মন_পাড়ায় পর্ব_১৯

মন_পাড়ায়
পর্ব_১৯
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

বিনয়,
তোকে হয়তো প্রিয় বলার অধিকারটা এখন আর আমার নেই। আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি যাকে তুই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতি। আর তাকেও যার কারণে তুই আজ আমাদের সাথে নেই। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি, আবারও।

এখন মধ্যরাত। আমি এই মুহূর্তে তোকে এই চিঠিটা লিখছি। তোর কী আমাদের বন্ধুত্বের দিনগুলোর কথা মনে পড়ত তুই যখন ছিলি এই পৃথিবীতে? আমার অনেক বন্ধু ছিলো কিন্তু এর মাঝে শুধু তুই আমাকে বুঝতি। আমার কাওকে নিজের মনের কথা বলতে অসহ্য লাগতো, তুই এই সমাধান বের করেছিলি। আমাদের জন্য এক গোপন জায়গা করেছিলি যেখানে আমরা চিঠির দ্বারা নিজ স্বীকারোক্তি লিখে রাখব। যা কেউ জানবে না। শুধু তুই আর আমি। আজ এগারো বছর পর আমি আরেক স্বীকারোক্তি লিখছি। হয়তো তুই কখনো এর জন্য আমায় ক্ষমা করবি না। আমি নিজেও হয়তো নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না।

তেরো বছর আগে, তোরা অনেক রাগ করেছিলি আমার উপর নতুন বছর তোদের সাথে পালন না করে দেশে গিয়েছিলাম আমার খালার কাছে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার। উনি তো সুস্থ হয়ে যায় আমি সেখানেই আটকে যাই। খালা, খালু, কাজিন কেউও আসতে দেয় নি। ভীষণ রাগ হচ্ছিল সেদিন। ঢাকায় থাকলে হয়তো নতুন বছর তোদের সাথে উৎযাপন করতে পারতাম আর সেখানে কিছুই করতে পারি নি। তোরা অবশ্য সারারাত ফোন দিয়ে জ্বালিয়েছিলি তাই ঘুমও হয় নি। ঘুম না হওয়ার ভীষণ বিরক্ত লাগছিল আমার। তোদের উপর, খালার উপর, নিজের উপরও। সকালে উঠে জ্যাকেটটা নিয়ে বেরিয়ে যাই অচেনা পথে।। কুয়াশার চাদরে ঢেকেছিল চারপাশ। সবকিছু দেখা যাচ্ছিলো তবুও অস্পষ্ট। আমি গান শুনছিলাম হেডফোনে।

তুমি আমি কাছাকাছি আছি বলে
এ জীবন হয়েছে মধুময়,
যদি তুমি দুরে কখনো যাও চলে
শুধু মরন হবে আর কিছু নয় ।
তোমায় ছেড়ে বহুদুরে যাব কোথায়
এক জীবনে এত প্রেম পাব কোথায়……

