মনের_মতো_তুই #পর্বঃ১০ #লেখিকাঃদিশা মনি

#মনের_মতো_তুই
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা মনি

আদিত্য আমায় বলল,
‘দুঃসংবাদ হলো এটাই খুব শীঘ্রই হয়তো তোমায় আমার বউ হতে হবে।’

আদিত্যর কথা শুনে স্বস্তিও পাই আবার রাগও হয়।এই ছেলেটা এভাবে ভয় দেখালো কেন? আমি ভেবেছিলাম কিনা কি খারাপ হয়।

কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলি,
‘আমি তোমায় বিয়ে করব না।’

‘কেন ধ্রুবকে বিয়ে করতে চাও?’

এবার তো মাথাটা আরো বেশি গরম হয়ে গেল।আমি রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নেই।আদিত্য আমার রাগ ভাঙানোর জন্য বলল,
‘এই শোন অনেক কষ্ট করে তোমায় পেয়েছি।ঐসব ধ্রুব ট্রুবর কোন বেল নাই।তোমাকে আমারই বউ হতে হবে।’

আমি অভিমানের সুরে বলি,
‘এরকম মজা করার কোন মানে হয়না।আর কখনো আমার সাথে এমন মজা করবে না।’

আদিত্যঃ’ওকে করবোনা।’

‘প্রমিস?’

‘করলাম প্রমিস।’

‘আচ্ছা একটা কথা বলব?’

‘হ্যা বলো।’

‘তোমার আব্বু আম্মুদ মধ্যে কি সমস্যা আদিত্য? আমি দেখালাম সেদিন ওনাদের ঝগড়া করতে।আমার খুব ভালো লাগত যদি তোমার আব্বু আম্মু সবাই মিলে এক হয়ে আমাদের বিয়ের আয়োজন করে তাহলে ভালো লাগত।’

‘আসলে হিয়া এই সমস্যাটা অনেক পুরাতন।আমার আম্মু চেয়েছিল নানুর ব্যবসার ভাগ নিতে।সেই কারণে মামাদের সাথে অনেক ঝামেলা হয়।আব্বু এসব ঝামেলার মধ্যে পড়তে চাইছিলই না।কিন্তু আম্মু তার হক আদায়ের জন্য মামাদের নামে মামলা পর্যন্ত করে।এভাবে আব্বুর সাথে আম্মুর দূরত্ব তৈরি হয়।তখন থেকেই তারা আলাদা থাকে।তবে তাদের ডিভোর্স হয়নি।’

‘তাহলে তো ওনাদের এখনো একসাথে হওয়ার উপায় আছে।’

‘অসম্ভব ওরা নিজেদের ইগো ধরে রেখেছে।কেউ কাউকে এক চুল ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়।’

‘তুমি শুধু দেখে যাও আমি কি করি।’

১৯.
ভার্সিটিতে পৌছে গিয়ে তৃপ্তির কাছে যাই।তৃপ্তি আমায় বলে,
‘চল হিয়া।আজ হিমেল আমায় দেখা করতে ডেকেছে।তুই প্লিজ আমার সাথে চল, আমার যে খুব নার্ভাস লাগছে?’

আমি মাথায় হাত দিয়ে বলি,
‘তুই কি পাগল নাকি? তোরা ডেটে যাবি আর আমি তোদের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হবো।’

‘আমি কিছু জানতে চাইনা তুই শুধু আমার সাথে চল।’

তৃপ্তির জেদের কাছে আমায় হার মানতেই হয়।আমি চলে গেলাম ওর সাথে।একটা রেস্টুরেন্টের সামনে যাওয়ার পর আমরা দেখি একটি টেবিলে বসে আছে হিমেল।

হিমেলকে দেখেই তৃপ্তি আমার কানে ফিসফিস করে বলে,
‘দেখেছিস কত হ্যান্ডসাম।আমি তো ভাবতেই পারছি না এটা আমার বয়ফ্রেন্ড হবে।’

তৃপ্তি গিয়ে হিমেলের পাশে বসে।আমি অন্য টেবিলে বসে পরি।

তৃপ্তিঃহ্যালো মিস্টার।

হিমেলঃহাই।আসলে আপনার সাথে খুব জরুরি কথা ছিল।

তৃপ্তিঃসব কথা শুনব আগে অর্ডারটা করে নেই।

হিমেলঃআচ্ছা লিলির সম্পর্কে আমাকে একটু তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন।

তৃপ্তিঃলিলি! আপনি হঠাৎ ওর কথা কেন জানতে চাইছেন?

