গল্প: ভুলের মাশুল
পর্ব: ১৬
লেখক: হানিফ আহমেদ
অর্ণব: তুই?
১ম: হ্যাঁ আমি।
অর্ণব: বিশ্বাসঘাতক, আমার সাথে তোর কিসের শত্রুতা?
১ম: হা হা হা, (অট্ট হাসিতে মেতে উঠে)
অর্ণব: হাসি থামাবি নাকি একবারে জীবনের জন্য হাসি থামিয়ে দেবো।
রাহিন: অর্ণব কে ও?
অর্ণব: আব্বুর অফিসের পিএ, আকাশ মাহমুদ নাম।
১ম: হাহাহাহা, আকাশ মাহমুদ না, বল অজয় আহমেদ জয়।
অর্ণব: মানে?
জয়: জিনাদকে ছিনিস?
অর্ণব: কোন জিনাদ? ওই যে ২০১৭এ ডাকাত জিনাদ যাকে গুলি করে মেরেছিলাম?
জয়: হুম সেই জিনাদ যাকে তুই মেরেছিস, আমি জিনাদের ভাই জয়।
এবার ছিনতে পারছিস আমায়।
(জিনাদ ছিলো এক বড় ডাকাত গ্যাং এর লিডার। যে এক বাসায় ডাকাতি করতে গিয়ে, নির্দোষ চারজনকে
নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলো।
ওদের দোষ ছিলো, ডাকাতির সময় বাধা দিছিলো, সব চেয়ে কষ্টের কথা ছিলো ওই চারজনের মধ্যে দুইজন ছিলো ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র। আর ওদের মা বাবা, বাবা ছিলো অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী অফিসার।
সরকারের আদেশ ছিলো ওই ডাকাত দলকে সরাসরি ফায়ারিং করে হত্যা করা।
ওদের নির্মমভাবে হত্যা করাটা বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছিলো, যেটা রেজা দেখেছিলো।
তারপরেই প্রায় ৬ মাস চেষ্টা করে জিহাদ সহ চারজন কে মারে।
জিনাদকে অর্ণব তার ঘরেই মেরেছে,
প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলো, কিন্তু সরকারের অর্ডার।
এই ফাস্ট অর্ণব কাওকে গুলি করার সময় চোখ দিয়ে পানি পরছিলো।
জিনাদের বাবা বলেছিলো, ওরে যাবজ্জীবন দিয়ে দাও তারপরেও জানে মেরো না।
রেজা তখন ওই ভিডিও দেখায়,
যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে,
ওই ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র দুটির পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলছে জিনাদ, তখন ওদের বাবা মার করা আর্তনাদ জিনাদের কানে যায় নি।
খুব নির্মম ভাবে মেরেছে চারজনকে, যেই ভিডিওটা দেখে জিনাদের বাবা আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
যেই নির্মম হত্যার ভিডিও দেখে রেজার মতো পাথর মনের মানুষ শব্দ করেই কেঁদেছিলো।
অর্ণব পর পর দুটু গুলি করে জিনাদের বুকে আর গলায়।
মুহূর্তেই জিনাদের দেহ ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
অর্ণব: চাচা, আপনার ফ্যামিলিকে আমি চালাবো, চিন্তা করবে না আমি মাসে মাসে ৩০ হাজার টাকা দেবো,
জিনাদের মা বলেছিলো,
বাবা টাকা চাই না, সত্যি একটু আগেও আমার ছেলের জন্য কষ্ট হচ্ছিলো, কিন্তু এই নির্মম ভিডিও দেখে খুব অনুতপ্ত লাগছে নিজেকে, আমার পেট সার্থক না
বিঃদ্রঃ- আমার পাশের গ্রামে এমন নির্মম হত্যাকান্ড হয় ২০১৫ তে, সত্যি এমন এক জনকে ওই ডাকাত দল হত্যা করেছিলো যার জন্ম হয়তো ১০০ বছরে একবার হয়। আমার বড় ভাইয়ার ক্লাসমেট। ভাইয়া কে কাঁদতে দেখেছি ভাইয়ার ক্লাসমেট এর হত্যার কথা শুনে। এক সাথে এক ভার্সিটিতেই পড়তেন।
যার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলছিলো, নাখ ফাটিয়ে ফেলছিলো।
