ভালোবাসি_বলেই_তো পর্ব – ৪৪

0
895

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪৪

বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ৫ টি মাইক্রোবাস এসে থামলো একটা বিরাট বড় হেরিটেজ রিসোর্টের ভিতরের বাংলো গুলোর সামনে ।

একে একে সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই অসংখ্য কেয়ার টেকাররা দৌড়ে এলো গাড়ি থেকে বিয়ের জন্য আনা যাবতীয় সকল প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো নামিয়ে ভেতরে যার যার রুমে পৌঁছে দেওয়ার জন্য । আর ম্যানেজার সহ হোটেল মেজারমেন্ট এর কাজে কর্মরত থাকা কর্মকর্তারা এলো সবাইকে যার যার রুমে নিয়ে যেতে ।

এডাল্টরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই চারিদিকে এ নজর বুলিয়ে নিজেরা নিজেরা কথা বলতে শুরু করলো । ফাহিম আবরনকে বলল ,

– দোস্ত , তোর আর জিব্রান ভাইয়ার তো রাজার পুত্রদের মতো বিয়ে হতে যাচ্ছে রে !

রুহি বলল ,

– সত্যিই , জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর ।

শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– তাহলে আর কি ? তোমরা এনজয় করো ! জায়গাটা ঘুরে দেখো ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– আমাদের হাতে এখনো অনেক কাজ বাকি । সবাই চলো , চলো । দাঁড়িয়ে না থেকে কাজে লেগে পড়ো ।

মিলি রহমান বললেন ,

– তোমার উত্তেজনা দেখে তো মনে হচ্ছে বিয়ে ছেলে মেয়েদের না । তোমার ই ।

মিলি রহমানের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল ।

একে একে সবার ফ্যামিলি এক একটা বাংলোতো শিফট করলো ।

সায়ন পূর্ণতা কে বলল ,

– চলো , ঘুরি ।

পূর্ণতা বলল ,

– সরি , আমি খুব টায়ার্ড । আমার মাথা ব্যথা করছে ‌ । আমি এখন আমার রুমে যাচ্ছি ।

সায়ন বলল ,

– ধুর , কাল বাদে পরশু বিয়ে আর তুমি ঘুরতে পারবো না ।

জল আবরনকে বলল ,

– চলো , ঘুরে দেখি !

আবরন বলল ,

– আমিও টায়ার্ড । তুমি বরং সায়নের সাথে ঘুরে দেখো ।

জল সায়নের দিকে তাকাতেই সায়ন বলল ,

– ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড , ইউ ক্যান কাম ইউথ মি ।

জল মুচকি হেসে বলল ,

– লেটস গো ।

সায়ন আর জল কে ঘুরতে দেখে আয়মান-প্রেনা , ফাহিম-রুহি , তাসিন-নীরা সবাই জোট বেধে রিসোর্ট টা ঘুরে দেখতে শুরু করলো ।

জিব্রান নাদিরা কে বলল ,

– চলো , আমরাও যাই ।

নাদিরার কাজিনরা জিব্রানের কথা শুনে বলে উঠল ,

– oyeee hoyeee….

নাদিরা হেসে ওদেরকে বলল ,

– তোরা আমাদের ডিস্টার্ব করিস না তো । যা গিয়ে নিজেদের চরকায় তেল দে ।

নাদিরার কাজিনদের মধ্যে একজন আবারো হেসে বলল ,

– হ্যা , যাও যাও আপু , ভালো করে ঘুরে নাও । আমরা ও আছি পিছনে পিছনে । কিছু লাগলে জানিও ।

জিব্রান আর নাদিরা দুজন‌ই হেসে হাঁটতে শুরু করলো ।

ওদের ৫-৬ ফুট পেছনে পেছনে নাদিরার কাজিনরাও হেঁটে হেঁটে রিসোর্ট টা ঘুরে দেখতে শুরু করলো ।

এদিকে পূর্ণতা নিজের রুম যে বাংলোতে পড়েছে সেইদিকেই হেঁটে যাচ্ছিল । হঠাৎ আবরন ওর পাশে এসে হাঁটতে শুরু করে বলল ,

– হাউ ডু ইউ ফিল নাউ ?

