মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব:১১
ক্লাস শেষে ইশা লাইব্রেরীর দিকে যায়। রাইমা বাসায় চলে গেছে। ওর আম্মু ফোন দিয়ে বলেছে,বাসায় কি কাজ আছে নাকি।তাই ও ক্লাস শেষে সোজা বাসায় চলে গিয়েছে।আর ইশা লাইব্রেরিতে যায় একটা বই আনতে।
লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখে একদম নিরব!সবাই চুপচাপ বই পড়ছে। ইশা ওর বইটা খুঁজতে থাকে। একসময় পেয়ে যায় আর ওর মুখে হাসি ফুটে উঠে।
ইশা লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে বই দেখতে দেখতে হাঁটছিল হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায়।ও পরে যেতে নেয় কিন্তু ও ইশা অনুভব করে কেউ ওর কোমর জড়িয়ে ধরেছে।ইশা উপরে তাকিয়ে দেখে আরিয়ান। অবাক চোখে আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ানের ঠোঁটে বাঁকা হাসি।আরিয়ান ইশার কানে কানে বলে,
“আমার সাথে ধাক্কা খাওয়ার এতো ইচ্ছা?”
ইশা ভাবছে ওকে কখন ধাক্কা খেলো..!!ইশাতো বই দেখতে দেখতে হাঁটছিল।ইশা রেগে বলে,
“আমি আপনার সাথে ধাক্কা খাইনি,আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন।
আরিয়ান বলে, “আমি ধাক্কা দিতে তুমি দেখেছো?”
ইশা এবার চুপ হয়ে যায়।কারণ ও তো কিছু দেখেনি। বই দেখতে দেখতে আসছিলো আর হঠাৎ ধাক্কা লাগে। ইশা এবার খেয়াল করে যে আরিয়ান এখনো ওর কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ইশা আরিয়ান থেকে ছোটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে।তারপর বলে,
“ছাড়ুন আমাকে,,,, এভাবে ধরে রেখেছেন কেন?”
আরিয়ান ইশাকে ছেড়ে দে।তারপর একবার ইশার দিকে তাকিয়ে ওর টি শার্টের কলারটা ঠিক করতে করতে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যায়।
ইশা আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি দে। তারপর ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায়।
দোকানে গিয়ে ফাহিমের জন্য ক্রিকেট বল আর চকলেট কিনে বাসার জন্য রওনা দেয়।
ইশা বাসায় এসে সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে চারদিকে দেখে কিন্তু ফাহিমকে কোথাও দেখতে পায়না।তাই ও ভাবে পড়ে দিয়ে দিবে।
.
বিকালে ইশা ছাদে যায়,,,আজকে আকাশ টা একটু মেঘলা,সাথে ঠান্ডা মিষ্টি একটা বাতাস।ইশার চুলগুলো খোলা।চোখ বন্ধ করে সময়টা উপভোগ করছে তারপর জোড়ে একটা নিশ্বাস নে।
ছাদের রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকায়।সেখানে ছোট ছোট বাচ্চারা খেলা করছে,ফাহিমও আছে। ইশা অনেকক্ষণ ওদের খেলা দেখে,,,হঠাৎ ফাহিম উপরের দিকে তাকায় তখনই ইশা ইশারায় ফাহিমকে বলে খেলা শেষে ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য।ফাহিম ইশারা যাবে বলে।
ছাদে কিছুক্ষণ থাকার পর ইশা নিচে নেমে আসে। ফ্ল্যাটে ঢুকতে যাবে তখন কোথা থেকে ফাহিম আসে।ইশা ফাহিমকে বলে,
“আয় ভেতরে আয়”
ইশার মা এখনো আসেনি।ইশার বাবা ফাহিমকে দেখে বলে,
“ফাহিম দুষ্টুটা নাকি?”
ফাহিম ফিক করে হেসে দেয়।তারপর ইশার বাবার কাছে যায়।ইশার বাবা বলে,
“তুই কই থাকোস?এখন তো আমাদের বাসায় আসিসই না”
ফাহিম একটু ভাব নিয়ে বলে,
“অনেক বিজি থাকি তাই তোমাদের বাসায় আসার সময় পাই না”
ইশার বাবা হেসে বলে,
“বাব বাহ….এতো আপনি বিজি থাকেন যে সময়ই পান না।তা,কি এমন কাজ করেন?”
