ভুলবশত পর্ব-৮

0
1625

#ভুলবশত♥
#PART_08
#FABIYAH_MOMO🍁

ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে সাগ্রত। চোখমুখ ভারী নেশাগ্রস্ত। আমি ট্যাপের উপর থেকে হাত সরিয়ে দ্রুত একপা পিছিয়ে গেলাম। সাগ্রত চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠলো-

–তুমি সঙ্গে সাঙ্গু নিয়ে এসেছো কেন?

সাঙ্গু দ্বারা ইফরাকে বুঝিয়েছে। ভিন্ন নাম দিয়ে ইঙ্গিতে বলেছে। আমি ওয়াশরুমে একা একটা ছেলের সাথে। সে দরজা আটকিয়ে দিয়েছে ভেতর হতে। কি করার উদ্দেশ্য তার কোনো এসপার বুঝে উঠতে পারছিনা। এই মূহুর্তে চিৎকার করবো? ইফরা আমাকে বাচাতে আসবে? নাকি সাগ্রত মুখ চেপে বলে উঠবে- “স্নেহময়ী! স্টপ!! স্টপ! প্লিজ চিল্লাচিল্লি করো না। আমি খারাপ মতলবে আসি না।” চিন্তার চাদরে ডুবে থাকতেই সাগ্রত আমার কাছে আসলো। কাছে এসে ওর লেফট পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে আমার কপালে চালান দিলো। আমার কপাল মুছে টিস্যুটা দেখালো। টিস্যুটা হালকা ভিজে উঠেছে। তার মানে আমি সাগ্রতকে দেখেই কপালে ঘাম ছুটিয়ে ফেলেছি।সাগ্রত ত্যাড়াব্যাকা দাতে মুখ টিপে হাসছে। ওর হাসি দেখে মনে হচ্ছে আমি বিনোদন দিয়ে দাড়িয়ে আছি। ও বিনোদন পেয়ে হাসছে। অজান্তেই আমার হাত কপালে চলে গেল। কপালে ছুয়িয়ে দেখি সত্যি আমি আচমকা ভয় পেয়ে ঘাম ঝরিয়ে ফেলেছি। এখনো ঘামের ছিটেফোঁটা কপালে বাকি। সাগ্রত ঠোঁটে হালকা হেসে বলে উঠলো-

–স্নেহময়ী আমাকে ভয় পেলে চলবে না বুঝছো?? আমি ক্ষতি করার মতলবে থাকি না। ক্ষতি করলে আগেই সোজা হাত মেরে দিতাম। কিন্তু স্টিল কিছু করিনি। আই থিংক ওমন কিছু করবো না। সো ভয় পেও না স্নেহময়ী।

সাগ্রত আমাকে অভয় বানী দিলো বলে মনে হলেও সাগ্রতের প্রতি কথায় আলাদা করে “কিন্তু” লুকানো থাকে। এবারও সম্ভবত তাই হয়েছে। ওর কথার লুকানো ‘কিন্তু’টা আমি খুজে পেলাম না। সাগ্রত হঠাৎ আমার খুব কাছে চলে আসলো। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই কপালে উষ্ণ স্পর্শ একে দিলো। ও দুহাত দিয়ে আমার বাহু চেপে ধরে আছে। কপালে ঠোট ছুয়ে দিয়েছে। কেমন গা শিরশির করছে আমার। চোখ বন্ধ করে অন্য রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি। আমি ওকে বাধা দিয়ে ধাক্কা মেরে দৌড় দিবো হুশঁ আমার নেই। সাগ্রত আমায় ছেড়ে দিলো। চোখ খুলে ওর দিকে তাকাতেই সাগ্রত দরজা খুলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল। আমি হতভম্বের মতো ওয়াশরুমে দাড়িয়ে আছি। সাগ্রত কেন জলদি চলে গেল জানি না আমি।

আমিও ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ইফরার কাছে গেলাম। সাগ্রত ইফরার সাথে কথা বলছে। একদম স্বাভাবিক, একটু আগে আমার সাথে কান্ড কি করলো বোঝা মুশকিল! আমি আগের জায়গায় সোফাতে বসলাম। ইফরা সাগ্রতকে বলে উঠলো-
–আমি যদি আপনার বাসায় গল্পগুজব করতে আসি তাহলে খারাপ হবে? আসলে আপনাকে আমার বন্ধু হিসেবে বেশ ভালো লেগেছে।
–জ্বী আসবেন। সমস্যা নেই। আমি কারো বন্ধু হওয়ার সৌভাগ্য পেয়েছি বলে এটাই অনেক। সময় করে আসবেন। চা পানি খেয়ে যাবেন।
–আচ্ছা আপনার বন্ধু নেই? একা থাকেন ফ্ল্যাটে?
–আমি একা থাকি না। খালামনি থাকেন। বর্তমানে উনি রাজশাহীতে গ্রামে গিয়েছেন। আমার বন্ধু নেই।শুধু একজন আছে। নাম স্বাধীন।
–ওহ্….আপনার বাসা কোথায়? মানে বলতে চাচ্ছি কোথা থেকে এসেছেন?
–আমি নারায়ণগঞ্জ থাকি। মিরপুর থাকছি পড়াশোনার কারনে। তা আপনি উনার কে হন?
–আমি স্নেহার বেস্টফ্রেন্ড। বলতে পারেন আমার বোন।
–বাহ্। বান্ধুবী আবার বোন?
–হুম…আমাদের মধ্যে বান্ধুবী বান্ধুবী ফিলিংস কম। বোন টাইপ ভালোবাসা বেশি। পরিবারে কে কে আছেন আপনার?
সাগ্রত সব কথার জবাব হাসিখুশি দিলেও এই প্রশ্নে সে কিছুটা চুপ হয়ে গেছে। আমি নিজেই ওর মুখ থেকে জবাবটা শুনতে চাচ্ছি। এমন পচা ছেলের বাবা-মায়ের ফোন নাম্বার পেলে বিচার দিয়ে দিতাম!! সাগ্রত মলিন হাসি দিয়ে বলে উঠলো-
–কেউ নেই,