দোষ একটাই ছিলো ওই ভাইয়াটা ডাকাত দলের একজনকে চিনে ফেলছিলেন😭।)
অর্ণব প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছে ওই ফ্যামিলিকে, এখনো দেয়।
অর্ণব: চিনেছি। এতোদিন দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছিলাম।
জয়: হাহাহা, তুই আমার ভাইকে মেরেছিস, আর ভাবছিস তুই বেঁচে থাকবি।
অর্ণব: আমি কোনো নির্দোষ কে মারিনি। কোনো মানুষ নামক পশুকে মেরেছি।
জয়: এটাই তোর দোষ, আমার ফ্যামিলিকে তুই কিনে নিয়েছিস, তাতে কি, আমি কি ভুলে গেছি? আমার ভাইয়ের মৃত্যুর কথা।
অর্ণব: হাহাহাহা, তোর মা বাবা জানে তুই তোর ভাইয়ের মতো।
জয়: তোর জন্য আমার ভাইকে হারিয়েছি। নিজের ফ্যামিলি আমায় বাসা থেকে বের করে দিয়েছে, কারণ আমিও ডাকাতি করতাম।
সেদিন মায়ের মুখ থেকে শুনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোকে আমি বাঁচিয়ে রাখবো না। তাই তোর বাবার অফিসে কাজ নিয়েছিলাম।
তোকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়েছিলাম। ভাগ্যিস বেঁচে গেছিস।
তোর মা বাবাকে আমিই আক্রমণ করেছিলাম।
তোকে পাইনি সেদিন এটাই আমার ভুল।
অর্ণব: জানিস একটা কথা,
~সামনে হাত দিয়ে তালি দেওয়া খুব সহজ।
কিন্তু হাত দুটু পিছনে নিয়ে তালি বাজানোটা খুব কঠিন।~
তুই না কোনো ভাবেই তালি বাজাতে পারিস না।
কারণ তুই হলি একটা কাপুরুষ।
জয়: হুম আমি কাপুরুষ, কিন্তু তোকে বাঁচতে দেবো না বলেই অর্ণবের দিকে বন্ধুক তাগ করে,
তখনি একটা গুলির আওয়াজ হয়।
জয় মাটিতে তলিয়ে পরে।
গুলিটা হানিফ করেছে,
রাহিন: হানিফ তুমি এটা কি করলে?
হানিফ কোনো কথাই বলল না জয়ের সাথে থাকা বাকি যে কয়টা বেঁচে ছিলো ওগুলোকেও গুলি করে,
জয়ের সাথে থাকা ৬ জনি মারা জায়।
জয় এর শরীর ছুঁয়ে গুলিটা বের হয়ে গেছে। সব কয়টাই শেষ।
অর্ণব: হানিফ এটা কি করলি?
হানিফ পকেটে থাকা একটা কার্ড দেখালো অর্ণব আর রাহিনকে।
অর্ণব অবাক হয়ে
অর্ণব: কিভাবে এটা সম্ভব, আর কবে থেকে?
হানিফ: কয়েকদিন হলো আজ জয়েন হয়েছি,
রাহিন: মানে? কি বলছিস এসব?
হানিফ: যখন জানতে পারলাম অর্ণব CID officer তখন আমিও বসে থাকি নি।
রেজা স্যারের হাতে পায়ে ধরে জয়েন হয়েছি।
খুব কঠিন ইন্টার্ভিউ নিয়েছেন আমার,
স্যার ডিসিপির সাথে কথা বলেই আমায় নিয়েছেন।
আর আজ রেজা স্যার’ই আমায় তোদের সাথে পাঠিয়েছেন।
অর্ণব: বাহ বাহ, বড় হয়ে গেছিস?
হানিফ: হুম, আমি থাকতে তোর কোনো ক্ষতি হবে না।
রাহিন এম্বুলেন্স কে ফোন দিয়ে আনায়।
আজ আর টুটুলকে ধরতে যাওয়া হয় নি।
অর্ণব আজ খুব খুশি, সে তার সব শত্রুকে শেষ করে দিয়েছে।
এখন সে খুব হ্যাপি।
কিন্তু তার অজান্তেই যে অন্য কেউ তার শত্রু হচ্ছে সেটা তো তার অজানা।
অর্ণবের বাবা শুনে একটু কষ্ট পান, কারণ জয়কে খুব ভালোবাসতেন।
কাজের জন্য পারফেক্ট ছিলো।
আজ সোমবার, মেঘলা দিন, অর্ণবের বাগানের লিচু পেকেছে। অর্ণি কয়েকটা পাকা লিচু দেখে পেরে আনে।
অর্ণি ভাবছে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাচ্ছে। কিন্তু সামনে কি হবে তা কি অর্ণি জানে?
