#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_১৭
#নিশাত_জাহান_নিশি
লজের সম্পূর্ণ বিল মিটিয়ে দুজন এক্টা ক্যাব বুক করে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। প্রায় ৪৫ মিনিট পর ওরা এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেলো।
এনাউন্সমেন্ট শুরু হয়ে গেছে প্লেইন ছাড়ার। এয়ারপোর্টের লজে দৌঁড়ে এসে অন্তর আর মল্লিকা চেইকিং শেষ করে প্লেইনে উঠে পড়ল। দুজনই হাত ধরে প্লেইনের সিটে বসে আছে। অন্তর সিট বেল্ট বেঁধে দিয়েছে মল্লিকার। মল্লিকা আর অন্তর হাসিমুখে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। এর মাঝেই প্লেইন ছেড়ে দিলো। মল্লিকা খানিক ভয় পেয়ে অন্তরকে ঝাপটে ধরল। অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরল। প্লেইন ছুটে চলল বিডির উদ্দেশ্যে।
ইন বাংলাদেশ,,,,,,
রাত ১২ টা। অনন্যা রেডি হচ্ছে অন্তর আর মল্লিকাকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক করে আনতে। তন্ময় অনন্যাকে সাথে করে নিয়ে যাবে এয়ারপোর্ট। মিসেস অরুনীমা অনেক আগেই বলে দিয়েছে উনি যেতে পারবে না। রাত হয়েছে বলে উনার ইচ্ছে নেই যাওয়ার। তন্ময় অনন্যার রুমে বসে এক দৃষ্টিতে অনন্যার দিকে তাকিয়ে আছে। তন্ময় দুই দিন যাবত অনন্যাকে দারুনভাবে জ্বালাচ্ছে। অনন্যা জাস্ট বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। এক মিনিটের জন্যে ও তন্ময় অনন্যাকে একা ছাড়ছে না। অনন্যা আয়নার দিকে তাকিয়ে তন্ময়কে দেখছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,
—-“ইসসস এই ছেলেটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। এক্টু একা থাকতে ও দিচ্ছে না। ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে কি আমার সাথে এভাবে সুপার গ্লু এর মতো চিপকে থাকবে নাকি? আজই এর এক্টা দফা রফা করব।”
কথা গুলো বলেই অনন্যা তেড়ে এলো তন্ময়ের কাছে। তন্ময় অনন্যাকে দেখে আরো আরাম করে বেডের উপর বসল। অনন্যা কোঁমড়ে হাত দিয়ে দাঁত গিজগিজ করে বলল,,,,,
—-“এই আপনার কি খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই? সারাক্ষন নির্লজ্জের মতো আমাদের বাড়িতে পড়ে আছেন। এমন এক্টা যুবতি মেয়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন, বলি আপনার কি লাজ লজ্জা নেই?”
তন্ময় বাঁকা হেসে বসা থেকে দাঁড়িয়ে অনন্যার দিকে ঝুঁকে মিনমিন করে বলল,,,,,,
—-“তুমি শুধু এক্টা যুবতী মেয়ে ই নও। তুমি আমার উড বি ওয়াইফ ও। অন্তর ভাইয়া দেশে ফিরলেই আমি তোমাকে বিয়ে করব। তাই আগে থেকেই বউকে ভালো করে দেখে নিচ্ছি। বউয়ের খেয়াল রাখছি। বউয়ের ভালো লাগা, মন্দ লাগা বুঝে নিচ্ছি। তোমার তো খুশি হওয়ার কথা মিস….. অনন্যা। কিন্তু না, তুমি তো উল্টে রেগে যাচ্ছ।”
অনন্যা রাগে ফুসফুস করে তন্ময়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে যেই না পিছু ঘুরতে যাবে অমনি তন্ময় অনন্যার হাত ধরে অনন্যাকে হেচকা টান দিয়ে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। অনন্যা বেকুব হয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তন্ময় ডেবিল স্মাইল দিয়ে অনন্যার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“এতো রাগ কেনো হুম? রাগে একদম লাল টমেটোর মতো হয়ে গেছো। আমার কিন্তু খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।”
