ভুলবশত পর্ব-১৯

0
2384

#ভুলবশত♥
#PART_19
#FABIYAH_MOMO🍁

🍁
এ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ হচ্ছেনা। সাইরেন অফ। রাত এখন দুইটা একত্রিশ কেবলমাত্র জানলাম। হু হু করে গাড়ি হাইওয়ের উপর দিয়ে ছুটে চলছে। আমি এম্বুলেন্সের ভেতরে জানালার পাশে হেলান দিয়ে বসেছি। জানালা সব বন্ধ। শুধু একটুমাত্র ফাকঁ রেখে জানালাটা আধবন্ধ রেখেছি। আমার চুল এলোমেলো হয়ে অনেকটা বিশ্রী আকার ধারন করেছে। গা থেকেও ভ্যাপসা গন্ধ বেরিয়ে আসছে। বর্তমানে আমি চিন্তা করছি সাগ্রতকে নিয়ে। গাড়িতে উঠার পর পরই সে একটা ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। এখনো ল্যাপটপ নিয়ে টুপটাপ টাইপিংয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। গাড়ির ভেতরে অন্ধকার, কোনো লাইট দেওয়া হয়নি, বাইরেও কোনো আলোক উৎস নেই। মাঝে মাঝে দু একটা নিয়ন বাতির মর্তমান খাম্বা পাস করছে, তার আশীর্বাদে সাগ্রতকে একপলকের মতো দেখা যাচ্ছে। নিয়নবাতি অতিক্রম করলেই সব আবার কালো অন্ধকার। অদ্ভুত ভাবে পরিবেশটা থমকে গেছে। কোথাও কোনো সাড়া নেই, নেই কোনো প্রাণ। বাতাসে চুলগুলো উড়ছে, আমি মুখ থেকে চুল সরিয়ে কানের পিছনে গুজে নিচ্ছি। যতবার চুল এমন হচ্ছে ততবার একই কর্ম করতে যেয়ে বিরক্তির মধ্যে পড়ছি। হঠাৎ কেউ ঠান্ডা সুরে বলে উঠলো-

–জানালাটা বন্ধ করে দাও স্নেহময়ী। বাইরের হাওয়া খেতে হবেনা।

আমি চুল গুজা বাদ দিয়ে সাগ্রতের কথায় থমকে তাকালাম। ল্যাপটপে হাত দিয়ে এখনো স্পিডে টাইপ করছে সাগ্রত। ল্যাপটপের অন স্ক্রিন থেকে আসা অল্প আলোয় সাগ্রতকে দেখতে পাচ্ছি। সাদা শার্টটা এখন আর সাদা বর্নে নেই। ধূলো মাখা ধূসরবর্ণে ছোপ ছোপ হয়ে আছে পুরো শার্ট জুড়েই। শার্টের বাপাশটা শুকনো রক্তের কারনে শক্ত চটচটে হয়ে গেছে। কানের পাশে লম্বাটে টাইপ রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে, হাতাটা কনুইয়ে ভাজ করা বিধায় দেখতে পেলাম সাগ্রতের হাতে নানা জায়গায় চিড়ে গেছে।। লাল হয়ে রক্ত জমে আছে, কোথাও কোথাও উচু হয়ে ফুলেও উঠেছে। ক্ষতবীক্ষত শরীর, চাবুকের শ’ঘাত মারপিট, সারাদিনের ক্লান্তিকর বিষাদ নিয়ে শক্ত হয়ে কাজ করছে সাগ্রত। যেন তার কিছুই হয়নি, কোনো ব্যাথা বা ছেড়াফাড়া তো দূরে থাকুক, সদ্য ঘুম থেকে উঠে ক্লান্তিহীন নজরে ল্যাপটপে কাজ করছে। আমি সিটে পা তুলে পা সোজা করে পেছন সিটের সাথে হেলে বসলাম। চোখ শুধু সাগ্রতকে দেখছে, মন উজাড় করে শান্ত মায়ায় দেখছে। সাগ্রত গলা ঝেড়ে কেশে বলে উঠলো-

