মুহূর্তে পর্ব-৪

0
985

#মুহূর্তে
পর্ব-৪
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“কি প্রশ্নের উত্তর আপি?” হঠাৎই প্রশ্নটা আসে দরজার কাছ থেকে। কবিতা ভেতরে ঢুকছে। তাহিরা মৃদু হেসে বলল, “কিছু না। জলদি আয় তোর জন্য খাবার প্লেটে দিচ্ছি।”
“তুমি যাও আমি আসছি।”
তাহিরা যাওয়ার পর কবিতা কুটকুট করে যায় ধ্রুবর কাছে। তারপর মৃদুস্বরে বলে, “আপনারা দুইজন একা এইখানে কী করছিলেন ভাইয়া?”
“দুইজন একা কীভাবে হয়?”
“আরে ভাইয়া শব্দে যেয়েন না। আমার ফিলিংসটা বুঝেন। মানে কেবল আপনি আর আপু, দুইজনে শুধু রান্নাঘরে।”
“কারণ অন্যসবাই বাহিরে খাওয়া-দাওয়া করছে আর আমরা খেয়ে গেছিলাম।”
কবিতার উৎসুক ভাবটা মুহূর্তে হাওয়া হয়ে গেল। সে মুখ বানিয়ে বলল, “বুঝলাম। এত বছরেও আমার বোন কেন সিঙ্গেল। শুনেন ভাইয়া ফ্রী এর একটা এডভাইস দেই। কিন্তু এরপর এডভাইস লাগলে গিফটের পরিবর্তে এডভাইস নিতে পারবেন। সোজাসাপ্টা বললে আপু আমার বারবিকিউ করতে পারে তাই বেঁকাভাবে বলি, আমার বোনের মতো ফুল প্যাকেজ আর কোথাও পাওয়া যাবে না। যেমন সুন্দরী, তার থেকে বেশি ভালো, তেমন সব কাজে পটু, এর উপর পড়াশোনাতেও এক নাম্বার, আর আপুর রান্নার কথা মনে করলেই মুখে পানি চলে আসে। যে তার জামাই হবে তার ভাগ্য খুলে যাবে। বুঝছেন?”
“হ্যাঁ তা তো জানিই।”
“কচু জানেন। বুঝলাম এইখানে থেকে আমার বহু কাজ করতে হবে। কাজ করার জন্য শক্তি লাগে আর শক্তির জন্য ইয়ামি ইয়ামি খাবার। তাই আমি গেলাম খেতে।”
কবিতা যেমন তুফানের মতো এসেছিলো তেমনি চলেও গেল। কিন্তু তার কথা-বার্তা কিছুই মাথায় ঢুকলো না ধ্রুবর। এই নিয়ে সে মাথাও ঘামাল না। সেও গেল ডাইনিং রুমে।

কবিতা ডাইনিং টেবিলে যেয়ে আবারও তীর্থকে দেখে মুখ বানায়। খাবার মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে, “আপু তোমার হাতে জাদু আছে। আমি ছেলে হইলে চোখ বন্ধ করে তোমাকে বিয়ে করে ফেলতাম।”
তাহিরা হেসে কবিতার মাথায় টোকা মেরে বলে, “পাগল।”
“সত্যি বলছি। আবির ভাইয়া আর ধ্রুব ভাইয়া বলো তো অনেক মজা হয়েছে না?”
দুইজনে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। কবিতা তীর্থের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করতে নিতেই থেমে যায়। তারপর খোঁটা মেরে বলে, “থাক আর কাউকে না জিজ্ঞেস করি তারপর দেখা যাবে তার খাবারে ডিস্টার্ব হয়েছে বলে উঠে আমাকেও মাইর না দেয়।”
কথাটা শুনে তীর্থ তাকায় কবিতার দিকে। এই মেয়েটা সকাল থেকে এই এক কথা নিয়ে তার পিছনে কেন লেগে আছে সে বুঝতে পারছে না। বিরক্ত হলেও সে কিছু বলল না।

