মনের কিনারে তুই পর্ব : ১৩

0
3123

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :১৩

আরিয়ান একটা নদীর পাড়ে গাড়ি থামায়।তারপর ইশার দিকে তাকায়।ইশার এতোক্ষণ বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল, এখন আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

“আমরা কোথায় এসেছি?”

আরিয়ান বলে, “চলো,,তাহলে দেখতে পাবে”

তারপর আরিয়ান নেমে এগিয়ে এসে পাশের দরজা খুলে দেয়।ইশা নেমে পড়ে।আরিয়ান ইশার হাত ধরে সামনের দিকে যায়। ইশা চারদিক দেখতে থাকে।

অনেক বড় একটা নদীর আশেপাশে অনেক কাশফুল। কাশবন দেখেই ইশার মুখে হাসি ফুটে উঠে।ও দৌড়ে সেখানে যায়,,গিয়ে হাত দিয়ে কাশফুলগুলো ছুঁয়ে দে। আরিয়ান ইশার কাছে গিয়ে বলে,

“কাশফুল পছন্দ?”

“হুম অনেককক… আমি কয়েকটা ফুল নেব”

আরিয়ান হেসে বললে,
“তো নাও,,বারণ করছে কে”

ইশা নরম তুলার মত ফুলগুলোকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে ওর মুখে হাসি লেগেই আছে। ইশা আরিয়ানকে বলে,
“এখানে কেন এনেছেন?”

“ঘুরতে,,, তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে”

কাশফুল দেখে ইশার মন অনেক ভালো তাই এখন আর রাগ দেখায় না।তবু ইশা একটু তেজি কন্ঠে বলে,

” আমার ক্লাস বাদ দিয়ে আপনি আমাকে ঘুরার জন্য নিয়ে এসেছেন?”

আরিয়ান ভাবলেশহীন ভাবে বলে, “হ্যাঁ,,তো?”

ইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা রাগি লুক দে।আর কিছু বলে না।
কিছুক্ষণ পরে আরিয়ান ইশার হাত ধরে বলে,

“চলো নদীর পাড়ে যাই”

ইশা অনেকগুলো কাশফুল হাতে নে। তারপর আরিয়ান এর সাথে যায়।
চারদিকে অনেক বাতাস, ইশা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে নদীর পানি দেখতে থাকে।আরিয়ান এসে ইশার চুলের বেন্ড খুলে দে।ইশার চুলগুলো পিঠ ছাড়িয়ে কোমরে গিয়ে পড়ে। বাতাসের কারণে চুল গুলো উড়ছে।ইশা রেগে আরিয়ানকে বলে,

“আরে চুল খুললেন কেন?”

আরিয়ান বলে, “এভাবে তোমাকে ভালো লাগছে তাই”

ইশা একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে তারপর নদীর দেখায় মনোযোগ দে।নদীর পানি অনেক পরিষ্কার। ঢেউ এর তালে তালে পানি বয়ে যাচ্ছে। ইশার ইচ্ছে করছে নদীতে একটা লাফ দিতে।কিন্তু সেটা পারবে না,একে তো ও সাঁতার জানে না আবার ওর কাছে এক্সট্রা কাপড় নেই।

আরিয়ান আর ইশা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে জায়গাটা নির্জন,,লোকজন নেই বললেই চলে। ইশা হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে নদী দেখছে, ওর মুখে এক চিলতে হাসি।বাতাসে কারণেও চুল আর ওড়না উড়ছে।

কিছুক্ষণ পরে আরিয়ান ইশার ভাঁজ করে রাখা হাতের উপর হাত রেখে ইশা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ইশা একটু কেঁপে ওঠে। পুরো শরীরের আলাদা শিহরণ বয়ে যায়। একদম বরফ এর মত শক্ত হয়ে যায়। আরিয়ান ইশাকে আরেকটু শক্ত করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ইশা কিছু বলতে পারছে না চুপ করে আছে।ওর কথা বলার শক্তি নাই।
আরিয়ান ইশার ঘাড় থেকে ওর চুলগুলো সরায়,,এবার ইশা অনেক কেঁপে ওঠে। আরিয়ান ইশার ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে ওর গায়ের গন্ধ নে। ইশা একদম বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
আরিয়ান আস্তে আস্তে ইশার ঘাড়ের কাছে মুখ এগিয়ে এনে। আরিয়ান হয়তো ইশাকে ঘাড়ে চুমু দিতো কিন্তু ইশা বাধা দেয়।আরিয়ান একটা নেশার ঘোরে ছিল তাই ইশাকে ভালো করে ধরেনি।ইশা সেই সুযোগে নিজেকে আরিয়ান থেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।

