#ভোরের_আলো
পর্ব-১৯
গতকাল থেকে মাথা ধরে আছে আশফাকের। তুমুল অশান্তি চলছে মনের ভিতর। এমন এক দোটানায় ভুগছে যেটার সমাধান পাচ্ছে না। কোনো কাজে একদম মন বসাতে পারছে না। কারো সাথে এটা নিয়ে কথা বলা উচিত। কৌশিক ছাড়া আর কেইবা আছে যার সাথে একান্তই ব্যাক্তিগত কথাগুলো শেয়ার করা যায়? ছোট থেকে এখন পর্যন্ত তো কৌশিকের সাথেই মনের গোপন সব কথা শেয়ার করে এসেছে৷ কোন মেয়ের শরীরের কোন তিলটা সবচেয়ে সুন্দর, কার বেড পারফরমেন্স কত বেশি ভালো, কার সাথে কতটা সময় নিয়ে একদম খায়েশ মিটিয়ে শরীরের চাহিদা মিটিয়েছে সব কথা অবলীলায় কৌশিককে শোনায়। তবে এই প্রথম কৌশিকের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বস্তি হচ্ছে। কথাগুলোয় যে অর্পিতা জড়িত! অজানা কোনো কারণে গতরাত থেকে অর্পিতাকে সত্যিই নিজের বউ মনে হচ্ছে। নিজের বউয়ের ব্যাপারে একজন পুরুষ যেমন প্রোটেক্টিভ চিন্তা ভাবনা লালন পালন করে, অর্পিতার জন্য ঠিক তেমনটাই অনুভব করছে। কিন্তু কৌশিককে না বলেও উপায় নেই। অশান্তি যে ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে!
– বিশ মিনিট ধরে বসিয়ে রেখেছিস। এবার তো বল কি হয়েছে?
মাথা চুলকাচ্ছে আশফাক। কোত্থেকে কথাটা শুরু করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
– কি রে? বল?
– একটা সমস্যা হয়েছে?
– কি?
– দোস্ত, আসলে…..
– আসলে কি?
– অর্পি ভার্জিন ছিলো।
– হ্যাঁ ছিলো। তো?
– ওর শরীরে হাত দেয়া প্রথম পুরুষ আমি। গতকাল ওকে কাছ থেকে দেখার পরই টের পেয়েছিলাম ওকে কেও কখনো টাচ করেনি। পুরোপুরি আনকোরা। অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন করেছি। কে আনকোরা আর কে ইউজ করা জিনিস এটলিস্ট এটা বুঝার মতো জ্ঞান আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা কি জানিস?
– কি?
– বিছানায় ব্লাড ছিলো।
– তুই এসব আমাকে কেনো শোনাচ্ছিস?
– বুঝতে পারছিস? ও ভার্জিন ছিলো।
– হ্যাঁ ছিলো। তো?
– কিভাবে সম্ভব?
– কেনো সম্ভব না?
– ও তো রাত্রি টাইপেরই।
– দেখ আশফাক, আমি তোর উপর প্রচন্ড বিরক্ত। একদিনের একটা কনভারসেশন শুনে তুই কাউকে খারাপ ভাবতে করতে পারিস না। ও সেদিন কি নিয়ে কথা বলছিলো, কার সাথে কথা বলছিলো সেসব তুই জানিস না। না জেনে কেনো একটা মানুষকে জাজ করছিস? চারমাস হলো ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিস। ওর মাঝে খারাপ কিছু দেখেছিস? ও কি তোর কাছ থেকে কখনো টাকা বা গিফট চেয়েছে? বরং তুই নিজের মুখেই বলেছিস ম্যাক্সিমাম টাইম বাহিরে খাবারের বিল অর্পিতাই পে করে। আমি এখন পর্যন্ত যতবার দেখা করেছি ওর মাঝে আমি খারাপ কিচ্ছু দেখিনি। ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড খুবই ভালো। বরং আমি বলবো তুই ওদের বাড়ির জামাই হওয়ার যোগ্যতা রাখিস না। হাতে আকাশের চাঁদ পেয়েছিস আশফাক। চাঁদ নিজে এসে ধরা দিয়েছে। এ ধরনের বাজে কথা মাথায় এনে কপাল পুড়িস না। আর তুই নিজেই দেখেছিস মেয়ে ভার্জিন। তাহলে তুই কোন হিসেবে বলছিস মেয়ে খারাপ? রাত্রির মতন মেয়েরা কি ভার্জিন হয়? দেখ ভাই, অর্পিতাকে নিয়ে তোর মনে কোনো সন্দেহ থাকলে ওর সাথে সরাসরি কথা বল। সেদিন ও কার সাথে কথা বলছিলো সেটা ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো ও সত্যিটা তোকে বলে দেয়। এতদিন প্রেমিকা ছিলো। এখন ও তোর বউ। শুধুশুধু মিথ্যা সন্দেহ মাথায় রেখে নিজের ম্যারিড লাইফটা নষ্ট করিস না আশফাক। সন্দেহ বাড়ার আগেই ক্লিয়ার করে নে। আরেকটা কথা…. তুই বললি তোর কাছে মনে হয় অর্পিতা রাত্রি টাইপ। তাহলে জেনেশুনে একটা খারাপ মেয়েকে বিয়ে করলি কেনো?
– তোকে একটা কথা বলিনি।
– কি?
– ওর সাথে বিয়েটা নাটক ছিলো। সত্যিকারের না।
– মানে?
– হুম। সেক্স করার অফার করেছিলাম। রাজি হচ্ছিলো না। ন্যাকামি শুরু করেছিলো বিয়ের আগে কিছু করবে না। এত সুন্দর মেয়েটাকে এমনি এমনি যেতে দেই কিভাবে? তাই বিয়ের নাটক করেছি৷
– কাগজ রিমন রেডি করেছিলো না?
