ভুলের মাশুল পর্ব: ৭

0
1143

. গল্প: ভুলের মাশুল
পর্ব: ৭
লেখক: হানিফ আহমেদ

১১টার দিকে অর্ণির ফ্যামিলির সবাই আসে।
কিন্তু অর্ণব এর কোনো ফ্রেন্ডসরা আসে নি। অর্ণব কিছুক্ষণ পর পর মেইন দরজার দিকে তাকাচ্ছে।
১১:৩০এ অর্ণব এর সব কয়টা ফ্রেন্ড চলে আসে। ওদের দেখে অর্ণব এর মুখে হাসি ফুটে যায়।

অর্ণির মাবাবা আর সবাই অর্ণবের বাবামার সাথে কথা বলছে।
সাহিল অর্ণিকে দেখার জন্য উপরে যায়, গিয়ে দেখে অর্ণি তার যে কয়টা ফ্রেন্ড এসেছে ওদের সাথে গল্প করছে।
সাহিল গিয়ে অর্ণির সামনে দাঁড়ায়। অর্ণি সাহিলকে দেখে গিয়ে ঝাপটে ধরলো। কান্না করেছে অর্ণি, মাঝে মাত্র তিন দিন দেখেনি সে সাহিলকে তারপরেও মনে হচ্ছে যেন ৩ বছর দেখেনি।
সাহিল: আরে পাগলি কান্না করছিস কেন?
অর্ণি: কতো দিন দেখিনি তোমায় (কান্না করছেই করছে)
সাহিল: পাগলি কি বলছিস মাত্র ৩ দিন হলো, আর বলছিস কতো দিন?
অর্ণি: উহু! তুমি বুঝবে কি, আমায় তো ভালোই বাসো না?
সাহিল অর্ণিকে ছাড়িয়ে ওর সামনে এনে ভালোই বুঝতে পারছে অর্ণব অর্ণিকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে, চোখের নিচে কালো দাগ দেখেই সে বুঝতেছে তারপরেও হাসি মুখে বললো।
সাহিল: হুম আমি তো তোকে ভালোই বাসি না
খুব পচা আমি তাই না?
অর্ণি: হুম খুব পচা, এত্তখানি পচা(হাত দিয়ে দেখালো)
সাহিল হেসে বললো
সাহিল: হু এই পচা ভাইটা তাইলে চলে যাই?
অর্ণি: শুধু পা টা এগিয়ে দেখো কি করি আমি?
সাহিল: গুণ্ডি বুড়ি আমার?
পাশ থেকে মিরা বললো
মিরা: ভাইয়া ওতো লেডি গুণ্ডি।
ওরা খুব গল্প করছে
সাহিল: অর্ণি অর্ণব কইরে?
অর্ণি: নিচে আছে হয়তো দেখো নি তুমি?
সাহিল: আচ্ছা তোরা গল্প কর আমি অর্ণবের কাছে যাই!
অর্ণি: হুম যাও।

(বিঃদ্রঃ আমি গল্পে সবার কথোপকথন এর সময় প্রতিজনের নাম ব্যবহার করবো, এতে বুঝতে সুবিধা হবে তোমাদের)

সাহিল খুঁজতে খুঁজতে অর্ণবের বাগানে গিয়ে দেখে ওরা সাতজন বসে গল্প করছে, সাহিল ওদের কাছে গিয়ে সবাইকে সালাম দেয়।
সাহিল:আসসালামু আলাইকুম!
ওরা: ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন ভাইয়া আপনি? (সবাই এক সাথে প্রশ্ন করলো)
সাহিল: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তোমরা কেমন আছো?
অর্ণব: আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবাই ভালো আছি। অর্ণির সাথে দেখা হয়েছে ভাইয়া?
সাহিল: হুম।
অর্ণব: তোরা বাসার ভিতরে যা, আর বললি না আমায় এখনো এসবের মধ্যে কি আছে? (বক্স গুলোর দিকে ইশারা করে)
হানিফ: এই সব গুলো আমাদের ভাবির জন্য, তোকে বলবো কেন? “চল চল সবাই আমরা ভিতরে যাই?”
ওরা ভিতরে চলে যায়
অর্ণব আর সাহিল বাগানে বসে আছে।

