মশারি পর্ব-৮

0
1104

বর বউয়ের রোমান্টিক ঝগড়ার গল্প:

♠♥♠ #মশারি ♠♥♠

♣♣পর্ব : ৮

গল্পকার : #গল্প বুড়ি তিলোত্তমা
!
!
!
!
এই বলে সাহিল আমাকে ঘুরিয়ে ওর সামনা সামনি দাড়া করালো। আর ওর ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের কাছাকাছি এনে ছুঁয়ে দিতেই……..যাবে ।
!
ঠিক তখনি দরজার বাহিরে থেকে আওয়াজ এলো….
!
কিরে ভাই বউকে ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছে না বুঝি । তারপরও দয়া করে বেরিয়ে আয়। খুবি আরজেন্ট দরকার আছে। এরপর বউয়ের সাথে সময় কাটালে কেউ ডিস্টার্ব করবে না আমি কথা দিচ্ছি ।
!
কথাটা শুনেই আমি তাকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। আর বলমাম, নিজের তো লজ্জা শরম হায়া সব গিয়েছে । এখন তার সাথে সাথে আমার লজ্জা শরমো খোয়াবে।
এই কথা শুনে, বরটা আমার সরে গিয়ে দরজার সামনে এসে লুচু মার্কা একটা হাসি দিয়ে বলল, এদের যন্ত্রণায় আমার এত বড় সুযোগ টা মিস হয়ে গেল। আর একটা চোখ মেরে বললো, পরে এসে সুযোগ বুঝে সুদে -আসলে সব পুষিয়ে নিয়ে নিব।
আমিও মনে মনে বললাম, আল্লহ আমারে বাঁচালে! আর মিঃ বর বাকির নাম ফাকি। এরপর তোমাকে সুযোগ দিলে তো।
!
আমিও তারপর তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ বাসার উত্তর – দক্ষিন কোন কিছুই চিনিনা। কাল রাতে তো কিছুই খেয়াল করিনি। কানার মত যে যেদিকে নিয়ে গিয়েছে সেই দিকেই গিয়েছি। এখন যে কোন দিক থেকে কোন দিক যাবো ভেবে পাচ্ছি না। এর মধ্যেই দেখলাম সায়লা এসে হাজির।
!
সায়লা : আরে মিষ্টি ভাবী তুমি ? এসো চলো আমি তোমাকে মায়ের ঘরে নিয়ে যাচ্ছি। ঐখানে সবাই বসে আছে তোমাকে দেখার জন্য।

আমি বললাম সায়লা, আমার মনে হয় বের হতে দেরি হয়ে গিয়েছে। সবাই কি না কি ভাববে।তারপর সায়লা বলল,আরে না কে কি ভাববে মানে। আমি আছি না! আমি থাকতে তোমার কোন চিন্তা নেই। আমি সব সামলে নিবো।
!
এরপর মায়ের ঘরে গেলাম, গিয়ে সবাইকে সালাম দিলাম। সবাই ভালমন্দ কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো। আমিও করলাম। এর মাঝে কিছু মানুষ তো মনে হয়, বউ না বাঘ দেখতে এসেছে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে । এক একজনে এক এক মন্তব্য । আমার মনে হচ্ছিল, এরা কোরবানির হাটে গরু কিনতে এসেছে। এর মাঝে শ্বশুড় আব্বা আসলেন। তার সাথেও কথাবার্তা হল। হঠাৎ এর মধ্যে আমার শ্বাশুড়ি মার মনে পরে গেল, তার ছেলেকে #মশারি টানিয়ে দিয়েছি নাকি ?
আমিও মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম হুম।
এ কথা শুনে বাকি সবাই হা হয়ে রইল ।
আমার শ্বাশুড়ি মা বললেন, দেখ মা, আমি যতদিন বেঁচে আছি। সংসার নিয়ে তুমি ভেবোনা। তুমি শুধু সময়মত আমার ছেলের #মশারি টা টানিয়ে দিও।
আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না, কি আজব ফ্যামিলিতে দিলে রে বাবা!
এর মাঝে আমার শ্বশুড় বললো, তুমি তো ছেলেটাকে অলস বানিয়ে রেখেছো । কোথায় ছেলেটার আলসেমি ছাড়াতে বলবে। তা না করে তুমি, তার আলসেমি আরও বাড়াতে চাইছো। বউমা তুমি ওর কানটা ধরে #মশারি টানাতে বলবা।
একথা শুনে সবাই হাসলো,শুধু আমার শ্বাশুড়ী মা ছাড়া।
!
যাইহোক তারপর সবাই মিলে সকালের নাস্তা করে আর কিছুক্ষন গল্পগুজ্বব করলাম ।
!
এরপর সায়লা আমার রুমে নিয়ে এসে আমাকে ফ্রেশ হতে বললো। ওর বান্ধিরা নাকি আমাকে সাজাবে। আমিও তাড়াতাড়ি করে গোসলটা সেরে নিলাম। আমার গোসল করতে করতেই দেখি সায়লা ওর বান্ধুবীদের নিয়ে হাজির ।
!
আমি ওদের বসতে বললাম। তারপর সবাই মিলে আমাকে সাজাতে আরম্ভ করলো।

