মন চায় তোকে পর্ব-১৬

0
1711

#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_১৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“আমাকে মারলে তো তুমিই বিধবা হয়ে যাবে। বাচ্চা কাচ্চার মা ও হতে পারবে না।”

আচমকাই মল্লিকার চোখে জলরাশির বিচরণ শুরু হলো। চোখের ভাসমান জলগুলো বেশ তোড়জোড়ে লেগে পড়েছে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ার জন্য। মল্লিকা কান্নাজড়িত কন্ঠে অন্তরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি মজা করেছি অন্তর। আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচব না। আপনাকে মারার কথা তো আমি ভাবতেই পারি না।”

অন্তর কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে মল্লিকার হাত দুটো ছেড়ে মল্লিকার গাল দুটোতে হাত রেখে বলল,,,,

—-“কাম ডাউন মল্লিকা। এতো সিরিয়াস হচ্ছ কেনো? আমরা দুজনই মজা করেছি। অনেক গুলো বাবুর বাবা হতে হবে আমাকে। আমার অনেকগুলো ছোট ছোট নীলান্জ্ঞনা চাই। যাদের চোখ জোড়া ও একদম আমার নীলান্জ্ঞনার মতো হবে।”

মল্লিকা অন্তরকে ঝাপটে ধরে অন্তরের বুকে মাথা রেখে বলল,,,,,

—-“আমি ও অনেকগুলো অন্তর চাই। যারা একদম আমার অন্তরের মতো ভালো মনের মানুষ হবে। মা হিসেবে তখন আমি খুব প্রাউড ফিল করব।”

অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“তাহলে চলো প্ল্যানিং এ লেগে পড়ি। অনেক গুলো নীলান্জ্ঞনা আর অন্তর লাগবে আমাদের। ফুটবল টিম হলে মন্দ হয় না।”

মল্লিকা চোখ দুটো বড় বড় করে বলল,,,,,

—-“পাগল হয়েছেন আপনি? ফুটবল টিম? মানে এগারো জন। আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে তো?”

অন্তর অট্ট হাসি দিয়ে বলল,,,,,

—-“আমি দিলে তো? তোমাকে ক্ষেপানোর জন্য বললাম। আমার তো জাস্ট দুটো নীলান্জ্ঞনা হলেই হবে।”

মল্লিকা লাজুক কন্ঠে বলল,,,,,

—-“এক্টা নীলান্জ্ঞনা আর এক্টা অন্তর। মোট দুজন। কেমন?”

—-“হুম চলবে।”

মল্লিকা কিছুটা মুচড়ামুচড়ি করে বলল,,,,,

—-“ছাড়ুন অন্তর। শাওয়ার নিতে হবে। আজ তো আমাদের রাতের ফ্লাইটেই বাড়ি ফিরতে হবে।”

অন্তর মল্লিকাকে ছেড়ে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,

—-“হুম শাওয়ার নিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। শপিং এ যাবো।”

মল্লিকা খুশিতে খিলখিল করে হেসে বলল,,,,,

—-“সত্যি অন্তর শপিং এ যাবেন?”

—-“জ্বি ডিয়ার। তোমার জন্য শাড়ী কিনব। বাড়ির সবার জন্য কিছু গিফটস নিয়ে যাবো। সবাই হয়তো আমাদের থেকে কিছু না কিছু এক্সপেক্ট করে আছে।”

—-“ঠিক বলেছেন অন্তর। সবার জন্য অনেক অনেক গিফটস নিয়ে যাবো। সবাই খুব খুশি হবে।”

কথা গুলো বলেই মল্লিকা ওয়াশরুমে চলে গেলো। অন্তর আবারো বিছানায় শুয়ে পড়ল। প্রায় আধ ঘন্টা পর মল্লিকা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে রুমে ঢুকল। অন্তর এতক্ষণে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। ঘুমন্ত অবস্থায় অন্তরকে দেখে মল্লিকা মুখটা বাঁকা করে বলল,,,,,,

—-“সারা রাত আমাকে জ্বালিয়ে এখন খুব আরাম করে ঘুমানো হচ্ছে। আর আমি বেচারী অনিদ্রায় ভুগছি। ঘুমে আমার ও চোখ জোড়া অবশ হয়ে আসছে। আমি ও ঘুমাবো। তবে মিঃ অন্তরের ঘুমটা হারাম করে এরপর ঘুমাবো।”

মল্লিকা মাথায় শয়তানী বুদ্ধি এঁটে বাঁকা হেসে পিছনের চুল গুলো সামনে এনে ধীর পায়ে হেঁটে বেডের উপর বসে চুলের পানি গুলো অন্তরের চোখ বরাবর ছুড়তে লাগল। অন্তর হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে পড়ল। মল্লিকা খিলখিল করে হেসেই যাচ্ছে। অন্তর রাগে গিজগিজ করে বলল,,,,,

—-“দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা!”