মেঘলা আকাশ আর ঠাণ্ডা ঝিম ধরা বাতাস।
অর্ণব ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।
খুব আগ্রহ নিয়ে আছে বৃষ্টির অপেক্ষায়।
আজ সে বৃষ্টিতে ভিজবে।
ছেলেরা নাকি বৃষ্টিতে ভিজে না। কিন্তু অর্ণব অন্য রকম, বৃষ্টি দেখলে সে আর ঠিক থাকে না।
অপেক্ষা করেও লাভ হলো না অর্ণবের, মেঘ কেটে হালকা রোধ উঠেছে।
আজ সে বৃষ্টির সাথে আড়ি দিলো।
রাত গভীর হলো অর্ণি অর্ণবের বুকে শুয়ে আছে।
অর্ণি এই জায়গাতেই শান্তি পায়।
কারেন্ট চলে গেছে।
বাহিরে ধমকা হাওয়া বইছে।
অর্ণির মনে একটা প্রশ্ন, ভাবছে অর্ণবকে করবে কি না।
অর্ণি: অর্ণব,
অর্ণব: হুম বলো।
অর্ণি: ইশিতা আপুকে পেলে কি আমায় ভুলে যাবে?
অর্ণব: খুঁজে পেলে তখন ভাববো, (শুয়া থেকে উঠতে উঠতে বললো)
অর্ণি: আমি দোয়া করি ইশিতাকে খুঁজে পান।
অর্ণব: হুম, অনেক দিনের অপেক্ষা যে।
অর্ণি: একটা কথা জানো?
অর্ণব: কি?
অর্ণি: সব অপেক্ষা কে ভালোবাসা বলে না। কিছু অপেক্ষা পাগলামোও হয়।
অর্ণব: হুম, ভালোবাসা টা সত্য ছিলো তাই অপেক্ষাটা পাগলামোই।
অর্ণি: রেগে যাচ্ছো কেন।
অর্ণব কথা বললো না।
দু’জন দু দিকে ফিরে ঘুমিয়ে যায়।
অর্ণব: আমায় ডিভোর্স দাও আমায়।
এই কাগজে সাইন করো।
অর্ণি: অর্ণব আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি।
একটা ভুলের জন্য এমন শাস্তি দিয়ো না আমায়।
অর্ণব: হা হা, ভালোবাসা, যে ভালোবাসায় অপমান আছে সেটা ভালোবাসা না,
সাইন করে আমায় মুক্তি দে?
ফজরের আজান পড়ে।
অর্ণির ঘুম ভেঙে যায়।
পাশ ফিরে তাকালো অর্ণব গভীর ঘুমে মগ্ন।
এতোদিনেত ক্লান্তি মন, হালকা বিশ্রামেই সেই মায়াবী রুপ ফুটে উঠেছে।
অর্ণি স্বপ্নের কথা মনে করে, দীর্ঘশ্বাস নিলো। সত্যিই কি অর্ণব এমন করবে আমার সাথে।
শুনেছি কিছু কিছু স্বপ্ন নাকি সত্য হয়।
বাঁচতে পারবো কি এই অর্ণব বিহীন আমিটা।
~যে আমাতেই আছে তার ছোঁয়া,
প্রতিটা পরশে পেয়েছি ভালোবাসার আশা~
অর্ণি নামাজ পড়ে, আল্লাহ্ এর কাছে চাইলো কপালে যা আছে তাই যেন হয়।
ভাগ্য নাকি নেক আমল দ্বারা পরিবর্তন হয়।
আমিতো পাপি।
সকাল ১১টা অর্ণবের ফ্যামিলি তৈরি হচ্ছে আজ ওরা নিজের জন্মস্থানে যাবে।
অর্ণবের সব কয়টা ফ্রেন্ডসকে সাথে নিয়ে যাচ্ছে।
অর্ণি আজ খুশি গ্রামে যাবে সে।
শহরেই তার জন্ম। কখনো গ্রামে যাওয়া হয় নি।
অর্ণি আজ কালো শাড়ি পড়েছে।
চোখের কালো কাজল যেন বারবার লেফটে যাচ্ছে।
পিছন থেকে
অর্ণব: আমি কাজল লাগিয়ে দেই?
