মনের_মতো_তুই #পর্বঃ২ #লেখিকাঃদিশা মনি

#মনের_মতো_তুই
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা মনি

একটু এগিয়ে যেতেই আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহসান ভাই।উনি আমার বাবার বন্ধুর ছেলে।তার থেকে বড় পরিচয় উনি আমাদের ভার্সিটির একজন লেকচারার।ওনার ভরসাতেই বাবা আমাকে এই ভার্সিটিতে পাঠিয়েছেন।আমার তো কোন বড় ভাই নেই শুধু একটা ছোট বোন আছে।আহসান ভাইকে বাবা ছোটবেলা থেকে নিজের ছেলের মতোই ট্রিট করে।আর আহসান ভাইও আমার উপর অধিকার ফলানোর চেষ্টা করে।

আহসান ভাইকে আমার খুব একটা ভালো লাগে না।সকাল সকাল কথা শুনতে চাইনা।আমি লিলির হাত ধরে এগিয়ে যেতে থাকি।আহসান ভাই আমায় থামিয়ে বলে,
‘হিয়া তুই এটা কেমন ড্রেস পড়েছিস।খুব দামী মনে হচ্ছে।এত দামী ড্রেস কোথায় পেয়েছিস?’

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
‘এটা তো আমি নিজেই কিনেছি।এটা মোটেই তেমন দামী নয়।’

‘আমাকে কি গাধা পেয়েছিস? আমি কাল তো তোর জন্য এই ড্রেসটাই,,,’

কিছু বলতে গিয়ে আহসান ভাই থেমে গেল।তারপর আবার রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
‘প্রেম করছিস তাইনা? নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ড গিফট করেছে।আঙ্কেলকে কি জানাব?’

আহসান ভাইয়ের কথা শুনে খুব ভয় পেয়ে গেলাম।বাবা এইসব প্রেম ভালোবাসা একদম পছন্দ করেনা।বাবার জন্যই স্কুল,কলেজে কোন প্রেম করতে পারিনি।ভার্সিটিতে এসে যে একটু প্রেম করব সেই সুযোগটাও দিলো না।এই বজ্জাত আহসান ভাইয়ের ভার্সিটিতে পাঠিয়ে দিল।আমি অনুরোধের সুরে বললাম,
‘প্লিজ বাবাকে কিছু বলোনা।এই ড্রেসটা তো লিলি আমায় গিফট করেছে।কিরে লিলি বল।’

আমি লিলিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলাম।লিলি সেটা বুঝতে পেরে বলে,
‘জ্বি, স্যার আমিই হিয়াকে ড্রেসটা কিনে দিয়েছি।’

আহসান ভাই আর কিছু বললেন না।কিছুক্ষণ আমার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে থাকলেন।তারপর কি’লার স্মাইল দিয়ে চলে গেলেন।

লিলি আমার কানে ফিসফিস করে বলল,
‘আহসান স্যারকে কিন্তু আজ খুব হ্যান্ডসাম লাগছিল।ব্ল্যাক শার্ট,ব্লু জিন্স উফ আমি তো পাগলই হয়ে যাবো।তুই আহসান স্যারকে তো নিজের লাইফ পার্টনার বানাতে পারিস।তা না কোথাকার কোন রাজপুত্র,,,’

লিলির কথা পুরোটা না শুনেই আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলি,
‘শোন তোর যদি আহসান ভাইকে পছন্দ হয় তাহলে তুই গিয়ে প্রপোজ কর।আমায় একদম বলবি না।দেখতে হ্যান্ডসাম হলেই যে আমি কাউকে পছন্দ করব সেটা না।আমি তো আমার মনের মতো কাউকে চাই।আর এতদিনে তাকে পেয়েও গেছি।আরেকবার শুধু তার দেখা পাই।’

লিলি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
‘এই জন্মে আর তোর রাজপুত্রকে দেখতে পারবি না।দেখিস শেষে আহসান স্যারের বউ হবি তুই।’

লিলির মাথায় একটা গাট্টা মে’রে বলি,
‘যদি বিয়ে করি আমার রাজপুত্রকেই করব।আর আহসান ভাই, উনি যদি পৃথিবীর শেষ মানুষ হয় তবুও ওনাকে বিয়ে করব না।’

৩.
লিলির সাথে কথা বলতে বলতেই ক্লাসে প্রবেশ করলাম।সবার আগেই আহসান ভাইয়ের ক্লাস।উনি আবার ইংরেজির লেকচারার।শিক্ষক হিসেবে উনি যথেষ্ট ভালো।তবে ভীষণ রাগী।তাই আমার ওনাকে একটুও ভালো লাগে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি ক্লাসে আসেন।তারপর ওনার লেকচার শুরু করেন।ক্লাস শুরুর ৫ মিনিট পর আমার আরেক বান্ধবী তৃপ্তি হাপাতে হাপাতে এসে বলে,
‘মে আই কাম ইন স্যার?’

