মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৩৬

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৩৬
#আনিশা_সাবিহা

চারিদিকটা যখন অন্ধকার হয়ে আসতে শুরু করল তখনই মনে পড়ল আয়াশের কাছে যেতে হবে আমায়। কারণ এই মূহুর্তে আমি ছাড়া উনার তো কেউ নেই। কিন্তু আয়াশ কোন হসপিটালে? সেটা তো ওই পরিচিত লোকটা বলল না! এখন কোথায় খুঁজব উনাকে? আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে নিচে পড়ে থাকা ফোনের দিকে তাকালাম। ঝড়ের গতিতে ফোনটা উঠিয়ে দেখলাম ফোনের স্ক্রিন অনেকটা ফেটে গিয়েছে। আবারও আয়াশের নম্বরে কল করা জরুরি। কিন্তু তার আগেই মেসেজ টোনটা বেজে ওঠায় সেটাই চেক করলাম আমি। ভাঙা স্ক্রিনে টাচ করতে গিয়ে একটা আঙ্গুল কেটে গেলেও সেদিকে দৃষ্টিপাত করার সময় নেই। আমার সমস্ত শরীরজুড়ে এতোদিন যাকে লুকিয়ে ভালোবেসেছি তাকে হারানোর ভয় বিরাজ করছে।

মেসেজ অন করতে গিয়েই দেখলাম আয়াশের নম্বর থেকেই মেসেজ। হসপিটালের ঠিকানা আর নাম ভাসছে স্ক্রিনে। হয়ত ওই লোকটাই মেসেজটা সেন্ড করেছে। গুমরে গুমরে কাঁদছি আর ঠিকানা দেখছি আমি। কাঁপতে কাঁপতে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু সেখানে তেমন ক্যাশ নেই। দেরি না করে এটিএম কার্ড একপ্রকার ছুটে বেরিয়ে গেলাম।

হসপিটালের সামনে এসে নেমে পড়ি আমি। আশ্চর্যজনক কথা হচ্ছে হসপিটালটা অন্য শহরে। আমরা যেখানে থাকি সেখান থেকে বেশ দূরে। আয়াশ এতো দূরে কি করতে এসেছিলেন?
এসব ভাবনাচিন্তা করতে করতে ভেতরে ঢুকে আসি আমি। রিসেপশনে আয়াশের কথা জিজ্ঞেস করতেই আমাকে সেকেন্ড ফ্লোরে দেখিয়ে দেওয়া হয়। আমি দ্রুত উঠে যাই সেকেন্ড ফ্লোরে। ফ্লোরের শেষ মাথার কেবিনে এসে উঁকি মারতেই লোম শিউরে ওঠে আমার। দরজার কাঁচের অংশ দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ফুটে রয়েছে রক্তে মাখা এক চোখমুখ। কপাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। পেটের ডান পাশ থেকে গলগল করে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। নার্স তাড়াহুড়ো করে প্রাথমিক চিকিৎসা করে যাচ্ছে।

বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে যাচ্ছেন আয়াশ। নার্স অক্সিজেন মাস্ক পরাতেই শান্ত হলেন। এতো এতো রক্ত দেখে মাথাটা ভনভন করে উঠল আমার। রক্তে আমার ভয়াবহ ফোবিয়া। মাথা ঘুরে আসায় দরজা ধরে ফেললাম। নিজেকে সামলে উঠতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। তড়িৎ গতিতে আয়াশকে রাখা বেডের সামনে গিয়ে পড়লাম আমি। চোখ তুলে তাকাতে পারছি না রক্তের কারণে। এতোটাই বাজেভাবে আঘাত করা হয়েছে উনাকে। কাঁপা কাঁপা হাতে উনার রক্তাক্ত হাতটা ধরতেই নার্স প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আমার দিকে।

–“কে আপনি? পেশেন্টের বাড়ির লোক?”

–“হ্যাঁ। উনার কি হয়েছে? উনি ঠিক হয়ে যাবেন না?”

