ভুলবশত পর্ব-৬

0
1783

#ভুলবশত♥
#PART_06
#FABIYAH_MOMO🍁

বদ্ধ হয়ে আছি। নড়চড় করার ক্ষমতা আমার নেই। কেমন অকেজো হয়ে আছি। কার কাছে হেরে গেলাম। কে হঠাৎ হাত টান দিলো। কে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিলো। আমি দিশেহারা হয়ে অন্ধকারে দেখার চেষ্টা করছি। হাতের ওপর থেকে মনে হলো ভারী কিছু সরে গেল। হাতটা পাতলা পাতলা লাগছে। আগের মতো একশো মণের ন্যায় ভার লাগছে না। ঘুট্ঘুটে অন্ধকারেই কেউ বলে উঠলো-

–তুমি আমার ইগনোর করছো স্নেহময়ী। আমি ইগনোর সহ্য করতে পারিনা। কেউ আমাকে ইগনোর করলে শরীর ফেটে যায়। প্লিজ ইগনোর করবে না!

কন্ঠ চিনতে সময় লাগলো না। সাগ্রত ছাড়া কেউ ছিলো না। কিন্তু সে আমায় উদ্ভট কথা কেন শুনাবে ভেবে পাচ্ছিনা। কোনো ছেলে এভাবে অন্ধকারে টেনে নিয়ে অসৎকর্ম সাধন করে। সে কি আমায় ক্ষতি করবে? মতলব কি খুবই বাজে কিছু করার? আমি কিছু বললাম না। আমি অন্ধকারে আশেপাশে হাত লাগিয়ে দেখছি। পেছনে হাত দিতে মনে হলো মেইন দরজা। দরজার নব আলতো করে ঘুরালাম তাও ক্যাচচ্ করে একটা শব্দ হলো। শব্দটা তার কানে পৌছাতেই আমাকে দ্রুত টেনে ধরলো। সাগ্রত সাথেসাথেই বলে উঠলো-

–প্লিজ যাওয়ার চেষ্টা করো না। তুমি ব্যর্থ। এখানে আমি ছাড়া তুমি কারোর কাছে যেতে পারবেনা। তোমার ক্ষতি করতে চাচ্ছিনা প্লিজ কথা শুনো!

সাগ্রত আমার অনেক কাছে। কতটা কাছে থাকলে একটা মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়ার অনুভূতি অনুভব হয়, সাগ্রত আমার ততোই কাছে। ধাক্কা দেওয়ার প্ল্যান থাকলেও সাগ্রত আমার হাত দুটো ওর হাতের মুঠো ভরে ধরেছে।
–আমাকে ধাক্কা দিবে না স্নেহময়ী। আমি ওতো খারাপ ছেলে না যতো তুমি আমায় ভাবছো। আমি খুব ভালো ছেলে তাও আবার না। মানুষ মারি। ইউ ক্যান স্যা আ’ম এ্যা ক্রিমিনাল।

পায়ের নিচ থেকে মাটি কাপছে নাকি আমি কাপছি! তা কিছুকাল হতভম্বের মতো থেকে পরোখ্ করতে পারলাম। আমি কাপছি। থরথর করে কনকনে শীতের মতো কাপছি। শুধু দাতে দাত লেগে আসার শব্দ হওয়া বাকি। সাগ্রত হাত ছেড়ে দিলো। আমি একপা নিজের মতো পিছাবো, ও খপ করে অন্ধকারে আবার ডান হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। সাগ্রত অন্ধকারে যেভাবে কর্ম করছে মনে হচ্ছে তার চোখের দৃষ্টি বিড়ালের মতো। অন্ধকারেও পরিস্কার দেখছে। আমি কোথায় এবং কোন্ লোকেশন তা যদি কেউ অন্ধকারে খুজতে বলে গ্যারান্টি দিলাম সাগ্রত তাতে পুরোপুরি বিজয়ী হবে! ওর হাতটা ঠান্ডা। ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে নাকি আমার হাত ভয়ের কারনে উষ্ণ ফিল হচ্ছে? উত্তর কোথাও জানা নেই। জানলেও আমি জানি না। সাগ্রত প্রত্যেকটা রুম অন্ধকার করে রেখেছে। টেনে নিয়ে কোনো এক রুমে ঢুকেছে। তার পায়ের সাথে আমার পা মিলিয়ে পিছু পিছু কেন যেনো হেঁটে যাচ্ছি!! কোন্ বিশ্বাসের ঘোরে এগিয়ে যাচ্ছি!! সে তো বড্ড অপরিচিত! আমার কেউ না।হঠাৎ আমার কাধে হালকা ধাক্কা অনুভব হলো। সাগ্রত আমায় ঠেলে বিছানায় বসালো।