–আমায় এভাবে কেনো দেখছো স্নেহময়ী??দূরে যাওয়ার জন্য ত্রুটি খুজছো ? আমার শরীরে এমনেতেই সেলাইয়ের দাগ, ভ্রুটার কাছে ছোট্ট সেলাই।। তবুও বলছি, আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার জন্য সেলাইয়ের অজুহাত দেখাতে হবেনা স্নেহময়ী। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো আমি তোমায় নিরাপদে রেখেই চলে যেতে চাচ্ছি, আর কিছু না।।

আমি মুখ ফিরিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আছি। অসহ্য লাগছে সাগ্রতের কথা! সাগ্রত চলে যাবে কেন? কেউ ওকে চলে যেতে বলেছে? একলাইন বেশি বুঝে কেন এই ব্যক্তি ! ধ্যাৎ ! কথাই বলবো না! কথার পিঠে কথা আর ভালো লাগেনা।।।

.
.🍁
হাইওয়ের রাস্তাটায় আরো ঘন্টা দুয়েক কাটলো।। তারপর এসে থামলো নিরবপুরীর বাঙলোর মতোন বাড়ির সামনে। ভাঙ্গা লোহার গেট দিয়ে এম্বুলেন্স গাড়িটি সম্পূর্ন ঢুকলো। গেট ভাঙা অথচ লাইটিং ব্যস্থা খুব ভালো। আলোকিত হয়ে আছে বাঙলোর গেট সহ ভেতরকার পরিবেশ। সাগ্রত সবার আগে নেমে ড্রাইভারের সাথে কিছু গোপন কথা আলোচনা করলো। কথাগুলো ছিলো এমন,
‘ফার্দার যদি সেম মিস্টেক দেখি তোমার কপাল ঝাঝড়া করতে সময় নেবোনা! আমি যে এখানে আছি, কেউ যেনো ভুল করেও আন্দাজ করতে না পারে! কেউ না মানে কেউ না ! আন্ডারস্টেন্ড? অল ক্লিয়ার?’

‘জ্বি স্যার! ফুল ক্লিয়ার!’

সাগ্রতের সাথে বাঙলোর ভেতরে যাচ্ছি। লোহার ভাঙা গেট দিয়ে ঢুকে লম্বা ঘাসপূর্ণ রাস্তার উপর পা বারিয়ে হাটছি। ইটের কারুকার্যে রাস্তা বাধানো, তবে রাস্তার উপর ঘাসের সবুজ আস্তরন মিলিয়ে আছে। সাগ্রত পকেটে হাত ডুবিয়ে ধীর পায়ে হাটছে। আকাশ পরিস্কার। কালো রঙের চাদরের মধ্যে ঝিকমিক করে জ্বলছে লক্ষ হাজার তারা। পাতার মর্মরতার শব্দে বাতাসের হাতছানি টের পাচ্ছি। সাগ্রত নিচের ঠোটটা দাঁতে কামড়ে চুপচাপ হাটছে, বাতাসের পরশে চুলগুলো উড়ে উড়ে ছুটছে। দুজনের মধ্যে চলছে পর্বতসমান নিরবতা। কেউই মুখ খুলে নিরবতার সুক্ষ্মতা ভেঙে কথা বলছিনা। বাঙলোর মেইন কপাটের সামনে এসে সাগ্রত একটা উটকো কাজ করলো। কাজটা দেখে কয়েক মিনিটের জন্য হতবাক ছিলাম, ও এটা কি করলো মাথায় প্যাঁচ পাকিয়ে হা মেরে দেখলাম। দরজায় অনেকগুলো নিরাপত্তা সিস্টেম। মোটমাট বারোটার মতো চেকআউট দিয়ে দরজা খুলতে হলো। দরজা খুলে দিতেই সব লাইট একসাথে জ্বলে উঠলো। আমি অবাক হয়ে সব নিখুঁত চোখে দেখছিলাম। কেমন উদ্ভট সিস্টেম? বাড়ির দরজা খুলতেই ভেতরের লাইটগুলো আপনাআপনি অন হয়ে গেল?? কষ্ট করে অন্ধকারের মধ্যে বোর্ড সকেট খুজতে হলোনা?? অদ্ভুত !

