#ভুলবশত♥
#PART_05
#FABIYAH_MOMO🍁
সাফা আপুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা বলে ফুপি কেদেঁ ভাসিয়ে দিচ্ছেন। আমি উপায় পাচ্ছিনা কোন। কিচ্ছুই মাথায় আসছেনা।। আপু কোথায় কেমন হালে আছেন আল্লাহ মালুম! আমি ফোনটা কানে লাগিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছি। সিয়ামকে কল করছি। ও আমাকে আপুর খোজাখুজিতে বড়জোড় সাহায্য করতে পারবে। সিড়ি দিয়ে নামতেই আচমকা হাতের কবজিতে টান অনুভব হলো আমি ছিটকে গিয়ে পড়লাম। পড়ার পরও মনে হলো আমি নিচে পড়িনি। কোমর ভাঙেনি। হাত-পায়ের হাড্ডি ভাঙেনি। চোখ খুলে দেখি সাগ্রত। সাগ্রত ড্যাবড্যাব করে চোখের পলকে তাকিয়ে আছে। ওর একটা হাত আমার কোমরে রাখা। আরেকটা হাত সর্তকতার সাথে আমার হাতের কবজি ধরা।আমি ওর দিক হা মেরে দাড়িয়ে চিন্তার বিদ্যাসাগর বানাচ্ছি। সাগ্রত ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলো-
–এভাবে দৌড়ে নামছিলে কেন? কোথায় যাচ্ছো?
আমার সামনে যে বান্দা দাড়িয়ে আছে! ঘামে মুখ ভিজে চৌবাচ্চা হয়ে আছে! টিশার্ট ঘামে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে!ঠোটের উপর বিন্দু বিন্দুর ঘামের সমারোহে চোখ আটকে গিয়েছে! হয়রান হওয়া জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ার ভঙ্গিটা হাতছানি দিয়ে অন্য মোহতে ডুবাচ্ছে! তাকে দেখে আমি রীতিমতো ফাস্ট টাইমের জন্য ক্রাশ নামক সাগরে ডুবে গেছি। ক্রাশ বলতে বাশঁ বোঝায়, ক্রাশ হচ্ছে এমন এক রোগ যেখানে প্রথম দেখায় ধাক্কা লেগে বেকে বসে, পবিত্র কিছুর দেখা মিলেনা।।তাহলে আমিও ইফরার মতো ক্রাশের রোগে ক্রাশিত হয়ে গেছি? মানুষ পাগল বলবে নাতো? আল্লাহ বাচাঁও! কোথায় যাবো! আমি চুপ করে থাকলে সাগ্রত আবার প্রশ্নের ঝুলি ছুড়ে মারে-
–তুমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে নাকি কিছু বলবে? আ’ম আস্কিং ইউ এ্যা কোয়েশ্চ্যান স্নেহময়ী! দৌড়ে যেভাবে যাচ্ছিলে! এক্ষুনি তুমি কোমর ভেঙে হাসপাতালে থাকতে!
সাগ্রত আমার হাত ঝাকিয়ে কথাগুলো বললো। আমার নিজস্ব দুনিয়ার খামখেয়ালী ভাবনা থেকে ফিরে আমি স্বাভাবিকে আসলাম। ওর হাত থেকে আমি হাত ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম। সাগ্রত সম্ভবত বাইরে থেকে দৌড়াদৌড়ি করে এসেছে। খুব হাপাচ্ছে। এখন কিছুটা লাঘব হয়েছে হাপানোতে। পোলো টিশার্ট পড়নে। মেটে রঙের ট্রাউজার। হাতে মোটা ডায়ালের জগিং ওয়াচ। চোখেমুখে ক্লান্তির ছোপ। সারা শরীর ঘেমে আছে। আমার কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশায় ব্যকুল দৃষ্টি দিয়ে আছে।। ওর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বিষম খাচ্ছি। পাল্টা জবাব দিতে পারছিনা। আমি ওর পাশ দিয়ে সুযোগ বুঝে সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে যাই। সাগ্রত আর কিছু বলার জো পায়নি। আমিও কানে কিছু এক্সট্রা শব্দ শুনিনি।তবে হালকা হাসির হাসফাস মিষ্টি শব্দ পেয়েছি। ও হেসেছে??আমার দৌড়ে পালানোতে হেসে দিয়েছে? দেখতে কেমন?
মেইন গেটের কাছে দাড়িয়ে ইফরার জন্য অপেক্ষা করছি। ঠিক পাচঁ মিনিট পর ইফরা আমার সামনে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া চুকিয়ে আসলো। এসেই বললো-
–স্নেহু, আপুর কোনো নিউজ পাইছিস? আপুর সাথে লাস্ট কথা কবে বলছিস বেবি?
