মনের_অন্দরমহলে পর্ব ১৯

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ১৯
#আনিশা_সাবিহা

–“তোমাকে জেলে যেতে হবে নিশাপাখি! আমায় খুন করার অপরাধের দায়ে।”

পেছন থেকে আয়াশ আমায় নিজের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে কথাগুলো বলে উঠলেন মৃদু সুরে। আমি থতমত খেয়ে গেলাম।
–“আপনাকে খুন করলাম কখন আমি? এইতো জ্যান্ত আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

ভীরু গলায় বলতেই আমার কানের পিঠে ছোট্ট করে চুমু খেয়ে নিলেন আয়াশ। আমার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। লোমকূপ পর্যন্ত জানান দিল এটা কেমন অদ্ভুত অনুভূতি? আয়াশ আবারও আগের মতো করেই বললেন…..
–“কে বলছে খুন করছো না? সেকেন্ডে সেকেন্ডে খুন করে যাচ্ছো। মায়াবিনীর মায়ায় আহত করে দিচ্ছো। হলুদ রঙে দেখেই তোমায় আহত হয়েছিলাম। আবারও একই রঙে তোমায় মুড়িয়ে নিজেই নিহত হতে চাইছি।”

–“তাহলে এই রঙের শাড়ি এনেছেন কেন?”

–“কারণ আমি তোমার হাতেই খুন হতে চাই। তোমার হাসিতে মরতে চাই। তোমার ঘন পাপড়িতে আবদ্ধ চোখজোড়ায় নিজেকে আহত করতে চাই।”

নিশ্বাস আঁটকে যাবার উপক্রম আমার। ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কেঁপে চলেছে। ইশশ….কি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। লোকটা সবসময় আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে কি মজা পান কে জানে!

–“কি হলো? আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছো বুঝি?”

আয়াশের শান্ত কন্ঠ। আমি হকচকিয়ে উঠে আধো আধো কন্ঠে বলি….
–“প…প্রেম? কিসের প্রেম?”

–“প্রেম আবার কিসের হয় জানো না? অবশ্য প্রেমের প্রকারভেদ রয়েছে। একটা ক্ষণিকের প্রেম আরেকটা গভীর প্রেম। আমি তো তোমার গভীর প্রেমে মগ্ন! তুমি আমার জন্য কোনটা ফিল করছো?”

–“আবোলতাবোল বকা বন্ধ করুন। আমি ওসব কোনো ফ…ফিল টিল করি না।”

বলেই নিজেকে ছাড়াবার জন্য ছটফট করতে শুরু করলাম। আয়াশ নিজের ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে আছেন। তেমন কোনো জোর করে না জড়িয়ে ধরতেই আমার অবস্থা বেহাল।
–“আমার থেকে পালাতে চাও? দ্যাটস নট পসিবল! ফিল করছো জন্যই চোরের মতো পালাতে চাইছো। যদি তোমার চোখ দেখে সব বুঝে যাই!”

–“আমার চোখে এমন কি….কিছু নেই। ছাড়ুন। আপনার কথামতো ট্রাই করেছি এসব। এখন এসব চেঞ্জ করে ঘুমাবো আমি।”

আয়াশ অবাক হওয়ার মতো করে বলে…..
–“সেকি! তুমি এখনই চেঞ্জ করবে? নো ওয়ে। এখন এসব চেঞ্জ করতে হবে না। কাম উইথ মি।”

আমায় নিজের থেকে ছেড়ে দিয়ে আমার ডান হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করলেন আয়াশ। আমি কন্ঠে বিস্ময় নিয়ে বললাম…..
–“এতো রাতে কোথায়?”

–“হানিমুনে।”
আয়াশ রসিকতাপূর্ণ হয়ে বললেন আমি তা বুঝতে পারলাম। যেহেতু উনি সঠিক উত্তরটা দেননি সেহেতু সহজে উনার মুখ থেকে জবাব বের করতে পারব না সেটা আমার বোধগম্য হলো। আয়াশ আমায় বাইরে গিয়ে আসতেই রাতের শীতল বাতাস আমার শরীর ছুঁইয়ে গেল। বাইরে নিয়ে এসে কি করতে চাইছেন আল্লাহ মালুম। আমায় দ্রুত গাড়িতে বসিয়ে গাড়িটা স্টার্ট দিতেই কাঁচুমাচু হয়ে গেলাম আমি।

–“এতো রাতে আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমি কিন্তু আপনার সঙ্গে কোথাও যাব না। গাড়ি থামান।”
জড়োসড়ো হয়ে বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথাগুলো বললাম। আয়াশের কোনো হেলদোল নেই। উনি আমার কথার প্রতুত্তরে একটা শব্দও উচ্চারণ করার প্রয়োজনবোধ করলেন না। আমি আবারও দাঁতে দাঁত চেপে বললাম…..

