ভুলবশত পর্ব-৪

0
2365

#ভুলবশত♥
#PART_04
#FABIYAH_MOMO🍁

রাতের মুষলধারের বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট, অলি-গলি কাদায় মাখামাখি হয়ে গেছে। পায়ের তাখনু সমান পানি উঠেছে এবং বাজারের অবস্থা বড়ই নাজেহাল। সকাল আটটায় বের হয়েছি। ভবঘুরের মতো এই বাজার, ওই বাজার থেকে ঘুরে ঘুরে সব সদাই নিয়ে সাড়ে এগারোটায় বাসায় ফিরছি। হাতে চারটে সদাইপাতির ব্যাগ। দুটো করে দুহাতে চারটা ভারী ব্যাগ। মুখ ঘেমে একাকার…মাথায় খোপা করা

থাকলেও বাতাসের কারনে চুল এলোমেলো হয়ে বরাবরের মতো খারাপ অবস্থা। গলায় ওড়না দিয়ে কোনোরকমে চারটা ব্যাগ হাতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছি। প্রচুর ভারী ব্যাগ হাটতেও বরন্ঞ্চ কষ্ট হচ্ছে আমার কিচ্ছু করার নেই ওভাবেই বাসার দিক রওনা দিয়েছি। রিকশা পাচ্ছিনা…সব বুক করে নিয়েছে মানুষজন। বিরক্তিকর! না পারতেই চারটা ব্যাগের বোঝা নিয়ে হাটাঁ ধরেছি। হঠাৎ করে কোত্থেকে একটা বাইক এসে আমার পায়ের কাছে থামল। আমি হকচকিয়ে যাই। হুট করে ভয় দেখিয়েছে লোকটা! কতটা অসভ্য লোক! সে বলা কওয়া ছাড়াই আমার পায়ের কাছে বাইক থামিয়েছে। মুখে হেলমেট। পড়নে ব্ল্যাক রাইডার স্যূট। আমি সটান হয়ে দাড়িয়ে তার উদ্দেশ্যে কিছু ভয়ানক বলার আগেই সে ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে ব্যাগগুলো রাস্তায় ফেলে দিলো। আমি ঘটনাক্রমে আরো দুধাপ অবাক হয়ে হকচকিয়ে যাই কেননা রাস্তায় কখনো এমন খারাপ অবস্থা ফেস করিনি।

ব্যাগগুলো পড়ে কাচা সবজিগুলো ছেচড়ে গিয়েছে…রাস্তার মানুষগুলো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে কেউ একটাবার সামনে এসে কিছু বললো না। যার যার জায়গামতো বাইকার ছেলেটার দৃশ্য উপভোগ করছে। আমি পরিস্থিতিতে পুরো গুমোট হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম। বুকে ধুকপুক করে হাতুড়ি পিটিয়ে চলছে, মুখ হা করে আছি, কি করবো বুঝতে পারছিনা। কেমন রিয়েক্ট করলে ছেলেটার উপযুক্ত শায়েস্তা করা হবে?

ছেলেটা ‘ভুমভুম’ ছন্দ করে বাইকটা আমার ডানহাতের ব্যাগ ঘেষিয়ে চলে গেল। মূহুর্তেই ডানহাতের শেষোক্ত দুটো ব্যাগ ছিটকে পড়ে গেল… আমি শেষমেশ কেদেঁই দিয়েছি। হুহু করে কেদেঁ দিয়েছি জনসম্মুখে। ছেলেটা বাইকের স্পিড বাড়িয়ে চলে গেল। আমি টলমল চোখে পানি ছেড়ে হাটতে হাটতে বাসার দিকে রওনা দিয়েছি। নিশব্দে নোনাজলে কেদেঁ চলে যাচ্ছি।

বাসার গেটের কাছে থমকে আছি। ফুপি প্রচুর বকবে। সদাইয়ের ব্যাগ বাজারে ফেলে এসেছি। বাসায় গিয়ে ফুপির কাছে কোন্ মুখে অজুহাত দিবো? ফুপি বকে আমার দিনরাত এক্ করে দিবে!! ফুপি আস্তো রাখবেনা! গেটের কাছে পায়চারী করেও কোনো উপায় যখন বের করতে পারলাম না তখন বুকে ফু ফু দিয়ে ভেতরে ঢুকার জন্য পা বাড়ালাম। গেট দিয়ে ঢুকে সিড়ি ধরে পা ফেলে উপরে উঠছি। ভয়ে কলিজায় পানি শুকিয়ে গেছে। ফুপি আমায় খেতে দিবেন না। গালি দিলে দিতেও পারে। সাফা আপু বাসায় আসলে কোনো একভাবে আমাকে গা ঢাকা দিয়ে দিতেন। আপুও বাসায় নেই। দরজায় কলিংবেল দেয়ার সুইচে আঙ্গুল বসিয়ে আছি। সুইচে টিপ দেওয়ার শক্তি পাচ্ছিনাহ। চোখ গেল পাশের ফ্ল্যাটে সাগ্রতের বাসার দরজায়। গেটে বড় একটা সিলভার দামী তালা ঝুলানো। তাহলে ছেলেটা বাসায় নেই।