অর্ণি কিছু না বলে পাশ ফিরে তাকিয়ে,
অর্ণি: ~নিজের মালিকানাধীন রাস্তায় যদি কাদা যমে, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব নিজেরি, কারো পারমিশন নিতে হয় না।~
অর্ণব: বাহহ! ”
অর্ণব খুব যত্ন করে ওই হরিণী চোখে কাজল পড়িয়ে দিলো।
নিজের গোলাফী ঠোঁট জোড়া অর্ণির চোখে ছুঁয়ে দিয়ে,
~কালো শাড়ির মায়াবী কন্যা,
রুপে হয়েছি পাগল দিওয়ানা।
হরিণী চোখে কালো কাজল,
ওই চাওনিতে হয়েছি পাগল।
চোখে থাকা মায়ার দৃষ্টি,
ভুলিয়ে দিচ্ছো হাজারো স্মৃতি।
অর্ণবের মন চাচ্ছে এভাবেই অর্ণিকে তার মনের কথা শুনাক।
তারপরেও কোথাও যেন বাধা পাচ্ছে।
ওরা দুটু গাড়ি করে যাচ্ছে,
অর্ণব এর মা বাবা আর নিধী একটাতে ড্রাইভ করছে সজিব।
অন্যটাতে অর্ণবরা সব।
মৌ: অর্ণব তুই আমাদের আর কতক্ষণ গাড়িতে বসিয়ে রাখবি?
অর্ণব: মনা আমরা বাড়ি যাইতে অইলে একটু অপেক্ষা তো করতায় অইবায়।
অর্ণি: এসব কি ভাষা (অবাক হয়ে)
রাতুল: সিলেটি ভাষা,(কুক খাচ্ছে আর)
অর্ণব: আচ্ছা তোমরা কি গ্রামের ভাষা বুঝবা সবাই।
হানিফ: আমি বুঝবো,
মৌ: একটু আধটু বুঝবো।
প্রায় ৫ঘন্টা অপেক্ষার পর গাড়ি দুটু হবিগঞ্জ পার হলো।
আরো ১ ঘন্টা পরেই নিজের জন্ম ভূমিতে পা রাখবে অর্ণব,
বছরে ৪&৫ বার আসা হয়।
মৌ আর অর্ণি রাস্তার পাশে সুন্দর সুন্দর লোকালয় দেখে ওদের চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।
অর্ণব:
~আমাদের ছোট গ্রাম,
এপাড়ায় আছে আমার শরীরের ঘ্রাণ।
নেই কোনো দুশমন,
আছে বন্ধু, আপন পরিজন।
ছোট ছোট বিল,
যেখানে ধরেছি কই,মাগুর, শিং।
এগাছে ওগাছে এখনো কতো স্মৃতি,
কতোই না খেলেছি বাঘবন্দি।~
হানিফ: বাহ, আজ না বলতেই অর্ণবের মুখে কথার ঝুরি।
মৌ: বুঝলি না, নিজের বাড়িতে যাচ্ছে খুশিতো হবেই।
দিপু: পিছনের গাড়িটা সেই ঢাকা থেকে আমাদের ফলো করে আসছে। [গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বললো]
অর্ণব: কোন গাড়িটা?
দিপু: পিছনের কালো রঙ এর গাড়িটা, সামনে জিরাফ এর স্ট্যাচু লাগানো।
জিরাফের স্ট্যাচু শুনে অর্ণি ভয় পেয়ে যায়।
অর্ণি: ও এখানে কেন এলো? আমায় কি শান্তিতে থাকতে দিবে না? (মনে মনেই বললো)
অর্ণব: দিপু গাড়িটা থামা তো।
মৌ: তুই আবার ঝগড়া করবি নাকি?
অর্ণব: না, দেখ কি হয়,
দিপু গাড়ি থামাতেই।
পিছনে থাকা গাড়িটি একটু বেশি স্পিডে ওদেরকে অতিক্রম করে দূরে গিয়ে একটা দোখানে দাঁড়ায়।
অর্ণব: কি জানি কে এ লোক।
দিপু গাড়ি স্টার্ট দে?
