মুহূর্তে পর্ব-১৫

0
678

#মুহূর্তে
পর্ব-১৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

কৃষ্ণাঙ্গ আকাশ। আকাশের কালো মেঘের রাজ্য ভেসে বেড়াচ্ছে। কবিতার মনে হলো আকাশও আজ দুঃখ ঝরাতে চাইছে এই পৃথিবীর বুকেতে। সে সবে গিয়েছিল ধ্রুবর রুমে খাবারের প্লেট দিয়ে আসতে। সেখানে যেয়ে খুবই বাজে অবস্থায় দেখল সে ধ্রুবকে। নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছিলো তাকে। তার নিজের বুকের ভেতরই কেঁপে উঠে। সে মাঝেমধ্যে চিন্তা করে তাহিরা আপু এতবছর একা নিজেকে কীভাবে সামলেছে? সে-তো আপন কাউকে হারানোর কথা চিন্তাও করতে পারে না।

কারও আসার আভাস পেয়ে একটু চমকাল। সে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখতে পায় তীর্থকে। তড়িঘড়ি করে বলে, “ওহ আপনি… আপনি সম্ভবত সিগারেট খাবেন। আমি যাই তাহলে।”
কবিতা যেতে নিলেই তার হাত ধরে নেয় তীর্থ, “তুমি কী আমার থেকে ভয় পাচ্ছ কবিতা?”
“না…না তো। ভয় পাব কেন?”
তীর্থ দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবিতার হাত ছেড়ে দিলো। তার দুইহাত পকেটে ভরে বলল, “তুমি আমার কাছ থেকে ভয় পাচ্ছ। স্বাভাবিক। ওদিন তুমি যা দেখলে তারপর তোমার ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। আমি কখনো তোমাকে আমার এই জীবন দেখাতে চাই নি কবিতা। আমি কখনো তোমাকে আমার জীবনে স্থানই দিতে চাই নি। আমার আঁধারের রাজ্যে তুমি সেই উজ্জ্বল গোলাপ যাকে আমি ছুঁলে তাও ধ্বংস হয়ে যাবে। যা আমি চাই না।”
কথাগুলো শুনে বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠে কবিতার। সে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তীর্থের দিকে। কিন্তু তীর্থের দৃষ্টি তার দিকে নেই। সে তার সাথে দৃষ্টি মিলাচ্ছে না। আচমকায় তীর্থ তার কাঁধে মাথা রাখে কিন্তু হাত দিয়ে তাকে ছোঁয় না। সে কাঁপানো গলায় বলে, “কিন্তু তবুও আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি কবিতা। আমি ভুলে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।”
কবিতার বুকের বা পাশটায় তীব্র যন্ত্রণা হলো এক মুহূর্তের জন্য। পরের মুহূর্তেই শান্তি ছেয়ে গেল তার প্রতিটি অঙ্গে অঙ্গে।

তীর্থ তার কথা বলতে থাকে, “ছোটবেলায় আমার বাবা বিদেশে চলে গিয়েছিলো। ক’বছর পর শুনলাম সেখানে অন্য বিয়ে করেছে সে। আর খোঁজ পাই নি তার। মা তার আত্নীয়দের কাছে হাত পেতে আমাকে খাইয়েছে, পড়িয়েছে, মানুষ করেছে। ছোট থেকেই আমার মা’কে অন্যের সামনে হাত পাততে দেখেছি আমি। অপমান হতে দেখেছিলাম। বড় হবার পর একটি সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। একদিন এত টাকা আয় করব যেন কখনোই টাকার অভাব না হয়। এই নিষ্ঠুর জগৎ দেখেছি ছোট থেকেই। পড়াশোনার জন্য মা’য়ের কাছ থেকে আলাদা থাকতে হতো। এমনও দিন কাটিয়েছি যে টানা দুইদিন না খেয়ে পড়াশোনা করেছি। চাকরির চেষ্টাও করেছি। কিছু হয় নি। পড়ার খরচও চালাতে পারতাম না। তারপর চোখের সামনে যে সহজ রাস্তা পেয়েছি তাই গ্রহণ করেছি। এই পৃথিবীতে কেউ-ই ইচ্ছা করে নিজের জীবনটাকে অন্ধকার বানায় না কবিতা।” কিছুক্ষণের বিরতি নেয় তীর্থ। আবার বলে, “জানো, এই কথাগুলো আজ পর্যন্ত কাউকে আমি বলি নি। তুমিই প্রথম। কেন যেন এই পৃথিবীর কাউকে মনের কথা বলতে ইচ্ছা করে না, তোমাকে ছাড়া। ভালো লাগে না তোমাকে ছাড়া। তোমাকে ছাড়া এই পৃথিবীটাই ভালো লাগে না। আমি কেবল তোমার মাঝে নিজের সুখটা খুঁজে পাই। তোমাকে দেখা ছাড়া এই চারটাদিন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আজব লাগে। এতগুলো বছর যাদের সাথে কাটিয়েছি তাদের জন্যও এমন অনুভূতি হয় নি। তুমিবিহীন আমার জীবনটা শূন্য হয়ে পড়েছে। কী করব আমি? কীভাবে থাকব আমি?”

