মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব : ০১
ভার্সিটির বড় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইশা। তার স্বপ্নের ভার্সিটি, কতদিন ধরে দেখা স্বপ্ন আজকে পূরণ হতে চলেছে। হ্যাঁ ও ওর স্বপ্নের ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। দুরুদুরু বুকে একপা একপা করে সামনে এগিয়ে চলছে।
পরনে একটা হালকা গোলাপি রঙ্গের থ্রি পিস, চুলগুলো সাইট বেণি করে একপাশে ওড়না, কাঁধে একটা ব্যাগ,আর মুখে ফুটে রয়েছে এক চিলতে হাসি। উজ্জল শ্যাম বর্ণের মেয়েটিকে যেন অপরুপা সুন্দরী লাগছে। মুখে একটু ভয়ের ছাপ নতুন জায়গা,নতুন পরিবেশ তাই।
ইশা এদিক ওদিক তাকিয়ে ক্যাম্পাসটা দেখছে,চারদিকে অনেক ফুল গাছ, এর মধ্য দিয়ে ও এগিয়ে যাচ্ছে। মাঠে ঘাসের উপর ছেলেমেয়েরা গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ইশা মুখে হাসি ফুটে উঠে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটা সিনিয়র আপুর কাছে যায় ইশা।আর বলে,
“আপু, ফার্স্ট ইয়ারের ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের ক্লাস টা কোন দিকে একটু বলতে পারবেন?”
ওই মেয়ে গুলোর ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়,তার মধ্যে একজন বলে,
” নতুন নাকি?”
ইশা হাসিমুখে বলে,” জি আপু”
ওই মেয়েটা বলে,
“সোজা গিয়ে বা দিকের বিল্ডিং টার ২ তলায়”
মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে ওই মেয়েটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইশা সামনের দিকে এগোয়।
সিদ্রাতুল ইশা।এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ার এর স্টুডেন্ট।বাবা মা আর ও,ওদের একটা ছোট্ট পরিবার।ইশা মাঝে মাঝে ওর ভাই/বোন এর জন্য খুব মন খারাপ হয়।তারপর আবার এটা ভেবে খুশি হয় যে ভাই/বোন থাকলে তো ওর ভাগের আদরটা ওরা পেতো,এখন তো সব আদর ও পায়।তবে ও বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে।
একসময় খুজঁতে খুঁজতে নিজের ক্লাসরুম পেয়ে যায়।সব নতুন নতুন মুখ,কিছু কিছু ছেলেমেয়ে একসাথে বসে গল্প করছে। ইশা আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়।
একটু পেছনের দিকে একটা মেয়ে একা বসেছিল,ইশা গিয়ে ওই মেয়েটার পাশে বসে।মেয়েটা একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকায়।ইশাও কোনো এক জড়তার কারণে মেয়েটার সাথে কথা বলে না,শুধু একটু মুচকি হাসি দে।মেয়েটাও বিনিময়ে একটু হাসে।
এমনিতে ইশা প্রচুর কথা বলে,যাকে বলে বাঁচাল।কিন্ত নতুন জায়গা,নতুন নতুন মানুষ তাই একটু ভদ্র মেয়ে হয়ে বসে আছে,প্রথমে বাঁচাল এর মতো কথা বলা শুরু করলে সবাই তো ওকে পাগল ভাব্বে,হি হি হি।
অনেকক্ষণ পর তারপর ক্লাসে টিচার আসে,সবাই কথা বলা বন্ধ করে যার যার সিটে বসে পরে।
আজকে প্রথম দিন তাই স্যার সবার পরিচয় জিজ্ঞাস করে,একে একে সবাই নিজেদের নাম বলে।
এবার ইশাদের পাল্লা,ইশার পাশের মেয়েটা দাড়িয়ে ওর নাম বলে,তখন ইশা জানতে পারে এই মেয়েটার নাম রাইমা।
তারপর স্যার একে একে সবার পরিচয় জিজ্ঞাস করে। সবাই পরিচয় দে, ইশার খুব ভালো লাগছে। তারপর আরো কয়েকটা ক্লাস, সব ক্লাসের টিচাররা গল্প করে, সবার নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করে।
রাইমা মেয়েটার সাথে ইশার আর কথা হয়না রাইমাকে চুপচাপ থাকতে দেখে ইশাও আর নিজ থেকে কথা বলেনা।
প্রথম দিনে ভার্সিটিতে ইশার ভালোই কাটে।ইশা খুব খুশি হয় যে সিনিয়রদের রেগিং এর শিকার হতে হয় নি।ও রেগিং খুব ভয় পায়।ইশা খুশি মনে বাড়ি যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠে।
বাসায় এসে কলিংবেল চাপ দিতেই আমেনা আন্টি(ওদের বাসায় কাজ করে) দরজা খুলে দে, ইশা প্রথমে ওর মা বাবার রুমে যায়,ওখানে ওর বাবা হুইল চেয়ারে বসে গল্পের বই পড়ছিল।ইশা পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে ওর বাবার পিছনে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আর বলে,
“আব্বু,আমি এসে পড়েছি”
ইশার আব্বু একটু অবাক হয়,তারপর একটু হাসি দিয়ে বলে,
“আরে আমার মামনিটা যে,কখন আসছিস?তা প্রথম দিন ভার্সিটি কেমন লাগলো?”
