মনের_অন্দরমহলে পর্ব ২৯

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ২৯
#আনিশা_সাবিহা

–“দেখুন মি. রায়হান, মিসেস. রায়হান সবে নিজের চোখ ফিরে পেয়েছেন। তাই উনাকে হঠাৎ করেই তীব্র লাগা থেকে দূরে রাখতে হবে। আচমকা আলো যেন উনার চোখে না পড়ে তাহলে কিন্তু সমস্যা হতে পারে। আপনি বুঝতে পেরেছেন আমি কি বললাম?”

আয়াশ দরজা দিয়ে একবার আনিশার দিকে তাকায়। মেয়েটার চোখেমুখে অন্যরকম উজ্জ্বলতা দেখে আয়াশের চোখ ছলকে ওঠে। আনিশাকে আজ ভারি সুন্দর লাগছে। সেটা কি শুধুমাত্র আয়াশের চোখেই একটু বেশি সুন্দর লাগছে নাকি সকলের চোখেই সেটা আয়াশের অজানা। নিজের পরিবারের সঙ্গে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে সে। হাসিটা যেন আজ বেশিই প্রাণখোলা! হাসতে হাসতে হঠাৎই আনিশার চোখ পড়ে আয়াশের দিকে। হাসিটা মিইয়ে যায় তার। তা দেখে আয়াশ ভ্রু কুঁচকায়। হাত তুলে নিজের দুই আঙ্গুল প্রসারিত করে ইশারা করে আনিশাকে হাসতে। আনিশার ঠোঁটজোড়া আবারও হাসিতে প্রশস্ত হয়। আয়াশও তা দেখে মুচকি হাসে।

–“মি. রায়হান? আমি যা বললাম তা কি আপনি শুনেছেন?”

আয়াশ আনিশার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে একটু চমকে তাকিয়ে মাথায় নাড়ায়।
–“ইয়েস ডক্টর। আই আন্ডারস্ট্যান্ড। আমি এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখার চেষ্টা করব অ্যান্ড থ্যাংক ইউ।”

–“এটা আমাদের ডিউটি। থ্যাংক ইউ বলার কিছুই নেই। আর আপনি আপনার ওয়াইফকে আজকেই বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন।”

বলেই বিদায় নেয় ডক্টর। আয়াশ ধীর পায়ে হেঁটে আনিশার কেবিনে ঢুকে পড়ে। আনিশা তখন তুষারের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আয়াশকে কেবিনে ঢুকতে দেখেই ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালাম আমি। লোকটাকে ইগনর করা সম্ভব নয়। যাকে দেখলে মনের মধ্যে তোলপাড় চলে তাকে দেখার ইচ্ছেটা তীব্র হয়! আয়াশ এসে আমার বেডের পাশে দাঁড়ান। তৎক্ষনাৎ তুষার বেড থেকে নেমে আয়াশের কাছে যায়। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“জিজু, জিজু! তোমার জন্য আমার আপু আবার আমাকে দেখতে পাচ্ছে। সবাইকে দেখতে পাচ্ছে। থ্যাংক ইউ।”

আয়াশ একটু নিচু হয়ে তুষারের গাল টেনে বলেন,
–“সব ঠিক আছে তবে থ্যাংক ইউ বলাটা আমি মেনে নিতে পারলাম না জুনিয়র! আচ্ছা আনিশা যেমন তোমার আপু তেমনই আনিশা আমার কে?”

–“বউ। ইংরেজিতে যাকে ওয়াইফ বলে। আবার বেটারহাফও বলে।”

–“বাবাহ, এতোকিছু জেনে নিয়েছো তুমি?”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন আয়াশ। তুষার মাথায় দুলায়। আয়াশ ওর কাঁধ ধরে বলেন,

–“তাহলে আমি তোমার ওয়াইফ/ বউ / বেটারহাফ এর দৃষ্টি ফেরানোর রাস্তা করে দিয়েছি। এতে থ্যাংক ইউ বলার কি আছে?”