কথাটা বলেই অন্তর মল্লিকাকে হেচকা টান দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। বাঁকা হেসে অন্তর ও মল্লিকার উপর উঠে গেলো। মল্লিকা অন্তরের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলছে আর বলছে,,,,,,

—-“প্লিজ অন্তর এবারের মতো ছেড়ে দিন আমায়। আর এমন দুষ্টুমি করব না। আপনাকে আর জ্বালাব না। খুব ঘুম পেয়েছে আমার। কিছুক্ষন ঘুমিয়ে এরপর আমরা শপিং এ যাবো। কেমন?”

অন্তর ডেবিল স্মাইল দিয়ে বলল,,,,,

—-“কিছুক্ষন রোমান্স করে, ঘুমিয়ে এরপর আমরা শপিং এ যাবো কেমন?”

কথাগুলো বলেই অন্তর মল্লিকার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। মল্লিকা অন্তরের টর্চার সহ্য করছে আর মনে মনে নিজেকে বকছে। অন্তর খুব রুডলি কিস করছে মল্লিকার ঠোঁটে। মল্লিকা ছোটাছুটি করছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,

—-“ধ্যাত কি দরকার ছিলো নিজেই নিজের শনিটা ডেকে আনার? বদ ছেলেটাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে মস্ত বড় ভুল করেছি। এখন আমার বারোটা বাজাবে।”

শেষ পর্যন্ত মল্লিকা হার মেনে অন্তরের সাথে তাল মিলালো। অন্তর কিছুটা হাঁফিয়ে মল্লিকার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে মল্লিকার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। মল্লিকা ও চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ল। দুজনই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।

দুপুর এক্টা। অন্তর ঘুম থেকে উঠে মল্লিকার কপালে চুমো খেয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। প্রায় পনেরো মিনিট পর অন্তর শাওয়ার নিয়ে রুমে ঢুকল। মল্লিকা এখনো ঘুমাচ্ছে। অন্তর কাবার্ড থেকে শার্ট, প্যান্ট বের করে রেডি হচ্ছে আর চেঁচিয়ে মল্লিকাকে ডেকে বলছে,,,,,,

—-“মল্লিকা উঠে পড়ো। লাঞ্চ করে শপিং এ যেতে হবে। সন্ধ্যার আগে শপিং থেকে ফিরতে হবে।”

মল্লিকা এক্টু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। আচমকাই অন্তরের ফোনটা ভাইব্রেট মোডে বেজে উঠল। ফোনটা মল্লিকার কানের নিচেই ছিলো। ফোনের ফুসফুসের আওয়াজে মল্লিকা বাধ্য হয়ে ঘুম থেকে উঠে ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখল মিসেস অরুনীমার কল। মুহূর্তেই মল্লিকার চোখ থেকে ঘুম সরে গিয়ে খুশির ঝলক ফুটে উঠল। হি হি করে হেসে মল্লিকা কলটা পিক করে ফেলল। ঐ পাশ থেকে মিসেস অরুনীমা অভিমানী স্বরে বলল,,,,,

—-“ছেলে আমার বউ পেয়ে মা কে একদম ভুলে গেছে। যাওয়ার পর থেকে এক্টা কল ও করল না।”

মল্লিকা হাসি চেঁপে বলল,,,,

—-“হুম আম্মু, ঠিক বলেছ। তোমার ছেলেটা খুব খারাপ। এই পর্যন্ত তোমাকে এক্টা কল ও করল না। আদৌ কি এসব মেনে নেওয়া যায়?”

মিসেস অরুনীমা জিভ কেটে বলল,,,,,

—-“মল্লিকা তুমি? আমি ভেবেছিলাম অন্তর। মাইন্ড করো না আমার কথায় প্লিজ!”

