#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৯
এক গাড়িতে শাদমান চৌধুরী , আধিরা আনজুম , মিলি রহমান , আফতাব উজ্জামান উঠেছে । আরেক গাড়িতে আবরন , জল , সায়ন , পূর্ণতা , ফাহিম , তাসিন , আয়মান , প্রেনা বসেছে ।
গাড়িতে উঠার সময় পূর্ণতা সবসময় আবরনের পাশে বসলেও আজ সায়ন পূর্ণতা কে নিয়ে ওর পাশে বসিয়েছে । আবরন কিছু বলতে পারেনি , চুপচাপ দেখেছে । রাগ করে আবরন জলকে ওর পাশের সিটে বসিয়েছে ।
সায়ন , পূর্ণতা আর প্রেনা মাঝের সিটে বসেছে আর পেছনের সিটে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান । ওরা প্ল্যান করেছে জিব্রান কে মাঝ পথে পিক করে একদম পেছনের সিটেই চেপে বসিয়ে বাকি পথ নিয়ে যাবে ।
গন্তব্য নাদিরার বাসা অর্থাৎ মিরপুর ১১ ।
সায়ন পূর্ণতার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করছে কিন্তু পূর্ণতা কোনো কথা বলছে না । প্রেনা পাশ থেকে ইচ্ছে করেই পূর্ণতা কে খোচাখুচি করছে সায়নের সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু পূর্ণতা উল্টো প্রেনাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে রাখছে ।
জল পেছনে তাকিয়ে বলল ,
– সায়ন ভাইয়া কি হয় তোমার পূর্ণতা !
পূর্ণতা কিছু বলবে তার আগেই প্রেনা বলল ,
– পূর্ণতার কাজিন ।
সায়ন জলকে দেখে বলল ,
– তোমাকে ঠিক চিনলাম না !
জল হেসে বলল ,
– আমি আবরনের কাজিন ।
সায়ন হেসে বলল ,
– বাহ , আমাদের মধ্যে কত মিল তাই না !
জল ভ্রু কুচকে বলল ,
– সেটা কিভাবে ?
– এই যে তুমি আবরনের কাজিন আর আমি পূর্ণতার কাজিন !
জল হাসল । আবরন বলল ,
– জল , চুপচাপ বসো । আমার ড্রাইভিং এ প্রবলেম হচ্ছে ।
জল বলল ,
– সরি , সরি ।
সায়ন বলল ,
– তুমি কেন সরি বলছো ? আবরন ড্রাইভ করতে জানে না তা না বলে তোমাকে দোষ দিচ্ছে ।
আবরন সায়নের কথা শুনে গাড়ি এক সাইডে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– অনুগ্রহ করে তাহলে গাড়িটা বরং আপনি ই চালান সায়ন ভাইয়া ।
সায়ন বলল ,
– কেন নয় ! অবশ্যই !
আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো আর সায়নও । দুজনই সিট বদল করে নিল । সায়ন এখন ড্রাইভিং সিটে আর আবরন সায়নের সিটে ।
সায়ন গাড়ি স্টার্ট করে বলল ,
– জল , তুমি আমার সাথে কথা বলো ! আমি কথা বলতে বলতেই গাড়ি ড্রাইভ করতে অভ্যস্ত !