দোতলার এই বাঙলোটি নতুন হলেও মানুষ থাকেনা বোধহয় বহুদিন ধরে। বন্ধ ঘরের দরজা খুললে বিকট একটা গন্ধ আসে, ঠিক এখানেও আমি গন্ধ পেলাম।। সাগ্রত দ্রুত নিচতলার একটা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আমি একা এখানে দাড়িয়ে কি করবো? তাই সাগ্রতের পেছনে রুমের ভেতরে গেলাম। রুমে ঢুকতেই সাগ্রত বলে উঠলো-

–দেখো তো এই রুমে থাকতে পারে কিনা!! দোতলার রুমগুলোর সিচুয়েশন মেবি থাকার মতো না, আজ রাত তোমাকে এখানেই কাটাতে হবে স্নেহময়ী। এই রুমটা একটু পরিস্কার। এই রুমে স্বাধীন এসে থাকতো। তোমার জন্য সেকেন্ড ফ্লোর ডিসাইড করলেও আপাতত ওখানে ঘুমানোর মতো কর্ম্ফটেবল পাবেনা। এখানেই থাকো।

আমি এই রুমে থাকবো শুনে ফট করে সাগ্রতের শোবার কথা জিজ্ঞেস করে বলে উঠলাম –

–তাহলে তুমি কোথায় ঘুমাবে?রুম না একটাও থাকার মতো ক্লিন না। তাহলে তুমি কোথায় শুবে? বাইরে?
সাগ্রত হাসতে হাসতে বললো-
–ধুর বোকা! পাগল নাকি।। আমি বাইরে ঘুমাতে যাবো কেন? আমার আবার এক্সট্রা প্লেস লাগে নাকি? তোমার রুমের বাইরেই সোফা টেনে শুয়ে পড়বো।
–আশ্চর্য তো! তুমি রুমের বাইরে কেন ঘুমাবে!
–তোমাকে পাহারা কে দিবে? রাস্তার ঘেউঘেউ কুকুর? তোমার কেয়ারের জন্য আমি এসিসটেন্ট আনিনি, ওকে! শোনো স্নেহময়ী, তোমার টেককেয়ার নিয়ে আমার কারোর উপরই এক ছটাক পরিমান বিশ্বাস কাজ করছেনা। তাই নিজেই তোমার সেইফটির দায়িত্ব হাতে নিচ্ছি। এতে তোমার বিরাট সমস্যা হলেও আমার এতে কিচ্ছু করার নেই।
–আমি অবশ্যই দুধের বাচ্চা না তাশরীফ সাগ্রত! নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি! তুমি বরং বেশি কেয়ারনেস দেখাচ্ছো যেটা একদমই ভালো হচ্ছেনা!
–কতটুকু খেয়াল রাখতে পারো তা একা থাকতে দিলেই টের পাবা। দেখো রাত অনেক হয়েছে। তর্ক করো না। একটুপর আযান দিয়ে ভোর হয়ে যাবে, তারপর আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। জাস্ট আজকের কিছু সময়ের জন্য রুমটায় থাকো! আমাকে রুমের বাইরে পাহারা দিতে দাও। প্লিজ!
–ওকে!