পূর্ণতা মলিন হাসি দিয়ে বলল ,

– বেটার ।

– গুড ।

– হুম । আপনি এদিকে কোথায় যাচ্ছেন ? আপনার রুম তো পাশের বাংলোতে !

– হুম ।

– “হুম” কি ? তাহলে যান সেখানে !

আবরন বলল ,

– ওকে । ফ্রেশ হয়ে নাও ।

– হুম ।

পূর্ণতা নিজের বাংলোর ভিতরে ঢুকে যেতেই আবরন‌ও পাশের বাংলোটাতে নিজের রুম যেখানে সেদিকে চলে গেল ।

…………………………………………………

সন্ধ‍্যা ৭ টা ,

পূর্ণতা নিজের রুমটা গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল ।

চোখ বন্ধ করে ভাবছে বিয়ের দিন কি হবে ! এর‌ই মধ্যে হৈ চৈ এর শব্দ ভেসে আসতে লাগল । পূর্ণতা চোখ খুলে তাকিয়ে শব্দের রহস্য খুঁজতে শোয়া থেকে আবারো উঠে দাঁড়ালো । তারপর বারান্দার দরজা টা খুলে বাহিরে যেতেই দেখল সব ছেলেরা সুইমিংপুলে ডুবাচ্ছে আর মেয়েরা দুষ্টুমি করে ছবি তুলছে আর পানিতে পা ডুবিয়ে সবার দিকে পানির ছিটা দিচ্ছে ।

পূর্ণতা দেখল জিব্রান , আবরন , আয়মান , ফাহিম , তাসিন সব খালি গায়ে থ্রি কোয়ার্টারস পড়ে সুইমিংপুলে নেমে ডুবাচ্ছে ।

পূর্ণতা হেসে হেসে বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে যতটুকু কটেজের ভেতরের দৃশ্য দেখা যায় ততটুকু ই দেখতে শুরু করলো ।

এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে পাশের সব বাংলো গুলোই ই দেখা যাচ্ছে ।

নিচে সবুজ নরম ঘাস গুলো যে সমান করে মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত কেটে রাখা হয় তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । সুইমিংপুল টা বিশাল বড় । চারিদিকে বিভিন্ন রকমের লাইটস । লাইটের আলোতে সব কিছুই যেন চকচক করছে । সুইমপুলের পানি গুলো ঝলমল করছে চারিদিকের আলোতে ।

পূর্ণতা ভালো খরে খেয়াল করে দেখল নিচে সবাই আছে কিন্তু সায়নকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না । পূর্ণতা ভাবল ,

– সায়ন ভাইয়া আর জল আপু তো একসাথে ছিল । তাহলে জল আপু কি এখানে আছে ?

পূর্ণতা ভালো করে তাকিয়ে দেখল জল সুইংপুলের কাছেই বাকিদের সাথে আছে ।

– তাহলে সায়ন ভাইয়া কোথায় গেল ?

পূর্ণতা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ফোনে কল এলো । পূর্ণতা বারান্দা আটকে রুমের ভেতরে গিয়ে বিছানা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল আধিরা আনজুম কল করেছেন । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে কলটা রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলল ,

– আন্টি , বলুন ।

– মা , সবাইকে পুলের সামনে দেখলাম হৈ চৈ করছে । তুমি কোথায় ?

– আমি তো রুমে ।

– শরীর খারাপ করে নি তো আবার ?

– না , আন্টি । এমনি ।

– আচ্ছা , তাহলে একা না বসে থেকে এদিকে চলে আয় । তোর মা ও আসছে এখানে ।

– ঠিক আছে । আসছি ।

– আচ্ছা ।

পূর্ণতা কল কেটে নিজের রুমের চাবিটা হাতে নিয়ে রুম লক করে বেরিয়ে গেল । দোতলা থেকে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই সায়নের সাথে দেখা । পূর্ণতা বলল ,

– সবাই পুলে মজা করছে । আপনি এখানে কেন ?