জল হেসে একটু একটু করে সায়নের সাথে কথা চালাতে শুরু করলো ।
সায়নের কথা শুনে আবরন পূর্ণতা কে আস্তে করে বলল,
– শোনো তোমার হবু স্বামীর কথা ! সে শাহরিদ আহনাফ আবরনকে বোঝাতে চাইছে যে সে কথা বলে গাড়ি ড্রাইভ করতে পারে আর আমি পারি না । কিন্তু তার হয়তো জানা নেই যে আমি তার হবু বউকে আমার পাশের সিটে বসিয়ে নিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ অলরেডি কথা বলতে বলতেই ড্রাইভ করেছি ।
এই বলে আবরন মুচকি হাসল ।
আবরনের কথা গুলো শুনে পূর্ণতার কেন যেন সব আগের কথা গুলো আবার ও মনে পড়ছে ।
– সত্যিই তো ! আপনার পাশে বসে আপনার হাতে হাত রেখেই তো গল্প করতে করতে কতটা পথ এই গাড়িটাতে বসে পাড়ি দিয়েছি আর আজ সেই আপনি ই কিনা আমাকে নিজের মুখ দিয়ে আরেকজনের হবু বউ বলে সম্মোহিত করছেন । সত্যিই কি আপনি সেই লোকটা যার সাথে আমি ভার্সিটির প্রথম দিন মেইন গেইটে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েছি ? আপনি ই কি সেই শাহরিদ আহনাফ আবরন যে অন্যায় করে না এবং অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয় না ! যদি আপনি সে ই হন , তাহলে আপনি আমার সাথে সায়ন ভাইয়ার বিয়ের কথা কখনোই মেনে নিতেন না ! আপনি আর এখন আগের শাহরিদ আহনাফ আবরন নেই । বদলে গিয়েছেন আপনি । আর নয়তো আমি ই আপনাকে নিয়ে একটু বেশি ভেবে ফেলেছি তাই কষ্টটা শুধু আমাকেই একা ফেস করতে হচ্ছে , আপনাকে নয় ! এটাই বোধয় সত্য !
এদিকে আবরন মনে মনে ভাবছে ,
– নিজের পাশের সিটে তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কখনো কল্পনা ই করি নি মিস পূর্ণতা জামান । তাই তো বুদ্ধি করে সায়ন বেটাকে উঠিয়ে তোমার পাশে এসেই বসলাম । মন চাইছে তোমার হাত ধরে তোমাকে সামলাতে কারন আমি জানি যে তুমি এই বিয়েতে মন থেকে রাজি নও । তোমার ভেতর টা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে । কিন্তু তুমি চিন্তা করো না , তোমার সাথে সায়নের বিয়েটা আমি হতে দিচ্ছি না । আমি সব ভেবে রেখেছি এখন শুধু তোমার বিয়ের দিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আমার হাতে আর কোনো উপায় নেই । আমি তোমাকে বলতে পারছি না কারন বললে তুমি ……….
আমি শুধু এই টুকু জানি তোমার সাথে সায়নের বিয়েটা আমি হতে দিচ্ছি না । ব্যস !
তুমি আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ , আমারো কষ্ট হচ্ছে তোমাকে এভাবে এড়িয়ে চলতে , তোমার সাথে কম কথা বলে চলতে । কিন্তু বিশ্বাস করো এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই ।
এরই মধ্যে আবরনের ফোনটা বেজে উঠলো ! আবরন পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখল শাদমান চৌধুরী কল করেছেন । আবরন কলটা রিসিভ করে ফোন কানে দিয়ে বলল ,
– হ্যা , বাবা ! বলো ।
– জিব্রান কে পিক করেছিস !
– এই তো সামনেই ভাইয়ার অফিস । আমি কল দিয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলে তোমাকে জানাচ্ছি ।
– আচ্ছা ।
কল কেটে আবরন জিব্রান কে কল দিয়ে বলল ,
– ভাইয়া , তুমি কোথায় ?
জিব্রান বলল ,
– আমি তো নাদিরাদের বাসার সামনে !
আবরন পুরাই বোকা বনে গিয়ে ফোনটা কান থেকে নামিয়ে স্পিকারটা অন করে সবাইকে ইশারা করে চুপ করতে বলে জিব্রান কে বলল ,
– তুমি নাদিরা ভাবির বাসায় মানে ! তোমার না অফিসের সামনে থাকার কথা !
-হ্যা , থাকার কথা ছিল । কিন্তু নাদিরা বাসা থেকে ফোন পেয়ে একা একা অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছিল , তাই আমিও চলে এসেছি ।
– মানে কি ! তুমি যদি আগেই গিয়ে পাত্রীর বাসায় বসে থাকো আমাদের কি হবে ভেবে দেখেছো !
– আরে বেটা , আমি কি একবারো বলেছি আমি নাদিরাদের বাসায় ঢুকে এখন সোফায় বসে তোদেরকে ছাড়াই রসগোল্লা খাচ্ছি ?
– তাহলে !