কথাগুলো শুনে কবিতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তীর্থ কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি জানি তোমাকে ভালোবাসার অনুমতিটা আমার নেই, কিন্তু তুমি আমার জীবনের কবিতা সূচনা ও অন্ত তুমি হয়ে পড়েছ। আমার জীবন এখন তোমার থেকে শুরু এবং তোমাতেই শেষ।
কীভাবে এই অনুভূতির বিসর্জন দিতে হয় তা আমার জানা নেই।”
কবিতা আলতো করে তীর্থের শার্টের হাতাটি ধরে। চোখ নামিয়ে কাঁচুমাচু করে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি ভালোবাসেন?”
“তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য।”
“আমার জন্য কী করতে পারবেন?”
“সব।”
এইবার কবিতা তাকাল তীর্থের দৃষ্টিতে, “শুনেছিলাম কাউকে পরিবর্তন করে ভালোবাসা যায় না। কিন্তু আমার মতে ভালোবাসলে, ভালোবাসার মানুষটার খারাপ অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা আপনার দায়িত্ব হয়। আমাকে আপনার জীবনে পেতে হলে মারামারি বন্ধ করতে হবে, আস্তে-ধীরে সিগারেট খাওয়া ছাড়তে হবে, অন্যকোনো খারাপ অভ্যাস থাকলে তাও ছাড়তে হবে, কখনো আমার বিশ্বাস ভাঙতে পারবেন না, আমাকে ভালোবাসা বন্ধ করতে পারবেন না, যত দ্রুত সম্ভব রাজনীতি ছাড়তে হবে। আপনি এর পরিবর্তে টিউশনি করতে পারেন অথবা কোনো ব্যবসা। আমি একটা কথা বলে রাখি, আমার ভাই পুলিশ। আমি আমার পরিবারের আদরের। কোনো গুন্ডামি করে এমন ছেলের হাতে আমাকে তুলে দিবে না। আর আমি আপনার সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াব না, একবারে বিয়ে করব। আপনি কী এখনো রাজি?”
তীর্থ হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো কবিতার দিকে, “তুমি আমাকে ভালোবাসো?”
“ভালো কীভাবে বাসে তা আমি জানি না। কিন্তু আপনাকে ভালো লাগে। অতিরিক্ত ভালো লাগে। আপনার জন্য মনটা অস্থির হয়ে থাকে। আপনার হাসি দেখতে ভালো লাগে, আপনার সাথে সময় কাটাতেও ভালো লাগে, কথা বলতে ভালো লাগে। সবটা ভালো লাগে।”
তীর্থ শক্ত করে ধরে কবিতার হাতটা। একগাল হাসে সে। তার ঠোঁটের কোণে এত গাঢ় হাসি আর কখনো দেখে নি। তার মনে হলো কোনো পুরুষের এত সুন্দর হাসির দর্শনও সে আর কখনো করে নি। সে জিজ্ঞেস করে, “সবটা পারবেন তো? আমি অহেতুক আপনার ও আমার অনুভূতি নিয়ে খেলতে চাই না।”
“পারব। তোমার জন্য আমি সব পারব।”
“আপনার প্রেমিকাকে ছাড়তে পারবেন?”
তীর্থ হতদম্ব, “আমার প্রেমিকা?”
কবিতা হাসে, “তো কি? আপনার সিগারেট। যখনই আপনাকে দেখি আপনার ঠোঁটে সিগারেট থাকবেই। এই নেশা ছাড়তে পারবেন?”
তীর্থ এক কদম এগিয়ে এলো কবিতার দিকে। তার গালে হাত রেখে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল তার চোখে এবং বলল, “তোমার নেশার কাছে এই পৃথিবীর সকল নেশা তুচ্ছ।”
শিউরে ওঠে কবিতা। তার বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠে। সে মাথা নামিয়ে নেয়। লজ্জায় মেখে যায় সে। তার ঠোঁটের কোণে এঁকে উঠে লজ্জামাখা এক হাসি। তীর্থ অনুমতি চায়, “আমি কী একটিবার তোমায় বুকে জড়িয়ে ধরতে পারি?”
“জ্বি না, একেবারে বিয়ের পর।”
.
.
চার মাস পর,
“ভাইয়া হঠাৎ করে বললেই হলো? আমার ভার্সিটি নেই না’কি? আমাকে কি পেয়েছ তোমরা? তোমরা বলবে আর আমি সব ছেড়ে বিয়ে করে নিব?” বিরক্ত নিয়ে বলে কবিতা। ফোনের ওপাশ থেকে তার বড় ভাইয়ের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো, “তুমি কি করবে না করবে তার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে নিয়েছি। আগামী মাসে কথনের আমেরিকা যাওয়ার ডেট। তাই এই শুক্রবারই তোমাদের বিয়ে দিতে হবে। একমাস ঘুরাঘুরি করে নিবে। ও চলে যাওয়ার কয়েকমাসের মধ্যে তোমাকেও নিয়ে যাবে। সেখানে তোমার যা মন চায় করো। আপাতত তুমি আমার দায়িত্ব এবং আমি তোমার অভিভাবক। আমি যা বলব তোমার তাই করতে হবে।”
রাগে কটমট করে কবিতা জিজ্ঞেস করে, “বিয়ের কথা কী কথন জানে?”
“তো ওর বিয়ে ও জানবে না? পুরুষ মানুষ, ওর অনুমতি ছাড়া তো বিয়ে দিতে পারবে না ওকে। আগামীকাল আবির তোমাকে নিতে আসছে। বেশ কয়েকদিনের ছুটির আবেদন করে এসো ক্লাসে।”
“জ্বি।”