সায়ন নিচের খোলা বারান্দায় টেবিল চেয়ার রাখা সেখানে বসে ছিল । পূর্ণতার গলা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,

– এমনি । ভালো লাগছে না ।

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কেন ?

সায়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– তুমি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি ?

পূর্ণতা সায়নের প্রশ্ন শুনে মনে মনে ভাবলো ,

– কি এমন কথা বলতে চান উনি যে আমার কাছে আগে অনুমতি চাইছে কথাটা বলার জন্য !

ভাবনা বাদ দিয়ে পূর্ণতা সায়নের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– বলুন ।

সায়ন বলল ,

– দেখো আমি কখনো কাউকে ভালোবাসি নি ‌। ছোট থেকে বাইরের দেশে বড় হলেও আমার মধ্যে কখনো কাউকে ভালোবাসার মতো ফিলিংস কাজ করে নি । কিন্তু খালু যখন তোমার ছবিটা আমাকে প্রথম দেখায় তখন মনে হয়েছিল তুমি একটু আলাদা সবার চাইতে । কেন জানি না মনে হয়েছিল তোমার উপর ই প্রথম বার এভাবে নিজের মনে দেওয়া নাড়াটা অন্যরকম ছিল । তাইতো দেড়ি না করে ছুটে আসি দেশে । আম্মুর সাথে ও এসে দেখা করি নি প্রথম । সোজা এখানে এসেছি ‌ । কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তুমি আমার সাথে হ্যাপী না , আই মিন আমাকে দেখলেও হ্যাপী হ‌ও না আর আমার কথাও তোমার অতোটা পছন্দ না । আমি জানি এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে । আমার আরো আগে এ বিষয়ে তোমার সাথে কথা বলা উচিত ছিল । কিন্তু চাইলে কিন্তু এখনো বিয়েটা ক্যান্সেল করা যায় । কারন বিয়েটা এখনো হয় নি । যদি তুমি চাও আমি মামনি আর খালুর সাথে কথা বলে বিষয়টা ক্লিয়ার করে দিয়ে তারপর আবার যেখান থেকে এসেছি সেখানেই ফিরে যাবো । তুমি বলো তুমি কি এই বিয়েতে রাজি নাকি জোরপূর্বক বিয়েটা করছো ?

পূর্ণতা সায়নের মুখে এইসব কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে র‌ইল । সায়ন বলল ,

– বলো পূর্ণতা ! আমি জোর করে কিছু করতে চাইছি না । তুমি চাইলে এ বিয়েটা ক্যান্সেল করা এখনো সম্ভব ।

পূর্ণতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল ,

– আপনি কি চান ?

সায়ন মুখে মলিন হাসি দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল ,

– আমার চাওয়া তে কার কি যায় আসে ?

– বলুন ।

– আমার যা বলার তা তো বললাম ই । তুমি চাইলে আমি এই বিয়েটা করতে রাজি আছি আর না চাইলে চলে যেতেও রাজি আছি ।

পূর্ণতা কি বলবে বুঝতে পারছে না । এই শেষ সময়ে এসে কি সবাইকে সব সত্যিটা বলে দিবে । বলে দিলে এই যে সবার মাঝে এত আনন্দ ফুর্তি , এই খুশির রোল সব যে নষ্ট হয়ে যাবে । আর জল আপু ও তো আবরনকে ভালোবাসে । একবার তো আপুর বিয়েটা ভেঙেছে আবারো কি করে আমার কারনে বিয়েটা ভেঙে যেতে পারে ? কি করবো আমি , কি করা উচিত এখন । আবরন কি চায় কখনো তো সেটা জানতেই পারি নি ।

