ভোরের_আলো পর্ব-৫

0
828

#ভোরের_আলো
পর্ব-৫

রাত সাড়ে নয়টা। খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছে অর্পিতা। সাথে আছে মা, বাবা, মুক্তা আর কাজের মেয়ে পাখি। গলা দিয়ে খাবার যাচ্ছে না অর্পিতার। প্রেম প্রেম ভাব জন্মাচ্ছে মনের মধ্যে। প্রেমের লক্ষ্মণও প্রকাশ পাচ্ছে ওর মাঝে। খেতে ভালো লাগে না। অস্থির অস্থির লাগে। সব থেকেও কি যেনো নেই। কিছু একটা যেনো ছুটে যাচ্ছে। রাত দিন শুধু ঐ মানুষটার মুখ ভেসে উঠে। মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলার আপ্রান চেষ্টা করার পরও ঝাড়তে পারছে না অর্পিতা। নিজেকে মানসিকভাবে অসুস্থ মনে হচ্ছে তার। খাওয়ার মাঝে ফোনটা বেজে উঠলো অর্পিতার। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো অপরিচিত নাম্বার। কলটা রিসিভ করলো অর্পিতা।

– হ্যালো…
– তুমি কি খাচ্ছো?
ওপাশের কন্ঠটা শোনামাত্র কলিজায় ধুক করে উঠলো অর্পিতার। চিনতে বাকি রইলো না মানুষটা কে? কন্ঠটা যে ওর বড্ড প্রিয় অথবা বলা যেতে পারে ভালোবাসার।
– চুপ কেনো? খাওয়ার সময় কি বিরক্ত করলাম?
– হুমমম?
– তুমি অবাক হচ্ছো তোমাকে কল দেয়াতে?
– নাআআ…. হ্যাঁএএএ…
– এটা কেমন উত্তর? যেকোন একটা বলো। হয় হ্যাঁ বলো আর নয়তো না বলো।
– আমি কি বলবো?
– আচ্ছা আগে খাওয়া শেষ করো। আমি দশ মিনিট পরে ফোন করছি।

নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে অর্পিতার। আশফাক ফোন করেছিলো। ভয়, আনন্দ, দ্বিধা সব একসাথে ভর করেছে অর্পিতার উপর। চুলের গোঁড়া ঘেমে যাচ্ছে ওর। আশফাকের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে এমন আজব সব অনুভূতির মুখোমুখি হচ্ছে।

– কে ফোন করেছিলো?
– হ্যাঁ আব্বু?
– জিজ্ঞেস করলাম কে ফোন করেছে?
– সুপ্তি।
– কোনো সমস্যা?
– নাহ! না তো। কোনো সমস্যা নেই।
– তাহলে এমন দেখাচ্ছে কেনো তোকে?
– কেমন?
– ফোনটা এসেছে পর থেকে কেমন ঘাবড়ে গিয়েছিস।
– কই? ঘাবড়াইনি তো। আসলে আমার পেট ভরে গেছে। আমি আর খেতে পারছি না।
– তোকে দুদিন ধরে দেখছি ঠিকমতো খাচ্ছিস না। কেমন একটা হাবভাব নিয়ে বসে থাকিস। মনে হয় রাজ্যের চিন্তা নিয়ে ঘুরিস।
– আম্মু তুমি বেশি বুঝো।
– আমি যে আম্মু তাই বেশি বুঝি। মুক্তা তুই বল কি হয়েছে?
– কিছু না মামি।
– দুইবোন মিলে যুক্তি করেছিস আমাদের কিছু বলবি না তাই না?
– না মামি। এমন কোনো কথা হয়নি আমাদের মাঝে।
– অর্পি আপায় মনে হয় প্রেমে পড়ছে চাচী। অর্পি আপার লক্ষ্মণ তো সব প্রেমিকাগো মতন লাগে।
– থাপ্পড় খাবি পাখি। একদম কানের নিচে থাপ্পড় লাগাবো তোকে। আমি কারো প্রেমে পড়িনি। একদম না। বুঝছো আম্মু? আমি কারো প্রেমে পড়িনি ব্যস। তুমি শুনছো আব্বু? আমি প্রেমে পড়িনি। সব ভুয়া কথা।

চেয়ার ছেড়ে বেসিনে হাত ধুয়ে নিজের রুমে গেট লাগিয়ে দিলো অর্পিতা। এতটা চিৎকার করার কি ছিলো খুঁজে পেলো না অর্পিতার বাবা মা। পাখি হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। সে মুখে ভাতের লোকমা ঢুকিয়ে বললো

– ব্যাপারটা বুঝছেন চাচী? আপা সত্যিই প্রেমে পড়ছে। দেখলেন না কেমন নাইচ মাইরা এইখান থেইকা চইলা গেলো। নাইচ দিছে কেন জানেন? পেটের গোপন খবর আমি বুইঝা ফালাইসি তাই।
রুমের ভেতর থেকে সব শুনতে পেলো অর্পিতা। গেট খুলে বেরিয়ে এসে বললো

– পাখিইইই! মাথার চুল সব টেনে ছিঁড়ে দিবো।
– দিয়েন আপা। কোনো সমস্যা নাই। তবে যারে ভালোবাসেন তার একখান ছবি আমারে দেখায়েন।
– আম্মু তুমি পাখিকে কিছু বলো না কেনো?
– ও মজা করছে। তুই এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিস কেনো বলতো?
– হ্যাঁ সিরিয়াস হচ্ছি। আমি প্রেম করিনা৷ বুঝছো? শুনতে পাচ্ছো আমার কথা?
– বারবার এককথা কেনো বলছিস?
– যাতে তোমরা বিশ্বাস করো।
– আমরা কখন বললাম তোকে বিশ্বাস করিনি?
– ধুর!

