মনের মানুষ❤️ প্রথম পর্ব❤️

0
2202

#মনের_মানুষ❤️
#প্রথম_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি🌸

সকাল নটা বাজে……রান্নাঘরে গ্যাসের সামনে দাঁড়িয়ে আহেলি!!না শুধু দাঁড়িয়ে নেই বরং ওভেনে চাপানো একটা রান্না মনোযোগ সহকারে দেখছে!!

আহেলি সাহা…..উমা দেবী এবং অমিয় বাবুর একমাত্র আদরের মেয়ে!!সবেমাত্র কলেজ শেষ করে আহেলি সরকারি চাকরির জন্য পড়ছে…..বরাবর পড়াশোনায় ভালো আহেলি তবে মেয়েটা একেবারে চঞ্চল!সর্বদা মাথায় দুস্টু বুদ্ধি ঘোরাফেরা করছে!!

উমা দেবী আহেলির পেছনেই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে…..মেয়েকে রান্নাঘরে খুব একটা আসতে দেন না তিনি!!তবে আজকের দিনটায় তার কোনো বারন শোনে না আহেলি……সক্কাল বেলায় অমিয় বাবু বাজার থেকে সবচেয়ে ভালো গলদা চিংড়ি এনেছেন আহেলির নির্দেশে!!সেটাই এখন রান্না করছে আহেলি….তার প্রিয় এক মানুষের জন্য!

ওভেনের নব ঘুরিয়ে আহেলি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,,,
উফফ!হলো…….কেমন খেতে হবে বলো তো মা?!

সে আমি কেমন করে জানবো?!যার জন্য বানালি তাকেই জিজ্ঞেস করে নিস!!

কড়াই থেকে চিংড়ির মালাইকারি একটা টিফিন বক্সে যত্ন সহকারে ভরছিলো আহেলি…..মায়ের কথায় হাতের কাজ থামিয়ে বললো,,,

এটা তুমি কি বললে মা?!রান্নার প্রশংসা করবেন তিনি?!সেতো হাত চেটেপুটে খেয়ে গম্ভীর গলায় বলবে,,,

কি দরকার ছিলো এসবের?!মা তো এতকিছু করেছে….আবার তুই?!পড়াশোনা নেই নাকি?!বেরসিক লোক একটা!!

আহেলির কথায় উমা দেবী হাসলেন!!মেয়ের একগালে হাত রেখে বললেন,,,

তা ওই বেরসিক লোকের জন্য সক্কালবেলা উঠে রান্না করতে চলে এলি?!

আর কিই বা করবো?!তিনি তো আবার বেলা দশটা বাজতেই দেশোদ্ধার করতে বেরোবেন কি না!!দেখি আবার সময় মতো তার বাড়ি পৌঁছাতে পারি কি না!!

আচ্ছা হয়েছে!!এভাবে তার জন্য বলতে হবে?!কদিন পর তো ওই ছেলেটার সাথেই তোকে সংসার করতে হবে নাকি?!তখন?!

উমা দেবীর কথায় একটু হতাশ সুরে আহেলি বললো,,,

সেটাই তো মা!!কি আর করার আছে…..এখন আমি যাই তৈরি হয়ে নিই!!

মিনিট দশেকের মধ্যেই আহেলি একটা চুড়িদার পরে অল্প সাজগোজ করে বেরোয় বাড়ি থেকে…..টিফিন বক্সটা একটা ব্যাগের মধ্যে নিয়ে সেটা স্কুটির হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে মাকে বলে স্কুটিতে স্টার্ট দেয়!!

বেশিদূরের রাস্তা নয়…..স্কুটিতে করে পনেরো মিনিটের মধ্যে একটা তিনতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় আহেলি!!গেট খোলা ছিলো……স্কুটিটা একপাশে রেখে ব্যাগটা হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে!!বাড়ির ঢোকার দরজার পাশেই একটা বড়ো হলরুম……সেটার দিকে একবার উঁকি দিয়ে আবারো ঢুকে যায় বাড়ির ভেতরে!!

এই বাড়িটা আহেলির কাছে নিজের বাড়ির থেকেও বেশি আপন…..ব্যাগটা ডাইনিং টেবিলে রেখে আহেলি কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা চলে যায় রান্নাঘরে!!সেখানে একজন রান্নায় ব্যস্ত…..আহেলি চুপিচুপি গিয়ে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে আদুরে গলায় বলে ওঠে,,,,,

মামনি…….