এমন হাজারো ভাবনার মাঝে পূর্ণতার ফোনটা আবারো বেজে উঠল । পূর্ণতা চমকে গিয়ে ভাবনা থেকে বেরিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল মিলি রহমান কল করছে । পূর্ণতা সায়নকে বলে একটু দূরে গিয়ে কলটা রিসিভ করে বলল ,

– হ্যা , আম্মু বলো ।

– আরে কোথায় তোরা ! মেহেদী দিতে সেই কখন থেকে মেয়েরা এসে বসে আছে । আধিরা তোকে কল করে বলেছিল যেন তুই আগে ভাগে এসে মেহেদী দিতে পারিস আর তোর কোনো খবর‌ই নেই !

– ও , আচ্ছা আমি একা না । বাকিদের নিয়ে ই আসছি ।

– ঠিক আছে আয় ।

পূর্ণতা মিলি রহমানের কথা মতো সবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ওদের এ বিষয়ে জানাতে কিন্তু পেছন থেকে সায়নের ডাক পড়ল । পূর্ণতা বলল ,

– সরি , সরি । আম্মু ডাকছে । সবাইকে নিয়ে যেতে বলেছে । মেহেদী পড়ানো হবে ।

এই বলে পূর্ণতা সেখান থেকে চলে গেল ।

সায়ন ও ওর পেছন পেছন গেল ।

পূর্ণতা সুইমপুলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নাদিরা আর জলকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– সবাইকে একটু বলো আমাদের কে রেসটুরেন্টের দোতলায় যে পাবলিক প্লেসটা আছে সেখানে যেতে । এখন সবাইকে মেহেদী পড়ানো হবে ।

নাদিরা বলল ,

– সবাইকে ?

পূর্ণতা বলল ,

– হুম , আগে মনে হয় যাদের বিয়ে তাদের পড়ানো হবে । তারপর বাকিরা ।

জল বলল ,

– ঠিক আছে ।

নাদিরা স্বজোরে বলল ,

– সাইলেন্ট গাইজ । আমার কথা মন দিয়ে শোনো ।

সবাই হুরোহুরি থামিয়ে নাদিরার কথা শোনার দিকে মনোযোগ দিল ।

এদিকে সুইমিংপুলে যারা নেমেছে সবাই ডুবাডুবি বাদ দিয়ে নাদিরার কথা শুনতে শুরু করলো ।

নাদিরা বলল ,

– মেহেদী দিতে লোকেরা এসেছে । যারা পানিতে আছো তারা আল্লাহর ওয়াস্তে ড্রেস চেঞ্জ করে রেস্টুরেন্টের দোতলার রুমে খালি করা হয়েছে এবং মেহেদী পড়ানোর জন্য ডেকোরেশন করা হয়েছে সেখানে চলে যাও । আর যারা বিয়েতে এনজয় করতে এসেছো তারাও এক এক করে সেখানে চলে যাও ।

সবাই আবারো দল বেঁধে সেদিকে র‌ওনা হলো ।

আবরনসহ সবাই সুইমিং পুল থেকে এক এক করে উঠে আসতে শুরু করলো । পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর শরীর পানিতে থাকতে থাকতে ধবধবে সাদা হয়ে গিয়েছে ।

পূর্ণতা কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবরন পূর্ণতার সামনে গিয়ে বলল ,

– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমাদের ছেলেদের বুঝি লজ্জা শরম নেই !

আবরনের কথা শুনে এখন পূর্ণতার‌ই কেমন যেন লাল টমেটো হয়ে যেতে মন চাইছে । আবরনের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ভাবতে শুরু করলো ,

– আমি এতক্ষন যাবৎ উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম , এর কোনো মানে হলো । উনি যে ওভার ড্রেসসড আমি এক মূহুর্ত্তের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম ।

আবরন বলল ,

– সবাই চলে গিয়েছে । তুমি যাচ্ছো না ।

পূর্ণতা বলল ,

– হুম , যাচ্ছিলাম ই তো কিন্তু …..