—-“আমি এক্টু ও মাইন্ড করি নি আম্মু। তুমি খামোখা ভাবছ। আচ্ছা বাদ দাও এসব। আগে বলো তুমি কেমন আছো?”

—-“ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?”

—-“খুব ভালো আছি আম্মু। আমরা আজ রাতের ফ্লাইটেই বাড়ি ফিরছি।”

—“ভীষষষণ খুশি হলাম। তাড়াতাড়ি চলে এসো মা। তোমাকে ছাড়া পুরো বাড়িটা ফাঁকা হয়ে আছে। একদম ভালো লাগছে না।”

—-“আমার ও এখানে ভালো লাগছে না আম্মু। তাই তো আজ চলে আসব।”

এর মাঝেই অন্তর মল্লিকার হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে মিসেস অরুনীমাকে উদ্দেশ্য করে হেসে হেসে বলল,,,,

—-“বউমা কে পেয়ে ছেলেকে ভুলে গেলে? সেই কখন থেকে কেবল বউমার সাথেই বকবক করছ। কই ছেলের কথা তো একবার ও জিগ্যেস করলে না।”

—-“কেনো রে তোর খুব হিংসে হচ্ছে? আমি কল করার আগে তো একবার ও নিজ থেকে কল করিস নি। এখন আমি কল করাতে বউমার সাথে খুব হিংসেমু দেখানো হচ্ছে?”

—-“স্যরি আম্মু। আসলে এতো অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যে দুটো দিন কাভার করতে হয়েছে তাই তোমাদের খোঁজ খবর নিতে পারি নি। প্লিজ ফরগিভ মি আম্মু।”

মিসেস অরুনীমা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,

—-“কি হয়েছে বাবা? তোর কথার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝছি না। প্লিজ ক্লিয়ারলি বল।”

অন্তর কিছুটা থতমত খেয়ে বলল,,,,,

—“আরে আম্মু কিছু না। আমি তো জাস্ট এমনি বলছিলাম। আসলে তোমার ছেলের বউ আধ পাগলী তো। তাই সারাক্ষন নানান অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে হয়েছে।”

অন্তরের কথা শুনে মিসেস অরুনীমা হেসে কুটিকুটি। পিছন থেকে মল্লিকা অন্তরের কথা আড়ি পেতে শুনছিলো। খপ করে অন্তরের হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে মল্লিকা মিসেস অরুনীমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“আম্মু ফোনটা রাখো তো। তোমাকে পরে কল করে নিবো। আগে তোমার ছেলের এক্টা ব্যবস্থা করি।”

মল্লিকা ঠুস করে ফোনটা কেটে দিয়ে অন্তরের কলার চেঁপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,,,,

—-“কি…..আমি আধ পাগল? আমি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছি?”

অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“আমাকে ঘাটি ও না মিসেস নীলান্জ্ঞনা। না হয় আজ ও বিডি ফেরা হবে না। গতকাল রাতের মতো আজ ও ভীষষণ জ্বালাবো। তখন কিন্তু কেঁদে কেটে ও আমার থেকে ছাড় পাবে না। আমি বেশ রোমান্টিক মোডে আছি।”

মল্লিকা তাড়াতাড়ি অন্তরের শার্টের কলার ছেড়ে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,,

—-“থাক বাপু ছেড়ে দিয়েছি। আর আপনাকে ক্ষেপাব না। আপনি ও আমাকে আর জ্বালাবেন না এই বলে দিলাম।”

কথাগুলো বলেই মল্লিকা রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মল্লিকার অবস্থা দেখে অন্তর মনে মনে হেসে নাজেহাল। অন্তর কিছুটা সিরিয়াস হয়ে পেছন থেকে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“মল্লিকা….. বাড়ি পৌঁছে এখানে ঘটা কোনো ঘটনাই আম্মু, আব্বুকে বলো না।আমি চাই না ওরা অযথা টেনশান করুক।যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এসব নতুন করে ঘেটে লাভ নেই।”

মল্লিকা অন্তরের দিকে ফিরে বলল,,,,,,

—-“আপনি যা বলবেন তাই হবে অন্তর। আমি ও চাই না আম্মু, আব্বু উটকো টেনশান করুক।”