গ্রামের ছোট আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে।
রাস্তার দু’পাশে পিচ্চিরা মারবেল খেলছে, এখন তাদের মারবেল খেলার বয়স।
আরো একটু সামনে গিয়েই গাড়ি গুলো থামলো।
বাড়ির গেইট খুলে প্রায় ৮&১০ জন বের হয়ে আসে গাড়ির শব্দ শুনে।
অর্ণবের চাচ্চু রায়হান আহমেদ গিয়ে রফিকুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে।
অনেক দিন পর দেখা হলে যা হয়। অর্ণবের ফুপু কান্না করছেন।
ভাইকে পেলে কে না কান্না করে।
রায়হান ধমক দিয়ে বললো।
রায়হান: তুই কান্না থামাবি নাকি ওদের বাড়ির ভিতর নিয়ে যাবি।
অর্ণবের ফুপু শাহানাজ বেগম।
শাহানাজ: যাচ্ছিতো, শান্তি মতো কাঁদতেও দিবে না,
(শাহানাজ অর্ণবের মাত্র ৫ বছরের বড়)
শাহানাজ: অর্ণব খুব মিষ্টি মেয়ে বিয়ে করেছিস তো?
অর্ণব: ফুঁপি তুমি অর্ণিকে এর মধ্যে খেয়েও দেখে ফেলছো অর্ণি মিষ্টি নাকি তিতা।
শাহানাজ: হয় বাবা অর্ণব তোমার বউরে লবণ ছাড়াই খাইছি,
হানিফ: সবাই অর্ণবকে দেখলো, আরো যে কয়েকজন মিষ্টি মানুষ আছে এদের কেও দেখে না।(ন্যাকা কান্না করে)
শাহানাজ: তোদের আর দেখবো কি,
মৌ: তাই তো দেখবা কি।
অর্ণবের ফ্রেন্ডসরা আরে অনেকবার এসেছে অর্ণবের বাড়িতে।
এবার শুধু নতুনের মাঝে অর্ণিই।
অর্ণি অর্ণবের বাবার এতো বড় বাড়ি দেখে বিশ্বাসি করতে পারছে না,গ্রামে এতো বড় বাড়ি থাকতে পারে।
সবাইকে কাটা আম দেওয়া হয় খাওয়ার জন্য।
অর্ণবের চাচ্চুর দুই ছেলে, একটা ক্লাস এইটে পড়ে নাম মামুন।
আর অন্যটা নিধীর বয়সী,ফাইবে পড়ে। নাম মাহমুদ।
আর ওর ফুঁপির ১মেয়ে নাম নিলীমা।
৩ বছর বয়স, জামাই আমেরিকা থাকে।
শাহানাজ: অর্ণব বিয়ে তো একা একা করলি, ভাবছিলাম বউকে সাথে করে যখন নিয়ে আসবি, তখন বউয়ের পেট একটু মোটা থাকবে।
অর্ণি কিছুই বুঝে নি।
অর্ণব ধমক দিয়ে
অর্ণব: ফুঁপি আমি কিন্তু এখনো ভালো চুল টানতে পারি, ভুলে যেওনা তুমি?
শাহনাজ: দেখো বউমা নিজের ফুপিকে কি বলে,
অর্ণি কিছু বলতে যাবে তখন অর্ণবের ফোনে একটা ফোন আসে, সে বাহিরে চলে যায়।
রাতে খাবার সময়,
কাজের মহিলাটি,
মহিলা: ভাইসাব মাংসের চালনটা লন,
অর্ণি: মৌ চালন কি?
মৌ: তরকারিকে ওরা চালন বলে।
অর্ণি: আমি তো এদের অনেক কথাই বুঝি না।
মৌ: হাহাহা, অর্ণবকে কখনো বলো নি নিজের গ্রামের ভাষায় কথা বলতে?