–“বললাম তো কোথাও যাব না। গাড়ি রিটার্ন নিয়ে চলুন নয়ত চিৎকার করব!”

ফিক করে হেসে দিলেন আয়াশ। অন্যসময় উনার হাসি মুগ্ধ হয়ে শুনলেও আজ গা জ্বলে গেল। আয়াশ খোঁচা মেরে বললেন…..
–“আমি তোমার হাজবেন্ড নিশাপাখি! এতটুকু ভরসাও রাখতে কষ্ট হচ্ছে? কি মনে হচ্ছে তোমার এই আয়াশ রায়হান তোমায় কোথাও নিয়ে গিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে? কাম অন! মাথার বুদ্ধি কাজে লাগাও। তোমার সঙ্গে কিছু করতে বাড়ির রুমই যথেষ্ট। কেউ দেখতে আসবে না।”

আমি মুখ বেলুনের ন্যায় চুপসে গেল। নিজের ভবনার ওপর মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থা হলো। আমিও যে মাঝেমধ্যে কি ভাবি! আমার চুপসানো মুখ হয়ত খেয়াল করলেন আয়াশ। আমার হাতে পানির বোতল ধরিয়ে দিয়ে বললেন…..
–“নাও পানি খাও। কথা বলার শক্তি হারিয়েছো মনে হচ্ছে। টেক ইট।”

কিছু বা বলে হাত থেকে বোতলটা নিয়ে পানি খেয়ে নিলাম আমি। গলা ভেজানো খুব দরকার ছিল। বোতলের মুখ বন্ধ করতেই কেমন জানি অদ্ভুত লাগলো আমার। মাথাটা ঘুরে গেল হঠাৎ করে। নিজেকে সামলাতে না পেরে সামনের দিকে পড়তে নিলে একহাতে ধরে ফেললেন আমায় উনি। নিজেকে সামলে নিলাম তৎক্ষনাৎ। মূহুর্তেই রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিল। চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসছে জোর করে।

–“ঘুম পাচ্ছে তোমার নিশাপাখি?”

–“ক…কি মিশিয়েছেন পানিতে?”

-“ঘুমের ঔষুধ।”
ফিসফিস করে বললেন আয়াশ। ঘাবড়ে গেলাম আমি।

–“কে….কেন এই কাজ করেছেন?”

আয়াশ ক্ষীণ সুরে বললেন….
–“টু ডু সামথিং স্পেশাল ডার্লিং! আই নো তোমার বড্ড ঘুমকাতুরে বাট এই মূহুর্তে তোমার ঘুম আমার জন্য প্রয়োজন।”

–“আমি ঘুমকাতুরে? আপনি কি করে জানলেন?”

–আমি ছাড়া আর কার জানার কথা? তুমি তো ঘুমের রানী! যদি তা না হতো ঘুমের মধ্যে তোমার সঙ্গে এতো রোমান্স করি জাগতে পারো না কেন?”

আর মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। লজ্জায় মাটির তলায় ঢুকে গেলে ভালো হতো। কি সব অসভ্য কথাবার্তা! চোখজোড়া বুঁজে আসছে। ঘুমের রাজ্যের তলিয়ে যাচ্ছি আমি।

আনিশা ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতেই আয়াশ বাঁকা হাসে। দুহাত দিয়ে নিজের বাহু ধরে আছে আনিশা। বোধহয় তার ঠান্ডা লাগছে। আয়াশ অন্য হাত দিয়ে আনিশাকে নিজের কাছে টানতেই আয়াশের কাঁধে ঢলে পড়ে সে। আয়াশ জড়িয়ে নেয় একহাতে তাকে। চুলের ভাঁজে ভাঁজে উষ্ণ স্পর্শ দেয়। তারপর শ্বাস ছেড়ে নিজমনে গাড়ি চালাতে থাকে।

এক পর্যায়ে আয়াশের ফোনের রিংটোন বাজতেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে সে। এতো রাতে কে কল করছে তাকে? সে বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে…..
–“হোয়াট রাবিশ! এতো রাতে কে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করছে?”