কাঁদতে কাঁদতে হম্বিতম্বি করে প্রশ্ন করি আমি। নার্স বেশ সিরিয়াস হয়ে বলেন,
–“উনার পায়ে গুলি করা হয়েছে। সেই সাথে পেটের ডান সাইডে দুই-তিন বার ছুড়ি দিয়ে স্টেপ করে মারা হয়েছে। আর চোখেমুখে মারার আঘাতের চিহ্ন তো দেখাই যাচ্ছে। সব মিলিয়ে একবারে ক্রিটিকাল অবস্থা। বর্তমানে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা করা হচ্ছে উনার। তাড়াতাড়ি অপারেশন না করতে পারলে উনি মারা যাবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই।”

–“তাহলে কেন এসব করে সময় নষ্ট করছেন? অপারেশন শুরু করুন না! প্লিজ।”

–“এর জন্য টাকা জমা দিতে হবে। সেই সঙ্গে হসপিটালের ফর্মালিটিস পূরণ করতে হবে। তাড়াতাড়ি টাকা জমা দিন। নয়ত হসপিটাল থেকে অপারেশন করার অনুমতি দেবে না। দ্রুত টাকার ব্যবস্থা করুন।”

–“হ্যাঁ আমি এক্ষুনি যাচ্ছি। আপনারা অপারেশন শুরু করুন প্লিজ।”

বলেই আয়াশের রক্তমাখা চোখমুখ দেখে আবারও চোখ বন্ধ করে নিলাম। এক ভয়ানক দৃশ্য। আমার ভেতরটা কাঁপছে।

–“আয়াশ? আপনি তো আমার থেকে দূরে যাবেন না তাই না? আপনি তো বলেছিলেন যে আপনি যদি মারা যান তাহলে আমায় খুন করে তবেই মারা যাবেন। তার আগে আপনার কিছু হবে না তাই না? আপনি উঠে নিজের চোটপাট আমার ওপর দেখাবেন না? আমি আপনার সব অন্যায় আবদার মেনে নিতে রাজি আছি।”

বলেই আয়াশের হাত কপালে ঠেকিয়ে হু হু করে কাঁদতে শুরু করলাম। আয়াশ কোনো উত্তর দিচ্ছেন না। অথচ উনার মুখ থেকে একটা শব্দ শোনার জন্য চাতক পাখির ন্যায় বসে আছি। আমি কাঁদছি আর কষ্ট পাচ্ছি উনি কি দেখতে পাচ্ছেন না? অনেক কষ্টে হাতটা ছাড়লাম আমি। এটিএম থেকে টাকা তোলা প্রয়োজন। এই ভেবেই কেবিন থেকে বের হতে উদ্যত হলাম আমি। কিন্তু দুই চোখ একজন অপরিচিত পুরুষকে দেখে থেমে গেল। পুরুষটি এগিয়ে আসতেই আমি একটু পিছিয়ে গেলাম ইতস্তত বোধ করে। ব্যক্তিটি মৃদু সুরে বললেন,
–“ভয় পাবেন না। আমিই সে যে আপনাকে ফোন করে আপনার হাজবেন্ডের এই খবর দিয়েছে।”

–“উনাকে কোথায় পেয়েছিলেন আপনি?”

–“জঙ্গলের ধারে। সন্ধ্যায় সেদিকে কেউ যায় না। আজ আমার কাজ থেকে ফিরতে দেরি হয়েছিল। উনাকে দেখে নিয়ে আসি এখানে।”

মনে বেশ কিছু প্রশ্ন জাগল। আয়াশ এতোদূর নিজের অফিস ছেড়ে কি করতে এসেছিলেন? কে উনাকে এভাবে আঘাত করে ফেলে চলে গেল? আর কেনই বা মারল? প্রশ্ন অনেক। কিন্তু উত্তর নেই। খোঁজার সময় নেই আমার। লোকটা আবারও কথা বলতে শুরু করলে উনার দিকে তাকাই।
–“গুলি লেগেছে তাই পুলিশ কেস হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ এসে ইনকয়ারি করে গেছে। উনি লইয়ার তাই পুলিশেরা ধারণা করেছে উনাকে কোনো বেশ পুরোনো শত্রু আঘাত করেছেন।”

–“ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি নিজে থেকে এন ঝামেলাই জড়িয়ে পরেছেন। আপনাকে আর কষ্ট দেব না। আপনি আসতে পারেন। আমাকেও যেতে হবে।”

বলেই পাশ কাটাতে নিলে আচমকা লোকটা বলে ওঠেন,
–“আমি কি আপনার কোনো কাজে আসতে পারি? মানে আমি কি হেল্প করতে পারি কোনো?”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
–“না। আপনি বরং আপনার কাজে যান। এতোটা উপকার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।”

–“কিন্তু আমার মনে হয় না যে আপনি একা একটা মেয়ে নিশ্চয় এটিএম বা ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যাচ্ছেন। আর অনেকগুলো টাকা লাগবে নিশ্চয়! আর একা মেয়ে মানুষ টাকা নিয়ে আসবেন এর মধ্যে বিপদ হতে পারে। আমি আপনার সঙ্গে যেতে চাই।”