আমি পথ চলছিলাম। নতুন বছরের সকালটা উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ আশেপাশে তাকিয়ে পথ চলতে চলতে থেমে গেলাম। দুই পা পিছিয়ে যেয়ে আমার বামদিকে তাকালাম। পুকুরের সামনে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো হলুদ রঙের জামা পরে। সকালের কুহেলিকা যেন তার গাল ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। তার চোখগুলোতে ছিলো মুগ্ধতা। সে একবার তাকাচ্ছিল পুকুরের দিকে, একবার আকাশের দিকে আবার পুকুরের আশেপাশে। ও পুকুরের সিঁড়ির কাছে বসল, হাতটা জলে ছোঁয়াতেই কেঁপে উঠলো। হাতটা উঠিয়ে নিজেই হাসলো।
বিশ্বাস কর, এত সুন্দর হাসি আমি জীবনেও দেখি নি। কারও হাসি এতটা সুন্দর হতে পারে আমার কল্পনার বাহিরে ছিলো। ওর সৌন্দর্য যেন হাজারোগুণ বেড়ে গেল। একটি হাসি ওর সৌন্দর্যটাই পাল্টে দিলো।সে কাঁপানো শীতের মাঝেও বসন্তের হাওয়ার মতো ছিলো হাসি। ওর চোখদুটোয় ছিলো অজানা উষ্ণতা। হঠাৎ আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। মুহূর্তে আমার বিরক্তি মিশে গেল গ্রামের হাওয়ায়। হেডফোনে গান চলছিলো,
“সুখের সাগরে ঢেউয়ে ঢেউয়ে
দু’জনে একসাথে ভেসে যাই,
ভেসে ভেসে ভালোবেসে
সারাটা জীবন থাকতে চাই ।
তোমায় ছেড়ে বহুদুরে যাব কোথায়
এক জীবনে এত প্রেম পাব কোথায়…..”
গানটা যেন আমার অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। আমার বুকের কাঁপুনি বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি ওর সাথে এক অচেনা সাগরে ভেসে যেতে চাইছিলাম।
আমি এক পা আর নড়তে পারলাম না। ওর দিকে আমার চোখ আটকে রইল। আমার বুকের কাঁপুনি কমলো না। কিন্তু স্পন্দন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেল। হঠাৎ করে কেউ একজন ডাক দিলো উঁচু স্বরে, ‘প্রভা…..’
ওর নাম প্রভা…..
অনেকগুলো অর্থ আছে প্রভার। কিন্তু আমার কাছে সে মুহূর্তে প্রভার অর্থ ছিলো উজ্জ্বলতা। যা ওর সাথে সম্পূর্ণ যায়। ও ভোরের উজ্জ্বলতার মতো।
প্রভার সমবয়সী এক মেয়ে এলো। প্রভার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ‘তুই এইখানে আর আমি তোকে খুঁজতেছি। জলদি আয় মা তোকে খুঁজছে। আর বলেছে যেন ঝিনুককে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়ে নাস্তা করিয়ে দিতে। ওর তো আবার তোর হাতে খাওয়ার অভ্যাস।’
প্রভা নামক মেয়েটা হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘চলো আপু।’
ওর কন্ঠ এত মিষ্টি কেন?
ওর এই কন্ঠে গান শোনার ভীষণ লোভ জাগলো আমার মনে।
আর ওরা চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকেও তাকিয়ে রইলাম। তাকিয়ে রইলাম যতক্ষণ না পর্যন্ত ও মিশে না গেল সে কুয়াশায়। কুয়াশায় মিলিয়ে যাওয়ার পরও তাকিয়ে রইলাম আমি। তাকিয়ে রইলাম সে কুয়াশার দিকে। কী হয়েছিলো আমি। নিজেও জানি না।
শুধু জানি আমি সে পথের দিকে তাকিয়েই ছিলাম।

আমার খালাতো ভাই রাজিয়ুন, তুই তো চিনতি। ওকে এসে জিজ্ঞেস করায় ও প্রভা নামে কাওকে চিনল না। আমি ওকে নিয়ে পুরো গ্রামে ঘুরালাম শুধু প্রভাকে খোঁজার জন্য। ও আমাকে মুখে কিছু না বললেও আমি নিশ্চিত মনে মনে আমাকগুলো গালি দিয়েছে। ওকে কাঁচা ঘুম থেকে উঠিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরাচ্ছিলাম।

অবশেষে এলো সে মুহূর্ত। ও আমার সামনে ছিলো, ঠিক সে হাসি নিয়ে। একটি বাচ্চা ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছিলো। ইশশ কেউ এত সুন্দর কীভাবে হাসে!

রাজিয়ুন প্রভাকে দেখে বলল, ‘ও আচ্ছা তুই জুঁইয়ের ফুফাতো তো বোনের কথা বলছিলি? ও প্রতি বছরে শুধু আসে এই সময়। বছরের শেষের দিকে আসে ও জানুয়ারির এক বা দুই তারিখেই চলে যায়। জুঁই বলেছিল ওর ফুফাতো বোন সবসময়ই জন্মদিন ওর নানুর সাথে কাটায়। এই কয়দিনের মাঝেই হয়তো ওর জন্মদিন।”
আমি তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওকে পাঠালাম জুঁই থেকে তথ্য বের করতে।
রাজিয়ুন ঠিক ছিলো প্রভার জন্মদিন জানুয়ারির ১ তারিখে। সেদিন ও পনেরোতম জন্মদিন ছিলো।

আমি নতুন বছরের সকালে, ওর জন্মদিনে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি উপহার পেলাম। অন্তত তখন তাই মনে হয়েছিলো।