হঠাৎ ইশা চলে যাওয়াতে আরিয়ানের হুঁশ আসে। ইশাকে এত কাছে পেয়েও সব ভুলে গিয়েছিল।আরিয়ান একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে ইশার দিকে তাকায়।ইশা একটু দূরে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান ইশার কাছে গিয়ে অপরাধী কন্ঠে বলে, “সরি”

এতে ইশার কোনো পরিবর্তন হয়না ও যেভাবে দাঁড়িয়েছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।আরিয়ান ইশার কাঁধে হাত রাখে ইশা আবার কেঁপে ওঠে।আরিয়ান হাত সরিয়ে ইশাকে ওর দিকে ফিরিয়ে বলে,

“ইশা সরি,, প্লিজ আমি বুঝতে পারিনি”

ইশা শান্ত কন্ঠে বলে,
“ইটস ওকে,, চলুন আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না”

আরিয়ান বলে, “তুমি যদি এখন চলে যাও আমি ভাববো তুমি আমার ব্যাবহারে কষ্ট পেয়েছো”

“তো এখন কি করবো?”

আরিয়ান এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলে,
“চলো,,ঝাল মুড়ি খাবা?”

ইশা কাঁধের ব্যাগটা একটু ঠিক করে বলে, “চলেন”

আরিয়ানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। তারপর দুইজন গিয়ে ঝাল মুড়ি কিনে। ঝাল মুড়ি ইশার অনেক প্রিয় কিন্তু এখন কেন জানি খেতে ভালো লাগছেনা।
ইশা এখনও সেই ঘটনাটা ভুলতে পারিনি,, ওর কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। আরিয়ান ইশার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে একটু হালকা হওয়ার জন্য বলে,

“আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে?”

ইশা একটু হেসে বলে, “হুম ভালো”

“আচ্ছা ইশা,তোমার প্রিয় ফুল কী?”

“বেলি ”

“কেনো বেলি এতো প্রিয়? কোনো বিশেষ কারণে নাকি এমনি?”

“আমার বেলি ফুলের গন্ধ অনেক ভালো লাগে তাই,,আপনার প্রিয় ফুল কী?”

“কালো গোলাপ”

ইশা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায় তারপর বলে, “লাল গোলাপ প্রিয় ফুল হয় শুনেছি কিন্তু কালো গোলাপ ও কি কারো প্রিয় হয়?”

“হুম আমার হয়”

ইশা একটু জোরে হেসে তারপর বলে,
“আপনি একটু অন্যরকম”

আরিয়ান হাঁটতে হাঁটতে বলে, “মে বি!”

তারপর ওরা আরো অনেকক্ষণ কথা বলে। কিছু সময়ের জন্য ইশার মন থেকে সেই সময়ের কথা মুছে যায়।ঝাল মুড়ি খেতে খেতেই আবার কাশফুলের কাছে আসে। ইশার আম্মুর কাশফুল অনেক পছন্দ।ইশা ওর মায়ের জন্য অনেকগুলো ফুল নে।
তারপর আরিয়ানকে বলে,

“জানেন আমার আব্বু, আমার আম্মু কে প্রথম কাশফুল দিয়ে প্রপোজ করেছিল!”

আরিয়ান অবাক হয়ে বলে, “Really?”

ইশা হেসে বলে, “হ্যাঁ আব্বু আম্মুকে খুব ভালোবাসে তাইতো আম্মুর প্রিয় ফুল কাশফুল দিয়েই প্রপোজ করেছে”

“তাই নাকি?… তারপর”

“তারপর আর কি! আম্মু নাকি প্রথম প্রথম রাজি হতে চায়নি তারপর আব্বু অনেক কষ্ট আম্মুকে রাজি করিয়েছে।তারপর প্রেম আর তারপর বিয়ে”

“ওদের লাভ স্টোরি টা তো অনেক ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। তোমাকে এসব কে বললো?”

