মনের_মতো_তুই #পর্বঃ৩

#মনের_মতো_তুই
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা মনি

আমি উঠতে যাব তখনই একটি মেয়ে এসে আমার রাজপুত্রকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘হাই আদিত্য বেবি!’

আদিত্য নামটা খুব সুন্দর কিন্তু এই মেয়েটা একেবারেই জঘন্য।আমার রাজপুত্রকে আবার ঢং করে বেবি ডাকা হচ্ছে।রাগে আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।যখনই আমি রেগে যাই তখনই পানি খাই, ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য।

তাই আদিত্য যখন ঐ মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল তখন আমি রেগে গিয়ে গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেতে থাকি।আমাকে এভাবে পানি খেতে দেখে তৃপ্তি আর লিলি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকায়।

লিলিঃ’কি হয়েছে দোস্ত এভাবে পানি খাচ্ছিস কেন? তুই কি কোন কারণে রাগ করেছিস।’

তৃপ্তিঃহ্যাঁ তাইতো।এখানকার খাবার কি তোর পছন্দ হয়নি?

আমি পানি খাওয়া শেষ করে ওদের পুরো ব্যাপারটা খুলে বলি।

লিলিঃতুই কোন চিন্তা করিসনা হিয়া।যদি ঐ আদিত্য বেটা অবিবাহিত হয় তাহলে আমি কথা দিচ্ছি ওর হাজারটা গার্লফ্রেন্ড থাকলেও তাদের সাথে ব্রেকআপ করিয়ে তোর সাথে বিয়ে দেব।কিন্তু যদি ও বিবাহিত হয় তাহলে আ’ম সরি।

তৃপ্তিঃবিবাহিত হলে অসুবিধা কি? হিয়া নাহয় ওর রাজপুত্রর দ্বিতীয় স্ত্রী হবে।রাজপুত্রর তো অনেক বউ থাকতে পারে।কিন্তু আমাদের রাজকন্যা যখন তাকে পছন্দ করেছে তাহলে তো,,,,

লিলি তৃপ্তির মাথায় একটা গাট্টা মে’রে বলে,
‘আমাদের হিয়া কেন সতীনের সাথে সংসার করবে? যদি আদিত্য বিবাহিত হয় তাহলে আমি কিছুতেই হিয়াকে কোন বিবাহিত ছেলের বউ হতে দেব না।’

আমি এবার ওদেরকে থামিয়ে বলি,
‘সবার আগে ওনার সম্পর্কে জানা দরকার।যদি উনি বিবাহিত না হন তাহলে কিন্তু আমার চান্স আছে।’

তৃপ্তিঃতুই একটা কাজ কর তুই গিয়ে তোর রাজপুত্র মানে আদিত্যর সাথে কথা বল।এই সময় ওদের সম্পর্কে কিছু জানলেও জানতে পারিস।যদি ওনার স্ত্রী হয় তাহলে অবশ্যই পরিচয় করিয়ে দেবে।

৫.
তৃপ্তির বুদ্ধিটা আমার ভালো লাগল।তাই তৃপ্তির কথামতো আমি মনে সাহস সঞ্চার করে আদিত্যর দিকে এগিয়ে যাই।আমাকে দেখে আদিত্য চিনতে পেরে বলে,
‘আপনি সেই মেয়েটা না যার সাথে সকালে আমার পরিচয় হলো।’

আমিও হ্যাঁ বলি।পাশে থাকা মেয়েটা বলে,
‘তোমরা কথা বলো আমি যাচ্ছি।আমার আবার বাড়িতে অনেক কাজ আছে আদিত্য।সুমন যদি জানতে পারে আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি তাহলে খুব রেগে যাবে।’

‘আচ্ছা তৃষা আপু তুমি যাও।আর কোন চিন্তা করোনা দেখবে সুমন একসময় সবকিছু মেনে নেবে।’

আপু! তারমানে এনারা ভাইবোন।আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।তবে এখনও চিন্তা রয়ে গেছে।উনি তো সিঙ্গেল নাও হতে পারেন।আমাকে এবার সব জানতে হবে।

তৃষা চলে যেতেই আদিত্য আমায় বসতে বলে।আমি বসার পর উনি বলেন,
‘এখানে হঠাৎ?’

