মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :০৩
পরের দিন ইশা ভার্সিটিতে গিয়ে আরিয়ান বা ওর কোনো বন্ধুকে না দেখে একটু খুশিই হয় তারপর ক্লাসে যায়।ক্লাসের সবাই ওর দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়।ক্লাসে রাইমা আগেই এসে পড়েছে।ইশা গিয়ে রাইমার পাশে বসে পড়ে।রাইমা ইশাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বলে,
“হেই, কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো,তুমি?”
রাইমা বলে “আমি তো বিন্দাস আছি।তোমাকে নিয়ে একটু টেনশন এ ছিলাম,আচ্ছা আরিয়ান ভাইয়ারা কেউ তোমাকে কিছু বলছে?”
“না,ওদের সাথে আর দেখা হয়নি”
রাইমা একটু চিন্তিত মুখে বলে “আল্লাহ তুমি জানো আমি কতো টেনশন এ ছিলাম”
“আচ্ছা এসব বাদ দাও।তুমি আমাকে এখনো ভালো ফ্রেন্ড ভাবো না,তাই না?”
“এসব কি বলছো তুমি,তুমিই তো আমার একমাত্র ফ্রেন্ড”
ইশা মুখ গোমরা করে বলে,
“তাহলে আমাকে তুমি করে বল কেনো?তুই করে বলবা”
“তুমিও তো তুমি করে বল,তুমিও তুই করে বলবা”
“আচ্ছা তুই ই বলবো,এবার ক্লাসে মন দে”
“যো হুকুম মহারানি”
এটা শুনে ইশা হেসে দে,ইশার সাথে রাইমাও হেসে দে।তারপর দুজন ক্লাসে মন দে।
তিনটা ক্লাস করার পর একটা ছেলে এসে বলে,
“এখানে সিদ্রাতুল ইশা কে আছে?”
ইশা অবাক হয়ে দাড়িয়ে বলে,”আমি।কেনো?”
ছেলেটা বলে, “আপনাকে আরিয়ান ভাই ডাকছে”
এটা শুনে ইশা একটু ভয় পেয়ে যায়।তারপর বলে,
“আমাকে কেনো ডাকছে!”
“জানি না,সেটা তো গেলেই দেখতে পাবেন ”
ইশা রাইমার দিকে তাকায়।রাইমাও ওর দিকে অসহয়ায় দৃষ্টিতে তাকায়।
তারপর ইশা বলে,”রাইমা তুইও চল”
“আরে আমি কেনো যাবো?তোকে ডাকছে তুই যা ”
“এই তুই আমার বন্ধু? আমার বিপদে আমার পাশে থাকবি না?”
রাইমা বলে, “আমি কিন্তু বলছিলাম ওরা যা বলে তা করতে,তুই উল্টা চড় মেরে দিসোস!”
ইশা রাইমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকায়।তারপর রাইমা বলে,
“আচ্ছা চল,এভাবে তাকাস না।”
.
“আপু এই ক্লাসে”
ছেলেটা ওদেরকে ক্লাস দেখিয়ে চলে যায়,ইশা আর রাইমা ভয়ে ভয়ে ক্লাসে ঢুকে,
আরিয়ান একটা চেয়ার এর উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আর ও বন্ধুরা ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।তখন একটা মেয়ে আরিয়ানকে বলে,
“বেবি,এই মেয়েটা কালকে তোমাকে চড় মেরেছে?কালকে আমি ছিলাম না বলে,দেখো এখন ওকে আমি কি করি..”
আরিয়ান বিরক্তি সহকারে বলে,
“উফ জারা,এটা আমার ব্যাপার আমাকে হেন্ডেল করতে দে।তুই এর থেকে দুরে থাক”
এটা শুনে জারা চুপ হয়ে যায়।
তখন আরিয়ান ওর একটা বন্ধুকে বলে, “রিহান”
“হুম বল”
“রাইমাকে নিয়ে একটু ঘুরে আয় তো”
এটা শুনে ইশা রাইমার হাত ধরে বলে,
“না,রাইমা কোথায় যাবে না”
তখন আরিয়ান বলে, “রিহান,তোকে কি বলছি শুনতে পাসনি”?