কিন্তু তাদের কথা-বার্তা শুনে মিদুল ঠিকই উঠে গেল। সকালে তাকে ঘুম পাড়ানোর তিন ঘন্টা পরই উঠে যায় তারপর কান্নাকাটি শুরু। তার মা’কে দেখবে। বহু কষ্টে তার কান্না থামিয়ে আবারও ঘুম পড়ায় তাহিরার দাদী। এখন আবার মিদুলের কান্নার কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায় তাহিরা। তাকে আবার চুপ করানোটা কঠিন হবে। এখনও ওর মা’য়ের হুশ ফিরে নি। তাহলে জিজ্ঞেস করলে কি বলবে সে?

মিদুল কান্না করতে করতে দাদীর রুম থেকে বেরিয়ে আসে। কবিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “আরে আরে আপু তুমি আমাকে না বলে বাচ্চা পয়দা করে নিলে?”
আবির বলে, “এত আজেবাজে কথা কীভাবে বলিস? বাচ্চাটা ওদের প্রতিবেশির। ওর মা হাস্পাতালে তাই তাহিরা নিয়ে এসেছে।”
“হাস্পাতালে কেন?” কবিতার প্রশ্ন শুনে ধ্রুব অপেক্ষা করে তাহিরা মিদুলকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া। ভেতরে নিয়ে যাওয়ার পর সে উওর দেয়, “সুসাইড করার চেষ্টা করছে।”
“কেন?”
” তার জামাই অন্য আরেক জায়গায় বিয়ে করে বসে আছে তা সহ্য করতে পারে নাই।”

তীর্থ তরকারি নিচ্ছিলো। কথাটা শুনতেই তীর্থ জোরে চামচটা বাটিতে রাখে। এতটা জোরে রাখতে শুনে সবার দৃষ্টি তার উপর আসে। নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করল সে। কিন্তু সে জানে তার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যে রাগ সে কিছুতেই প্রকাশ করতে চাইছিলো না। সে তাকাল তার সামনে বসা মেয়েটির দিকে। মেয়েটি তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। তীর্থ ভাবলো সকাল থেকে যেহেতু মেয়েটি তার পিছনে হাত ধুঁয়ে পড়ে আছে সেহেতু এইবারও কিছু একটা বলবে। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে মেয়েটি খাবার ছেড়েই উঠে গেল৷ বেসিন থেকে হাত ধুয়ে তাহিরার দাদীর রুমে গেল।

কিছু মুহূর্ত কাটে। ছোট বাচ্চাটির কান্নাও বন্ধ হয়ে আসে। তার একটু পরই কবিতা বাচ্চাটাকে কোলে করে এনে নিজের পাশের চেয়ারে বসায়। আর তাকে নিজের প্লেট থেকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। মিদুল মানা করায় কবিতা বলে, “কি বলেছিলাম আমি খাওয়া শেষ হলে তুমি আর আমি একসাথে মিলে চকোলেট আইস্ক্রিম খেতে খেতে ডোরেমন দেখব। না খেলে কিন্তু না চকোলেট আইস্ক্রিম দিব, আর না ডোরেমন দেখব।”
মিদুল ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে কবিতার দিকে। তারপর তোঁতলিয়ে বলে, “তৎপর তেলব।”
মিদুলের কথাটা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে কবিতা, “ঠিকাছে তারপর আমরা খেলব।”
“তৎপর মা’র কাতে যাব।”
“ঠিকাছে এরপর মা’য়ের কাছে যাব। এবার খাবে?”
এরপর মিদুল চুপচাপ খেতে শুরু করে।

তাহিরা এসে দাঁড়িয়েছিলো ধ্রুবর পাশে। সে বলে, “গতকাল রাত থেকে খায় নি। এত চেষ্টা করলাম তবুও না। আর কবিতা এত সহজে মানিয়ে নিলো।”
আবির হেসে বলল, “বাচ্চারা ভালো মতো বুঝে বাচ্চাদের কীভাবে লোভ লাগিয়ে কাজ করাতে হয়। নিজেও চকোলেটের ঘুষ নিয়ে সব কাজ করে আর আধাদিন কার্টুন দেখতে থাকে।”
“ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু।”
কবিতা অহেতুক বিরক্তি দেখিয়ে আবিরের দিক থেকে দৃষ্টি সরাতেই তার চোখ পড়ে তীর্থের উপর। তীর্থ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তার ঠোঁটের কোণে এঁকে আছে এক চিলতে হাসি। এই প্রথম তীর্থকে হাসতে দেখলো কবিতা। হাসলে তাকে বেশি ভালো দেখায়। একটু বেশিই।