হিমেলঃএকচুয়ালি আমি লিলিকে পছন্দ করি।বাট ভার্সিটিতে ওর সম্পর্কে যা শুনেছি ও খুব রাগী,খিটখিটে।তাই আমি ওর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার সাহস পাইনি।যদি ব্লক করে দেয় সেই ভয়ে।তাই ভাবলাম ওর কোন বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করা যায়।আপনি আমায় সাহায্য করতে পারবেন।

পাশের টেবিল থেকে ওদের সমস্ত কথোপকথন আমি শুনে ফেলি।এই হিমেলের বাচ্চার উপর তো আমার নিজেরই খুব রাগ হচ্ছে।কিন্তু তৃপ্তি দেখলাম বেশ শান্তভাবেই বলল,
‘করব সাহায্য।আমিও চাই ডাইনি আই’মিন লিলি আপনার মতো কোন ভালো ছেলের সাথে প্রেম করুক।আপনি আপনার ফোন নম্বরটা দিন আমি লিলির সাথে আপনার যোগাযোগ করিয়ে দেব।’

তৃপ্তির এই শান্ত ব্যবহারে আমি বেশ অবাক হয়।হিমেলের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তৃপ্তি বেরিয়ে আসে।আমি যাওয়ার সময় তৃপ্তিকে বলি,
‘ছেলেটাকে কসি’য়ে একটা থা’প্পর মা’রতে পারলি না? তোকে এভাবে ঠকালো আর তুই নাচতে নাচতে সাহায্য করতে চলে গেলি।’

‘আরে শান্ত হও তুই কি লিলির মতো ডাইনি হয়ে গেলি? ছেলেটাকে বেশ ভালো মনে হলো।তাছাড়া ও তো কখনো আমায় নিজের মুখে ভালোবাসার কথা বলেনি।আমিই ভুল ভেবেছিলাম।আমার বোঝা উচিৎ ছিল আমার মতো মোটা মেয়েকে কোন হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করতেই পারেনা।’

আমি তৃপ্তিকে ধমক দিয়ে বলি,
‘চুপ কর।এরকম কথা বলিস না।দেখবি তোর যে বর হবে না সে খুব হ্যান্ডসাম হবে।’

তৃপ্তি সামনে তাকিয়ে বলে,
‘ঐ ছেলেটার মতো হ্যান্ডসাম হবে?’

আমি সামনে তাকিয়ে দেখি ধ্রুব এসেছে আর তৃপ্তি ধ্রুবকে দেখিয়েই এই কথাটা বলল।ধ্রুব এগিয়ে এসে বলে,
‘কিরে হিয়া তুই এখানে?’

‘হ্যা এখানে একটু এসেছিলাম।’

‘তোর পাশে এই সুন্দরী মেয়েটা কে?’

ধ্রুবর কথাটা শুনে তৃপ্তির মুখে হাসির দেখা ফেলে।তৃপ্তি নিজেই আগ বাড়িয়ে বলে,
‘হাই আ’ম তৃপ্তি হোসাইন।’

এরমধ্যে আদিত্য আমায় ফোন করে ওর বাড়িতে যেতে বলে।আমি তাড়াহুড়ো করে চলে যাই।ধ্রুব আর তৃপ্তি ওখানেই ছিল।আমি ধ্রুবকে বলে যাই তৃপ্তিকে এগিয়ে দিয়ে আসতে।

২০.
আদিত্যর বাড়িতে ওর মা বসে আছে।আমি আদিত্যর বাবাকেও ডাকি।সামনাসামনি হতেই তারা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

আদিত্য তখন এগিয়ে গিয়ে বলে,
‘প্লিয তোমরা এবার স্বাভাবিক হও।সামনে আমাদের বিয়ে।আমরা অত আশা নিয়ে আছি তোমরা আমাদের বিয়েতে অংশগ্রহণ করবে।আমাদের দোয়া করবে আর তোমরা কিভাবে এভাবে আলাদা হয়ে আছ।’

রুহান স্যার বলেন,
‘আমি অনেক আগেই সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিতে চেয়েছি কিন্তু অদিতিই নিজের ইগো বজায় রেখেছে।’

‘এখন তো আমাকেই সব দোষ দেবে।আর তুমি যেন আমায় কি বলেছ? আমি লোভী আমার খুব লোভ।আমার মতো লোভী মেয়েকে বিয়ে করে তোমার পাপ হয়েছে তখন মনে ছিলনা?’

আমি এবার এগিয়ে গিয়ে বলি,
‘সবার মাঝেই ঝামেলা হয় আপনারা ঝামেলা মিটিয়ে নিন।আমরা একটি সম্পূর্ণ পরিবার চাই।’

আদিত্যর আব্বু-আম্মু আজ অনেকদিন পর ঝামেলা মিটিয়ে নেয়।আমার তো খুব ভাল লাগছিল।

রুহান স্যার বলে,
‘আজ তোমাদের কথা ভেবে আমরা আমাদের এতদিনের ঝামেলা শেষ করলাম এবার তোমরাও বিয়ে করে নাও।হিয়া তোমার মা-বাবার সাথে তো এখন আমায় যোগাযোগ করতে হবে।আমি চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাদের বিয়ে দিতে।’

আমি আবার লজ্জায় পড়ে যাই।রুহান স্যার আমার কাছ থেকে আব্বুর ফোন নাম্বার নিয়ে তাদের সাথে আমাদের বিয়ে বিষয়ে কথা বলে।তারপর বলেন, আগামী মাসেই ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে দিতে চাই।

আদিত্য আমার কানে কানে বলে,
‘আর মাত্র কয়টা দিন।তারপর পুরোদমে রোম্যান্স শুরু হবে।’

আমিও বলি,
‘আমি হিয়া খানম।এত সহজে আমায় তুমি পাবে না।আমাকে পাওয়ার জন্য একটু তো কষ্ট করতেই হবে।’

‘এখন কোন কষ্ট না আর মাত্র ১ মাস।এই ১ মাস পরই তুমি আমার হবে।আর কোন বাধা থাকবে না।’
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here