আয়াশ ফোনটা ধরলই না। তবে কল কেটে যাবার পরেই আবারও যখন তার রিংটোন বাজলো বিরক্তির ধাপ আরো কিছুটা বেড়ে গেল। নিস্তব্ধ পরিবেশ। আশেপাশে গাড়ি খুব কমই চলছে। দাঁড় করালো রাস্তার সাইডে গাড়ি। ফোনটা নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই সকল বিরক্তি যেন উবে গেল তার। মুখে হাসির রেশ ফুটে উঠতেই কল কেটে যাবার আগেই রিসিভ করল আয়াশ। ওপাশ থেকে একটা পুরুষের গলা ভেসে এলো।
–“হেই আয়াশ ব্রো! হোয়াটস আপ?”

আয়াশ উৎকন্ঠা হয়ে বলে ওঠে….
–“রুদ্র! রিয়েলি এটা তুই বলছিস? আই কান্ট বিলিভ।”

–“সারপ্রাইজড না? রুদ্র তো সারপ্রাইজড করবেই। সে রুদ্র বলে কথা!”
ওপরপাশ থেকে হেসে বলে ওঠে রুদ্র। আয়াশ ফিচেল কন্ঠে বলে….
–“সো এতোদিনে মনে পড়ল তোর এই বেস্টফ্রেন্ডের কথা?”

–“নো ইয়ার! তুই জানিস পড়ালেখার কতটা চাপ? বিদেশে ডাক্তারি ডিগ্রী নিতে এসে যদি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাই তাহলে আয়াশের বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দেব কি করে? লজ্জার তো শেষ থাকবে না ভাই। লইয়ার আয়াশ রায়হানের বেস্টফ্রেন্ড ডাক্তারি পড়তে গিয়ে পাশ করতে পারেনি? কেমন লাগবে বল?”

–“এক্সকিউজ ভালো ছিল। এনিওয়ে, ওখানে শুধু পড়ালেখাতেই ডুবে আছিস নাকি প্রেমটেম কিছু হয়েছে?”

রুদ্র হু হা করে হেসে দেয় ওর কথায়।
–“আমি আর প্রেম? তোর মনে হয় দেশি মেয়েরাই আমার পাথরের মতো মন গলাতে সক্ষম হলো না আর বিদেশি মেয়েরা। তুই বিদেশি মেয়েদের পছন্দ করতে পারিস। আমার দ্বারা বিদেশী মেয়ে হবে না।”

–“শাট আপ রুদ্র! আমি বিদেশি মেয়ে পছন্দ করতাম। করতাম মানে করতাম। এখন সম্পূর্ণ আলাদা। যেই আমাকে কেউ ফেরাতে পারত না সেই আমি একটা এমন মেয়ের পেছনে পড়ে রয়েছে যে কিনা আমাকে পাত্তায় দিতে প্রস্তুত নয়।”

রুদ্র কিছুক্ষণ চুপ থাকে। বিস্ময়ে ও কথায় বলতে পারছে না। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে ওঠে…..
–“লাইক সিরিয়াসলি? আগে তো জানতাম আয়াশ রায়হানের পেছনে মেয়ে ছোটে। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ উল্টো। ব্যাপার কি? কে করল এমন জাদু?”

আয়াশ মৃদু হাসে। সে যে এমন অস্থায়ী জীবন ছেড়ে এমন জীবনে পদার্পণ করবে ভাবতেও পারেনি। ঘুমন্ত আনিশার দিকে একবার তাকায় ও।
–“মস্ত বড় জাদুকরী মেয়ে। তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মায়া! তাকে দেখে মনটা টিকলই না। ওর জন্য এতোটা ডেস্পারেট হয়ে গিয়েছিলাম যে বিয়ের জন্য সুইসাইড করার হুমকি দিতেও পিছাইনি।”

–“হোয়াট? তোর বিয়েও হয়ে গেছে? ও মাই গড! এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলি তুই আমার সাথে? বিয়ে করলি অথচ তোর এই দুর্ভাগা বন্ধুকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করলি না?”