কবিতা ভেবেছিলো এই বুঝি তীর্থ তার দৃষ্টি সরিয়ে নিবে। সে সরায় না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অবশেষে কবিতা নিজেই অস্বস্তিতে তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
.
.
“তুই তীর্থের সাথে এমন খোঁটা মেরে কথা বলছিলি কেন?” তাহিরা জিজ্ঞেস করে কবিতাকে। সে কবিতার কাপড়গুলো বের করে নিজের আলমারিতে রাখছে। আর কবিতা বিছানায় বসে খেলছিলো মিদুলের সাথে। রাতের খাবার খেয়ে তীর্থ, আবির ও ধ্রুব চলে যায় ধ্রুবর বাসায়। আর দাদীও রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে যায়।

তাহিরার কথা শুনে কবিতা তাকায় তার দিকে। উওর দেয়, “তোমাকে না একটু আগে বললাম সে বাসে কি করেছে।”
“বলেছিস তো। কিন্তু ও সম্ভবত তোর সাহায্যের জন্যই ছেলেটাকে মেরেছিলো। ধ্রুব প্রায়ই বলে তীর্থ কখনো নিজের মনের কথা অন্যের সাথে শেয়ার করে না। এছাড়া ওর সাথে অযথা খারাপ ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। ও চুপচাপ থাকলেও, ওর কাজগুলো সুবিধার না।”
“সুবিধার না বলতে?”
“ভার্সিটিতে পলিটিক্স হয় প্রায়ই। এর মধ্যে মারামারিও হয় এবং এইসব কাজে তীর্থ জড়িত। যদিও মেয়েদের সাথে কখনো খারাপ কিছু করে নি। মাঝেমধ্যে সাহায্যও করেছে অন্যের। তবুও সচেতন থাকতে দোষ কি?”
এই মুহূর্তে তাহিরার কথা শুনে কবিতার মনে পড়ে দুপুরে তীর্থ তার দিকে কিভাবে তাকিয়ে ছিলো। গভীর দৃষ্টিতে।

কবিতাকে কোথাও হারিয়ে যেতে দেখে তাহিরা বলে, “ভয় পাস না। ধ্রুবর পুরনো বন্ধু, আমি ওকে বলে রাখব তোর কথা। ছেলেটা বখাটে এবং গুন্ডামী করে, কিন্তু মনের এত খারাপ না।”
“হুঁ” কবিতা উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আমি মিদুলকে নিয়ে বারান্দায় ঘুরে আসি।”

বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো তীর্থ। ভেতরে ধ্রুব ও আবির মিলে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছে। তীর্থ বারান্দায় আসে সিগারেট খাওয়ার জন্য। বারান্দায় ঢুকতে ঢুকতে সে ঠোঁটের মাঝে সিগারেট রেখে লাইটার দিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে গভীর টান দেয় এবং নিশ্বাসের সাথে সিগারেটের ধোঁয়া হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়। বারান্দায় আসার পর কিছু শব্দ শুনতে পায় সে। পাশে তাকিয়ে দেখে বারান্দায় কবিতা দাঁড়ানো। তার কোলে মিদুল নামক বাচ্চাটি। সে খেলছিলো বাচ্চার সাথে।

