মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :১২
চারদিকে শুধু চিৎকারের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। সবাই আরিয়ানদের দলের জয়ধ্বনি করছে।লাষ্ট পর্যায়ে খেলায় ছিলো টান টান উত্তেজনা।কে জিতবে কে হারবে বলা যাচ্ছিল না কারণ দুদলই খুব ভালো খেলেছে।শেষ পর্যন্ত আরিয়ানদের দল বিজয়ী হয়।সবাই অনেক খুশি হয়।ইশা আর রাইমার চোখেও খুশির ছাপ।
প্রিন্সিপাল,দলের নেতা মানে আরিয়ানের হাতে ট্রফি তুলে দে,অন্যরা চারদিক থেকে ধরে।ট্রফি দেওয়ার সময় সবাই চিল্লিয়ে উঠে।আর ছবি তোলা তো আছেই।সবাই প্রচুর ছবি তুলে।
আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দে।তারপর আরিয়ান রা চেন্জিং রুমে যায়।আর সবাই যার যার ক্লাসে যায়।আজকে প্রথম দু ক্লাস এর টাইম এ খেলা চলেছে তাই ওই ক্লাস গুলো হবে না।
রাইমা আর ইশা ক্লাসে যাওয়ার জন্য হাঁটছে।তখন রাইমা বলে,
“খেলাটা দেখে খুব ভালো লাগছে,না রে?এমনি তে তো খুব একটা খেলা দেখিনা না আর ভাস্কেট বল তো নাই।তবে আজকে খুব ভালো লেগেছে”
ইশা নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“হুম আমারও”
“আরিয়ান ভাইয়া এতো ভালো খেলে,আজকে না দেখলে জানতেই পারতাম না”
ইশা কিছু বলে না শুধু মুচকি হাসে।তারপর ওরা ক্লাসে গিয়ে একসাথে বসে।
.
ক্লাস শেষে ইশা গেইটের সামনে এসে দেখে আরিয়ান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।ইশা অন্যদিকে চলে যেতে নে কিন্তু আরিয়ান ইশার হাত ধরে ইশা কিছু বলার আগেই চোখের পলকে ওকে গাড়িতে তুলে দরজা লক করে দে।তারপর নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসতে যাবে তখন কোথা থেকে জারা এসে আরিয়ানের হাত ধরে বলে,
“বেবি আজকে তুমি আমাকে বাসায় ড্রপ করে দিবে?”
আরিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে,
“তোকে বলছি না আমাকে এসব বলবি না আর তোর তো গাড়ি আছে।নিজে চলে যা।
“না,আমি তোমার সাথে যাবো”
“আমার সময় নাই,,তোর বয়ফ্রেন্ডদের বল”
জারা কিছু বলার আগেই ওর চোখ যায় গাড়ি অন্য পাশে সিটে বসে থাকা ইশার দিকে।ও রেগে বলে,
“আরিয়ান এই মেয়েটা তোমার গাড়িতে কি করছে?”
“সেটা জেনে তোর লাভ কি?তুই নিজের কাজে যা,,তোর তো আবার কতো কাজ থাকে!”
বলেই গাড়িতে উঠে গাড়ি সার্ট দে।ইশা কিছু বলে না চুপচাপ সব দেখে।ইশা আরিয়ান আর জারা কথা সব শুনেছে।ওর খুব হাসি পাচ্ছে আবার জারা মেয়েটার জন্য খারাপও লাগছে কিন্তু সেটা ক্ষণিকের জন্য কারণ ইশা জানে জারা কেমন!
জারা বুঝতে পারে যে আরিয়ান কাজ মানে কি বুঝাতে চাইছে।আরিয়ান ওর সব কিছু জানে!জারা রেগে পাশে থাকা একটা গাড়ির টায়ারে লাথি দে।
.
আরিয়ান ড্রাইভ করছে আর ইশা চুপ করে বাহিরে তাকিয়ে আছে।ও জানে কিছু বলে লাভ নেই তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।অনেক্ষণ পর আরিয়ান বলে,
“কি ব্যাপার,আজকে এতো চুপচাপ কেনো!”
ইশা বিরক্তি মুখ নিয়ে বলে,
“চিল্লিয়ে কোনো লাভ আছে?গাড়ি থামাতে বললে আপনি কি থামাবেন?”