জোকের মতো চিপকে রইলো তাশরীফ সাগ্রত। আমার কথা আদৌ সে কানে নিয়েছে কিনা সন্দেহ!! আমি বিছানা ঝেড়ে কোনোরকমে সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম।। দরজা পুরোপুরি লক না করলেও কিছুটা ফাক রেখে খোলা রেখেছি। সাগ্রত রুমের বাইরে পাহারাদের মতো সোফা টেনে শুয়েছে। ঘড়ির টিকটিক শব্দ পেয়ে ঘড়ির সন্ধানে রুমের চারিদিকে তাকাচ্ছি। হঠাৎ চোখ গেল রুমের কোনায় আমার ঠিক সামনের দেয়ালে। সেখানে একটা বড় ঘড়ি ঝোলানো। রেডিয়াম ঘড়ি। আলো জ্বলছে। রুমের লাইট অফ করলেও বাইরের লাইটে রুমের সবই অনেকটা দেখা যাচ্ছে। এপাশ ওপাশ করেও আমার ঘুম আসলো না।অনেক চেষ্টা করলাম ঘুম আমার চোখের পাতায় সন্ঞ্চার হলো না। আমি আধশোয়া হয়ে উঠে বসলাম। কোলে একটা বালিশ নিয়ে নিয়ে বসতেই দরজা খুলে যেতে লাগলো। দরজা কেন খুলছে? দরজাও কি আপনাআপনি খুলে? বাতাসের ধাক্কায় দরজা খুলছে? কই? নাতো! বাতাস তো কোথাও নেই। রুমের মধ্যেও ফ্যান ঘুরছেনা, চলছে একটা এসি! তাহলে কে খুলছে? আমি স্থির হয়ে বালিশ আকড়ে দেখছি। একটুপর পুরো দরজা খুলে গেল। দরজা খুলতেই উকি দিলো সাগ্রত। আমাকে সজাগ দেখে সাগ্রত ভ্রু কুচে আমার দিকে কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা ভাবছে সে। পরক্ষনেই লাইটের সুইচ টিপে রুমে ঢুকলো সাগ্রত। আমায় প্রশ্ন সূচকে জিজ্ঞেস করলো-

–তুমি এখনো ঘুমাওনি স্নেহময়ী? ঘুমাতে কোনো বিঘ্ন ঘটছে? এসি কি চলছেনা?

একাধারে প্রশ্নের মোড়কে থাকা প্রশ্নঝুলি আমার কাছে ছুড়ে দিয়ে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে সাগ্রত। আমি কোলের বালিশটি পাশে রাখতেই বলে উঠলাম-

–ঘুম আসছেনা…

সাগ্রত উত্তর পেয়ে দাড়িয়ে থাকলো না। আমার কাছে আসলো। বিছানায় আমার বিপরীত পাশে মুখোমুখি হয়ে বসলো। মুখের ভঙ্গি বলে দিচ্ছে, সাগ্রত আরো প্রশ্ন করতে রেডি হচ্ছে। হাত মুঠো করে মুখের কাছে এনে একটু কেশে গুছানো কথা বলা শুরু করলো সাগ্রত,

–তোমার ঘুম না আসলে আমরা কিছুক্ষণ গল্পগুজব করতে পারি?
–পারো।
–সমস্যা হবে না?
–কিসের সমস্যা?
–আচ্ছা ঠিকআছে। তবে শুরু করি… কি বলো?
–আজ আমি শুরু করতে চাই। তুমি উত্তর দিবে শুধু।
–অবশ্যই।
–কে তুমি? কি তোমার পরিচয়?
–………….(মুচকি হাসছে সাগ্রত উত্তর দিলো না)
–কি ব্যাপার হাসির জোক বলেছি? হাসছো কেন?
–না না সরি সরি…ওই এই আরকি!
–এই আরকি কি? হাসির কিছু তো বলিনি যে তোমার হাসতে হবে? যা জিজ্ঞাসা করা হয়েছে জলদি জলদি বলো।।
–তুমি অবাক হবে না আবার?
–তুমি উত্তর না দিলে আমার রাগ হবে! বুঝছো!
–আচ্ছা আচ্ছা বলছি….স্নেহময়ী।।। বলছি।। আমি তাশরীফ সাগ্রত। পেশায় গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্টের সিক্রেট ইনফরমার। আমি সবার সামনে আত্মগোপন করে চলি। আমার নাম, ঠিকানা, ব্যাকগ্রাউন্ড সব ডিটেলস অনলি হেড ডিপার্টমেন্ট জানে। সেকেন্ড কোনো পার্সন আমাকে চিনেও না, জানেও না। আমার কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। যখন যেদিকে আমার প্রয়োজন হয় আমি তখন সেদিকে ছুটে চলি….