–স্নেহময়ী ভয় পেও না। আমায় বিলিভ করো আমি কোনো ক্ষতি করবো না। আমি ক্ষতি করলে অনেক আগেই করতে পারতাম। অপেক্ষা করতাম না।
–তুমি কিসের কথা বলছো? কিসের অপেক্ষা? আমি তোমায় চিনি? যতটুকু মনে আছে আমার পরিবারের কেউ নেই। ফুপি ছাড়া নানীবাড়ি ত্যাজ্য! তুমি কে? কোত্থেকে আগমন করেছো?
–বলবো। বলার জন্য এসেছি। বলে চলে যাবো।
–রুমের লাইট জ্বালান! অসভ্যতা করার ইচ্ছা থাকলে মনের মধ্যে ছাই ঘষে নিন। আমার সাথে লুচ্চামি করার সাহস করবেন না!
সাগ্রতের কন্ঠে হাসির সুরটা জোরে পেলাম। ও হাসছে। কেন হাসছে? ভালোবেসেছে? ভালোবাসার মানুষের কাছে মানুষ সুন্দর করে হাসে, তাই নাকি? ও কেন ওভাবে হাসবে? আমি ওর কে?কোলের উপর রাখা হাতজোড়ার উপর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলাম। ধীরে ধীরে পাচটি করে দুহাতের আঙ্গুল দিয়ে আমার হাতজোড়া জড়িয়ে ধরলো। শিরশিরিয়ে উঠলো শরীর। কেমন অদ্ভুত অনুভুতি!! সিয়াম একবার তালবাহানায় আমায় হাত ছুয়ে ধরেছিলো, কই এমন তো হয়নি!! গা শিরশিরিয়ে আসেনি!! সিয়ামকে ভয়াবহ কথা শুনিয়ে গালাগাল করলেও সাগ্রতকে কেন পারছিনা? সাগ্রত ফ্লোরে বসে আমার হাত চেপে আছে। আমি বিছানায় নির্বিকার মতো বসে আছি। ও নরম কন্ঠে হেসে হেসে বলে উঠলো-

–তুমি আমায় বেশ ভালোই বিশ্বাস করো।টেনে ধরে নিজের অন্ধকার বিছানায় বসিয়ে রেখেছি একটাবারো চিৎকার করোনি।

আসলেই ঠিকতো! আমি কেন বোবার মতো বসে আছি! কথা কি জানি না নাকি! আশ্চর্য আমি মানুষকে আপত্তিকর কথা শুনিয়ে আসি হন্তদন্তে বুক ফুলিয়ে আসি! সেই আমি কিনা বোবা সেজে বসে আছি। অপরিচিত কোনো ছেলেকে কিনা কিন্ঞ্চিত কিছু বলছিনা। সাগ্রত কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো-

–প্রথম থেকেই বলা উচিত স্নেহময়ী। আমার এপেনডিক্সের অপারেশনটা হেতু ছিলো না। আমার সিরিয়াসলি পেইন উঠেছিলো। ডক্টর তোমায় স্টিচ নিয়ে কি কি বলতে পারে আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি। তুমি বাইরে যাওয়া কমিয়ে দিও। বিপদ কোনদিক্ থেকে আসবে বলতেও পারবেনা।

আমি কোনো কথাই বলতে পারছিনা। সাগ্রত আমায় সর্তক করছে নাকি হুমকি দিচ্ছে আলাদা করে বোঝা মুশকিল। কিন্তু ও আমায় কথাগুলো কেন বলছে আমি জিজ্ঞেস করলেও জবাব পাবো না।।।

.
.