‘আমি তো এখানে লাঞ্চ করতে এসেছিলাম।আর দেখুন আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল।এটা বুঝি ভাগ্য।’

‘আপনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন?’

‘জ্বি, কেন আপনি করেন না?’

‘না।আমার ভাগ্যে বিশ্বাস নেই।আমি মনে করি পৃথিবীতে যেকোন ঘটনা ঘটতে পারে।এর সাথে ভাগ্যের কোন সম্পর্ক নেই।বাই দা ওয়ে, সকালে তো আপনার নামই জানা হলোনা।আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনার নাম জানতে পারি কি?’

আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না।আমার রাজপুত্র নিজেই আমার নাম জানতে চাইছে।আমি তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই।
‘আমার নাম হিয়া খানম।এলিট ভার্সিটিতে ইংলিশ নিয়ে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ছি।’

‘এলিট ভার্সিটি?’

‘জ্বি।’

‘আমার নাম আদিত্য হোসেন।আমি এলিট ভার্সিটির উপাচার্য রুহান হোসেনের ছেলে।’

আদিত্যর কথা শুনে আমি তো পুরোই ৪৪০ ভোল্টের শক খাই।রুহান স্যারের ছেলে! রুহান স্যারের নাম শুনলে গোটা এলিট ভার্সিটির সবাই ভয়ে কাপতে থাকে।তিনি এতটাই রাগ আর বদমেজাজি যে শিক্ষক থেকে স্টুডেন্ট সবাই তার ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে।সেই রুহান স্যারের ছেলের প্রেমে পড়লাম আমি।বুঝলাম কপালে অনেক দুঃখ আছে।

আমাকে চুপ থাকতে দেখি আদিত্য বলে,
‘নিশ্চয়ই আমার বাবার নাম শুনে ভয় পাচ্ছেন।আসলে আমিও ওনাকে ভীষণ ভয় পাই।উপাচার্য হিসেবে উনি যতোটা কঠোর বাবা হিসেবে তার থেকেও বেশি কঠোর।’

এবার আমি ভয়ে ঘামতে থাকি।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।রুহান স্যারের ছেলের বউ হওয়ার সাহস আমার নেই আবার রাজপুত্রকে ভুলে যাওয়ারও উপায় নেই।

আদিত্য আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘আজ তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।আপনার কথামতে যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে আমাদের আবার দেখা হবে।’

আদিত্য চলে যেতেই তৃপ্তি আর লিলি আমার টেবিলে চলে আসে।

লিলিঃকি হয়েছে রে? তোকে এত টেন্স দেখাচ্ছে কেন? ঐ মেয়েটা কি তাহলে সত্যিই ওনার বউ ছিল।

আমি বললাম, ‘না।’

তৃপ্তিঃতাহলে এত ভয় পেয়ে আছিস কেন? এটা তো খুশির খবর।

‘খুশির খবর নাকি ছাই।আদিত্য হলো রুহান স্যারের ছেলে।’

আমার কথা শুনে ওরা দুজনেও ভয় পেয়ে যায়।লিলি বলে,
‘ভুলে যা ছেলেটাকে তুই ভুলে যা।রুহান স্যার যা রাগী।তোর বাবার থেকেও ওনাকে নিয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে।তোর বাবা যদিওবা মেনে নেয় তবুও উনি কোনদিন তোকে মানবে না।তার থেকে ভালো তুই তোর প্রথম ভালোবাসাকে এখানেই কবর দে।’

‘কবর দে বললেই কি দেওয়া যায়? আদিত্যকে আমি কিছুতেই ভুলতে পারব না।ঐ আমার মনের মতো একটা ছেলে,আমার স্বপ্নের রাজপুত্র।’

‘তাহলে ম’রার জন্য প্রস্তুত হয়ে নাও।কারণ রুহান স্যার তোমায় জ্যা’ন্ত রাখবে না।’

‘আ,আমি কাউকে ভয় পাইনা।দেখবি রুহান স্যার নিজেই আমাকে তার বাড়ির বউ করে ঘরে তুলবে।’