“আর বলো না,এমনিতে তো সবাই আমাকে বকে আমি নাকি দুষ্টামি করি কিন্তু কাজের বেলায় ঠিকই আমাকে খুঁজে।আমাকে ছাড়া তো কোনো কাজই হয় না”
ইশা বাবা ফাহিমের কথা শুনে হেসে দে।ইশা ফাহিমের মাথায় হালকা একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,
“হয়েছে,,,তোর আর পাকনা কথা বলে হবে না।চল…”
তারপর ফাহিমকে নিয়ে ইশার রুমে যায় আর ইশার বাবা পেপার পড়ায় মনোযোগ দে।ইশা রুমে গিয়ে চকলেট আর বল দিয়ে বলে,
“ওইদিনের কথা কাউকে বলবি না তো,প্রমিস? ”
ফাহিম চকলেট আর বল নিয়ে বলে,,,, “ওকে বলবো না,প্রমিস” বলে দৌড়ে চলে যায়।
.
পরদিন ইশা ভার্সিটিতে এসে দেখে বাস্কেটবল খেলার ওইদিকে একটু বেশি ভীর।ইশা সেখানে যায় কি হচ্ছে দেখার জন্য।গিয়ে দেখে রাইমাও ওখানে আছে। ইশা রাইমাকে বলে,
“কিরে কি হচ্ছে এখানে?”
রাইমা খুশিতে লাফিয়ে বলে,
“আরিয়ান ভাইদের বাস্কেটবল খেলা হবে তাই সবাই দেখার জন্য ভিড় করেছে”
ইশা মুখ বাঁকিয়ে দিয়ে বলে,
“ওহ.. এই ব্যাপার!আমি ভাবলাম কি না কি?”
তারপর রাইমাকে বলে, “চল”
রাইমা অবাক হয়ে বল, “কোথায় যাবো?”
“কেনো,, ক্লাসে?”
“না আমি খেলা দেখবো”
“তুই যাবি না?”
রাইমা ইশার হাত ধরে বলে,
“এরকম করিস না প্লিজ,,, একটু দেখব”
রাইমার জোড়াজুড়িতে ইশার থাকতে হয়।
কিছুক্ষণ পর আরিয়ানদের দলের সবাই আসে। আরিয়ান একটা নীল গেঞ্জি আর একটা কালো শর্টস পড়েছে।সব মেয়েরা আরিয়ানকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে। হাতাকাটা গেঞ্জি পরার কারনে ওর হাতের বাহু গুলা দেখা যাচ্ছে।মেয়েরা তো অঙ্গান হয়ে যাবে এমন অবস্থা। কিছু কিছু মেয়ে একটু বেশি ন্যাকামি করছে তা দেখেই ইশার বিরক্ত লাগে।সবাই আরিয়ান আরিয়ান করছে।
আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দে।ইশা চমকে উঠে চারদিকে তাকায়।নাহ কেউ দেখেনি।ইশা বুক হাত দিয়ে শ্বস্তির নিশ্বাস নে তারপর আরিয়ানের দিকে রাগি চোখে তাকায়।ইশার রাগ দেখে আরিয়ান মনে হয় মজা পাচ্ছে।ওর হাসি প্রশস্ত হয়।
এদিকে কেউ না দেখলেও রাইমা ঠিকই দেখে ফেলেছে।ওর বান্ধুপিকে কোনো ছেলে চোখ মেরেছে আর ও দেখবে না সেটা কি হয়!রাইমা নিজের কাঁধ দিয়ে ইশাকে ধাক্কা দে।ইশা রাইমার দিকে তাকালে রাইমা ভ্রু নাচায়।
ইশা বিরক্তি নিয়ে বলে, “কি?”