আমি মেরুন লাল রংএর একটা ঢাকিই বেনারসি শাড়ী পরলাম । তার সাথে আমার শ্বাশুড়ী মায়ের ট্রেডিশোনাল গহনা আর মাথায় হিজাব পরলাম। সব মিলিয়ে আমাকে খুব একটা খারাপ লাগছেনা।
বলতেই হয়,মেয়ে গুলোর এলেম আছে বটে।
!
এরপর শুরু হয়, এদের সেলফি তোলার ঝড়।
ওদের সাথে বেশ ভাল একটা সময় কাটালাম।
!
এর মাঝে আমার বর রুমে ঢুকলেন । ঢুকেই দেখলেন ওরা তো ওদের মতই আছে। তাই কোন দিক না তাকিয়ে, আলমারি থেকে পান্জ্ঞাবী বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলেন।
যখন ওয়াশরুম থেকে বের হলেন, আমি তো হা হয়ে গেলাম । ব্লাক কালারের পান্জ্ঞাবী তার সাথে সাদা কালের চুড়িদার। সব মিলিয়ে কোন হিরোর চেয়ে কম না।
!
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই গরমে কালো কালার পান্জ্ঞাবী কেন।? আর পান্জ্ঞাবী টা চেনা চেনা লাগছে কেন?
ও হ্যা মনে পরলো, এই পান্জ্ঞাবীটা তো আমি একটা শো রুমে দেখেছিলাম। আর বলেছিলাম, আমার বরকে এরকম একটা পান্জ্ঞাবী কিনতে বলবো ।
!
কিন্তু ওনি কিভাবে জানলেন এই পান্জ্ঞাবী টার কথা।
যাই হোক হতে পারে, ইনসিডেন্টলি।
!
হাসির শব্দ পেয়ে হুসে ফিরে এলাম। সায়লারা খুব হাসাহাসি করছে। আর বলছে, ভাইয়া তুই বিয়ে না করতে করতেই শোক দিবস মানাতে শুরু করলি।
এই গরমে কালো কালার পান্জ্ঞাবী।
হা হা হা…..———–
!
সাহিল সায়লার মাথায় একটা থাপ্পর মেরে বললো, আজ যে শুক্রবার সে দিকে খেয়াল আছে। মসজিদে জুমার নামায পড়তে যাবো । এই বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
!
আমিও মনে মনে বললাম বেচারা…… আমার সাথে বদমাশি করার সুযোগ টা তুমি আর পেলে না।
!
!
কিছুক্ষন পর আমাদের বাড়ি থেকে সবাই চলে এসেছে। সবাই এসে আমার সাথে দেখা করলো ।
তাহা আর তাজ তো বলে উঠলো, পিউমনি তোমাকে না একদম টিভির বউ বউ লাগছে। আমি হেসে দুজকে একটু আদর করলাম।
!
তারপর জিজ্ঞাসা করলাম বাবা কোথায়? ওরা উত্তর দিল বাবা আসেনি।ওনার শরীর নাকি ভাল নেই। আমি বললাম শরীর ভাল নেই মানে? এখন শরীর আরো ভাল থাকার কথা। কারন বাবার আপদ তো বিদায় করেছেই । তবে এত টেনশন কেন। কারন আমি জানি বাবা টেনশন করলেই শরীর অসুস্থ হয়।
!
ছোট ভাবী আমাকে থামিয়ে বললো, ওসব কথা বাদ দে।
াসল কথা বল।