– নাদিরা কে বাসায় ঢুকিয়ে দিয়ে আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি ।
জিব্রান এর কথা শুনে সবাই আর চুপ করে থাকতে পারলো না । পূর্ণতা সহ গাড়িতে উপস্থিত সবাই হু হা করে হেসে উঠল ।
জিব্রান বলল ,
– ফাজিলের দল ! আমাকে নিয়ে মজা করছিস ??
পূর্ণতা বলল ,
– আমি সব ব্যবস্থা যে করলাম এখন আমার কি লাভ ??
জিব্রান বলল ,
– তোকে তোর বিয়েতে যা যা লাগবে সব কিনে দিব , তুই চিন্তা করিস না ।
পূর্ণতা জিব্রানের কথা শুনে মলিন হাসি দিয়ে মনে মনে ভাবল ,
– যেই বিয়েতে তোমার বোন মুখে মত দিলেও মনকে সে ব্যাপারে শান্ত করতে পারছে না , সে বিয়েতে আর আমার কি লাগবে ! Kaash , তুমি বলতে যে বিয়ের আগে শেষ যা আবদার করবি তা ই তোকে দেব ! তাহলে হয়তো তোমার কাছে একটাই চাওয়া থাকতো আর সেটা হলো ‘ আবরন ‘ ।
ভাবতে ভাবতেই পূর্ণতার চোখ ছল ছল করে সেখান থেকে পানি গড়িয়ে পড়তেই যাচ্ছিল কিন্তু পূর্ণতা কাউকে দেখতে না দিয়ে চোখ মুছে নিল ।
আবরন জিব্রানের সাথে কথা বলে শাদমান চৌধুরী কে কল করে জানিয়ে দিল যে জিব্রান আগে থেকেই নাদিরা ভাবীর বাসার সামনে পৌঁছে গিয়েছে ।
…………………………………………………
দুপুর ৩ টা ,
নাদিরাদের বাসার বাহিরে দুইটা গাড়ি থামানো হয়েছে । গুরুজনদের প্রথমে যেতে দিয়ে তাদের পরে গেল খাবার দাবার সাথে নিয়ে ফাহিম , তাসিন , আয়মান ।
জিব্রান বলল ,
– আমি বর , আমাকে যেতে না দিয়ে ওরাই আগে যাচ্ছে ।
সায়ন বলল ,
– ইশ , তোমার তো দেখছি ধৈর্য্য সহ্য বড়ই কম । একে তো আগে থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছো এখন আবার আগে আগে যাওয়ার জন্য পাগল হচ্ছো !
জিব্রান বলল ,
– হয়েছে ! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাষন না দিয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে ভেতরে যা ভাই । তুই গেলে আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে ।
সায়ন হেসে পূর্ণতা কে বলল ,
– চলো , যাই আমরা ।
পূর্ণতা বলল ,
– আপনি যান ! আমি প্রেনার সাথে আসছি ।
– আমি একা ঢুকবো নাকি ?
আবরন জলকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– তুমি আর সায়ন ভাইয়া ভেতরে যাও ।
জল বলল ,
– ঠিক আছে ।
ওরা ঢুকতেই আবরন জিব্রান কে বলল ,
– চলো , এবার ।
জিব্রান খুশি হয়ে বলল,
– চল চল , জলদি চল ।
– আরে ধীরে সুস্থ্যে যাও । জামাই বলে কথা ! ভদ্রতা দেখানো জরুরি ।
– ঠিক বলেছিস !
প্রেনা বলল ,
– ভাইয়ার মাথা আজকে পাগল হয়ে গিয়েছে ।
জিব্রান বলল ,
– কেন হবে না মাথা পাগল বল তো ? মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পড়ছে তো তাই আরকি !
পূর্ণতা বলল ,
– এখন কিন্তু তুমি ই সময় নষ্ট করছো । চলো , ভেতরে চলো !