এবার তুষার চুপ হয়ে পড়ে। আমি শুধু চোখজোড়া স্থির রেখে দুজনের কথাবার্তা শুনছি। আয়াশের মুখে বউ, বেটারহাফ, ওয়াইফ কথাটা শুনে অজান্তেই মুখ নিচু করে ফেললাম আমি। মা-বাবার দিকে বাঁকা চোখে তাকালাম। উনারা মুচকি মুচকি হাসছেন।

–“কথাটা তুমি ঠিক বলেছো। আমি ভুল বলেছিলাম।”
তুষারের কথা শুনে হেঁসে দেয় আয়াশ। আবার বেহায়া চোখজোড়া আঁটকে যায় হাসিতে ফেটে পড়া লোকটার দিকেই। উনার হাসিতে কতশত মেয়ে কাবু হয়ে যাবেন সেটা কি উনি জানেন?

হাসি থামিয়ে আয়াশ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মা-বাবার দিকে তাকান। উনারা এগিয়ে আসেন আয়াশের দিকে। আচমকা বাবা হাতজোড় করে বসেন। আয়াশ চমকে ওঠেন বাবার এরূপ কাজে।
–“ধন্যবাদ আয়াশ বাবা। আমরা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি আমাদের মেয়েটা এভাবে চোখে আমাদের আবার দেখতে পাবে। তুমি সেটা সত্যি করে দিলে। তোমার কাছে আমাদের অনেক ঋণ রয়ে গেল। এগুলো কোনোদিন শোধ হবে না সেটা জানি। আমাদের তো এতো সামর্থ্য নেই।”

আমার চোখে পানি এসে গেল। মুখ নিচু করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না অবরোধ করবার চেষ্টা চালাতে থাকলাম। আবারও মাথা উঠিয়ে তাকিয়ে দেখি আয়াশ বাবার হাত নামিয়ে দিয়েছেন।

–“আপনি হয়ত জানেন না বাবা যে আমি বুদ্ধি হবার পর থেকে কখনো নিজের বাবাকে বাবা ডাকিনি। কারণ আমার বাবা আমার কাছে মৃত ঘোষিত হয়েছিল যখন আমার মায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকা করেছিল। তাছাড়া আমার নিজের বাবা যিনি আছেন তাকে দেখলেও মন থেকে বাবা শব্দ বের হয় না। লজ্জা লাগে খুব। কিন্তু আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবার পর মন থেকে সেই ভক্তি আর শ্রদ্ধা বেরিয়ে আসে। আপনাকে আমি বাবা ডেকেছি। আর সন্তানের কাছে বাবার কোনো ঋণ হয় না। আর আনিশার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বললে বলব যে সি ইজ মাই ওয়াইফ। আমি শুধু চাই ওর জীবনে সব সুখ ফিরিয়ে দিতে। এরজন্য হাতজোড় করে আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না।”

–“তোমার কথার জবাবে আমরা কি বলব আমাদের জানা নেই। সত্যি বলতে আমরা ভেবেছিলাম আমাদের মেয়ে তোমার কাছে কখনো সুখি থাকতে পারবে না। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি আমাদের মেয়ে অন্য কারো কাছে নয় তোমার কাছেই সব থেকে বেশি খুশি হবে।”

ভেতরটা কেঁপে উঠল আমার। আমার চোখে এখনো পানিতে ভরাট। কিন্তু এই অশ্রু এবার দুঃখের নয়। এই অশ্রু সুখের। এতোদিন লোকটাকে এক নম্বর জঘন্য ভাবলেও হঠাৎ সম্মান বেড়ে গেল আমার। বিমোহিত দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছি উনার দিকে। উনার মধ্যে মনুষ্যত্ব রয়েছে। উনি নিজেকে শক্ত দেখাতে চাইলেও ভেতরে একটা নরম মন রয়েছে সেটা আমি প্রমাণ পেয়ে চলেছি। মানুষটা শুধু একটু জেদি আর বদমেজাজি!

এপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মা-বাবাকে অনেকবার বলা সত্ত্বেও তারা এলেন না আমাদের সঙ্গে। সামনেই তুষারের পরিক্ষা আর দাদিও একা একা কোনো কাজ করতে পারেন না বলে চলে গেলেন সকলো আজই। আমার চোখেমুখে জড়ানো ওড়না। মুখ ফুলিয়ে একবার আয়াশের দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার বিল্ডিংয়ের দিকে। মুখে ওড়না জড়িয়ে দেওয়ার মেইন লজিক বেশ অদ্ভুত। আয়াশের মতে, আমাকে আজ নাকি একটু বেশিই উজ্জ্বল লাগছে সেই সঙ্গে সুন্দর লাগছে। তাই লোকের নজর থেকে বাঁচতে হলেও ওড়না নিয়ে মুখটা ঢেকে রাখতে হবে। দ্বিতীয় কারণটা হলো আমার চোখ। আমার চোখে এখন বেশি আলো লাগানো যাবে না। তবে মুখে এভাবে ওড়না দিয়ে ঢেকে চোর চোর লাগছে নিজেকে। পাশে আয়াশ আমার হাত ধরে বললেন,

–“কি হলো চলো?”

আয়াশের সঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করলাম আমি। লিফটে উঠে লিফটের দরজা বন্ধ করলেন আয়াশ। আমি উনার গা ঘেঁষে দাঁড়ালাম। লিফটে উঠলে মাঝে মাঝে মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে তো! মাথা চক্কর দিতেই উনার হাত খামচে ধরলাম আমি। আয়াশ আমার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকালেন। বাঁকা হেঁসে বললেন,
–“আহা কি বউ আমার! আমাকে ছাড়া এক সেকেন্ডও থাকতে পারে না।”

–“এমনটা মোটেও না। আমার তো শুধু মাথা ঘুরে যাচ্ছিল লিফটে ওঠার কারণে তাই।”

–“আগে বলবে না? তাহলে এর মেডিসিনও বের করে ফেলতাম।”

–“মেডিসিন?”
ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি। চোখজোড়া সরু হয়ে এলো। আয়াশের দৃষ্টি অন্যরকম লাগছে। সুবিধের নয় একদম। সরে যেতে চাইলে আমার কোমড় চেপে আমচকা নিজের দিকে টান দিতেই উনার বুকে গিয়ে পড়লাম আমি। আমার ঘাড়ে পড়ে থাকা চুলে মুখ গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,

–“মেডিসিন অলরেডি বের করে ফেলেছি।”

–“কি?”

–“রোমান্স!”

চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি। বুঝতে পারছি না কি রিয়েকশন দেওয়া উচিত? অবাক হব নাকি রেগে যাব? লোকটার যেখানে-সেখানে অসভ্যতা করার ইচ্ছে জাগে। উনি নিজের এগিয়ে আনতে নিলেই আমি উনার ঠোঁটের হাত রেখে মাথা নাড়ালাম। এক নিশ্বাসে বলে ফেললাম,
–“এখানে একদম এসব না। যে কেউ লিফটে উঠে পড়বে।”

কথাটুকু শেষ হতে না হতেই লিফটের লাইট ওফ হয়ে গেল। লিফট থেমে গেল। দম বন্ধ হয়ে এলো আমার। লোডশেডিং হয়ে গিয়েছে ভাবতেই মাথায় বাজ পড়ল। উনার মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললাম। আয়াশ একটা বড় শ্বাস নিয়ে আশপাশটা দেখে বললেন,
–“আজকে হয়ত লিফট আর কারেন্ট দুটোই চায় আমরা এখানে নিজেদের রোমান্সের বিশেষ মূহুর্ত ক্রিয়েট করি। নাহলে কি লোডশেডিং হতো বলো?”

–“আ…আপনি মজা করছেন? আমরা কোথায় বন্দি হয়ে পড়লাম আপনার ধারণা আছে? লিফট বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমরা বের হবো কি করে?”

–“কারেন্ট এলে বেরিয়ে যাব। সিম্পল!”

একরোখা ভঙ্গিতে বললেন উনি। লোকটার এমন একরোখা আচরণে মাঝে মাঝে ভীষণই বিরক্ত হয়ে পড়ি আমি। মানে মাঝেমধ্যে কারণ ছাড়াই সিরিয়াস হয়ে যান কিন্তু যখন সিরিয়াস হওয়ার সময় আসে তখন সিরিয়াস না হয়ে একেবারে মজা করার মুডে থাকেন। এসব একমাত্র আয়াশ রায়হান নামক লোকটার দ্বারাই সম্ভব।