তৃপ্তিঃতুই একেবারে বিয়ে অব্দি চলে গেলি? মানুষ বোধহয় ঠিকই বলে প্রেমে পড়লে সবাই নির্লজ্জ হয়ে যায়।

লিলিঃএই মুটকি তুই চুপ থাকতো।হিয়া শোন তুই যা করবি আমরা সবসময় তোকে সাপোর্ট করব।কিন্তু দোস্ত একটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিস।দেখিস যাতে পরে আবার পস্তাতে না হয়।

৬.
টিউশনি শেষ করে হোস্টেলে ফিরে ফোন হাতে নিতেই দেখি আহসান ভাইয়ের ১০ টা মিস কলড।আমি খুব ভয় পেয়ে যাই।ভালোভাবেই বুঝতে পারি আজ আমাকে কপালে শনি,মঙ্গল,বুধ সব নাচবে।আমি ভয়ে কাপতে কাপতে আহসান ভাইকে কল ব্যাক করি।

কল রিসিভ করতেই আমার কানে আসে ওনার ঝাঝালো কণ্ঠস্বর।

‘কানে শুনতে পারিস না? কতবার কল দিয়েছি তোকে।এতবড় সাহয়া কোথায় পেলি আমার কল রিসিভ করার?’

‘আসলে,,আমি টিউশনি করাতে গিয়েছিলাম।তাই ফোন সাইলেন্ট করা ছিল।সরি,,,’

‘কিসের সরি? ভালো চাইলে এক্ষুণি আমার বাসায় চলে আয়।নাহলে কিন্তু,,,,’

‘এত রাতে আমি কিভাবে যাব?’

‘তুই আসবি না আমি তোর হোস্টেলে যাব?’

‘ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি।’

আমি আর বেশি কথা না বলে বেরিয়ে পড়ি।আহসান ভাই আজ খুব রেগে গেছেন।না জানি আমায় কতবড় শাস্তি দেবেন।

রাস্তায় যাওয়ার সময় আবার দেখা হয়ে গেলো আদিত্যর সাথে।উনি গাড়ি নিয়ে একটি সুপারশপ থেকে বেরনোর পর দেখতে পেলেন আমি গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি।

আদিত্য আমায় দেখে আমার কাছে এসে বলে,
‘কি ব্যাপার এত রাতে এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

আমার তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না।আমি কোন স্বপ্ন দেখছি না তো? আজ এত দুশ্চিন্তার মধ্যেও নিজের ভাগ্য নিয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে।বারবার ওনার সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাওয়ায় আমি তো পারলে এই খুশিতে ডান্স করি।

ওনাকে আমি পুরো ব্যাপারটা বললে উনি আমায় লিফট দিতে চান।আমি প্রথমে ভদ্রতা দেখিয়ে না করে দিলেও উনি একটু জোরাজোরি করতেই রাজি হয়ে গেলাম।আমার রাজপুত্রর সাথে এভাবে যাওয়ার সুযোগ কি ছাড়তে পারি?

ভেবেছিলাম সারা রাস্তায় ওনার সাথে কথা বলতে বলতে যাব।কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য সারা রাস্তায় আহসান ভাইয়ের ফোন রিসিভ করে কতদূর আছি সেটার জবাব দিতেই চলে গেলো।

গন্তব্যে পৌছাতেই আদিত্য আমায় নামিয়ে দিয়ে বলে,
‘আপনার ফোন নম্বর পাওয়া যাবে? নাকি আবার ভাগ্যের উপর আস্থা রাখতে হবে?’

‘ভাগ্যের উপর আরেকটু আস্থা রাখি।’

আমার কথা শুনে উনি সুইট স্মাইল দিয়ে চলে যান।আমার আবার নিজের এই সিদ্ধান্তের উপর রাগ হচ্ছিল।ফোন নম্বর নিয়ে নিলে কতো ভালোটাই না হতো।আমি সত্যি একটা গাধা থুরি গাধি।

আমি আহসান ভাইয়ের বাসায় কলিং বেল চাপি।গেইট খোলার পর ভিতরে গিয়ে দেখি ঘুটঘুটে অন্ধাকার।অন্ধকারে হঠাৎ কেউ আমার হাত চেপে ধরতেই আমি চিৎকার করে উঠি।
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here