সাগ্রত গড়গড় করে সবগুলো কথা শেষে লম্বা নিশ্বাস ছাড়লো। নিশ্বাস ছেড়ে আবার বলে উঠলো-
–তুমি প্লিজ পাচঁটা মিনিটের জন্য এক্সট্রা কোয়েশ্চ্যান করো না স্নেহময়ী। আমি তোমার প্রশ্নের জবাব দেবোই। আজ কোনো ‘না’ না। সবই বলবো। প্রথমে বলতে চাই…আমি তোমাকে শাপলা চত্বরে দেখেছিলাম। আমি একটা স্মাগলারের পিছনে ডিউটিতে ছিলাম। তুমি সাফার সাথে সিএনজির মধ্যে জামে আটকা ছিলে, সাফা ফোনে কারোর সাথে ব্যস্ত ছিলো, তুমি ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ঘড়ি দেখতে ব্যস্ত ছিলে। তোমার সিএনজির ঠিক পিছনের গাড়িতেই স্মাগলারটা চড়ে বসলো। আমি বন্দুক নিয়ে দূর থেকে দূরবীনের সাহায্যে স্মাগলারকে টার্গেট করছিলাম। বাট! জানো? বেহায়ার মতো চোখদুটো বারবার তোমার দিকে যাচ্ছিলো।। আড়চোখে, ডানদিকে, বামদিকে যেদিকেই চোখ ঘুরাই ঘুরেফিরে তোমার দিকে আটকালো। আমি নিজের উপর কন্ট্রোল হারাচ্ছিলাম। নার্ভাসনেসে হাত তো কাপলো! মাথার ব্রেন, বুকের হৃদযন্ত্রে, হাতে সবখানে কাপতে লাগলো! আমি স্মাগলারকে ধরতে পারিনি মিস করলাম। তারপর থেকে রাতে ঘুমাতে পারিনি, খাওয়া-দাওয়া গলা দিয়ে বিধে নামলো। আমি ডিসিপ্লিন ভুলে খতম হয়ে যাচ্ছিলাম। তোমায় না দেখে চোখ তৃষ্ণায় ভুগছিলো! মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো! ডিপার্টমেন্টের ডেস্কে বসেও তোমার চেহারা দেখতাম! ভাবতাম! অজান্তেই কি ভেবে খিলখিল করে হাসতাম! আবার বিষন্ন হয়ে যেতাম! হেড স্যার ডেকে পাঠালেন। বললেন, ‘সাগ্রত তোমার কি অসুখ হয়েছে? আর ইউ ওয়েল ইয়াং ম্যান?’ আমি সেদিন আধা সত্য, আধা মিথ্যা বলেছিলাম। আমি স্যারকে বললাম, স্যার আ’ম প্রিটি ওয়েল। আমি ঠিক আছি। শুধু নিজেকে নিয়ে অগোছালো হয়ে খেছি। আই নিড টাইম!’ স্যার ছুটি মন্জুর করলো। আমি তোমার খোজ নিতে গিয়ে এগারো দিনের মাথায় হোল ইনফরমেশন কালেক্ট করলাম। ‘টুলেট’ বসানো ফ্ল্যাটে ভাড়ায় আসলাম। কেউ যেনো ডাউট না করে তাই ডিপার্টমেন্টে কাজ করা বুয়াকে টাকা দিয়ে খালা বানিয়ে পরিচয় দিলাম।দ্যান শুনি, তোমার ফুপি খুবই বাজে মানসিকতার মহিলা। ভাতিজিকে নিয়ে যত্তসব বাজে চিন্তা ছিলো। পারলে তোমাকে হাতবাজারে বেচে টাকা কামিয়ে নিতো।। তোমার ফুপুর তথ্য বের করলাম। তোমার বাবা রেখে যাওয়া অনেক জিনিস একাই আত্মসাৎ করেছে যা তুমি নিজেও জানো না। একদিন সাফা কিডন্যাপ হলো! ভাগ্যের লীলাখেলা দেখো! সেদিন আমার এ্যাপেনডিক্সের পেইন শুরু হলো। খবর পেলাম, সাফার কিডন্যাপ হয়েছে। তুমি পাগলের মতো দিনরাত ওকে খোজার নেশা আছো। একটা সত্যি বলি??বিশ্বাস করবে? আসলে, সাফা বিয়ে করে ফেলেছে….