আফসোস নিয়ে হায় হায় করে বলে উঠল রুদ্র! সত্যিই বিষয়টা আনএক্সপেক্টেড তার কাছে। সে আয়াশকে খুব ভালোভাবে চেনে। কিন্তু বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া আয়াশকে চিনতে তার বেগ পেতে হচ্ছে। আয়াশ শান্ত কন্ঠে বলে উঠল….
–“এতো কিছু জানানোর পরিস্থিতি ছিল না তখন আর তোর ভাবির বয়স আর ওর অন্ধত্ব নিয়ে অনেকটা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিল মিডিয়ার লোকজন। তাই জানানো হয়নি। তুই চলে আয় দেশে দেন তোর ভাবিকে আবার বিয়ে করব অনুষ্ঠান করে। পুরো ঢাকা দেখবে।”

–“তুই আমাকে আজকেই হার্ট অ্যাটাক করে মেরে ফেলবি নাকি? একের পর এক এসব অবিশ্বাস্য শুনিয়ে যাচ্ছিস আমার ছোট্ট হার্ট কত নেবে? ভাবির বয়স কম? তাও অন্ধ? হঠাৎ অন্ধ আর ছোট মেয়ে প্রতি এতো টান কেন?”

–“অন্ধ ও আগে ছিল না। তখন থেকেই ওর প্রতি আমার এতো অনুভূতি। আচ্ছা তুই দেশে ফিরবি কবে?”

–“এখনো দেরি আছে। একদিন সারপ্রাইজড দেশে ফিরব। ভাবির নামটা অন্তত বলতে পারিস। শুনে রাখি?”
প্রশ্নটা করে উঠল রুদ্র। আয়াশ কিছু বলবার আগেই আনিশা নড়েচড়ে উঠল। আয়াশের নজর গেল ঘড়ির দিকে। বারোটা চার বেজে গিয়েছে। সে তড়িঘড়ি করে বলল…..

–” আজ রাখছি। তোর ভাবির জন্মদিন। ওকে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছি। কাল তোর সঙ্গে কথা বলব। ওকে?”
–“ওকে টেক ইউর টাইম।”
বলেই হেসে ফোন কেটে দিল রুদ্র।

ফোনটা পকেটে রেখে আনিশার দিকে নিজের দৃষ্টি স্থির করে আয়াশ। মেয়েটা তার প্রাণখোলা হাসির কারণ। মেয়েটা তার বেঁচে থাকার কারণ। নিজের দুহাত দিয়ে আলতো করে আনিশার ফোলা গাল স্পর্শ করে আয়াশ। মেয়েটার গাল দুটো সবসময়ের জন্য লাল আভা লেগেই থাকে যেটা আয়াশের বেশ লাগে। আয়াশ ওর মুখ ফুঁ দিয়ে নিচু সুরে বলে…..

–“হ্যাপি বার্থডে নিশাপাখি। আমার কাছাকাছি আসার আরেকটা ধাপ পেরিয়ে এলে তুমি। ইচ্ছে ছিল তোমাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে অন্য কোনো রেস্টুরেন্ট বা ছাঁদে সারপ্রাইজ দেওয়া কিন্তু আমি জানি তুমি এসবের থেকে কোনটাতে বেশি খুশি হও। আজ তোমার খুশির কারণ হতে খুব ইচ্ছে করছে। যার কারণে এটা আমার প্রথম উদ্যেগ।”

মুচকি হেসে আবারও নিজের বাহুডোরে আনিশাকে জড়িয়ে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল আয়াশ।

সকালে……
কিঞ্চিৎ আলোতে ঘুমটা হালকা হয়ে এলো। কারো আবেশে ঘুমটা বেশি করে জাপ্টে ধরতে চাইছে। নাকে আসা সুগন্ধ আমার চেনা। ঘুমের ঘোরে কোলবালিশ মনে করে আমি উনাকেও জাপ্টে ধরে ঘুমাচ্ছি। আস্তে আস্তে ছেড়ে দিলাম উনাকে। মিটমিট করে চোখটা মেললাম। মাথা উঠাতেই আমার চোখেমুখে গরম নিঃশ্বাস পড়ল।
–“গুড মর্নিং সেভেনটিন ইয়ার অল্ড গার্ল!”