আমি ভয়ভয় করেই সুইচে টিপ দিয়েই ছাড়লাম! বুকে ফুল স্পিডে ধকাধক শব্দ ছুটে চলছে। কি স্পিডে ছুটছে মনেহচ্ছে ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতায় আমার এই বুকের ধকধকানি প্রথম পুরস্কার পাবে।

ফুপি খট করে দরজা খুলল। খুলে আমার দিকে একপলকে তাকিয়ে আছেন। আমি ঢোকের পর দুটা বড় ঢোক গিললাম। গায়ের পলম কাটা দিয়ে উঠেছে। ফুপির অপলক চাহনি জানান দিচ্ছে ফুপি আমাকে ভয়াবহ গালি দিবেন। কিন্তু ফুপি চমকে দিয়ে আমাকে জাপটে ধরে কেদেঁ দিলেন। কি হলো? আমায় হঠাৎ করে জাপটে ধরে হাওমাও করে কেদেঁ দিলেন? ফুপি শোকের মাতমের মতো কাদছে। আমি নিবার্কের মতো থাকলেও কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করে উঠি-

–ফুপি…তুমি কাদছো কেনো?কেউ তুমাকে কিছু বলেছে? ফুপি!!

ফুপি আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি গালে লেপ্টে কাদুরে সুরে বলে উঠলেন-

–স্নেহা… সাফার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা..স্নেহারে….

–কি! আপুর ফ্রেন্ডদের ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছো? তাহমিনা আপুর বাসায় নেই? তাসনীম….তাসনীম আপুর বাসায় কল দিয়েছো?

–ওর সব বান্ধবীদের কল করেছি স্নেহা…ও কারোর বাসায় নেই…কালকে সাফা ওদের বাসায় নেই!!

–আচ্ছা তুমি কান্না করো না…আমি দেখছি ফুপি… আপুর খোঁজ আমি করছি…কান্না বন্ধ করো।।

ফুপির চোখ মুছিয়ে আমি ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছি। দরজা লাগিয়ে রান্নাঘরে গিয়েছি ফিল্টারের পানি ভরবো বলে। সকালে ফিল্টারে পানি দিতে ভুলে গেছি তাই এখন কাজটা করার জন্য ভেতরে যাচ্ছি।

ফিল্টারের পানি দিবো হঠাৎ যা দেখলাম তাতে আমার পায়ের নিচ একে মাটি সরে যাচ্ছে। বাজারের সব ব্যাগ রান্নাঘরে রাখা। আমি হড়বড় করে পানি ভর্তি করা বাদ দিয়ে বাজারের ব্যাগ খুলায় উঠেপড়ে লেগেছি।

তড়িঘড়ি করে ব্যাগ খুলে দেখি সব সবজি, সদাইপাতি, জিনিস সামগ্রীতে চারটা ব্যাগ টইটই করে ভরা। আধ ঘন্টা আগে যে ব্যাগগুলো বাজারে ফেলে সারা রাস্তায় বেকুবের মতো কেদেঁ এসেছি সেই ব্যাগগুলো বাসায় রান্নাঘরে সুন্দর করে রাখা। কেউ সামান্যতম বলবেই না আমি ব্যাগগুলোর বেহাল দশা ছেড়ে এসেছি…..

-চলবে

Fabiyah momo

#বিশেষ_দ্রষ্টব্য: মম টাইপ করছে না…ও রেস্টে আছে…কিছুদিন আমি টাইপ করে দিবো…দয়াকরে ওকে নিয়ে অন্য রাইটারের সাথে জোড়া দিবেন না… এক্সিডেন্ট যেহেতু করছে পরিবার নিয়ে করছিলো…মিথ্যা কথা বলা নিয়ে ফেক/রিয়েল কাহিনি রটানো বন্ধ করেন। আমি গল্প টাইপ করে দিতেছি রুলস ভঙ্গ না করার জন্য…ও যেগুলো এতোদিন মানতেছিলো… ও রুলস এবাইড করতে ভুলে না….[কোন রুলস বলছি তারা বুঝে নিছে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here