“দ্যাস লাইক এ গুড গার্ল,,তুমি তো আমার স্বভাব ধরে ফেলেছ!আমি যেটা করতে চাই সেটাই করি কারোর বারণ শুনি না”
“কিন্তু আপনি এভাবে আমার সাথে জোর করতে পারেন না”
আরিয়ান ড্রাইভ করতে করতে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
“আমি সব পারি”
“আমার উপর জোর খাটানোর আপনার কোনো অধিকার নেই”
“আমি তোমাকে ভালোবাসি,তোমার উপর আমার অধিকার আছে”
ইশা চিল্লিয়ে বলে, “না,নেই…আপনার আমার উপর কোনো অধিকার নেই”
আরিয়ান কিছু বলে না শুধু বাঁকা হাসে।আরিয়ানের হাসি দেখে ইশার প্রচুর রাগ উঠে,ও হাত মুঠ করে রাগ সামলানোর চেষ্টা করে।
অনেক্ষণ পর,,,ইশাদের ফ্লেটের সামনে গাড়ি থামলে ইশা নেমে পড়ে।গাড়ির দরজা ঠাস করে লাগিয়ে হনহন করে চলে যায়।আরিয়ান ইশার কান্ড দেখে হেসে উঠে,মনে হচ্ছে ও ইশার কাজে মজা পেয়েছে!
পরদিন সকাল…
রাইমা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ও ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রিকশার অপেক্ষায় আছে।বার বার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।ক্লাস 9 টায়,,এখন সময় 8টা বেজে 25 মিনিট।ভার্সিটিতে যেতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগবে।আর রাইমা রিকশা পাচ্ছে না।আজকে সিউর লেইট হবে।
হঠাৎ ওর সামনে একটা বাইক থামে।একদম ওর সাথে লেগে যাবে এমন অবস্থা। রাইমার রাগ উঠে যায়।ও কে কি ছেলেটা দেখতে পায় নি?আর একটু হলেই তো একটা এক্সিডেন্ট হতে পারতো!
রাইমা রেগে বলে,
“এই যে,আপনি কি চোখে দেখতে পান না?এখানে একটা জলজ্যান্ত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটা দেখেন না?এভাবে বাইক থামানোর মানে কি?আশ্চর্য..! ”
ছেলেটা মাথা থেকে হেলমেট খুলে।রাইমা হা করে রিহানকে দেখছে।রিহান হেলমেট খুলে হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে রাইমার দিকে তাকিয়ে একটা ইনোসেন্ট হাসি দে।রিহানের একহাতে হেলমেট তাই আর একহাত দিয়ে কানে ধরে চোখগুলো ছোট ছোট করে বলে, ” সরি ”
এইদিকে রাইমা রিহান কে দেখে যাচ্ছে।রিহান আজকে সাদা টি শার্টের উপর কালো শার্ট পড়েছে,,শার্টের বোতামগুলো খোলা।সাথে কালো প্যান্ট।রিহানের ইনোসেন্ট মুখ করে সরি বলা দেখে রাইমার খুব হাসি পায় তবুও হাসি চেপে রেখে গম্ভীর গলায় বলে,
“সরি বললেই সব শেষ?আমি যে আর একটু হলেই বাইকের সাথে লেগে যেতাম সে খেয়াল আছে আপনার?”
“আমি এতোটা বোকা না,আমি ঠিক তোমার সামনে বাইক থামিয়েছি ইচ্ছে করে।কিন্তু আমি এতো খারাপ বাইক চালাই না যে কাউকে লাগিয়ে দিবো হুহ” বলেই রিহান কলারে ঠিক করে একটা ভাব নে।
রাইমা রিহানকে বলে, “তো,এখানে বাইক থামানোর কারণটা কি জানতে পারি?”
“বাইকে উঠো”
রাইমা চোখ বড় বড় করে রিহানের দিকে তাকায়।রিহান রাইমার এই ফেইস দেখে মজা পাচ্ছে।রাইমা বলে,
“কেনো?আমি কেনো আপনার বাইকে উঠবো?”