অবাকের সপ্ত আকাশ থেকে পড়লাম বুঝি! সাফা আপু বিয়ে করে ফেলেছে? কি বলছে? আমি চোখ বড় বড় করে কিছু জোর গলায় বললাম-

–কিহ্! কি বলছো এসব!
–সত্যি বলছি। সাফা বিয়ে করে ফেলেছে। নাহলে তুমিই ভাবো! একটা মেয়েকে কিডন্যাপ করে কি নিজের কাছে রাখবে? কল দিয়ে ডিমান্ড করবে না? আদৌ কি কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে কল এসেছে?
–………….
–কি হলো, বলো? কোনো কল এসেছে?
–না…
–ইটস ক্লিয়ার ওর বিয়ে করেছে। আমি নিজে এ বিষয়ে ইনফরমেশন জোগাড় করেছি ! আর সেটা একশো ভাগ সত্য! সাফা তার এক্স বয়ফ্রেন্ড হাসিবকে বিয়ে করেছে! হাসিব কে চেনো? চেনার কথা তো! তোমার ছোট মামার ছেলেকেই চিনো না?
আমার অবস্থা চক্ষুচরগ গাছ! সাগ্রত একের পর এক ঘটনার ভয়াবহ খোলাসা করে দিচ্ছে। সাগ্রত সব জানে! সব মানে সব! সে সব জানা সত্ত্বেও চুপ!

–এটাই ভাবছো সাফার সাথে হাসিবের মিল কিভাবে হলো? এটারো আন্সার দিচ্ছি…..সাফা আর হাসিব একই ক্যাম্পাসে পড়ে। আর সেম ক্যাম্পাসে তুমিও পড়ো। বাট তুমি সাফার ঘটনা সম্পূর্ণ জানলেও কিছুটা ঝাপসা ছিলো। যেমন, হাসিবের থাকা রিলেশন থাকাকালীন তুমি জুয়েলের সাথে রিলেশনে ছিলে। তুমি তোমার বোনের বফকে দেখার সুযোগ পাওনি। এমনকি বফের আসল পরিচয় কি সেটাও জানতে না। হাসিব কিন্তু জানতো তুমি সাফার মামাতো বোন। তবুও বেচারা মন দিয়ে বসেছে। হাসিব আবার জেদী ছেলে। সাফা একসময় রিলেশনের রদবদল করলে হাসিবের রাগের কারনে ব্রেকআপ হয়ে যায়। কিন্তু হাসিবের জেদীপনা সাফাকে কিডন্যাপ করে বিয়ে পযর্ন্ত জেদ আগায়। সো….দ্যা আর মেরিড স্নেহময়ী। আউট অফ কান্ট্রি! একটু আগে হট নিউজ পেলাম! সুইজারল্যান্ডে গা ঢেকে থাকছে তারা। কজ, তোমার মামা টোটালি বিয়ের বিপক্ষে! হাসিবও এদিকে চাল ঘুরিয়ে বিয়েশাদি করে অন্যদেশে পাড়ি জমিয়েছে। ইন্ট্রেসটিং না?

-চলবে

-fabiyah_momo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here