রাত আড়াইটা। দুচোখে ঘুমের অভাব। কপালে কবজি বসিয়ে আনচান মনে বহু কিছু ভাবছি। সাগ্রতের বাসা থেকে রুমে আসার পর রাতের খাওয়া গলা দিয়ে নামেনি। খালি পেটে শুয়ে আছি। সাগ্রত আমায় পছন্দ করে। সামান্য কথা বলার জন্য ও আমাকে অন্ধকারে ওর ফ্ল্যাটে টেনে নিয়ে যায়। আমি রিজেক্ট করে এসেছি।ওকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। আপু কোথায় থাকবেন? কে কিডন্যাপ করলে শান্তি পাবেন? লুকোচুরি সাইলেন্ট লাভার কে হতে পারে? সাগ্রত আমায় বাইরে বের হওয়া নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করলো কেন? মাথার মধ্যে আরো কতো প্যাঁচ ঘুরছে!! চিন্তা হচ্ছে!! অশান্তি লাগছে!! হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। ড্রিম লাইটের সবুজ আলোয় ফোনটা বালিশের নিচ থেকে নিলাম। নাম্বার চিনি না। রিসিভ করবো করবো করে খুশখুশ করলেও একপর্যায়ে রিসিভ করে ফোন কানে নেই। ঘুমঘুম চোখে কেউ বলে উঠলো-

–ঘুমাও না কেন? চোখে ডার্ক সার্কেল পড়ে যাবে স্নেহময়ী!
ওর কথা শুনতেই আমি শোয়া থেকে উঠে বসে রুমের চারিদিকে তাকাই। কোথাও জানালা বা দরজা খোলা নেই। সাগ্রত আমার ঘুমের ব্যাপারে জানলো কি করে! আমি ঝাঝালো সুরে বলে উঠলাম-

–সাগ্রত! তুমি কল করেছো! সাহস কত্তো বড় এতো রাতে আমায় কল করেছো!
–আমার সাহস ছোট থেকেই একটু বেশি। নট এ্যা মেজর ইন্সিডেন্ট! তোমায় ঘুমাচ্ছো না কেন? কি কাজ তোমার রাতে?
–লজ্জাহীন! থার্ড ক্লাস! ফালতু! বেশশরম!আমি তোমার কে হই! কেন তোমায় কৈফিয়ত দিতে যাবো!
–সরি স্নেহময়ী আমি সিরিয়াসলি ওভাবে বলতে চাইনি। কৈফিয়ত চাইনি। সিম্পলি আস্কিং।
–আমি আগেই বলেছি আমি তোমাকে পছন্দ করি না! আমায় নিয়ে কাহিনি করবে না সাগ্রত!
–উফ্…ওয়ান্স মোর! স্নেহময়ী প্লিজ ওয়ান্স মোর! তোমার মুখে আমার নাম শুনলে কতটা পিসফুল লাগে আই কান্ট স্যা!!
–পাগল তুমি? সেন্স অফ হিউমার কাজ করেনা?
–মেবি নো। সেন্স অফ হিউমার স্নেহার কাছে হার মানে।
–তুমি আমায় বিরক্ত করছো! কল করবে না আমায়! আর কি যেন বলেছিলে তোমার বাসায়? আমি বাইরে যাবো না? আমি আরো বেশি যাবো! দেখি কে আটকায় আমাকে!
–স্নেহময়ী বিলিভ করো! বাইরে তোমাকে এমনে এমনেই যেতে বারন করিনি! অবশ্যই কারন দর্শিয়ে তোমায় যেতে মানা করছি। প্লিজ কথা শুনো!
–আমি কিন্তু ফুপির কাছে বিচার দিবো!
–হাহা…তোমার ফুপি তোমার কথা শোনার জন্য বসে আছে? ওই মহিলা নিজে পারলে এক্ষুনি আমার কাছে তোমায় গছিয়ে দিয়ে যাবে।
–তুমি জানলে কি করে? কে বলেছে এসব? কে তুমি?
–এতো প্রশ্ন করা যাবে না। আমি কে তা তোমাকে জানতে দিবো না। এইটুকু শুনে রাখ। আমি তোমায় পছন্দ করি! তোমাকে পেতে খুনখারাবিও করতে পারি! আই সয়ার!স্নেহময়ী!!

-চলবে🍁

-Fabiyah_Momo🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here