তীর্থ তাকিয়ে রয় অপলক কবিতার দিকে। রাতের আঁধারে চাঁদের মৃদু আলো এসে পড়ছে কবিতার উপর।
কবিতা….
যে-ই এই মেয়ের নাম কবিতা রেখেছে সে একদম সঠিক নাম দিয়েছে তার। হ্যাঁ, এটা সত্যি কবিতার দেখতে কবিদের মনের মায়াবতীর মতো নয়, কিন্তু মেয়েটাকে দেখলে কবি হতে ইচ্ছে হয়। তার কাজলমাখা চোখ দেখলে কবিতা লিখতে ইচ্ছা হয়। তার হাসি দেখলেও সে হাসির শব্দে ছন্দ গড়তে মন চায়। তার মনের পবিত্রতা দেখে গীতিকার হতে ইচ্ছা হয়।
আফসোস হচ্ছে তীর্থে সে কাব্য লিখতে পারে না। তার এমন কোনো গুণই নেই।
আফসোস!

সিগারেটের গন্ধ পেয়ে কবিতা আশেপাশে তাকায়। দেখে তীর্থ পাশের বারান্দায় দাঁড়ানো। তার হাতে একটি জ্বলন্ত সিগারেট। এই দৃশ্য দেখে মেজাজ খারাপ হয় কবিতার। সে নিজের নাকের সামনে হাওয়ায় হাত নাড়ায়। তারপর মিদুলকে বলে, “মিদুল বুঝলে আজকাল মানুষের মধ্যে এতটুকুও সভ্যতা নেই যে আশেপাশে মানুষের সিগারেট থেকে সমস্যা হতে পারে। মানে নিজেও মরবে, আশেপাশের সবাইকে মারবে।”
বলেই সে চলে যায় নিজের রুমে।

তীর্থ হাসে কবিতার কথা শুনে। কথাটা তাকে খোঁটা মেরে বলা হলেও তার ভালো লেগেছে। মেয়েটা অন্যরকম।
.
.
সকাল নয়টা বাজে। সারারাত মিদুল ঘুমাতে দেয় নি তাহিরা ও কবিতাকে। জেদ ধরেছে তার মা’য়ের কাছে যাবে। তাহিরা শিল্পা আক্তারকে কল করে জানতে পায় তার মা’য়ের হুশ এসেছে। তাই কবিতা ও তাহিরা দুইজনই মিদুলকে নিয়ে যাচ্ছে হাস্পাতালে। ধ্রুবকে কল করেছিলো তাহিরা। তার খবর নেই।

হাস্পাতালের সামনে রিকশা থেকে নামার পর তাহিরা বলে, “তোরা এইখানে কিছুক্ষণ দাঁড়া। আমি সামনের হোটেল থেকে মিদুলের জন্য কিছু নাস্তা নিয়ে আসি।”
“নিজের ছোট বোনেরও তো চিন্তা করো। একতো সারারাত জেগে ছিলাম, এর উপর পেটেও কিছু যায় নাই।”
“ঠিকাছে বাবা নিয়ে আসবো। তোরা দাঁড়া এইখানে। আশেপাশে কোথাও যাস না।”

কবিতা মিদুলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো রাস্তার একপাশে। আর ঘুমে হাই তুলছিলো বারবার। তাহিরা যাওয়ার একটুখানি পরই মিদুল কবিতার জামা ধরে টানতে শুরু করল, “তোলে উতব…তোলে উতব।”
“ভাই তোকে সারারাত কোলে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমার কোমর শেষ। আরেকবার তুললে ভেঙেই যাবে। তোর তাহিরা আপু খাবার নিয়ে আসলে তার কোলে উঠিস।”
“না তোলে উতব।” কান্না করতে শুরু করে মিদুল। কবিতা বুঝতে পারে না সে কি করবে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে তাদের সামনে একটি গাড়ি দাঁড় করানো। বুদ্ধি আসে তার মাথায়। সে মিদুলকে কোলে তুলে বলে, “আরও মজার জায়গায় বসাই তোকে আয়।”

কবিতা মিদুলকে নিয়ে গাড়ির উপর বসায়। মিদুলের কান্না বন্ধ হয়েছে দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচে। তৃষ্ণা পেয়েছে তার ভীষণ। ব্যাগ থেকে পানি বের করে পানি পান করতে যাবে তখনই তার সামনে একটি লোক দাঁড়িয়ে বলে,”এক্সকিউজ মি, আপনি আপনার বাচ্চাকে যেখানে সেখানে বসাতে পারেন না।”