‘নো।ঘড়িতে দেখেছ কয়টা বাজে? তুমি পুরো পাঁচ মিনিট লেইট।আর আহসান রহমান কতট পাংচুয়াল সবাই জানে।যার মধ্যে সময়ের কোন হিসাব নেই তাকে আমি পছন্দ করি না।’

‘আসলে রাস্তায় খুব জ্যাম ছিল।আর মাত্র ৫ মিনিটই তো লেট হয়েছে।’

‘কিপ ইউর মাউথ শাট।৫ মিনিট মাত্র? আর ইউ ক্রেজি? ৫ মিনিট মানে জানো কি? ৩০০ সেকেন্ড।এক একটা সেকেন্ড কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানো তুমি? কোন অজুহাত চলবে না।আজ আমি কিছুতেই তোমায় ঢুকতে দেব না।যদি ক্লাস করতে চাও বাইরে দাঁড়িয়েই ক্লাস করতে হবে।নো মোর এক্সকিউজ।’

তৃপ্তির মুখের দিকে তাকাতেই বজ্জাত আহসান ভাইয়ের উপর রাগ আরো বেড়ে গেল।বেচারি কতদূর থেকে প্রতিদিন ভার্সিটি আসে।একদিন একটু লেইট হয়েছে জন্য এত কথা শোনাতে হবে।ইচ্ছে করছে আহসান ভাইয়ের মাথায় এই ঘড়িটা ছু’রে মা’রতে।এত যখন টাইম টাইম করে আজ এই টাইম দিয়েই,,,না থাক বাবা জানতে পারলে আমায় শে’ষ করে দেবে।

আমি চুপচাপ ওনার লেকচার শুনতে থাকলাম।মাঝে মাঝে উনি আড়চোখে আমায় দেখছিলেন।আমার ভীষণ বিরক্ত লাগছিল।আমি কিছু বলতেও পারছিলাম না আবার সইতেও পারছিলাম না।

ক্লাসটা শেষ হতেই হাফ ছেড়ে বাঁচি।তৃপ্তিও ভেতরে এসে আমাদের সাথেই বসে।লিলি তৃপ্তির গাল টানতে টানতে বলে,
‘কিরে মুটকি এত দেরি করলি কেন? ভুড়ি নিয়ে হাঁটতে বুঝি খুব কষ্ট হয়।’

‘এই লিলি ডাইনি।তোকে না কতবার বলেছি আমায় মুটকি বলবি না।কি এমন মোটা আমি।মাত্র ৮৫ কেজি ওজন।’

‘আগের মাসেই না তোর ওজন ৮৩ ছিল এক মাসেই ২ কেজি বাড়িয়ে নিলি।বা খুব ভালো।এভাবে ফুলতে থাক।যেদিন ফুলতে ফুলতে উড়ে যাবি সেদিন বুঝবি।’

‘হিয়া তুই চুপ করে আছিস কেন? দেখছিস না ডাইনিটা আমায় কিসব বলছে।তুই এর প্রতিবাদ করবিনা।’

আমাকে চুপ থাকতে দেখে লিলি বলে,
‘ওকে কি বলছিস? ওতো নিজের রাজপুত্রের স্বপ্নে ডুবে আছে।ডুবে ডুবে সাতার কাটতে থাকুক।’

তৃপ্তি অবাক হয়ে বলে,
‘রাজপুত্র মানে? হিয়া তুই কি নিজের মনের মানুষকে খুঁজে পেয়েছিস? বল আমাকে আমি তো ভেবে রেখেছিলাম যেদিন তুই তোর মনের মানুষকে খুঁজে পাবি সেদিন থেকে আমি ডায়েট করা শুরু করব।’

তৃপ্তি থেকেও দ্বিগুণ অবাক হয়ে আমি বলি,
‘কেন? আমার রাজপুত্রকে খুঁজে পাওয়ার সাথে তোর ডায়েটের কি সম্পর্ক?’

