মনের মানুষ❤️পর্ব-১৬

0
613

#মনের_মানুষ❤️
#ষষ্ঠদশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸

মুখোমুখি বসে আছে ঋষভ আর শ্রেয়া…..শ্রেয়া নিজের ভ্রূযুগল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ঋষভ এরদিকে আর ঋষভ হাতে নিজের সবচেয়ে প্রিয় কলম নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।ঋষভ এর অফিস রুমেই বসে আছে শ্রেয়া…..পরনে হালকা পাতলা একটা শাড়ি,মুখে মেকআপ।ঋষভ কলমটা বুক পকেটে রেখে বললো,,,

“এই সময় ডাকার জন্য খুব অসুবিধা হলো তাই না?এমন কাজের সময় বিরক্ত করলে কার বা ভালো লাগবে?”

“সত্যিই আমি বিরক্ত হয়েছি….রাত আটটার সময় তুমি আমায় তোমার পার্টি অফিসে কেনো ডাকলে?”

“দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই না?ক্লায়েন্টরা অপেক্ষা করছে বুঝি তোমার জন্য?”

“শাট আপ ঋষি….কিসব বলছো?ক্লায়েন্ট মানেটা কি?”

“তুমি কি কথাটা একদম পাতি বাংলায় শুনতে চাও?তাহলে সেটাকে খদ্দের বলা হবে…”

“ঋষি…..এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো তুমি।আমায় এভাবে ডেকে অপমান করার মানেটা কি?আমি কিন্তু তোমার নামে কমপ্লেন করবো…!”

“তাই নাকি?খুব ভয় পেয়ে গেছি গো….এবার কি হবে?কিন্তু তোমার কি মনেহয় শ্রেয়া তোমার মত একজন প্রস্টিটিউটের কথায় পুলিশ আমার মতো একজনকে এরেস্ট করবে?”

“ঋষভ….!!!!”

“আরে আস্তে আস্তে…..এতো জোরে চেঁচালে হয়?এখনো অনেকবার অবাক হতে হবে তোমায়।তুমি কি ভেবেছিলে?,আমি জানবো না তোমার পরিচয়….রাজনীতিটা আমি আজ থেকে করছি না শ্রেয়া।সেই কলেজ লাইফ থেকে করে আসছি…আমাকে মানুষ চিনতে শিখিও না।”

“তুমি কিন্তু উল্টোপাল্টা বলছো আমায়…প্রস্টিটিউট মানে কি?ব-বলতে কি চাইছো তুমি?”

“যেটা তুমি বুঝেছো….যদিও তাদের সাথে তোমায় তুলনা করা বৃথা।তারা অভাব কিংবা বাধ্য হয়ে এই কাজে নামে আর তুমি করেছো নিজের ইচ্ছা মেটাতে….তুমি কি ভাবলে?আমি কিছুই জানবো না?ইন্দ্রের সাথে তোমার সম্পর্ক ভেঙে গেছে কারণ ও তোমার উচ্চাকাঙ্খাগুলো মেটাতে পারেনি।কলেজ লাইফে যখন আমাদের রিলেশন ছিলো তখন আমিও তোমার দাবি পূরন করতে পারতাম না….আমার মতো একজন বেকারের পক্ষে সেটা করা পসিবল অব্দি ছিলো না।তাই তুমি ইন্দ্রের কাছে গেছিলে….ওর দেওয়া দামি গিফটের লোভে।তবে সময় যত এগিয়েছে তোমার লোভ তত বেড়েছে।একটা সময় ইন্দ্র অব্দি ব্যর্থ হয়…..তোমার দামি কসমেটিকস,জামা-কাপড় শপিং এসবের জন্য টাকা দিতে পারতো না।আর তুমি এসবের জন্য কি পথ বাছলে?কল গার্ল?…..নিজের ইচ্ছাপূরণ করতে কলগার্লের কাজ করতে আর একদিন যখন ইন্দ্র সবটা জানলো তখন ও নিজেই তোমাদের সম্পর্ক ভেঙে দিলো।এরপরেও তুমি ভালো ছিলে…..নিজের মতো নিজের জীবন কাটাতে,বাড়ি ছেড়ে নিজের জন্য ফ্ল্যাট নিলে….তাহলে হটাৎ আমার জীবনে ফিরে এলে কেনো?হটাৎ করেই ভালোবাসা উথলে উঠলো নাকি?”

