । আজ ক্লাস শেষে আমরা একসাথে বাসায় ফিরবো ।

    পূর্ণতা শুধু ছোট্ট করে বলল ,

    – আচ্ছা ।

    জল বলল ,

    – ঠিক আছে আমি যাচ্ছি তাহলে ।

    আবরন বলল ,

    – কোথায় যাবে ? ক্লাস করবে না ? কয়দিন বাদে না পরীক্ষা ?

    – আমাকে তো বহির্ভূত করা হয়েছে না ?

    – না । করা হয় নি । সব ঠিক মতোই আছে । তোমার পূর্ণতার কাছে মাফ চাওয়ার কথা ছিল , পূর্ণতা তো মাফ করে দিয়েছে আর পূর্ণতা মাফ করেছে মানে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসের সবাই তোমাকে মাফ করে দিয়েছে এমনকি স্বয়ং আল্লাহ ও তোমাকে মাফ করে দিয়েছে ।

    জল হেসে পূর্ণতা কে বলল ,

    – তুমি খুব ভালো । আমি যে কি বলে তোমাকে ধন্যবাদ দিব !

    পূর্ণতা বলল ,

    – ধন্যবাদ দিতে হবে না , শুধু সবসময় ভালো কাজ করো তাহলেই হবে ।

    -হুম ।

    – আমি তাহলে ক্লাসে যাচ্ছি । আমার ক্লাস শুরু হতে বেশি দেড়ি নেই ।

    আবরন বলল ,

    – জলদি যাও । আর ক্লাস শেষে আমার সাথে দেখা করো ।

    পূর্ণতা মাথা নেড়ে সেখান থেকে চলে গেল ।

    নিজের মনটাকে কোনোভাবেই সামলাতে পারছে না । সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে । অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে ওর । আজকে একটা ক্লাস ছিল পূর্ণতার । কোনো রকম ক্লাসটা করে পূর্ণতা করিডোর দিয়ে একা একা হেঁটে বাহিরে বেরিয়ে আসছে ‌। সাথে আজ প্রেনা নেই কারন প্রেনার অন্য বিষয়ের উপর অন্য রুমে ক্লাস হচ্ছে । এই বিষয়টা পূর্ণতার নেই । আর প্রেনার আজকে দুটো ক্লাস তাই ওর সাথে পূর্ণতা যেতে ও পারবে না ।

    আনমনে হেঁটে করিডোর থেকে বেরিয়ে আসতেই হঠাৎ কেউ ডেকে উঠলো । পূর্ণতা পেছনে তাকিয়ে দেখলো প্রেনা ডাকছে ।

    – কিরে , তোর ক্লাস শেষ ?

    – একটা শেষ ! আরেকটা আছে ।

    – ও । কিছু বলবি ?

    প্রেনা ভালো করে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল ,

    – তুই কান্না করেছিস ?

    পূর্ণতা বলল ,

    – না তো ।

    – দেখ , আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই ! কি হয়েছে বল !

    – কিছুই না ।

    – কিছু তো হয়েছে । চল বটতলায় আমার সাথে বসে সব খুলে বলবি ।

    – কিছু হয় নি , কি বলবো ।

    প্রেনা টানতে টানতে পূর্ণতা কে নিয়ে গিয়ে বটতলায় বসালো আর নিজেও ওর পাশে বসলো ।

    – এখন বল তো সত্যি করে কি হয়েছে ?

    – ভাইয়া আর নাদিরা ভাবীর বিয়ে ।

    – সত্যি বলছিস ? তাহলে তুই খুশি না হয়ে আবালের মতো মন খারাপ করে আছিস কেন ?

    – কারন ভাইয়ার বিয়ে আর আমার বিয়ে এক‌ই দিনে ।

    – আরে বলিস কি রে ! এত ভালো সংবাদ গুলো এতক্ষন পর দিচ্ছিস কেন ? আবরন ভাইয়া কোথায় ?

    – উনাকে দিয়ে কি কাজ ?

    – তোর বিয়ে মানে তো ভাইয়ার ও বিয়ে ।

    – আমার বিয়ের সাথে উনার বিয়ের কি সম্পর্ক ?

    – ভাইয়া না বলেছে তোর আর ভাইয়ার বিয়ে একদিনেই হবে !