‘দেখ তোর চিন্তাতেই কিন্তু আমি আর লিলি এতদিন প্রেম করিনি।তুই এত সুন্দরী যে কোন ছেলে যদি আমাদের সাথে প্রেম করেও তবুও তোকে দেখে তোর পেছনে পড়ে যাবে।এখন যদি তোর বয়ফ্রেন্ড হয় তাহলে তো সেটা পারবে না।’

লিলি হোহো করে হেসে বলে,
‘তুই আর ডায়েট! আর ডায়েট করলেও আমার থেকে বেশি সুন্দরী হতে পারবি না।তোর বয়ফ্রেন্ড দুদিনেই তোর সাথে ব্রেকআপ করে আমার সাথে প্রেম করা শুরু করবে।’

তৃপ্তি এবার রেগে গিয়ে লিলির চুল টেনে ধরে।ব্যাস এদের মা’রামারি শুরু।আমি অনেক কষ্ট করে ওদের থামাই।

৪.
ভার্সিটির সব ক্লাস শেষ হওয়ার পর তৃপ্তি হঠাৎ আমাদের সাথে জেদ করতে।সামনে নাকি নতুন একটা রেস্টুরেন্ট ওপেন হয়েছে।তৃপ্তি চাইছে সেখানে যেন আমরা একবার যাই।

লিলি বলে,
‘আমি তোর মুটকি হতে চাইনা।তোর যদি খেতে ইচ্ছে করে তুই একা গিয়ে খা।খেতে খেতে হাতি হয়ে যা।’

আমিও অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলি,
‘আমার অনেক কাজ আছে।এখান থেকে ফিরে টিউশনি করাতেও যেতে হবে।’

লিলি আমার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে বলে,
‘তুই আবার কবে থেকে টিউশনি শুরু করলি? তোর বাবা তো তোকে যথেষ্ট টাকা পাঠায়।এসব টিউশনির আবার কি দরকার?’

‘বাবার উপর আর কত চাপ দেব? তাছাড়া নিজের উপার্জন করার মজাই আলাদা।’

তৃপ্তি কাচুমাচু হয়ে বলে,
‘তারমানে তোরা কেউ আমার সাথে যাবি না।ঠিক আছে তোদের সাথে আর কোনদিন কথা বলব না।আজ থেকে তোরা আর আমার বন্ধু না।’

তৃপ্তি মন খারাপ করে চলে যেতে থাকে।লিলি পিছন থেকে গিয়ে তৃপ্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘এই থাম চল আমিও যাব।আমি না গেলে তো তুই আরো বেশি করে খাবি আরো বেশি মোটা হবি।হিয়া তুইও চল।’

যদিও আমার যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না।কিন্তু ওদের খারাপ লাগবে ভেবে চলেই এলাম।

রেস্টুরেন্টটা নতুন হলেও বেশ ভালোভাবে ডেকোরেট করা।সব মিলিয়ে আমার ভালোই লাগল।ভেতরে গিয়ে বসতে একজন ওয়েটার এসে বলল,
‘ম্যাম কি অর্ডার করবেন।’

লিলি বলে,
‘আমার জন্য সালাদ,আর দুই প্লেট ফ্রাইড রাইস সাথে চিকেন তান্দুরি।’

তৃপ্তি লিলিকে বলে,
‘তুই কি সালাদ ছাড়া আর কিছু চোখে দেখিস না? এত ডায়েট করে কি হয়?’

লিলি মৃদু হেসে বলে,
‘আমি তোর মতো মুটকি হতে চাইনা।তাই কম করে খাই।’

ওদের কথার মাঝখানেই আমার চোখ আটকে যায় আমাদের পাশের টেবিলে।

ব্লু টিশার্ট,কালো জিন্স পড়ে বসে আছে আমার রাজপুত্র! এত তাড়াতাড়ি যে ওনার সাথে আবার দেখা হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি।মনে মনে তৃপ্তিকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য।

আমার খুব ইচ্ছে হলো ওনার সামনে গিয়ে সকালের ঘটনার জন্য ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওনার নাম-পরিচয় সব জেনে নেব।আমি উঠতে যাব তখনই একটি মেয়ে এসে আমার রাজপুত্রকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘হাই আদিত্য বেবি!’
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here