ফোনটা রাখার পরই রাগে কবিতা কল দেয় কথনকে। পেয়েছে কি লোকটা তাকে? যখন যা মন চায় তার সাথে তাই করবে? ক’দিন আগে তার এক্স-গার্লফ্রেন্ড এসে তাক কথা শুনিয়ে গিয়েছিল। তাও অহেতুক। আর এখন আবার এই নাটক। তাকে কি ভেবে রেখেছে যখন যা মন চাইবে তাই করবে তার জীবনের সাথে? এত সোজা?
কথন একটাও কল ধরলো না। কতক্ষণ পর মেসেজ এলো কথনের, “আমি হাস্পাতালে আছি, কাল সকালেই তোমাকে কল দিচ্ছি।”
কবিতাও মেসেজের রিপ্লাই দেয়, “কল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আগামীকাল কাল বিকেল চারটায় আমার সাথে দেখা করবেন। আপনার যা কাজই থাকুক এডজাস্ট করে নিবেন। তাও দেখা করবেন আমার সাথে। জরুরি কথা আছে। দুপুরের মাঝে এড্রেস পাঠিয়ে দিব।”

কবিতার বেশ অশান্তি লাগছিলো। ভয়ে তার বুকটা কাঁপছিল। সে রুমে পায়চারি করতে শুরু করে কিন্তু বিশেষ লাভ হয় না। বুকের ভেতরের সে অশান্ত ঝড় কোনোমতে শান্ত হয় না। অবশেষে সে কল দেয় তীর্থকে। কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে তীর্থ বলে, “তুমি না ঘুমাবে বলে কলটা রাখলে একটু আগে। ঘুমাও নি এখনো?”
“তী…তীর্থ!” গলাটা কেঁপে উঠে কবিতার। সে নিজেও কাঁপছিলো। ফোনের ওপাশ থেকে অশান্ত গলা শোনা যায়, “কী হলো কবিতা? তোমার কী হয়েছে? তুমি ঠিক আছো তো?”