    – হু , হয়তো দুষ্টুমি করে বলেছে ।

    – উহু । সত্যি !

    এর‌ই মধ্যে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান এসে হাজির ।

    ফাহিম আর তাসিন মন খারাপ করে আছে । আর আয়মান ওদের দুজনকে নিয়ে কোনো বিষয়ে মজা নিচ্ছে ।

    প্রেনা বলল ,

    – কি হয়েছে দুই ভাইয়ার ?

    আয়মান বলল ,

    – সামনে এক‌ই দিনে তিনটা বিয়ে আর এদিকে আমাদের ফাহিম তাসিনের বিয়ে নিয়ে কেউ ভাবছেই না । তাই দুই বেচারার মন খারাপ !

    ফাহিম বলল ,

    – মজা নিস না আর । আমাদের কষ্ট তো তোরা বুঝবি না কারন তোর তো বিয়ের পর্ব শেষ , আর এদিকে সবার বিয়ে সামনে লাগলেও আমার আর তাসিনের বিয়ে নিয়ে কারো কোনো মাথা ব‍্যথা ই নেই ।

    প্রেনা বলল ,

    – সমস্যা নেই । সবার বিয়ে শেষ হলেই দেখবেন আপনাদের বিয়ের ও কথা চলছে ।

    তাসিন বলল ,

    – পূর্ণতা আর জিব্রান ভাইয়া , এরা কি লাকি ! দুই ভাই বোনের এক ই দিনে বিয়ে ! আর ঐদিকে আমাদের আবরনের ও বিয়ে !

    ওদের মুখে বার বার আবরনের বিয়ে , আবরনের বিয়ে কথাটা শুনে পূর্ণতার কেমন যেন লাগছে । পূর্ণতা জিজ্ঞেস করল ,

    – উনার বিয়েটা কার সাথে হচ্ছে ?

    তাসিন বলল ,

    – সেটা এখনো জানা যায় নি । কিন্তু বিয়ের ডেট আগেই ফাইনাল ।

    পূর্ণতা বাদে সবাই একসাথে হেসে উঠল ।

    পূর্ণতা বলল ,

    – আমি আর আবরন ভাইয়া যে চিটাগাং গিয়ে কাপলের মতো নাটক করেছি সেটা কি আপনারা সবাই জানেন ?

    আয়মান বলল ,

    – সেটা জানা কথাই ! আবরন কখনো কাউকে এত ভালোবাসতেই পারে নি । সব বাহানা আর ঢং ছিল । আমাদের দেখানোর জন্য ।

    সবাই আবারো হেসে উঠলো । সবার সাথে সাথে পূর্ণতা ও মিথ্যা হাসি মুখে এনে জড়ো করল । কিন্তু মনে মনে ভাবলো ,

    – তারমানে আমাদের মাঝে কখনো কোনো ভালোবাসা ই ছিল না । যা ছিল সব নাটক আর বাহানা ।

    এর‌ই মাঝে আবরন এসে হাজির হলো সেখানে ।

    – কিরে ! এত খুশি কেন ?

    সবাই হাসি থামিয়ে আবরনের দিকে তাকালো । ফাহিম বলল ,

    – শালা ! অবশেষে তোর মতো নিরামিষ ও বিয়ে করতে যাচ্ছে আর এদিকে আমি আর তাসিন আমিষ হয়েও খবর নেই !

    আবরন হেসে বলল ,

    – কি করবো ! পূর্ণতা জামানকে বড় গলায় কথা দিয়েছিলাম যে যেদিন ও বিয়ে করবে ঠিক এক‌ই দিনে আমিও বিয়ে করবো ।

    প্রেনা বলল ,

    – বাই দ্য ওয়ে , আবরন ভাইয়া নাহয় পাত্রী এখনো ঠিক করে নি কিন্তু পূর্ণতা ! এই , তোর বিয়ে কার সাথে হচ্ছে রে ! কে আমার দুলা ভাই ?

    পূর্ণতা হেসে বলল ,

    – আমার ছোট খালামনির বড় ছেলে ।

    আবরন বাদে সবাই এক সাথে বলে উঠল ,

    – oyeee hoyeee …. 🥳

    প্রেনা বলল ,

    – নাম কি ভাইয়ার ? আর দেখতে কেমন ?