আহেলির স্পর্শে ওর মায়ের বয়সী এক মহিলা ঘুরে দাঁড়ায় ওর সামনে!!

এতক্ষন তোর কথাই ভাবছিলাম!!

কি রান্না করছো মামনি?!

কি আবার করবো?!তিনি কি আর বাড়ি থাকেন যে তাকে মনের মতো রান্নাগুলো করে বসিয়ে খাওয়াবো!!আপাতত এই পায়েস আর মাংস রান্না করেছি……সেটাই খেয়ে যাক!

তা তোমার গুনধর পুত্রটি কোথায়?!অফিসে তো তাকে দেখলাম না……

তার আজ আবার কোথায় জনসভা আছে!সেখানে যাবে বলে সবকাজ বন্ধ রেখেছে…..তুই একবার গিয়ে ডেকে নিয়ে আয় তো!!

আমি?!কি বলছো কি মামনি?!বাঘের খাঁচায় আমায় ঢুকিয়ে দেওয়ার খুব ইচ্ছা তাই না?!

সত্যিই আহেলি তুই পারিস!!ঋষিকে বাঘ বলছিস জানলে কি হবে ভাবতে পারছিস?!

কি আবার হবে?!তোমার ওই ছেলে কয়েকটা কথা শোনাবে!!

ওভাবে বলিস না আমার ছেলেটাকে!সেতো একটু রাগী….তবে তোকে আমার ছেলেটা ভীষণ ভালোবাসে!

কচু ভালোবাসে!!তোমাদের মুখের ওপর কিছু বলতে পারে না তাই হয়তো আমায় মেনে নিয়েছে!!

আচ্ছা হয়েছে!!আমার রান্না প্রায় শেষ…..তুই গিয়ে তাকে ডেকে আন!!

আহেলি সম্মতি জানিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলার দিকে ছুটে যায়….ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যায় আহেলি!!হালকা হেসে দরজায় হেলান দিয়ে সামনে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়…..

নীল পাঞ্জাবির ওপরে কালো রঙের হাফ ব্লেজার পরে তার বোতাম লাগাচ্ছে ঋষভ……আহেলির ঋষিদা!!যদিও এই ডাকটা বেমানান তাও এতদিনের অভ্যাস কিছুতেই ছাড়তে পারে না আহেলি……সামনে থাকা পুরুষটা একমাত্র তার কথাটা ভাবতেই আহেলির মুখে হাসি ফুটে ওঠে!!

কোনো কথা না বলেই আহেলি ঘরের মধ্যে গিয়ে ঢোকে…..ঋষভ তখন ড্রেসিং টেবিল থেকে পারফিউম নিয়ে নিজের গায়ে স্প্রে করছে!!আড়চোখে আহেলি কে দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলো!!

বিছানায় বসে ভ্রূ কুঁচকে আহেলি বললো,,,

এটা কি ঠিক?!তুমি যাচ্ছো একটা জনসভায়….সেখানে নানান লোকজন এসে ভিড় জমাবে তোমার বক্তৃতা শোনার জন্য!কিন্তু এভাবে যদি সেজেগুজে যাও তাহলে কি আর সেসব হবে?!মেয়েগুলো তো তোমায় দেখেই হয়ে যাবে……এজন্য বলি তুমি রাজনীতি না করে সিনেমায় নামতে পারতে!!

সকাল সকাল তোর কোনো কাজ নেই?!আজকে কোনো টিউশন নেই?!

ছিলো তো!কিন্তু যাওয়া আর হলো কৈ?!

আহেলির কথায় ঋষভ ওরদিকে ফিরে বললো,,,

যাসনি কেনো?!কি সমস্যা?!….

আজ তো একজনের একটা স্পেশাল দিন!!যদিও তার কোনো খেয়াল থাকে না এই সমন্ধে….তাই আমি ভাবলাম যাই গিয়ে একটা অন্তত উইশ করে আসি!!