“আমার খুব অশান্ত লাগছে। বড় ভাইয়া কল করেছিলো। উনি বলেছে…. ” এইটুকু বলে থেমে যায় কবিতা। তীর্থ অশান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কী বলছে?”
“বলেছে যে….বলেছে যে এই শুক্রবার আমার বিয়ে দিবে কথনের সাথে। আর পাঁচদিন পর।”
ওপাশ থেকে কোনো শব্দ পাওয়া গেল না। কবিতাও কিছু বলল না। নিরবচ্ছিন্ন কাটলো কিছু মুহূর্ত। কিছুসময় পর তীর্থ বলে, “কথন তো তোমাকে বিয়ে করবে না বলল।”
“ওইটাই তো। আমিও কিছু বুঝতে পারছি না।”
“তোমাকে আমি অন্যকারো হতে দিব না। তুমি বলায় আমি মারামারি সব ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু যদি প্রশ্ন তোমার উপর আসে আমি নিজেকে সামলাতে পারব না।”
“খবরদার তুমি উল্টাপাল্টা কিছু করবে না। আর উনাকে তো একটুও না। আমি আগামীকাল উনার সাথে যেয়ে কথা বলব।” কবিতা কঠিন গলায় বলে।
তীর্থের কন্ঠ বেশ রাগী শোনা যায়, “তাকে নিয়ে তোমার এত চিন্তা কেন আমি বুঝি না।”
“কারণ সে সবকিছুতে সবসময় সাপোর্ট করেছে। আর তার পরিবার আমাকে অনেক আদরও করে।”
“তোমাকে এত সাপোর্ট করলে তাহলে আমাদের কথা তাকে জানালেই পারতে। অন্তত তখন আর তোমাকে বারবার দেখা করতে বলতো না।’ ঝাঁজালো গলায় বলে তীর্থ।
কবিতা খিলখিলিয়ে হেসে দিলো, “বুঝলাম। কেউ জেলাস ফিল করছে।”
“আমি? একদমই না।”
“জ্বি, একদম। তোমার হিংসা হচ্ছে। আর উনাকে না জানানোর কারণ আগেই বলেছি। আমি চাই নি ভাইয়া কোনোভাবে আমাদের ব্যাপারে জানুক। ক’মাস হলো তোমরা সবাই এই রাজনীতির ঝামেলা থেকে বের হয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করলে। আমি তো ভেবেছিলাম যে আরও কয়বছর গেলে ভাইয়াকে ব্যাপারটা জানাব। কিন্তু এত বড় ঝামেলায় পড়ব কে জানতো।”
আরও কিছু সময় কাটে। তীর্থ কিছুসময় কোনো কথা বলে না। তারপর জিজ্ঞেস করে, “আমি কী তোমার ভাইয়ের সাথে কথা বলব?”
“পাগল তুমি? তোমার হিস্ট্রি জানলে আমাকে খুন করে ফেলবে। আমি আগে কথনের সাথে কথা বলে দেখি। কাল আবির ভাইয়া এসে সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে যাবে। এর আগে উনার সাথে কথা বলে যাব।”
“কালই চলে যাবে?” কেমন উদাস শুনাল তীর্থর কন্ঠ।
“চিন্তা করো না। ফিরে তোমার কাছেই আসব।”
“আমি ফোন কাটছি। তুমি এখনই ঘুমিয়ে পড়বে না।”
“কিন্তু…. ” কবিতা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তীর্থ ফোন কেটে দেয়। সে বুঝতে পারে না হঠাৎ করে এমন ভাবে ফোন কাটার মানেটা কি? এর উপর থেকে ঘুমাতেও মানা করে দিলো। সে করবেটা কি?

ঘড়ির কাঁটা ধরে ঠিক বাইশ মিনিট পর কল আসে তীর্থের। সে কল করে বলে কবিতাকে বারান্দায় আসতে। বারান্দায় এসে দেখে লিমন, পলাশ ও তীর্থ তাদের বাড়িরের রাস্তার অপর পাড়ে দাঁড়ানো। সেখানে একটি বড় হলুদ রঙের দেয়ালে লাল রঙ দিয়ে লেখা, “একটু হাসো দেখি।”
কবিতা লেখাটি দেখে সাথে সাথে হেসে দিলো। তার মনে হলো।এই মানুষটাকে নিজের জন্য বাছাই করে জীবনের সবচেয়ে ভালো কাজ করেছে সে। মাঝেমধ্যে তীর্থের এমন পাগলামি দেখে নিজেকে কোনো রাজ্যের রাণী মনে হয় তার। অবশ্য তীর্থের রাজ্যের রাণীই। যাকে বিশেষ অনুভব করানোর জন্য সব করতে পারে তীর্থ।
গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে তাকিয়ে রইলো সে তীর্থের দিকে। তার ঠোঁটের কোণে এখনও সে রাজ্য জয়ের হাসি। ফোনটা বেজে উঠে তার। তীর্থের কল। কবিতা ফোনটি রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে তাকায় তীর্থের দিকে। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে সে কবিতার দিকে। কী গভীর দৃষ্টি! সে অপলক কবিতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “ভালোবাসি।”
কবিতা কেবল হেসে বলে, “পাগল!”
.
.
পরেরদিন কবিতা আর ভার্সিটিতে যায় না। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে দুপুর হয়ে যায় তার। বিকেল চারটায় কথনের সাথে দেখা করার কথা। তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে রওনা দেয় দেখা করার জন্য। আবির ভাইয়ার বাসায় আসার আগে তার দেখা করে ফিরে আসতে হবে। সময়মতোই পৌঁছাল সে। যেয়ে দেখে কথন আগে থেকে বসে কফি খাচ্ছে। তার হাতে একটি কালো মলাটের ডায়েরি। কবিতা টেবিলের সামনে যেতেই টেবিলে শব্দ করে হাত মেরে বলল, “আপনার সমস্যা কী হ্যাঁ? বিয়েকে ফাজলামো পেয়েছেন? একবার বললেন করবেন না, আর এখন এক সাপ্তাহে বিয়ে! এইসবের মানেটা কী?”