– ঠিক আছে , ঠিক আছে । চল , আবরন । আমাকে নিয়ে চল ।
আবরন হেসে জিব্রান কে নিয়ে ভেতরে ঢুকল আর পেছন পেছন প্রেনা আর পূর্ণতা ও ভেতরে ঢুকলো ।
গুরুজনরা সবাই ভেতরে ঢুকে বসেছে । জিব্রানকে একটা সিংগেল সোফাতে বসিয়ে আবরন ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ।
ফাহিম , তাসিন , আয়মান ও গিয়ে আবরনের পাশে দাঁড়ালো ।
সায়ন প্রথমে মিলি রহমান আর আফতাব উজ্জামান এর সোফার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল । কিন্তু পরে সবাই বসার পরে জিব্রানের পাশের সিংগেল সোফাটা খালি দেখে সেখানে গিয়ে বসলো ।
প্রেনা আর পূর্ণতা কে দেখে জল ও এসে ওদের পাশে দাঁড়ালো ।
নাদিরার বাবা নিজাম হোসেন এবং মা নাজমা বেগম । দুজনে জিব্রানের গার্ডিয়ান দের সাথে কথা বার্তা চালাচ্ছে ।
পূর্ণতা মিলি রহমান কে আস্তে করে গিয়ে বলল ,
– আম্মু , আমরা মেয়েরা কি নাদিরা ভাবির রুমে যেতে পারি ?
মিলি রহমান নাদিরার মা নাজমা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এটা আমার মেয়ে পূর্ণতা জামান । ওরা মেয়েরা চাইছে নাদিরার রুমে যেতে ।
নাজমা বেগম হেসে বলল ,
– এটা আবার বলতে হয় ! দাঁড়াও আমি নাদিরার কাজিনদের কে বলছি এসে নিয়ে যেতে ।
নাজমা বেগম বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তিন চারজন মেয়ের নাম ধরে ডাক দিতেই ওরা একে একে এসে হাজির হলো ।
নীলা বলল ,
– হ্যা , খালামনি বলো ।
– আম্মা , ওদের নিয়ে যা তো নাদিরার রুমে ।
– আচ্ছা ।
নীলা পূর্ণতাদের উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এসো আমাদের সাথে ।
পূর্ণতা, প্রেনা , জল হেঁটে নাদিরার রুমের দিকে চলে গেল । ওদের পেছন পেছন নাদিরার কাজিনরা চলে এলো ।
নাদিরার রুমে ঢুকতেই দেখলো নাদিরা মেরুন রং একটা শাড়ি পড়েছে ।
পূর্ণতা , প্রেনাকে দেখে নাদিরা বলল ,
– তোমরা এসেছো । ইশশ , এখন একটু স্বস্তি লাগছে । আমার তো হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল হঠাৎ করে তোমরা বিয়ের কথা পাকা করতে আসছো শুনে ।
পূর্ণতা গিয়ে নাদিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– তোমাকে দেখতে যে কি মিষ্টি লাগছে ভাবী !!
প্রেনা বলল ,
– তোমার ভয় পাওয়ার কি আছে ! তোমার তো খুশি হওয়ার কথা যে অবশেষে বিয়েটা ফাইনাল হতে যাচ্ছে তোমার আর জিব্রান ভাইয়ার ।
– খুশি তো বটেই , কিন্তু একটু ভয় ও হচ্ছে ।
জল নাদিরার দিকে এগিয়ে এসে বলল ,
– দেখি , ভাইয়ার বউটা দেখতে কতটা মিষ্টি !
নাদিরা বলল ,
– তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না !
– আমি জল , আবরনের কাজিন ।
নাদিরা জলের মুখে নাম শুনে চমকে উঠে পূর্ণতার দিকে তাকালো । পূর্ণতা চোখ দিয়ে হালকা ইশারা করল যেন ওকে কিছু না বলে ।
জল বলল ,
– তুমি দেখতে খুব সুন্দর !
নাদিরার কাজিনদের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো ,
– নাদিরা আপু কি সুন্দর , তার চেয়ে তো বেশি সুন্দর বাহিরের ঐ ছেলেটা !
নাদিরা বলল ,
– কোন ছেলেটা ?
– ঐ যে জিব্রান ভাইয়ার পাশে বসেছে যে !
জল বলল ,
– ও , আচ্ছা । সায়ন ভাইয়ার কথা বলছো !
– উনার নাম সায়ন । বাহ , সুন্দর নাম !