পূর্ণতা বলে শেষ করার আগেই আবরন বলল ,

– কিন্তু আমার সিক্স প্যাক বডি দেখে ক্রাশ খেয়ে গেলে তাই আর যেতে পারো নি তাই তো ?

পূর্ণতা রেগে মেগে গাল ফুলিয়ে ‘ধুর’ বলে চলেই যাচ্ছিল কিন্তু আবরন হেসে পূর্ণতার হাত টেনে ধরে ওকে একদম কাছে এনে নিজের ভেজা চুল গুলো ঝাড়া দিয়ে পূর্ণতার চোখে মুখে পানির ছিটা ফেলল ।

পূর্ণতা চোখ মুখ কুচকে বলল ,

– উফফফ , কি করছেন টা কি ? আমি ভিজে যাচ্ছি তো !

আবরন চুল ঝাড়া থামিয়ে বলল ,

– এতক্ষন কোথায় ছিলে ? আমরা সবাই কতোটা এনজয় করলাম আর তুমি তো মিস করে গেলে !

পূর্ণতা বলল ,

– আমি রুমে ছিলাম ।

– সায়ন ও ছিল না এখানে । তারমানে কি তোমরা দুজন …….

পূর্ণতা বলল ,

– জি না , আমি উপরে ছিলাম , সায়ন ভাইয়া নিচে ছিল ।

– আর কতো বেচারাকে ভাইয়া বলে ডাকবে ?

– আমার ইচ্ছা ! বিয়ের পরেও ডাকবো ভাইয়া বলে !

আবরন হেসে বলল ,

– তাই নাকি ?

পূর্ণতা বলল ,

– হুম , এখন যান গিয়ে চেঞ্জ করে আসুন ।

আবরন হেসে বলল ,

– তুমিও চলো আমার সাথে !

– আমি কেন ?

আবরন আশে পাশে তাকিয়ে দেখল মাঠে কেউ নেই । তাই পূর্ণতা কে পাজকোলা করে নিয়ে বলল ,

– আমাকে হেল্প করতে হবে !

– কি করছেন টা কি ? কেউ দেখলে ভুল ভাববে !

– কেউ নেই , সবাই ব্যস্ত ।

পূর্ণতা আবরনকে শক্ত করে ধরতেও পারছে না কারন ওর শরীর ভেজা । পূর্ণতা চোখ মুখ বন্ধ করে কুচকে বলল ,

– আমি পড়ে যাবো , আমি আপনাকে ধরতে পারছি না ।

আবরন পূর্ণতা কে আরো শক্ত করে ধরে বলল ,

– নাও , আমিই ধরলাম শক্ত করে । এখন আর পড়বে না ।

পূর্ণতা চোখ খুলে আবরনের দিকে তাকালো । চুলগুলো ভেজা আর মুখে পানির বিন্দু গুলো আলোতে চিক চিক করছে । খোচা খোচা দাঁড়ির গোড়ায় পানির বিন্দু জমে আছে । আবরনকে দেখতে অন্যরকম লাগছে একদম ।

পূর্ণতা আবরনের রুমে ওর ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
আবরন ভেতরে চেঞ্জ করছে আর ওকে বলেছে বাহিরে দাঁড়িয়ে এক পা ও নড়তে না , তা নাহলে পরে খবর আছে ।

পূর্ণতা ও দাঁড়িয়ে আছে ।

আবরন বলল ,

– কাল গায়ে হলুদ আমাদের তাই না ?

পূর্ণতা বলল ,

– আমাদের না শুধু জল আপু , নাদিরা ভাবি , ভাইয়া আর সায়ন ভাইয়ার‌ও ।

– তা তো ঠিক । কালকে মজা হবে ।

পূর্ণতা বলল ,

– একটা সত্যি কথা বলবেন ?

– বলো !

– আপনি জল আপুকে ভালোবাসেন তাই না ?

– না ।

– তাহলে বিয়ে করছেন কেন ?

– তুমি সায়নকে ভালোবাসো ?

– উহু ।

– তাহলে বিয়ে করছো কেন ?