সাহিল এটা দেখে খুশি হলো, যে অর্ণবের ফ্রেন্ড গুলো খুব ভালো।
সাহিলে বয়স এইতো ২৩শে মার্চ ৩১ বছর হলো। দেখতে অর্ণির মতোই কিউট ভাই বোনের মধ্যে অনেক মিল আছে,অর্ণি সাহিলের ১০ বছরের ছোট।
সাহিলকে চুপ থাকতে দেখে অর্ণব বললো।
অর্ণব: ভাইয়া চা কফি নাকি জুস খাবেন?
সাহিল: আমি অর্ণির পাশে বসে অনেক কিছুই খেয়ে আসলাম। তোমাকে দেখতে পাই নি, তাই খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে আসলাম।
অর্ণব: ওও, ওদের সাথে গল্প করছিলাম।
সাহিল: অর্ণব আমি অর্ণির হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি!
অর্ণব: ভাইয়া ছিঃ ছিঃ এসব কি বলছেন? অর্ণির দোষের জন্য আপনি কেন ক্ষমা চাইবেন।
সাহিল: আপনি না তুমি?
অর্ণব: হুম।
সাহিল: আমার জন্মের ১০ বছর পর অর্ণি হয়েছে, জানো কখনো কষ্ট পেতে দেই নি, সব সময় আদর ভালোবাসা যত্ন এসবি করতাম, শাসনো তেমন করতাম না, ভাবতাম ও কখনো ভুল কাজ করবে না। কিন্তু সেদিন সকালে এফবিতে আমি ওই ভিডিওটা দেখি,সত্যি আমি খুব অনুতপ্ত ভাই, ভাবতেই পারিনি অর্ণি এমন কাজ করে বসবে?
অর্ণব: এসব এখন থাক ভাইয়া?
সাহিল: ওরে খুঁজছিলাম কিন্তু ও বিকেলে ফোন দিয়ে বলে যে তুমি ওরে বিয়ে করেছো, বিয়েটা তুমি ওরে জোর করে করেছো। এটাও বলেছে।
অর্ণব: ভাইয়া অর্ণিকে ওর কাজের শাস্তি অনেক বড় কিছু দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার ফ্রেন্ডসরা আমায় বুঝিয়েছে আমিও অর্ণির মতো যেন এমন ভুল কাজ না করি, তাই বাধ্য হয়ে ওরে বিয়ে করলাম।
সাহিল: বুঝেছি তোমার মধ্যে অর্ণির জন্য অনেক রাগ। একটা কথা জানো?
অর্ণব: কি ভাইয়া?
সাহিল: আমি অর্ণির জন্য একটা ছেলেকে অনেক দিন ধরেই পছন্দ করে রেখেছি।
জানো সেই ছেলেটি তুমিই অর্ণব।
অর্ণব: মানে (খুব অবাক হয়েই)
সাহিল: অর্ণিকে ভার্সিটিতে যখন নিয়ে যেতাম তোমায় প্রতিদিনি দেখতাম তোমাদের ফ্রেন্ডদেরও , তোমায় আমার খুব ভালো লাগতো ভাবতাম কিছুদিন পর তোমার বাসায় বিয়ের কথা বলবো। কিন্তু এর আগেই অর্ণি ভুলটা করলো আর তুমিও তাকেই বিয়ে করলে , যদিও শাস্তি দেওয়ার জন্য করেছো।
অর্ণব কি বলবে বুঝতে পারছে না।
সাহিল অর্ণব কে চুপ থাকতে দেখে আবার বলতে শুরু করলো।
সাহিল: অর্ণব আমি আমার কলিজাকে কখনো কষ্ট দেই নি। কিন্তু আজ ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও খুব কষ্টে আছে।
অর্ণব: ভাইয়া আমি কয়েকটা কথা বলি তোমায়?
সাহিল: হুম বলো
অর্ণব:
~পাহাড়ে বেয়ে আসা ঝর্ণার পানির ধারা কিন্তু সবাই ভালোবাসে। আচ্ছা বলো ত কেও কি কখনো ঝর্ণাকে ভালোবেসে ঝর্ণার পানির মতো উপর থেকে নিচে লাফ দেয়~
সাহিল: অর্ণব ঝর্ণাকে ভালোবাসলে আর ঝর্ণার পানিকে উপভোগ করলেও কেও এমন পাগলামো করবে না, ভালোবাসার জিনিশ খেলা করার জিনিশ না।
অর্ণব: ভাইয়া তাইলে অর্ণি না আমায় ভালোবাসে, তাইলে আমায় নিয়ে খেলাটা করলো কেন?
সাহিল: অর্ণব জানি আমি তোমার মনে কি চলছে, আমি এটাও জানি তুমি অর্ণিকে এই কয়দিন অনেক কষ্ট দিয়েছো, এটাও আমি দেখছি অর্ণির চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা। ভাই অর্ণি যে ভুলটা করেছে সেটা ঠিক না, আমিও তোমার জায়গায় থাকলে অর্ণিকে এমন কোনো শাস্তি দিতাম। কিন্তু ভাই অর্ণব এটাও বলি অর্ণি আমার কলিজা , ওর সাথে এমন কিছু কইরো না, যেটার জন্য অর্ণি বেশি কষ্ট পায়?
অর্ণব: ভাইয়া অর্ণি যা করেছে আমার সাথে তার জন্য কিছু কষ্ট সহ্য করতে হবে। আরো একটা কথা বলি অর্ণিকে আম্মু আব্বু অনেক ভালোবাসে নিধী ওকে ভাবি ডাকবে না বলছে আপুই ডাকবে নাকি। আমি ওর মনুষ্যত্ব কে জাগ্রত করবো, তার জন্য একটু কষ্ট ওর প্রয়োজন।
সাহিল: আমি জানি তোমার আম্মু আব্বু কেমন।
আমিও চাই অর্ণি একটু কষ্ট পাক, ওর কিছু শিক্ষা হোক।
অর্ণব: আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারো, অর্ণিকে এমন কোনো কষ্ট দেবো না যেটাতে ও ভেঙে পরে।
সাহিল: হুম
তোমায় একটা কথা বলি অর্ণব।
~নারীরত্ন করিও যত্ন,
ভালোবাসা পাবে অবিরত।
বাঁধন হস হলে,
উড়বে পাখি আকাশপথে।
অভিমান জমবে মনে,
থাকবে অপেক্ষায় দিঘল পথে।~
ভাই অর্ণিকে আমি ভালোভাবে চিনি, আমার বোন ও, ওর অভিমান অনেক, কখনো অভিমান করতে দিও না।
অর্ণব: ভাইয়া তুমি যা ভাবছো কখনো তা হবে না, জানি না আমি ওর আকাশ হতে পারব কি না তবে চেষ্টা করবো।
ওদের কথা বলার মধ্যে নিধী আসলো।
নিধী: ভাইয়া তোমাদের সারা বাসা তন্নতন্ন করে খুঁজলাম, তোমাদের খুঁজতে গিয়ে চার টা তেলাপোকা বাসায় দেখেছি, কিন্তু তোমাদের দেখতে পাইনি
সাহিল: খুব পাকনা বুড়ি তো? যাও বড় আপু আমরা আসছি?
নিধী: তাড়াতাড়ি আসো তোমরা সবাই খাবার খেয়ে নিচ্ছে, পরে কিন্তু খাবার পাবে না।আমি বাবা গেলাম খাইতে।
ওরা: হাহা করে হেসে উঠে।
নিধী চলে যায় নিধীর পিছনে সাহিল আর অর্ণব ও আসে।
নিধী ক্লাস ফাইভে পড়ে।