আমি আপত্তি করলেও মেনে গেলাম। লোকটার কথা ভুলও নয়। আসলেই এতো টাকা নিয়ে একা আসা ঠিক হবে না। তাই আর মানা করলাম না। আমরা বেরিয়ে পড়লাম।

এটিএমের সামনে এসে দাঁড়ালাম। লোকটা বেশ দূরে দাঁড়িয়ে আছেন যাতে কার্ডের কোড না দেখতে পান। বেশ অনেকক্ষণ পর আমার পালা আসতেই টাকা না পেয়ে চমকে গেলাম। জানতে পারলাম কার্ড ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। তৎক্ষনাৎ মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। কারণ জানতে চাওয়ায় ব্যাংকে গেলাম আমরা। ব্যাংক থেকে জানানো হয় আয়াশ রায়হানে সব এটিএম কার্ড ও টাকা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। কারণটা হচ্ছে, অভিযোগ করা হয়েছে ওসব কালো টাকা। অবৈধ ব্যবসা করে নাকি টাকা নিয়েছেন সব। সেটা সলভ না হওয়া অবধি একটা টাকাও ব্যাংক বা এটিএম থেকে তোলা যাবে না।

–“টাকাটা আমার দরকার! প্লিজ। আমার খুব দরকার।”

–“সরি ম্যাম। এই মূহুর্তে টাকা দেওয়া যাবে না। কোনোক্রমেই না। টাকাগুলো বৈধ না অবৈধ সেটা প্রমাণ না হওয়া অবধি একটা টাকাও দিতে পারব না। তাহলে আমাদের নামে কেস হয়ে যেতে পারে।”

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কয়েকবার ঢোক গিলে নিলাম। চোখজোড়া পানিতে টলমল করছে। পানির কারণে স্পষ্ট কিচ্ছু দেখতে পারছি না। চোখের সামনে শুধু ভাসছে আয়াশের রক্তাক্ত দেহ। যেখান থেকে শুধু রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। একসময় হাতজোড় করে ফেললাম আমি।
–“টাকাটা না পেলে উনি বাঁচবেন না। প্লিজ দিয়ে দিন।”

–“সরি। এতে আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা নিরুপায়।”

আরো অনেকবার বলার পরেও নির্দয়ের মতো না করে দিল তারা। শেষমেশ কষ্ট লুকিয়ে রাখতে না পেরে কেঁদে দিলাম আমি। আমার শক্তি ফুরিয়ে আসছে। কাঁদতেও যে শক্তির দরকার তাও যেন পাচ্ছি না। মুখে হাত দিয়ে চাপা কান্না করে চলেছি। একসময় ওই অপরিচিত পুরুষটি আমার পাশে এসে দাঁড়ান। গম্ভীর গলায় বলেন,
–“আমি আপনার অবস্থা বুঝতে পারছি। পারলে আপনাকে টাকা দিয়ে হেল্প করতাম। কিন্তু আমিও অন্তত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। এতো টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই আমার।”

–“আ…আপনি যে এই সময় আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এটাই অনেক। এই যু…যুগে এসব কয়জন করে? আমি শুধু চাই উনি সুস্থ হয়ে উঠুক। ব্যাস…!”

চাপা সুরে বললাম আমি। সেটা শুনে উনি একটু ভেবে বলেন,
–“এমন কেউ নেই যে আপনাকে এই সময় হেল্প করতে পারে?”

কান্না থামল আমার। মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে ভাবতে থাকলাম। মা-বাবা কোনোমতেই এতো টাকা দিতে পারবে না। আর জুহায়ের তো শহরেই নেই। এতোক্ষণে বিদেশ চলে গেছে হয়ত। ওর সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই আমার। বিদেশে তো দেশের ফোন নম্বর দিয়ে কাজ হবে না। এখন কোনদিকে যাব ভাবতেই দিশেহারা হয়ে পড়লাম। হাঁটু গেঁড়ে সেখানেই বসে গেলাম। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এই পানি যত্ন সহকারে মুছে দেওয়ার মানুষটা আজ আমার পাশে নেই!

