ভুলবশত পর্ব-২১ শেষ পর্ব

0
2931

#ভুলবশত ♥
#PART_21_LAST
#FABIYAH_MOMO🍁

🍁
সাগ্রত বাকা হাসছে। ওর হাসিতে চাপা কষ্ট। হাসিতে কিছুটা সুখ জড়ানো বাকিটা জুড়ে দুঃখ। হাসিটা এমন লাগছে কেন? যেন ওর কিছু হয়েছে? কিছু বলতে চেয়েও আমার কাছে লুকোচ্ছে? কি লুকোচ্ছে? গায়ে কালো পোলোশার্ট। কালো প্যান্ট। হাতের বড় ঘড়িটা ঢিলে হয়ে গেছে, যেকোনো মূহুর্তে খুলে পড়বে। হাসিটা বিলিন হয়নি, এখনো হাসছে, চোখে ভারাক্রান্ত চাহনি।। কি ব্যাপার ওর হাত কেন কাপছে? আবার সম্পূর্ণ শরীর রোগা দেখাচ্ছে কেন? শরীর ঘেমে ভিজে গোসল হয়ে যাচ্ছে। ওটা কি… লাল লাল বর্ন! ঘামের তরল কি স্বচ্ছ না হয়ে লাল হয়?? আমি দেখে হতভম্ব! শার্ট থেকে লাল রক্ত বেরুচ্ছে! লাল রক্ত! সাগ্রতের মাথা থেকে রক্ত বেরুচ্ছে? কই নাতো! হাত তো পরিস্কার? কোথা থেকে রক্ত বেরুচ্ছে?
আমি হঠাৎ খুব জোরে ধাক্কা খেলাম। ধাক্কার বেগে আমি চোখ খুলে দেখি সকাল হয়ে গেছে। আমি বিছানায় শুয়ে আছি। সাগ্রত আমার দিকে ঝুকে আছে। আমি ঢোক গিলতে গিলতে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। একটু আগে যে স্বপ্ন দেখলাম এর মর্ম কি ছিলো? সাগ্রতের শরীর থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ছে মানে কি ছিলো স্বপ্নটার?? কোনো বিপদ হবে? ক্ষতি হবে কারো? সাগ্রত আমার হাত ঝাকিয়ে বলল,

–স্নেহময়ী! তাকাও! হয়েছে কি তোমার? ঘুমের ঘোরে চিল্লাচ্ছো কেন? কার রক্ত পড়ছে? কার কথা বলছো?

আমি সাগ্রতের দিকে তাকালাম। সাগ্রত একটা হোয়াইট টিশার্ট পড়ে আছে। প্যান্ট কাল রাতেরটাই পড়নে। আমার কাছে প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে সাগ্রত অস্থির সুরে বলে উঠলো,
–কি হলো এভাবে তাকিয়েই থাকবে? উত্তর দিবে না? বলো কি হয়েছে? স্নেহময়ী বলো প্লিজ।। টেনশানে ফেলে দিচ্ছো আমায়!
আমি ভীত কন্ঠে গলার স্বর নামিয়ে বলে উঠলাম,
–পানি খাবো!
সাগ্রত টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো পানি খেতে। আমি সম্পূর্ণ খেয়ে আমি কিছুটা স্থির ঠান্ডা হলে সাগ্রত প্রশ্ন করে বসে,

–তুমি খারাপ স্বপ্ন দেখেছো তাই না?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা-সূচকে ইঙ্গিত বোঝালাম। ও বুঝলো। বুঝে রুমে বাইরে গিয়ে আমার সামনে ট্রে ভর্তি খাবার রাখলো। আমি বুঝতে পারছি আজ এই সবগুলা খাবার সাগ্রত আমায় খাইয়ে ছাড়বে। আমি নাকোচ করলে অন্য কৌশল খাটিয়ে ঠিকই খাওয়াবে। এমনেতেও পেটে খিদের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, খাবার না খেয়ে কাহিনি করলে শক্তি পেতে হবেনা। সাগ্রত নিজেও খেলো সঙ্গে আমিও খেলাম। খাওয়া শেষে ও বললো,

–স্নেহময়ী? তুমি তোমার মামাকে এড্রেস দেওয়ার পর আমরা এখানে আর থাকছিনা। আমরা ঠিকানা বদলাবো। অন্য কোথাও যাবো। এখানে আমরা থাকাথাকি নিয়ে রিস্ক নিবো না। কেমন? রেডি হও।