অনন্যা চোখ বড় বড় করে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তন্ময়ের কেমন ঘোর লেগে আসছে। সে হাজার চেষ্টা করে ও নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে নি। আচমকাই অনন্যার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। অনন্যা কোনো রিয়েকশান ই করছে না। চোখ মেলে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। অনন্যা বুঝে গেছে এখন হাজার চেষ্টা করলে ও সে তন্ময়ের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারবে না। তাই সে চুপ হয়ে গেছে। অনন্যা এই দুই দিনে এটা ও বেশ বুঝে গেছে তন্ময়ই অনন্যার জন্য বেস্ট লাইফ পার্টনার। যাকে ওর ফ্যামিলি ঠিক করেছে। প্রায় পনেরো মিনিট পর তন্ময় অনন্যার ঠোঁট ছেড়ে কিছুটা হাফিয়ে অনন্যাকে ঝাপটে ধরে অনন্যার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,
—-“আই লাভ ইউ অনন্যা। সেই তিন বছর আগে থেকে আমি তোমাকে নিজের মতো করে মনে মনে ভালোবেসে এসেছি। কখনো তোমার কাছে প্রকাশ করার সাহস জুগিয়ে উঠতে পারি নি। কেবল মনে হতো প্রেম করে আমার একদম পোষাবে না। একেবারে বিয়ে করে তোমাকে ঘরে তুলে কাছ থেকে তোমাকে ভালোবাসব। তাই দেরি না করে অন্তর ভাইয়াকে আমার মনের কথাটা জানাই। দেখো…. আমার কি ভাগ্য অন্তর ভাইয়া সাথে সাথে রাজি ও হয়ে যায়। একচুয়েলি উপর ওয়ালা আমাদের জরি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে। তাই কোনো বাধা বিপওি ছাড়াই আমরা কিছুদিন পরে এক হতে চলব। আই হোপ তোমার ও এই বিয়েতে কোনো আপওি নেই।”
অনন্যা খুব মনযোগ দিয়ে তন্ময়ের কথা গুলো শুনছিলো। তন্ময়কে ভালো লাগতে শুরু করেছে অনন্যার। অনন্যা ও তন্ময়কে টাইট করে জড়িয়ে ধরে মিনমিন করে বলল,,,,,
—-“আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিন তন্ময়। আমি সব সময় আপনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতে চাই। সারাজীবন আপনার কাছাকাছি থাকতে চাই।”
তন্ময় খুশিতে অনন্যাকে কোলে তুলে গোল গোল করে ঘুড়তে লাগল। অনন্যা ঘুড়ছে আর খিলখিল করে হাসছে। এভাবেই কেটে গেলো প্রায় এক ঘন্টা। ভোর রাতে তন্ময় আর অনন্যা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। তাই এখন ওরা দুজনই বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়েছে।
ঐদিকে মল্লিকা অন্তরকে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্তর শুধু মল্লিকাকে দেখে দেখেই রাত কাটিয়ে দিচ্ছে। ঘুম ওর চোখে ধরা দিচ্ছে না। মল্লিকা অলরেডি ঘুমিয়ে কাত হয়ে গেছে। এভাবেই কেটে গেলো আরো চার ঘন্টা। ঘড়িতে ভোর রাত ৩ টা। প্লেইন এসে বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেছে। অন্তর আর মল্লিকা প্লেইন থেকে নেমে এয়ারপোর্টের লজে দাঁড়িয়ে আছে। অনন্যা আর তন্ময় এয়ারপোর্ট পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে এয়ারপোর্টের লজে চলে গেলো। এয়ারপোর্টের ফার্স্ট গেইটে ঢুকেই অনন্যা আর তন্ময় অন্তর আর মল্লিকাকে দেখতে পেলো। খুশিতে অনন্যা দৌঁড়ে গিয়ে মল্লিকা আর অন্তরকে ঝাপটে ধরল। মল্লিকা ঘুমে চোখ মেলতে পারছে না। প্রচন্ড ঘুম চোখে ওর। মল্লিকা ঢুলুঢুলু চোখে অনন্যার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তন্ময়কে দেখে মল্লিকা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। তন্ময় একগাল হেসে বলল,,,,,,
—-“ভাবী কেমন আছেন?”