” আব্বু” বলেই ইশা জোরে হাসে আরিয়ানও ইশার সাথে হাসে।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা আরো অনেকক্ষণ গল্প করে। ইশার কেন জানি এখন ভালই লাগছে কোন অস্বস্তি লাগছে না।নদীর পাড়,,,তাই চারদিকে হালকা বাতাস, হাতে ঝাল মুড়ি,আর সাথে আরিয়ান। ইশার কেমন ফিল হচ্ছে ও নিজেও বুঝতে পারছে না!

.
রাইমা ক্লাসে বসে আছে।আর রাগে ফুঁসছে। ইশা আজকে সকালে ফোন দিয়ে বলে ছিলো ইম্পরট্যান্ট কাল ক্লাস আছে তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে আসতে আর এখন ইশা উধাও! রাইমার ইচ্ছে করছে নিজের মাথার চুল ছিড়তে। ক্লাস শেষে সবাই চলে গেছে কিন্তু ও এখনো বসে আছে। আজকে ইশার কথায় তাড়াতাড়ি আসার জন্য রিহানের বাইকে করে এসেছে। আর এদিকে ইশাই নেই। ও নিজে নিজে বলে,

“ঐ পেত্নী,শাকচুন্নী,,আজকে আসলো না কেন?”
রাইমা ইশাকে ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন অফ। তাই ওর আরো রাগ উঠে।ও নিজে নিজে বলে,
“রাইমা আর বসে থেকে কি করবি,ক্লাস শেষে চল যাই” বলেই বেড়িয়ে পরে।

“মেয়েরা এতো কিপ্টে হয় কেনো?একটা ধন্যবাদ দিতে ওদের কিপ্টেমি!”

কারোর কণ্ঠস্বরে শুনে রাইমা পিছনে তাকায়।তাকিয়ে দেখে রিহান দাঁড়িয়ে আছে রাইমা রিহানের কাছে যায়। তারপর বলে,

“আপনি কি এটা আমাকে বললেন?”

রিহান বলে, “না,, বাতাস কে বলেছি”

রাইমা বুঝতে পারে যে রিহান রাইমাকে বলেছে। রাইমার সকালের কথা মনে হয়ে যায় আর ও অস্বস্তি ফিল করে,,সকাল এইভাবে কিছু না বলে দৌড় দেওয়ার জন্য।
তারপর রিহানকে বলে,

“সরি আসলে সকালে ক্লাসে লেট হয়ে যাচ্ছিল তাই…”

রিহান রাইমা কে থামিয়ে দিয়ে বল, “সরি নট এক্সপ্টেড”

রাইমা একটু রেগে বলে,
“আমি সরি বলছি আপনি একসেপ্ট করলে করেন, না করলে নাই,,আমি যাই”

বলে চলে যেতে নে রিহান তাড়াতাড়ি রাইমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

“আরে আরে যাচ্ছো কোথায়? তোমাকে আমি আজকে হেল্প করলাম আর তুমি এভাবে কথা বলছ?”

“তা কি করলে আপনি সরি একসেপ্ট করবেন?”

“আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে”

“আপনি কি ফুচকা খান নাকি? ”

“কেন খেতে পারিনা?”

“নাহ.. ছেলেরা তো ফুচকা খায় না তাই বলেছি আর কি। আমি শুনেছি মেয়েরা ফুচকা পাগলী হয়”

রিহান মন খারাপ করে বলে, “আমারও ফুচকা পছন্দ,,তো কি করবো?”

রাইমা একটু ভেবে বলে, “ওকে চলুন”

তারপর দুজন ফুচকাওয়ালার কাছে যায়।রিহান বলে,
“মামা একটু বেশি করে ঝাল দেবেন”

ফুচকা বানিয়ে ফুচকাওয়ালা ওদের দুজনের হাতে দুই প্লেট ফুচকা দেয়। ফুচকা বানানোর সময় রাইমা দেখেছে,অনেক ঝাল দিয়েছে কিন্তু তবুও রিহান ফুচকাওয়ালা থেকে নিয়ে অনেকগুলো মরিচ নিয়ে ওর প্লেটে ছিটিয়ে দে।
রাইমা চোখ বড় বড় করে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর বলে,

“আপনি এত ঝাল খান?”

রিহান হেসে বলে, “হুম হুম..”