– হ্যাঁ।
– ও তোর এই নোংরা কাজটাতে কিভাবে সায় দিলো?
-……………
মেজাজ সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেছে কৌশিকের। চোখ লাল হয়ে গিয়েছে রাগে। এতদিন আশফাকের নোংরামীগুলো কোনোমতে মেনে নিচ্ছিলো কারন ও জানতো মেয়েগুলোও আশফাকের ধাঁচের। তবে এবারের ঘটনাটা অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে। একে তো অর্পিতা ভালো একটা মেয়ে, তারউপর এই বিয়ের নাটক। একটা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করার কোনো মানে আছে বলে মনে হয় না।
– আর কত নিচে নামবি? আর রিমন এটা কি করলো? ও এমন কিছু করবে আমার ধারনার বাইরে ছিলো। দেখ, যা করেছিস তো করেছিস। চাইলে এখনও সমস্যা সমাধান করা যাবে। তুই ওকে সত্যি বিয়ে কর। আশফাক আমি বাজি ধরে বলতে পারি অর্পিতার চেয়ে ভালো মেয়ে কোত্থাও পাবি না। ও যদি একবার তোর আসল রুপ দেখতে পায় এই জীবনে কখনো তোর ছায়াতেও পা দিবে না। সময় আছে এখনও নিজেকে শুধরে নে। সংসারদারী শুরু কর। এসব নোংরামী বাদ দে।
আশফাককে কথাগুলো শুনিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে এলো কৌশিক। গাড়িতে উঠে রিমনকে একচোট ধোলাই দেয়ার জন্য ফোন করলো।
– কেমন আছেন কৌশিক ভাই?
– তুই এটা কি করলি?
– কি করেছি?
– আশফাক বললো আর তুইও নাচতে নাচতে ওদের ভুয়া বিয়ে করালি?
– ভাইয়া বলেছে?
– হ্যাঁ।
– আর কি বলেছে?
– সেগুলো পরে বলবো। আগে তুই উত্তর দে এই জঘন্য কাজটা কেনো করলি?
– আপনার কাছে মনে হয় আমি এ ধরনের কিছু করতে পারি?
– তোর ভাই যে বললো কাগজ তুই রেডি করেছিস?
– হ্যাঁ করেছি। একটা কাগজও ভুয়া না। সব কয়টা রিয়েল। আর কাজী যে বিয়ে করিয়েছে সেটাও একদম শরীয়াহ মোতাবেকই হয়েছে।
– তাহলে তোর ভাই যে বললো?
– ওকে জানাইনি বিয়েটা যে সত্যিই করিয়েছি। ও চাচ্ছিলো নকল বিয়ে করতে। আমাকে বললো কাগজ বানিয়ে আনতে। আমি আমার মত কাজ করেছি।
– ওকে জানাচ্ছিস না কেনো বিয়েটা যে সত্যিই হয়েছে?
– জানাবো। আরও কিছুদিন যাক। দুজনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ুক। অর্পিতা সম্পর্কে ভুল ধারনাটা আপনা আপনিই তখন ভেঙে যাবে। এখন আমি বা আপনি অর্পিতার যতই সাফাই গাইনা কেনো ও আমাদের কথা কানে তুলবে না।
– আর কি ঘনিষ্ঠতা বাকি আছে ওদের মধ্যে? বাকি আছে আর কিছু? যা হওয়ার গতকালই হয়েছে৷ তোর ভাই টেরও পেয়েছে মেয়ে ভার্জিন। তবু তোর ভাই ঐ এক কাহীনি নিয়ে বসে আছে৷ আশফাক আজকে আমাকে কল করে বললো আর্জেন্ট মিট করার জন্য। তখন এসব বলেছে। অর্পিতা কিভাবে ভার্জিন সেটা নিয়ে তোর ভাইয়ের দুশ্চিন্তার শেষ নেই৷ সমস্যা কি ওর? আজকাল গরু ছাগলের প্রশ্ন করে কেনো? চোখের সামনে সব স্পষ্ট হওয়া সত্যেও তোর ভাই মানতে নারাজ৷ এমন একটা ভাব করছে মনে হচ্ছে যেনো যেভাবে হোক অর্পিতাকে ও দোষী প্রমান করবেই৷
– এত কিছুর পরও এখনও সন্দেহ করছে? কি আশ্চর্য!
– আমি ওর উপর যে কতটা বিরক্ত হচ্ছি তুই চিন্তা করতে পারবি না। শোন, আমার মতে আশফাককে কথাটা বলে দেয়া উচিত।
– নাহ্। এখন বললে ঝামেলা আছে। কালই ডিভোর্সের জন্য উঠেপড়ে লাগবে৷ যাক না আরও কিছুদিন। মনে যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে অর্পিতাকে নিয়ে তাহলে উত্তরটা ও নিজেই খুঁজে বের করবে। আর আমরা তো আছিই। আরো কয়েকদিন যাক। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় দেখি। এরপর নাহয় জানাবো। তবে আমার এতটুক বিশ্বাস আছে অর্পিতার মতো মেয়েকে আমার ভাই হাতছাড়া করবে না। বিয়ে তো সবে হলো। আস্তে আস্তে আমার ভাই সবই বুঝবে।
– আমার মনে হয় না। ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায়। যে জেগে ঘুমায় তাকে কিভাবে জাগাবি? তোর ভাইটা খুব বাড় বেড়েছে। কোনদিন দেখবি আকাশ থেকে একদম মুখ থুবড়ে মাটিতে এসে পড়বে।
(চলবে)
-মিম