ভোরের_আলো পর্ব-৪

0
988

#ভোরের_আলো
পর্ব-৪

আশফাক অফিসের কাজগুলো খুব দ্রুত শেষ করে অর্পিতার ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় আধাঘন্টা হলো। ভার্সিটির সামনে এসেই মুক্তাকে ফোন করেছিলো আশফাক। মুক্তা বললো আরো সময় লাগবে বের হতে। ভার্সিটি গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছে আশফাক। পিছন থেকে এসে ডাক দিলো মুক্তা।
– ভাইয়া….
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে মুক্তা দাঁড়িয়ে আছে। মুক্তার পিছনে অর্পিতা।
– ভাইয়া কি বলতে চাচ্ছিলেন?
– হ্যাঁ। কিন্তু এখানে? চলো কোথাও বসি।
– না। এখানেই বলুন।
– এখানে কিভাবে বলবো। দেখেছো কত ভীড়?
– সমস্যা নেই। আপনি বলুন।
– আচ্ছা কোথাও বসতে কি অসুবিধা?
– আপনাকে তো চিনি না। হুট করে অপরিচিত কারো সাথে কোথাও বসে কথা বলাটা একটু অন্যরকম দেখায়।
– পরিচিত হওয়ার জন্যই তো কোথাও বসে ভালোভাবে কথা বলতে চাচ্ছি।
– এ্যাই দ্যাখেন, এখানে কথা বললে বলেন। আর নয়তো বলার কোনো প্রয়োজন নেই। মুক্তা আমি এই লোকের সাথে কথা বলবো না। বাসায় চল।
– আমার নাম এ্যাই না। আমি আশফাক।
– হ্যাঁ বুঝেছি আপনি আশফাক। যা বলতে চাচ্ছিলেন তা কি বলবেন নাকি চলে যাবো?
– ওকে, বলছি। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে বললে ভুল হবে, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। বলতে পারো লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট। সেদিন আমি তোমার সেট মেন্যুর দিকে না তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
– আপনি কি ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন?
– হুম। বিয়ে করতে চাই।
– এভাবে কেও কিভাবে ভালেবাসতে পারে? চিনেন না জানেন না অথচ ভালোবেসে ফেললেন?
– ভালোবাসার জন্য চেনাজানা থাকতে হয় নাকি? জানতাম না তো। ঠিকাছে তোমাকে চিনি না এটাই তো সমস্যা মনে হচ্ছে তাই না? কে বলেছে তোমাকে আমি চিনি না? তোমাকে আমি চিনি। তোমার সম্পর্কে অলরেডি সব খোঁজ নিয়ে ফেলেছি। তুমি কে? বাবা কে? ভাইবোন কয়জন? বাবা কি করে? ভাই কি করে? সব আমার জানা। জানি না শুধু তোমার ফোন নাম্বারটা।
– কেনো? যার কাছ থেকে আমার খবর নিয়েছেন সে কি আমার ফোন নাম্বারটা আপনাকে দেয়নি?
– তোমার কাছ থেকে নিবো। তাই ওর কাছে চাইনি।
– আমি দিবো না। আপনাকে আমার একদম পছন্দ হয়নি। আপনার কথা তো আমার আরো বেশি পছন্দ হয়নি।
– কেনো? আমি কি খারাপ কিছু বলেছি?
– জানি না আমি। মুক্তা চল না বাসায় যাই। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
– দাঁড়া একটু। কথা শেষ হতে দে।
– না। আমি উনার কথা একদম শুনতে চাই না। তুই চল।

মুক্তার হাত ধরে টানতে টানতে অর্পিতা নিয়ে যাচ্ছে৷ পিছু পিছু যাচ্ছে আশফাক। বারবার এক মিনতি করেই যাচ্ছে,
– অর্পিতা আমার কথা শুনো প্লিজ!

অর্পিতা একবারের জন্যও পিছন ফিরে তাকাচ্ছে না। মুক্তার হাত ধরে দ্রুত গতিতে হাঁটছে অর্পিতা। বলা যেতে পারে ও এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব পালাতে চাচ্ছে। সামনে একটা রিকশা পেয়ে উঠে পড়লো। কোথায় যাবে, ভাড়া কত এসব না ঠিক করেই টুপ করে উঠে বসলো রিকশায়।
– কই যামু আফা?
– খিঁলগাও মামা।
– এতদূর যামু না।
– মামা টাকা বাড়িয়ে দিবো। প্লিজ আপনি চলেন।
– ২০০ টাকা নিমু।
– দিবো।
আশফাক দাঁড়িয়ে অর্পিতার চলে যাওয়া দেখছে। নিজেকে তুচ্ছ প্রানী মনে হচ্ছে। মানে কি এসবের? এখানে আসতে বললো। আনার পর এখন আবার গতকালের মতো তামশা করলো। করুক। যত খুশি তামশা করুক। এখন এই মেয়ে খেলা দেখাচ্ছে৷ পরের খেলাটা নাহয় সে দেখাবে।