রাইমা নিজে কি খাবে!ও তো রিহানে খাওয়ায় দেখছে। রিহানের চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে, তবুও খাবার থামার নাম নেই।
রাইমা ওর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে রিহানের দিকে এগিয়ে দে তারপর বলে,

“নিন, একটু পানি খান।চোখ মুখের অবস্থা তো খারাপ করে ফেলেছেন।একদম লাল হয়ে গিয়েছে”

রিহান একটু হাসি দিয়ে পানির বোতল টা হাত নিয়ে বলে, “থ্যাংকস ”

রাইমা প্রথম কোন ছেলেকে দেখলো যে ফুচকা খেতে এতো পছন্দ করে আর এতো ঝাল খায়!রাইমা ঝাল একটুও সহ্য করতে পারে না।
ফুচকা খাওয়াই শেষে রাইমা টাকা দিতে গেলে রিহান বলে,

“আমি টাকা দিচ্ছি,,তখন তো মজা করে বলেছি যে আমাকে খাওয়াতে হবে”

“না না আপনি আজকে আমাকে হেল্প করেছেন,আমিই টাকা দিচ্ছি ”

তারপর রাইমা টাকা দে।রিহান বলে,
“চল তোমাকে ড্রপ করে দিই”

“না না আমি যেতে পারবো ”

“আরে চলো তো”
বলেই রিহান রাইমার হাত ধরে ওকে বাইকে বসায়।রাইমা আর কিছু বলে না!

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব:১৩ (দ্বিতীয় অংশ)

ফজরের আজানের আওয়াজে ইশার মায়ের ঘুম ভাঙ্গে।ওনি ইশার রুমে এসে ইশাকে ডেকে তোলে। ইশা উঠে ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজ পড়ে।
তারপর রান্নাঘরে গিয়ে দেখি ওর মা নাস্তা বানাচ্ছে।ইশা ওর মাকে বলে,

“আম্মু হেল্প করতে হবে?”

“না তোকে কিছু করতে হবে না,,আমার প্রায় শেষ”

তারপর ইশা নিজের জন্য কফি বানিয়ে ছাদে চলে যায়। ইশা প্রায়ই সকালে কফি খেতে খেতে সূর্যোদয় দেখা।ইশা একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ ওর অনেক পছন্দ। ইশা মাঝে মাঝে ভাবে আমি যদি পাখি হতাম ওই আকাশে যেতে পারতাম,তারপর ও নিজেই হেসে দেখে নিজের ভাবনায়।
ইশার হঠাৎ আরিয়ানের কথা মনে পড়ে আর ঐদিন নদীর পাড়ের কথা মনে পড়ে।ঐদিন ওরা কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাসায় চলে আসে। বাসায় এসেও ইশা আরিয়ানের ছোঁয়া ভুলতে পারিনি ওর বারবার ওই দিন আরিয়ানের জড়িয়ে ধরার কথা মনে পড়ে।

এত দিন কেটে গেছে তবুও ইশা ভুলতে পারে না। তারপর রাইমার কথা ভেবে হেসে দে। ঐদিন ঘুরতে যাওয়ার পরও বাসায় চলে আসে পরদিন যখন ভার্সিটিতে যায় রাইমা ওকে ধরে।রাইমা তো রেগে বোম,,রাইমা বলে,

“শাকচুন্নি, পেত্নী, ডাইনি,,,, তুই কালকে আসলি না কেন? তোর ফোন অফ কেন?

ইশা হেসে বলে, “আরে স্টপ স্টপ।বলছি বলছি এত রাগোস কেনো?

“রাগবো না? তুই আমাকে আসতে বলে তুই নিজেই আসলি না! আবার ফোনটা অফ করে রাখলি”

“আসলে আমি আসছিলাম ভার্সিটির গেটে ঢুকতে যাবো তখন আরিয়ান ভাইয়া আমাকে নদীর পাড়ে নিয়ে গেছে আর মোবাইলে চার্জ ছিলো না তাই অফ হয়ে গেছে”

“কিহ..! তোরা ঘুরতে গেলি আর আমাকে বললি না?”

“আরে ধুর আমি যে ঘুরতে যাবো,আমি কী জানি নাকি! ওনি তো জোর করে আমাকে নিয়ে গেল। পরে তো দেখলাম অনেক সুন্দর জায়গাটা কাশবন নদীর পারে…”

ইশার কথার মাঝে রাইমা বলে,
“আর কি কি করলি?”

ইশা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“আর কি কি করলাম মানে?”

রাইমা হেসে বলে, “না মানে,আরিয়ান ভাইয়া কি কি বলল?”

ইশা বলে, “কিছু না”

“কিছুই বলে নাই?”