ট্রে নিয়ে চলে গেল। আমার বিছানায় সাগ্রতের ফোনটা এখনো পড়ে আছে। ফুপিকে কল করে সব বিষয়ে খোলামেলা ডিসকাস করবো কিনা বুঝতে পারছিনা। একবার মনে হয় সাফা আপুর ঘটনা পুরোপুরি বলে দিলেই ঠিক হয়, আবার মনে না থাক…কাউকে কিচ্ছু জানাতে হবেনা। কি করবো ভেবে ফুপির নাম্বারে ডায়াল করলাম। ফোনে রিং হচ্ছে, ফুপি রিসিভ করছেননা সময় নিচ্ছেন। একপর্যায়ে ফোন রিসিভ হলে ফুপি ওপাশ থেকে বলে উঠেন, ‘–কে?’। আমি ফোন কানে নিয়ে থম মেরে ‘কে কে’ শুনছি। ফুপি ঝংকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘–কথা বলবি না তো ফোন দিয়ে বসে আছিস কেন বদ! কে অন্তত বলবি তো!’। ফুপির ধমকানি সুর শুনে বিষম খেলাম আমি।

–স্নেহা বলছি ফুপি,
–স্নেহা?? তুই কোথ…
–আমি কোথায় পরে বলছি ফুপি। সাফা আপুর খোঁজ পাওয়া গেছে। তুমি আগে ওয়াদা করো আমি যা বলবো তা শোনার পর অটল থাকবে! দেখো ফুপি কঠিন ওয়াদা করবে!
–স্নেহারে সাফার কিছু হয়ে…..
–ফুপি ওয়াদা কর প্লিজ।। আমি সব বলবো।। কিন্তু সাফা আপু সুস্থ সবল আছে কিচ্ছু হয়নি! সিউর থাকো!
–মা রে কঠিন ওয়াদা দিস না কিন্তু…মায়ের মন ভাঙলে কষ্ট সইবো না…
–ফুপি….আসলে.. সাফা আপু সুস্থ আছে। আপু একদম ঠিকঠাক আছে। ঘটনা হলো…আপুর কিডন্যাপ হয়নি। আপুকে কেউ তুলে নিয়ে গেলেও সে আপুকে বিয়ে করে ফেলেছে। আপুর প্রাক্তন হাসিব সেদিন কিডন্যাপ করেছে।

ফুপির কন্ঠস্বর কান্নাটে থেকে বদলে অবাকের সুরে প্রবর্তিত হলো। ফুপি বললো,
–তুই কি বলছিস এসব ! হাসিব কে!
–হাসিব আমার মামাতো ভাই ফুপি। হাসিব আপুর প্রাক্তন ছিলো। সে আপুকে বিয়ে করে সুইজারল্যান্ড নিয়ে গেছে।।
–মিথ্যে কথা! তুই সব মিথ্যে কথা বলছিস! সাফা বিয়ে করতেই পারেনা!
–পারেনা বললে চলবে না ফুপি…অলরেডি আপুর বিয়ে হয়ে গেছে আর সে বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে থাকছে। আমি বা তুমি কেউই এখন সাফা আপুর বিষয়ে নাক গলাতে পারবো না।
–……………(ফুপি চুপ করে আছেন)
–ফুপি আমি জানি তুমি অবাকের কারনে স্তব্ধ হয়ে গেছো। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার কিছুই করার নেই সাফা আপু এতোবড় কাজ কোনোদিন করবে নিজেও ভাবতে পারিনি। আরো একটা কথা, আমি আর তোমাদের সাথে থাকছি না ফুপি। আমার খোঁজ খবর বা কোনো যোগাযোগ তুমি রেখো না। আমি আমার মতো করে থাকতে চাই। যদি মনে হয় আমার ফুপি বলে কেউ আছে তাহলে দূর থেকে বিনা পরিচয়ে দেখে যাবো। ভালো থেকো।।

ফুপির নাম্বার ব্লকলিস্টে রেখে দিলাম। আমি জানি একশোটা কল করার বাসনা তার অবশ্যই জাগবে। আমি এখন আরেকজনের নাম্বারে কল দিলাম। আমার মস্তিষ্কের মেমোরি সেলে মাত্র তিনজন মানুষের নাম্বার ঠোটস্থ রেখেছিলাম। তার মধ্যে শেষের জনকে কল দিতেই রিসিভ,

–হ্যালো কে বলছেন?
–ইফু কি অবস্থা?
ওপাশ থেকে ‘কি অবস্থা’ প্রশ্নের জবাবের পরিবর্তে একবস্তা প্রশ্নের ঝুড়ি আসলো,
–স্নেহা!! তুই কোথায়!!স্নেহা তুই ঠিক আছিস বেবি! বেবি তুই কোথায় আছিস এক্ষুনি বল! আমি বাবার গাড়ি নিয়ে আসছি!!
–ইফু রিল্যাক্স রিল্যাক্স, আমি একদম ভালো আছি। টেনশান নিস না। তোকে আসতে হবেনা।
…………..