– এগুলো কেমন আচরন অর্পি?
-…………
– ম্যানার্স ভুলে গিয়েছিস?
– না।
– তাহলে এমন করলি কেনো? লোকজন তাকিয়ে ছিলো তোর দিকে।
– মুক্তা একটা কথা বলি?
– বল।
– আমাকে নিয়ে হাসবি না তো?
– না, হাসবো না। বল।
– কারো কাছে বলে দিবি না তো?
– কখনো দেখেছিস তোর আমার মাঝের কথাগুলো কাউকে বলেছি?
– না।
– তাহলে এই কথা কেনো জিজ্ঞেস করছিস?
– ঘটনা হচ্ছে গিয়ে উনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। গতকাল রেস্টুরেন্টে যখন ঢুকলাম তখনই উনার দিকে আমার নজর গিয়েছিলো। চোখ সামলে রাখতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। বারবার উনার দিকে নজর যাচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে তাকাচ্ছে। জানিস মুক্তা, ভিতরে তোলাপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিলো উনাকে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে।
– মজা করছিস?
– একদম না।
– তুই একটা ছেলেকে পছন্দ করেছিস!
– হ্যাঁ। খুব ভালো লেগেছে। জীবনে প্রথম কাউকে এক দেখাতেই ভালো লেগেছে। একদম প্রেম প্রেম অনুভূতি।
– তাহলে গতকাল এমন কান্ড করলি কেনো?
– উনাকে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনে হচ্ছিলো কিছু একটা প্রচন্ডভাবে উনার দিকে আমাকে টানছে৷ ইচ্ছে হচ্ছিলো যেয়ে উনার ফোন নম্বর নিয়ে আসি। নিজেকে আটকানোর জন্যই এভাবে জোর গলায় ঝগড়া করেছি। গতকাল আমি উনাকে স্বপ্নেও দেখেছি। কি দেখেছি জানিস? আমাকে উনি এপেক্স থেকে জুতা কিনে দিচ্ছে। জুতাগুলো উনিই পায়ে পড়িয়ে দিয়েছে।
– এতই যেহেতু ভালো লেগেছে তাহলে আজকে এমন বিহেভ করলি কেনো?
– ঐ যে উনি বললো না আমাকে ভালোবাসে। কথাটা শুনে হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছিলো। অনেক বেশি। তারপর যে বললো আমাকে বিয়ে করবে। এটা শোনার পর চট করে চোখের সামনে কি ভেসে উঠলো জানিস?
– কি?
– আমি আর উনি বিয়ের স্টেজে পাশাপাশি বসে আছি। কি নোংরা চিন্তা তাই না! চিনি না জানি না অথচ বিয়ের আসর পর্যন্ত ভেবে ফেলেছি। নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছিলো। তাই পালিয়ে এসেছি। উনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে আমি আর নিজেকে আটকাতে পারবো না৷ আমি এসব প্রেম টেম করতে চাই না। তাছাড়া গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার আগে আমি বিয়ে করবো না।
– তোর কথাগুলো হজম হচ্ছে না। তুই কারো প্রেমে পড়েছিস ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য।
– আমারও বিশ্বাস হচ্ছে না। কি আছে লোকটার মাঝে? একদেখাতেই একদম মনে ধরে গেলো। কি অদ্ভুত তাই না!
– সেটাই ভাবছি।
– উনার কন্ঠটা গতকাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কানে বেজেই চলছে।
– যেহেতু তোর পছন্দ হয়েছে তাহলে কথা আগাতে সমস্যা কোথায়?
– না মুক্তা। পড়া শেষ হওয়ার আগে কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতে চাই না।
– কেনো?
– পড়া নষ্ট হবে। তাছাড়া নতুন বিজনেস। কারো সাথে সম্পর্কে জড়ালে পুরো কনসেনট্রেট তার প্রতিই চলে যাবে। এই মূহুর্তে মাইন্ড ডাইভার্ট করা মানে বিজনেস পড়া দুটোই নষ্ট হবে। আমি চাই না এমন কিছু ঘটুক। আমার কিছু ড্রিমস আছে। এসব সম্পর্কে জড়িয়ে আমার এতদিনের সপ্ন আমি মাটিতে মিশাতে চাই না। বিয়ে ভালোবাসা এসব পরেও করা যাবে। স্বপ্ন পূরনের সুযোগ সবসময় মানুষের জীবনে আসে না।
– ভালো ছেলেও সবসময় পাওয়া যায় না।
– কিছু করার নেই। লাইফ পার্টনার অথবা ক্যারিয়ারের মধ্য থেকে তুই যদি আমাকে চুজ করতে বলিস তাহলে আমি বলবো আমার ক্যারিয়ার আগে। কিছু পেতে গেলে তো কিছু ছাড় দিতেই হয়। একসাথে তো আর সব ভালো জিনিস আমি ভোগ করতে পারবো না।
– আরেকবার ভেবে দেখ।
– আমাকে আর কনফিউজড করিস না। এমনিতেই লোকটা আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। উনাকে নিয়ে আরো ভাবলে হয়তো দেখা যাবে আমি আর উনার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারবো না।
– তোর লাইফ। তোর ডিসিশন। আমি যাস্ট তোকে ভালোমন্দ সাজেস্ট করতে পারবো। কিন্তু ডিসিশন তোকেই নিতে হবে। আশফাক লোকটা ভালো। তবে ক্যারিয়ার গড়ার ডিসিশনটা মন্দ না। নিজেকে ভালো পজিশনে দাঁড় করাতে পারলে ভালো পাত্রের অভাব পড়ে না।
– আমি সেটাই বুঝাতে চাচ্ছি।
– আচ্ছা। বাদ দে উনার চ্যাপ্টার। যদি উনি আমার নম্বরে ফোন দেয় তাহলে আমি উনাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলবো।
(চলবে)

-মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here