“হুম শুনছি” এটা বলে রিহান রাইমার কাছে গিয়ে বলে,
“চলেন মেডাম”
রাইমা ইশার কানে কানে বলে,
“ইশা তুই ভয় পাস না আর এখানে কি কি হয় আমাকে জানাস,আসছি”
বলেই রাইমা রিহান এর সাথে বের হয়ে যায়।
.
এবার আরিয়ান ওঠে আসে,ইশার কাছে একটু ঝুঁকে দাড়ায় ইশাও মাথাটা একটু পেছনের দিকে ঠেলে দে,এটা দেখে আরিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ইশার হাত ধরে বলে,
“চলো”
ইশা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে, ও বুঝতে পারছে না কোথায় যাওয়ার কথা বলছে।আর এদিকে আরিয়ান ইশার হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে তখন জারা বলে ওঠে,
“বেবি,ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”
আরিয়ান বলে, “তোরা কেউ আমার সাথে আসবি না”
বলেই ইশাকে নিয়ে সামনের দিকে এগোয়,
এরপর একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়, আরেকটা ছেলেকে বলে দরজা খুলতে।দরজা খুলতেই ইশা অবাক।এটা দেখে তো একটা স্টোররুমের মতো লাগছে।এখানে কেন এনেছে?ইশা ভয় পেয়ে যায়,আবার ওকে এখানে আটকে রাখবে না তো!
তখন আরিয়ান বলে,
“চলো”
রুমে ঢুকেই ইশা কাশতে শুরু করে, কারণ ভিতরে প্রচুর ধুলাবালি আর অনেক ময়লা জিনিস। কিছু ভাঙ্গা বেঞ্চও আছে।আরিয়ান একটা রুমাল দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নে।তারপর বলে,
“নাও, শুরু করো”
ইশা জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায় কি শুরু করার কথা বলছে ও বুঝতে পারছে না।আরিয়ান ইশার দৃষ্টি বুঝতে পেরে বলে,
“এই পুরো রুমটা তুমি আজকে একা পরিষ্কার করবে। যতক্ষণ কাজ শেষ না হবে বাড়ি যেতে পারবেনা।”
এটা শুনে ইশা পারে না এখনই কান্না করে নি। ও বাসা থেকে ঠিক করে আসছিল যে আরিয়ানকে আজকে সরি বলবে। তাই ও বলে,
“দেখুন ভাইয়া আমি সত্যি সরি,কালকে আমার আপনাকে চড় মারা ঠিক হয়নি। আমি সত্যি খুব দুঃখিত প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন ”
আরিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
“আমি কাউকে এমনি ক্ষমা করি না, দোষ যখন করেছ শাস্তি পেতেই হবে। আগে আগে দেখো হোতাহে কেয়া..!!নাও,শুরু করো ”
ইশা আরিয়ানকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু আরিয়ান হাতের ইশারায় ইশাকে থামিয়ে দে।
ইশা অসহায় দৃষ্টিতে একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে, উপায় না পেয়ে ওড়নাটা কোমরে বেঁধে একটা ঝাড়ু হাতে নে।আর কাজ শুরু করে দে। আর আরিয়ান দূরে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। কাশতে কাশতে ইশার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে আর আরিয়ান দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখে মজা পাচ্ছে।
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মোটামুটি সব কাজ শেষ। ইশা খুব ভালোভাবে পরিস্কার করেছে কিন্তু ওর অবস্থা নাজেহাল।
আরিয়ান এবার ইশার কাছে এসে বলে,
“ওয়েল ডান মিস ইশা।মোটামুটি সব কাজই কমপ্লিট করেছ। আজকের জন্য তোমার শাস্তি এখানেই থাক। এবার তুমি আসতে পারো।”
এটা শুনে ইশা ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে বাইরে চলে আসে,তখন রাইমার ইশার কাছে এসে বলে,
“কিরে তোর এ অবস্থা কেন আর আরিয়ান ভাই তোকে কি শাস্তি দিয়েছে?”