০১ জানুয়ারি, এই দিনটি আমার জন্য বিশেষ হয়ে গেল। আমি প্রতিবছর এই দিনটির অপেক্ষা করতাম শুধু। গ্রামে যেতাম, ওকে দূর থেকে দেখতাম কিন্তু কখনো কথা বলতাম না। এমন না যে আমি ওর ঠিকানা নিতে পারতাম না। চাইলেই আমি ওর ঠিকানা নিয়ে ওকে দেখে আসতে পারতাম, ওর সাথে কথা বলতে পারতাম কিন্তু সারাটা বছর অপেক্ষার আনন্দটা তখন আর পেতাম না। অপেক্ষায় আলাদা এক অনুভূতি আছে সে অনুভূতি অনুভব করার ধৈর্য সবার থাকে না। এত জলদি সে অনুভূতি নষ্ট করার ইচ্ছা আমার ছিলো না। আমি শুধু কল্পনা করতাম ও কতটুকু পরিবর্তন হবে এই এক বছরে, ওর হাসি কতটুকু পরিবর্তন হবে!
ও পরিবর্তন হতো কিন্তু ওর হাসি না।
ওর হাসি আজও পরিবর্তন হয় নি। আগের মতোই। সুন্দর, স্নিগ্ধ, মায়াময়।

যেদিন ওর আঠারোতম জন্মদিন সেদিন শেষ ওকে দেখেছিলাম। বছরের মাঝে বাবা হঠাৎ আবদার করলো যে আমাকে বিদেশে পড়াতে চায়। তুই তো জানিস, এই পৃথিবীতে আমি বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। উনার কোনো কথা আমি মানা করতে পারি না। ভেবেছিলাম এসে বাবাকে বলে ওর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব। আমি তো ভাবি নি যে ভাগ্য আমার সাথে এত বড় খেলা খেলবে। তোর বিয়ের পরেরদিন শিপন যখন বিয়ের ছবিগুলো দেয় ওকে দেখে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে আমার হৃদপিণ্ডে আঘাত করছে।
আমি অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার সময়ও ভাবি নি ও যদি অন্যকারো হয়ে যায় তাহলে আমি কষ্ট পাব। ভেবেছিলাম ওকে দেখতে আমার ভালো লাগে শুধু কিন্তু সেদিন বুঝতে পারলাম অনুভূতিটা শুধু ভালোলাগার না ভালোবাসার।
ব্যাপারটা আজব! ওকে আমি শুধু চারদিন দেখেছিলাম।
শুধু চারদিন…….
ওর পনেরো বছর থেকে আঠারো বছর প্রতিদিন ওর জন্মদিনে। একটা মানুষের প্রতি চারদিনে এতটা জড়িত কেউ হতে পারে না। কেউ চারদিনে কারও জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হতে পারে না। কেউ চারদিনে জীবনের এক অংশ দখল করতে পারে না। কেউ চারদিনে আমার প্রথম ভালোবাসার উপাধি গ্রহণ করতে পারে না।
যেখানে সামনের মানুষটা তা জানেই না।

এরপর আমার জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে কাউকে ওর জন্য নিজের জীবনে স্থান দিতে পারি নি। তোর মনে আছে তুই যখন ওর সাথে কথা বলতে বলতি আমি কখনো ওর সাথে কথা বলতে চাইতাম না। কারণটা আমি ওকে ভালোবাসতাম। কিন্তু ওর থেকে বেশি তুই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলি। আর ও ছিলো অন্যকারো। ওর স্বামী তুই না হলেও আমি কখনো ওর জীবনে আসতাম না। কারণ কোনো দম্পতির মাঝে আসাটা বেমানান!
ও অন্যকারো এটা আমার মানতেই হতো।

নূহা আমার জীবনে আসে। যে আমাকে আবার জীবন বাঁচতে শিখিয়েছে। বাবা ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করার পর থেকেই ও আমার যত্ন নিতো, অনেক সময় দিত। আর ওর এত মিষ্টি স্বভাবে কে না মন হারতে বাধ্য বল? আমিও হেরে গেছি ওর কাছে। আবার ভালোবেসেছি। তবে দেরি হয়েছে বটে, দুটোবছর লেগে গেছে।