কোমড়ে হাত বিচরণ করতে করতে পেটে এসে থামায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে আয়াশের দিকে তাকালাম। আয়াশ মিটিমিটি হাসছেন তা দেখে ছটফটিয়ে সরে আসতে চাইলাম আমি। একহাত দিয়ে ধরে থাকাতেও সম্ভব হলো না সেটা। উনি নিজের হাসি প্রসারিত করে বললেন,
–“তোমার গায়ে এখনো এতোটা জোর হয়নি নিশাপাখি! যে আমার বাঁধন ছাড়াতে পারবে। যদি সত্যিই ছাড়াতে চাও তবে আই হ্যাভ এ কন্ডিশন।”

সন্দিহান হয়ে তাকালাম আয়াশের দিকে। উনার শর্ত মানে ভয়ানক কিছু। এমন শর্ত দেবেন যাতে মানতে না পারি। সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করলাম,
–“কি শর্ত?”

–“কিস মি! আদারওয়াইজ আই উইল কিস ইউ।”

দাঁতে দাঁত চেপে তাকালাম আমি উনার কথায়। উনার কোর্টের কলার ধরে বললাম,
–“আপনি জানেন আমি এসব করতে পারব না।”

–“তাহলে আমি করব?”

–“না!”
মৃদু চিৎকার দিয়ে বললাম আমি। এবার উনি আমাকে দুইহাত দিয়ে চেপে ধরলেন। ঠোঁট এগিয়ে আনছেন তা আবছা আলোতে দেখতে পেয়ে আমি দ্রুত বলে উঠলাম,

–“আ…আমি রাজি আপনার কন্ডিশনে। সরুন, সরুন, সরুন!”

আয়াশ সরে গিয়ে বিজয়ের হাসি দিয়ে ঠোঁট এগিয়ে দিয়ে বললেন,
–“ওকে দেন স্টার্ট ডার্লিং।”

আমি ঢক গিললাম। এতোটা নার্ভাস আমি কখনো হইনি। দরদর করে ঘাম বয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে আয়াশ যদি এখন আমায় ছেড়ে দেন আমি নার্ভাসের চোটে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারি। কাঁপা কাঁপা হাতে উনার চোখে হাত রাখতেই উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,
–“এগুলা কি করছো?”

–“চুপ করুন। আপনি এভাবে তাকিয়ে থাকলে কন্ডিশন মানা তো দূর ভাবতেও পারছিনা।”

–“ওকে এজ ইউর উইশ।”

নিজের ঠোঁটজোড়া এগিয়ে নিয়ে এলাম। যখনই ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে যাব তখনই কারেন্ট আসায় চমকে উঠে আয়াশকে ধাক্কা দিলাম আমি। উনি একটু বেসামাল হয়ে পড়লেও আমায় ছাড়লেন না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমায় বললেন,
–“কি হলো?”

–“হয়ে গেছে।”

–“কি হয়েছে?”

–“কিস করা হয়ে গেছে।”

অবিশ্বাস্য চোখে আমার দিকে তাকান আয়াশ। বিস্ময় নিয়ে জোরে বলে ওঠেন,
–“হোয়াট? তুমি আমায় কিস করলে অথচ আমি জানতেও পারলাম না। হাওয়ার সঙ্গে কিস করেছো নাকি?”

চোখ ছোট করে তাকালাম আমি। এবার আমাকে লিফটের দেয়ালের সঙ্গে ঠেকিয়ে দেন আয়াশ। আমার দুটো গালে হাত রেখে বলেন,
–“আমার মনে হয় তোমার এক্সপেরিয়েন্স নেই। সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।”

আমি কিছু বলে বা করে ওঠার আগেই আমার ঠোঁটজোড়ায় উনার ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠলাম। আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে নিজমনে মত্ত হয়ে গেলেন উনি। আমি তখন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছি। লিফট থেমে গেল। মনে হচ্ছে কোনো লোক প্রবেশ করলো। তা দেখে ধ্যান ফিরল আমার। কিছু বলতে না পেরে আয়াশের পিঠে বেশ কয়েকবার কিল মেরেও রেহাই পাওয়া গেল না। এদিকে যে আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি সেদিকে কোনো হেলদোলই নেই আয়াশের। এক পর্যায়ে আমায় ছেড়ে দিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকান উনি। আমি লজ্জায় মুখ তুলেও তাকাতে পারছি না। গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