    পূর্ণতা বলল ,

    – সায়ন । পুরো নাম জানি না । আর দেখতে …………

    পূর্ণতা বলে শেষ করার আগেই আবরন বলল ,

    – নিশ্চয়ই আমার মতো ড্যাশিং আর হ্যান্ডসাম না । তাই না ? কারন দুনিয়াতে আমি ওয়ান পিস ।

    পূর্ণতা রেগে বলল ,

    – জি না , আপনি তো দেখেই এসেছেন । সায়ন সব দিক থেকে আপনার চেয়ে এক লেভেল উপরে আছে ।

    সবাই বলল ,

    – ওয়াও । তাহলে তো আজ‌ই গিয়ে দেখতে হচ্ছে ।

    পূর্ণতা বলল ,

    – চলেন সবাই তাহলে ।

    – ক্লাস শেষে যাবো ।

    পূর্ণতা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

    – ঠিক আছে । আমার ক্লাস শেষ । আমি বাসায় যাচ্ছি ।

    আবরন বলল ,

    – হ্যা , চলো । আমিও যাবো তোমার সাথে ।

    – কি করতে ?

    – কাজ আছে ।

    – ওহ । চলুন তাহলে ।

    আবরন আর পূর্ণতা সবাইকে বিদায় জানিয়ে মেইন গেইটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । আবরন চিলড্ মুডে হেঁটে যাচ্ছে । কিন্তু পূর্ণতা তো ভেতর থেকে না চাইতেও ভেঙে পড়েছে । ওর মন চাইছে এখন একটা লং টাইম শাওয়ার নিতে আর বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে কাদতে ।

    ভাবনার মাঝেই হঠাৎ জল কোথা থেকে এসে যেন ওদের সাথে হাঁটতে শুরু করলো ।

    আবরন বলল ,

    – তুমি অনেক বদলে গিয়েছো জল !

    জল হেসে বলল ,

    – বদলে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক না ?

    – হুম ।

    – আগের জল ভালো ছিল নাকি এখনকার জল তোমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে ?

    আবরন বলল ,

    – আগে ম্যানারলেস ছিলে , এখন ভদ্র হয়েছো ।

    – আমি খুব বাজে ছিলাম । কিন্তু বিশ্বাস করো তখনকার আমি টা হ‌ওয়ার পেছনে আমার আম্মু দায়ী ছিল । আর এখনকার আমি’র পেছনে আম্মুর কোনো হাত নেই । কারন জেলে এই কয়টা দিন একা থেকে বুঝতে পেরেছি আম্মু অনেক বড় সেলফিশ । আমার জানা ছিল না যে মা হয়ে কি করে সে তার মেয়েকে দিয়ে বাজে কাজ করাতে পারে ! সত্যিই , আমাকে আল্লাহ হেদায়েত না করলে হয়তো বা আমি আগের মতোই থেকে যেতাম । এইজন্য আল্লাহ কে কোটি কোটি থ্যাংকস ।

    আবরন বলল ,

    – হু , সবসময় এমন‌ই থেকো ।

    ওদের কথা শুনে পূর্ণতার মনে হচ্ছে ওদের দুজনের মাঝে পূর্ণতা এখন বোঝা ।

    আবরন গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা কে বলল ,

    – ওঠো ।

    পূর্ণতা কে পেছনেই উঠে বসছিল কিন্তু আবরন বলল ,

    – আমার গাড়িতে নতুন বসছো নাকি ? তুমি কি পেছনে বসো নাকি ?

    – জল আপু কোথায় বসবে ?

    জল বলল ,

    – আমি যাবো না । তোমাদের এগিয়ে দিতে এলাম । আমার আরেকটা ক্লাস আছে ।

    পূর্ণতা আবরনের দিকে না তাকিয়েই সামনের ডোর টা খুলে ভেতরে ঢুকে বসে ডোরটা নিজেই টান দিয়ে লাগিয়ে নিজেই সিট বেল্ট বেঁধে নিল । আবরন এসে ড্রায়ভিং সিটে বসে সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো ।
    পূর্ণতা ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে সিটের সাথে হেলান দিয়ে আছে ।

    ৫ মিনিট পর আবরন গাড়ি থামিয়ে বলল ,

    – নামো ।

    পূর্ণতা চোখ খুলে আশেপাশে না তাকিয়ে নেমে দাঁড়াতেই দেখল এটা আজিমপুর না ।
    আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে এসে বলল ,
    – চলো !