অর্ণি: না তো।
ওরা অর্ণবের গ্রামের বাড়িতে দুইদিন থেকে চলে আসে আবার নিজের চেনা শহরে।
(বিঃদ্রঃ গ্রামের সিন নিয়ে প্রায় তিন পার্ট কাহিনী ছিলো।
কমিয়ে এনেছি। একটু বেশিই রোমান্টিক সিন ছিলো গ্রামে, আর কিছু অজানা তথ্য, সময়ের অভাবে কাহিনীটা কমিয়ে অন্যভাবে লিখতাছি)
অর্ণব আর হানিফ দুজনি CID তে মন দিয়ে কাজ করছে, গ্রাম থেকে এসেই ওরা টুটুল সহ বাকি সবাইকে ধরে ফেলে। ওদের এই বাজে কাজের নাটেরগুরু হলো বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ভালো মুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মাহবুবুল হক।
সবাইকেই ধরা হয়েছে।
জাহানারা: অর্ণি মা একটা কথা বলবো?
অর্ণি: বলো আম্মু।
জাহানারা: আমায় একটা নাতি বা নাতনী এনে দে।
খুব ইচ্ছারে মা
কিন্তু অর্ণবকে বলার সাহস পাচ্ছি না।
অর্ণি: আম্মু আমি কি পাবো সেই সাহসটা।
জাহানারা: চেষ্টা কর মা।
অর্ণি: আচ্ছা আম্মু।
~একটি ভালোবাসা তখনি পূর্ণতা পায়।
যখন সেই ভালোবাসায় পবিত্র একটা বন্ধন সৃষ্টি হয়।~
অর্ণি এই ছোট্ট পোস্টটা এফবিতে করে,
অর্ণবকে দেখানোর উদ্দেশ্যেই।
অর্ণব পোস্টটা দেখে।
মনে মনে হাসে,
~কিছু ভালোবাসায় ধৈর্য থাকতে হয়।
স্পর্শে সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।
অপেক্ষাতেও কখনো কখনো ভালোবাসা পূর্ণ হয়।~
অর্ণি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে,
কপালে থাকলে মানুষ সোনার খনি পেয়ে যায়।
আমিও পাবো হয়তো।
অপেক্ষার দিন শেষ হলে।
আজ রাতটা খুব শীতল।
এক রোমান্টিক সময় কাটানোর মতো রাত।
অর্ণব: একটা মজার গল্প শুনবা? (অর্ণির পেটে মাথা রেখে)
অর্ণি: বলো,
অর্ণব: দুই নতুন বিয়ে করা দাম্পত্যী। তাদের বিয়েটা শীতকালে হয়।
অর্ণি: তারপর,
অর্ণব: কথা বলবে না মধ্যে আমি বলছি তো,
অর্ণি’: হুম
অর্ণব: বাসর ঘরে বউ স্ট্যাটাস দিয়েছে,
শীতের রাতে পাশে বর আছে,
তাই আর কম্বলের প্রয়োজন নাই।
সেই পোস্টে বর তার ফেইক আইডি দিয়ে কমেন্ট করেছে।
কম্বলের প্রয়োজন নাই বলছেন,
সারারাত কি কাজ করবে, এতো শক্তি কি আছে তোমার হাব্বির।
বউ রেগে গিয়ে ওই আইডিটাকে ব্লক দিয়ে দেয়।
বউ বাসর ঘরে আবদার করলো টুইন বেবি চায়।
বর হালকা হেসে বললো।
আমায় কয়দিন টাইম দাও।
তারপর থ্রিপল বেবি এনে দেবো।
বউটা হেব্বি রেগে কিউট করে বকা দিয়ে রাত ১টায় পোস্ট করলো।
আমার বরের মতো আর কোনো বর যেন কারো কপালে না থাকে।
বর এইটাতে তার আরেকটা আইডি দিয়ে কমেন্ট করলো,
যাক আপনার তাইলে কম্বলের প্রয়োজন হলো।
বউ এটাও ব্লক দিলো।
তিনদিন পর বর কে আবার বললো।
বউ: এইবার আর পারছিনা।
একতো শীত, তাও পাশে বর, একটু শান্তি দিতে তো পারো।
বর হালকা হেলে বললো।
বর: আমি ফরজ গোসল করতে পারবো না এই শীতে।
গরম আসুক তখন দুজন কাজ করবো। আর সপ্তাহে তিনদিন কাজ করবো। কেমন?
বউ রেগে গিয়ে,
কি বর পাইলাম।
ফরজ গোসলের ভয়ে সঙ্গম করতে অনিচ্ছা।
সকালে উঠে দেখে বর গোসল করে।
বউ: কিগো এতো সকালে গোসল করছো যে?