“ঋষভ এসব সম্পূর্ন মিথ্যে….আমি কিন্তু”

“লেট মি ক্লিয়ার….আগে বলতে দাও আমায়।আমাদ অপজিশন পার্টি জানে এবারের ভোটে আমি জিতবোই এবং তাও প্রচুর ভোটে।ওনার রাস্তা থেকে আমায় সরাতে হলে আমার চরিত্রে কলঙ্ক লাগাতে হবে….তাই সে আমার সমন্ধে খোঁজ খবর নিলো।এবং তোমার কথা জানলো….তোমায় খুঁজে বের করে কাজ দিলো আমাকে ফাঁদে ফেলার।আর তুমিও তাই করলে….প্রথমদিন আমায় ডেকে নিজের দুঃখের কাহিনী শোনালে,আমি রাজি না হওয়ায় তুমি সেকেন্ড ট্রিক কাজে লাগালে।হটাৎ করেই রাতে আমায় ফোন করে বললে তোমার নাকি খুব বিপদ…..কাউকে না পেয়ে আমায় বাধ্য হয়ে কল করেছো।আমি গেলাম তোমার কাছে…..তুমি তখন আবেদনময়ী হয়ে আমার সামনে এলে।বললে আমায় নাকি মিস করছো…..এসবের মাঝে তোমার আসল পরিচয় জানতাম।তাই আমিও অনুমান করে ফেললাম তোমার উদ্দেশ্য….তুমি আমায় সিডিউস করার চেষ্টা করলে।আমি এমন একটা ভাব করলাম যেনো আমি আকর্ষিত হয়েছি…..ঠিক তখনই কোল্ডড্রিংক্সের গ্লাসে নেশা আর উত্তেজক কোনো ওষুধ মিশিয়ে আমায় দিলে।আমি একচুমুক নিলেও সেটা সুযোগ বুঝে এক্সচেঞ্জ করে নিই তোমার সাথে।তুমি তো নিজেও ড্রিংক করছিলে,আর বলছিলে তোমার জীবনে নাকি বিশাল দুঃখ।আমায় না পেলে মরেই যাবে…..আমিও এমন একটা ভাব করলাম যেনো আমার নেশা হয়ে গেছে।তোমায় কাছে টানতেই তুমিও বুঝলে তোমার অবস্থা ঠিক নেই….ঠিক সেইসময় আহেলির কল আসছিলো বারবার।আমি ফোন কেটে সুইচ অফ করে বললাম সময়টা আমাদের তাই এখন কেউ যেনো ডিস্টার্ব না করে….এরমাঝে আমি একপাশে ঘুমিয়ে পরার মতো করে পড়ে গেলাম।তুমিও জেগে থাকতে পারলে না…..আমি ইচ্ছা করে সারারাত ঘাপটি মেরে শুয়েছিলাম কারণ আমি জানতাম ঘরে কোথাও না কোথাও ক্যামেরা আছে।

পরেরদিন সকালে উঠে তুমি বুঝলে আদতে আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি…..তখন এমনভাবে সবটা আমার সামনে প্রেসেন্ট করলে যাতে মনেহয় আমি আর তুমি ইন্টিমেট হয়েছি।আমি তো সবই ভুলে গেছি তাই তোমার কথা মেনে নিলাম……একদম প্ল্যান মাফিক হলো সবটা।এরমাঝে আহেলি কে আনলে কেনো?বলো…..আনলে কেনো?আমি তো এরমধ্যে আহেলি কে জড়াতে চাই নি।ওতো কিছু জানতোই না যদি সেদিন তুমি হটাৎ করে এসে আমার রুমের মধ্যে আমায় কিস না করতে।সবটা আমার ভাবাই ছিলো….যাতে তুমিও ধরা পড়ো আর আমার কনক সমস্যা না হয়।কিন্তু তোমার জন্য সবটা গুলিয়ে গেলো..তুমি নিশ্চই আহেলি কে আমার রুমে আসতে দেখে নিয়েছিলে আর তাই কথা বলতে বলতে হটাৎ করেই কিস করলে।মেয়েটা আমায় ভুল বুঝলেও আমার কিচ্ছু করার ছিলো না….কারণ আমার একটা স্টেপ পুরো বিষয়টা ঘেটে দিতো।তবে আমি ভাবিনি আহেলি নিজেই নিজের এতো বড়ো ক্ষতি করে বসবে…..আসলে আমার আহেলি বড্ড ইমোশনাল।তাই আমার সাথে কাউকে সহ্য করতে পারেনি….ও কিকরে সহ্য করতো?যেখানে আমি ওকে কোনোদিন কিস করিনি সেখানে অন্য একটা মেয়ে…এরমাঝে তুমি আবার ওকে গিয়ে নানান কথা বললে।আর আমি চুপচাপ সবটা শুনলাম বাধ্য হয়ে।কেনো শ্রেয়া?তুমি আহেলি কে এসবের মধ্যে টেনে আনলে কেনো?”