ইফরা আরেক প্রশ্ন করতে যেয়ে চুপ হয়ে গেল। ওর আর সাগ্রতকে পরের প্রশ্ন করা হলো না, নিরবতা পালন করলো। লক্ষ করলাম, সাগ্রত এতোক্ষন চোখে চোখ রেখে উত্তর দিচ্ছিলো এখন চোখ দুটো ফ্লোরের সাদা টাইলসে নেমে গেলো। ইফরা কাজটা ঠিক করেনি সাগ্রতকে এভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার। সাগ্রত কষ্ট পেয়েছে। পেলেও ছেলেটা হাসির আড়ালে মুখ লুকিয়ে আছে। বাবা-মা যার নেই। তার দুনিয়ায় আপনজন কেউ নেই। যারা ‘আপনজন’ বলে থাকে বেশিরভাগই স্বার্থ হাসিলের উছিলায় আমার মতো মগের মুল্লুক হয়ে থাকে। সময়ে সময়ে ইউজ করে। ওর চোখ দুটো উপরে উঠছে না। নিচু হয়ে আছে। ইফরা আমার দিকে ঠোট উল্টিয়ে তাকালে আমি চোখ রাঙিয়ে চুপ হতে বলি।
–একটা কথা বলবি না চল!

ইফরা আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে উঠে দাড়ালো। সাগ্রতকে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে উঠলো-
–আমরা আসি। আরেকদিন আসবো। আমার একটা জরুরী কাজের কথা মনে পড়ে গেছে। এক্ষুনি যেতে হবে।

সাগ্রত চোখ উঠিয়ে তাকালো। ইফরার পেচালে খারাপ লাগলেও স্নেহার সাথে থাকতে সেই খারাপ লাগা মিইয়ে যায়।তবুও সাগ্রত ইফরাকে যেতে বারন করলো না। স্নেহা ও ইফরাকে দরজা পযর্ন্ত এগিয়ে দিলো। ওরা চলে গেলো। সাগ্রত দরজা ধরে হাসিমুখে বিদায় দিলো। দরজা লাগাতেই পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। হাটুতে মাথা লাগিয়ে বসে আছে সাগ্রত। চোখ বন্ধ করে সে স্নেহার মুখ দেখার চেষ্টা করছে। স্নেহার হাসি তার বড্ড প্রিয়।কল্পনায় স্নেহার মুখের উপর কৃত্রিম হাসি দেওয়া একটা ছবি একে নিলো। ছবিটা কি দারুন লাগছে। অসাধারণ লাগছে। কোনোভাবে যদি ছবিটা কল্পনা থেকে বাস্তবে আনা যেতো স্নেহাকে স্নেহময়ী হিসেবে বাহুডোরে রাখা যেতো। তাহলে সাগ্রতের একাকিত্বের জীবনে কেউ একজন চলে আসতো। অগোছালো জীবনকে রঙতুলির মতো রঙিন করে দিতো। সাগ্রতের ঠোঁটে তখন বাকা দাতের হাসি সারাক্ষন থাকতো। ঝলমলে চোখের উজ্জ্বলতা অন্যরকম হতো। সবই পাল্টে যেতো।

সন্ধ্যায় টিভির রুমে বই নিয়ে বসে আছি। চোখে মোটামুটি কম পাওয়ারের চশমা আটা। মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছি। সাফা আপুর মামলা পুলিশ পযর্ন্ত পৌছেছে। এখন সব তদন্ত করে পুলিশ দেখবে। ফুপাজি কুমিল্লা থেকে আসতে আরো কিছুদিন টাইম নিবেন। ফুপি কান্নাকাটি অফ করলেও সুযোগ পেলে হাউমাউ করে কাদেন। আমি মাথা ঠান্ডা করার জন্য বইয়ের লাইনের উপর চোখ বুলাচ্ছি। ইফরাকে বিদায় দেওয়ার পর থেকে এই পযর্ন্ত দশবার কপালে চুমু দেওয়ার জায়গায় হাত লাগিয়েছি। আয়নায় তাকিয়ে তাকিয়ে চুমু দেওয়ার জায়গাটা বুলাই। কি যে করি! সহজ আন্ঞ্চলিক ভাষায় বলতে গেলে আমার মাথা “আউলা” হয়ে আছে। সাগ্রত…সাগ্রত… সাগ্রত!! সাগ্রত ঘুরছে! খালি সাগ্রতের কাছে আসার মুহূর্ত স্মরণ হচ্ছে। কি জাদু করে দিলো ভুলতেও পারছিনা!! হুর.. কপালে শান্তির ছোঁয়া নেই!! ছোঁয়ার নামে যেই ছোঁয়া পেয়েছি এখন দেখছি ভুলতেও পারছিনা। সাবান পানি দিয়ে ঘষলেও চুমুর জায়গা আগের মতো হবে না!! জ্বালা আর ঝামেলা!!

-চলবে🍁

-Fabiyah_Momo🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here