আহেলির কথায় ভ্রূ কুঁচকে তাকালো ঋষভ….ঋষভের মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো আহেলি!!কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে একটা গিফটের বক্স বের করে ধরলো ঋষভের সামনে……

শুভ জন্মদিন ঋষিদা!!….এটা তোমার জন্য আমার তরফ থেকে!!খুব সামান্য কিন্তু স্পেশাল!!

আহেলির হাত থেকে গিফটের বক্সটা নিয়ে ঋষভ সেটা রাখলো ড্রেসিং টেবিলের ওপর…..ওয়ালেট পকেটে ঢুকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,,,

এইজন্য সকাল সকাল টিউশন না গিয়ে চলে এসেছিস এখানে?!

গিফটটা খুলে দেখবে না ঋষিদা?!

উম্ম?!গিফটটা?!….এখন বেরোতে হবে আমায় নাহলে দেরি হয়ে যাবে!!

ঋষভের কথায় আহেলির মুখের উজ্জ্বলতা কমে এলো একটু…..তারপর একটু উৎসাহিত হয়ে বললো,,,

নিচে চলো!!মামনি তোমায় খাওয়ার জন্য ডাকলো…..

হুমমম!!মা তো আজ আবার না খাইয়ে বেরোতেও দেবে না!!

ঋষভ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই আহেলি একপলক তাকালো গিফ্টটার দিকে!!ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে নিজেও বেরোলো ঘর থেকে!!

ডাইনিংয়ে ঋষভ বসতেই ওর সামনে ওর মা ভাত সহ কয়েকটা পদ রাখলেন……এখন মাকে কিছু বলতেও পারবে না ঋষভ!কোনো কথা না বলে খাওয়া শুরু করলো ঋষভ……আহেলি আর ঋষভের মা দুজনই দাঁড়িয়ে আছে!!কিছুটা ভাত খেয়েই পায়েসের বাটিটা নিজের দিকে টানলো ঋষভ……ওর মা এবার অবাক হয়ে বললেন,,,

একই ঋষি….চিংড়ির মালাইকারীটা খেলি না?!

সময় নেই মা!!এখন এতকিছু খাওয়া পসিবল নয়…..এই যে পায়েসটা জাস্ট ফাটাফাটি হয়েছে!!আর কিছু খেতে ভালো লাগছে না!!

একটু তো খেতে পারতিস বাবা!!আ……

মামনির কথা শেষ করতে না দিয়েই আহেলি বললো,,,
থাক না মামনি!!এই যে তোমার ছেলে বসে যেটুকু খেয়েছে এটাই অনেক…..

মা আমি উঠলাম!!আজ কিন্তু আমার ফিরতে অনেকটা লেট হবে……তুমি আবার আমার জন্য না খেয়ে বসে থেকো না!!

আহেলি বাড়ি এসেই নিজের ঘরে চলে গেলো!!ঘরের দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে পরলো মুখ ভার করে……এতক্ষন নিজেকে সামলে রাখলেও এবার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো আহেলির!

তুমি তো একবার গিফটটা খুলে দেখতে পারতে ঋষিদা….আমার রান্না বুঝি আজকাল ভালোই লাগে না তোমার তাই না?!তা লাগবে কিকরে?!এখন তুমি সত্যিই বদলে গেছো…….একটু একটু করে তুমি আমায় অনেক দূরে সরিয়ে দিচ্ছো ঋষিদা!!আমাদের মধ্যে সেই বন্ডিংটা কেমন ফিকে হয়ে গেছে আর তুমি সেটা খেয়াল অব্দি করোনি!!

আহেলির ভাবনা থামলো ফোনের রিংটোনে!!ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ওর বান্ধবীদের কনফারেন্স কল…..চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করলো আহেলি!!ওদের বন্ধুদের গ্রূপটা ঠিক করেছে শান্তিনিকেতন যাবে তিনদিনের জন্য…..আহেলি রাজি হয়নি!!কিন্তু এরাও ছাড়বে না!!তবে সিদ্ধান্ত বদল করেছে আহেলি…..কদিন এসবের থেকে দূরে গিয়ে মনটাকে ভালো করতে হবে!!আর জন্য সকলের সাথে আহেলি শান্তিনিকেতন যাবে!!

চলবে……..

(শুরু করলাম নতুন ধারাবাহিক মনের মানুষ…….আশা করছি ভালো লাগবে সবার!কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না কেমন লাগলো প্রথম পর্ব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here