প্রেনা বলল ,
– ওনার বিয়ে পাকা হয়ে গিয়েছে আপু মনি । এতো ভেবে নিজের মন ভেঙো না ।
নাদিরা বলল ,
– সায়ন ??
প্রেনা বলল ,
-হু , পূর্ণতার কাজিন এন্ড সো কলড্ হাজবেন্ড ।
নাদিরা হেসে বলল ,
– ওও , আচ্ছা । সায়নের কথা জিব্রান আমাকে বলেছিল কিন্তু মনে ছিল না ।
জল প্রেনার মুখে সায়ন আর পূর্ণতার ব্যাপারে কথা শুনে চমকে উঠে বলল ,
– সায়ন ভাইয়ার সাথে পূর্ণতার বিয়ে মানে ! ঠিক বুঝলাম না !
প্রেনা বলল ,
– পরে বুঝিয়ে বলবো আপু ।
জল মনে মনে ভাবছে ,
– আবরনের কি হবে তাহলে ? ও কি বিষয়টা জানে ?
নাদিরার আরেকজন কাজিন বলল ,
– জিব্রান ভাইয়ার সব গুলো ভাই ই কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম !
নাদিরা বলল ,
– কে কে এসেছে রে পূর্ণতা ?
পূর্ণতা বলল ,
– সবাই ! তাসিন ভাইয়া , ফাহিম ভাইয়া , আয়মান ভাইয়া , আবরন …..
পূর্ণতা শেষ করার আগেই প্রেনা বলল ,
– আবরন ভাইয়া , সায়ন ভাইয়া । এরা এসেছে ।
নাদিরা হেসে বলল ,
– সব বিচ্ছুর দল হাজির তাহলে !
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– শুধু তোমার সেখানে উপস্থিত হওয়াটাই বাকি এখন ।
নাদিরা বলল ,
– আমার তো এখনো ডাক পড়ল না । ডাক পড়ুক আগে , তারপর আমিও উপস্থিত হচ্ছি ।
নীলা নামের মেয়েটা বলল ,
– রেড পাঞ্জাবি পড়া ছেলেটার দিকে তোরা কেউ তাকিয়েছিস ?
বাকি কাজিনরা বলল ,
– না ।
– ঐ ছেলেটা সবার চেয়ে অন্যরকম দেখতে ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– রেড পাঞ্জাবি পড়ে তো আবরন এসেছেন ! এই মেয়েটার উনার দিকে নজর গেল কেন ? হুহ , ছেলে দেখলে হুশ থাকে না এসব মেয়েদের !যত্তসব আজাইরা ।
…………………………………………………
এদিকে জিব্রান সোফায় বসে বসে বোর হচ্ছে । আবরন বিষয়টা বুঝতে পেরে জিব্রান এর কানের কাছে গিয়ে বলল ,
– আর ভালো লাগছে না তাই না ভাইয়া !
– নাদিরা কখন আসবে রে ?
ফাহিম বলল ,
– ওনারা ডাকলেই আসবে ।
জিব্রান বলল ,
– ওনাদের কথা তো শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না !
আবরন বলল ,
– ধৈর্য ধরো আসবে ।
কিছুক্ষণ পরই আধিরা আনজুম বললেন ,
– তা যার জন্য আসা তাকে একবার ডাকুন । যদিও আমরা নাদিরা মাকে আগেও দেখেছি ।
নাজমা বেগম হেসে ওদের ডাকলেন ,
– নীলা , তোরা নাদিরা কে নিয়ে আয় ।
নাজমা বেগমের গলা শুনে সবাই উঠে দাঁড়ালো ।
নাদিরা বলল ,
– পূর্ণতা তুমি আমার ডান হাতটা ধরে থেকো বোন ।
– তুমি ভয় পেয়ো না , আমি আছি । আর সবাই তোমাকে পছন্দ করেছে । ভয়ের কিছুই নেই ।
– তবুও , একটু নার্ভাস লাগছে ।
– ঠিক আছে । চলো , যাওয়া যাক তাহলে ।
নাদিরা ঘোমটা টা চেক করে নিয়ে পূর্ণতার হাত চেপে ধরল । নাদিরার আরেক পাশে গিয়ে প্রেনা আর জল দাঁড়িয়ে গেল আর পেছনে নাদিরার কাজিনরা দাঁড়ালো ।
ধীর পায়ে সবাই নাদিরাকে নিয়ে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল । বসার ঘরে পৌঁছাতেই মিলি রহমান সায়নকে কে বললেন ,
– বাবা , তুই উঠে ওদের সাথে দাঁড়িয়ে হবু ভাবিকে বসতে জায়গা করে দে ।
সায়ন বিনয়ের সাথে হেসে বাকিদের সাথে সোফার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো ।
পূর্ণতা নাদিরাকে নিয়ে গিয়ে সেই সোফাটা তে বসিয়ে দিল ।
নাদিরাকে পাশে বসাতেই জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে আবরন বলল ,
– এখন তোমার ভালো লাগছে কি ?