মাথায় আয়াশের বাবার কথা আসতেই উঠে দাঁড়ালাম। ওই বাড়িতে গেলে নিশ্চয় আয়াশের বাবা অন্তত মুখ ঘুরিয়ে থাকবেন না! যতই হোক নিজের রক্তের টান আলাদা হয়। তাড়াহুড়ো করে বললাম,
–“আয়াশের বাবা! উনার কাছে যেতে হবে। উনি ছেলের কথা শুনে নিশ্চয় কিছু করবেন।”

–“তাহলে দেরি না করে যাওয়া যাক?”
আমি মাথা নাড়ালাম। দ্রুত বেরিয়ে এলাম আমরা। আশার কিঞ্চিৎ আলো পেলাম। কিন্তু এসব কিছু বেশ ঘোলাটে লাগছে। প্রথমে আয়াশকে এভাবে আঘাত করা আর তারপর টাকার একাউন্ট ব্লক! সব মিলিয়ে বিষয়টা বড্ড জটিল। যেন কেউ ইচ্ছে করে দাবার গুটি সাজিয়ে খেলে যাচ্ছে। কিন্তু কে?

রাত প্রায় নয়টা কি দশটা! রাস্তার মেইন রোড দিয়ে হাঁটছি। পা চলছে না আমার। নিজের মধ্যে নেই আমি। মনে হচ্ছে আমার সব শেষ। এতোটা অসহায় মনে হয়নি কখনো নিজেকে। চোখের সামনে কি যাকে এতোদিন ধরে অগোচরে ভালোবেসেছি তাকে খোয়াতে হবে? ভাবতেই মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল। ওই বাড়িতে গিয়ে যতটুকু আশার আলোর দেখা পেয়েছিলাম সেটা নিভে গেল। আয়াশের বাবা নেই। আর উনার সৎমা প্রথমে দরজায় খুলতে রাজি হননি। একসময় যখন দরজা খোলেন আয়াশের অবস্থার কথা খুলে বললে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। বরং উল্টে বলেছেন, ‘তাতে আমি কি করব? যেই ছেলেটা আমায় দুইচোখে দেখতে পারে না তাকে ঠিক করলে আবার আমাকে হামলা করবে না তার কি মানে? নিজের ছেলে বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম তাকে। কিন্তু কি করল সে? দরকার নেই আমার এমন ছেলের।’

এতটুকু বলেই মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন উনি। জানি না উনি কেমন মহিলা! আমার জানামতে, নারী মানেই কোমলতার কেন্দ্রবিন্দু! তাদের মাঝে মমতায় ভরপুর। জন্ম দেওয়া মা হয়ত নন কিন্তু মা তো! এতটা নির্দয় না হলেও পারতেন।

চেয়ারে আয়েশের ভঙ্গিতে বসে আছেন মিসেস. মালিহা। চোখজোড়া উনার বন্ধ। পায়ে পা তুলে হাতে ফোন নিয়ে রয়েছেন। একটা সময় চোখ খুললেন উনি। ফোনের স্ক্রিন অন করে কারো নম্বর ডায়াল করে ফোনটা কানের কাছে ধরলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে রিসিভড হলো ফোন।

–“হ্যালো! তুমি কি রেডি আছো?”

–“হ্যাঁ। আমরা রেডি।”

–“তাহলে আর ওয়েট করে কাজ নেই। প্লান অনুযায়ী সবটা হওয়া চাই। একটু আগেই আনিশা আমার বাড়ি থেকে চলে গেছে।”

ওপাশ থেকে উৎফুল্ল কন্ঠ ভেসে এলো।
–“সত্যি? কিন্তু আয়াশকে আধমরা রাখার কি মানে? মারলেন না আবার বাঁচিয়ে রাখছেন না! আবার একাউন্ট কৌশলে ব্লক করে দিয়েছেন। কেন?”

–“যাতে আনিশা হেনস্তা হয়। সিম্পল। আয়াশকে তো বাঁচাতেই হবে। কিন্তু আনিশা যাওয়ার পরে। এতোসব সম্পত্তির একমাত্র মালিক আয়াশ। সেকারণে ওকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তোমরা নিজেদের কাজ করো।”

বলেই ফোন কেটে দেন মিসেস. মালিহা। পৈশাচিক হাসি দিয়ে আবারও চেয়ারে ঠেস দিয়ে চোখ বুঁজে নেন। আনিশা নামক মেয়েটার জন্য উনি খুব অপমানিত হয়েছেন। যা ভোলার মতো নয়। জেল পর্যন্ত ঢুকতে হয়েছে উনাকে। এখন এসবের দাম আনিশা ও আয়াশ দুজনকেই দিতে হবে। সেকারণেই তো সাহাদ সাহেবকেও কৌশলে বাইরে পাঠিয়েছেন!