রাইমা দুষ্টু হেসে বলে, “দেখে ফেলেছি”
ইশা মুখ বাকিয়ে বলে, “ভালো করেছিস”
বলেই ইশা চলে যেতে নে রাইমা ইশার হাত ধরে বলে,
“এই এই ইশা যাস না প্লিজ,,খেলা দেখবো তো”
“তুই দেখ আমি কি বারন করেছি নাকি?কিন্তু আমি দেখবো না”
“কেনো?না,তুই ও আমার সাথে দেখবি।আমি তোকে যেতেই দিবো না”
বলেই রাইমা ইশার হাত শক্ত করে ধরে।ইশা ছুটার চেষ্টা করে তারপর আর না পেরে খেলা দেখায় মনোযোগ দে।অনেক টিচাররা ও আসছে খেলা দেখতে।
রিহান রাইমার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দে কিন্তু রাইমা অন্যদিকে ফিরে যায়।তা দেখে রিহানের একটু মন খারাপ হয়।তবুও ও হাসি মুখে সবার সাথে হাই-ফাই করে খেলা শুরু করে।
রাইমা অন্যদিকে তাকালেও ওর চোখ শুধু রিহানের দিকে যাচ্ছে।কেনো জানি আজকে শুধু রিহানের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।খেলার পোশাকে রিহানকে অনেক সুদর্শন লাগছে।রাইমার বেহায়া চোখ শুধু রিহানকে দেখছে।ইশা রাইমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকায় দেখে রাইমা রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ইশা রাইমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“কি রে,,কাকে দেখছিস হম..?”
রাইমা থতমথ খেয়ে বলে,
“ননা না কাউকে না”
“তুই কি ভাবোস?শুধু তুই সব দেখোস আমি দেখি না?”
“চুপ কর তো”
“রিহান ভাইয়া তোকে দেখে কি সুন্দর হাসি দিলো আর তুই কি করলি?গাধা একটা..! ওনি তোকে পছন্দ করে তুই বুঝোস না?”
রাইমা ভাবছে,,,আচ্ছা ইশা কি সত্যি বলছে?রিহান কি ওকে পছন্দ করে!রাইমা মাথা নেড়ে নিজে নিজে বলে,
“না না এসব আমি কি ভাবছি?ধুরররর….”
তারপর ইশাকে বলে,
“না বুঝি না।তোরও বুঝা লাগবে না।খেলা দেখ”
তারপর দুজন আর কথা বলে না,,খেলা দেখতে থাকে।
খেলা জমে উঠেছে।সবাই আরিয়ানের নাম করে চিৎকার করছে।করবে নাই বা কেনো,,,আরিয়ান সত্যি অনেক ভালো খেলছে।
হাফ টাইমে একটু ব্রেক দে।আরিয়ান তোয়ালে দিয়ে ওর গায়ের ঘাম মুছে ঠান্ডা পানির বোতল হাতে নে।ও ঢকঢক করে পানি খাচ্ছে,,গলা উঠা নামা করছে।সব মেয়েরা হা করে আরিয়ানকে দেখছে।ইশাও না চাইতে আরিয়ানের দিকে চোখ চলে যায়।
রিহান একবারও রাইমার দিকে তাকায় না।এতে রাইমার একটু মন খারাপ হয়।ও তখন মুখ ফিরিয়ে নেওয়াতে রিহান হয়তো অভিমান করেছে।রাইমা রিহানের দিকে এগিয়ে যায়।রিহান সবার থেকে একটু দূরে বসে জুতার ফিতা লাগাচ্ছে।রাইমা রিহানের কাছে গিয়ে বলে,
“আপনি তো খুব ভালো খেলতে পারেন।ওয়াও”
রিহান রাইমার দিকে একবার তাকায় কিছু বলে না।রাইমা আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না।ও দাঁড়িয়ে হাত মুচড়ামুচড়ি করতে থাকে।আবার খেলা শুরু হবে তাই রিহান উঠে চলে যাচ্ছিল তখন রাইমা বলে,
“বেষ্ট ওফ লাক”
রিহান পেছনে ফেরে রাইমার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দে।খেলা শুরু হওয়ার আগে ও এটা শুনতে চাইছিলো কিন্তু তখন রাইমা মুখ ফিরিয়ে নে তাই রিহানের একটু খারাপ লাগে।কিন্তু এখন?এখন ও অনেক খুশি।রিহান রাইমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,
“থ্যাংকস”
বিনিময়ে রাইমাও একটা মিষ্টি হাসি দে।
চলবে….