ইশার অবস্থা খুব বাজে, গায়ে অনেক ময়লা লেগে আছে আর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। ও কোন রকমের রাইমাকে সবটা বলে বাড়ি আসার জন্য রিকশায় উঠে।
বাড়ি এসে ইশা চুপিচুপি নিজের রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে চলে যায়, কারণ ওর বাবা ওকে এই অবস্থায় দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করবে আর চিন্তা করবে।
রাত ১০টা,,
আরিয়ান শিষ বাজাচ্ছে আর ড্রাইভ করছে।ও আজকে একটু খুশিই আছে।ইশাকে শাস্তি দিতে পেরেছে,ইশার নাজেহাল অবস্থা দেখে ওর খুব ভালো লাগছে।
হাসি মুখে বাড়িতে ঢুকে,আরিয়ানের মা ছেলের কাছে এগিয়ে বসে চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
“কিরে,কই থাকিস সারাদিন। ভার্সিটি শেষে কোথায় এতো ঘুরাঘুরি করোস?”
“উফ,মম তুমি কি আমাকে স্কুলে পড়ুয়া ছেলে ভাবো নাকি যে স্কুল ছুটি হলে সোজা বাড়িতে চলে আসবো। আমি বড় হয়ে গেছি”
“হম জানি তো তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস,এখন তো আমার সাথে বসে গল্প করার মতো একটু সময়ও তোর কাছে নেই।”
“আরে মম কি শুরু করলা!আচ্ছা চলো আজকে তোমার সাথে অনেক গল্প করবো”
“না না এখন গল্প করতে হবে না,আগে ফ্রেশ হয়ে আয়”
আরিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর মা বলে,
“যা আগে ফ্রেশ হয়ে আয়,খিদে পেয়েছে নিশ্চয়”
আরিয়ান আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে ওর রুমে চলে যায়। তারপর ডিনার করার জন্য নিচে আসে।এর মধ্যে আরিয়ান এর বাবা খাবার টেবিল এ চলে।আসে,আরিয়ান কে দেখে বলে,
“তো,পড়াশুনা কেমন চলছে?নাকি সারাদিন শুধু ঘুরে বেড়াও?”
“হুম।পড়াশুনা তো ভালোই চলছে আর কিন্ত সারাদিন ঘুরাঘুরি করি না,কতো কাজ করি জানো?”
“হম জানি তো, কি আর কাজ করো শুধু মারপিট..
এবার আরিয়ান এর মা বলে,”আহ,,খেতে বসে কি শুরু করলে।চুপচাপ খাও”
আরিয়ানের মায়ের কথা শুনে কবির চৌধুরি চুপ হয়ে যায়।তারপর আর কেউ কথা বলে না,আরিয়ান খেয়ে নিজের রুমে চলে আসে।
পরদিন ভার্সিটি তে,,
ইশা আজকে একটু ভয়ে ভয়ে ভার্সিটি তে আসে,একবার ভেবেছিল আসবে না কিন্ত পরে আবার ভাবে এভাবে কতদিন ভয়ে ভয়ে থাকবে।ইশা অনেক সাহসী মেয়ে।কিন্ত ও বুঝে গেছে আরিয়ান এর সাথে ঝামেলা করে লাভ নেই।আরিয়ানের বাবার অনেক পাওয়ার,পরে দেখা যাবে ওকেই ভার্সিটি থেকে বের করে দিবে, এমনিতেই ও আরিয়ান কে চড় মেরে খুব বড় ভুল করেছে।তাই মুখ বুঝে সব সয্য করছে।
চলবে….