–‘স্নেহময়ী রেডি……’

রুমের মধ্যে সাগ্রতের কন্ঠ শুনে ওর দিকে তাকালে ইফু ওপাশ থেকে ‘বেবি বেবি’ ডাকতেই থাকে, সাগ্রত চোখের ইশারায় আঙ্গুল ঘুরিয়ে বলে উঠলো,

–রেডি হও রেডি…তাড়াতাড়ি…যেতে হবে তো…

আমি ইশারার ভাষা বুঝে ইফরার জবাব দিতে ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে উঠি-
–ইফু ! দোস্ত দোয়া লাগবে বুঝলি! বিয়ে করবো! #ভুলবশত কারোর প্রেমের ফাদে পড়ে গেছি দোস্ত! #ভুলবশত জিনিসটা কত বাজে দেখছিস? স্নেহা দ্যা আনরোমান্টিক মেয়ে প্রেমে পড়লো! সেকেন্ড টাইম দোস্ত! লাইফ সেকেন্ড চান্স দিয়েছে ইফু! ডিরেক্ট বিয়ে করে ফেলছি বেবি! দোয়া করবি কিন্তু!
ইফুকে আর বলতে না যেয়ে চট করে কল কেটে ব্লকলিস্টে এটাও ফেললাম। সাগ্রত আমার দিকে বাকা দাঁতে মুগ্ধকর হাসিতে হাসছে। আমি হাসির কারন জানতে জিজ্ঞেস করলাম,

–হাসির কারন কি তাশরীফ সাগ্রত? কিছু কি ভুল বলেছি? #ভুলবশত কি প্রেম হয়না? প্রথমে সিরিয়াল কিলার, পরে কন্টাক্ট কিলার, পরে রহস্য কিলার…এরপর এরপর এরপর হলো, গোয়েন্দা এজেন্সি! হোয়াট এ্যা মিক্সচার তাশরীফ সাগ্রত! আপনার থাকা উচিত রসকসহীন নিস্তেজ পাতার মতো মন! বাট আপনি তো পুরোই রোমান্টিক ওয়ান!

সাগ্রত ঝকঝকে সাদা, বাকা দাঁতে হেসে দিলো।। হাসতে হাসতে ঠোটের উপর হাতের উল্টোপিঠ রেখে দিচ্ছে….দেখতেও দারুন লাগছে! মানুষটা কত রহস্যজনক! এরকম রহস্যে ঘেরা কেউ কি আছে? তাশরীফ সাগ্রতের মতো রহস্য নিয়ে এখনো মানুষ থাকে? কথা মানুষকে শেয়ার করলে মন হালকা হয়…কিন্তু সাগ্রত তো কখনো শেয়ার করে না, এখনো কি রহস্যজট রয়েছে? আমি হালকা হেসে বলে উঠলাম,

–রহস্য নিয়ে বাচোঁ কিভাবে? পেটে কথা রাখতে পেটব্যথা করে না? আমি তো সারাদিনের পেচাল পেটে রাখতে পারিনা।।। তুমি পারো কিভাবে?
সাগ্রত হাসি কিন্ঞ্চিত থামিয়ে বলল,
–সূর্য আবিষ্কারটা একসময় রহস্য ছিলো। সূর্য পৃথিবীর চারিদকে ঘুরে এমন তত্ত্ব স্বীকৃত ছিলো। কিন্তু রহস্য যেহেতু খুলেছে, তাই সূর্যের প্রতি মানুষের আর্কষন কমে অন্যদিকে রহস্যভেদে মন জেকেছে।
–সূর্যের এই রহস্য তথ্যের সাথে তোমার কথার কি সম্পর্ক? বুঝলাম না সাগ্রত।
সাগ্রত দুপকেটে হাত ঢুকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো,

–“সব রহস্য ‘রহস্য’ হলেই ভালো। রহস্য ভাঙ্গলেই তার প্রতি আর্কষন থাকে না……”

-সমাপ্ত

-ফাবিয়াহ্_মম♥
-Fabiyah_Momo🍁

#বিদ্র: গল্পটা তাড়াতাড়ি শেষ করেছি দেখে অনেকেই আমার উপর ক্ষুদ্ধ থাকতে পারেন। আমি দুঃখিত! গল্পটা লিখার সময় আমি এক্সিডেন্টের শিকার হই। নিয়মিত গল্প দেওয়া স্থগিত করি। আমি সুস্থ হওয়ার পর গল্প দিলেও আগের মতো থিম সাজিয়ে লিখার ক্যাপাসিটিটা হারাই। আমি মনোযোগ হারাই। তাই শেষ করে দিলাম। ফিরবো নতুন গল্প নিয়ে! অপেক্ষায় থাকুন!♥🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here