জিব্রান বলল ,
– ভাই , সত্যি বলতে এখন কেমন যেন লজ্জা করছে । 😳
আবরন সহ পেছনে থাকা সবাই হেসে 😂 উঠলো জিব্রানের কথা শুনে ।
আফতাব উজ্জামান নাদিরার বাবা নিজাম হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,
– মেয়েকে কিন্তু আমাদের বেশ পছন্দ । আপনাদের যদি অনুমতি থাকে তাহলে কি আমরা ব্যপারটা এগিয়ে নিতে পারি ?
নিজাম হোসেন বিনয়ের সাথে হেসে বললেন ,
– অবশ্যই । জিব্রান বাবার মতো ছেলে তো লাখে একটা পাওয়া যায় । আর তার চেয়ে বড় কথা হলো আমার মেয়ে এবং আপনার ছেলে দুজনই তাদের সুখ খুঁজে যখন নিয়েই ফেলেছে তখন আমাদের আর আপত্তি কিসের !
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– আলহামদুলিল্লাহ ।
রুমে উপস্থিত সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠল ।
মিলি রহমান ব্যাগ থেকে একটা রিং এর বক্স বের করে তা খুলে জিব্রানের হাতে দিয়ে বলল ,
– নে বাবা , দুজন দুজনকে পড়িয়ে দে ।
জিব্রান আংটির বক্সটা হাতে নিয়ে দেখল সেটাতে পাশাপাশি দুটো ডায়মন্ডের রিং রাখা আছে ।
জিব্রান নাদিরাকে পরানোর জন্য একটা রিং হাতে নিল আর নাদিরা জিব্রানকে পড়ানোর জন্য অপর রিংটা হাতে নিল ।
তারপর আবরন বলল ,
– ভাবী , হাত টা দাও ভাইয়ার দিকে । ভাইয়া তো সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে ।
নাদিরা হেসে হাত বাড়িয়ে দিতেই জিব্রান নাদিরার অনামিকাতে রিং পড়িয়ে দিতেই সবাই জোরে হাত তালি দিল ।
নাদিরার কাজিনরা জিব্রান কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এবার জিজু , তুমিও হাত টা বাড়িয়ে দাও ।
জিব্রান মুচকি হেসে নাদিরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই নাদিরাও জিব্রানের আঙুলে আংটি পড়িয়ে দিতেই সবাই হাত তালি দিয়ে আবারো “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠল ।
অবশেষে আংটি পড়ানোর পালা শেষ করে জিব্রান আর নাদিরার বিয়ে পাকা করা হলো আজ থেকে ঠিক ১৫ দিন পর ।
যেহেতু , আফতাব উজ্জামান জিব্রানকে নিয়ে আগামী ১ মাসের মধ্যেই ফ্রান্সে ব্যাক করবে তাই বিয়ের তারিখ ১৫ দিন পর ই পাকা করা হলো ।
১৫ দিন পরই বিয়ের কথা শুনে পূর্ণতা যেন আরো ভেঙে পড়লো । পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে ,
– মাত্র ১৫ দিন ! ভাইয়ার বিয়ে ১৫ দিন পর মানে তো আমার বিয়েটাও একই দিনে !
আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ওর মনের কথা বুঝে মনে মনেই পূর্ণতা কে বলল ,
– তুমি ভেবো না পূর্ণতা ! আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি । এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা !
দুপুরে সবাই নাদিরাদের বাসায় ই লাঞ্চ করেছে কারন ওনারা আগেই জানিয়েছে যে লাঞ্চ যেন তাদের বাসাতেই করে । বিয়ের কথা পাকা পাকি করে সবাই লাঞ্চ করে একসাথে মিষ্টি মুখ করতে ব্যস্ত । এদিকে পূর্ণতার মনে কষ্টের ঝড় বয়ে যাচ্ছে ।
…………………………………………………
রাত ২ টা ৫০ মিনিট ,
পূর্ণতা শুধু শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে । কোনোভাবেই ওর ঘুম আসছে না ।
মাথা ব্যথা আর ঘুমের কথা বলে ১০ টার দিকে শুয়ে পড়েছে ঠিক ই কিন্তু তখন থেকে কেদে চলেছে শুধু ।
শোয়া থেকে উঠে বসে পূর্ণতা আবারো কেদেই চলেছে । হঠাৎ পাশে থাকা ফোনে আলো জ্বলে উঠলো । পূর্ণতা তাকিয়ে দেখলো কল আসছে । ফোনটা সাইলেন্ট করা তাই শব্দ নেই কোনো । চোখের পানি মুছে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল আবরন কল করছে । রাগ করে ফোনটা কেটে দিল পূর্ণতা । তারপর কান্নার বেগ আরো বাড়িয়ে দিল । পরপর আরো দুবার ফোন বেজেছে কিন্তু পূর্ণতা বার বার ই কেটে দিচ্ছে ।
এরপর ফোনের স্ক্রিনে আবরনের ম্যাসেজ ভেসে উঠতেই পূর্ণতা ম্যাসেজটা ফুল ওপেন করে দেখল তাতে লেখা ,
– আমি তোমার বাসার নিচে আছি । জলদি চুপ চাপ নিচে নেমে এসো । তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে ।তোমার হাতে ২ মিনিট সময় আছে , এর মধ্যে ভালোয় ভালোয় নিচে নেমে এসো তা নাহলে আমি উপরে যেতে বাধ্য হবো । বাকিটা তোমার ইচ্ছা ।
আর কোনো উপায় না পেয়ে পূর্ণতা অগোছালো ভাবেই শরীরে ওরনা পেচিয়ে চুপি সারে মেইন দরজা খুলে বেরিয়ে নিচে গেল ।
নিচে যেতেই দেখল হোয়াইট এন্ড স্কাই ব্লু চেকের ট্রাউজার আর স্কাই ব্লু টি শার্ট পরোনে আবরন গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে স্ক্রলিং করছে । পূর্ণতা আবরনের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতেই যখন আবরনের থেকে পূর্ণতা এক দেড় হাত দূরে তখন আবরন পূর্ণতা কে দেখে ফোনটা হাত থেকে পকেটে ঢুকিয়ে ওর দিকে আবারো তাকালো ।
পূর্ণতা পলকহীন ভাবে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে । আবরন ভালো করে ওর দিকে তাকিয়ে দেখল ফোলা ফোলা চোখ , জমাট বাধা চোখের পাপড়ি , অগোছালো খোপা করা চুল , মলিন মুখ নিয়ে ওর দিকেই দেখছে ।
আবরন বলল ,
– কি করেছো এসব ? নিজেকে আয়নায় দেখেছো একবার ?
পূর্ণতা কিছু না বলেই আবরনকে হুট করে জড়িয়ে ধরে নিজ থেকেই মাথাটা আবরনের বুকে চেপে ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ।
পূর্ণতার এমন আচরনে আবরন কি করবে বা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না ।
পূর্ণতা কাদতে শুরু করে বলল …………………….
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ বৃষ্টির দিন আজকে আমার ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কাটলো । তাই গল্পটা দিতে একটু দেরি হয়ে গেল । এইজন্য সরি ।
আজকের পর্ব পড়ে হয়তো সবার এইটুকু ক্লিয়ার হবে যে আবরন কি করতে যাচ্ছে সামনে । আমার প্রথম গল্প এটা , তাই হ্যাপি এন্ডিং দিতেই চেষ্টা করবো ।
গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️