–“আমার তো কোনো সমস্যা ছিল না কিন্তু আমার ওয়াইফ বেশ লজ্জাবতী। এই টাইমে না এলেও পারতেন।”

অসহায় চোখে তাকালাম আয়াশের দিকে। এতোটা ঠোঁটকাটা লোক মানুষ হয় কি করে? নিজের লজ্জা ডুবিয়ে দিচ্ছেন সঙ্গে আমার লজ্জাও। আয়াশের কথায় লোকটা দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বললেন,
–“নো প্রবলেম ব্রো! চালিয়ে যান। এখানে তো সবই রোমান্টিক। ছোটখাটো ব্যাপার তো ঘটবেই।”

মাথাটা ভনভন করে ঘুরে গেল। এবার আমি নিজ থেকেই ওড়না দিয়ে মুখ থেকে ফেললাম। মুখ দেখাবার মতো অবস্থায় নেই আমি। লিফট একটা ফ্লোরে এসে থামতেই আমিও হনহনিয়ে বেরিয়ে এলাম। পিছুপিছু এলেন আয়াশ। আমি তো কত নম্বর ফ্লাট তাও জানি না। তাই আয়াশের দিকে তাকালাম। উনি ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন আমি ঠিক জায়গাতেই দাঁড়িয়েছি। মানে সামনেটাই আমাদের ফ্লাট। আয়াশ নিজ থেকে কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিল ফুলকি। ওর মুখটাও হাসি হাসি। হাসিমুখে আমাকে আগে প্রশ্ন করল,
–“আপনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন তো ম্যাম?”

–“হ্যাঁ। বড় মিষ্টি তুমি।”

ফুলকির হাসি প্রসারিত হলো। আয়াশ ঘরে ঢুকে পড়লেন সেই সঙ্গে আমিও। গায়ের লং কোট সোফার ছুঁড়ে দিয়ে বললেন,
–“ফুলকি, গরমে মাথাব্যাথা ধরেছে। কফি নিয়ে এসো ইমিডিয়েটলি।”

ফুলকি মাথা নাড়িয়ে রান্নাঘরে দৌড় দেয়। আমি আশপাশটা পর্যবেক্ষণ করছি। এটা কাপলদের জন্য ফ্লাট সেটার প্রমাণ পাচ্ছি। টেবিলটাও লাভ শেপের। দেয়ালে সাদা রঙের ওপর গোলাপের পাপড়ির পেইন্ট করা, ওপরে সফট লাইট, সাদা পাতলা পর্দা, আশেপাশে মোমবাতি, কৃত্রিম গোলাপ ফুলে ভর্তি! আয়াশের কন্ঠে ধ্যান ভাঙে আমার।

–“একটা কথা বলব?”

–“আপনি কথা বলতে পারমিশন কবে থেকে নেওয়া শুরু করলেন?”

–“বলব কিনা বলো!”

আমি ফিচেল গলায় বললাম,
–“বলুন?”

–“লোডশেডিং আমার কথাতেই হয়েছে। আমার ইচ্ছে ছিল লিফটে তোমার সাথে…”
কথাটা সম্পূর্ণ না করেই দুষ্টু হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আয়াশ। আর এক মূহুর্তও না দাঁড়িয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন। আমি হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এসব অদ্ভুত কান্ড কেউ করে?

রান্না ঘরে চলে এলাম আমি। ফুলকি পানি গরম করতে বসিয়েছে। ওকে বললাম,
–“আমি আজ কফি করি? অন্ধ থাকতে তো করতে পারতাম না।”

–“কি…কিন্তু স্যার!”

–“কিচ্ছু বলবে না।”

ফুলকি মৃদু হেঁসে সরে যায়। আমি কফি বানাতে শুরু করি। অনেকদিন পর রান্নার কাজকর্ম করছি। ভালোই লাগছে। কফি বানানো শেষে কাপে ঢেলে রুমের দিকে হাঁটা দিই আমি। দরজার কাছে আসতেই আয়াশের উত্তেজিত কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে যাই। মনে হচ্ছে উনি ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছেন। না চাইতেও অনেক কিছু শুনে ফেলি আমি।

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here