মল্লিকা অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,,,,,
—-“ভালো আছি।”
কথাটা বলেই মল্লিকা অন্তরের কাঁধে মাথা রেখে বড় এক্টা হাই তুলে আবারো ঘুমিয়ে পড়ল। অন্তর, অনন্যা আর তন্ময় হু হা করে হেসে দিলো। এতে মল্লিকার কি? মল্লিকা তো ঘুমাচ্ছে। অন্তর কিছুক্ষণ হেসে মল্লিকাকে আধ কোলে তুলে নিলো। তন্ময় আর অনন্যা ল্যাকেজ দুটো টেনে টুনে এয়ারপোর্ট থেকে বের করল। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ওরা গাড়িতে ল্যাকেজ সহ উঠে পড়ল। তন্ময় ড্রাইভিং সিটে বসেছে। এর পাশেই অনন্যা বসেছে। অন্তর মল্লিকাকে নিয়ে ব্যাক সিটে বসেছে। মল্লিকা অন্তরের বুকে গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। অন্তর সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তন্ময় ড্রাইভ করছে আর অনন্যার হাত ধরে টানাটানি করছে। অনন্যা কিছুক্ষন পর পর চোখ লাল করে তন্ময়ের দিকে তাকাচ্ছে। তন্ময় অট্ট হেসে অনন্যাকে আরো বেশি করে ক্ষেপাচ্ছে। মাঝে মাঝে সুুযোগ বুঝে তন্ময় অনন্যার গালে চুমো ও খেয়ে দিচ্ছে। অনন্যা জাস্ট অতিষ্ট হয়ে গাড়ির দরজার সাথে চিপকে বসেছে। তন্ময় কিছুটা মন খারাপ করে একমনে ড্রাইভ করছে।
প্রায় এক ঘন্টা পর। গাড়ি এসে পৌঁছে গেছে অন্তরের বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে অন্তর মল্লিকাকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। তন্ময় আর অনন্যা আবারো ল্যাকেজ গুলো গাড়ি থেকে বের করে বাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে নিলো। মিসেস অরুনীমা অন্তরদের জন্য ওয়েট করতে করতে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্তর মল্লিকাকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলেই তন্ময় পিছন থেকে অন্তরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“ভাইয়া….আমি বাড়ি যাচ্ছি। কাল আম্মু, আব্বুকে নিয়ে আসব।”
অন্তর পিছনে ফিরে মুচকি হেসে বলল,,,
—-“ওকে তন্ময়। কাল কিন্তু সন্ধ্যার আগেই চলে আসবে।”
—-“ওকে ভাইয়া আসছি।”
কথাটা বলেই তন্ময় শেষবারের মতো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা অনন্যার দিকে তাকিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। অনন্যা মলিন হেসে তন্ময়ের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। অন্তর অনন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“অনন্যা রুমে যা। ঘুমিয়ে পড়। আমি ও রুমে যাচ্ছি মল্লিকাকে নিয়ে। সকালে কথা হবে।”
অনন্যা মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে সদর দরজাটা ভালো ভাবে লাগিয়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলো। অন্তর মল্লিকাকে নিয়ে উপরে উঠে বেডে গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়ল। মল্লিকা খানিক নড়েচড়ে অন্তরকে ঝাপটে ধরে আবারো গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। অন্তর মল্লিকার কপালে চুমো খেয়ে সে নিজেকে ও ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘড়িতে সকাল এগারোটা। অন্তর আর মল্লিকা এখনো কাত হয়ে ঘুমাচ্ছে। মিসেস অরুনীমা দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওদের কারোর ই ঘুমের রেশ কাটছে না। মিসেস অরুনীমা হাল ছেড়ে নিচে ফিরে গেলো। অনন্যার ও একই অবস্থা। সে ও নাক টেনে ঘুমাচ্ছে। তন্ময় অনেকক্ষন ধরে কল করে ও অনন্যাকে ফোনে পাচ্ছে না। তন্ময় অফিসে বসে বেশ বোর হচ্ছে। ইদানিং অনন্যাকে ছাড়া ওর কিছুই ভালো লাগে না।
দুপুর বারোটা। মল্লিকার ঘুমের রেশ এতক্ষনে কেটেছে। পিটপিট করে চোখ খুলে মল্লিকা অন্তরকে ওর বুকে দেখতে পেলো। অন্তর গভীর ঘুমে মগ্ন। মল্লিকা মুচকি হেসে অন্তরের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। অন্তর আরাম পেয়ে মল্লিকাকে আরো জোরে টাইট ধরে ঘুমের গভীরতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুয়ে থাকতে থাকতে মল্লিকার পিঠ ধরে এসেছে। তাই সে এবার কপাল কুচকে অন্তরকে খোঁচানো শুরু করল। ক্ষনে ক্ষনে মল্লিকা অন্তরের হাতে চিমটি কাটছে। অন্তর এক্টু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ছে। মল্লিকার খোচাখুচির জ্বালায় এক পর্যায়ে অন্তর বিরক্ত হয়ে চোখ মেলে তাকালো। মল্লিকা দাঁত বের করে হাসছে। অন্তর ঢুলুঢুলু চোখে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“আমাকে খোঁচাতে খুব ভাল্লাগে তাই না?”