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে আর কি বলবে বুঝলো না ।

আবরন বেরিয়ে আসতেই বলল ,

– চলো ।

এর‌ই মধ্যে দরজায় টোকা পড়ল ।

আবরন পূর্ণতার হাত ধরে ওকে পেছনে দাঁড় করিয়ে ওর হাত ছেড়ে দরজা খুলে দেখল বাহিরে জল দাঁড়িয়ে আছে ।

আবরন বলল ,

– তুমি এখানে ?

– মামিমা তোমাকে নিতে পাঠালো ।

আবরন পূর্ণতা কে বের হতে বলে নিজেও রুম থেকে বের হয়ে দরজাটা লক করতে করতে বলল ,

– আমি কি বাচ্চা নাকি যে আমাকে নিতে আসতে হবে ?

জল হেসে বলল ,

– সবসময় মজা নাও তুমি ।

আবরন দরজা লক করে জলের হাত ধরে বলল ,

– চলো , আমাকে নিয়ে চলো ।

আবরন জলের হাত ধরায় জল আবরনের দিকে তাকিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকালো ।

পূর্ণতা বিষয়টা দেখে বলল ,

– আমি যাচ্ছি । আপনারা আসুন ।

পূর্ণতা এই বলে কিছুটা জোরে হেঁটেই সেখান থেকে চলে গেল ।

পূর্ণতা ছলছল চোখ নিয়ে এই বাংলো ছেড়ে বের হয়ে মাঠ টা দৌড়ে পাড় হয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে পা রাখতেই সায়নের সাথে দেখা । পূর্ণতা কে দেখে সায়ন বলল ,

– তোমাকে আনতে যাচ্ছিলাম ! মামনি বলছিল ……..

সায়ন কথা বলে শেষ করার আগেই পূর্ণতা সায়নের হাত ধরে বলল ,

– আমি আপনাকেই বিয়ে করবো । আপনি কোথাও যাবেন না ।

সায়ন পূর্ণতার এমন আচরনে কিছুটা অবাক হলেও পরে ওকে বলল ,

– সত্যি বলছো ?

পূর্ণতা মনের কথা লুকিয়ে সায়নের হাত টেনে দোতলায় নিয়ে যেতে যেতে বলল ,

– হুম , সত্যি । আমি আপনাকেই বিয়ে করবো ।

সায়ন বলল ,

– ঠিক আছে ।

– খালামনি আসে নি ?

– এসেছে তো । সেজন্যই তো তোমাকে মামনি আনতে পাঠালো ।

– ওহ , চলুন । দেখা করি গিয়ে ।

– চলো ।

…………………………………………………

রেস্টুরেন্টের দোতলাতেও খাবারের ব্যবস্থা থাকে অন্যসময় । কিন্তু অনুষ্ঠানের জন্য রুমটা থেকে সকল চেয়ার টেবিল সরিয়ে এখানেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ।

রুমটা বিশাল বড় । এপাশ থেকে ওপাশে হেঁটে যেতে কমপক্ষে ১ মিনিট লাগবে । সেখানেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে ।

রুমটা কালারিং নেট , স্ট্রিং লাইটস , ফে‌ইরী লাইটস আর বিভিন্ন কালারিং আর্টিফিশিয়াল ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ।

দুইপাশে দেয়ালের সাথে মিলিয়ে বিয়ের তিন জুটিকে বসিয়ে মেহেদী পড়ানোর জন্য আর হলুদ দেওয়ার জন্য উচু করে ছোট খাট আকৃতির জায়গা বানানো হয়েছে । সেখানেও সুন্দর ভাবে ডেকোরেইট করা ।

সায়ন আর পূর্ণতা সবার সাথে দেখা করে পাশাপাশি একটা জায়গাতে বসে পড়তেই মিলি রহমান আর সায়নের মা শিউলি রহমান ওদের সামনে এসে বলল ,

– বাহ , বেশ ভালো মানিয়েছে তো ওদের ।

সায়ন মুচকি হেসে বলল ,

– আম্মাজান , বাবা আর অয়ন কখন আসবে ?