সবার খাওয়া শেষ হলো। অর্ণির বাবা মা অর্ণব এর সাথে অনেক গল্প করলো
অর্ণবকে ওদের অনেক পছন্দ হয়েছে।
ওরা বুঝতে পারছে অর্ণিকে অর্ণব কিছুটা কষ্ট দিছে।
অর্ণবের মাবাবা সব কিছু অর্ণির মা বাবাকে খুলে বলেছে। অর্ণির বড় আব্বু আম্মু আর সর্মিলাও অনেক মিশুক সবার সাথেই মিশে গেছে।
অর্ণি মিরা কে জিজ্ঞেস করেছিলো রাফির কথা, মিরা বললো ওর চাকরি চলে গেছে, আর মানহানির মামলায় এক বছরের জেল হয়ছিলো, কিন্তু কি ভাবে যেন সেটা দু মাসের করলো। দুই মাস পর রাফি ছাড়া পাবে।

বিকেল চারটা বাজে , কিছুক্ষণ আগে হাসি তামাশা তে মেতে উঠা বাড়ি নীরব হয়ে গেছে।
অর্ণব সবাইকে বিদায় দিয়ে
সে তার ফ্রেন্ডদের সাথে চলে যায় ঘুরতে।
সন্ধে ৬টা অর্ণব এখনো বাসায় আসেনি
অর্ণি সব গিফট বক্স একে একে খুলে দেখছে।
সবার বক্স খুলে এবার অর্ণবের ৬জন ফ্রেন্ড এর গিফট বক্স অর্ণির দেখার পালা।
~মৌগিফট বক্স কুত্তার বউয়ের জন্য। অর্ণি এটা দেখে হাসতে হাসতে শেষ। মৌ এর গিফট বক্সটা খুলে অর্ণি দেখতে পেলো খুব দামি একটা ফোন।
সাথে একটা চিরকুট আছে।
মৌ চিঠি খুলে পড়লো
৪ লাইনের কোনো কিছু লেখা, অর্ণি লেখাটা পড়ে কিছুই বুঝলো না। মৌ এর চিঠিটা পড়ে অর্ণির মনে ভয় ডুকে গেলো।
কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে মৌ এই চিঠির মাধ্যমে?
চিঠিতে যা লেখা ছিলো।

চলবে,,,,,

গল্পের ভুল গুলো দেখিয়ে দিবেন, আর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সাথেই থাকেন গল্পের।

ভালো থাকবেন
ঘরেই থাকবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here