–আমি জানি না ইফু! আপু হুট করে ম্যাজিসিয়ানের মতো গায়েব হবে কে জানে? ফুপি বিলাপ করে কাদছে। আমি জানি না দোস্ত! সিয়ামকে জানিয়েছি, ও বলছে ওয়েট করতে।
–ওয়েট করলে আপুকে খুজে পাবি? আপু কি পাখি!সে উড়ে উড়ে ফিরে আসবে?
–দেখ্ ইফু! সিয়াম বলছে দেখতে। এখন ওইটা শোনা ছাড়া স্কোপ নেই। তুই ভেতরে চল। বাসায় আয়। আপু একটা নোট ছেড়ে গেছে ওটা চেক করা বাকি।
–কি গাধা! আগে বলবিনা! এই নোট যে কত কিছুর সন্ধান দিতে পারে জানিস না!এইজন্যই বলি.. সিআইডি দেখ! সিআইডি দেখলে কাজে দিবে। মাথা খুলবে।
–কথা বন্ধ কর। ভেতরে চল।
ইফরার সাথে আমি সিড়ি ধরে উপরে যাচ্ছি। মূল বিষয় হচ্ছে আপুর খোঁজ। আপু কখন কোথায় কীভাবে নিখোঁজ হয়েছে তা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। ইফরা গোয়েন্দা সেক্টর খুব পছন্দ করে। ওর বাবাও একজন গোয়েন্দার লোক। ইফরার স্বপ্ন, ও ভবিষ্যতে গোয়েন্দায় জব করবে। মাথা প্রচুর চলে মেয়েটার। আমাদের ফ্ল্যাটের কাছে এসে কলিংবেল দিব তার আগেই পাশের ফ্ল্যাট থেকে দরজা খুলার শব্দ হলো। কেউ উকি দিলো। উকি দিয়েই বলে উঠলো-
–এক্সকিউজ মি স্নেহময়ী! আপনাদের পানির ট্যাংকিতে ফল্ট আছে। প্লিজ মেইন সুইচটা অফ করে আবার অন করুন।
ইফরা একবার অবাক চাহনিতে তাকিয়ে সাগ্রতের দিকে স্থির চোখে তাকালো। সাগ্রত কিছু বলতে যেয়েও ইফরার একদৃষ্টিতে তাকানো ব্যাপারে কাচুমাচু করতে লাগলো। কোনো মেয়ে ছেলের দিকে তাকালে এমন কাচুমাচু করে? কি জানি!!সাগ্রত গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলো-
–ব্যাড ম্যার্নাস! আমার অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।চোখ নামান।
ইফরা লজ্জা পেল। চোখ নামিয়ে আমার হাত আরেকটু চেপে ধরে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে উঠলো-
–স্নেহু ভেতরে চল না। বাইরে অড ফিল হচ্ছে। বোরিং লাগছে। ভেতরে যাবো।
–কলিং বেল দি…
সাগ্রত আমার কথায় বাধা দিয়ে বলে উঠলো-
–আপনি শুনেছেন? আর্জেন্ট আমার পানির প্রয়োজন। প্লিজ আপনি একটু কুইক তাড়াতাড়ি কাজটা করুন!
একদিকে সাগ্রত হন্য হয়ে হুকুম চাপাচ্ছে। অপরদিকে ইফরা আমার হাত ধরে টানাটানি করছে। আমি ইফরার দিকে করুণ চাহনিতে তাকালে ও আমাকে নিয়ে টানাসেতু বন্ধ করে দেয়। সাগ্রতের দিকে তাকালে ও আমায় বলে উঠে-
–এনি প্রবলেম? এভাবে ডাইনির মতো লুক দিয়ে আছেন কেন?
গা জ্বলে উঠলো। কিচ্ছু বললাম না। ভয়াবহ চোখের দৃষ্টি ছুড়লেও ইফরাকে বেল বাজাতে বলে ছাদে চলে গেলাম। মেইন সুইচ অন-অফ করে আমি এসে দেখি ওর ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি কিছু বললাম না। রুমে গেলাম। ফুপি আচলে মুখ লুকিয়ে সাফা আপুর বেডে বসে কাদছে। ইফরা আমার রুমে বসে অপেক্ষা করছে, আমাকে দেখেই উঠে কাছে এসে বলে উঠলো-
–ছেলেটা কি ব্যাচেলার স্নেহু?
–কেন? তোর কি প্রয়োজন ওই ছেলের?
–প্লিজ কথা পাল্টাবি না! আমি সোজাসুজি জানতে চাচ্ছি!!