অন্তর মুচকি হেসে বেডের উপর বসল। মল্লিকা সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। প্রায় আধ ঘন্টা পর মল্লিকা রেডি হয়ে সাইড ব্যাগটা হাতে নিয়ে পিছু ঘুরে অন্তরের দিকে তাকালো। অন্তর বেশ ব্যস্ত মল্লিকাকে দেখতে। এ্যাশ কালার শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা সিম্পল কানের দুল, নাকে ডায়মন্ডের বড় নাক ফুল। চোখে মোটা করে কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টক, চুলটা মাঝ সিঁথি করে ছেড়ে দিয়েছে মল্লিকা। অন্তর কিছুক্ষন মল্লিকার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে মল্লিকার কাঁধে হাত রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

রেস্টুরেন্টে বসে অন্তর বাঙ্গালী খাবার অর্ডার করে মল্লিকাকে নিয়ে খেয়ে দেয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে শপিং কমপ্লেক্সের দিকে রওনা হলো। ক্যাবে পাশাপাশি বসে আছে দুজন। ড্রাইভার এক মনে ক্যাব ড্রাইভ করছে। হালকা বাতাসে মল্লিকার চুল গুলো উড়ছে। অন্তরের কেমন ঘোর লেগে আসছে। ড্রাইভারের দিকে একবার তাকিয়ে অন্তর সুযোগ বুঝে মল্লিকাকে হেচকা টান দিয়ে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। মল্লিকা চোখ লাল করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো। মল্লিকা বেকুব হয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রায় দশ মিনিট পর অন্তর মল্লিকাকে ছেড়ে ক্যাবের সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। মল্লিকা অন্তরের থেকে খানিকটা দূরে বসে মুখটা ফুলিয়ে রেখেছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—-“হানিমুন এসেছে বলে ষোল আনা পুষিয়ে নিচ্ছে। এক্টু ও ছাড় দিচ্ছে না। আর জীবনে ও হানিমুন আসব না। লোকটা যেখানে সেখানে সিনক্রিয়েট করছে। ভাগ্যিস ড্রাইভার পিছু ফিরে তাকায় নি। না হয় লজ্জায় মাথা কাটা যেতো।”

এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো শপিং কমপ্লেক্সের সামনে। অন্তর আগে ক্যাব থেকে বের হয়ে ক্যাবের ভাড়া মিটিয়ে দিলো। মল্লিকা দরজা খোলে ক্যাব থেকে নেমে অন্তরের পাশে দাঁড়ালো। অন্তর মুচকি হেসে মল্লিকার হাত ধরে শপিং কমপ্লেক্সে ঢুকে গেলো। মল্লিকা মুখটা হা করে শপিং কমপ্লেক্সটাকে ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছে। বিশাল বড় শপিং কমপ্লেক্সটা। চারিদিকে মানুষ পিঁপড়ের মতো চলাচল করছে। অন্তর মল্লিকার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। হাতটা এক্টু ছুটে গেলেই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অধিক। অন্তর রিস্ক নিতে চাইছে না তাই সে মল্লিকাকে এক হাতের বন্ধনীতে ভালো করে আষ্টেপিষ্টে ধরেছে। মল্লিকা হি হি করে হেসে চারপাশটা চোখ বুলাচ্ছে।

অন্তর ফার্স্টে মেয়েদের শো রুমে গেলো। মল্লিকা শো রুমের মহিলা কর্মচারীদের নিউ কালেকশান শাড়ী দেখাতে বলল। মেয়ে গুলো মল্লিকাকে ডজন ডজন শাড়ী দেখাতে লাগল। শাড়ীর কালেকশান দেখে মল্লিকা পাগল হয়ে যাচ্ছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা নিবে বুঝতে পারছে না। অন্তর মল্লিকার অবস্থা দেখে হাসছে। কিছুক্ষন হেসে অন্তর মল্লিকার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,

—–“যতোটা ভালো লাগে নিয়ে নাও মল্লিকা। চাইলে সবগুলো নিয়ে নাও। অনন্যা, মল্লর আপু, আম্মু, শ্বাশুড়ী আম্মু সবার জন্য নিয়ে নাও।”

মল্লিকা দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,

—-“সব গুলোই নিয়ে নেই। দশটা শাড়ি আছে এখানে। পাঁচটা শাড়ী কিন্তু আমার। ২টা অনন্যার, ১টা শ্বাশুড়ী আম্মুর, ১টা মল্লর আপুর আরেকটা আমার আম্মুর কেমন?”