    পূর্ণতা বলল ,
    – এটা তো আপনাদের বাসা ! এখানে নিয়ে এসেছেন কেন আমায় ?

    – আজকে আমাদের বাসায় আম্মু তোমাদের হোল ফ্যামিলি কে দাওয়াত দিয়েছে ।

    – আমি তো জানি না । আম্মু তো কিছু বলে নি ।

    – তুমি কি করে জানবে । তখন তো তুমি মেডিক্যাল এ ছিলে । শুধু তুমি না আমিও ছিলাম । আমাকে তো আম্মু ফোনে জানালো ।

    – ওহ ।

    পূর্ণতা মনে মনে ভাবল ,

    – আজকেই এখানে আসতে হলো ! আমার মন চাইছে না উনার সামনে থাকতে আর আল্লাহ আমাকে বার বার উনার সামনে নিয়ে দাঁড় করাচ্ছে । কেন ? আমার কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে । খুব কষ্ট হচ্ছে ! আচ্ছা , সবার সামনে যা দেখিয়েছি তা নাহয় নাটক ছিল , কিন্তু আমরা যখন একান্তে ছিলাম তখন কেন উনি আমার সাথে এক‌ই বিহেইভ করছিলেন ? কেন ?

    আবরন বলল ,

    – তুমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ? নাকি মন চাইছে আমার কোলে উঠে বাসায় গিয়ে নামতে ।

    আবরনের কথায় পূর্ণতার ভাবনার ছেদ কাটলো । পূর্ণতা বলল ,

    – তার কোনো দরকার হবে না । আমি হেঁটেই যেতে পারবো ।

    – ঠিক আছে । যেমন তোমার ইচ্ছা । চলো ।

    – হু ।

    …………………………………………………

    আবরনদের বাসায় ঢুকতেই দেখল সত্যিই সবাই এই বাসাতেই আছে । এমনকি সায়ন ও । পূর্ণতা আসতেই আধিরা আনজুম পূর্ণতা কে বলল ,

    – এই যে , আমার আম্মা এসে গিয়েছে । কেমন আছিস রে মা ?

    আধিরা আনজুমের প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা বলল ,

    – আলহামদুলিল্লাহ ।

    তারপর মনে মনে ভাবলো ,

    – এরা এত কেন ভালো ?আমার এখন সত্যিই বুক ফেটে কাদতে ইচ্ছে হচ্ছে ।

    আধিরা আনজুম বললেন ,

    – কিরে ! বিয়েতে মত দিয়েছিস নাকি তোর মা জোর করে বিয়ে করাচ্ছে ?

    এই কথা শুনে পূর্ণতার চোখ বেয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়তে লাগল ।

    আধিরা আনজুম বললেন ,

    – কাদছিস কেন মা ?

    আবরন হেসে বলল ,

    – সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে তো এই জন্য বোধয় !

    আধিরা আনজুম চোখ গরম করে আবরনকে বলল ,

    – তুই যা এখান থেকে , ফাজিল ছেলে কোথাকার ! যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে ।

    আবরন হেসে সেখান থেকে চলে গেল ।

    আধিরা আনজুম মিলি রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

    – মিলি , মেয়ে তো কাদছে । তোর বুক পোড়াচ্ছে না !

    মিলি রহমান হাসি মুখেই চোখ থেকে এক ফোটা পানি বাহিরে বের করে দিয়ে বললেন ,

    – মেয়েকে তো আর বের করে দিচ্ছি না ঘর থেকে ! ও যেন ভালো থাকে তাই তো ভালো কারো হাতে ওকে আমানত হিসেবে তুলে দিচ্ছি ।

    শাদমান চৌধুরী বললেন ,

    – মা কেদো না । তুমি কাদছো আর আবরন তো বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে । ও নাকি সবাইকে প্রমিজ করেছে যেদিন তোমার বিয়ে ঠিক সেদিন‌ই সে ও বিয়ে করবে ।

    আফতাব উজ্জামান হেসে বললেন ,

    – তাহলে তো এক দিনে তিনটা বিয়ে হবে বলে মনে হচ্ছে ।

    মিলি রহমান বললেন ,

    – তা ছেলের ব‌উ হিসেবে কাকে পছন্দ করেছিস রে ? নাকি আবরন বাবার কোনো পছন্দ করা মেয়ে আছে ?