–হ্যা ব্যাচেলার। এখন বলবি কি দরকার?
–চুল কিন্তু খাড়াখাড়া বেবি!! কথা বলতে যাস না।।
–চুলের সাথে কথার কি সম্পর্ক? তোর কথার আগাগোড়া কিছুই ঢুকছে না ইফু! পাগলের মতো লজিক লেস কথাবার্তা বন্ধ কর!
–অফ যা বাল! লজিক-লজিক বলে চেচাস না! ছেলেটা জোশ…অস্থির কিসিমের। চুলগুলাই সমস্যা ক্রিয়েট করছে!
–তুই মিন করছিস সাগ্রতের চুল খাড়াখাড়া দেখে ও রাগী হবে?
–ইয়েস ইয়েস !! একজেক্টলি!
–সর বের হ বাসা থেকে! থার্ড গ্রেডেড মেয়ে! বের হ!
–বেবি প্লিজ ড্রামা করো না। আমি ছেলেটাকে দেখে লাভ-এ্যাট-ফাষ্ট-সাইটে ডুবে গেছি। আমি তাকে প্রপোজ করবো বেবি!
–রাস্তায় বেবিটেক্সী ধরে ওদের থেকে হেল্প নিস! আমায় বেবি বেবি করবি না!
–বেবী, সোনাপাখি, জান্টুস,কলিজার টুকরা ময়নাপাখি লক্ষী পঙ্খী প্লিজ আমার সোনার টুকরাটা হেল্প কর। দেখ লাস্ট টাইম। আমি এই যে কানে ধরছি…এইযে দেখ কানে ধরছি…আর কোনো ছেলের দিকে চোখ তুলে তাকানো দূর থাকুক। আর ধারে কাছেও যাবো না বেবি। এই বেবি শুনো না? ওর নাম কি?
আমি চোখের গোলক বড় করে তাকালাম। ইফরা ঠেলে একটা হাসি দিলো। মোটকথা দৃষ্টি ঢাকতে ইফরা একটা হাসি মেরে দিলো। কিন্তু কাজ হলো না। ইফরা আমাকে জাপটে ধরলো। মিনতি সুরে বলে উঠলো-
–স্নেহু বেবি!! আমার একটা মাত্র বেবি!! লাভিউ সোনাপাখি প্লিজ টেল তার নাম বেবি। হোয়াটস তার নাম বেবি? তুই ছাড়া আমি কাউকে আমার কথা শেয়ার করিনা। বেবি আমি মরে যাবো…
–তোর চল্লিশায় বিরিয়ানী আইটেম দিস। বার্বুচিরে বলবি মাংস, আলু বেশী করে দিতে। জমিয়ে খাওয়া দিবো!
ইফরা আমার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকালো। তীর বিদ্ধ হরিণের মতো ব্যথিত হয়ে আছে ইফরা নামক ক্রাশিত জন্তু। চেহারাটা বায় গড দেখার মতো! না-সূচক কথাবার্তা শুনে বন্ধুদল যে মাসুম চেহারা করে ক্যামেরা বন্দি করে রাখা উচিত! মাঝে মাঝে সেই ছবি দেখে খিলখিল করে হাসা যাবে!!
ইফরাকে রিকশায় তুলে দিয়ে আমি দুপুরের দিকে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছি। রুমে ঢুকে সিয়ামকে আরো একবার কল করে আপুর ব্যাপারে জানতে হবে। সিড়ির ধার ধরে উপরে উঠে চলছি। ফ্ল্যাটের কাছে এসে চিন্তায় বিভোর। কে আপুকে তুলে নিয়ে যাবে? আপুর জন্য লুকোচুরি পাগল কে ছিলো? আপুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সলিড প্ল্যান কিভাবে করলো? নোটটা পড়ে মাথা চক্কর দিচ্ছে! নোটে যেভাবে কথা বলেছে সে সাইলেন্ট লাভার ছিলো! সাগ্রতের এপেনডিক্সের ব্যাথা উঠার সাথে ওই লুকোচুরি পাগলের কানেকশন আছে? আমি নানা বিষয়াদি নিয়ে চিন্তামগ্ন হয়ে দরজার কাছে বেলের জন্য সুইচের উপর আঙ্গুল বসাতেই ওরকম টান হাতে অনুভব হলো। ছিটকে গেলাম অন্ধকারে ঢাকা ছিপছিপে কোথাও!! চোখ খুলার পরও যেখানে আলোর আবিস্কার করতে পারিনি আমি। ঘুটঘুটে অন্ধকার কোথায় যেন বদ্ধ হয়েছি!!
–চলবে🍁
–Fabiyah_Momo🍁