ইশা চোখমুখ শক্ত করে বলে, “না”

কিছুক্ষণ পর ইশা রাইমাকে বলে,
“রাইমা তোকে একটা কথা বলার ছিল”

“তো বল”

ইশার অনেক রাইমাকে নদীর পাড়ের আরিয়ান ওর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরা কিস করতে যাওয়ার কথাটা বলে। রাইমা শুনে লাফিয়ে বলে,

” কি..!!!!সত্যি????”

ক্লাসের সবাই ওদের দিকে তাকায় ইশা রাইমাকে টেনে বসে বসিয়ে দে।রাইমা বলে,

“ও মাই আল্লাহ!আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না তুই কি বলছিস এসব? তোদের রিলেশনে তো দূর চলে গেছে আর আমাকে কিছু বলিস নি তোরা? ”

“আমাদের কোনো রিলেশন নাই উনি তো হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরল!তোকে বলাই ভুল হয়েছে এখন তুই সারাদিনে এটা নিয়ে আমাকে কথা শোনাবি”

“আচ্ছা ঠিক আছে কিছু বলবো না,,তোরা রোমান্স কর”

ইশার রাগি চোখে রাইমার দিকে তাকায়।কিছুক্ষণ পর রাইমা বলে,
“আমারও তোকে কিছু বলার আছে”

ইশা রাইমার দিকে তাকায়,তারপর রাইমা রিহানের সাথে বাইকে আসার কথা ফুচকা খাওয়ার কথা সব বলে।

ইশা বলে, “ওহহো… তাহলে তলে তলে এতদুর!”

“আরে ইশা এমন কিছুই না তুই ভুল বুঝছিস”

“বুঝছি বুঝছি..”

ইশা ঐ দিনের কথা ভেবে হেসে দে।তারপর কিছুক্ষণ ছাদে থেকে নিচে নেমে আসে।দেখে ওর বাবা টেবিলে বসে আছে।খবরের কাগজ পরছে। ইশা কে ওর বাবা বলে, “আয় বস”
ইশা ওর বাবাকে বলে,

” আমি একটু রান্নাঘর থেকে আসছি”

তারপর রান্নাঘরে গেলে ইশার মা বলে, ” ইশা রুটিগুলো নিয়ে টেবিলে রাখ”

ইশার রুটি টেবিলে নিয়ে রাখে।ইশার মা আর সবকিছু নিয়ে যায়।তারপর তিনজন একসাথে নাস্তা করে।

.
ইশা ভার্সিটিতে এসে সোজা ক্লাসে চলে যায়। আজকে রাইমা আসবে না।ও ওর নানুর বাসায় গিয়েছে। ইশার কেন জানি একা একা ভাল লাগছে।দুটো ক্লাস করে ও বেরিয়ে আসে।
কিছুক্ষণ ভার্সিটির মাঠে ঘাসের উপর বসে থাকে,ফোন টিপে তারপর উঠে কেন্টিনের দিকে যায়।ইশা করিডোর দিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ ওর হাতে টান পড়ে।তাকিয়ে দেখে আরিয়ান ওর হাত ধরে আছে।আরিয়ান ইশাকে একটা ফাঁকা ক্লাস নিয়ে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে বলে,

“আজকে কখন এসেছো ভার্সিটিতে?আমিতো তোমাকে সকালে দেখলাম না!”

“আমি তো আগের টাইমে এসেছি,, আপনি কি আমাকে দেখার জন্য প্রতিদিন বসে থাকেন নাকি!”

“হুমম থাকি তো.. কিন্তু আজকে দেখলাম না। তুমি আমার সাথে দেখা না করে ক্লাসে গেলে কেনো?”

“কি আজব! আমি কেন আপনার সাথে দেখা করতে যাবো?”

আরিয়ান ইশাকে আরো দেয়ালের সাথে লাগিয়ে বলে,
“হ্যাঁ তুমি আমার সাথে দেখা করবে কারণ তোমাকে আমার একদিন না দেখে থাকলে ভালো লাগেনা”

“কি সব বলছেন ছাড়ুন তো,, আমি ক্লাসে যাব”

“না কোথাও যাওয়া চলবে না,,এখন তুমি আমার সাথে থাকবে”

“না আমি আপনার সাথে থাকবো না,,বললেই হলো নাকি আপনি আমার সাথে এভাবে জোর করতে পারেন না”

আরিয়ান রেগে বলে,
“হে আমি সব পারি এখন তোমার আমার সাথে থাকতে হবে।আমি যা বলব তাই করতে হবে। তোমার শাস্তি তুমি আজকে আমার সাথে দেখা না করে ক্লাসে কেনো গেলে?”