    আধিরা আনজুম হেসে বলল ,

    – পূর্ণতার যেমন সায়নের সাথে বিয়ে হচ্ছে ঠিক তেমনি আবরনের জন্য আমরা জলকেই বেছে নিয়েছি !

    পূর্ণতার যেন আধিরা আনজুমের কথা শুনে দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল ।

    মিলি রহমান বললেন ,

    – জল ! তুই না জলকে আনবি না বললি ।

    – না রে ! মেয়েটাকে এখন দেখিস নি তো তাই বুঝবি না , এখন ও অনেক বদলে গিয়েছে ।

    শাদমান চৌধুরী বললেন ,

    – আমি প্রথম থেকেই চেয়েছি জলের সাথে আবরনের বিয়েটা পাকা করতে , কিন্তু আমার বোনের জন্য জল নষ্ট হয়ে যাওয়াতে পরে বিষয়টা নিয়ে পিছিয়ে যাই সেটা তো জানেন ই । কিন্তু এখন মেয়েটা আর আগের মতো নেই । তবে আবরন আর জল দুজনের একজন‌ও জানে না ওদের বিয়ের ব্যাপারে আমরা কথা বার্তা চালাচ্ছি । তবে এবার আর গত বারের মতো ভুল করবো না । জল বাসায় এলেই দুজনকেই আগে এ ব্যাপারে বলে তারপর সব পাকা করবো ।

    পূর্ণতা আর পারছে না এই কথা গুলো শুনতে । পূর্ণতা বলল ,

    – আম্মু , আমি বাসায় যাই । আমার খুব মাথা ব্যথা করছে আর খারাপ লাগছে ।

    সায়ন বলল ,

    – না , তুমি কোথাও যাবে না । তুমি আমার সাথে এখন হসপিটালে যাবে ।

    পূর্ণতা বলল ,

    – কেন ?

    – তোমার প্রতিনিয়ত মাথা ব্যথা করে কেন তা আগে জানতে হবে । তুমি চলো আমার সাথে । এতো চাপ নাও কেন তুমি ? চলো আমার সাথে ।

    – আম্মু , আমি কোথাও যাবো না । আমি এখানেই থাকবো ।

    সায়ন বলল ,

    – না , তুমি চলো আমার সাথে !

    পূর্ণতা বলল ,

    – না , আমি এখন কোথাও যাবো না ।

    এর‌ই মধ্যে আবরন এসে বলল ,

    – তোমরা কি সবাই রেডি নাদিরা ভাবীদের বাসায় যাওয়ার জন্য ?

    পূর্ণতা বাদে সবাই জবাব দিল ,

    – হ্যা ।

    পূর্ণতা বলল ,

    – তোমরা কি আজ‌ই ভাইয়ার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে নাদিরা ভাবীদের বাসায় যাওয়ার প্ল‍্যান করেছো ?

    মিলি রহমান বললেন ,

    – হ্যাঁ ।

    – কিন্তু ভাইয়া তো অফিসে !

    আবরন বলল ,

    – আমরা ভাইয়াকে ভাইয়ার অফিসের সামনে থেকে পিক করে নিয়ে যাবো ।

    পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

    – বদ লোক একটা ! সব প্ল‍্যান আপনার আগের থেকেই জানা কিন্তু আপনি কিছুই বলেন নি , না জানার ভান করেছেন । হুহ ! ভাল্লাগেনা ! এত প্যারা আমি আর নিতে পারছি না ।

    সবাই রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখল আয়মান , ফাহিম , তাসিন , প্রেনা এবং জল সব ধরনের খাবার দাবার এর প্যাকেট নিয়ে নিচে হাজির ।

    সবাই রেডি হয়ে আজ‌ও দুই গাড়ি ভরে একসাথে যাচ্ছে নাদিরাদের বাসায় ।

    #চলবে ♥️

    বিঃদ্রঃ একদিনে তিনটা বিয়ে ! সবাই সাজু গুজু শুরু করে দিন । 🥴

    গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ।♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here