—-“আমার উপর থেকে উঠুন। তাহলেই আর খোঁচাব না।”
—-“উঠব না। দেখি কতোক্ষন আমাকে খোঁচাতে পারো।”
—-“অন্তর প্লিজ উঠুন। আমার অস্বস্তি লাগছে শুয়ে থাকতে। পিঠ, কোমড় ধরে গেছে।”
—-“তাহলে এবার আমার উপরে শোও।”
কথাটা বলেই অন্তর মল্লিকাকে উল্টিয়ে নিজে নিচে শুয়ে পড়ল আর মল্লিকাকে ওর গায়ের উপর উঠিয়ে নিলো। অন্তর নিচে আর মল্লিকা উপরে। মল্লিকা চোখ লাল করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“আপনি ভারী অসভ্য ছেলে বুঝেছেন? আমি বলেছি আমাকে ছাড়তে। আমাকে আপনার উপর উঠাতে নয়।”
—-“স্যরি নীলান্জ্ঞনা। আজ আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না। দুজনই আজ খুব ঘুমাবো আর রোমান্স করব।”
—-“শুনুন এটা আপনার হানিমুন লজ না। এটা আমার শ্বশুড় বাড়ি। শ্বশুড় বাড়িতে মেয়েদের অনেক কাজ থাকে। পুরো বাড়ি তাকে সামলাতে হয়। তাছাড়া রোমান্স করা, ঘুমানোর এক্টা নির্দিষ্ট টাইম থাকে। এই টাইম টা এখন কাজের আওতায় পড়ে। রোমান্স বা ঘুমানোর আওতায় পড়ে না। তাছাড়া আম্মুর সাথে এখনো দেখা ও হয় নি। মনটা কেমন উসখুস করছে। প্লিজ ছাড়ুন আমায়।”
—-“আচ্ছা যাও ছেড়ে দিবো। আগে ইট্টু রোমান্স করে নেই।”
অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। মল্লিকা বিরক্তি নিয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর বেশ ব্যস্ত মল্লিকার ঠোঁটের স্বাদ নিতে। অন্তরের রোমান্স আস্তে আস্তে গভীর হতে লাগল। মল্লিকার আপওি সও্বে ও অন্তর মল্লিকার কথা শুনছে না। শেষে মল্লিকা নিরুপায় হয়ে অন্তরের প্রতিটা কাজে সায় দিতে লাগল।
প্রায় ঘন্টা খানিক পর মল্লিকা শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে অন্তরকে ছেড়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। অন্তর শোয়া থেকে উঠে ল্যাপটপ নিয়ে খাটের উপর বসে গেলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর, মল্লিকা শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চুল ঝাঁড়তে ঝাঁড়তে চোখ লাল করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে অন্তরের ল্যাপটপটা বন্ধ করে বেশ কড়্ড়া কন্ঠে বলল,,,,,
—-“ওয়াশরুমে যান। শাওয়ার নিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আসুন। আমি নিচে যাচ্ছি।”
—-“ওকে যাচ্ছি। এতো রাগ দেখানোর কি আছে!”
অন্তর বসা থেকে উঠে কাবার্ড থেকে টি শার্ট আর টাউজার বের করে ওয়াশরুম চলে গেলো। মল্লিকা চুলটা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মল্লিকার ডান গালে এক্টা বাইটের দাগ পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি মল্লিকা মেকাপ বের করে জায়গাটাতে খুব ভারী মেকাপ করে বাইটের দাগটা আড়াল করে নিলো। এরপর চুলটা আচড়িয়ে মল্লিকা রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ড্রইং রুমেে সোফায় বসে অনন্যা টিভি দেখছে আর কফি খাচ্ছে। মিসেস অরুনীমা কিচেন রুমে। মল্লিকা মৃদ্যু হেসে অনন্যার পাশে বসে বেশ উওেজিত কন্ঠে অনন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“জানো অনন্যা। আমি আর অন্তর না তোমাদের জন্য অনেক অনেক গিফটস এনেছি। আচ্ছা অনন্যা লাকেজটা কোথায়?”