ইশার এবার প্রচুর রেগে যায়,,মানে কি!ওকে আরিয়ানের কথা শুনে চলতে হবে? নিজের ইচ্ছামত চলতে পারবে না! এটা কি মগের মুল্লুক নাকি?
ইশা আরিয়ানকে বলে,

“না,,,আমি আপনার সাথে থাকবো না,আপনার কোন কথা শুনবো না,আপনার সাথে দেখাও করবো না, কি করবেন আপনি??”

আরিয়ানের এবার অনেক রাগ উঠে।মুখের উপর কথা বলা ওর পছন্দ না।আরিয়ান বলে,

” ইশা আমাকে রাগিয়ে দিওনা,, আমি কিন্তু রেগে গেলে খুব খারাপ হবে”

ইশা আরিয়ান এর থেকেও বেশি জোরে চিল্লিয়ে বলে,
“কি হবে? আপনি সবসময় আমার সাথে জোর করেন,,আমি আর চুপ থাকবো না”

আরিয়ান ইশার কাঁধ ছেড়ে মাথার পেছনে হাত দিয়ে একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। তারপর আচমকা দুই হাত দিয়ে ইশাকে দেয়ালের সাথে জোড়ে লাগিয়ে বলে,

“বুঝস না?আমি তোকে ভালোবাসি।তোকে না দেখলে আমার ভালো লাগে না।আমার কথা শুনিস না কেনো?”

আরিয়ানের হঠাৎ আক্রমণে ইশা একটু ভয় পেয়ে যায় কিন্তু তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখে। ভয় পেলে চলবে না,,প্রতিদিন আরিয়ানের এসব জোর খাটানো ইশার ভালো লাগেনা।
ইশা আরিয়ানের হাত ঝারা দিয়ে বলে,

“না আমি বুঝিনা আর আমি আপনি আমাকে ভালোবাসেন,কি বাসেন না সেটা জানিনা।কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না।আপনি কেন আমার সাথে সব সময় এরকম করেন?”

আরিয়ান ইশার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্তকণ্ঠে বলে,
“আমাকে ভালোবাসো না?”

ইশার আরিয়ানের চোখের দিকে তাকানোর সাহস নেই।ও নিচের দিকে তাকিয়ে বলে, “না”

আরিয়ান ইশার দু গালে হাত রেখে ওর চোখে চোখ রেখে তারপর বলে,
“আমার চোখে চোখ রেখে বলো,তুমি আমাকে ভালোবাসো না?”

ইশা নিজের গাল থেকে আরিয়ানের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
“বললাম তো ভালোবাসি না,বারবার কেন বেহায়ার মতো আমার কাছে আসেন?”

বেহায়া কথাটা শুনে আরিয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,

“হ্যাঁ আমিতো বেহায়া,,খুব বেহাইয়া।তাইতো বারবার তোমাকে ডিস্টার্ব করি, তবে চিন্তা করো না আর তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না, তুমি তোমার মত থাকবে আর আরিয়ান নামে কেউ তোমাকে জ্বালাবে না”

বলেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়।ইশা এখনো দেয়ালের সাথে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অজান্তেই ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ইশা গালে হাত দিয়ে চোখের পানি দেখে নিজেই অবাক হয় ও কেন কাঁদছে?ইশা বুঝতে পারছে না। তারপর চোখের পানি মুছে ক্লাস থেকে বেরিয়ে ভার্সিটির গেইটের কাছে চলে আসে।আরিয়ানের গাড়িটা যেখানে থাকতো এখন সেখানে নেই।
ইশার আজকের ক্লাস করায় মন নেই তাই ইশা এখন বাসায় চলে যাবে। ইশা রিক্সায় উঠে অজান্তে আবার কেঁদে দে!

বাসায় এসে সোজা ওর রুমে গিয়ে ব্যাগটা খাটের এক কোণায় ছুড়ে মারে তারপর বালিশে উপর হয়ে শুয়ে কান্না করতে থাকে। ইশা জানেনা ও কেন কাঁদছে কিন্তু ওর খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে!বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেই যাচ্ছে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here