শিউলি রহমান বললেন ,

– ওরা বাপ ছেলে আজ রাতের ফ্লাইটে র‌ওনা হচ্ছে ।

পূর্ণতা সায়নকে আস্তে করে বলল ,

– খালু আর অয়ন যে আসবে আমি তো জানতাম না !

সায়ন বলল ,

– বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা !! আসবেনা ??

পূর্ণতা হাসল ।

তিন জুটি তিন স্টেজ আকৃতির খাট গুলোতে বসতেই ওদেরকে মেহেদী পড়ানো শুরু হলো ।

এক স্টেজে আবরন আর জল , অন্য স্টেজে জিব্রান আর নাদিরা এবং অপর একটা স্টেজে পূর্ণতা আর সায়ন ।

সব কাজিন এবং আত্মীয় স্বজনরা ভিড় জমিয়েছে ছবি তোলার জন্য । সায়ন হেসে বলল ,

– ডিড ইউ সি দ্যাট ? আমাদের তিন জুটির বিয়ে আর আমরাই অগাছালো ভাবে এখানে বসে মেহেদী দিচ্ছি আর বাকিদের দেখো সেজে গুজে কি সুন্দর ছবি তুলছে ! কি যেন একটা কথায় বলে না !! আমি ভুলে গিয়েছি !

পূর্ণতা বলল ,

– যাদের বিয়ে তাদের খবর নাই আর এদিকে পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নাই ।

সায়ন হেসে বলল ,

– এক্সাক্টলি !!

এদিকে জল আর আবরনের হাতে মেহেদী লাগানো হচ্ছে । জল আবরনকে আস্তে করে বলল ,

– তুমি পূর্ণতা কে কষ্ট দিলে কেন ?

– কষ্ট দিলাম কোথায় ?

– ও কষ্ট পেয়েছে তুমি আমার কাছে আসায় !

– কি আশ্চর্য ! ও কেন কষ্ট পাবে ? ওর তো সায়নের সাথে বিয়ে । আর তোমার আমার সাথে বিয়ে , আমি তোমার হাত ধরতে পারি না ?

– কিন্তু !

– কিন্তু কি ?

– আমি তো চাই না তোমাকে বিয়ে করতে !

– কেন ?

– কারন আমি ইদানিং অন্য একজনকে নিয়ে ভেবে বেড়াচ্ছি ।

– আর ভেবে লাভ নেই ! কাল বাদে পরশু বিয়ে !

– হুম ।

জিব্রান নাদিরাকে বলল ,

– সব ক্রেডিট কিন্তু পূর্ণতার !

নাদিরা বলল ,

– হুম , ওর জন্য বিয়ের পরের দিন আমি আর তুমি মিলে সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করবো ।

– ঠিক আছে ‌।

এদিকে বাকিরা অপেক্ষা করছে বর কনের মেহেদী পড়ানো শেষ হলে ওরা ও বসবে মেহেদী পড়তে ।

ধুম ধাম করে বিয়ের আয়োজন হয়েছে তিন জুটির জন্য । সকলে খুশি কিন্তু কেউ কেউ খুশি হয়েও খুশি না । এটাই হয়তো নিয়ম । সবাই ই যদি খুশি হতো তাহলে তো দুনিয়ায় সবাই ই সুখী হতো । কাউকে দুঃখ পেতে হতো না । কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবতা মেনেই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় । কারন , কারো জন্য জীবন তো আর অন্য কারো জন্য থেমে থাকে না ।

এমন ভাবনা নিয়েই পূর্ণতা অবশেষে সায়নকে বিয়ে করবে বলে মন স্থির করেছে ।

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ আমার হঠাৎ সায়নের জন্য কষ্ট লাগছে ! মন চাইছে স্যাড এন্ডিং দিতে ।কারন , সায়নের কথা শুনে মায়া হচ্ছে ।
কি যে হবে ! কে জানে !

গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবনে । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here