অনন্যা কফি খাওয়া বাদ দিয়ে সোফা থেকে উঠে খিলখিল হেসে সমানে লাফাচ্ছে আর বলছে,,,,,
—-“সত্যি ভাবী তুমি অনেক গিফটস এনেছ?”
—-“হুম অনন্যা অনেক।”
অনন্যা আর দেরি না করে সদর দরজার কাছে গুছিয়ে রাখা ল্যাকেজ দুটো টেনে টুনে সোফার কাছে এনে হাজির করল। মল্লিকা আর অনন্যা ল্যাকেজ দুটো খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ড্রইং রুমের হাক ডাক শুনে মিসেস অরুনীমা কিচেন রুম থেকে দৌঁড়ে ড্রইং রুমে এলো। মল্লিকা আর অনন্যা জীবন দিয়ে ল্যাকেজের চেইন টানছে কিন্তু লাভ কিছু হচ্ছে না। ল্যাকেজের চেইন দুটোই খুব শক্ত। মিসেস অরুনীমা এসে মল্লিকা আর অনন্যার মুখোমুখি দাঁড়ালো। মল্লিকা চেইন ছেড়ে মুচকি হেসে মিসেস অরুনীমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,
—-“ইসসস কতো দিন পর তোমাকে দেখলাম। খুব শান্তি লাগছে আম্মু।”
মিসেস অরুনীমা এক গাল হেসে বলল,,,,,,
—-“আমার ও খুব শান্তি লাগছে মা। কতোদিন পর আমার মেয়েটাকে দেখলাম। এবার আমার বাড়িটা আবার হাসি খুশিতে ভরে উঠবে।”
এর মাঝেই অন্তর ভেজা চুল নিয়ে নিচে নেমে এলো। অনন্যা দৌঁড়ে গিয়ে অন্তরের হাত টেনে বেশ আহ্লাদী স্বরে বলল,,,,,,
—-“ভাইয়া, ল্যাকেজ দুটো খুলে দে না। আমি আর ভাবী সেই কখন থেকে চেষ্টা করছি কিন্তু খুলতে পারছি না।”
অন্তর হু হা করে হেসে ল্যাকেজের সামনে হাঁটু গেড়ে বসল আর বলল,,,,,
—-“ভাবী, ননদ দুইটাই দুর্বল। হালকা বাতাসে উড়ে যাবে। ওরা নাকি আবার ল্যাকেজের চেইন খুলবে।”
মল্লিকা আর অনন্যা রাগে ফুসফুস করছে। তবে কিছু বলছে না। অন্তরকে ঘাটালেই এখন সে ল্যাকেজটা খুলে দিবে না। এতে মল্লিকা আর অনন্যা দুইজনের ই লচ হবে। তারা অবশ্য লচের পাল্লায় থাকতে চায় না। অন্তর জোরে এক টান দিয়ে ল্যাকেজের চেইন খুলে দিলো। দুটো ল্যাকেজের চেইন সে এক টানেই খুলে ফেলেছে। অনন্যা সো এক্সাইটেড হয়ে ল্যাকেজের উপর হামলে পড়ল। অন্তর এতক্ষনে ফ্লোরে চিৎ হয়ে পড়ে চোখ লাল করে অনন্যার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা আর মিসেস অরুনীমা হু হা করে হেসে সোফায় বসে লুটুপুুটি খাচ্ছে। অনন্যা ধাক্কা দিয়ে অন্তরকে ফ্লোরে ফেলে দিয়েছে। যার কারণে অন্তর ফ্লোরে চিৎ হয়ে পড়ে আছে।
মল্লিকা হাসছে আর অন্তরকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,
—“এক্টু আগে যেনো কি বলছিলেন? আমরা দুর্বল? হালকা বাতাসে আমরা উড়ে যাবো? এখন তো দেখছি আপনি ই দুর্বল। এক্টা মেয়ের হালকা ধাক্কায় চিৎ হয়ে ফ্লোরে পড়েছেন।”
মল্লিকার হাসি দেখে যেনো অন্তরের গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। অন্তর চোয়াল শক্ত করে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“আমার খিল্লি উড়ানো হচ্ছে তাই না? কোথায় এসে আমাকে হেল্প করবে। তা না করে পাগলী মহিলাদের মতো হেসেই যাচ্ছে।”