কবিতার পানি মুখে ছিলো। সে কথাটা শুনতেই পিক করে মুখ থেকে পানি ফেলে দেয়। পানি যেয়ে পড়ে তার সামনে দাঁড়ানো লোকটার উপর।
“হোয়াট দ্যা হেল! আর ইউ ম্যাড অর সামথিং? চোখ নেই আপনার?”
লোকটার কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় কবিতার। সে কোথায় পিছনে থাকবে। তাই সেও ঝাঁজালো গলায় বলল, “আপনার তো চোখ আছে। দেখছেন না পানি পান করছিলাম। তারপরও মাঝখানে এসে কথা বলতে হবে তাই না?”
“আপনি আপনার বাচ্চাকে আমার গাড়িতে বসিয়েছেন তো আমি এসে বলব না?”
“তো আপনার গাড়িতে বসালাম দেখে কি আপনার গাড়ির ভর্তা হয়ে গেছে না’কি কোনো তুফান আসছে?”
“আমি এখন গাড়ি পার্ক করতে নিয়ে যেতাম। ভাগ্যিস দেখেছি বাচ্চাটাকে, নাহলে এক্সিডেন্ট একটা হলেই যেত।”
“এই’যে চোখ মাথায় নিয়ে হাঁটেন? দেখছেন না ধরে রেখেছি।”

লোকটার চোখে মুখে বিরক্তির ভাব। সে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল, “আপনি আপনার বেবিকে গাড়ির উপর থেকে সরান। আমি গাড়ি পার্ক করব।”
“আসতাগফিরুল্লা নাউজুবিল্লাহ আজ পর্যন্ত একটা বয়ফ্রেন্ড বানাতে পারলাম না আর আপনি আমার বাচ্চা কইরা ফেলছেন? এইটা আমার বাচ্চা না। আমি নিজেই তো একটা বাচ্চা, আমার বাচ্চা কীভাবে হবে? ওর নাম মিদুল। ওর মা এই হাস্পাতালে এডমিট তাই দেখা করাতে আনলাম।”

কথাটা শুনতেই লোকটা মুখ বানালো। লোকটাকে বিরাগ দেখাল, “আপনার বেবি হোক অথবা অন্যকারো আমার কিছু আসে যায় না। আপনি কেবল ওকে এই গাড়ি থেকে সরান।”
“তো এত খ্যাঁচখ্যাঁচ না করে সুন্দর মতো বললেই তো হয়।”
লোকটা এরপরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু নিজেকে কান্ট্রোল করল। আর শান্ত গলায় বলল, “মেডাম প্লিজ এই বেবিটাকে আমার গাড়ি থেকে সরান।”

কবিতা এইবার তাকে কোনো পাত্তা না দিয়ে মিদুলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। লোকটা ওয়ালেট থেকে একটি কার্ড কবিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “এইটা রাখুন।”
“দেখেন আমি জানি আমি অনেক সুন্দর এইজন্য যেকেউ দেখলে প্রেমে পড়ে যায়। আপনিও দেখতে ঠিকঠাক, কিন্তু তাই বলে আমি যার-তার সাথে কথা বলি না।”
লোকটা কবিতার হাত ধরে তার হাতে কার্ড দিকে বলল, “এইটা পাগলখানার কার্ড। আপনার অনেক প্রয়োজন।”
কবিতা থ খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর রাগে উঁচু স্বরে বলল, “তুই পাগল। তোর চোদ্দগুষ্টি পাগল।”

লোকটা আর সেখানে দাঁড়ায় না। কবিতার কথার উওর দেয় না। সে গাড়ি নিয়ে হাস্পাতালের ভেতরে ঢুকে যায়।
কবিতা বিড়বিড় করে বলল, “নিজে একটা সাইকো আর আমাকে পাগল বলে গেল। আরেকবার দেখা হলে তার খবর করে দিব।”

চলবে….

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্বঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here