“তুমি তো ভার্সিটি যাচ্ছো আর আমিও ভার্সিটিতেই যাচ্ছি তাই ভাবলাম এক সাথে যাই”
“বলার জন্য ধন্যবাদ কিন্তু আমি আপনার সাথে যেতে পারবো না,সরি”
বলেই রাইমা একটু দূরে গিয়ে দাড়ায়। রিহান মাথা চুলকে একটু ঠোঁট কামড়ে আবার বাইক নিয়ে রাইমার সামনে যায়।রাইমা রিহানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।রিহান হাতের ঘড়ি দেখে বলে,
“তোমার তো আজকে এমনিতে লেইট হয়েছে এখন রিকশার জন্য অপেক্ষা করলে আরো লেইট হবে।বাইকে তাড়াতাড়ি যেতে পারবে,,,,ভেবে দেখো”
রাইমা চিন্তিত মুখ নিয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়।রিহান ঠিকই বলেছে,আজকে অনেক লেইট হয়ে গিয়েছে কিন্তু তাই বলে ও রিহানের সাথে বাইকে যাবে!
রাইমার ভাবনার মাঝে রিহান বলে,
“ওই হেলো মিস,,এতো কি ভাবছেন?”
রাইমা একবার রিহানের দিকে তাকিয়ে,একপা দুপা করে এগিয়ে বাইকে উঠে।এছাড়া আর কোনো উপায় নেই আর রাইমা ক্লাস মিস করতে চায় না।
রাইমা বাইকে উঠে খুব অস্বস্তি নিয়ে রিহানের কাঁধে হাত রাখে,,রিহান মুচকি হাসে।
বাইক চলছে,রিহান বাইকের আয়নায় রাইমাকে দেখছে।বাতাসের কারণে রাইমার সামনের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আর রাইমা বার বার ঠিক করছে।
রাইমা খেয়াল করেছে যে রিহান ওর দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু ও বুঝেও না বুঝার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।রিহান রাইমার কান্ড দেখে হেসে ফেলে।রাইমা বলে,
“হাসছেন কেনো?”
রিহান হাসি থামিয়ে বলে, “নাহ,কিছু না”
ভার্সিটিতে আসার পর,রাইমা বাইক থেকে নেমে পড়ে তারপর কিছু না বলে দৌড়ে চলে যায়।রিহান অবাক হয়ে নিজে নিজে বলে,
“যাহ বাবা,,,ক্লাসে লেইট হচ্ছে বুঝলাম তাই বলে একটা ধন্যবাদও দিবে না?”
রিহান নিজে নিজে বক বক করতে করতে বাইক পার্ক করে নিজের ক্লাসে যায়।ক্লাস বললে ভুল হবে,ও ফ্রেন্ডদের কাছে যায়,,আড্ডা দিতে।ক্লাস ঠিক মতো করে না ঠিকই কিন্তু পড়াশুনা নিয়ে ও যে খুব সিরিয়াস এটা বুঝা যায় পরীক্ষা আসলে।তাই তো রেজাল্ট ভালো হয়।
সারা বছর পড়াশুনা করে না আবার পরীক্ষা আসলে ওকে আর ফ্রেন্ডদের মধ্যে পাওয়া যায় না,পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত!
ইশা ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকতে যাবে তখন ওর হাতে টান পড়ে।ইশা একটু কেঁপে উঠে। পেছনে ফিরে দেখে আরিয়ান ওর হাত ধরেছে।ইশার রাগ উঠে যায়,,ও হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে আর বলে,
“কি হলো,হাত ধরেছেন কেনো?লিভ মি”
আরিয়ান এমন ভাব করে মনে হয় যেনো কিছুই হয়নি।আরিয়ান ইশাকে বলে, “চলো”
“কোথায় যাবো?ছাড়ুন আমাকে।আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না”
ইশা কথা বলে যাচ্ছে আর আরিয়ান ওর হাত টেনে গাড়িতে নিয়ে বসায়।ইশা গাড়ির দরজা খুলে বের হওয়ার জন্য,আরিয়ান ঠাস করে দরজা লাগিয়ে ইশার দিকে একটা রাগি লুক দে। তারপর গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে।
ইশা বলে, “আমার ক্লাস আছে তো,,কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
আরিয়ান কিছু বলে না,ড্রাইভ করতে থাকে।অনেক্ষণ পর ইশা আবার বলে,
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“গেলেই দেখতে পাবে”
ইশা আর কিছু বলে না,চুপচাপ বাহিরে তাকিয়ে থাকে।ইশা এতো সহজ সরল মেয়ে না।ইশা ইশার মায়ের মতো অনেক স্ট্রং,প্রতিবাদী একটা মেয়ে।কিন্তু আরিয়ান যে ওর সাথে জোড় করে, কেনো যানি ও প্রতিবাদ করতে পারে না।ইশা নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে,, “কেনো…!
চলবে….