!
এরপর শুরু হলো ভাবীদের থার্ডক্লাশ মার্কা প্রশ্নের ঝড়। কিছু বলতেও পারছি না, আবার শুনতেও পারছি না।
!
আমার একটা কথা বুঝে আসেনা, অন্যের বাসর রাত নিয়ে সবার এত কিউরিসিটি কেন।?
আর দেখা যায় বিবাহিত মানুষের কিউরিসিটিটা একটু বেশিই ।

!
আমি বললাম এসব কথা বাদ দাও তোমরা । দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে তোমরা খেয়ে নাও।
এরমধ্যে সায়লা সবাইকে খেতে ডাকলো। আমাকেও ওদের সাথে নিল। সবাই মিলে খেতে বসে দেখছি,আমার বরটা আমার দিকে হাবলার মত তাকিয়ে আছে। তার তাকানো দেখে সকালের সেই, ভাইয়াটা বলছে, ভাই বউ পরে দেখিস। আগে দেখ শ্বশুড়বাড়ীর সবাই ঠিক মত খাচ্ছে কি না। সে মাথা চুলকিয়ে স্বীকারউক্তি জানালো হুম দেখছি।
!
!
আমি বলছি বেচারাটাকে কেউ শান্তি দিচ্ছে না । আরেকটা বিষয় লক্ষ করলাম, তিনি বাহিরে বেশ চুপচাপ। বেশি কথা বলে না, চেহারাটা পুরা নিরহ নিরহ করে রাখে। এজন্য ই তো সবাই মনে করে অতিব ভদ্রছেলে। কিন্তু আমি তো জানি, কয় নাম্বার হাড় বজ্জাত।

!
আমরা সবাই খাবার শেষ করলাম। আমি আর ভাবীরা আমার রুমে এলাম। বড় ভাবী বলছে, তোর সব গুছিয়ে নে । আমাদের তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। তা না হলে রাত হবে।

!
আমি বললাম কোথায় যাবো ? আমি কোথাও যাবো না। এ কথা বলতেই, সাহিল দরজার বাহির থেকে বলল, আমি কি একটু ভিতরে আসবো ?
!
ভাবীরা হেসে বলল, এসো ভাই এসো, রুম তোমার বউ তোমার আমরা অনুমতি দেবার কে ? আর হ্যা আমার ননদটাকে এক রাতে কি যাদু করছেন যে ? সে এ বাড়ি থেকে যেতেই চাইছে না। এই বলে, ভাবীরা চলে গেল।
!
!
ভাবীর ওপর আমার এত রাগ হচ্ছিল কি বলবো। ঐ লোকটা কথাগুলো শুনে মুচকি মুচকি হাসছিল। আর এখন ভাবীরা চলে যাওয়াতে এখন তো সোনায় সোহাগা…….
!
!
সাহিল : আমার বউটাকে একটু দেখি তো! কেমন লাগছে । হুম ভালই লাগছে কিন্তু…..
!
আমি : কিন্তু আবার কি ? আর হ্যা আমাকে যে রকম মনে হয় সেই রকম লাগুক। তাতে আপনার কি ?
!
এই কথা বলতেই সে হিহিহি করে দাত কেলিয়ে হেসে দিলো।আর বললো, আমার জন্য সেজেছে, আর আমাকেই বলছে, আমার কি ?
বউ এদিকে এসো আমরা সেলফি নিই। বউরের সাথে তো সেলফিই নিতে পারলাম না। এই বলেই সেলফি তোলা শুরু করেছে। আর বলছে বউয়ের সাথে সেলফি তুলছি নাকি মূর্তির সাথে তুলছি বুঝতে পারছি না। তারপর লম্বুটা কিছুটা ঝুকেই আমার গালের সাথে গাল লাগাবে—-
তখনি সায়লা ডাক দিলো ভাবী তোমরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসো। বাবা বলেছে তা না হলে, তোমারদের যেতে রাত হবে।
!
তারপর সব গুছিয়ে, সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে গাড়িতে বসলাম।
!
গাড়িতে আমি আর ওনি পাশাপাশি বসেছি । আমি জানি তো বদমাইশটার মনে লাড্ডু ফুটছে।
কারন একটা প্রাইভেট কার শুধু আমাদের জন্য আনা হয়েছে ।
কিন্তু কে জানতো , তার বাড়া ভাতে ছাই পরবে —…..

!
!
!
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here