রাস্তায় বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাস্তায় চায়ের টংয়ের ছাউনিতে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর ওই লোকটা। বৃষ্টি হচ্ছে। আমি যেতে চেয়েও পারছি না। উপায় খুঁজছি টাকা জোগাড় করার। মনে পড়ল ফোনের কথা। অনেক খুঁজে আয়াশের বাবার নম্বর সেভ করেছিলাম। দ্রুত হাতের ফোনটা নিয়ে নম্বর খুঁজতে লেগে গেলাম। কিন্তু আচমকা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার সামনে একটা গাড়ি দাঁড় করাতেই হকচকিয়ে উঠে ফোনটা পড়ে গেল। আমি রাগ নিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই গাড়ির দরজা খুলে গেল। একটা পুরো ছেলেদের দলকে দেখা যাচ্ছে! দেখে সুবিধারও মনে হচ্ছে না।

ভয়ে পিছিয়ে এসে ঢোক গিলে পেছনে ওই সাহায্য করা ব্যক্তির দিকে তাকালাম। এবার লোকটার দৃষ্টিও যেন পাল্টে গেছে। অজানা আশংকায় ভয়ে গুটিশুটি হয়ে দাঁড়ালাম। পিছিয়ে যাওয়ার আগেই আমার মুখের রুমাল সামনে রুমাল ধরা হলো। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে রুমালটা ওই সাহায্য করার লোকটাই চেপে ধরেছে। ধস্তাধস্তির পর্যায়ে চোখ বুঁজে আসতে লাগল আমার। গায়ের শক্তি কমে এলো। নিস্তেজ হয়ে পড়লাম।

চোখটা যখন খুলি তখন চারিদিকে সবটা ঝাপসা! মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে হাত দিয়ে চোখে হাত দেওয়ার চেষ্টা করতেই হাত উঠাতে পারলাম না। মাথা নিচু করে তাকাতেই দেখলাম আমার হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা। আঁতকে উঠল। এক পাহাড় সমান ভয় ছেয়ে গেল। হার হিম হয়ে গেল জ্ঞান হারাবার আগের কথা ভাবতেই। এতোটা বিশ্বাসঘাতক হয় লোকেরা? যাকে বিশ্বাস করে সাহায্য নিতে লাগলাম সে কিনা এমন ধোঁকাবাজ বের হলো?

–“কেউ আছেন? কেন আমায় এখানে ধরে আনা হয়েছে?”

চিৎকার করে বললাম কিন্তু আমার প্রতিধ্বনি ছাড়া কিছুই কানে এলো না। মাথার ওপর টিমটিমে লাইট জলছে। বারংবার চিৎকার দেওয়া সত্ত্বেও বিশেষ লাভ হলো না। আয়াশের কথা মাথায় আসতেই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। উনি কেমন আছেন? অপারেশন শুরু হয়নি? না হওয়ার কথা। তাহলে উনার অবস্থা কেমন?

এসব ভাবতে ভাবতে যখন অস্থির হয়ে পড়লাম তখন দরজা খোলার শব্দে কিঞ্চিৎ আলো ভেতরে প্রবেশ করল। ভেতরে ঢুকে এলো কোনো পুরুষ। গলা শুকিয়ে গেল ভয়ে। তবুও চিৎকার করে বললাম,
–“কে আপনি? কি উদ্দেশ্য আপনার?”

–“এটা আমি। তোমার ভালোবাসা।”

ভ্রুকুটি কুঁচকে এলো। আলোতে ঝলমলিয়ে উঠল একটা পরিচিত মুখ। যা দেখে আমি বাকরূদ্ধ হয়ে গেলাম। জোর করে মুখ দিয়ে বলার চেষ্টা করলাম,
–“নীলাদ্র তুমি?”

–“ইয়েস। আমি। খুশি হওনি?”

বিদঘুটে হেঁসে বলে নীলাদ্র। হতভম্ব হয়ে কোন প্রশ্ন করব বুঝছি না। কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,
–“আয়াশের অবস্থা ভালো নয় নীলাদ্র। কেন এমন বাজে কাজ করছো আমার সাথে? কেন এভাবে কিডন্যাপারের মতো তুলে আনলে? কি চাইছো তুমি? একবছর আগে তো তুমি বলেছিলে যে তুমি চলে যাবে আমার জীবন থেকে। তাহলে কেন এমন আচরণ করছো?”

–“তেমন কিছুই না। তোমায় বিক্রি করতে চাই আমি সুন্দরী!”

চলবে….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here