অন্তর মল্লিকার গাল টেনে বলল,,,,,,

—-“ওকে নীলান্জ্ঞনা নিয়ে নাও।”

মল্লিকা ক্লোজ আপ হাসি দিয়ে মেয়ে গুলোকে বলল শাড়ী গুলো প্যাক করে দিতে। অন্তর বিল চুকিয়ে এক হাতে শপিং ব্যাগ নিলো অন্য হাতে মল্লিকাকে শক্ত করে ধরল। মল্লিকা এবার কসমেটিকস শপে গেলো। বিভিন্ন ধরনের অরনামেন্টস, পায়েল, লিপস্টিক, কাজল দুটো দুটো করে কিনেছে মল্লিকা। এর থেকে অনন্যার ফিফটি ভাগ। কসমেটিকসের পালা শেষ করে অন্তর মল্লিকাকে জুতোর শপে ঢুকিয়ে দিলো। সবার জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের জুতো কিনেছে মল্লিকা। সব গুলো জুতোর ডিজাইন ই খুব ইউনিক।

এভাবে শপিং করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল ঘনিয়ে এলো। মল্লিকার বেশ জোরে ক্ষিদে পেয়ে গেছে। শপিং শেষে অন্তর মল্লিকাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসল। মল্লিকা বেশ খুশি, মন মতো শপিং করতে পেরে। অন্তরের বুকে মাথা রেখে বসে আছে মল্লিকা। অন্তর পিজ্জা আর পাস্তার অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। এক্টু পরেই খাবার চলে আসবে। মল্লিকা অন্তরের বুকে আকিবুকি করছে আর আহ্লাদি কন্ঠে বলছে,,,,,

—-“অন্তর আজ আমি খুব খুশি। লজে ফিরেই আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। ইসসসস কতোদিন সবাইকে দেখি না।”

অন্তর মুখটা ফুলিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমার তো এদেশ ছেড়ে যেতেই ইচ্ছে করছে না। বিডি পৌঁছে আবার অফিস জয়েন করতে হবে। তোমাকে ঠিক মতো কাছে পাবো না। মনটা সারাক্ষন তুমি তুমি করবে।”

—-“ইসসস আবার শুরু হয়ে গেছে। এই আপনার মাথায় কি এসব ছাড়া আর কিছুই আসে না?”

—-“পাশে সুন্দুরী বউ থাকলে এসব কথা ছাড়া আর কিছুই আসে না।”

—-“অসভ্য লোক এক্টা।”

কথাটা বলেই মল্লিকা অন্তরকে ছেড়ে দিলো। অন্তর হু হা করে হেসে দিলো। এর মাঝেই ওয়েটার খাবার নিয়ে এলো। মল্লিকা আর অন্তর খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। প্রায় আধ ঘন্টা পর দুজন খেয়ে দেয়ে লজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

প্রায় আধ ঘন্টা পর দুজন লজে পৌঁছে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো। ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা। ওদের ফ্লাইট রাত দশটায়। নয়টায় দুজন লজ থেকে বের হয়ে এয়ারপোর্টে চলে যাবে।

মল্লিকা আর অন্তর পাশাপাশি শুয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর মুচকি হেসে মল্লিকাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,

—-“ভালোবাসি নীলান্জ্ঞনা।”

—-“আমি ও ভালোবাসি অন্তর।”

—-“এক্টু রেস্ট নিয়ে নাও। কিছুক্ষন পর রেডি হয়ে আমাদের বের হয়ে যেতে হবে।”

—-“ওকে অন্তর।”

দুজনই দুজনকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে ফেলল। প্রায় আধ ঘন্টা পর দুজনই শোয়া থেকে উঠে ল্যাকেজ গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে দুজন ল্যাকেজ গুছিয়েছে। অনেক শপিং করেছে ওরা। তাই দু দুটো ল্যাকেজ নিতে হয়েছে। ল্যাকেজ গুছানোর পর দুজনই রেডি হয়ে রাত নয়টার মধ্যে লজ থেকে বের হয়ে গেলো।

লজের সম্পূর্ণ বিল মিটিয়ে দুজন এক্টা ক্যাব বুক করে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। প্রায় ৪৫ মিনিট পর ওরা এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেলো।

 

#চলে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here