বর: কারো অভিশাপ লেগেছে।
তাই ঘুমে স্বপ্নদোষ হয়েছে।
নামাজ পড়তে হবে তাই গোসল করলাম।
বউ হালকা হেসে
বউ: তাই তো বলছিলাম রাত গুলো কাজে লাগাও, এভাবে নষ্ট না করে টুইন বেবি আনতে সাহায্য করো।
গরম পানি আমিই করে দেবো।
বর: হুম এই একটা জিনিশ হাজারো ছেলেদের মাঘমাস এর মাঠ কাপানো শীতেও গোসল করায়।
বউ হেসে।
তাইতো।
(কেউ সিরিয়াসলি নিবা না)
অর্ণি: তার মানে তোমার ইচ্ছা করছে বুঝি ভালোবাসা নিতে। কিন্তু গোসলের ভয়ে পারছো না।
অর্ণব: কচু, আমি আরো কয়েকটা দিন পর।
আর এই অর্ণব প্রতি শীতে প্রতিদিন গোসল করে।
অর্ণি হেসে
অর্ণি: বুঝি বুঝি।
অর্ণব: ইশিতাকে পেয়ে নেই তারপর আমরা দুজন এক হবো।
অর্ণি: যদি না পাও।
তাহলে?
অর্ণব: এমন বলো না।
অর্ণি: অর্ণব সত্যি আমায় তোমায় অনেক ভালোবাসি।
প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।
~আমি গভীর জঙ্গলে চাদর হবো,
দেবো না ছুঁতে কোনো পশুর পরশ।
গভীর জঙ্গলে ক্ষুধা মেটাবো তোমার,
আমার ওই চিকণ লাল ঠোঁটের ছুঁয়ায়।
তুমি চাইলে হবো পাখি,
শুনাবো মধুর গান দিনভর রাত্রি।
দাও ভালোবাসা, নাও ভালোবাসা,
শুধু আপন করো আমায়,
আমি পিঞ্জিরা বানাবো তোমায়।~
অর্ণব সত্যি অনেক অনেক ভালোবাসি।
অর্ণব: রাত হয়েছে ঘুমাও।
অর্ণি কষ্ট পেলো।
তার কথা গুলো কোনো মূল্য দিলো না।
অর্ণি একটু অবহেলা সহ্য হয় না।
সকালে অর্ণব বেরিয়ে গেছে,
আজ পত্রিকায় ইশিতার ছবি দিয়েছে।
প্রতিটা নিউজে আজ ইশিতাময়।
খুব তাড়াতাড়ি দেখা পাবে ইশিতার।
অর্ণি: আম্মু আমি একটু শপিংে যাবো।
জাহানারা: অর্ণব বাসায় নায়, একা যাবি কিভাবে?
অর্ণি: মিরা এসেছে গাড়ি নিয়ে, আমি দুপুরের ভিতর চলে আসবো।
জাহানারা: অর্ণবকে ফোন দিয়ে বলে যা।
অর্ণি: আচ্ছা,
অর্ণি জাহানারা বেগমের সামনে পারমিশন নিয়ে শপিংে গেলো।
অর্ণব আর হানিফ বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে।
হানিফ তার ভালোবাসার মানুষটির কথা বলছিলো অর্ণবকে।
খুব তাড়াতাড়ি প্রপোজ করবে। বিশ্বাস ফিরিয়ে দিবে না।
হঠাৎ অর্ণবের ফোনে একটা কল আসলো।
অর্ণব: হ্যালো!
অচেনা: নেট অন করো মিস্টার অর্ণব।
অর্ণব ফোন কেটে নেট অন করলো।
মেসেঞ্জারে ৪ মিনিটের একটা ভিডিও এসেছে।
অর্ণব ভিডিওটা দেখে রেগে আগুনে গর্জে উঠে।
হানিফ অর্ণবের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে যা দেখলো সেও অবাক হলো।
চলবে,,,
(গল্পের কিছু কাহিনী কমিয়ে দিছি।
এই গল্পের কাহিনীতে রোমান্টিক সোভা পায় না।
গল্পের ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমার অবস্থা খুব খারাপ😰। ভবিষ্যৎটা জানিনা কেমন কাটবে আমার, আমার ফ্যামিলির😰
গল্পের সাথেই থাকুন।)
ভালো থাকবেন।
ঘরেই থাকবেন।