ফের গেটটা লাগিয়ে দিলো অর্পিতা। অর্পিতার মা লিপি মুক্তাকে জিজ্ঞেস করলেন
– মুক্তা, ওর কি ভার্সিটিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে?
– নাহ মামী।
– তাহলে এমন অদ্ভুত আচরন কেনো করছে?
– ঐ ব্যবসা নিয়ে একটু টেনশনে আছে।
– কিসের টেনশন? সেল তো ভালোই হচ্ছে।
– আরো বড় করতে চায় ব্যবসাটা।
– ভালো কথা। বড় করুক। এই কথা ওর বাবাকে বললেই তো হয়।
– হ্যাঁ আমি বলেছি মামাকে বলতে।
– এই ডাকো তো তোমার মেয়েকে। ওকে বলো তুমি ওকে আরো টাকা দিবে।
– কাল সকালে ঠান্ডা মাথায় ওর সব আবদার শুনবো। এখন না। ঘুম পাচ্ছে প্রচুর। ঘুমাবো এখন।

ফোন বাজছে অর্পিতার। আশফাক ফোন করেছে। কলিজায় ফের কাঁপন ধরেছে। এই লোকের সাথে কথা বলা যাবে না৷ বললেই সমস্যা। নিজেকে আটকে রাখাটা বড্ড কঠিন হয়ে যায়। চুম্বকের মতো লোকটা নিজের দিকে ওকে টানতে থাকে। কল কেটে গেছে। জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো অর্পিতা। হাতটাকে বহু কষ্টে আটকে রেখেছিলো এতক্ষণ। বারবার মনে হচ্ছিলো অদৃশ্য কোনো শক্তি হাতটাকে রিসিভ অপশনের দিকে ঠেলছিলো। মাথার বালিশটাতে সামান্য হেলান দিতেই আবার ফোন বাজছে অর্পিতার। নিজেকে আর আটকে রাখা যাচ্ছে না। রিসিভ করবে না ভাবতে ভাবতে করেই ফেললো সে।

– হ্যা… হ্যালো…
– খাওয়া শেষ?
– হুম।
– কি করছো?
– নাম্বার কোথায় পেলেন?
– তুমিই না সকালে বললে যার কাছ থেকে তোমার খোঁজ নিয়েছি তার কাছ থেকে যেনো তোমার নম্বরটা নেই।
– মানুষটা কে?
– শোনার দরকার কি?
– অবশ্যই দরকার আছে। কে আমার ইনফরমেশন আপনাকে দিচ্ছে সেটা জানার জন্য তো মনে কৌতুহল জাগাটা খুবই স্বাভাবিক।
– অন্য ছেলের ব্যাপারে কৌতুহল না দেখিয়ে আমার ব্যাপারে দেখাও।
– মানে?
– আমি কে? কি করি? কোথায় থাকি এসব জানতে ইচ্ছে হয়না?
– না।
– কেনো? আমি কি দেখতে খুব কুৎসিত?
– হ্যাঁ আপনি দেখতে খুবই বাজে৷ আপনার কন্ঠ তো আরো বাজে। শুনলে মনে হয় কান পঁচে যাচ্ছে।
– আমি যে তোমাকে ভালোবাসি।

ভালোবাসি! কথাটা শুনে বোধহয় রক্ত চলাচল বড্ড বেড়ে গেছে অর্পিতার। জিহ্বায় জড়তা কাজ করছে। কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না সে।

– অর্পিতা, শুনতে পাচ্ছো? আই লাভ ইউ।

কলটা কেটে দিয়ে ফোনের সুইচ অফ করে দিলো অর্পিতা। কি শুরু করেছে লোকটা? দম আটকে মেরে ফেলবে নাকি ওকে?
বাহির থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে মুক্তা। দরজাটা খুলে দিলো অর্পিতা। দরজা খুলেই বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লো সে। অর্পিতার কাছে এসে বসলো মুক্তা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে।
– তখন কে ফোন করেছিলো?
– আশফাক। একটু আগে আবার ফোন করেছিলো
– কি বললো?
– ভালোবাসি বলেছে।
– আবার উনাকে বকে দিয়েছিস না?
– উহুম। আমি উনাকে কিছুই বলতে পারি নি। উনার কথা মনে হলে, শুনলে কেমন একটা ঘোরের মাঝে পড়ে যাই।
– কি করবি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?
– ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
– সায়েমের সাথে ব্যাপারটা বুঝবি?
– ও তো বলবে বিয়ে করে ফেল।
– আচ্ছা ওর সাথে কথা বলে দেখি আমরা। একটা ভালো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে ও।
-গ্রুপ কলে কথা বলবি?
– হ্যাঁ। দাঁড়া পার্স থেকে ইয়ারফোন আনি।
– আমি এখানে কথা বলবো না। পাখি শুনলে ঝামেলায় পড়ে যাবো। ছাদে চল।
– আচ্ছা তুই যা। আমি আসছি।
(চলবে)

-মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here