সঙ্গে সঙ্গে চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেল আমার। তখনই মনে পড়ল আমার জন্মদিনের কথা। আয়াশ আমার চুল ওপরের দিকে ঠেলে দিয়ে বললেন…..
–“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। তোমাকে বিয়ে করার দিন এগিয়ে এলো।”

জানা নেই এভাবে কে উইশ করে। তাও শুকনো মুখে! চোখজোড়া সরু হয়ে এলো আমার। মনে পড়ল রাতের কথা। আমরা এখনো গাড়িতে আছি। আশপাশটা বোঝার চেষ্টা করে বললাম…..
–“আমরা এখন কোথায় আছি? আর কাল রাতে আপনি এসব কেন করলেন আমার সাথে হ্যাঁ?”

–“আমরা এখন হসপিটালের সামনে আছি। কক্সবাজার হসপিটালের সামনে। আর কাল রাতে যদি তোমায় না ঘুমিয়ে দিতাম নির্ঘাত এই হসপিটালে আমরা পড়ে থাকতাম। কেননা, তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এই কথা বলে আমার কানটা খারাপ করে দিতে। এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো। ফলস্বরূপ কি হতো ভাবতে পারছো?”

স্বাভাবিক ভাবেই কথাগুলো বললেন আয়াশ। আগে আগে কত এক্সট্রা ভাবনাচিন্তা করে ফেলেন উনি। এটাই হয়ত আজাইরা মানুষের কাজ! তারপর হসপিটালের কথা মনে হতেই ভয় এনে আমার মনে হানা দিল।
–“আমরা হসপিটালের সামনে কেন? তাও কক্সবাজারে? কারো কিছু হয়েছে? বলুন?”

চটপট করে প্রশ্নটা করে ফেললাম। আয়াশ গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আমাকেও বের করিয়ে বললেন….
–“কাম উইথ মি! সবটা একাই বুঝতে পারবে।”

অস্থির মনোভাব নিয়েই একপ্রকার হসপিটালের ভেতরে ঢুকলাম। আয়াশকে বার বার জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? কিন্তু উনার মুখে যেন তালা পড়ে গেছে! খোলাও যাচ্ছে না। অন্যদিকে চিন্তায় আমি আহত হয়ে যাচ্ছি। একসময় উনি রিসেপশনে এসে থামলেন। রিসেপশনিস্টকে বললেন….
–“এক্সকিউজ মি! তুষার আহমেদ এই হসপিটালে ভর্তি আছে। তার কেবিনটা কোথায়?”

বুকটা ধক করে উঠল। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো। তুষারের কিছু হয়েছে? মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে। ওর কিছু হলে কি হবে? রিসেপশনিস্ট একটু চুপ থেকে বললেন…..
–“২১১ নম্বর কেবিন। সেকেন্ড ফ্লোরে গিয়ে বাম দিকে।”

–“আ…আয়াশ? তুষারের কি হয়েছে?”
অস্ফুটস্বরে বললাম আমি। আয়াশ আগের একরোখা মনোভাব নিয়েই জবাব দিলেন…..
–“চলো না! গিয়েই দেখতে পাবে।”

আমি থামলাম না। প্রশ্নটা করেই গেলাম। একপ্রকার কান্না পেয়ে গেল আমার। অবশেষে কেবিনে এসে পৌঁছালাম আমি। শুনতে পেলাম মায়ের কন্ঠস্বর।
–“আনিশা?”

আমি আন্দাজ মতো এগোতেই মা জড়িয়ে ধরল আমায়। আমি ঠোঁট চেপে কেঁদে দিতেই মা ধমকে বলল…..
–“কিরে মেয়ে? কাঁদছিস কেন? নিজের জন্মদিনে কেউ কাঁদে? তোর ভাই ভালো আছে। সুস্থ আছে।”

কান্নাটা বন্ধ হয়ে গেল এক মূহুর্তেই।
–“তাহলে?”
–“জামাই তোকে বলেনি? তোর ভাইয়ের হার্টের অপারেশন হয়েছে।”

চলবে……

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর দুঃখিত গতকাল গল্প না দেওয়ার জন্য। আমি এসাইনমেন্টে বিজি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here