মল্লিকা শাড়ীর আঁচল দিয়ে হাসি চেঁপে সোফা থেকে উঠে অন্তরের পাশে দাঁড়িয়ে ডান হাতটা অন্তরের দিকে বাড়িয়ে দিলো। অন্তর ওর দুই হাত বাড়িয়ে যেই না মল্লিকার হাত ধরতে যাবে অমনি মল্লিকা খিলখিল হেসে ওর হাতটা সরিয়ে নিলো। অন্তর আবার চিৎ হয়ে নিচে পড়ে গেলো। অন্তর বেশ ক্ষেপে ফটাফট শোয়া থেকে উঠে যেই না মল্লিকাকে খপ করে ধরতে যাবে অমনি মল্লিকা দিলো এক ভৌঁ দৌঁড়। অন্তর চোখ লাল করে মল্লিকার পিছনে দৌঁড়াচ্ছে আর বলছে,,,,,
—-“আমাকে দুর্বল বলা তাই না? আমাকে নিয়ে মজা করা? জাস্ট ধরে নেই তোমায়। সব শোধ এক সাথে নিবো।”
মল্লিকা পুরো ড্রইং রুমে দৌঁড়াচ্ছে চেঁচিয়ে বলছে,,,,,
—-“আগে তো আমাকে ধরে দেখান। এরপর না হয় শোধ নিবেন।”
দুজনই গোল গোল হয়ে পুরো ড্রইং রুম দৌঁড়াচ্ছে। মিসেস অরুনীমা সোফায় বসে হাসছে। অনন্যা শাড়ী আর অরনামেন্টস দেখতে ব্যস্ত। খুশিতে অনন্যা পাগল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় দশ মিনিট পর মল্লিকা কিছুটা হাঁফিয়ে আচমকাই দৌঁড় বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়ল। অন্তর বাঁকা হেসে খপ করে মল্লিকার হাত চেঁপে ধরল। মল্লিকা অসহায় দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে অন্তর। এইবারের মতো আমায় ছেড়ে দিন। আর কখনো আপনার সাথে মজা করব না।”
অন্তর মল্লিকার ভোলাভালা ফেইস দেখে গলে গেলো। মল্লিকার হাতটা ছেড়ে দিয়ে অন্তর মল্লিকাকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো। মিসেস অরুনীমা কিচেনে গিয়ে খাবার বেড়ে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে দিলো। অনন্যা এখনো শাড়ি আর কসমেটিকস নিয়ে পড়ে আছে। অন্তর রেগে গিয়ে অনন্যার হাত ধরে টেনে এনে অনন্যাকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো। পাশে অন্তর ও বসে পড়ল। মিসেস অরুনীমা হাসি মুখে সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। অনন্যা গপাগপ খাচ্ছে আর মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,
—-“ভাবী। আমার না এক্টা শাড়ী খুব পছন্দ হয়েছে। পিংক কালার শাড়ীটা।”
মল্লিকা ভাতের লোকমা মুখে পুড়ছে আর বলছে,,,,,
—-“তোমার জন্য এক্টা নয় অনন্যা দু দুটো শাড়ীই এনেছি। তোমার যেটা ভালো লাগে তুমি সেটাই নিও।”
অনন্যা তো পারছে না খুশিতে শূন্যে ভাসতে। অনন্যার অবস্থা দেখে অন্তর আর মিসেস অরুনীমা হু হা করে হাসছে। প্রায় এিশ মিনিট পর খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে অনন্যা আর মল্লিকা ল্যাকেজ থেকে সব শপিং বের করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। মিসেস অরুনীমা ওদের পাশে বসেই ভাগ বাটোয়ারা দেখছে। অন্তর রুমে ঢুকে ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করছে।
বিকেল পাঁচটা। তন্ময় ওর পরিবার নিয়ে অনন্যার বাড়ি এসে হাজির হয়ে গেলো।
#চলবে,,,,,,,,,