ভোরের_আলো পর্ব-১৭

0
991

#ভোরের_আলো
পর্ব-১৭
লেখা-মিম

আজ বিকালে ঢাকা এসে পৌঁছেছে আশফাক। বাস স্টেশন থেকে রাত্রি চলে গিয়েছে ওর বাসায় আর আশফাক এসেছে নিজের বাসায়। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছিলো। গরম পানিতে গোসল সেড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রিমন বাসায় ফিরে দেখলো আশফাক তার রুমে ঘুমুচ্ছে। সে অর্পিতাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে আশফাক বাসায় ফিরে এসেছে। কোনোমতে পড়নের কাপড়টা পাল্টে কাওকে কিছু না বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে। আজ সে আশফাকের মুখোমুখি হবে। ক্ষমা চাইবে৷ অনেক কিছু বলার আছে ওকে। যদি ওকে ক্ষমা করে তো ভালো কথা। আর যদি না ক্ষমা করে তাহলে সেখানেই বিষ খেয়ে মরবে। এভাবে তিল তিল করে মরার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়া ভালো।

আশফাকের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে অর্পিতা৷ মানুষটার চোখে মুখে রাগ খুব স্পষ্ট। অর্পিতার চেহারার দিকে সে আজ তাকাচ্ছে না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।

– এই আশফি, মাফ করে দাও না প্লিজ।
-………………
– আমি আর কক্ষনো তোমার বাবা মা সম্পর্কে জানতে চাইবো না। তোমার কে আছে না আছে সেসবের আমার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার শুধু তুমি হলেই চলবে। মাফ করে দাও না।
-……………….
– আজকে পাঁচদিন তুমি আমার সাথে কথা বলো না। তোমার কথা না শুনে আমি কিভাবে বেঁচে আছি তা তুমি বুঝবে না৷ আমাকে দূরে ঠেলে দিওনা প্লিজ। আমি বুঝিনি তুমি আমার ঐ কথাতে এত কষ্ট পাবে। বিশ্বাস করো, জানলে আমি কখনোই তোমাকে ওসব জিজ্ঞেস করতাম না।
-..…………….
– আশফি আমি আর পারছি না। প্রতি মূহুর্তে দম আটকে আসছে আমার। আমার একটা ভুলের জন্য এভাবে শাস্তি দিবে আমাকে?
-……………….

ফ্লোরে বসে পড়লো অর্পিতা। আশফাকের পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছে সে। এতক্ষণ নিঃশব্দে কাঁদছিলো। আশফাককে এভাবে নিরুত্তর দেখে বুক ফেটে কান্না আসছিলো। নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে চিৎকার করে কানা জুড়িয়ে দিয়েছে।

– তুমি যেভাবে বলবে আমি সেভাবেই চলবো। তোমার কথার বাইরে কক্ষনো যাবো না। সম্পর্কটা এভাবে শেষ করে দিও না প্লিজ।
– পা ছাড়ো অর্পিতা।
– না। ছাড়বো না। হয় আমার সাথে রিলেশনটা কন্টিনিউ করবে আর নয়তো এখন এই মূহূর্ত্বে আমাকে খুন করে আমার লাশটা কোথাও মাটি চাপা দিয়ে আসবে।

অর্পিতার মুখোমুখি আাসলে আশফাকের কি হয় সেটা তার নিজেরও জানা নেই। মেয়েটার প্রতি একটা টান কাজ করে। অথচ মেয়েটা দূরে সরলেই টান টা কেঁটে যায়। এইযে এতক্ষণ মেয়েটা কাঁদছিলো, বহু কষ্টে নিজের চেহারায় কঠিন ভাবটা ধরে রেখেছিলো। মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে কষ্ট কি তার হয়নি? অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু এখন আর নিজেকে আটকাতে পারছে না। নিজের সাথে নিজের যুদ্ধটা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব ওর সাথে সম্পর্কের ইতি টানতে হবে।

দরজার বাহির থেকে অর্পিতার কান্না আর মিনতি শুনছে রিমন আর হুমায়ুন। আশফাকের উপর প্রচন্ড ক্ষেপে আছে রিমন। আশফাকের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে হুমায়ুনও কম বিরক্ত না। অর্পিতা মেয়েটাকে সে চিনে। প্রায়ই বাসায় এসে রান্না করে দিয়ে যায়। কি সুন্দর করে কথা বলে! এইতো কিছুদিন আগে তার বউ বাচ্চার জন্য কয়েক সেট জামা পাঠিয়েছে। তার বউ ভীষণ খুশি হয়েছে জামাগুলো পেয়ে৷ অর্পিতাকে তার ভীষন পছন্দ। আশফাকের মত পাগল ছাগলের জীবন গুছানোর জন্য এই মেয়েটা একদম খাপে খাপ মিলে। আর এই লোক কিনা এই মেয়ের ক্বদর করছে না। চেহারায় একরাশ বিরক্তি এনে মুখটা ভেংচি কেঁটে রিমনকে বললো,

– এই যে আপারে এই কষ্টগুলা দিতাছল। ঐ বেশ্যাটার লগে তিন চারদিন ঢাকার বাইরে কাটায়া আসছে। ভালো মেয়েটারে ধোঁকা দিতাসে। দেইখেন আপনার ভাই একদিন ভুগবে। এমন ভোগা ভুগবে যে তার কষ্ট মানুষ চোখে দেখবে।
– জানি৷ ঐ দিন আর বেশি দেরী আছে বলে আমার মনে হয় না।

অর্পিতার হাত টেনে এনে ওকে পাশে বসালো আশফাক। ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললো,

– প্লিজ অর্পি, আমি যে কথাটা বলতে চাই না সে কথা বলার জন্য কখনো আমাকে জোর করবে না।
– প্রমিজ৷ আর কখনো এমন হবে না।
– খাওয়া দাওয়া করছো না ঠিকমতো তাইনা?
– বেঁচে আছি এটাই তো অনেক।
– চেহারার কি হাল করেছো? তোমাকে দেখে খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে।
– তুমি তো চাচ্ছিলেই আমি মরে যাই। এজন্যই তো এত কষ্ট দিয়েছো।
– বাসা থেকে কি বলে বেড়িয়েছো?
– কাউকে কিছু না বলেই বেড়িয়ে এসেছি।
– ওরা তোমাকে খুঁজবে তো।
– খুঁজুক। ওদের ব্যাপার পরে সামাল দিবো। আমার কাছে তুমি সবচাইতে বেশি ইম্পরট্যান্ট। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব আশফি।

অর্পিতার গালে হাত রেখে বললো,

– খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না?
– কতখানি কষ্টে ছিলাম তা তুমি ধারনা করতে পারবে না।

অর্পিতার কোমড় চেপে ধরলো আশফাক। ওর কানে ঠোঁট স্পর্শ করে ফিসফিসিয়ে বললো,

– আজ রাতটা থেকে যাও। কষ্টগুলো পুষিয়ে দিচ্ছি।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here