কথন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকি কবিতার দিকে। সে চেয়ারে হেলান দিয়ে ছিল। কবিতার কথা শুনে সোজা হয়ে বসে বলল, “আরে এত হাইপার হচ্ছো কেন তুমি?”
“হাইপার হচ্ছি কেন মানে? আপনি ঝট করে বিয়ে করতে চাইবেন, আর আমি এইখানে এসে আপনার সামনে খুশিতে নাচবো। এই ভেবেছিলেন?”
“মাথা ঠান্ডা করো আগে। মনে হচ্ছে এখনই বোম্বের মতো ঠাসঠুস ফুটে যাবে।”
“রসিকতা করবেন না বলে দিলাম।”
কথন উঠে কবিতাকে চেয়ারে বসিয়ে। ওয়েটারকে ডেকে কবিতার জন্য একটি কোল্ড কফির অর্ডার দেয়।
তারপর নিজের চেয়ারে বসে বলে, “আর শুনো বিয়ের সিদ্ধান্ত আমি না, আমাদের পরিবার নিয়েছে।”
“আপনি বিয়ের জন্য না করলে আপনার পরিবার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে?”
“আমি বিয়ের জন্য না করি নি। আরও কয়েকবছর পর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু মা জেদ করলো তাই আর না করি নি। তোমার ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়ার জন্য আমেরিকায় কয়টা ভালো জায়গাও বাছাই করেছি। কিন্তু যাবার আগে জেবা আপু শর্ত দিয়েছে তুমি তাকে কয়টা জামার ডিজাইন বানিয়ে দিয়ে যাবে। তোমার ডিজাইনগুলো তার অতিরিক্ত পছন্দ। ওহ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। এইটা তোমার জন্য। ” কথন তার হাতের কালো ডায়েরিটা এগিয়ে দেয় কবিতার দিকে। কবিতার দৃষ্টি শীতল। সে হাত বাড়িয়ে কথনের দেওয়া উপহারটা গ্রহণও করর না। কেবল জিজ্ঞেস করে, “আপনি নিজে আমাকে বলেছিলেন এই ছয়মাস আমরা স্বাভাবিকভাবে কাটাব এবং আপনি বিদেশে যাবার আগে বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবেন। আপনার কথার কী হলো? আর আপনার ক্যারিয়ারের কি হলো?”

কথনের মুখের রঙ উড়ে যায়। সে তার হাতের ডায়েরিটা টেবিলে রেখে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে, “আমি তোমাকে যতটা চিনি তুমি আমার ক্যারিয়ারে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না এটা আমার বিশ্বাস। আর আমার পরিবারের সবাইও তোমায় অনেক পছন্দ করে। আমি ভেবেছি যেহেতু আমরা একে অপরের সাথে কমফোর্টেবল তাই…..”
“আপনি বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন?”
“আমি ভেবেছি তুমিও আমার সাথে বেশ স্বস্তি অনুভব করো। আমি তোমার কাছে একটা ভালো বন্ধু। আর তুমি আমার পরিবারকেও অনেক পছন্দ করো। ”
“হ্যাঁ এইটা সত্য যে আমি আপনার সাথে অনেক কমফোর্টেবল ফিল করি, আপনার পরিবারও আমার অনেক পছন্দের, এমনকি আপনি নিজেও অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু আমি আপনার সাথে বিয়ে করতে পারব না।”
“তোমার কি এখন বিয়ে বিয়ে করতে সমস্যা?”
“আমার আপনার সাথে বিয়ে করতে সমস্যা। আপনি কেন আমার অন্য যেকোনো ছেলের সাথে বিয়ে করতে সমস্যা। আমি তীর্থকে ভালোবাসি এবং ওকেই বিয়ে করব।”

চলবে….

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here