“এইতো এইমাত্র ফিরলাম আব্বু আর প্রথম দিন ভার্সিটি অনেকককক ভালো লাগছে।জানো,আব্বু আমি তো ভয়ে ছিলাম না জানি ভার্সিটির সিনিয়রদের রেগিং এর শিকার হতে হয় কিন্ত কোনো ঝামেলা হয় নাই,তাই আমি আরো খুশি”
তারপর ইশার আব্বু বলে,
“হয়েছে হয়েছে এবার যা ফ্রেশ হয়ে আয়”
“হমমম,আব্বু যাচ্ছি খুব খিদে পেয়েছে।”
বলেই ইশা দৌড়ে ওর রুমে চলে যায়। তারপর কাপড় নিয়ে ওয়াশদরুমে ফ্রেস হতে যায়।
ইশার আম্মু একটা হাই স্কুল এর টিচার আর ওর আব্বু কিছু করেনা.কিছু বছর আগে ওর বাবার একটা এক্সিডেন্টের কারণে এখন হুইল চেয়ার এ করে চলাফেরা করে।
ইশা গোসল করে, ওর বাবার সাথে খাবার খেয়ে ওর আম্মুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।আজকে ভার্সিটির গল্প করতে হবে তো।
বিকালের দিকে ইশা ছাদে যায়।ছাদে কয়েকটা ফুল গাছ আছে, সবগুলো ইচ্ছার পছন্দের।ওর সবচেয়ে পছন্দ বেলি ফুল।বেলি ফুলের ঘ্রাণ শুনে ওর মন ভালো হয়ে যায়। তাই ছাদে অনেক বেলি ফুল গাছ আছে।ইশা গিয়ে লম্বা একটা শাঁস নিয়ে বেলি ফুলের গন্ধ নে।
তারপর কিছুক্ষন ছাদে গুনগুন করে হাঁটাহাঁটি করে। পাচঁ তলা বাড়িটির ২ তলায় ওরা ভাড়া থাকে।ছাদে এখন কেউ নেই,ও গিয়ে রেলিং এর পাশে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পর ইশা ওর আম্মুকে আসতে দেখে দৌড়ে নিচে চলে যায়।
ইশা নিচে এসে দেখে বলে আম্মু ডাইনিং টেবিলে বসে গ্লাসে পানি ঢেলে পানি খাচ্ছে। ইশা কে আসতে দেখে ওর মা বলে,
“কিরে আজকে প্রথম দিন ভার্সিটি কেমন কাটলো?”
ইশা আরেকটা চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
“খুব ভালো…”
“ভার্সিটি ভালো লেগেছে?”
“হম আম্মু,অনেক সুন্দর”
ইশার মা বলে,
“শুধু সুন্দর ভার্সিটিতে পড়লেই তো হবে না ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে।”
ইশা ফিক করে হেসে দে। তারপর বলে,
“টিচারের ছেলে মেয়েদের এই এক জ্বালা শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা!! আম্মু তুমি স্কুলে বাচ্চাদের মতো আমাকেও শুধু পড়াশোনার কথা বলো,,আমি এখন বড় হয়েছি।”
ইশার মা বলে,
“বড় হয়েছিস তো কি হয়েছে ভার্সিটিতে উঠেছিস বলে পড়াশোনা করবি না?”
ইশা বলে,
“আমি কি বারণ করেছি নাকি যে পড়াশোনা করবো না, তুমি আর টিচার দের মত জ্ঞান দিওনা তো।”
ইশার মা বলে,
“আমিতো টিচারই।”
বলেই হেসে উঠে ইশাও জোড়ে হেসে দে। ওদের হাসাহাসির মধ্যে ইশার বাবা এসে বলে,
“কি নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে?”
ইশা হেসে বলে,
“কিছু না বাবা তুমি বসো, আমি চা নিয়ে আসছি”
ইশার বাবা বলে,
“এটা ঠিক আছে,তোর হাতের চায়ের মজাই আলাদা।তাড়াতাড়ি যা।
ইশার মা একটু রাগ দেখিয়ে বলে,
“কেন আমার হাতের চা ভালো লাগেনা?শুধু মেয়ের হাতে চা ভালো লাগে?”
ইশার বাবা অসহায় দৃষ্টি দিয়ে বলে,
“ভালো তো…”
আর এদিকেই ইশা মুখ টিপে হেসে রান্নাঘরে চলে যায় চা বানাতে।চায়ের সাথে আরও কিছু নাস্তা নিয়ে আসে।ইশার মা এর মধ্যে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ চলে আসে। তারপর তিনজন গল্প করতে করতে নাস্তা করে। গল্পের মেইন টপিক আজকে ইশার ভার্সিটি। ইশা মা-বাবা কিছু বলছে না,ইশাই বকবক করে যাচ্ছে আর ওনার মেয়ের বকবক শুনছে আর হাসছে।
চলবে..