“কারণ আমি চায়নি তোমার সাথে ওই আহেলির সম্পর্ক থাকুক….আমি তো একটা সময় প্রেমিকা ছিলাম তোমার তাই তোমায় সুখী দেখবো এটা সহ্য হয়নি।হাতে তো প্রমান ছিলোই সেটাই কাজে লাগলাম…..”

“আমি তোমার কি করতে পারি তার ধারণা আছে কোনো?তুমি আমায় কি বলে ভয় দেখাতে?আমর আর তোমার ইন্টিমেট ভিডিও ভাইরাল করবে তাই না?যেখানে আমি আর তুমি ইন্টিমেট হয়নি সেখানে ভিডিও হলো কিভাবে?”

“ঋষভ প্লিস…..তুমি আমায় পুলিশে দিও না।আমি তোমায় আর ব্ল্যাকমেল করবো না।আরে আমি তো কোনো পদ চাই না….ওরাই বলেছিলো যেমনটা করতে তেমনই করছিলাম।প্লিস ঋষভ….আমায় তুমি ছেড়ে দাও।”

“তাই নাকি?এতো ভয়?যখন তুমি বুঝতে পারছো যে তুমি ধরা পড়ে যাচ্ছো তখন এসব বলছো?লিসেন শ্রেয়া….তুমি এই মুহূর্তে তোমার কাছে থাকা মন্ত্রী মশাইয়ের ভিডিওটা ডিলিট করবে।”

শ্রেয়া অবাক হয়ে তাকাতে ঋষভ বললো,,,

“অবাক হয়ে লাভ নেই….তুমি যে মন্ত্রী মশাইয়ের কলগার্ল ছিলে এটা উনি নিজেই বলেছেন।আসলে বাঁচার জন্য যা করা যায় আরকি….তো ওই ভিডিও তুমি ডিলিট করবে তারপর সবটা স্বীকার করবে।আমিও এবার দেখি ওই লোকগুলো আমায় হারানোর জন্য আর কি করতে পারে।সবকটাকে যদি জেলে না ভরি তো আমার নাম ঋষভ নয়….”

শ্রেয়া চলে গেছে বেশ অনেকক্ষণ আগেই….ঋষভ নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো,,,,

“আমায় ক্ষমা করিস আহেলি….তোকে আমি সবটা জানাতে পারিনি।আমি আমার দলকে বাঁচাতে গিয়ে তোকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।কিন্তু…..কিন্তু তুইতো একেবারে নিজেকে শেষ করার মতো কাজ করে বসলি।তোর বা কি দোষ…..কাল যদি তোকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে আমার এতটা খারাপ লাগে তাহলে তোর সেদিন কি অবস্থা হয়েছিলো আমি জানি……আমি চাইলেও তোকে সবটা জানাতে পারিনি নাহলে সবটা ভেস্তে যেতো।তবে তুই আমার জন্য মরতে যাবি?এটা কেনো করেছিলিস আহেলি?তুই জানিস সেদিন আমার কতটা কষ্ট হয়েছে……হসপিটালে না থাকতে পেরে আমি কিভাবে এখানে ছিলাম তা আমিই জানি।আমার পাঠানো লোকটা সারাক্ষণ ওখানেই ছিলো…..তাইতো ব্লাড এরেঞ্জ করতে সমস্যা হয়নি।আমি কতগুলো দিন ঘুমাই তা হয়তো একমাত্র আমিই জানি।তুই আমায় খুব ঘেন্না করিস তাই না রে?তাইতো আমায় আজ সকালে এতগুলো কথা বললি…..আজ যদি আমি তোকে এসব বলতে যেতাম তাহলে হয়তো তুই অবিশ্বাস করে আরো অপমান করতিস।যে তুই আমার চোখের দিকে তাকাতে অব্দি লজ্জ্বা পেতিস আজ সেই তুই আমায় কিকরে ওভাবে অপমান করলি?আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে…..আমি আমার দলকে বাঁচাতে গিয়ে তোকে তো হারালাম সাথে আবার ঘেন্না।আমি এতকিছু কিভাবে সহ্য করবো?মনের মানুষের চোখের আমার জন্য ভালোবাসার পরিবর্তে যে ঘেন্না জমা হয়েছে তা কিভাবে মুছবো?

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here