আমি বাংলাদেশে ফেরার পর যখন তুই প্রভাকে আমার সাথে দেখা করাতে নিয়ে এসেছিলি, তখন ও সাদা রঙের জামদানী পরা ছিলো, চোখে কাজল মাখা ছিলো আর হাতে ক’টা চুড়ি। ব্যাস এতটুকুই। তবুও ওকে অসম্ভব সুন্দর লেগেছিলো। ওকে একপলক দেখতেই আমার হৃদয়ে যেন শীতলতা ছড়িয়ে গেল। হৃদয়ের স্পন্দন আরও বাড়লো। দ্রুত হলো।
আমার তখন নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছিলো। আমি কীভাবে প্রভার প্রতি অনুভূতি রাখতে পারি? এটা উচিত ছিলো না। ও অন্যকারো ছিলো আর আমি অন্যকারো। আমি নূহাকে ভালোবাসি তাহলে প্রভাকে দেখলে এমন অনুভূতি কেন? হয়তো হৃদয়ের এক কোণে ও লুকিয়ে ছিলো তাই।
আমরা মন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও নিজেকে পারি। কাওকে ভালোবাসাটা হয়তো নিজের বশে থাকে না কিন্তু সে ভালোবাসার নামে তুমি অন্যায় কর বা না কর সেটা তোমার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সে একপলক দেখার পর আর কখনো আমি ওর দিকে তাকাই নি। শুধু এইজন্য না যে ও তোর স্ত্রী, বরং এইজন্যও যে ভয় লাগতো আমার আবারও ওর প্রেমে পড়ার ভয়, আবারও সেই কষ্ট উপভোগ করার ভয়।
ওর সাথে কথা বললেও অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলেছি। যতদিন না পর্যন্ত ও নূহা ও তোর অবৈধ সম্পর্কের নালিশ জানাতে আমার কাছে এসেছিলো।

এইটা আমি বিশ্বাস কীভাবে করি বল? তুই আমার এত বছরের বন্ধু আর নূহা আমার ভালোবাসা। তোদের আমি খুব কাছের থেকে জেনেছি, বুঝেছি, চিনেছি। তোরা কখনো এমন করবি না আমার বিশ্বাস আছে। হ্যাঁ, আমি প্রভাকে ভালোবেসেছি। কিন্তু ওকে কখনো চেনার সুযোগ পাই নি। নূহার মতো ওকে আমার চেনে ভালোবাসার সময় হয় নি। আর ওর মায়ায় জড়িয়ে আমি আমার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসায় প্রশ্ন তুলতে পারতাম না।

এই মধ্যরাতে হঠাৎ এইসব কেন লিখছি?
কারণ আমি আবারও ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। যার জন্য আবারও আমার নিজেকে ঘৃণা হয়। যে তোদের দুইজনকে আমার জীবন থেকে নিয়ে গেছে তাকে আমি আবার কীভাবে ভালোবাসতে পারি? যে তোদের দুইজনের উপর এত জঘন্য আরোপ লাগিয়েছে তাকে আবারও আমি কীভাবে ভালোবাসতে পারি?
আবারও?
হয়তো কখনো ওকে ভালোবাসা বন্ধই করি নি। হৃদয়ের এক কোণে হয়তো বন্দী ছিলো ও সবসময়। যেদিন ভোরে আবার ওকে সে প্রভাতে ছাদে দেখি সেদিন মনটা আপনা-আপনি সে ভালোবাসাটাকে মুক্ত করে দেয়। আমি বারবার চাই সে ভালোবাসাকে আবারও বন্দী করতে কিন্তু পারছি না।

আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় ওকে ভালোবাসতে।
আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় যখন ওর হাত ধরতে ভালো লাগে তাই।
আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় ওর কৃষ্ণাঙ্গ কেশে যখন ডুবে থাকতে ইচ্ছে হয়।
আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় যখন ওর চোখে ডুব দিলে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ি আমি।
আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় যখন ওর চোখে তোর
জন্য ভালোবাসা দেখি।
ঘৃণা হয়, কষ্ট হয়, ঈর্ষা হয়।

মাফ করে দিস ভাই, আমি তোর ভালোবাসার মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছি বলে।

ইতি
তোর অননুগত বন্ধু
অর্ক

চলবে……

[আশা করি ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন ও ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন।]

পর্ব_১৮ঃ
https://www.facebook.com/828382860864628/posts/1207890646247179/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here